পর্ব ১৬+১৭
#বিষাক্ত প্রেম ২
Urme prema (sajiana monir)
পার্ট: ১৬
টুং টাং ফোনটা বেজেই যাচ্ছে পাশেই ফ্লোরে সেহের গভীর ঘুমে মগ্ন ।রাতে কান্না করতে করতে এখানেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো ।কিছুসময় পর আবারো ফোন বাজতে লাগে ফোনের শব্দে সেহেরের ঘুম ভেঙ্গে যায় । ঘুম ঘুম চোখে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে রুমে কেউ নেই তারমানে কাল রাতে আরহাম বাড়িতে ফিরেনি ।সেহের বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে ফ্লোর থেকে উঠতে নেয় কিন্তু ব্যথায় উঠতে পারছেনা পিঠ বথ্যায় কাঠ হয়ে আছে ।অনেক কষ্টে ফ্লোর থেকে উঠে বসে ।ফোন আবারো বাজতে লাগে সেহের ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নিলাদ্রী ফোন করেছে ।
ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই অপরপাশ থেকে নিলাদ্রীর কান্না শুনা যায় ।সেহের বেশ ঘাবরিয়ে ভয়ে ভয়ে বলে
-“কি হয়েছে নিলু এভাবে কাঁদচ্ছিস কেন ?”
-“সেহের রু..রুশা আপু সোসাইড করার চেষ্টা করেছে অবস্থা বেশি ভালোনা ।তুই তারাতারি সিটি হসপিটালে চলে আয় ।”
সেহের একদম থমকিয়ে যায় । ফোন কেটে তারাতারি করে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পরে ।
যাওয়ার সময় আরহামের মা সেহেরকে পিছন থেকে ডাকে কিন্তু আরহামের মায়ের আওয়াজ সেহেরের কান অবদি পৌছায় না ।কারন ততক্ষনে সেহের বাড়ির মেইল গেইটের বাহিরে চলে গেছে ।
সেহের এভাবে ছুটে যাওয়ায় মা বেশ চিন্তায় হয়ে পড়ে সাথে সাথে আরহামকে ফোন করে সবটা জানায় ।
সেহের হসপিটালে পৌছিয়ে দেখে তার বাবা মা বাড়ির সব বড়রা এখানে রয়েছে ।সেহের নিলাদ্রীর কাছে যেয়ে কান্না করতে করতে জিগাসা করে
-“রুশাদী এখন কেমন আছে ?”
নিলাদ্রী মাথা নিচু করে বলে
-“জ্ঞান ফিরার আগে পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছেনা ।”
সেহের কথাটা শুনে ধপ করে বেন্চে বসে পরে চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে ।পাশেই তার ছোট ফুপি আমেনা বেগম মুখ চেপে কান্না করছে ।তিনি বীর বীর করে বলে
-“আপা মারা যাওয়ার পর শুধু রুশার মুখের দিকে তাকিয়ে মুসফিক কে বিয়ে করি ।কারন আমি চাইনি আমার বোনের শেষ চিহ্ন তার ছোট্ট মেয়েটা মায়ের আদর থেকে বন্চিত হোক ।মায়ের আদর দিতে চেয়েছি ।সব ঠি কই চলছিলো কিন্তু সমস্যা হয় তখন থেকে যখন নিলাদ্রী আমার পেটে আসে আস্তে আস্তে রুশা আমার থেকে দূরে চলে যেতে লাগে ।তার ধারন ছিলো বাচ্চা হলে আমরা আর রুশাকে আদর করবোনা তার বাবা তাকে আর ভালেবাসবেনা ।আস্তে আস্তে রুশা আমাকে ঘৃনা করতে লাগে আমাদের সম্পর্কের তিক্ততা বাড়তে লাগে ।আমার নিজেকে খুব অপরাধি মনে হচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো আমি রুশার সাথে অবিচার করছি ।কি করবো কি করে সব আগের মত করবো ভেবে যাচ্ছিলাম এমন সময় জানতে পারি মেজো ভাবী কখনো মা হতে পারবেনা এই শুনে ভাবী খুব ভেঙ্গে পড়েছে তাই আমি সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেই এই বাচ্চা আমি মেজো ভাবীকে দিয়ে দিবো ।নিলাদ্রি জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে আমি তাকে মেজো ভাবীকে দিয়ে দেই তার চেহারাটা পর্যন্ত দেখিনা কারন আমি চাইনি আমি আমার সন্তানের মায়ায় পড়ে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলি !
এর পর থেকে রুশার সাথে আবার আগের মত মিশতে চেষ্টা করি তার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করি কিন্তু আমি বার বার ব্যর্থ হই তার পরও হার মানিনা নিজের চেষ্টা চালিয়ে যাই তাকে মানানোর চেষ্টা করি ।৫ বছর বাবার বাড়ির চেহারা পর্যন্ত দেখিনা কারন আমি চাইনি আমি আমার সন্তানের মায়ায় পরি ।
আস্তে আস্তে রুশার সাথে আমার সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবীক হয়ে কিন্তু তা আগের মত ছিলোনা তার মনে কোথাও আমার জন্য ঘৃনা ছিলো ।
যত বড় হতে লাগে তার রাগ জ্বেদ বাড়তে লাগে তার বাবা কিছু বলতে চাইলেও আমি তাকে থামিয়ে দিতাম । বলতাম বাচ্চা মানুষ বড় হলে ঠি ক হয়ে যাবে কিন্তু কিছুই পরিবর্তন হয়না উল্টো তার রাগ জ্বেদ পাগলামি বাড়তে লাগে ।নিজের জ্বেদের বসে কখনো নিজেকে আবার কখনো অন্যকেউ আঘাত করে ।আমি অনেক শুধরানোর চেষ্টা করি কিন্তু তার সাথে পেরে উঠতে পারিনী । জানিনা আজ কি হয়েছে কি কারনে আজ এমন একটা কাজ করলো ?
নিজের হাতের রগ কেটে সোসাইট করার চেষ্টা করলো ।
আমি মা হয়ে কেন কিছু বুঝলাম না
আমি কেন কখনো ভালো মা হতে পারলাম না নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারলামনা ।
আমার নিজের জীবন বৃথা আমার মরে যাওয়া ভালো !”
বলেই আমেনা বেগম হাউমাউ করে কান্না করতে লাগে ।সেহেরের বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে সে তার ফুপির এভাবে ভেঙ্গে পড়া সয্য করতে পারছেনা ।
সে কি সান্তনা দিবে খুজেঁ পাচ্ছেনা ।
তার ফুপির সামনে হাটুঁ ভাজ করে বসে কান্না করতে করতে বলে
-“না ফুপি এভাবে তুমি নিজেকে দোষারোপ করোনা !
তুমি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মা তোমার মত মা পেতে ভাগ্য নিয়ে জন্মাতে হয় ।রূশাদি ভাগ্যবতী কারন তুমি তার মা ।
জীবনে অনেক ত্যাগ করেছো তুমি আর না ফুপি !
তুমি দেখবে তোমার মেয়ে খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে যাবে ।”
আমেনা বেগম সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে
-“সত্যিতো মা ?”
সেহের আমেনা বেগমের হাতের উপর হাত রেখে তাকে ভরসা দিয়ে বলে
-“একদম সত্যি !”
এমন সময় কেবিন থেকে জোরে শব্দ আসে সবাই তারাতারি করে সেদিকে এগিয়ে যায় ।কেবিনে ডুকে দেখে সব কিছু এলোমেলো হয়ে আছে রুশা সবকিছু ছুড়ে মারছে নার্সরা তাকে আটকাতে পারছেনা ।
ছোট বাচ্চাদের মত আচরন করছে বার বার বলছে
-“আমি চকলেট খাবো আইসক্রিম খাবো !
আমাকে চকলেট এনে দেও ,আইসক্রিম এনে দেও ।”
নার্সরা আর তার সাথে না পেরে ঘুমের ইন্জেকশন দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয় ।সবাই রুশা এমন অবস্থা দেখে স্থব্দ হয়ে যায় ।রুশার বাবা ডাক্টারের কাছে যেয়ে কান্নাজরীত কন্ঠে জিগাসা করে
-“ডাক্টার সাহেব আমার মেয়ের কি হয়েছে ?
ও এমন আচরন করছে কেন !”
-“আপনার মেয়ে দির্ঘ্য সময় ধরে মাদক সেবন করছে এতে তার মস্তিস্কের স্নায়ু কোষগুলোর উপর প্রভাব পড়ে আস্তে আস্তে নিজের চেতনা সংলগ্নতা ,স্বরন শক্তি বুদ্ধি – বিবেচনা হারাচ্ছিলো তার উপর হঠাৎ বড় কোন আঘাতে নিজের মানুসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।”
-“এমন হতে পারেনা আমার মেয়ে মাদক সেবন করতেই পারেনা ।
আপনারা মিথ্যা বলছেন !”
-“দেখুন আমাদের মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই ।এটাই সত্যি !
আপনারা রিপোর্ট দেখুন নিন !”
ডক্টোর রিপোর্ট দেখাতেই সবাই বিষ্মিত হয়ে যায় ।রুশা এমন কি করছে বিশ্বাসই করতে পারছেনা !
কিন্তু আমিনা বেগম রুশার মাদক সেবনের কথা শুনে তেমন একটা অবাক হয়না যেন তিনি আগের থেকে সবটা জানতো তিনি চুপ করে মাথা নিচু করে কান্না করছে ।
রুশার বাবা রিপোর্ট দেখে পরে যেতে নেয় পাশ থেকেই সেহের ধরে ফেলে ।রুশার বাবা অসহায় ভাবে তাকিয়ে কান্না জরিত কন্ঠে বলে
-“রুশার ঠি ক হওয়ার কি কোন উপায় নেই ?”
-“দেখুক ঠিক বলতে পারছিনা ঠিক হতেও পারে আবার না ও হতে পারে সব কিছু উপরওয়ালার হাতে ।”
ডক্টোর নিজের কথা শেষ করে সেখান থেকে চলে যায় ।
আমেনা বেগম ছুটে হসপিটালের অন্য পাশে চলে আসে সেহের ও তার পিছন পিছন আসে ।সেহের এসে দেখে আমেনা বেগম এক কোনায় দাড়িয়ে জোরে জোরে কান্না করছে ।
সেহের আমেনা বেগমের কাছে যেতে নেয় এমন সময় কেউ পিছন থেকে তার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরায় ।সেহের পিছনে তাকিয়ে দেখে আরহাম অগ্নিদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।সেহের আরহামকে দেখে রেগে যায় ঝাড়ি মেরে তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে চিৎকার করে বলে
-“আপনি ? আপনি এখানে কি করছেন ?
-“আমি এখানে কি করছি মানে ?
সকালে কাউকে কিছু না বলে চলে এসেছো এখন আবার জিগাসা করছো আমি এখানে কেন !
তো শুন আমি তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে এসেছি ।”
-“আমি যাবো না !
আমি কোন দিন আপনার সাথে যাবোনা শুনেছেন ।
আজ যা কিছু হয়েছে সব আপনার জন্য হয়েছে আপনি সব কিছুর জন্য দায়ী ।আপনি আপুকে ধোকা দিয়েছেন তাই সেই আঘাত সয্য করতে না পেরে আজ তার এই অবস্থা নিজের মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে !
আমার বোনটাকে আপনি কি থেকে কি করে দিয়েছেন আপনার জন্য সব হচ্ছে আপনার জন্য সে মাদক সেবন করতো কাল রাতে হয়তো আপনি কিছু বলেছেন তাই তাই ও সোসাইট করার চেষ্টা করেছে সব আপনার দোষ ।”
আরহাম এবার ভয়ংকর রেগে যায় যা সে করেনি জোর করে সেই দোষ তার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে ।আর সব সয্য করলেও সে এটা সয্য করবেনা সে মেনে নিবে না ।
সে রেগে চেচিয়েঁ বলে
-“আমি যা করিনি তার অপবাদ তুমি আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছ ইচ্ছেতো করছে এক থাপ্পরে তোমার সব দাতঁ ফেলে দেই কিন্তু দাতেঁ দাতঁ চেপে চুপ করে আছি কারন আমি তেমাকে ভালোবাসি তাই ।
তোমার বোন কে আমি এখন পর্যন্ত কিছু বলিনি কাল রাতে গিয়েছিলাম তোমার বোন কে জিগাসা করতে সে কেন তোমাকে মিথ্যা বলেছে কিন্তু যাওয়ার পর জানতে পারি ওকে হসপিটালে আনা হয়েছে তাই ফিরে আসি ।
তোমার বোনের ভাগ্য ভালো আমি মাটি কামড় দিয়ে চুপ আছি ও যা করেছে তার জন্য ওকে খুন করলেও আমার রাগ কমবেনা !”
-“আপনি আর পাড়েন কি গুন্ডাগিরি ছাড়া ?
আপনি আবারো মিথ্যা বলছেন আমি আপনাকে বিশ্বাস করিনা ।
আচ্ছা সব আমাকে পাওয়ার জন্যই তো করছেন তাই না ?
আমি চলে গেলেই তো সব ঠি ক হয়ে যাবে !”
আরহাম সেহেরের কথার মানে বুঝে উঠতে পারছেনা সে সেহেরের দিকে ভ্রু কুচঁকিয়ে তাকিয়ে আছে ।সেহের পাশ থেকে জানালার ভাঙ্গা কাঁচের টুকরা হাতে চেপে ধরে যেই পেটে পাড় দিতে নিবে এমন সময় কেউ ঠাসসস করে তার গালে থাপ্পর মেরে দেয় ।পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে তার ফুপি আমেনা বেগম অগ্নিদৃষ্টিতে তারদিকে তাকিয়ে আছে ।এত সময় চুপ করে সবটা দেখছিলো কিন্তু সেহেরের এমন কান্ড দেখে নিজের রাগকে আর ধরে রাখতে পারে না ।
আমেনা বেগম রেগে বলে
-“সেহের এটা তুমি কি করতে যাচ্ছিলে তুমি কি পাগল হয়ে গেছ ?
আর কি বোন বোন লাগিয়ে রেখেছো ? তুমি যার জন্য নিজের স্বামীর সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছ নিজেকে শেষ করতে চাচ্ছ সে নিজে তোমার থেকে তোমার সব কেড়ে নিতে চাইছে ।
তুমি কি চোখ থাকতে অন্ধ ? তুমি রুশার মিথ্যা বানানো নাটকগুলো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করছো আর আরহামের সত্যিকারের ভালোবাসাটা কি দেখতে পারছোনা ?
এতদিন নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ ছিলাম কিন্তু এখন আর না অনেক হয়েছে আমি নিজের এক মেয়ের দোষ লুকাতে যেয়ে অপরাধ ডাকতে যেয়ে অন্য মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারবোনা ।এই ছেলে টাকে অপরাধী বানাতে পারবোনা ।
সত্যি এটা আরহাম রুশা কে পছন্দ করেনা ।রুশাই আরহামের পিছনে পড়ে আছে সে আরহামকে পাওয়ার জন্য তোমাকে এসব মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী বলেছে সেই ভিডিও ছবি দেখিয়েছে ।আরহাম রুশা কে শুধু নিজের ভালো বন্ধু মনে করতো ।রুশা জানতো আরহাম তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে তারপর ও রুশা আরহামের পিছনে পড়েছিল তাকে পেতে চেয়েছিল আরহাম রুশার পাগলামো ছিলো ভালোবাসা না ।আমি সেদিন সবটা শুনেছি যেদিন রুশা তোমাকে এসব বলছিলো আমি তোমাকে সবটা জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু রুশার ইমোশনাল ব্লাকমেইলের জন্য জানাতে পারিনি সবটা গোপন রাখতে হয়েছে আমাকে।কিন্তু আমি কল্পনা করিনি এই কথার জন্য এত কিছু হবে !
আর মাদক সেবন রুশা আরহামের জন্য করেনা সে কলেজ লাইফ থেকে নিয়মীত মাদক সেবন করতো আমি জানার পর অনেক ফিরানোর চেষ্টা করি কিন্তু পারিনি মাদকের নেশা উঠলে পাগলামো করতো তাকে আটকালে নিজেকে মারার হুমকি দিতো ।তাই সব জানার পরও চুপ ছিলাম এই ভেবে যে যেমনই হোক অন্ততো আমার মেয়ে আমার চোখের সামনে তো থাকবে !”
সেহের সবটা শুনে নিচে বসে পরে চিৎকার করে কান্না করতে লাগে ।তার বোন যাকে সে এতটা ভালোবাসে এতটা বিশ্বাস করে সে তার সাথে এমন কিছু করবে সে কল্পনা করতে পারেনি ।নিজের প্রতি ঘৃনা করছে যে সে আরহামকে বিশ্বাস না করে রুশাকে বিশ্বাস করেছে ।আরহাম কে এতটা অপমান করেছে ।তার এই মুহূর্তে মরে যেতে ইচ্ছে করছে ।
আরহাম সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে তাকে এত কান্না করতে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু সে এবার সেহেরকে মাফ করবেনা কারন সে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছে ।যাকে বাচাঁনোর জন্য এত বছর ধরে পুরো দুনিয়ার সাথে লড়ে আসছে প্রতিদিন মৃত্যুর মুখমুখি হচ্ছে সে নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছে ।আরহাম মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে এবার সে সেহেরকে এত সহজে ক্ষমা করবেনা ।
আমেনা বেগম সেহেরের সামনে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
-“আর কান্না করিস না মা যা হওয়ার তা হয়ে গেছে এবার নতুন করে নিজের জীবন শুরু কর ।
আরহাম ছেলেটা খুব ভালো তোকে অনেক ভালোবাসে এভাবে ওকে কষ্ট দিসনা মা ।”
সেহের স্থব্দ হয়ে বসে আছে ।আমেনা বেগম আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে
-“ওকে বাড়িতে নিয়ে যাও ।”
সেহের এখনো চুপ করে প্রানহীন ভাবে সেখানে বসে আছে কোন কথা বলছে না এখনো সে ধ্যানে আছে তার বোন এমন কিছু তার সাথে করবে সে ভাবতে পারেনি !
আরহাম সেহেরের এমন অবস্থা দেখে তাকে কোলে তুলে নিয়ে যায় ।সেহের আস্তে আস্তে আরহামে বুকে মাথা হেলিয়ে দেয় ।
আরহাম সেহেরকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ড দেয় ।পুরো রাস্তায় একবারের জন্যও আরহাম সেহেরের দিকে তাকায় না আজ না সে সেহেরকে শান্তনা দিচ্ছে না তাকে কাছে টেনে নিচ্ছে কারন আজ সে সেহেরের উপর খুব বেশি রেগে আছে ।কিছুসময়ের মধ্যে তারা বাড়িতে পৌছিয়ে যায় ।
পার্ট: ১৭
আস্তে আস্তে শীত পড়ছে কুয়াশায় ঘিরে আছে চারদিক ।
অন্ধকার আচছন্ন শীতল পরিবেশ ঠান্ডা হাওয়া বইছে ।সেহের হাটুঁ ভাজ করে বারান্ধার ফ্লরে বসে আছে।থুতনীটা হাটুঁর উপর চোখ থেকে অঝোরে পানি ঝড়ছে ।
আরহাম ঘরের লাইট অফ করে বারান্ধার দিকে তাকিয়ে আছে ।ফেইরী লাইটের আবছা আলোতে সবটা দেখতে পাচ্ছে ।সেহেরের চোখের জলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সে তার সেহেরের চোখের জল সয্য করতে পারেনা কিন্তু আজ সেহেরকে আটকাবেনা হয়তো কাদঁলে নিজের মনের কষ্টটা হালকা হবে ।আজ এত বড় একটা ধাক্কা পেয়েছে নিজেকে সামলাতে কিছু সময় তার একা থাকাটা খুব দরকার ।
আরহামের কাছে তার রাগ অভিমান পুরো দুনিয়া একদিকে আর অন্যদিকে তার ভালোবাসা তার সেহের ।আরহামের পুরো দুনিয়া তার সেহের !
তার হুর ।
যতই রাগ অভিমান করুক না কেন সেহেরের প্রতি তার দায়িত্ব কর্তব্য আর ভালোবাসা কোন দিন কমবেনা ।সেহেরের জন্য তো সাত খুন ও মাফ !
সেহের বারান্ধায় বসে কান্না করছে সে কি করে ঘরে শান্তিতে ঘুমাবে ।তার সেহের এতটা কষ্ট আছে তো সে কি ভাবে শান্তিতে থাকবে !
আরহাম বেডের সাথে হেলান দিয়ে বারান্ধার দিকে তাকিয়ে আছে ।ধারালো ছুড়িটা হাতের মুঠোয় চাপ দিয়ে ধরে আছে হাত থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ে ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়ালই নেই ।
সে এক মনে তাকিয়ে তার হুর কে দেখছে ওয়াদা করেছিলো সেহেরের সব কষ্টের সমান ভাগীদার হবে তার সেহেরের কষ্টে সে কি করে ভালো থাকতে পারে ,তাই নিজেকে সে শাস্তি দিচ্ছে ।
ঘুমের ভেতর আরহামের মুখের উপর কয়েক ফোটা পানির ছিটা এসে পড়ে ।আরহাম বেশ বিরক্ত নিয়ে কপাল কুঁচকিয়ে অন্যপাশে ফিরে ।আবার কিছুক্ষন পর চুড়ি আর পায়েলের ঝনঝন আওয়াজ কানে ভেসে আসে ।আরহাম এবার খুব বেশি বিরক্তবোধ করছে এমন হলে ঘুমানো যায় নাকি ?
হাত নাড়াতেই টের পায় তার হাতে বেন্ডেজ বাধাঁ গায়ে কম্বোল দেওয়া ।আরহাম বেশ অবাক হয় কারন কাল রাতে তো সে এসব করেনি তাহলে কে করেছে ।সেহের ? না না সে কি ভাবছে সেহেরের কাছে এমন কিছু করবে ইমপসিবল !
এসব ভাবতে ভাবতে আরহাম ঝাপসা চোখে পিছন ফিরে তাকাতেই হা হয়ে থাকে ।এ সে কি দেখছে ?
সে যা দেখছে আদো কি তা সত্যি ! অসম্ভব সত্যি হতেই পারেনা ।নিশ্চিত কোন স্বপ্ন !
আরহাম নিজের চোখজোড়া ভালো করে ডোলে সামনে তাকায় ।না ,এটা কোন স্বপ্ন সত্যি সেহের তার সামনে আছে ।আরহাম সেহেরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এটা কি স্বর্গ থেকে আসা কোন পরী নাকি কোন রূপ কথার রাজকন্যা ?
না না এটা তো হুর ।আরহামের হুর !
আরহাম সেহেরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো ভাবে একবার স্ক্যান করে নেয় টকটকে সিদুঁর লাল শাড়ি হাতে স্বর্নের বালা আর লাল চুড়ি ,নাকে মিডিয়াম সাইজের নাকের ফুল ,কানে ঝুলানো ঝুমকো ।ভেজা চুল গুলো এক সাইট করে সামনে এনে রেখেছে আর সেই চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝোড়ছে ।হঠাৎ সেহের ড্রেসিনট্বিলের দিকে ফিরে উচু হয়ে কিছু একটা নামাতে নেয় ফলে পিছন থেকে তার পিঠ আর কমোড় দেখা যাচ্ছে ।জানালা ভেদ করে মিষ্টি রোদের আলো পড়াতেই সেহেরের পিঠের বিন্দু বিন্দু পানিগুলো মুক্তার মত ঝলঝল করে উঠে ।
কমোড়টাও দেখা যাচ্ছে ।
আরহামের নিশ্বাস দ্রুত আপ-ডাউন করছে গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে ।আরহাম সেহেরের দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে ।
বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিরবিরিয়ে বলে
-“উফফফ এই মেয়ে আমাকে মেরেই ফেলবে !
সকাল সকাল মাথাটা নষ্ট করে দেওয়ার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো ?”
সেহের আরহামের বিরবির আওয়াজ শুনে পিছন ফিরে তাকায় ।ঠোঁটে ভুবন ভুলানো হাসি টেনে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আরহামের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে
-“আপনি উঠে গেছেন ।এই নিন চা !
আরহাম অবাক হয়ে সেহেরের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নেয় ।সেহের আবার মুচকি হেসে বলে
-তারাতারি চা টা শেষ করে নিচে চলে আসেন মা ব্রেকফাস্ট করতে ডাকছে ।
জানেন আজ আমি নিজ হাতে ব্রেকফাস্ট তৈরী করেছি ।”
আরহাম মাত্রই চায়ে চুমুক দিয়েছে এমন সময় সেহেরের কথা শুনে মুখ থেকে চা বেরিয়ে আসে ।সেহের তা দেখে তারাতারি করে তার কাছে ছুটে আসে ।সেহের শাড়ির আচঁল দিয়ে আরহামের ঠোঁট মুছে দিয়ে ।ঠোঁটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
-“খুব লেগেছে তাই না ?
দেখি কোথায় লেগেছে !”
আরহাম এবার আশ্চর্যের শেষ সিমানায় পৌছায় এ সে কোন সেহেরকে দেখছে ?
এটা তার সেহেরই তো !
সেহেরের এমন সফ্ট বিহেভে আরহামের বেশ খটকা লাগছে ।ঘুম থেকে উঠার পর একের পর এক ঝাটকা খাচ্ছে সে ।
আরহাম সেহেরের কপালে হাত রেখে জিগাসা করে
-“আর ইউ অলরাইট ?”
সেহের কাদঁ নাচিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলল
-“ইয়া আ’ম এবসুলেটলি ফাইন ।
অনেক বেলা হয়ে গেছে আপনাকে অফিসে যেতে হবে তো ।তারাতারি চা টা শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসেন ।”
কথাটা শেষ করেই সেহের চলে যেতে নেয় আরহাম সেহের যাওয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ।যা হচ্ছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ।সেহেরের মাথায় কি চলছে ?
এমন ব্যবহার করছে কেন ।
এমন অনেক প্রশ্ন তার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে ।
হঠাৎই তার ভাবনায় ছেদ পরে সেহের ডাকে সেহের দরজার সামনে দাড়িয়ে মুচকি হেসে বলে
-“আপনার কাপড় ,ঘড়ি ,ওয়ানেট সব সোফার উপর রাখা আছে !”
আরহাম শুধু হেবলার মত তাকিয়ে মাথা নাড়ালো ।সেহের মুচকি হেসে নিচে চলে যায় ।আরহাম এখনো হেবলার মত তাকিয়ে আছে নিজের বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছেনা সে ।
আরহাম রেডি হয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছিলো ।এমন সময় তার নজর যায় ডাইনিং টেবিলের পাশে দাড়ানো সেহেরের দিকে ।
সেহের সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে একদম আদর্শ গৃহিনীদের মত লাগছে ।এমন স্বপ্ন আরহাম কতই না দেখে যে সেহের এই বাড়িতে আসবে তাদের একটা ছোট্ট সংসার হবে ।সেহের কিচেনে কাজ করবে আরহাম তার পাশে দাড়িয়ে তাকে মন ভরে দেখবে ।মাঝে মাঝে তাকে জ্বালাতন করবে ।আচলেঁ ভাজে হাত দিয়ে তার কমোড় জরিয়ে ধরবে ।কিন্তু যখন সেই স্বপ্ন এক এক করে পূর্ন হচ্ছে আজ কেন এত প্রশ্ন জাগছে ?
একরাতের মধ্যে সেহেরের এইভাবে পাল্টিয়ে যাওয়া তাকে বেশ ভাবাচ্ছে !
আরহাম এইসব ভাবতে ভাবতেই ডাইনিং টেবিলের সামনে যায় ।চেয়ার টেনে বসে ।সেহের আরহামের প্লেটে খাবার সার্ভ করে দেয় ।আরহাম আড়চোখে তাকে দেখছে ।সেহেরকে বুঝতে দেওয়া যাবেনা আরহাম তার প্রতি আবার দূর্বল হয়ে পড়ছে ।সেহেরকে একটা শাস্তি দিতে হবে ।তাকে বোঝাতে হবে আরহামের প্রতি তার অনুভূতিগুলো কে ।
আরহাম ততক্ষন পর্যন্ত সেহেরের সাথে আগের মত স্বাভাবীক হবে না যতক্ষন না সেহের নিজে থেকে নিজের মনের কথা আরহামকে বলে !
আরহামের মা আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে
-“আজ সবকিছু আমার বউমা বানিয়েছে ।খেয়ে বল কেমন হয়েছে ?”
আরহাম খাবার মুখে পুড়ে বলতে লাগে
-“মা তুমি কি আমার সাথে মজা করছো ।
তোমার বউমা কি আদো জানে কিচেন কেমন হয় !
আমি জানি তুমি রান্না করেছো তোমার ক্রেডিট তোমার বউমাকে কেন দিচ্ছ ।
কথাটা শুনে যেন সেহেরের কিছুটা কষ্ট লাগলো । ভোর সকালে উঠে আরহামের পছন্দের সবকিছু রান্না করলো আর উনি এসব বলছে !
আরহামের এমন আচরন স্বাভাবীক কারন সে নিজেও আরহামকে কম কষ্ট দেয়নি সবসময় তাকে ভুল বুঝে গেছে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে ।ঐ সবের সামনে তো এটা কিছুই না ।
সেহের আরহামের কথাটায় তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বলে
-“হুম আগে কিচেন কেমন হয় জানতাম না কিন্তু এখন জেনছি ।
মায়ের থেকে আপনার কি পছন্দ তা জেনে ইউটুব থেকে শিখে নিয়েছি আর খাবারে পার্ফেক্ট চেস্ট আনার জন্য তো মা সাথে ছিলোই ।”
আরহাম আর কোন কথা বাড়ায় না মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছে । মা পাশ থেকে প্রশ্ন করে
-“মা তুমিও নাস্তা করে নেও !”
-“না মা আমি পরে করে নিবো ।”
-“কেন হসপিটালে যাবে না ?”
-“না মা আমি হসপিটালে যাবো না !
আমি ঐ মিথ্যাবাদী বিশ্বাসঘাতক মেয়ের চেহারাও দেখতে চাইনা ।
তার সাথে সব সম্পর্ক কাল মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছি ।
তার নামটাকেও আমি ঘৃনা করি !”
সেহের কাপাঁ কাপাঁ গলায় কথাগুলো বলেই সেখান থেকে চলে যায় ।আরহামের মা কিছু বুঝতে উঠতে পারেনা ।আরহামের দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকাতেই আরহাম চোখের ইশারায় বোঝায় সে সবটা সামলিয়ে নিবে ।
পরবর্তী পর্ব পড়তে পেইজটি তে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। গ্রুপের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে
[ ব্যস্থতার কারনে কাল গল্প দিতে পারবোনা ]
চলবে….❤️
Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন😊
Next part
Next part