বেদনার রঙ নীল পর্ব -১১

#বেদনার_রঙ_নীল
একাদশ পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

ফোন নাম্বার দিয়ে এখন নিশ্চয়ই প্রণয় তুলির কলের অপেক্ষায় থাকবে! কিন্তু তুলির তো কোনো ফোনই নেই। মাঝে মাঝে রাইফার ফোন থেকে সে তন্বির সঙ্গে কথা বলে। তন্বিও ফিরছে না ঢাকায়। সে চলে এলে তুলির মোবাইলটাও নিয়ে আসতে পারতো। অবশ্য মামা মোবাইল বেঁচেও দিতে পারেন। যদি সত্যি বেঁচে দেন, তুলি কষ্ট পাবে। মোবাইলে অনেক স্মৃতি বিজড়িত ছবি ছিল। বিছানায় বসে বিমর্ষ মুখে বসে এসব চিন্তা করছিল তুলি। তার মনখারাপ হচ্ছে। নাম্বারটা সে মুখস্ত করে নিয়েছে। বাড়ি আসার পর থেকে শুধু সেটাই আওড়ে যাচ্ছে একমনে। যাতে ভুলে না যায়! তুলি আরেকবার মনে মনে আওড়াল,” 016…”

মিসেস সূচি ঘরে ঢুকলেন। রাইফাকে দেখতে না পেয়ে তুলিকে প্রশ্ন করলেন,” রাইফা কোথায়, তুলি?”

তুলি সোজা হয়ে বসে বলল,” ছাদে গেছে আন্টি।”

” তুমি যাওনি?”

” টায়ার্ড লাগছে আমার।”

সূচি তুলির পাশে এসে বসলেন। গল্প করার উদ্দেশ্য নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,” শুনলাম শানকে পড়ানোর জন্য নাকি তুমি রাজি হয়ে গেছো?”

” জ্বী৷ আসলে অজান্তা আন্টি এমনভাবে রিকোয়েস্ট করলেন…”

তুলিকে থামালেন সূচি। উপদেশ দেওয়ার মতো বললেন,” এই কাজ ভুলেও করতে যেও না। এক নম্বরের বাদর। দেখতে খুব ভোলা-ভালা মনে হয়। কিন্তু আস্তো একটা ঘূর্ণিঝড় ওই ছেলে। কি কি যে করে শুনলে তুমি কপাল চাপড়াবে যে কেন এমন ছেলেকে পড়াতে রাজি হলাম। ওর বাড়ি থেকে কোনো টিচার সুস্থ অবস্থায় বিদায় নিতে পারেনি।”

তুলি হাসতে হাসতে বলল,” আমি জানি আন্টি। প্রথম যেদিন রাইফা আমাকে ওই বাসায় নিয়ে গেল সেদিন কি হয়েছে শুনুন।”

তুলি সম্পূর্ণ ঘটনা বিস্তারিত বলল। সূচি মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,” সর্বনাশ! তারপর তোমার জ্ঞান কিভাবে ফিরল?”

” আমার মনে নেই।”
” এতোবড় ঘটনার পরেও তুমি ওই ছেলেকে পড়াতে চাচ্ছো? তোমার কলিজাটা কি! আমি তো অবাক হলাম।”

রাইফা ঘরে প্রবেশ করল। ক্ষীপ্ত গলায় বলল,” আম্মু,আম্মু, তুমি ওকে উষ্কানি দিও না প্লিজ। অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি।”

সূচি তুলির দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস হয়ে বললেন,” আমি উষ্কানি দিচ্ছি না কিন্তু তোমাকে। ভালো বুদ্ধি দিচ্ছি। উল্টা রাইফা তোমাকে উষ্কাচ্ছে। ওর কথা শুনলে কিন্তু বিপদে পড়বে বলে দিচ্ছি।”

” শান অনেক ভালো হয়ে গেছে। তুলিকে সে পছন্দও করেছে। আজকে একদম দুষ্টমি করেনি।”

” দেখা যাক কয়দিন এমন ভালো থাকে।”

রাইফা জোর করে সূচিকে ঘর থেকে বের করল। তারপর দরজা আটকে তুলির পাশে বসে বলল,” আম্মুকে তো আজকের ঘটনা বলিসনি তাই না?”

তুলি না’সূচক মাথা নাড়ল। রাইফা হেসে বলল,” ভালো করেছিস। শানকে প্রথমে আমিই পড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আম্মুর জন্য পারলাম না। আর শানও আমার বাধ্য নয়।”

” আর আমার কি খুব বাধ্য? ওর সামনে গেলেই তো আমার আতঙ্ক লাগে। কখন কি করে বসে! শান না রেখে ওর নাম রাখা উচিৎ ছিল সাইক্লোন। আমি হলে সেটাই রাখতাম।”

” তুই ডাকিস ওকে সাইক্লোন বলে।”

” হুম.. আচ্ছা অজান্তা আন্টির সাথে তোর তো ভালোই খাতির দেখলাম। এমনভাবে কথা বলছিলি যেন নিজের মা!”

রাইফা কপালের চুল কানে গুঁজে লাজুক মুখে বলল,” মেরি হোনেওয়ালি সাস জো হ্যায়!( অর্থ- আমার হবু শাশুড়ী হয় না!)

তুলি হিন্দি বোঝে না। তাই চোখ কুচকে আবার প্রশ্ন করল,” এর মানেটা কি?”

” দাঁড়া, তন্বি ফোন করছে।”

তুলি ব্যস্ত হয়ে বলল,” আমাকে দে। তন্বির সাথে জরুরী কথা আছে।”

ফোনটা প্রায় কেঁড়ে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল তুলি। রাইফা বিছানায় শুয়ে পড়ল। কাল সে খিচুরি রান্না করে নিয়ে যাবে অজান্তা আন্টির জন্য। তখন শানের ঘরটায় আবার ঢু মারতে হবে। এবার যদি নাম্বার চুরি করা যায়! তাছাড়া এখন থেকে তো তুলি নিয়মিত ওই বাড়িতে যাবেই। রাইফাও তাকে পিক করার বাহানায় সেখানে যাবে। একদিন না একদিন নিশ্চয়ই সে ফোন নাম্বার নিতে সফল হবে! রাইফা বড় করে শ্বাস ছাড়ল। এতো অস্থির লাগছে কেন তার? নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অস্থিরতা!

তুলি বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়ালো। তন্বি বিষণ্ণ কণ্ঠে বলছে,” আমি ঢাকায় আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি, বিশ্বাস কর! কিন্তু আমাকে পৌঁছে দেওয়ার কেউ নেই। বাবা তো রাজি হলেও জীবনে পৌঁছে দেবে না। তোর উপর ভীষণ ক্ষেপে আছে।”

” আচ্ছা, ওই চেয়ারম্যান মানে ইকবাল আঙ্কেলের উৎপাত কি কমেছে? নাকি এখনও আমার উপর রাগ ঝারতে মামাকে টর্চার করছে?”

” না। উনি ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিন্তু বাবাই তো ঠান্ডা হচ্ছে না।”

তুলি চিন্তিত হয়ে বলল,” ভালো মুশকিল হয়ে গেল। এমন হলে তুই আসবি কিভাবে?”

” আচ্ছা, আজমীর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে তোর?”

” না।”

” উনি আজকেও আমাকে ফোন করেছিল। তোর ফোন নাম্বার চাইতে চাইতে পাগল করে দিচ্ছে। আমি বললাম তোর ফোন নেই৷ তাও বিশ্বাস করে না। বলে তুই যার বাড়িতে আছিস তার নাম্বার দিতে।”

তুলি খুব ক্ষীপ্ত গলায় বলল,” খবরদার নাম্বার দিবি না। সামির ভাইয়ের ব্যাপারে আমাকে কনভিন্স করতে চাইবে নিশ্চয়ই! ”

” না। সেটা মনে হয় না৷ কারণ বিয়ে ভাঙায় উনি খুশি। আমার মনে হয় তোকে পছন্দ করে।”

তুলি আরও বিরক্ত কণ্ঠে বলল,” ইশ, তাহলে তো আরও আগে নাম্বার দিবি না। বলে দে আমি মরে গেছি।”

তন্বি জোরে হেসে উঠল। তারপর জরুরী কণ্ঠে বলল,” আজমীর ভাইকে আমাদের প্রয়োজন আছে। তুই উনাকে একটু ফোন করে রিকোয়েস্ট কর না, যেন আমাকে এসে এখান থেকে নিয়ে যায়। বাবা তো আজমীর ভাইয়ের কথা শুনবে।”

তুলি উৎফুল্ল গলায় বলল,” ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস তো! তুই আসার সময় আমার ফোন আনতে পারবি?”

” পারবো না কেন?”

” তাহলে দ্রুত আজমীর ভাইয়ের নাম্বারটা টেক্সট কর। আমি বরং এখনি ফোন করি।”

তন্বি দু’মিনিটের মাথায় নাম্বার মেসেজ করল। তুলিও ফোন দিল। আজমীর টিউশনি শেষ করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছিল। বুয়া আসেনি আজ। ফ্ল্যাটে সে একাই থাকে। রান্না নিজেকে করতে হবে। খুব আলসেমি লাগছে। ঘুমও পাচ্ছে। কিন্তু ক্ষিদের জ্বালা বড় জ্বালা। অনলাইনে কিছু অর্ডার করবে কি-না ভাবছিল। আর ঠিক সেই সময় তুলির ফোনটা এলো। আজমীর বিরক্তির সাথে মোবাইল রিসিভ করেছিল। ওই পাশ থেকে তুলির জাদুময়ী কণ্ঠ ভেসে এলো,” আজমীর ভাই, তুলি বলছি।”

আজমীর একপ্রকার লাফিয়ে উঠল। তার ঘুম, ক্ষিদে কোথায় উড়ে গেল! উত্তেজনা মিশ্রিত গলায় বলল,” তুলি? আরে, আরে, আমি কি স্বপ্ন দেখছি না তো?”

মোবাইল স্পিকারে ছিল। রাইফা আর তুলি একসঙ্গেই আজমীরের কণ্ঠ শুনল। তুলি মোবাইলটা একপাশে সরিয়ে রাইফার উদ্দেশ্যে বলল,” শা*লা এমনই। নাটকবাজ!”

রাইফা ম্যাগাজিন পড়ার মাঝেই হাসল। তুলি বলল,” কেমন আছেন? আপনার তো কোনো খোঁজই নেই। ছোটবোনের কথা ভুলে গেছেন নিশ্চয়ই! ”

আজমীরের বুকের বামপাশটা ব্যথায় কাতরে উঠল। আহত-নিহত হয়ে কোনোমতে প্রশ্ন করল,” ছোটবোন কে? তুমি?”

” হ্যাঁ। কেন? আমি কি আপনার ছোটবোনের মতো না?”

উফ, আজমীরের মনে হচ্ছে সে হার্ট এটাক করবে। তুলি এইসব কি বলে? এতো কাঠখড় পুড়িয়ে বিয়ে ভেঙেছিল কি এই কথা শোনার জন্য? তুলি সরাসরি প্রসঙ্গে এলো। আলোচনা বেশি দীর্ঘ করতে চায় না সে।

” শুনুন আজমীর ভাই, আপনাকে আমি খুবই পছন্দ করি। তাই আপনার কাছে ছোটবোন হিসেবে আমার একটা ছোট্ট অনুরোধ। ”

” আগে তুমি ছোটবোন বলা বন্ধ করো। আমি তোমার সব অনুরোধ শুনবো।”

রাইফা এই কথা শুনে হেসে ফেলল। তুলি ফিসফিসিয়ে বলল,” বলেছিলাম না? শা*লা একটা অস*ভ্য।”

তারপর তুলি হাসিমুখে বলল,” ও আচ্ছা৷ ভুলেই গেছিলাম। আমি তো আপনার হবু ভাবী। আর ভাবী ছোটবোন হতে পারে না। আমি তাহলে আপনার বড়বোন হিসেবে আদেশ করছি। তন্বিকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করে দিন। মামা ওকে আটকে রেখেছে। কিছুতেই আসতে দিচ্ছে না। সামনে আমাদের এডমিশন টেস্ট। মেয়েটার কি হবে বলুন? আপনার কি নিজের হবু ভাবীর বোনের প্রতি একটা দায়িত্ব নেই? আপনি কিভাবে হাত গুটিয়ে বসে আছেন?”

আজমীর মোলায়েম কণ্ঠে বলল,” তুমি যেটা বলবে সেটাই হবে তুলি। কিন্তু তুমি শুধু এইসব বড়বোন, ছোটবোন বলা বন্ধ করো। আর হবু ভাবী কি আবার? বিয়ে তো ভেঙে গেছে। তুমি কি ভাইয়াকে এখনও বিয়ে কর‍তে চাও?”

” একদম না। বিয়ে ভাঙায় আমি অনেক খুশি। অন্তত আগামী পাঁচবছর আমি বিয়ে নিয়ে চিন্তাও করব না।”

” ভেরি গুড। প্রেম নিয়ে তো চিন্তা করবে, তাই না?”

” এখানে প্রেমের কথা আসছে কেন আজমীর ভাই? তন্বিকে নিয়ে কথা বলছিলাম।”

” আচ্ছা বললাম তো এনে দিবো৷ তুমি বললে শুধু বরিশাল থেকে তন্বিকে না, আসমান থেকে তারাও এনে দিতে প্রস্তুত আমি।”

তুলি রাইফার দিকে তাকাল বিরক্ত দৃষ্টিতে। রাইফা কেবল হাসছে। তুলি ভদ্র গলায় বলল,

” তারা লাগবে না। শুধু তন্বি হলেই চলবে। আচ্ছা আজমীর ভাই রাখি। আমাকে আবার পড়তে বসতে হবে।”

” আরে, আরে, এখনি কি রাখবে? নিজের কথা বলেই শুধু রেখে দিবে? আমার কথা শুনবে না?”

তুলি চোখমুখ কুচকে রাইফার দিকে চেয়ে বলল,” ফেঁসে গেলামরে! শা*লা বদমাইশ পুরা।”

রাইফা হাসি থামাতে ম্যাগাজিন দিয়ে মুখ চেপে ধরল৷ আজমীর বলে যাচ্ছে,” একবার ঢাকা থেকে ফিরে তো আমার সঙ্গে দেখাও করলে না। তুমি যার বাড়িতে থাকো তার ঠিকানা কিন্তু আমি জানি। একবার ভেবেছিলাম সরাসরি তোমার সঙ্গে এসে দেখা করবো। পরে তুমি কি-নাকি মনে করো! এজন্য আর আসিনি। চলো না, কাল আমরা ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে দেখা করি!”

তুলি চোখ বড় করে রাইফার দিকে তাকাল। চাপা রাগ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,” সাহস কত দেখেছিস?”

রাইফা ইশারায় বলল রাজি হতে। তুলি ভ্রু কুচকে বলল,” কেন?”

রাইফা বলল,” আগে রাজি হো তুই। পরে বলবো।”

তুলি নিজের স্বার্থের খাতিরে রাজি হলো। নাহলে দেখা যাবে আজমীর তন্বিকে আনবে না। তুলি আনন্দিত হওয়ার ভাণ ধরে বলল,” নিশ্চয়ই দেখা করব৷ কোন রেস্টুরেন্টে আসতে হবে বলেন?”

আজমীর গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করল,” এটা কি তোমার নাম্বার?”

” না। এটা আমার ফ্রেন্ডের নাম্বার। আমার তো মোবাইলই নেই।”

আজমীর দুঃখিত গলায় বলল,” ও আচ্ছা। ঠিকাছে আমি তাহলে এই নাম্বারেই টেক্সট করে দিবো। সময় আর জায়গা দু’টোই।”

” ঠিকাছে। ওকে। এখন রাখি।”

” কাল তাহলে দেখা হচ্ছে। তুমি কি শাড়ি…”

তুলি ঠাস করে ফোন কেটে দিল। তারপর বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,” অসহ্য একটা!”

রাইফা ততক্ষণে হাসতে হাসতে কাহিল। তুলি রাগী কণ্ঠে বলল,” তুই আমাকে রাজি হওয়ার ফালতু আইডিয়াটা কেন দিলি? এখন কাল সত্যি আমাকে যেতে হবে।”

” আরে যাবি তো। আমিও যাবো। তারপর দেখিস বেটার কি হাল করি! আমার কাছে প্ল্যান আছে। আর জিন্দেগীতেও তোকে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে ডাকবে না।”

” সত্যি?”

” হুম। নিশ্চিন্ত থাক।”

সকাল সকাল প্রণয়ের সাধের ঘুমটা ভাঙল আজমীরের ফোন পেয়ে। আজকে ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নেই। তাই প্রণয় একটু সুখের ঘুম দিচ্ছিল। সে ফোন কেটে আবার ঘুমাতে ব্যস্ত হলো। কিন্তু আজমীর নাছোড়বান্দা। ফোনের উপর ফোন করেই যাচ্ছে। প্রণয় শেষমেষ কল রিসিভ করে ধমক দিল,” ওই বেটা, ফোন যে কেটে দিচ্ছি এতে কি বুঝিস না আমি ব্যস্ত আছি? তাও বেহুদা ফোন দিয়ে যাচ্ছিস কেন? প্রবলেম কি তোর?”

” আরে শা*লা, প্রবলেম আছে বলেই তো ফোন দিচ্ছি। বেহুদা না।”

প্রণয় শান্ত হয়ে চোখ ডলতে ডলতে বলল,” কি প্রবলেম বল।”

” তুলির সাথে দেখা কর‍তে যাচ্ছি। কি রকম শার্ট পরলে ভালো হয়? আর শার্ট পরবো নাকি টি-শার্ট? নাকি পাঞ্জাবি পরে যাবো? ”

প্রণয় চট করে উঠে বসল। বিচলিত গলায় বলল,” ওয়েট, ওয়েট, কার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিস?”

আজমীর উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,” তুলি। কালরাতে আমাকে ফোন করেছিল। তখন দেখা করতে বললাম আর রাজি হয়ে গেল। খুশিতে সারারাত ঘুম হয়নি। ভোরের দিকে শুয়েছি। আবার সাতটার এল্যার্মে উঠে পড়েছি। কি যে একটা অবস্থা!”

প্রণয় কথাগুলো শুনছে আর তার কান ক্রমশ গরম হচ্ছে। সে গম্ভীর হয়ে বলল,” তুলি নিজে তোকে ফোন করেছিল?”

” হ্যাঁ। অবাক হয়েছিস নাকি? আমিও অবাক হয়েছিলাম।”

প্রণয় অকারণেই হাতের বালিশটা ছুঁড়ে মারল। কাল থেকে সে তুলির একটা ফোনের অপেক্ষা করছে। অথচ তুলি তাকে ফোন না দিয়ে আজমীরের সঙ্গে ডেটিং ফিক্সড করে ফেলেছে। কি আশ্চর্য! প্রণয় ভেবেছিল তুলির মনে আজমীরের জন্য কোনো অনুভূতি নেই। বরং তার চোখ, হাসি ইত্যাদি দেখে মনে হয়েছিল তার আগ্রহ প্রণয়ের প্রতিই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে উল্টা। সত্যি, মেয়েদের মন বোঝার চেয়ে ক্যালকুলাস বোঝা সহজ। প্রণয়ের রাগ হচ্ছে। ভীষণ রাগ। ওই পাশ থেকে আজমীরের কণ্ঠ যেন রাগ আরও বাড়িয়ে তুলল,” দোস্ত, গিফট কি নিবো? মানে মেয়েদের কি ধরণের জিনিস পছন্দ? ফুল আর চকলেট খুব কমন হয়ে যায়। আমি আনকমন কিছু নিতে চাইছি।”

প্রণয়ের গরম মাথায় একটা চরম বুদ্ধি এলো। সে চট করে বলল,” তুই রাখ, আমি তোর বাসায় আসছি।”

” মানে কি? তুইও যাবি নাকি?”

” গেলে কোনো সমস্যা?”

” না,না, আরও ভালো হয়। আচ্ছা দ্রুত চলে আয়।”

প্রণয় ফোন রেখেই তৈরী হয়ে নিল। সকাল সকাল মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে। সারাটা দিন কিভাবে কাটবে কে জানে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here