আমার ২য় সন্তান যখন আমার পেটে।ঠিক তখনই আমার ডিভোর্স টা হয়।আমি আমার সন্তানকে পেটে নিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করি।শুনেছিলাম বাচ্চা পেটে থাকলে নাকি ডিভোর্স হয়না।কিন্তু আমার টা হয়েই গেলো।আমিতো ডিভোর্স চাইনি।আমি তো আমার স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে সুখের একটা সংসার করতে চেয়েছিলাম।
.
শুরু থেকে বলি তাহলে।
আমি নীলিমা।বাবা মায়ের আদরের সন্তান বলবো,নাকি অভাগী সন্তান বলবো এই মুহূর্তে বুঝতে পারছিনা।
খুবই অল্প বয়সে বাবা মা আমাকে বিয়ে দেন।
ছোট মানুষ সংসার সম্পর্কে তেমন কিছু বুঝতাম না।তবুও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি।
বিয়ের পর পরই হঠাৎ করে আমি কন্সিভ করে ফেলি।
শ্বশুর বাড়ীর কেউ তেমন খুশি ছিলেন না।
তবুও দিন যাচ্ছিলো কোন রকম।
একটা সময় তারা আশা করে বসলেন আমার যেন মেয়ে হয়।
কারণ আমার ভাসুর দের সবার ছেলে।
বাসায় কোন মেয়ে নেই সেই জন্য তারা চান আমার যেন মেয়ে হয়।
কিন্তু সন্তান তো আল্লাহর দান।আল্লাহ ই তো ভালো জানেন কাকে কি সন্তান দিবেন।
আমরা চাইলেই তো আর নিজেদের ইচ্ছে মত তৈরি করতে পারবোনা।
যাইহোক অবশেষে আমি একটা ফুটফুটে পুত্র সন্তানের মা হই।
আর এখান থেকেই শুরু হয় আমার জীবনের অশান্তি।
শ্বশুর বাড়ীর সবার মুখ কালো।
আমার কেন ছেলে হলো।
তাদের মেয়ে লাগবে।
শুরু হয় আমার সাথে দূর্ব্যবহার।
তবুও বরের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করতাম।
কিন্তু আমি অবাক তো হলাম তখন,যখন আমি আমার বরের ও পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।
বেবী হবার কারণে আমি আমার বাবার বাসায় ছিলাম।
বেশির ভাগ মেয়েরাই এই সময় বাবার বাসায়ই তো থাকে।কারণ এই সময় নিজের মা যেমন ভাবে কেয়ার করে,তা অন্য কেউ আর করেনা।
দিন যেতে লাগলো,আমার বর আমার কোন খোঁজ নেয়না।
আমার ছেলের খোঁজ নেয়না।
প্রয়োজনীয় কিছুই কিনে দেয়না বাবুর।
কি আর করবো,এমন অবস্থা দেখে ছোট বাচ্চা নিয়েই চলে গেলাম শ্বশুর বাড়ী।
কিন্তু তখনও আমার বর যেন কেমন দূরে দূরে থাকতো আমার থেকে।
বেবী হবার আগে যেই ভালবাসা টা ছিলো আমার জন্য সেই ভালবাসা টা আমি আর তার মাঝে দেখতাম না।
আমার প্রতি যেই টান ছিলো সেই টান টা আর ছিলোনা আমার প্রতি।
তবুও আমি সব মানিয়ে নিচ্ছিলাম।
বরকে বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম।
কিন্তু আমি আর তাকে আগের মত কাছে পাইনা।
অথচ সে আমায় বিয়ের পর থেকে যথেষ্ট ভালবাসতো।
আর আমি দেখতেও যথেষ্ট ভালো। আমাকে যে অপছন্দ করবে,এরও কোন কারণ নেই।
দেখতে দেখতে আমার ছেলের দুই বছর হয়ে গেলো।
ভাবলাম আরেকটা বেবী নিলে হয়তো বরের আচরণ ঠিক হবে।কেয়ার করবে আমার।আর যদি মেয়ে হয় তাহলে সবার ইচ্ছেও পূরণ হবে।আমার সাথে আর কেউ খারাপ ব্যবহার করবেনা।
যাতে সংসার টা টিকে যায়,সেই জন্য আরেক টা বেবী নিয়ে নিলাম আমি।
কিন্তু এখন তাদের ব্যবহার এতই খারাপ হলো যে, আমি আর মানতে পারছিলাম না।
একটা সময় জানতে পারি আমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন আমার বরকে তাবিজ করে।
আর সেই জন্য তার এই পরিবর্তন।
আগে আমি এই সব তাবিজ কবজ বিশ্বাস করতাম না।কিন্তু এখন করি,আসলেই এই সব এফেক্ট করে।
নইলে আমার সংসার টাতো ভাঙতো না।
আমি আর এসব সইতে না পেরে এর প্রতিবাদ জানাই।
কিন্তু প্রতিবাদ জানানোর পর তাদের ব্যবহার আরো খারাপ হয়।
এমন কি আমার বরও খারাপ ব্যবহারের মাত্রা ছাড়িয়ে ফেলে।
আমি প্রেগন্যান্ট তাই এসব আর বেশি নিতে পারছিলাম না।
বাবার বাসায় চলে যাই আমি।
কিন্তু আমার বর এবার আমার আর কোন খবর নেয়না।
আমার আমার ছেলের কারোই ভরণপোষণের কোন টাকা পয়সা দেয়না।
এমন কি আমার বেবী যে পেটে,সেই জন্যও কোন টাকা পয়সা দেয় না।
আমার চেকাপেও তো টাকা লাগে।
আমি ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করি।
এক দিকে আমার ছেলে।
অন্য দিকে আবার মা হতে যাচ্ছি।
আমার বর সহ সবাই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় আমার সাথে।
তাই আমি আমার বরকে ডিভোর্সের ভয় দেখাই।
যাতে ও সেই ভয়ে অন্তত আমার সাথে যোগাযোগ করে।
যেহেতু আমাদের ছেলে আছে আর আবার হতে যাচ্ছে।
তাই ভেবেছি,আর যাই করুক।ডিভোর্স হোক এটা অন্তত চাইবেনা।
কিন্তু আমি তখনই বড় ধরণের ধাক্কা খাই,যখন বুঝতে পারি।
তারা আসলে তাই চায়।
তারা চায় আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাক।
আমি সংসার টা করতে চাচ্ছিলাম খুব।
অনেক চেষ্টা করেছিলাম সংসার টাকে ধরে রাখার।
আর তারা চাচ্ছিলো আমাদের যেন ডিভোর্স হয়ে যায়।
কারণ আমি তাদের মন মত না।
তারা চেয়েছিলো তারা যা বলবে যেমন অত্যাচার করবে আমি সব সহ্য করবো।
কিন্তু আমি পারিনি শেষ পর্যন্ত।
আর হ্যাঁ বলাতো হয়নি,আমার ভাসুর রা কিন্তু আমার বরের সৎ ভাই ছিলো।
সেই জন্যই কি তারা ছেলে চান নি নাকি তা আমার জানা নেই।
যাতে বেশি সম্পত্তির মালিক না হয় আমার ছেলে।
আর ছেলে হয়ে যাওয়ায় আমার বরকেও কেড়ে নিলো তাবিজ করে আমার থেকে।
তারা ভাবতো আমার বর যদি এখন বউ ছেলের কথা মত চলে।
তাই তাদের করে বশ করে নিলো।
আমার বরকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তু সে বুঝেনি।
ডিভোর্স পেপার দুই মাস অব্দি আমি হাতে নিয়ে বসে ছিলাম।
সাইন করিনি।এত দিন শুধু বরকে বুঝিয়েছি।
কিন্তু বর বুঝেনি।
অবশেষে আমার পেপারে সাইন টা করতেই হয়।
হয়ে যায় আমাদের ডিভোর্স।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় আমি আরো ভেঙে পরি।
আমার ছেলে আর অনাগত সন্তানকে নিয়ে আমি কি করবো?
বাবা মা কত দিন দেখবে আমাদের?
আমিতো চাইনি এমন জীবন।
তবে কেন হলো এমন আমার সাথে?
অনেক দিন পর্যন্ত আমি চুপচাপ থাকতাম।
কারো সাথে কথা বলতাম না।
শুধু কান্না করতাম।
এদিকে আমার এক্স হাসবেন্ড আমাদের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।টাকা পয়সা কিচ্ছু দেয়না।এমন কি আমার ছেলেকেও না।
দিন যাচ্ছিলো এভাবেই।
হঠাৎ একদিন ফেসবুক ঘাটছিলাম।
এই সময় আমার এলাকার এক ছেলে আমাকে নক দেয়।
ওর নাম ইমরান।
একই এলাকায় বাসা আমাদের।
যেহেতু একই জায়গায় বাসা।
তাই ও আমার সম্পর্কে সবই জানতো।
ও আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট দিতে শুরু করলো।
আমাকে বুঝাতো এখন আমার সন্তান দের জন্য আমার বাঁচতে হবে।
প্রতিদিন ও আমাকে নক দিতো।
ডিপ্রেশন ভুগতাম বলে মেন্টালি সাপোর্ট দিতো।
এক সময় আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়।
ও আমার খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়।
এরপর থেকে আমার,আমার ছেলের আর আমার অনাগত বাচ্চার জন্য চেকাপ থেকে শুরু করে সমস্ত খরচ ও দেয়া শুরু করে।
আমি নিতে চাইনা বলে খুব ঝগড়া করে আমার সাথে।
বলে,বন্ধুর জন্য এই টুকুতো করতেই পারি।
আব্বু আম্মুর পর ওকে আমি আমার মাথার উপর ছায়া রুপে পাই।
আমার সিজারের ডেট চলে আসে।
সিজারের সমস্ত টাকাও ও ই দেয়।
এবার আমার একটা কন্যা সন্তান হয়।
ইমরান আমাকে বুঝায়,এবার অতীত ভুলে ওদের নিয়ে জীবন শুরু করো।
আমিও তাই করি।
অতীত পেছনে ফেলে নতুন করে বাঁচতে শুরু করি।
মেয়েটা একটু বড় হলে কলেজেও ভর্তি হই।
ইমরানই সব খরচ দেয়।
ও বলে তোমার নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
নিজের জন্য না হোক,ওদের জন্য হলেও পড়াশোনা টা শুরু করো।
আমিও তাই করি।
দিন যাচ্ছে,অতীতের ক্ষত গুলো ভুলতে শুরু করেছি মাত্র,
এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন ইমরান আমাকে যা বল্লো,
তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি…
চলবে,
#বেশি_কিছু_আশা_করা_ভুল
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#প্রথম_পর্ব
(এটা এক আপুর বাস্তব জীবনী,তাই আশা রাখছি কেউ কোন বাজে মন্তব্য করে আপুটাকে কষ্ট দিবেন না।)