#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-০৩
__________________
” কালো হুডি পড়া লোক গুলোকে বেশ অদ্ভুত লাগছে, সবাই বেশ লম্বা, পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো পোশাকে ঢাকা দেওয়া, সবাই পুরুষ না-কি মহিলা কোনো কিছু বুঝবার উপায় নেই মীরার।
সবাই আস্তে করে মীরার দিকে এগিয়ে আসছে, সবাই যতো এগুচ্ছে, মীরা ততো পিছচ্ছে, পিছতে পিছতে মীরা একদম দেয়ালের সাথে লেগে গেলো।
হঠাৎ মীরার ঘুমটা ভেঙে গেলো, পুরো শরীর ঘেমে একদম একাকার।
স্বপ্নগুলো মীরার কাছে আজ-কাল যেনো অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে।
মীরা স্বপ্নটার কথা মনে করে চিন্তা করলো, রুদ্র ভাইয়ের কথাটাই কি ঠিক হয়ে যাচ্ছে, আমি কি সত্যি তাহলে পাগল হয়ে যাচ্ছি?
রুদ্র ভাইয়ের সাথে কি এ নিয়ে কথা বলবো?
না উনি হয়তো আমার কথাগুলো নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেবে নয়তো আমাকে ফের অপমান করে ছাড়বে।
উনার কাছে এসব অপমান পাওয়ার চেয়ে এসব স্বপ্ন দেখা অনেক ভালো।
দরকার হলে এসব ভূত-পেত্নীর সাথে বসবাস করা শুরু করবো তবুও উনাকে জানিয়ে হাসির পাত্রী হতে চাই না।
মীরা আর কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে চলে গেলো।
” মীরার আম্মা মীরার হাতে চুমু খেয়ে বললো, মাশাআল্লাহ আমার মীরাকে তো আজ বেশ লাগছে, কারো নজর যেনো না লাগে।”
– মীরা মনে মনে বললো, যাঁর নজরে পরতে চাই, সে যে ফিরেও তাকায় না আম্মা।
– ইরা কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো, মীরা কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, আমি মীরা কে ঠিক নজর লাগাবো, তাঁর কারণ হলো, মীরা আমার ছোট তবুও সবাই মীরা কে-ই ভালোবাসে, আমাকে কেউ বাসেনা।
ইরার আম্মা ইরার কান মুচড়ে ধরলো, কিহ তুই আমার মেয়ের দিকে নজর লাগাবি, সাহস তো তোর কম নয়,
” ইরা আহ্ বলে চিৎকার দিয়ে বললো, আম্মা লাগছে কিন্তু, আমি ভুলটা কোথায় বললাম বলো, তুমি, বাবা, রুদ্র ভাইয়ের আম্মাও ওকে বেশি আদর করে
, শুধু রুদ্র ভাই…….
ইরা বাকি কথাটা পুরোপুরি ভাবে আর প্রকাশ করেনি।
– মীরা ইরার কথা ঠিক বুঝতে পেরে ছলছল চোখে ইরার দিকে তাকালো।
মীরা কথা কাটানোর জন্য ইরা কে বললো, ইরা আপু তোমার ফাইনাল এক্সাম কবে?
” ইরা রিলাক্স মুডে বললো, তা জানায়নি এখনো, তবে যেদিন হোক কোনো সমস্যা নেই, কারণ হলো আমি ওভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
.
.
.
মীরা রুম অন্ধকার করে বসে আছে, চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে, মীরার ইচ্ছে করছে কারো বুক জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে।
হঠাৎ কেউ শীতল হাতে মীরার চোখ গুলো মুছিয়ে দিয়ে, আলতো করে কপালে চুমু খেলো।
-শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে মীরা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি, মুক্ত মনে সিক্ত হয়ে অজানা লোককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মীরার হৃদয়ে অজানা এক ভালো লাগা কাজ করছে, মীরা লোকটিকে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো, একটু খানি ফাঁকা নেই, যেখানে জড়িয়ে আছে দু’টি হৃদয় এক মনে।
অচেনা লোকের শীতল নিশ্বাসে মীরার হাত পা যেনো কাঁপছে, শীতল স্পর্শ গুলো ঘাড়ে
এসে মীরার বুকে গিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
মীরা অজানা লোকের জ্যাকেট টা খামচে ধরে রেখেছে আরো শক্ত করে ।
“মায়াবী স্বরে কেউ ডাবল কন্ঠে বলে উঠলো, ইউ আর মা’ই ডার্ক ডায়মন্ড,ডু ইউ নো ইউ আর মা’ই কুইন, ডু ইউ নো ইউ আর মা’ই হার্ট।”
– কথাগুলো মীরা শুনছে আর খুব গভীর মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে।
কণ্ঠটা প্রতিধ্বনি হওয়াতে মীরা চিনতে পারছে না।
কন্ঠ টায় আছে এক অদ্ভুত মাদকতা, যে মাদকতায় মন প্রাণ উচ্ছ্বসিত উল্লাসে জুড়িয়ে যায়।
হঠাৎ কথাগুলো মস্তিষ্কে গিয়ে ধাক্কা দিলো।
মীরা দূরে সরে দাঁড়ালো।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে মীরা বলে উঠলো, কে আপনি?
কেনো এসেছেন, বার-বার কেনো আমায় মায়া জালে ঝরাচ্ছেন?
” মীরার কথা শুনে শীতল মানব ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো।
হাসির শব্দে পুরো ঘর যেনো নেড়েচেড়ে উঠলো।
কি বলছো মীরা তুমি কি আমায় চিনতে পারছো না, না চিন্তে চাইছো না?
মীরা ভয়ে ভয়ে বললো, কে আপনি সত্যি আমি চিনতে পারছি না,আর চিনতেও চাইছি না, আমার কাছে আপনাকে সম্পূর্ণ অচেনা লাগছে,
-আমি কে তোমায় আমি কিছুই বলবো না এখন। সময় হলে তুমি আমায় ঠিক খুঁজে নিবে ।
-মীরা অন্ধকারে শীতল মানবকে দেখার চেষ্টা করছে, বাহিরের চাঁদের আলোতে আবছা আলোয়তে এক কালো ছায়ার মতো দেখাচ্ছে। মীরার বুক ধুকপুক করছে, অজানা ভয় এসে বাসা বেঁধেছে।
– ভয় পাচ্ছো কুইন, তুমি ভয় পাচ্ছো তাও আমার কুইন?
হাহাহাহা…..
মীরা তুমি নিজেও নিজেকে চেনো না, তুমি কে?
– মীরা অবাক চোখে ছায়া মানবকে বললো,
কী বলছেন আপনি, আমি কে মানে কি বুঝাতে চাইছেন?
” ছায়া মানব মীরার হাত দু’টি নিজের কাঁধে রেখে মীরার উষ্ণ ললাটে নিজের শীতল ললাট ছুঁইয়ে দিলো।
একে অপরের উষ্ণতা পেয়ে অজানা এক ভুবনে হারিয়ে গেলো।
ছায়া মানব মীরার কানে কানে বললো, আগে তোমার পঁচিশ বছর পূর্ণ হোক, আর তো কিছুদিন বাকি, সব অজানা রহস্য জেনে যাবে তুমি, কে তুমি , আর কে আমি ?
তাঁর আগে একটা কাজ করে রাখি তোমাকে নিজের ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখলাম বলে, মীরার ঘাড়ে সজোরে এক কামড় বসিয়ে দিলো।
মীরা আহ্ বলে চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল।
– ছায়া মানব মীরার কপালে ভেজা চুমু খেয়ে বললো, খুব শীঘ্রই তোমাকে আমি নিজের করে নিবো।
তোমার আহ্ বলে চিৎকার দেয়াটা আমার বুকে এসে লাগলো, কিন্তু কি করবো বলো, কামড়টা যে খুব জরুরী ছিলো, নয়তো ওঁরা তোমায় ঠিক পেয়ে যাবে, ওঁরা যে তোমার ঠিকানা পেয়ে গেছে।
ওঁরা যে তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে, খুব করে চাইছে, যা আমি কখনো হতে দিবো না, তুমি যে আমার ডার্ক ডায়মন্ড।
ছায়া মানব টি যাওয়ার আগে আবারও মীরার হাতে আদর মাখা উষ্ণ চুম্বনে ভরিয়ে দিলো।
.
.
.
নিভু নিভু চোখে মীরা চোখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করছে,সকাল হয়েছে আলো দেখেই স্পর্শ বুঝা যাচ্ছে, ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে মীরা।
মীরা ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখলো কি যেনো শুকিয়ে শক্ত হয়ে লেগে আছে।
মীরা আস্তে করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে বসলো।
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলো, এ কয়েকদিনে নিজের চেহারার কি যে বেহাল দশা হয়েছে তা একবারও দেখেনি মীরা, হঠাৎ ঘাড়ে কোনো কিছুর চিহ্ন দেখে আৎকে উঠলো।
ঘাড় একদম ফোলে আছে, গোলাকার ভাবে কেউ কামড় বসিয়ে দিয়েছে, রক্ত গুলো শুকিয়ে গেছে, যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে এটা যে বিষাক্ত দাঁতের দাগ।
হঠাৎ মীরার মনে আবছা আবছা কিছু মনে পরতে লাগলো, কোনো এক ছায়া মানব এসেছিলো কাল রাতে বাকিটা মীরার কিছুই মনে নেই।
মীরা মাথাটা চেপে ধরে মনে করবার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না।
মীরা এটাকে স্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু আবার মনে হলো স্বপ্ন হলে তো এই কামড়ের দাগটা থাকতো না।
ভয়ে মীরার গলা শুকিয়ে আসছে, মীরা মনে মনে ভাবছে এবার কি সত্যি তাহলে রুদ্র ভাইয়ের চেম্বারে যেতে হবে?
মীরা ভাবছে আর ঘামছে, মীরার কথাগুলো পৃথিবীর সবাই বিশ্বাস করলেও রুদ্র ভাই যে করবে না, মীরা ঠিক করেই জানে।
আমি পাগল না হলেও রুদ্র ভাই ঠিক আমাকে পাগলের আখ্যা দিয়ে ছাড়বে। এদিকে ভয়ে ভয়ে মীরা ভেতরে ভেতরে পুড়ে যাচ্ছে।
এদিকে কেউ একজন মীরা কে পেতে খুব করে কালো জাদুর আয়োজন করছে।
একটা পুতুলকে অনেকগুলো লাল সুতো বেঁধে একটা গাছের ডালের সাথে বেঁধে ফেললো, যাতে মীরা আস্তে আস্তে তাঁর বশীভূত হয়ে যায়।
তারপর অনেকগুলো কঙ্কালের মাথায় লাল সিঁদুর পড়িয়ে, তাদের পূজো শুরু করলো।
লাল কাপড় পরিহিত কিছু লোক এসে লোকটাকে বললো, হুজুর আপনার মীরার খোঁজ পেয়েছি।
লোকটা হাত কেটে আগুনের মধ্যে রক্তগুলো দিয়ে দিলো।
লাল পোশাক পরিহিত লোক গুলোকে চলে যেতে বলে, নিজে পৈশাচিক হাসিতে ফেটে পড়লো।
চলবে——–