#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব২১
পাতলা সুতি তাতের নীল রঙা শাড়ি গায়ে, ভেজা লম্বা চুলে দাঁড়িয়ে আছে জেরিন।স্পর্শের সাথে দেখা হওয়ার পর এই প্রথম শাড়ি পরা।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুলের পানি গুলো আলতো হাতে মুছতে ব্যস্ত জেরিন।উপর হয়ে বুকে বালিশ চেপে শুয়ে থাকা স্পর্শ মোহিত নয়নে তার প্রিয়তমাকে দেখে যাচ্ছে। চুল গুলো বাম পাশ হতে ডান পাশে নিতেই স্পর্শের চোখে পরলো ভেজা পিঠ।ভ্রু কুঁচকে সেদিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো।আড়মোড়া ভেঙে ধির পায়ে উঠে এসে জেরিনের পিছনে দাঁড়ালো। আয়নায় স্পর্শ কে থমকে গেলো জেরিন।চোখ নামিয়ে নিলো লজ্জায়।পিছন থেকে হাত সামনে বাড়িয়ে তোয়ালে নিজের করে নিলো স্পর্শ। জেরিন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আয়নায় তাকালো।স্পর্শ মৃদু হেসে জেরিনের পিঠে তোয়ালে ছোঁয়ালো।জেরিন শিহরিত হয়ে পিঠে কাঁপুনি সৃষ্টি হলো।সযত্নে পিঠ মুছে চুল গুলো ও মুছে দিলো স্পর্শ। জেরিন চোখ বন্ধ করে আছে।চুল মুছা হলে তোয়ালে উন্মুক্ত দেহে গলায় দিয়ে পিছন থেকে শাড়ির ভিতরে কোমর জড়িয়ে ধরলো জেরিনের।জেরিন কেপে উঠে স্পর্শের হাত খামছে ধরলো।স্পর্শ গভীর এক চুম্বন করল ঘাড়ে।জেরিনের চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।স্পর্শ নিজের দিক ফিরিয়েই চোখে চুমু খেয়ে সেই জল চুসে নিলো।জেরিন চোখ খুলে এক মুগ্ধকর চাহনিতে তাকালো।স্পর্শ শান্ত কন্ঠে শুধালো,
—-“এখনো কাঁদতে হবে?”
জেরিন মাথা দুলিয়ে না বলল।স্পর্শ দুহাতে গাল ছুঁয়ে বলল,
—-“ধন্যবাদ সেই বৃষ্টি এবং মাওলানা সাহেব কে।যিনি কাগজে কলমে এবং ধার্মিক মতাবে তোমাকে আমার করেছেন।”
জেরিন স্পর্শের বুকে কপাল ঠেকিয়ে লজ্জিত মুখে হাসলো।স্পর্শ মাথায় চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে বলল,
—-“এই প্রথম জেরিন মেহরাব কে শাড়িতে দেখলাম।আমি বিস্মিত,মুগ্ধ,আহত।”
জেরিন লজ্জায় স্পর্শ কে আলতো ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে পালাতে চাইলো।কিন্তু ব্যর্থ হলো সে।পিছন থেকে শক্ত হাতে স্পর্শ টেকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলল,
—-“প্রথমে নিজের দিকে টেনে এখন দূরে সরিয়ে দিচ্ছো?তোমরা মেয়েরা খুবই সার্থপর। ”
জেরিন মাথা নিচু করে দুঃখিত কন্ঠে বলল,
—-“আমি দুঃখিত! আসলে আমার খুব লজ্জা করছিল তাই। ”
স্পর্শ হেসে বলল,
—-“আমি তো মজা করছিলাম আর তুমি সিরিয়াস হয়ে গেলে?”
—-“আমার সিরিয়াস হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।প্রতিটা মুহূর্তে যে আতঙ্কিত হয়ে ছিলাম। ”
স্পর্শ লম্বাশ্বাস ফেলে জেরিন কে নিজের দিক ফিরিয়ে বলল,
—-“গতকাল রাতে তুমি একান্তই আমার হয়ে গেছো।এমন কথা আর শুনতে চাই না।”
জেরিন মৃদু হেসে সম্মতি দিলো।স্পর্শের সুন্দর চুলে হাত বুলিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।স্পর্শ সেদিকে তাকিয়ে এক গাল হাসি দিলো।
.
.
.
.
আধভেজা চুল আর শাড়িতে জেরিনকে দেখে অনেকটা অবাক হলেন নাজমুন বেগম।সন্দিহান চোখে জেরিনের শরীরে চোখ বুলিয়ে নিলেন।বেখেয়ালি ভাবে গলায় চোখ যেতেই বেশ উত্তেজিত হয়ে গেলেন তিনি।জেরিন রান্না ঘরে মামির কাছে গেলো।সেখানেই রিয়া কফি বানাতে ব্যস্ত ছিল।জেরিন কে দেখেই মৃদু উচ্ছাসিত হয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-“আরে জেরি আপা।আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না শাড়ি পরেছে সে।মাশাল্লাহ! ”
জেরিন রিয়ার উচ্চস্বর শুনে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচুস্বরে বলে,
—-“কী করছিস তুই?চুপ কর রিয়ু,আম্মু শুনে ফেলবে।”
রিয়া আড়চোখে সোফায় বসে থাকা নাজমুন বেগমের দিকে তাকালেন।তিনি ওদের দিকেই চেয়ে আছেন।রিয়া ভ্রু নাচিয়ে আস্তে করে প্রশ্ন করে,
—-“কী ব্যপার জেরি?গলায় দেখি ভালবাসার প্রহরের চিহ্ন সোনা।”
জেরিন দ্রুত গলায় হাত দিলো।আচল টেনে গলা ঢেকে নিলো।চোখ পাকিয়ে বলে,
—-“চুপ কর কেউ শুনবে। ”
রিয়া ঠোঁটে টিপে হেসে দিলো।সেলিনা জেরিন কে দেখে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলেন,
—-“একি সত্যি তুই?কত বছর পর শাড়ি পরলি।অনেক সুন্দর লাগছে তোকে।”
জেরিন হাসার চেষ্টা করে বলে,
—-“হঠাৎ মনে হলো পরা উচিত।”
সেলিনা জেরিনের গাল ছুঁয়ে বলেন,
—-“মাঝে মাঝে পরবি, তাহলেই ভালো লাগবে।”
—-“আমিও সেটাই বলি মামি।এভাবে এক ভাবে নিজেকে বন্ধি করে রেখে কী হবে?রাগ,ক্ষোভ দেখিয়ে কী মনকে বেধে রাখা যায় বলুন?”
স্পর্শের কন্ঠ পেয়ে পিছনে তাকালো সবাই।সাদা পাঞ্জাবি গায়ে ভেজা চুল গুলো সুন্দর ভাবে সেট করা মৃদু হাসি নিয়ে এদিকেই এগিয়ে এলো।জেরিন মুগ্ধকর চোখে তাকিয়ে রইলো।নাজমুন বেগম বার কয়েক স্পর্শ কে দেখে নিজেই বিড়বিড় করে বলেন,
—-“মাশাল্লাহ!”
নিজের কথায় নিজেই অবাক হলেন।স্পর্শ কে দেখে জসীম সাহেব বাজারের ব্যাগ হাতে রান্নাঘরে এলেন।হেসে বলেন,
—-“কী ব্যাপার সবাই রান্না ঘরে?”
স্পর্শ স্বভাবসুলভ সালাম দিলো জসীম সাহেব কে।সেলিনা হেসে বলেন,
—-“জেরিন শাড়ি পরেছে সেটাই বলছিলাম।”
স্পর্শ হাতে ব্যাগ দেখে বলে,
—-“বাবা বাজারে যাচ্ছেন?”
জসীম সাহেব ব্যাগে চোখ বুলিয়ে হেসে বলেন,
—-“হ্যা ছুটির দিন তো আজ। ”
স্পর্শ রিয়ার হাত থেকে কফির মগ নিয়ে কয়েক চুমুক খেয়ে দুষ্টু স্বভাবে বলে,
—-“শালিকা রিলাক্স, আমাদের ভাই বোনের ভালবাসা বাড়বে।বাবা আমিও যাচ্ছি বাজারে, চলুন।”
জসীম সাহেব একটু অবাক হয়ে বলেন,
—-“তুমি যাবে? কিন্তু আগে তো মনে হয় বাজারে যাওনি।”
স্পর্শ মৃদু হেসে বলে,
—-“মাঝে মাঝে ভাইয়া আর আমি যেতাম।আর ভাইয়ার বিয়ের সময় তো আমাকেই সব দেখতে হয়েছে।”
কথার পিঠে জসিম সাহেব প্রশ্ন করল,
—-“কবে বিয়ে হয়েছে ভাইয়ার? ”
স্পর্শ কথার তালে বলে,
—-“কক্সবাজারে আমাদের বিয়ের কিছু দিন পরই।”
কথাটা বলে স্পর্শ থমকালো।জেরিনের দিকে স্তির চোখে তাকায়।দুজনেই স্তির এখন।জসীম সাহেব বিষয়টা বুঝে বলেন,
—-“তাহলে চলো যাই?”
____________________________
ড্রয়িংরুম আর বসার ঘর নিয়ে পায়চারি করছে মেয়ে জাতি সবাই।শুধু মেয়ে জাতি বললে ভুল হবে, সাথে লতিফ সাহেব ও আছেন।নাজমুন বেগম বুঝে পাচ্ছেন না হচ্ছে টা কী?সেলিনা একটু পর পর উকি দিচ্ছে রান্না ঘরে।রিয়া আর জেরিন দুদিক থেকে পায়চারি করতে করতে ধাক্কা খেয়ে চমকে গেলো।দুজনেই মৃদু বিরক্তি প্রকাশ করল চোখে।আবার ও পায়চারি শুরু করল দুজন।সেলিনা সোফায় ঠাস করে বসে গা এলিয়ে দিলেন।জেসমিন সেলিনার পাশেই ধপ করে বসেন।নাজমুন বেগম কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলেন,
—-“আজ কী হতে চলেছে আল্লাহই জানে।রান্না ঘরে ছেলেরা করছেটা কী?শুনলাম স্পর্শ অনেক বড় ঘরের ছেলে তা রান্নাঘরে কী পা রেখেছে কোনো দিন?”
জেরিন মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে আবারো পায়চারি শুরু করে।সেলিনা শাড়ির আচলে হাওয়া দিতে লাগে নিজেকে।আচলের হাওয়া খেতে খেতে বলেন,
—-“আর যাই হোক বাজার কিন্তু সেই রকম করেছে স্পর্শ। মনে হচ্ছে ভালোই করবে রান্না।”
নাজমুন বেগম জেরিন কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
—-“কিরে তুই নিষেধ করলি না কেনো ছেলেটা কে?এখন যদি হাত পা পুড়ে যায়?”
জেরিন পাত্তা না দিয়ে মৃদু ঝারি দিয়ে বলে,
—-“ধুর! উনি কী তোমার পছন্দের নায়কের মতো?বিদেশে রান্না থেকে সব কাজই করেছে।উনার কাজ একদম পরিপাটি। ”
নাজমুন বেগম বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বলেন,
—-“তাহলে তুই পায়চারি করছিস কেনো?”
জেরিন এবার চিন্তিত হয়ে বলে,
—-“আরে ওদের রান্নাঘর তো বিশাল বড়।আমাদের এখানে সব খুজে রান্না করতে পারবে কী না সেটা ভাবছি।”
নাজমুন বেগম অবাক হলেন।তার মেয়ে ছেলেটা কে নিয়ে এতো সিরিয়াস!রান্নাঘর থেকে মৃদু চিৎকার এলো স্পর্শের।জেরিন দ্রুত কুচি তুলে ছুটে গেলো।সাথে রিয়া ও গেলো।রান্নাঘর এসেই চোখ গোল হয়ে গেলো দুজনের।অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা তিন জন রাঁধুনির দিকে।জেরিন বিস্মিত কন্ঠে বলে,
—-“আপনি?”
রিয়া চোখ কপালে তুলে বলে,
—-“ফুপা, নাজমুল চাচ্চু?”
দুজনের কথা শুনে তিন জন দরজায় তাকায়।স্পর্শ দাত কেলিয়ে বলে,
—-“প্রেয়সী তুমি এখানে?ইয়ে মানে জেরিন তুমি?”
জেরিন কিছুটা ধাক্কা খেলো।গলা পরিষ্কার করে বলে,
—-“চিৎকার শুনে এলাম কিন্তু এসে দেখি তিন জনে রঙিন হয়েছেন।হলুদে কী অপরুপ সেজেছেন।”
স্পর্শ বোকা হাসি দিয়ে বলে,
—-“আমি বলছিলাম এটা হলুদ।নাজমুল মামা বললেন কোনো মশলা হবে।বাবা বললেন ধনিয়া গুড়া।তাই টানা টানি করলাম মাংসে দেওয়ার জন্য।কোটার মুখ খুলে সবাই হলুদ হলাম আর কি।”
নাজমুল হাসার চেষ্টা করে বলেন,
—-“মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়।”
জসীম সাহেব কিছুটা লজ্জায় চুপ করে রইলেন।জেরিন হেসে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।রিয়া ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
—-“যাই হোক ছবি তুলে নিলাম আমি।এমন হলুদ জীবন্ত মাংস আমি আর দেখিনি গাইস।”
#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব২২
গম্ভীর মুখ করে থাকা জেরিনের মুখে দম ফাটা হাসি।আশ্চর্য সোফায় বসে থাকা সবাই।রিয়া ফোনের স্ক্রিণে ছবিটা ভালো করে দেখে জেরিনকে বলে,
—-“দেখ,কী চমৎকার মাংস।”
জেরিন শাড়ির আচল দিয়ে মুখ চেপে হাসতে হাসতে ছবিটা দেখে।জেরিন জেনো আরো জোরে হেসে দিলো সেই সাথে রিয়া ও।সবাই ওদের হাসি দেখে হতভাগ।কী এমন হলো যে হাসতে হবে?সেলিনা কিছুটা হাসি মুখ করে বলে,
—-“হ্যা রে তোরা হাসছিস কেনো?কী এমন হয়েছে আর কী দেখছিস তোরা?”
রিয়া কোনো বাক্য ছাড়াই ফোনটা চোখের সামনে ধরে।সাথে সাথে বিস্মিত হয়ে সেলিনা, জেসমিন, লতিফ সাহেব কয়েক মিনিট চুপ থেকে ফিক করে হেসে দিলেন।নাজমুন বেগম তাদের হাসি দেখে কোতূহল চাপতে না পেরে তাদের সাথে ছবিটা দেখে।না চাইতেও তিনি শব্দ করে হেসে দিলেন।হাসতে হাসতে বসা থেকে উঠে রান্না ঘড়ে ছুটলেন।হলুদ মাখা অবস্থায় তাদের রান্না সম্পূর্ণ হলো।নাজমুন বেগম রান্না ঘরের দরজায় পা রেখে একবার নিজের চোখে সবটা দেখে হেসে দিলেন আরো।জসীম সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
—-“এই বয়সে হলুদ মেখে কী বিয়ের সখ জেগেছে?”
নাজমুন বেগমের কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জসীম সাহেব বলেন,
—-“যা কী বলছো এসব?এখন তো ছেলে মেয়েদেদ বয়স।”
—-“তা্হলে এমন ভূত সাজলেন কেনো?”
স্পর্শ কিছুটা নিচুস্বরে বলে,
—-“আসলে আন্টি আমি বলেছি এটা হলুদ কিন্তু বাবা ধনিয়া গুড়ো আর মামা অন্য মশলা বলায় টানাটানির এক পর্যায় কোটা খুলে যায়।”
নাজমুন বেগম এই প্রথম স্পর্শের কান টেনে বলেন,
—-“আহারে আমার ছেলেটা।ও চিনতে পারলো আর তোমরা? ”
ঘটনার এক সময় নাজমুন বেগম এবং স্পর্শ হাসি থামিয়ে নজর নামিয়ে নিলো।এই দৃশ্য জসীম সাহেব আর নাজমুল অবাক চোখে দেখে কিছুটা তৃপ্তির হাসি দিলেন।নাজমুন বেগম গলার স্বর গম্ভীর করে বলেন,
—-“রান্না হলে সবাই বাইরে এসো।”
কথাটা বলে নাজমুন বেগম চলে গেলেন।স্পর্শ মাথা নিচু করে মৃদু হাসলো।নাজমুল স্পর্শের কাধে হাত রেখে উচ্ছ্বাসিত গলায় বলে,
—-“কী স্পর্শ, কেমন লাগছে এখন?”
স্পর্শ উত্তরে এখনো হাসলেন।জসীম সাহেব পিঠে চাপড় মেরে বলেন,
—-“একদিন নাজমুন নিজে তোমাকে জামাই না ছেলে হিসেবে বরণ করবে।”
স্পর্শ মৃদু গলায় বলে,
—-“ইনশাল্লাহ বাবা!”
.
.
.
.
টেবিলে সুন্দর করে খাবার সাজিয়েছে স্পর্শ। জেরিন সাহায্য করতে চাইলে স্পর্শ বাধা দেয়।বাড়িতে বেশ গরম ভাব হচ্ছে আজ।নিশ্চুপ বাড়িতে কেমন গমগমে আভাস।কিছুটা হাসি কিছুটা আনন্দের সুর ভেসে বেড়াচ্ছে।জসীম সাহেব গায়ের হলুদ ঝারতে ঝারতে বলেন,
—-“যাই ফ্রেশ হয়ে আসি। ”
জেসমিন হাসতে হাসতে বলেন,
—-“ফ্রেশ হয়েই আসো নাহলে তোমাদেরই রান্না করে ফেলবো আমরা।”
নাজমুল গেস্ট রুমে যেতে যেতে বলেন,
—-“আপু এটা ঠিক না।একটা ভুল হতেই পারে তাই বলে এতো অপমান?”
সবাই আবারো দম ফাটা হাসি দিলো।জেরিন স্পর্শের হাত আলতো ধরে শান্ত গলায় বলে,
—-“শুনছেন,আপনি ও চলুন ফ্রেশ হবেন।”
স্পর্শ স্তির চোখে জেরিনের দিকে চেয়ে আছে।জেরিন এমন গভীর চাহনি দেখে লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে।নিচুস্বরে বলে,
—-“ফ্রেশ হতে চলুন।”
জেরিন হাতটা ছাড়তেই স্পর্শ মৃদু কন্ঠে বলে,
—-“ছাড়লে কেনো?”
জেরিন একবার স্পর্শের মুখের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় “ধ্যাত” বলেই রুমে ছুটে গেলো।স্পর্শ মাথায় হাত চালিয়ে এক গাল হাসি দিলো।বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে রুমে গেলো।জেরিন আলমারি থেকে নীল রঙের টি- শার্ট আর কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট বেড় করে বিছানায় রাখে।স্পর্শ রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো।জেরিন ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে ভিত কন্ঠে বলে,
—-“দরজা বন্ধ করলেন কেনো?”
স্পর্শ কিছু না বলে মুচকি হেসে এগিয়ে আসে।জেরিন একটা সময় দেওয়ালের সাথে ঠেকে যায়।স্পর্শ দুহাত দুপাশে দেওয়ালে রেখে জেরিনের মুখের উপর ঝুকে শিতল কন্ঠে বলে,
—-“বুঝলাম না, গতকাল রাত থেকে কেমন মাতাল বলে বোদ হচ্ছে নিজেকে।তুমি কী কিছু খাবিয়েছো আমায়?”
জেরিনের বুকের ভিতর অদ্ভুত শব্দ শুরু হলো।স্পর্শ এক হাত দেওয়াল থেকে সরিয়ে জেরিনের কোমরে রাখে।জেরিন চোখ বন্ধ করে স্পর্শের পাঞ্জাবি খামচে ধরে।কাপা কাপা গলায় বলে,
—-“কী করছেন আপনি?”
স্পর্শ নেশাক্ত কন্ঠে বলে,
—-“জানি না!”
স্পর্শ জেরিনের গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।জেরিন মৃদু কেপে উঠে।দক্ষিণের জানালা বেদ করে এক দলা শিতল হাওয়া এসে দুজন কে ছুঁয়ে যায়।জেরিন লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে হেসে স্পর্শ কে ধাক্কা মেরে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
____________________________
দিনটা অনেক ভালোই কেটেছে আজ।সবাই হেসে খেলে পুরোটা দিন মেতে ছিল।নাজমুন বেগম আজ তেমন দূরে দূরে ছিলেন না।সন্ধ্যায় স্পর্শ সবাইকে আইসক্রিম এনে খাওয়ালো।রাতে এক সাথেই সবাই খেয়ে যে যার রুমে প্রবেশ করল।স্পর্শ বিছানায় গালে হাত রেখে বসে আছে।জেরিন এশার নামাজ পড়ে কিছু দোয়া পড়ে স্পর্শের শরীরে ফু দিলো।স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে জেরিনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
—-“আম্মু ও আমাকে এভাবে ফু দিয়ে দেয়।বাবা কেও দেয় কিন্তু আমাদের সামনে পরলে বাবা বেশ লজ্জা পায়।”
বাবার কথা বলতেই জেরিন মৃদু উত্তেজনা নিয়ে বলে,
—-“আপনি আমাকে বলেন নি কেনো ডাক্তার আপনার বাবা?সেদিন কেবিনে আমাকে যেভাবে ধরলেন আমি তো ভয় পেয়ে ছিলাম।”
স্পর্শ জেরিন কে এক হাতে টেনে কাছে আনে।বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-“বললে কী সহজে যেতে বাবার কাছে?বাবা কিন্তু অনেক ভালো।”
জেরিন স্পর্শের বুকে মাথা রেখে বলে,
—-“বাবা বলেছে আমাকে, আপনি কাজ নিয়েই ছিলেন তাই উনি ও অবাক।”
স্পর্শ শব্দ করে হেসে বলে,
—-“বারে যদি ব্যস্ত না থাকতাম তোমার জায়গা অন্য কেউ নিয়ে যেতো না?”
জেরিন মৃদু আঘাত করে স্পর্শের বুকে।অভিমান নিয়ে বলে,
—-“বাজে কথা বলবেন না তো।”
—-“আচ্ছা তাহলে ভালো কথা বলি?”
জেরিন চোখ ছোট করে স্পর্শের দিকে তাকালে সে হেসে দেয়।ভালো করে জেরিন কে ধরে বিছানায় শুয়ে বলে,
—-‘বড্ড নেশা ধরেছে।”
জেরিন মৃদু বিস্ময় নিয়ে বলে,
—-“আপনি নেশা করেন?”
স্পর্শ থতমত খেয়ে বলে,
—-“তোমার তাই মনে হলো?আমি তো ভালবাসার কথা বলছি।”.
জেরিন বেশ লজ্জা পেলো।স্পর্শের বুক থেকে উঠে পাশের বালিশে মাথা রাখে।চোখ বন্ধ করে নিচুস্বরে বলে,
—-“আপনি যে এতো পচা আগে জানতাম না।”
স্পর্শ অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলে,
—-“বউকে ভালবাসলে কেউ পচা হয়ে যায়?”
জেরিন এই কথা শুনে মৃদু কেপে উঠে।বালিশে মুখ গুজে নেয় লজ্জায়।স্পর্শ মুচকি হেসে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জেরিন কে।কাধে মাথা রেখে বলে,
—-“লজ্জা পাচ্ছে মিসেস মেহরাব?”
জেরিন লজ্জায় অস্ফুটে বলে,
—-“আপনি ইচ্ছে করে লজ্জা দিচ্ছেন।”
—-“ইচ্ছে করে লজ্জা কীভাবে দেয় শুনি?”
জেরিন কাধ থেকে স্পর্শের মাথা সরিয়ে সোজা হয়ে শোয়।স্পর্শের গাল টেনে বলে,
—-“লজ্জা এভাবে দেয়।”
কথাটা বলেই স্পর্শের বুকে মুখ লুকায়।স্পর্শ হেসে বলে,
—-“মন আজ আমার ডুবে যেতে চাইছে প্রেয়সী, তবে কেনো দিচ্ছো এই বাধা?একটু ছুঁয়ে দেখো মন আমার, পাবে খুজে সুখেরই ঠিকানা।প্রতিটা প্রহর হয়ে যাবে “ভালবাসার প্রহর।”
চলবে
চলবে