#ভালবাসার_মেঘ_বৃষ্টি
#Avigya_Ayaat
পর্বঃ৬ (শেষ পর্ব)
আহিকা ছেলেটির কন্ঠ আহামের কন্ঠের সাথে মিলালোন চেষ্টা করে। কিন্তু কন্ঠটা আহামের না।
হঠাৎ একটা ছেলে আহিকার হাত ধরে। আহিকা কি করবে ভেবে না পেয়ে তার মাথায় থাকা চুলের কাঠি হাতে নিয়ে সেই ছেলের হাতে পাড় দেয়।
ছেলেটি চিৎকার করে হাত ছেড়ে দেয়।
আরেকটা ছেলে আহিকাকে ধরতে আসে তর সাথে ও একি কাজ করে।
আহিকা দুজনের হাত বেধে তাড়াতাড়ি রুমের লাইট জ্বালায় আর ছেলেদের দিকে তাকিয়ে দেখে আহামের দুই বন্ধু। আহিকার তা দেখে মাথায় আরো রাগ ওঠে যায়।
আহিকা দুজনের হাত -পা বেঁধে রূপাকে ফোন দেয়। আর সে কোথায় আছে বলে। কিছু সময় পর রূপা সেখানে আসে। আহিকা আর রূপা দুজনকে নিয়ে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে যায়।
ক্যাম্পাসে গিয়ে আহিকা দেখে আহাম তার তার কিছু বন্ধু সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আহামকে দেখে আহিকার রাগ হয় আর সাথে সাথে আহামের কাছে গিয়ে গালে জোরে চড় বসিয়ে দেয়।
হঠাৎ এমন হবার কারনে কি হয়েছে তা বুঝতে আহামের একটু সময় লাগে। আহাম রাগে গালে হাত দিয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আহিকা ঃ আপনাদের মতো অসভ্য মানুষ মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে, অন্যায় করবে আর আমরা কিছু বলতে পারবো না । আচ্ছা এতোই যদি অন্যের কথা শুনতে মন না চায় তাহলে ভাল হয়ে যেতে পারেন না। তা কেনো হবেন আপনারা তো পারেন কেউ আপনাদের উচিত কথা বললে তাদের সাথে খারাপ করতে। তবে এইবার তা হবে না,আমি অন্যদের মতো দূর্বল না।
রিতাঃ এই মেয়ে কি বলছো এসব? [টিনার নামের বদলে রিতা নাম লেখা ]
আহিকাঃ কি আর বলবো বলেন….. সেইদিন আপনাদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে সেই লোককে দিয়েছি বলে যা শুরু করেছেন। সেদিন চড় খেয়ে ও শিক্ষা হয় নাই আর আবার দুজনকে দিয়ে কিডনাপ করে আমার সাথে খারাপ কিছু করার প্ল্যান করেছিলেন।
আহাম রাগে বলে…
আহামঃ ফালতু কথা বলবি না একদম।
আহিকাঃ একদম তুই তুই করে কথা বলবেন না।
রিতাঃ তোর সাথে তো আমাদের কথা বলার ইচ্ছা নেই তাও বলছি।
আহিকা ঃ তাহলে আমি ও তুই করে বলবো কারন আমার তোদের মতো লোকদের সাথে ও কথা বলার বিন্দু পরিমান ইচ্ছা নেই। আহাম কি জেনো বললি আমি ফালতু কথা বলছি। তাহলে তোর সাথে যে আরো দুইটা শয়তান থাকে তারা কোথায়?
রিতাঃ হয়তো কোথাও গেছে।
আহিকাঃ একটু অপেক্ষা কর নিয়ে আসছি।
এরপর আহিকা দুইজন কে নিয়ে আসে।
রিতাঃ রাকিব আর রনি তোদের এই অবস্থা কেনো?
আহিকাঃ আমি করেছি।
রিতাঃ তোর সাহস কি করে হলো?
আহিকাঃ আমার সাহস আছে তাই তো এদের এই অবস্থা । আহাম আর তোদের বলছি আমার সাথে কখনো লাগতে আসিস না। আমি আহিকা যে অন্যায়ে লড়তে জানি।
রিতা ঃ ওরা তোর সাথে কি করেছে শুনি?
আহিকা ঃ করে নাই, করতে গিয়েছিলো, তবে শিক্ষা আমি দিয়ে দিয়েছি। তোর বন্ধুদের কাছে থেকে শুনে নিস।
এই বলে আহিকা চলে যাচ্ছে তখনি আহাম বলে….
আহামঃ আহিকা যা যা করলি মনে রাখিস। আমাকে চড় মারার শাস্তি তুই পাবি।
আহিকাঃ দেখা যাবে ।
আহামঃ তুই আমাকে চিনিস না, আমি তোর জীবন নরক করে দিবো মনে রাখিস।
আহিকা ঃ অপেক্ষায় থাকবো।
এই বলে আহিকা হাঁসতে হাঁসতে সেখান থেকে চলে আসে।
আহিকার বাবা-মা এই সব কথা শুনে কারো কাছে থেকে। আহিকার মা অনেক ভয় পেয়ে যায়। তাই আহিকার বাবাকে জোর করে মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য।
আহিকার মায়ের কারনে আহিকাকে বিয়ে দিতে রাজি হয় তার বাবা। ছেলে ঠিক করে বিয়ের দিন ঠিক করে আর বিয়ের দিন আহাম এইসব করে।
বর্তমান…..
আহিকা সবকিছু ভেবে বড় একটা নিশ্বাস নেই।আর মনে মনে বলতে থাকে….
আহিকাঃ আমি জানি না আমি সবকিছু ঠিক করতে পারবো কি না, আহামের দাদুকে দেওয়া কথা আমি রাখতে পারবো কি না। বাবা-মা তোমাদের কথা খুব মনে পরছে আমার।
আহিকা রূপাকে ফোন দেয়।
আহিকাঃ কেমন আছিস?
রূপাঃ ভাল, তুই?
আহিকাঃ আছি কোনো রকম। আচ্ছা মা -বাবা কেমন আছে?
রূপাঃ এমনি ভাল আছে, তোর বাবাকে বাসায় নিয়ে আসছে।
আহিকাঃ আলহামদুলিল্লাহ। এখন রাখি পরে কল দিবো।
রূপাঃ আচ্ছা, সাবধানে থাকিস।
এরপর আহিকা ফোন কেটে দেয়।
আহিকা রুমের বেলকনিতে গিয়ে দেখে বিকেল হয়ে গেছে। আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে।আহিকা আনমনে বলে ওঠে
আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে
বৃষ্টি হবে বলে।
বৃষ্টি শেষে আকাশটা যে আবার সাঁজবে নতুন রূপে।
আমার জীবনে কি কখনো এমন হবে?
আহিকা আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
পরের দিন……
আহিকা বসার রুমের সোফায় বসে আছে তখনি আহামের দাদু আসে।
আহামের দাদু আসার সাথে সাথে আাহামের খালা তার কাছে এসে আহিকার নামে নানা কথা বলা শুরু করে।
দাদু ঃ তুমি চুপ করো।
আহামের খালা চুপ হয়ে যায়।
দাদু ঃ আহামকে ডেকে নিয়ে আসো।
আহামের খালা আহামকে ডাকতে যায়।
কিছু সময় পর দুজন নিচে আসে।
দাদুঃ তোমরা সবাই এখানে আছো। তোমাদের আমি একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি। আহাম আহিকার সাথে যা করেছে তার শাস্তি তার পাওয়া উচিত। তাই আমি আহিকাকে আমাদের সম্পত্তির ৮০% লিখে দিয়েছি আর বাকি ৩০% আমার কাছে রেখেছি।
আহামের দাদুর কথা শুনে আহাম আর তার খালা বলে
রেগে যায়।
আহামঃ দাদু এসব কি বলছে তুমি?
দাদুঃ যা বলছি সব সত্যি।
আহামের খালাঃ আপনার মাথা ঠিক আছে তো।
দাদুঃ আমি সব ভেবে চিনতেই করেছি । এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।
এরপর সে নিজের রুমে চলে যায়।
আহিকা আহাম আর তার খালার দিকে তাকিয়ে বলে….
আহিকাঃ এ বাড়ির মালিক এখন আমি।এই বাড়ি তে এখন থেকে আমার কথামতো সব হবে। আমার কথা যে না শুনবে তার জন্য এই বাড়ির দরজা সবসময় খুলা থাকবে যে কোনো সময় চলে যেতে পারবে।
আহামঃ আহিকা তুই কিন্তু বেশি বেশি করছিস ।
আহিকা ঃ তুই আমার জীবন নরক করতে চাইছিলি, কিন্তু আমি তো পণ করেছি তোর জীবন নরক করবো।
তাই আমি বেশি করছি না কি করছি তা তোকে ভাবতে হবে না।
আহামের খালার দিকে তাকিয়ে বলে….
আহিকাঃ আমার বাসায় থাকতে হলে কাজ করে খেতে হবে। আমি কাউকে পায়ের ওপর পা তুলে বসিয়ে রেখে খাওয়াতে পারবো না। তাই খেতে হলে বাসার রান্না থেকে শুরু করে আমাকে দিয়ে যে কাজ করাতে চেয়েছেন সবই করবেন। কাজ না করলে এই বাসা থেকে বের হয়ে নিজের ছেলের কাছে চলে যাবেন।
আহামের খালাঃ আহাম তুই কিছু বলছি কেনো?
আহিকাঃ কি বলবে। আজ থেকে ওর আয়েশ আরামের জন্য যে টাকা পেতো তাও বন্ধ।
আহাম আহিকার কথা শুনে জোরে চিৎকার করে বলে….
আহামঃ আমার টাকা আমি নিবো, তুই বেশি বাড়বাড়িস না।
আহিকাঃ এখন থেকে এই সব আমার। তাই টাকা নিতে হলে আমার অফিসে কাজ করে বেতন নিতে পারিস।
আহাম ঃ তোর অফিস, মাই ফুট
আহিকাঃ তোর তো কতো বন্ধু-বান্ধব আছে যারা এতোদিন তোর টাকা নষ্ট করছে তাদের টাকা নষ্ট কর গিয়ে।
আহাম রাগে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
আহিকা আহামের খালাকে রান্না করতে বলে সেখান থেকে চলে যায়।
আহাম তার বন্ধুদের কাছে যায়।
রনিঃ কিরে তুই এখানে?
আহামঃ কেনো আসতে পারি না নকি?
রাকিবঃ কি হয়ছে এতো রেগে আছিস।
আহাম তারপর সব খুলে বলে।
রিতাঃ তোর দাদু এমন করলো কি করে, ওই ফাজিল মেয়ে কি তোর থেকে বড় হয়ে গেলো।
রাকিব ঃ আরে সব মিথ্যে মনে হয়। তোর এটিএম কার্ড থেকে টাকা নিয়ে আয়, দেখবি টাকা আছে। ওই মেয়ে তোকে এমনি ভয় দেখাইছে।
আহাম টাকা ওঠাতে যায় কিন্তু পারে না।
রিতাঃ মেয়েটা তোর সাথে সত্যি সত্যি এমন করলো।
আহামঃ আমি আহিকাকে ছারবো না।
রিতাঃ এখন কি করবি?
আহাম ঃ ওই বাসায় যাবো না আর।
রিতাঃ তোর কাছে তো কোনো টাকা নাই, থাকবি কোথায়।
রাকিবঃ আমার বাসায় তো থাকতেই পারবি না,বাসায় অনেক মেহমান।
রনিঃ আমার বাসায় তো বাবা-মা তোকে দেখলে রাগ করবে।
রিতা ঃ আমার বাসায় তো নিতেই পারবো না।
আহাম ঃ তাহলে আমাকে কিছু টাকা দে কেউ।
রাকিবঃ আমার কাছে টাকা নেই এখন।
রনিঃ আমার কাছে কিছু আছে যা আমার খুব দরকার, তাই দিতে পারবো না।
রিতাঃ আমার শপিং করতে হবে।
এরপর সবাই আহামকে বিদায় দিয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যায়।
আহাম ওদের এমন ব্যবহার দেখে খুব কষ্ট পায় আর মনে মনে বলে….
আহামঃ যাদের জন্য সবসময় এতো কিছু করলাম আজ তারাই আমাকে এ অবস্থায় রেখে চলে গেলো। যাদের পিছনে এতো টাকা খরচ করলাম আজ তারাই আমাকে সামান্য কিছু টাকা দিলো না।
আহাম মন খারাপ করে রাস্তা দিয়ে হাটতে থাকে। রাগে বাসায় ও যাবে না আবার নিজের কাছে টাকা ও নেই। আহাম একটা পার্কে গিয়ে এক জায়গায় বসে ভাবতে থাকে সে কি করবে। আহিকাকে তার জব্দ করতেই হবে। সারাটা দিন আহাম সেখানেই বসে থাকে।
বিকেলে….
সারাটাদিন আহাম কিছু খাইনি তাই খোদা ও লাগছে অনেক কিন্তু টাকা না থাকার কারনে কিছু খেতে ও পারছে না। আহাম এখন বুঝতে পারছে টাকার কতো মর্ম। এতোদিন অকারনে কতো টাকা খরচ করছে কিন্তু আজ প্রয়োজনে একটা টাকা ও তার কাছে নেই। আহাম মন খারাপ করে বসে আছে। একটু সময় পর একটা ছোট ছেলে আহামের কাছে আসে।
ছেলেটি আহামকে বলে….
– ঝালমুড়ি খাইবেন ভাইজান।
আহাম অসহায় চোখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে….
আহামঃ আমার কাছে টাকা নাই।
ছেলেটি ঃ আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে সারাদিন কিছু খান নাই।
আহামঃ টাকা নাই তাই কিছু খেতে পারি নাই।
ছেলেটি আহামের কথা শুনে একটা ঝালমুড়ি বানিয়ে আহামকে দেয়।
আহামঃ আমার কাছে টাকা নাই।
ছেলেটিঃ টাকা লাগবো না আপনি এমনি খান এইটা।
আহামঃ তোর নাম কি?
ছেলেটিঃ মাসুম।
আহাম ঝালমুড়ি নিয়ে খেতে থাকে আর ছেলেটিকে বলে…
আহাম ঃ অনেক সুন্দর নাম। জানিস আমার কাছে অনেক টাকা ছিলো, অনেক টাকা আমি অপচয় করেছি আমার বন্ধুদের পিছনে কিন্তু আজ আমার এমন সময় তারা আমার পাশে নাই।
মাসুম ঃ ভাইজান জীবনে অনেক রকম মানুষ আসে। কিছু মানুষ টাকা দেখে পাশে থাকে আর বিপদের সময় দূরে চলে যায়। কিছু মানুষ ভালোর জন্য কাছে আসে, কিছু খারাপের জন্য। আপনাকে বুঝতে হবে কে আপনার ভাল চায়, কে খারাপ চায়।
আহামঃ তুই তো অনেক কিছু বুঝোস।
মাসুম ঃ ভাই জীবনে বাস্তবতার সাথে পরিচয় হলে অনেক কিছুই শেখা যায়।
আহামঃ সত্যি আজ আমি অনেক কিছু শেখলাম।
মাসুমঃআচ্ছা ভাইয়া আমি এখন যাই, ভাল থাকবেন।
আহামঃ তোকে অনেক ধন্যবাদ।
মাসুম মুচকি একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
আহাম বসে বসে ভাবছে এতোদিন সে কতো ভুল করেছে। অহংকারের জন্য অন্যায়ের পথে চলেছে,খারাপ মানুষের সাথে মিশেছে, তার দাদুর কথা শুনে নাই,আর আহিকা। আহিকার সাথে ও সে কতো খারাপ করেছে। একটা মেয়ের চরিএ আর সম্মানই সবচেয়ে বড় সম্পদ। আর সে আহিকার সেই সম্মানটাই নষ্ট করে দিয়েছে।
আহাম নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনেক লজ্জিত। আহাম আস্তে আস্তে বলে…
আহামঃ আমি আহিকার কাছে ক্ষমা চাইবো। জানিনা এতো বড় অন্যায়ের পর আহিকা আমাকে মাফ করবে কি না। কিন্তু আমার মাফ চাইতেই হবে।
আহাম তারাতাড়ি করে সেখান থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য হাটতে থাকে।
কয়েক ঘন্টা পর….
আহাম বাসায় এসে মেন দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকে তখনি আহিকা বলে….
আহিকাঃ কি ব্যাপার! বন্ধুদের বাসায় জায়গা হয়নি, টাকা দেয়নি যে বাসায় চলে আসলি।
আহামঃ আহিকা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আহিকাঃ হঠাৎ তুই থেকে তুমি। আমার নামে সব সম্পত্তি লেখা দেখে কি এখন নাটক শুরু করছিস।
আহিকার কথা শুনে আহাম চুপ হয়ে যায়। আর মনে মনে ভাবে…
আহাম ঃ আমি এখন আহিকার কাছে মাফ চাইলে ও সে এইটা নাটকই ভাববে।
আহিকাঃ কি হলো?
আহামঃ আমার চাকরিটা লাগবে।
আহিকাঃ আহাম খান চাকরি করবে বাহ্…।
আহাম ঃ হুমম লাগবে।
আহিকা ঃ ঠিক আছে কাল সকাল ৯টায় অফিসে দেখা হবে।
এইবলে আহিকা নিজের রুমে চলে যায়।
আহাম বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমে চলে যায়।
পরের দিন….
আহাম ঃ খালা তুমি কোথায় যাচ্ছো।
আহামের খালাঃ আমার ছেলের কাছে।
আহামেঃ এখানে কি হয়ছে?
আহামের খালাঃ এতোদিন ছিলাম তোর টাকা -পয়সা ছিলো তাই। এখন তো তোর কিছুই নেই, সব ওই মেয়ের হয়ে গেছে। ফাজিল মেয়ে আমাকে দিয়ে বাসার কাজ করায়, আমি এসব করতে পারবো না তাই চলে যাচ্ছি।
এরপর আহামের আর কোনো কথা না শুনে সে চলে যায়। আহাম বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে….
আহামঃ তুমি ও আমার টাকার জন্য আমার কাছে ছিলে।
এরপর আহাম তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে
ঠিক ৯টায় অফিসে যায়। আহিকা আর আাহামের দাদু ও অফিসে যায়।
আহিকা আহামকে বলে…
আহিকা ঃ আজ থেকে বাকি কর্মচারীর মতো এখানে কাজ করবি। তারা যে বেতন পাই তাই দেওয়া হবে।
আহামঃ ঠিক আছে।
আহিকা আর আাহামের দাদু চলে যায়।
আহাম আহিকার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে…
আহামঃ তুমি যা করছো সব ঠিক করছো, আমি এসবের পাওয়ার যোগ্য।
আহাম আস্তে আস্তে নিজেকে ভালো মানুষের মতো গড়তে থাকে। কোনো খারাপ দিকে নেই। আহিকার সাথে ও কথা কম বলে, অফিসের কাজ ও ঠিক মতো করে।
আহিকা ও আহামের এমন বদলে যাওয়াটা খেয়াল করে।
আহামের এখন আহিকাকে খুব ভাল লাগে। তার দিকে আস্তে আাস্তে সে দূর্বল হয়ে পরছে কিন্তু আহিকাকে তার মনের কথা সে বলে না।
আহামের এমন পরিবর্তন আহিকা খেয়াল করে। প্রথম দিকে আহিকা আহামের এমন পরিবর্তন দেখে ভাবে যে সে নাটক করছে কিন্তু এখন সে বুঝে যে আহাম সত্যি বদলে গেছে। সে এখন ভাল হয়ে গেছে।
আহিকাঃ দাদু তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
দাদুঃ বল।
আহিকাঃ আহাম আর আগের মতো নেই।
দাদুঃ হুমম, আমি ও দেখছি।
আহিকাঃ তাকে সব সত্যি এখন বলে দেওয়া উচিত।
দাদুঃ আবার যদি আগের মতো হয়ে যায়।
আহিকাঃ আহাম এখন বুঝে গেছে কে তার টাকার জন্য তার সাথে থাকে,কে তার এমনি পাশে থাকে আর সবচেয়ে বড় কথা সে এখন মানুষ চিনতে পারে তার ভুল বুঝতে পেরেছে । আমার বিশ্বাস সে আগের মতো হবে না।
দাদুঃ আচ্ছা, আজ আহামকে সব বলে দিবো।
কিছু সময় পর…..
দাদুঃ আহাম তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আহাম ঃ বলো।
দাদুঃ আমি আহিকাকে কোনো সম্পতি লিখে দেয়নি। শুধু তোকে শিক্ষা দেবার জন্য আর তোর ভুল বেঝানোর জন্য এই সব আহিকা করেছে। সব কিছু তোরই আছে।
আহাম আাহিকার দিকে একটু তাকিয়ে তার দাদুকে বলে..
আহামঃ দাদু আমার একটু কাজ আছে অফিসে , বাসায় এসে কথা বলছি।
এই বলে আহাম বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
আহাম অফিসে নিজের চেম্বারে বসে আছে তখনি রাকিব, রিতু,রনি আসে।
আহামঃ তোরা এখানে।
রাকিবঃ কেমন আছিস?
আহাম ঃ আমি কেমন আছি তা শুনার জন্য তো আসিস নাই জানি।
রাকিবঃ আসলে আমরা একটা সমস্যায় পরছি কিছু টাকা দেয় আমাদের ।
আহাম ঃ আমার কাছে কোনো টাকা নাই।
রিতা ঃ মিথ্যে বলছিস কেনো?
আহাম ঃ তোদের সেই দিনের কথা মনে আছে। আমার অসহায়ের সময় পালিয়ে গিয়েছিলি। তবে সেইদিন তোরা চলে গিয়ে ভাল করেছিলি না হলে আমি কখনো আমার ভুল বুঝতে পারতাম না। তোদের মতো মানুষদের চিনতে পারতাম না। আহিকার মতো মানুষকে চিনতে পারতাম না। যে মেয়ের সাথে এতো খারাপ করছি সে আমাকে সঠিক পথে আনতে আমাকে ভালো মানুষ করতে কতো কিছু করেছে। আর এই আমি এখনো নিজের ভুলের জন্য তার কাছে মাফ চাইতে পারি নাই । আজ আমি আহিকাকে সব বলবো। এখন তোরা আমার সামনে থেকে বিদায় হ।
সবাই চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়। আহাম দরকারী কাজটা শেষ করে বাসায় চলে আসে।
আহামঃ আহিকা তোমাকে কিছু বলার আছে।
আহিকা ঃ হুমমম।
আহাম ঃ তোমার সাথে যা করছি তার জন্য হয়তো আমাকে তুমি মাফ করতে পারবে না। তবুও আমি তোমার কাছে মাফ চাই। আমাকে তুমি মাফ করে দাও। সারা জীবনের করা ভুল গুলো বুঝতে মানুষের একটা মূর্হত যথেষ্ট। আমি ও আমার ভুল বুঝতে পারছি আমাকে মাফ করে দাও।
আহিকাঃ আচ্ছা মাফ করে দিলাম।
আহামঃ আমি জানি না কি ভাবে তোমাকে ভালবেসে ফেলছি। আমরা কি নতুন করে সব শুরু করতে পারি না।
আহিকাঃ আমার সাথে যা করেছেন আমি হয়তো মাফ করে দিবো । কিন্তু আমার সেই আগের দিন গুলো কি কখনো ভুলতে পারবো। আমার সেই গুলো মনে পরলে ভালবাসা না ঘৃণা আসে। ঘৃণা নিয়ে আর যাইহোক সংসার করা যায় না।
আহিকা আহামের আর কোনো কথা না শুনে নিজের রুমে গিয়ে নিজের ব্যাগ নিয়ে বের হয়।
আহামঃ তুমি ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো।
আহিকা ঃ এইখানে আমার কাজ শেষ তাই চলে যাচ্ছি ।
দাদুঃ আহিকা থেকে যা না আমাদের সাথে।
আহিকা ঃ দাদু আমি বলেছিলাম আমার যেদিন সময় হবে আমি চলে যাবো আমার আজ সময় হয়েছে।
আহাম অশ্রু চোখে তার দাদুকে বলে….
আহামঃ ওকে যেতে দাও। আমার দোষ তাই শাস্তি আমাকে ভোগ করতেই হবে।
আহিকা কার কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়। আহাম অশ্রু চোখে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
দু বছর পর…..
আহিকা আপু আপনার নামে কেউ একটা চিঠি দিছে।
আহিকাঃ কে দারোয়ান ভাইয়া?
দারোয়ানঃজানি না।
[ আহিকা সে দিন সেখান থেকে বের হয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে যায় আর সব বলে। তার বাব-মা বুঝতে পারে। আহিকা এই শহরে থাকতে চায় না তাই তাদের নিয়ে আহিকা নতুন শহরে চলে আসে এখানে একটা জব করে দুই বছর ধরে আছে। ]
আহিকা চিঠিটা নিয়ে নিজের রুমের বেলকনিতে যায় আর চিঠি খুলে দেখে সেখানে লেখা….
…. প্রতিদিন তোর মুখ দেখে সকালটা শুরু করতে ভালোই লাগে। তবে কাছে থাকলে আরো ভালো হতো। আচ্ছা আমার সেদিন সন্দেহ ছিলো যে আমার প্রতি তোমার শুধু ঘৃনা আছে নাকি কিছুটা ভালোবাসা ও আছে। এই দুই বছরে আমি বুঝে গেছি তোমার ঘৃনার আড়ালে আমার জন্য ভালবাসা ও আছে । যে ভালবাসাটা তোমার মনে মেঘ হয়ে আছে। আমি ও হাল ছাড়বো না জীবনের শেষ মূর্হত পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবো তোমার ভালবাসার মেঘকে বৃষ্টি হয়ে আমার মাঝে ঝরানোর জন্য। মানুষ ভুল বুঝলে তাকে আবার আর একটা সুযোগ দিতে হয়। তুমি আমাকে দেওনি। কিন্তু আমার আর একটাবসুযোস লাগবে তোমাকে ভালবাসার জন্য আর আমি সেই সুযোগটা নিবেই। #ভালবাসার_মেঘ_বৃষ্টি আমি তোমার মাঝ ঝড়াবোই। আজকেও তোমার এলোমেলো চুলে সুন্দর লাগছে।
ইতি
তোমার অপরাধী আহাম।
আহিকা চিঠিটা পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে….
#ভালবাসার_মেঘ_বৃষ্টি কি ঝড়বে তার মাঝে?
হয়তো আহাম ঝড়াতে পারবে, তাদের ও সুন্দর একটা সংসার গড়তে পারবে।
……সমাপ্ত…..