ভালবাসার রংধনু পর্ব ১

–আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে তুলে আনার?আমি কতবার বলবো আমি আপনাকে ভালবাসি না আমান স্যার।কেন আপনি আমার সাথে এরকম করছেন?আজকে আমার বিয়ে ছিলো আর আপনি আমাকে এখানে কেন তুলে নিয়ে এসেছেন?
–আমি বাদে তুমি আর কাউকেই বিয়ে করতে পারো না নিহুপাখি।তুমি শুধু আমার।আজকে এখানে তোমার আর বিয়ে হবে নিহুপাখি।আমি তোমাকে বড্ড ভালবাসি।
–আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবো না আমান স্যার।আপনি আমার থেকেও ভালো মেয়ে পাবেন।আপনার সাথে আমাকে কোনো দিক দিয়েই মানায় না।
–তুমি আমাকে বিয়ে করবে নাকি না সেটা সময় বলে দেবে জান।আমার তোমার থেকে ভালো মেয়ের দরকার নেই।তোমার তুমিটাকেই আমার চাই।তুমি এখানে থাকো।পালানোর চেষ্টা করবে না।আমি বিয়ের ব্যবস্থা করে আসছি।

কথাটি বলে আমাকে ঘরে বন্দী করে রেখে আমান স্যার চলে গেলেন।আমি বসে বসে কাঁদতে লাগলাম।আজ আমার বিয়ে ছিলো।সুন্দর করে সেজেগুজে বসে ছিলাম।বর এসেছে তাই সবাই বরকে দেখতে গিয়েছিল।তখনই কেউ একজন আমার রুমে ঢুকে আমার মুখে রুমাল চেপে ধরে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই অজ্ঞান হয়ে যাই।যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে এই ঘরে আবিষ্কার করি।

আমি নিহারিকা নিহু।আমার মা বাবা কেউ নেই।ছোট একটা বোন আছে নাম পিহু।ক্লাস ফোরে পড়ে। পাঁচ বছর আগে মা বাবা গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়।তারপর মামা মামির সাথে থাকি।মামি আমাদের সহ্য করতে পারেন না। মামাই একমাত্র আমাদের ভালবাসে।মামার এতো সামর্থ্য নেই যে আমার আর পিহুর পড়াশোনার খরচ দিবে।মামা মামির মেয়ে আছে নাম আশা।মামির মতো আশা আপুও আমাদের দুই বোনকে সহ্য করতে পারে না।তাই নিজেই একটা পার্ট টাইম জব করতাম রেডিওতে।আর একটা টিউশন করাতাম।এভাবেই আমি আমার আর পিহুর পড়াশোনার খরচ চালাতাম।

আমি যেই রেডিওতে কাজ করি তার মালিক হলো আমান স্যার।যে আজ আমাকে তুলে নিয়ে এসেছে বিয়ে করবে বলে।আমান স্যারের মা নেই,বাবা আছে।আর তাদের সাথে তার ফুফু থাকে। দেখতে সুন্দর আর হ্যান্ডসাম। সব দিক দিয়ে পারফেক্ট উনি।সাথে প্রচুর রাগী আর জেদি।রেডিওতে যত মেয়ে কাজ করে সবার ক্রাশ উনি।সবাই উনার জন্য পাগল।অবশ্য আমিও হালকা ক্রাশ খেয়েছিলাম।কিন্তু কখনো ভাবিনি উনি এভাবে আমাকে তুলে নিয়ে আসবে।মাত্র সাত দিন আগে তার সাথে পরিচয় হয়েছে।সিংগাপুর থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফিরেছেন।আর তারপরই অফিসে জয়েন করে।উনার সাথে আমার পরিচয়ের সাত দিনও হয়নি আর উনি আমাকে বলছেন আমাকে নাকি ভালবাসেন।এটা কি করে সম্ভব? উনাকে আমি এর আগে কখনো দেখিনি।সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

আমার মামি একটা বুড়ো লোকের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না।আমার রাজি না হওয়ার কারণ হলো আমি একজনকে সেই ছোটোবেলা থেকে ভালোবাসি।তার নাম হলো আরাফ।আমি প্রথমে বিয়ে করতে রাজি হইনি।মামি আমাকে অনেক খারাপ কথা শুনিয়েছে।যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে ওই লোক বলেছে আমার বোনের দায়িত্ব নেবে।আমার বোনের পড়াশোনার খরচ দেবে।আমার বোনকে আমার সাথে রাখবে বিয়ের পর।এইসব মামির মুখ থেকে শুনা।মামি বলল আর কতদিন মামার ঘাড়ে বসে খাবো।তার চেয়ে বিয়ে করে নেওয়া টাই ভালো। অন্তত আমার বোনটা তো ভালো থাকবে।আরাফের সাথে আমার দশ বছর ধরে কোনো যোগাযোগ নেই।আরাফের আদোও আমার কথা মনে আছে নাকি তাও জানি না। তাই বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।মামা অনেকবার বারণ করেছিল।কিন্তু আমি শুনিনি।এতোক্ষণে হয়তো আমার বিয়েটাও হয়ে যেতো।কি অবস্থা সেখানে আমি কিছুই জানি না।আমার বোনটা কি করছে তাও জানি না আমি।

দরজা খোলার শব্দ পেলাম।আমান স্যার দাঁড়িয়ে আছেন।পাঞ্জাবি পড়ে বরের মতো সেজেছেন।তাকে দেখে আমার অনেক রাগ হচ্ছে।সহ্য করতে পারছিনা তাকে।তার উপর রাগ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো উনি আমাকে নিহুপাখি বলেন।একমাত্র আরাফ আমাকে নিহুপাখি বলে ডাকতো। আজ আরাফের কথা ভীষণ মনে পড়ছে আমার।রাগে আমার চোখে পানি চলে এসেছে।আমান স্যার এসে আমার হাত ধরে বলল,

আমানঃনিহুপাখি চলো।বিয়ের সব আয়োজন শেষ।

আমি তার হাত ছাড়িয়ে বললাম,

আমিঃআমি আপনাকে মরে গেলেও বিয়ে করবো না।আমি আপনাকে ভালবাসি না।আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।

আমানঃকান অন জান।বিয়ে তো তোমাকে আমাকেই করতে হবে।আমার রাগ বারিও না নিহারিকা।ভালোও তুমি আমাকেই বাসবে।

আমিঃ আমি একবার বললাম তো আমি যাবো না।আপনি কেন আমাকে জোর করছেন?

আমানঃসোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুলটা বাঁকা করতে হয় এইটাতো জানো জান।

আমিঃকি বলতে চান আপনি?

আমানঃ বলব নাকি প্রাক্টিকালি দেখিয়ে দেবো?

কথাটা বলে আমান আমাকে কোলে তুলে

নিলেন।আমি নামার জন্য অনেক চেষ্টা করলাম।কিন্তু উনার সাথে পেরে উঠলাম না।উনার বুকে, পিঠে ইচ্ছামত কিল দিতে লাগলাম।উনি আমাকে তাও ছাড়লেন না।কান্না করে দিলাম আমি।উনি আমাকে বাসার ড্রইংরুমে নিয়ে আসলেন।সেখানে উনার তিনজন ফ্রেন্ড আর কাজি বসে ছিল।আমাকে উনি নামিয়ে দিলেন।আমি দৌঁড়ে চলে যেতে নিলে উনি আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলেন।

আমি বসে বসে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম।কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।কাজি উনাকে কবুল বলতে বললে উনি সাথে সাথেই কবুল বলে দিলেন।তারপর আমাকে কবুল বলতে বললেন। আমি কিছুতেই কবুল বললাম না।

আমানঃনিহুপাখি কবুল বলো।

আমিঃ…..

আমানঃ নিহুপাখি কবুল বলে দাও।

আমিঃ আমি কিছুতেই কবুল বলব না।

আমানঃ নিহারিকা কবুল বলো(রেগে বলে উঠলো)

আমি তার ধমকানিতে ভয় পেয়ে গেলাম।তাও কবুল বললাম না।

আমানঃ বুঝেছি এভাবে হবে না।এখন আমি যা করবো তার জন্য আবার আমাকে দায়ি করো না।

নাউ জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি।

তারপর উনি কাকে যেন ফোন করলেন।

আমানঃ যে কাজটা দিয়েছিলাম সেটা হয়ে গেছে তো?…গুড।

আমিঃ উনি কোন কাজের কথা বলছেন?(মনে মনে)

আমানঃ নিহারিকা তোমার কাছে এখন দুইটা অপসন আছে।প্রথমত আমাকে বিয়ে করা,দ্বিতীয়ত তোমার বোনের লাশ দেখা।এখন তুমি ঠিক করো কি করবে তুমি?

উনার কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আমার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।

আমিঃ কি করেছেন আপনি আমার বোনের সাথে?কোথায় আমার বোন?বলুন।আমার বোন ঠিক আছে তো?বলুন না আমার বোন কোথায়?(কান্না করতে করতে)

আমানঃ ডোন্ট ক্রাই নিরুপাখি। তোমার বোন এখন ঠিক আছে।কিন্তু তুমি কবুল না বললে আর ঠিক থাকবে না। সো নাউ ইউ টেল মি তুমি কি করবে?

আমিঃ প্লিজ আপনি আমার বোনের কোনো ক্ষতি করবেন না।আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।

তারপর কাজি আমাদের বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।মনে মনে ভাবতে লাগলাম একটা মানুষ এতটা নিচে কি করে নামতে পারে।চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে।অবশেষে আমিও কবুল বলে দিলাম।আমান স্যারের সাথে আমার বিয়েটাও হয়ে গেলো।কখনো ভাবতে পারিনি যে উনার সাথে আমার বিয়ে হবে।বিয়ে পড়ানোর পর উনি যেন কোথায় চলে গেলেন।জাহান্নামে যাক তাতে আমার কি।কিছুক্ষণ পর একজন মহিলা এসে আমাকে উপরে নিয়ে গেলো।তার নাম রহিমা এ বাড়িতে কাজ করে।যে রুমে আমাকে রাখা হয়েছিল সেই রুমটাতেই বসিয়ে দিয়ে গেলো।একটু আগে এই ঘরটা সাজানো ছিলো না।এখন পুরো ঘর ফুল দিয়ে সাজানো।আমার এসব বিরক্ত লাগছে।শুধু পিহুর জন্য আমার চিন্তা হচ্ছে।বোনটা আমার কেমন আছে কিছুই জানি না।

পিহুর কথা ভাবছিলাম তখন দরজা খোলার শব্দে আমি ফিরে তাকাই।আমান স্যার এসেছেন।তাকে দেখে রাগে আমার পুরো শরীর জ্বলছে।একটা মানুষ কতটা খারাপ হলে এতো নিচে নামতে পারে।তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।কখনো ভাবতে পারিনি আমার সাথে এরকম কিছু হবে….

#ভালবাসার_রংধনু
#সূচনা_পর্ব
#Baishakhi_Fariba

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here