ভালো তোকে বাসতেই হবে পর্ব ২+৩

পর্ব ২+৩
#”ভালো তোকে বাসতেই হবে”
#পরিধি রহমান বিথি
#পর্ব-২

… এখন এসব হলে কেলেঙ্কারির আর শেষ থাকবে না।

,,,, চোখ মুখ কুঁচকে অনেক বিরক্তি নিয়ে চলে বসলাম খাটাশটার ঘাড়ে।রাত ভাইয়া বাইক স্টার্ট দিতে দিতে:

,,হ্যা রে সোনালী ,,, ভালো করে বসেছিস তো,,? আবার ব্রেক মারার সাথে সাথে হুমড়ি খেয়ে আমার কলিজার উপর পরিস না। যদিও জানি আমি কিউট,,,তাই হাজারটা মেয়ে এই ধান্দা খোঁজে। তার পর ও আমার ও তো লজ্জা আছে বল,,,?

,,, লজ্জা না ছাই,,!সেমলেস চকলেট কেক।(বিরবিরিয়ে )

,, কিরে কিছু বললি??

,, না না ,, ভাইয়া ,,, আমি ঠিক করে বসেছি। আপনি চলুন।

,,,বাইক তার নিজের গতিতে চলতে শুরু করল। নির্জন রাস্তা,, হালকা বয়ে চলা হাওয়ায় আমার ছোট ছোট চুলগুলো দুলেই চলেছে। আমি তো সেগুলো সামলাতেই ব্যস্ত,, অতঃপর বিরক্ত বলতে পারেন।তার চাইতে ও বেশি বিরক্ত এই লোকটার উপর। তার একমাত্র কারণ আশপাশে থেকে যে দুই একটা মেয়ে যাচ্ছিল তারা রাত ভাইয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল।যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। কাছে পেলে হয়তো খেয়েই ফেলত।স্বাধে কি বলি ,,, চকলেট কেক?? কিছুক্ষণ পর আমি ও তাকালাম,,অবাক হওয়ার কি আছে?? সেই সূত্রে আমি ও মেয়ে আমার ও দেখার সমান অধিকার আছে,,, আমি ও তাকিয়েই রইলাম,,, একটা অদ্ভুত মায়া আছে লোকটার মাঝে। কেউ এই মায়ার জালে ভেদ করে নজর ফেরাতে পারে না। হালকা একটা হাসি ফুটে আছে মুখে,,বড় বড় চোখে অঢেল পাপড়ি,,, ছোট ছোট চুলগুলো জায়গা করে নিয়েছে অর্ধেক কপাল জুড়ে। হালকা হাওয়ায় পরশে চুলগুলো দুলেই চলেছে। হঠাৎ আমার ভাবনায় ছেদ করে দুষ্টু হাসি দিয়ে::

,,, এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?? আমার লজ্জা করে না??

,,এনার কথায় আমি পড়ে গেলাম অস্বস্তিতে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলাম।

,,,ছি ছি ,, আমি এ কি করছি??রাত ভাইয়া আমার আচরনে কোনো উল্টো মানে বুঝল না তো??
,, না না আর তাকাব না বাবা (মনে মনে)।

,, তবে কোথাও না কোথাও ভালো লাগছে । এনার বাইকের পিছনে ওঠার ইচ্ছা আমার ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু ছোট বলে কখনো উঠাতেন না। তবে আগে কোন মেয়েকে এনার বাইকের পেছনে দেখিনি। আমি ই মনে হয় প্রথম মেয়ে যে এনার বাইকে উঠেছে।হাউ লাকি আই এম,,, হঠাৎ বাইক থামল। হয়তো ভার্সিটি চলে এসেছি। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি না এতো ভার্সিটি না।পাশ থেকে একটা মেয়ের কথায় আমার টনক নড়ল। মেয়েটা বেশ সুন্দর ,, জিন্স আর টপস পড়া ,, ছিপছিপে শরীর::

,,হায় রাত,, তুমি এখানে??(রাত ভাইয়ার গায়ের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।পাড়লে হয়ত কোলে উঠে পরত)।

,, হ্যাঁ,, ওকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে অফিস যাব।(নিজেকে একটু সরিয়ে নিয়ে)।

,, এবার আমার দিকে তাকিয়ে,,রাত এই মেয়েটা কে??আর তোমার ভাইকের পেছনে কি করছে??(গালে হাত দিয়ে,, নাক মুখ কুঁচকে)
দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমাকে দেখে মটেও খুশি হয়নি।

,,ওহ,,ও সোনালী। আমার বন্ধুর বোন । রিকশা পাচ্ছিল না তাই আমি ড্রপ করছি।(গাল থেকে হাত সরিয়ে) আচ্ছা বায়ু পরে দেখা হবে।

আমি ফেলফেল করে তাকিয়ে দেখছিলাম। গায়ে পড়া মেয়ে যত্তসব। ছেলে দেখলেই গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
বাইক আবার স্টাট দিল। ,,কিন্তু আমি কি শুধুই ওনার বন্ধুর বোন বলে এতো কেয়ার??,, হয়তো??

১০ মিনিট পরে ভার্সিটির সামনে পৌঁছালাম। নামতে নামতে আশেপাশে তাকাতেই আবার আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। ,, কি হবে আর??,,, সেই রাত ভাইয়ার উপর মেয়েদের হামলা। জেরিনের ও এক ই অবস্থা।

,,ও জেরিন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার জন্য ভার্সিটির সামনে অপেক্ষা করছিল। আমি আর কোন রিক্স নিতে চাইছিলাম না রাত ভাইয়াকে নিয়ে। যে ভাবে মেয়েরা তাকিয়ে আছে,,,,তাই রাত ভাইয়াকে তাড়াতাড়ি বিদায় দিলাম।সব মেয়েরা রাত ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমিও জেরিনের মাথায় চাটি দিয়ে::

,, কি রে কি করছিস??আর কি দেখছিস কি ওভাবে??

আমার কথা হকচকিয়ে বলে উঠলো::

,,, এটা কে রে??তোর বয়ফ্রেন্ড?? কিন্তু কশমিন কালেও তোর কোন বয়ফ্রেন্ড ছিল বলে তো আমি জানতাম না,, তাহলে এটা কে?(এক নিঃশ্বাসে সব বলে ফেলল)

.. এটা আমার বয়ফ্রেন্ড হতে যাবে কেন,,গাধা?? এটা রাত ভাইয়া।

,,, সোনালী,,,রাত ভাইয়া মানে??(চোখ কপালে তুলে)”প্রান্ত রহমান রাত”??

,, হ্যাঁ,,(আমার ছোট বেলার ঘটনার কিছুই ওর দৃষ্টির অগোচরে নয়।তাই বেচারী এতো শকড,, তারপর কালকের ঘটনা খুলে বলার পর গেদুর চোখ চড়ক হয়ে গেছে। আর কথা না বাড়িয়ে ওকে নিয়ে ক্লাসে চলে গেলাম। এসব শুনেই বেচারির কথা বন্ধ হয়ে গেছে ,,আর শুনলে হয়তো হার্ট অ্যাটাক করবে। না আর রিক্স নেওয়া যায় না,,,,,,,,,,

,,,,, বিকাল ৪টার দিকে,,,

,,,,, বিছানায় উপুড় হয়ে হাতের কাছে বালিশ নিয়ে ফোনটা বালিশের উপর রেখে পা দোলাচ্ছি আর story পরছি। দরজাটা খোলাই ছিল। হঠাৎ কোথা থেকে রাত ভাইয়া হাজির। নেভিব্লু থ্রিকোয়ার্টার আর হোয়াইট টি-শার্ট আর হাতে মাঝারি সাইজের একটা ব্যাগ। চোখে মুখে যেন এক অজানা খুশির ঝলক। কিন্তু তাকে দেখে আমার মুখে কোন হাসি নেই বললেই চলে ,, উল্টো আরো বিরক্ত।এর একমাত্র কারণ আমি এডাল্ট তাই আমার রুমে নক করে ঢোকা উচিত। উনি আর দেরি না করে ব্যাগটা বিছানায় রেখে পাশে বসে পড়লেন।আর,,

,,,,, কি করছিস সোনালী?? প্রেমে পড়েছিস নাকি,, সারাদিন যে ফোন নিয়ে পড়ে থাকিস??

,,,, সোজা হয়ে বসে,,বাজে কথা রাখেন। আর আপনি কি করছেন আমার রুমে?? আপনি জানেন না কারো রুমে নক করে ঢুকতে হয়??

(গাম্ভীর্য নিয়ে),,, কি বললি??(ভ্রু উল্টে),,তোর রুম মানে আমার রুম,,তাই নিজের রুমে ঢুকতে কারো পার্মিশন লাগে না,,

,,,,, আমি ওনার কথার কোন প্রতি উত্তর খুঁজে পেলাম না।তাই চুপ করে রইলাম,,

,,,,,,যাই হোক যা বলতে এসেছিলাম,, আমি এই জিনিসগুলো তোর জন্য বিদেশ থেকে এনেছিলাম।তাই তোক দিতে এলাম।(ব্যাগটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে)

,,,,, আমার কিছু চাই না,,তোলে যান এখান থেকে,, আমি নেব না এগুলো।

রাত ভাইয়া রেগে উঠল। আমিও রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।,, কালকের কথা ভেবে। উনি দেয়ালের সাথে আমার দুই বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে,,
,,,,, তুই নিবি না তোর বাপ,,,(বলতে গিয়ে থেকে গেলেন),, না না আঙ্কেল নিলে তো হবে না ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ তোকেই নিতে হবে,,।

,,দেখেন ছাড়ুন আমাকে। কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।আর আমি আপনাকে ভয় পাই না।

,,ও তো তোকে কিস ট্রিটমেন্ট দিতে হবে??

,, আমি এবার ভয় পেলাম। একটা ঢোক গিলেই,,, আমি নেব,, আর আপনকে কিছু করতে হবে না।

,, ওনার মুখে আবার হাসি ফুটে উঠল। সাথে সাথে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলেন। আমি হাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম । উনি ও চলে গেলেন। কৌতূহল মেটাতে ব্যাগ খুললাম,,,যা দেখলাম তাতে তো আমি বাকরুদ্ধ,,,,,,

#পর্ব-৩

,,,,যা দেখলাম তাতে আমি বাকরুদ্ধ।

,,, ব্যাগটা খুলেই দেখি বড় একটা বক্সের এক বক্স রঙ বে রঙের কাঁচের চুড়ি,, সাথে একটা লাল আর একটা নীল রঙের শাড়ি (দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ দামী),, আরো আছে,, একটা লাল টুকটুকে আলতা সাথে অনেকগুলো চকলেট(দেখেই আমার চোখগুলো চকচক করে উঠলো) যাই দেক তাতে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই বাট আই লাভ চকলেট। এটা ওই খাটাশ লোকটা ও জানে।

,,,ও তাহলে ঘুষ দিয়ে আমার মন গলানোর ধান্দা?? লাগবে না আমার কিছু। যাকে ছাড়া ‌‌‌‌‌‌‌‌‌আমার একটা দিন ও চোলতো না ,,সে হঠাৎ ছেড়ে যাওয়ায় আমি কষ্ট পেয়েছি জানো ।কতো কেঁদেছি। এখন আমি একা থাকতে পারি চাইনা কোনো রাত ভাইয়াকে,, এখন ও আমি বাচ্চা নই। এসব ভাবতে ভাবতেই আম্মুর ডাক পরল।এক পলক বাইরে তাকিয়ে দেখি পৃথিবীর বুকে অন্ধকার নেমে এসেছে।

,, কি আশ্চর্য এতো দেরি হয়ে গেল??

,, সব আলমারিতে গুছিয়ে রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।ফ্রস হয়ে আম্মুর কাছে গেলাম,, আম্মু রান্না করছে তাই আমি আর ওখানে কি করব চলে গেলাম ড্রয়িংরুমে,, উদ্দেশ্য টিভি দেখব। কিন্তু এ যাত্রায় আর টিভি দেখতে পরব বলে মনে হয় না,,, কারণ? কারণটা আমার খচ্চর ভাইটা।ও টিভিতে খেলা দেখছে ,,, এখন বোমা হামলা করলে ও আমাকে রিমোট দিবে না।তাই ভাবছি কিভাবে রিমোট হাতানো যায়,,,, তখনই আমার মাথার টিউব লাইটটা জ্বলে উঠলো”আইডিয়া””ব্লেকমেইল”(শয়তানি হাসি দিয়ে) সোজা গিয়ে ভাইয়ার গা ঘেঁষে বসলাম আর রিমোট চাইলাম:

,,, ভাইয়া রিমোট দে,, আমি ডোরেমন দেখব,,।

,,,উমহ,,,আইছে মহারানী,,দেখছিস না আমি খেলা দেখছি,,?

,,, ভাইয়া ভালোয় ভালোয় বলছি রিমোটা দে,,,

,,,,তুই যাবি। এখান থেকে ,,?? নয়তো দেব কানের‌ গোয়ায় একটা।

,,,ও দিবি না তাহলে??(আড় চোখে চেয়ে)।

,,,, বললাম তো না(বিরক্তি নিয়ে)

,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে) ঠিক আছে ,,আমি তাহলে আম্মু আব্বুকে গিয়ে তোর আর জেরিনের প্রমলীলা শোনাই??(উঠে এক পা বাড়িয়ে),, কি যাব???(প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে)

,, ভাইয়া আর জেরিন ১বছর ধরে রিলেশনে আছে। আমার ফ্রেন্ড আগে তাই ওকে নাম ধরেই ডাকি,,, রিলেশনটা অবশ্য আমিই করিয়ে ছিলাম। ওরা খুব খুশি আছে সাথে আমি ও,,, আম্মু আব্বু কিছু যানে না,, সুযোগ বুঝে ভাইয়াই সব জানাবে বলেছে।।তো যত দিন না বলছে আমি একটু ফায়দা তুলি,,,,

,,,(ভাইয়া অবুঝ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে),,কি বললি,,? আমি কি বলেছি তোকে দেব না??নে রিমোট,,, আর প্লিজ কাউকে কিছু বলিস না??(রিমোট আমার ‌দিকে এগিয়ে দিয়ে)

,,, আমি ও রিমোটা খাবলা মেরে নিয়ে নিলাম,,,: ওকে ‌যা বলব না কাওকে কিছু,,এ বারের মতো তোকে মাফ করে দিলাম।(বলেই হেসে‌ দিলাম)।

,,, সোফায় পা তুলে ডোরেমন দেখছিলাম। আম্মু ডিনারের জন্য ডাকছে। আমি ও খেয়ে রুমে গেলাম। রুমের দরজা খুলতেই দেখি খাটের উপর শুয়ে একটি ছেলে পা দোলাচ্ছে‌। আমি তো অবাক,,,, কে এই ছেলে??,,চোর না তো??,,এ মা চোর ,,তাও আবার আমার রুমে??? কিন্তু চুরি বাদ দিয়ে খাটে শুয়ে আরাম করছে কেন?? কোথাও কিছু দেখছি না যা দিয়ে চোরকে আহত করব। ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা পারফিউম ছিল ,, সেটা খপ করে তুলে নিলাম,, উদ্দেশ্য চোরের চোখে মারব।পা টিপে টিপে এগিয়ে যাচ্ছি,,, আমি একটু সামনে এগোতেই লোকটি উঠে বসল,, আমি তো দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি। কারণ চোরটি,,, না না,, লোকটি আর কেউ না আমাদের সম্মানিত “রাত ভাইয়া”
আমি হন্তদন্ত হয়ে প্রশ্ন করলাম:

,,, আপনি এখানে??আর আপনি এখানে আসলেন কিভাবে??,,গেট দিয়ে তো ঢুকতে দেখিনি?? তাহলে আপনি কোথা থেকে আসলেন?? আচ্ছা আপনি কি আমার রুমে চুরি করতে আসছেন (প্রশ্নের ঝুঁরি মেলে বসলাম)।

,,,,হাট আপ সোনালী,,,(রেগে গিয়ে) আমি তোর রুমে চুরি করতে আসব কেন??(হালকা হাসি দিয়ে),,আজ তোর সাথে ঘুমাবো তাই এলাম,,,,
,,জানিস তো,, আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই মন খারাপ,,,তাই‌ তো সাথে ঘুমাতে এলাম।,,তুই কি বলিস??(চোখ মেরে)

আমার সাথে ঘুমাবে তাও কিসের জন্য,, নাকি তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে। যত্তসব ঢং,, দেখাচ্ছি আমার সাথে ঘুমানো,,,(মনে মনে):

,,,,মানে আপনি পাগল হয়ে গেছেন?? আমার রুমে ঘুমাতে পারবেন না।নাও গেট লস্ট!!((চেঁচিয়ে)। তার আগে বলেন আপনি এখানে আসলেন কিভাবে??

,,,, শোন ,,ভুলিস না আমি আর্মি ট্রেনিং নেওয়া।,,,,তাই এই দুই তলা বিল্ডিং ডিঙিয়ে জানালা দিয়ে ঢোকা আমার পক্ষে কোনো বেপার না ‌।

,,সে যাই হোক ,, আপনি এখান থেকে যান। না হলে আমি ভাইয়াকে ডাকব।(থ্রেট দিয়ে)

,, ওকে যা,,হু কেয়ারস (ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে)

,, ওকে আমি তাহলে গেলাম।বলে আই রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ভাইয়ার রুমে ঢুকলাম। ভাইয়া ফোন টিপছিল। ভাইয়ার সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে:

,,, ভাইয়া,য়া,য়া,,,(চেঁচিয়ে)।

,, হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভাইয়া হতভম্ব হয়ে পড়ে আর ফোনটা টপ করে নিচে পড়ে গেল,,,ভাইয়া রেগে ফোন উঠাতে উঠাতে:

,, কি হয়েছে এভাবে ষাঁড়ের মতো চিল্লাছিস কেন?

,, তুই যানিস রাত ভাইয়া আমার রুমে ,,, আর বলে কি না আমার সাথে ঘুমাবে।

,,(ভাইয়া কথাটা শুনে চরম অবাক),, কি ‌বলছিস তুই??রাত আর তোর রুমে??(হা হা করে হেসে দিয়ে) সোনালী তোর কোথাও ভুল হচ্ছে নাতো??

,, এবার ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক। কোথায় বন্ধুকে শ্বাসাবে তা নয় আমার ভুল খুঁজছে।খুজবেই বা না কেন?? খুব রাগী ,ইগোয়িস্টিক লোক। তবে এক কথায় যাকে “মি: পারফেক্ট বলে ইনি হচ্ছেন তার রোল মডেল। তবে তার রাগ আমি খুব কম ই দেখেছি।ইনি দেখতে যেমন সুদর্শন তেমনি এটিটিউড। যেমন পড়াশোনায় ভালো তেমনি অফিসিয়াল কাজে,, তার উপর আবার বিদেশি সার্টিফিকেট অর্জিত। শুনেছি কলেজ টপার ছিলেন।আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে নিয়ে ইসু আছে বলে শুনিনি,,আজ প্রথম শুনলাম উনার গালফ্রেন্ড আছে। ভাইয়ার হয়তো তাই এতো মানতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি ও নাছোর বান্দা,,বলে উঠলাম::

,,চলো তোমাকে হাতে নাতে প্রমাণ দিব(হাত ধরে টানতে লাগলাম)

,,,
(ভাইয়া আর কিছু না ভেবে ),, ওকে চল,, মনে মনে আমি তো মহা খুশি।রওনা দিলাম রুমের দিকে,,মি: রাত আজ মজা বোঝাবো।বাচ্চূ সোনালীর সাথে পাঙ্গা নেওয়া,,,
বলতে বলতে চলে আসলাম রুমে। কিন্তু এরপর যা দেখলাম আর যা শুনতে হলো তাতে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। কারণ রাত ভাইয়া তো রুমে ছিল না। ভাইয়া রুম ফাঁকা দেখেই হাসতে হাসতে বলতে লাগলো:

,, কি যে সোনালী?? কোথায় যে রাত

,, আমি অবাক হয়ে রুমের চারদিকে ঘুরে দেখলাম কোথাও কেউ নেই। আমি আমতা আমতা করে:
,,,এ,,এ,, এখানেই তো ছিল।

,,(ভাইয়া হাসতে ‌হাসতে শেষ)কোই ,, ছিল তো এখন কোই,,নাকি কর্পূরের মতো উবে গেল??তুই ও আমার বন্ধুকে নিয়ে হ্যালোজেনেশনে পড়ে গেছিস?? এতো ভাবিস না ওকে ‌নিয়ে।(স্বাভাবিক হয়ে)_আগেই বলে দেই ,,ও নাকি কাকে ভালোবাসে,, তাই পড়ে ওয়ান সাইডেড লাভার হইস না (বলেই হাসতে হাসতে ‌ চলে গেল)

,,,, আমার আর কি?? মজা দেখাতে চেয়েছি উল্টো আমি নিজেই মজা বনে গেলাম ভাইয়ার কাছে(দরজা লাগাতে লাগাতে)হায়রে সোনালী হয়তো সত্যিই তুই একটু বেশি ভাবছিস রাত ভাইয়ার বেপারে।তাই এসব উদ্ভট জিনিস দেখছিস। তার উপর নাকি আবার গার্লফ্রেন্ড ও আছে ওনার।(বিরবিরিয়ে)। দরজা নক করে যেই আবার পেছনে ঘুরলাম,, সেই একই কান্ড রাত ভাইয়া শুয়ে পা দোলাচ্ছে। আমি চোখ কচলে আবার তাকালাম। কিন্তু না এখন ও উনি বিদ্যমান। হঠাৎ আমাকে বললেন:

,, বিশ্বাস হচ্ছে না আমি এখানে?? আমি মাথা নেড়ে না বোধক উত্তর দিলাম তার অর্থ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। উনি হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে:

,, এদিকে আয়,।

,, আমি ও ওনার পাশে গিয়ে বসলাম । অবাক চোখে তাকিয়ে আছি চেয়ে আছি। উনি আলতো করে আমার কপালে ওনার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলেন। এবার আমি বুঝতে পারলাম আসলেই উনি এখানে এসেছেন কারণ ওনার কিস আমি পিল করতে পারছি। এবার আর ভাইয়াকে ডাকার ইচ্ছা হলো না কারণ দ্বিতীয় বার অপমানিত হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম,, ওদিকে রাত ভাইয়া আমার কোলে ধপ করে শুয়ে পরলেন। আমার সে দিকে কোনো খেয়াল নেই,, আমি তো ভাবছিলাম উনি ছিলেনটা কোথায়?? হঠাৎ উনি বললেন:

,, সোনালী…

,,হুম,,

,, আমি কোথায় ছিলাম এটাই তো ভাবছিস??(আমি অবাক উনি বুঝলেন কিভাবে আমি কি ভাবছি??) আপনি কি করে বুঝলেন আমি কি ভাবছি??

,, আমি অনেক কিছু বুঝি যেটা তুই নিজে ও বুঝিস না।(আমার গাল টেনে)

,, আচ্ছা এবার বলুন তো আপনি কোথায় ছিলেন??

,,আরে গাধা একটু ভালো করে খুঁজতে হয় ।আমি তো তোর রুমের বারান্দায় ছিলাম। কিন্তু তুই তো বারান্দায় খুজলিই না।

,, আমার নিজের উপর ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমি সত্যিই কতোটা বোকা?যা হবার তা তো হয়েই গেছে এখন আর ভেবে কি লাভ,,?

,, শোন আমি বেশিক্ষণ থাকবে না।একটু ঘুমিয়েই চলে যাব।তুই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে তো।

,, আমি ও বাধ্য।তাই হাত বুলাচ্ছিলাম ওনার চুলে। এতোক্ষণ যত বিরক্ত লাগছিল এখন আর লাগছে না। উনি আমার কোলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। জোৎস্না রাত হওয়ায় তাদের আলোয় স্পষ্ট ওনার মুখটা দেখা যাচ্ছে। কি নিষ্পাপ এই মুখ। একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে। চুলগুলো সারা কপাল জুড়ে এলো মেলো হয়ে দুলছে হালকা হাওয়ায়। আমি ও বারবার আঙ্গুল গুলো চালিয়ে দিচ্ছি রাত ভাইয়ার অবাদ্ধ্য চুলের উপর। জোৎস্না রাত সাথে এমন একজন কার না ভালো লাগে এই মধু রাত???

,, চলবে,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here