#ভালো তোকে বাসতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-১০
,,, শেষে কি এটাই দেখার বাকি ছিল??
❤️
,,, ওনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমি কিছুতেই দেখা করব না। এখানেই বসে থাকব।
রাত ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশের দরজাটা খুলে দিয়ে ফোন টিপতে টিপতে বলছে,
,,গাড়ি থেকে নাম সোনালী।
আমি পন করেছি আজ গাড়ি থেকে কোন কিছুতেই নামবো না। এখানে কেউ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও নামাতে পারবে না আমাকে। আরো শক্ত হয়ে বসে ,, জামাটা ঠিক করতে করতে,
,, আমি নামবো না।
উনি আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললেন,
,, কেন নামবি না?? এক্ষুনি নাম বলছি।
এখানে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে।এ যুদ্ধ রাত ভাইয়ার সাথে আমার । আমি গাড়ির সাথে আঠার মতো সেটে আছি ।
,, দুপুরে গাড়িতে বসিয়া আমি মনে মনে বলি,
,, গাড়ির বাইরে যেন আমি কোনো ভাবেই না পড়ি।
আজকে এটাই আমার পন। কোনো কথা না বলে ঢায় বসে আছি।
উনি ফোনটা পকেটে গুজতে গুজতে হালকা গলায় বললেন,
,,,ও নামবি না ?? ওকে বসে থাক। তোকে নামতে হবে না।
আমি ঘারতে বামে ঘুরিয়ে ভাবছি ,
,, লোকটা এতো ভালো হলো কবে থেকে?আমি,,,,,, আর কিছু ভাবতে হলো না রাত ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি কিছু বলার আগেই রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। ওখানে আগে থেকেই একটা টেবিল বুক করা ছিল।পা দিয়ে একটা চেয়ার টেনে আমাকে বসিয়ে দিলেন। রেস্টুরেন্ট ভর্তি লোক । আমাদের কান্ড দেখে সবাই মুখ টিপে টিপে হাসছিল।হাসবেই বা না কেন ,,?এখানে আমার পরিবর্তে অন্য কেউ হলে আমিই হেসে একাকার করে দিতাম,,, আর তারা হাসলে দোষ কি??আমি মুখটা নিচু করে বসে আছি।রাত ভাইয়া সামনের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বলছেন,
,,কিরে নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন?
আমি যেন এই সুযোগের আশায়ই ছিলাম। ওনার চোখের দিকে চেয়ে দাতে দাঁত চেপে বলছি,
, যেভাবে নিয়ে এলেন তাতে তো মনে হচ্ছে নতুন বউ আর নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পেলেই দোষ?? দেখছেন সবাই কিভাবে হাসাহাসি করছে?
রাত ভাইয়া একটা অসাধারন হাসি দিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে বলতে লাগলেন,
,,, একদিন তো বউ হবিই ,, কিছুটা লজ্জাটা নাহয় এখন পেয়ে রাখলি,,কি বলিস??
এই লোকটা এক নাম্বারের লুচু এতে আর কোনো সন্দেহ নেই। আর কিছু বলার আগেই ওয়েটার খাবার দিয়ে গেল। এতক্ষণ ধরে যে আমি ভাবছিলাম রাত ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করাতে এনেছেন ,,না তেমন তো কিছু দেখছি না। উল্টো আমার পছন্দের চিকেন বিরিয়ানি টেবিলে রেখে চলে গেল ওয়েটার। ইচ্ছে হচ্ছে হামলে পড়ি কিন্তু পারছি না ।এনার সামনে আমি দূর্বল হবো না।রাত ভাইয়া পরিবেশন করে আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
,, সকালে তো কিছু খাসনি এখন খেয়ে নে।
আমি হাত গুটিয়ে বসে আছি আর মুখ ফুলিয়ে বলছি,
,, আমি খাব না।(ওদিকে পেটে রকেটের গতিতে ইঁদুর ছুটছে। কিন্তু তা ভাবলে তো আর উত্তর হাতানো যাবে না)।আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন?
উনি একটা কিলিং হাসি দিয়ে বলছেন,
,,, হ্যাঁ দিব।তবে তার আগে খেয়ে নে। তারপর সব হবে।
একটা মেয়েকে পাগল করতে ওনার ওই মুচকি হাসিটাই যথেষ্ট। তবে ওনার মুখে হ্যাঁ শুনে আমার মুখে ক্লোজ আপ হাসি ফুটে উঠল।
উনি খাবারের দিকে চেয়ে বলছেন,
,, ওভাবে হেসো না বালিকা।
“বালিকা”বাহ বেশ ভালো তো। ওনার মুখের বালিকা ডাকটাও যেন অমাইক লাগে। আমি বিরিয়ানির ভেতরে ডুবে গেলাম।এর দুটো কারন আছে। একটা সকাল থেকে খাইনি তাই খুব ক্ষুধা পেয়েছে আর দুই, বিরিয়ানি আমার ফেভারিট।”নাও ইটস টাইম টু ইট”।
টানা ৩০ মিনিট পর খাওয়া শেষ করলাম।রাত ভাইয়া টিপু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল,
,, আচ্ছা বল তোর যেন কি প্রশ্ন ছিল?
আমি চেয়ারে বসে পা দোলাচ্ছি আর মাথা কোনুইয়ে ভর দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি । ওনার বলা শব্দগুলো কানে যেতেই এক ঝটকায় সোজা হয়ে বসলাম। কাঙ্ক্ষিত সেই প্রশ্নের উত্তর পাবো একটু ঠিকঠাক হয়ে না বসলে হয়? ঝটপট ইন্টারভিউ শুরু করলাম।
,,,রাত ভাইয়া ,,, আপনি আমাদের ভার্সিটিতে কেন জয়েন করলেন?
রাত ভাইয়া একটু থেমে আবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনায় হালকা একটা হাসি টেনে বললেন,
,, একটি মেয়ের জন্য।
আমি অবাক দৃষ্টিতে ওনার দিকে চোখ টিপ টিপ করে বললাম,
,,একটি মেয়ে? ঠিক বুঝলাম না।
,, আমি যেই মায়াবী কন্যার প্রেমে আহত হয়েছি সে তোদের ভার্সিটিতে পড়ে। সেদিন যখন সিহাবের তোর সাথে খারাপ বিহেভিয়ার দেখলাম তখন আমি অনেক টেনশনে পড়ে গেলাম।তোর সাথে এমন হলে ওর সাথে ও তো হতে পারে ?তাই ভার্সিটিতেই জয়েন করা ঠিক মনে করলাম।
ওনার কথায় আমি বেশ অবাক হলাম। কোনো মেয়ের জন্য উনি রাতারাতি ভার্সিটিতে জয়েন করলেন??তবে ওনার এতো ভালোবাসা দেখে আমি কেন খুশি হতে পারছি না। বুকের মধ্যে যেন দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। আমার নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে । এখানে আর ভালো লাগছে না। আমার এখান থেকে বাসায় যাওয়া দরকার। কোনো রকম নিজেকে কন্ট্রোল করে ,,শান্ত গলায় বলছি,
,, আচ্ছা ভাইয়া মেয়েটি কি জানে আপনি তাকে ভালোবাসেন ?
,,”না”,,,,,,,,ওকে অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুই বোঝে না,, বোকা।
মেয়েটি বোকা হোক বা গাধা এনাদের প্রেমলীলা শোনার টাইম বা ইচ্ছা কোনোটাই নেই আমার। বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাত ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,
,,ভাইয়া এতো ইমোশনাল হয়ে কি হবে?সে বোঝার সময় সব ঠিক বুঝবে। আমার বাসায় যেতে হবে বাসায় কাজ আছে ।
উনি ও আর দেরি করলেন না। আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছি । একবার ও রাত ভাইয়ার দিকে তাকাইনি। অন্যের জিনিসের দিকে তাকিয়ে কি হবে??
ভারাক্রান্ত মন আর কান্তা শরীর নিয়ে বসে আছি বিছানায়।আধা ঘন্টা হলো বাসায় পৌঁছেছি। এইমাত্র ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরূম থেকে বের হলাম। ভাবছি রাত ভাইয়ার কথা,,
,,রাত ভাইয়ার মতো একজন হ্যান্ডসাম ছেলে যে কিনা মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রাশ ,,সে কোন মেয়ের পেছনে ঘুরছে আর সে কিছু বুঝতেই পাছে না। সত্যিই মেয়েটা বড় বোকা। বেচারা বড় কষ্টে আছে।
হঠাৎ মার তলপ পড়ল। দৌড়ে গেলাম নিচে আবার কি হলো?মাকে দেখে তো আমি অবাক।মা কিচেনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। দৌড়ে গিয়ে মার চোখের পানি মুছে বললাম,
,,কি হয়েছে মা ?,, তুমি কান্নাকাটি করছো কেন?
একাধারে মার চোখ থেকে জল পড়ছে আর একাধারে হাসির ফোয়ারা।একটু পরে আমি ও হাসতে শুরু করলাম। কারণ মা আসলে পেঁয়াজ কাটছিল। এবার আসা যাক আসল কথায়।মা খাবার রান্না করেছে রাত ভাইয়াদের জন্য। এখন সমস্যা হচ্ছে ভাইয়া অফিসে তাই আমাকেই নিয়ে যেতে হবে খাবার।কি আর করার মার হুকুম মঞ্জুর করতে বেরিয়ে পরলাম । একটা কালো জামা আর লাল ওড়নায় মাথা ঢেকে ছিমছাম ভাবেই বের হলাম।এর আগে ও আমি অনেকবার ওই বাড়িতে গেছি তাই অতো সাজুগুজুর কিছু নেই। পাঁচ মিনিট পড়ে কলিং বেল বাজাচ্ছি রাত ভাইয়াদের বাসার। দুই বার কলিং বেল বাজানোর পর ও কেউ যখন গেট খুললেন না। তখন তৃতীয় বার বাজাবো কি না বাজাবো সেই দ্বিধায় ছিলাম তখন ই রাত ভাইয়ার মা এসে দরজা খুললেন। আমাকে দেখে বেশ খুশি হলেন বলেই মনে হলো। আমার দিকে টিপটিপ করে চেয়ে বলছেন,
,,,আরে মিষ্টি মা?? তুই এসেছিস,,,,(আমার হাত ধরে টানতে টানতে )আয় আয় ভেতরে আয়।
ধুম করে রাত ভাইয়া কোত্থেকে এসে ভালো মার সামনে বলতে লাগলেন,
,,,, ও নতুন বউ এসেছে,,,
আমি সাথে ভালো মা দুজনেই অবাক। কারণ রাত ভাইয়া নতুন বউ পেল কোথায় এখানে তো আমি এসেছি। ভালো মা চোখ বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলেন,
,, রাত ,,তুই নতুন বউ পেলি কোথায়? এখানে তো মিষ্টি মা এসেছে,,,
চলবে,,,,??