ভালোবাসা তুই পর্ব ১৫

#ভালবাসা_তুই
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃসাদিয়া_আক্তার

_____________________
ঘূট ঘূট অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমের এককোণে বেডে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে আছে তূর্য।বাইরের সূর্যের তীব্র আলো ঘরের জানালা দিয়ে প্রবেশ করে তূর্যের গা ছুয়ে যাচ্ছে বার বার।হঠাৎ এই তীব্র আলো তূর্যের চোখ ছুয়ে যাওয়ায় ঘুম ভেঙে যায় তার।অনেকক্ষণ ঘুমানোর কারণে মাথাটা বেশ বার বার লাগছে।মাথায় হাত দিয়ে শরীরকে ভারসাম্যে এনে উঠার চেষ্টা করছে।কোনো কিছুই এখন সে মনে করছে পারছে না।ঠিক ১০ মিনিট পর সব কিছু মনে করতে পেরে অস্থিরতা কাজ করতে শুরু করলো।আর এই অস্থিরতা আর অন্য কিছুর জন্যে নয় ইরাকে পাশে না পাওয়ার অস্থিরতা বিরাজ করছে।তূর্য দৌড়ে রুমের দরজার কাছে যায় কিন্তু রুমের তো দরজা বন্ধ।জোরে জোরে নক করতে থাকে,দরজা খুলার চেষ্টা করেই চলছে তূর্য।শেষে না খুললে সজোরে লাথি মারে দরজায়।তূর্যের গায়ের জোরের কাছে দরজাও হার মেনে যায়।খুলে যায়।তূর্যের মাথায় রক্ত চেপে বসছে যেভাবেই হক ইরাকে সামনে দেখতে চাই ওর।

তূর্য রুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসতেই দেখতে পেলো সে এক বড় করিডোরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে যা তার দাঁড়িয়ে থাকা পথ থেকে যেতে যেতে আরও কিছু দুর গিয়ে শেষ হয়েছে।মাঝ দিয়ে এক লম্বা সিড়ির দিকে চোখ পরে তূর্যের।কিছুটা রাজকীয় বাড়িও বলা যায়।এমনিভাবে খরচ করে সাজানো হয়েছে।
আর কিছু না ভেবে… ইরা,ইরা বলে জোরে জোরে চিৎকার দিতে দিতে সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে।কিছুদুর যেতেই তূর্যের চোখ পরে বড় লিভিং রুমের এক রাজকীয় সোফায় সাদা শার্ট পরা, গলায় মোটা গোল্ডের চেইন, হাতে সিগারেট নেওয়া লোকটার দিকে। লোকটার পায়ে পরে একজন ছেলে কান্না করেই যাচ্ছে। তার গলার স্বর তূর্যের কাছে অপরিচিত কেউ নয় কিন্তু যখন ছেলেটি মাথা উপরের দিকে থেকে উঠালো তা দেখে তূর্য অবাক না হয়ে পারলো না।কারণ সে আর কেউ না ফাহিম।এবার তূর্য থমকে দাড়াঁয় সেখানের এককোনে, কি হচ্ছে তা জানতে আর বুঝতে।

🍂
——স্যার আমি আর এইসব কাজ করতে চাইনা।লাইফে একটা সময় অতি টাকার লোভের মৌহে পরতে যেয়ে আমরা এমন অনেক অনৈতিক কাজে নিজেকে জরিয়ে ফেলি। তখন নিজেরি হুশ হারিয়ে ফেলি যে আমরা কি করছি?বাট একটা সময় ধাক্কা পেয়ে ঠিকি বুঝতে পারি যেটা করছি সেইটা সঠিক না।এখন স্যার প্লিজ আমাকে যেতে দিন আর আমার ফ্যামিলিকে ছেড়ে দিন।(ফাহিম)

——-বাহ! সাবাস দেখছি তো তোর সাহসি আছে। আমার সামনে বসে আমাকেই জ্ঞান দিস।তবে শুন তোকেও আমি কিছু জ্ঞান দেয়।টাকার মৌহে পরে তুই যে ফান্দে পা দিয়েছিস তা থেকে তুই এতো তারাতাড়ি ছাড়া পাচ্ছিস না।আমার কাজটা তুই পুরো কমপ্লিট করতে পারোসনি আর তার আগেই যেতে চাইছিস?আর আমি দিবো যেতে তা ভাবলি কেমন করে?(লোকটি)

——-স্যার দেখুন আমি আপনার হাত,পা জোর করে বলছি আমাকে যেতে দিন।দরকার হলে আমাকে রেখে যা ইচ্ছা তাই করুন তবে আমার ফ্যামিলিকে যেতে দিন।

——-তা তো আর করছি না।তবে তখন আমি একটা এগ্রিমেন্ট দিয়েছিলাম কি মনে আছে?

ভ্রু বাকিয়ে ফাহিম বলে,
——কি এগ্রিমেন্ট? আমার মনে নাই (মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে)

——তুই অস্বীকার করবি শালা হারামখোর তা আমি অনেক আগেই জানতাম।আমার নামও ইমরান হাসান।প্রমান ছাড়া কাজ আর কথা দুইটাই করি না।তোর সেই এগ্রিমেন্ট আমার লকারে সেই ৫ মাসে আগে থেকেই রাখা আছে।(হাহা বিকট শব্দে এক শয়তানির হাসি দেই)

——না তুই এমন করতে পারিস না।বলে ইমরানের কলার চেপে ধরে ফাহিম)

ইমরান তার লোকেদের চোখ দিয়ে ইশারা করে ফাহিমকে নিয়ে যেতে। তার বর্ডিগার্ড গুলো এসে ফাহিমকে নিয়ে একটা রুমে আটকে রেখে দেই।

🍁

তূর্য দুর থেকে সবই পর্যবেক্ষণ করছিলো।ইমরান বের হয়ে যেতেই তূর্য সেই রুমের কাছে যায় যেখানে ফাহিমকে আটকে রাখা হয়েছিলো।সামনে দিয়ে দরজা লক থাকায় তা খুলে ভিতরে ডুকে যায় তূর্য।তূর্যকে দেখে ফাহিম বলে,
——তার মানে তোমাকেও এখানে আনা হয়েছে?

তূর্য ভ্রু জোরাকে বাকিয়ে বলে,
——-এইসব হচ্ছেটা কি ফাহিম?এই ইমরান হাসান ওয়াটএবার যাইইহোক কে উনি?আর কি সম্পর্ক আর আমরা এখানে কি করছি?আর আমার ইরা কই?বল ফাহিম।

ফাহিম কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
——-এইসব কিছু আমার জন্যেই হয়েছে।এর পিছনে আমারই দোষ সব।

——ফাহিম! বলো সব।কি হয়েছে?(তূর্য)

——-ইমরান হাসান হচ্ছে সব কালো টাকার বিজনেসের অধিপতি। যতসব অনৈতিক কাজ সে করেনি এমন কিছু বাদ নেই।আর আমিও টাকার লোভে এই লোকেরই জালে এসে আটকে পরছি।মনে আছে তোমার সেদিন ভার্সিটির গলিতে আমাকে মেরে সেই বড় বিজনেসম্যানের নাম জানতে চেয়েছিলে?যার কাছে আমি তোমাদের কোম্পানির প্রোডাক্টসগুলো চুরি করে সেল করতাম উনিই সেই লোক।

তূর্য যে লোককে এতোদিন খুজছে সেই ওই ইমরান হাসান জেনে এবার তূর্যের মাথায় আগুন উঠে যায়।ইচ্ছে করছে এখুনি একশন নিতে।সব রাগ ভীড় করতেই হঠাৎ তূর্যের আরেকটি কথা মনে পরে যেতেই আবার ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে,
——আচ্ছা ফাহিম এগ্রিমেন্ট? মানে উনি কিসের এগ্রিমেন্টের কথা বলল তোমার কাছে?

তা শুনেই ফাহিম কেপে উঠে।চোখে জল এসে ভীড় জমাই।কাদো কাদো কন্ঠে বলে,
——আমি আমার বোনকে বেঁচে দিয়েছি।টাকার লোভ আমাকে পুরো শেষ করে দিয়েছিলো তখন।

তূর্য এবার আরও রাগে ফুসে উঠে বলে,
——মানে?বোনকে বেচে দিয়েছো মানে?

——-আমি তখনো ইমরান হাসানের সব কালো ধান্দার বেপারে জানতাম না।আমি তার এতো এতো বাড়ি গাড়ি দেখে লোভের মায়াজালে আটকে গিয়েছিলাম।আমি জানি না কোথা থেকে সে ইরার ছবি পেলো।আর পেয়েই আমাকে সে তার সাথে ইরার বিয়ের পোস্তাব দিয়ে বসে।আমিও হ্যাঁ করে দিয়েছিলাম।তার কিছুক্ষন পর সে আমাকে একটা এগ্রিমেন্ট সাইন করতে দেই।আমি তখনো কিছু বুঝিনি।আর না বুঝেই সাইন করে দেয়।পরে তার সব কালো ধান্দা জেনে আমি সরে আসতে চাই।বাট পারি না।তাই সেদিন আমাকে লোক দিয়ে কিডন্যাপ করেছিলো।আর যাই হোক এক ভাই তার বোনকে এমন লোকের কাছে তুলে দিতে চাইবে না।

তা শুনে তূর্যের চোখে লাল আভা দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। কলার চেপে ধরে ফাহিমের, যেনো এখুনি গিলে খাবে তাকে।ফাহিমকে একটা ঘুষি দিয়ে পেটে তূর্য বলে,
——কেমনি পারলি তুই তোর বোনকে তার খেলনা বানাতে।আমার লজ্জা করে তোর মতো ভাই ইরা পেয়েছে।আর জেনে রাখ পৃথিবী এদিক ওদিক হয়ে গেলেও আমার ইরাকে কেউ আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।আজ ইরার ভাই না হলে তোর সাথে যে কি করতাম তা তুই কল্পনাও করতে পারতিনা।

——হ্যাঁ হ্যাঁ আমাকে মারো।থেমে গেলে কেনো?আমি তো তারই যোগ্য তূর্য।যে এগ্রিমেন্টে সাইন করেছি ওখানে শর্ত প্রযোজ্য ছিলো যদি আমি কাজ কখনো ছেড়ে দেয় তবে ইমরান নয়তো আমার পুরো ফ্যামিলিকে মেরে ফেলবে বা ইরাকে তার সাথে বিয়ে দিতে হবে।তাই আমি এখন দোটানায় পরে গেছি।এক কাজ করো তূর্য তুমি আমাকে মেরে ফেলো আমাকে মেরে সবাইকে নিয়ে পালিয়ে যাও।হ্যাঁ এটাই ভালো হবে। বলে ফাহিম ছুড়ি খুজতে থাকে।

🍁

দুর থেকে দাঁড়িয়ে ইরা আর ইরার মা-বাবা সবই শুনতে পেলো।যা এতোক্ষন তূর্য আর ফাহিমের মাঝে হলো।ইমরান ইরা আর ইরার পুরো ফ্যামিলিকে তুলে আনে।তাই তারাও এখানে।ফাহিম একটা ছুড়ি খুজে পাই।দৌড়ে এসে তূর্যের হাতে দিয়ে বলে,
——তূর্য নাও।প্লিজ আমাক মেরে ফেলো আর এই খেলা এইখানেই শেষ করো।

তূর্য কিছুই বুঝছে না ফাহিমের কান্ড দেখে।ফাহিম দেখছে তূর্য হা মেরে দাঁড়িয়ে আছে।তাই ফাহিম নিজেই ছুড়ি হাতে নিয়ে নিজেকে শেষ করতে প্রস্তুত হলে তা দেখে ইরা দৌড়ে এসে ফাহিমের হাত থেকে ছুড়ি ফেলে দেয়।ইরার মা সাহেলা বেগম এসে ফাহিমকে এক জোরে চড় বসিয়ে দেই গালে।ফাহিম মাটিতে পরতে পরতে বাচঁলো।ইরা বিছানায় বসে কান্নায় ভেঙে পরলো।

——ছিঃ! তুই কিভাবে পারলি তোর বোনের জীবন এভাবে নষ্ট করতে ফাহিম?একবারও ভাবলি না।আর এখন ইরা বিবাহিত। তুই কি জানিস না?(সাহেলা বেগম)

——ফাহিম চুপ।অনেক লজ্জিত। তাকাতে পারছে না নিজের মা বোনের দিকে।

আফজাল সাহেব মাথায় হাত মেরে বসে পরে পাশে থাকা সোফায় ছেলের কৃতকর্ম জানতে পেরে।কিছুই বলতে পারছে না।

তূর্য ইরার কান্না দেখে ইরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
——প্লিজ ইরা এভাবে কান্না করো না।আমি আছি তো।আমার ইরুকে আমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না যতোক্ষণ না মৃত্যু এসে বাধা দেই।



ইরা তাও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে যাচ্ছে।তূর্য ইরার চোখ মুছে দিয়ে আরও শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেই।প্লিজ ইরা শান্ত হও।

ইরা তূর্যকে শক্ত করে নিজের দিকে টেনে বলে,
——তূর্য আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ।আমার তোমাকে ছাড়া বাচতে কষ্ট হয়ে যাবে।

——–ফাহিম ইমরান কি জানে না ইরা আমার বউ?তবুও এমন কেনো করবে?(তূর্য ফাহিমের দিকে তাকিয়ে)

ফাহিম লজ্জায় মুখ নিচু করে বলে,
——না তূর্য।ইমরাম জানে এখনো ইরা অবিবাহিতা।

তা শুনে তূর্য দেয়ালে সজোরে লাথি মারে।নিজেকে নিজের প্রতি রাগ উঠছে তূর্যের। না ফাহিমকে কিছু করতে পারছে না ইমরানকে।তূর্য বলে,
——আমি এখনি যাচ্ছি ওই ইমরানের কাছে।ইরা আমার বউ জানাতে।

ফাহিম বলে,
——-তা বলবে কি করে তুমি এখন ইমরান যদি জানতে পারে তাহলে সব লন্ডবন্ড করে দিবে তূর্য।আমাদের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলবে।কারণ এগ্রিমেন্টে তাই লিখা ছিলো।

তূর্যের মাথা এখন কাজ করছে না কি করবে সে কিভাবে তার ভালোবাসা, প্রিয়তমাকে বাঁচাবে এইখানে থেকে।তা ভেবেই তূর্য কিছুই বুঝতে পারছে না।কিন্তু ইরার সামনে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে।কারণ ইরা তাকে এইভাবে দেখলে আরও ভেঙে পরবে।

দুর থেকে আরও একটা কান আর চোখ তাদের এই ফ্যামিলি ড্রামা ভালোই এনজয় করছে।তূর্যের এই হাল দেখে দাঁত কেলানো শয়তানি হাসি হাসে।সে আর কেউ নয় আমির। মনে মনে বলে,
——-হাহাহা। তো এই বেপার।এইজন্যে আমাদের সবাইকে এখানে কিডন্যাপ করা হয়েছে।বাহ!ভালোই মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এই ইমরান মিমরান যেই হোক আমার বেশ উপকার করেছো তুমি।তূর্য তোর এই অবস্থা দেখে আমার মনে যে কতো শান্তি এসেছে তা শুধু আমিই জানি।এখন দেখ আমি তোর সমস্যা আরও কতোভাবে বাড়াই।তুই ইরাকে কখনো পাবি না।তোকে এমন সাজা দিবো যে ইরা তোর হয়েও হবে না।হাহাহা!

_______________
চলব♦

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here