ভালোবাসা তুই পর্ব ২

#ভালবাসা_তুই
#পর্ব_২
#লেখিকা_সাদিয়া_আক্তার

___________________________
সকাল ৭টা,,
মোবাইলের রিংটোন বেজেই চলছে সেই তখন থেকেই।ঘুম ভেঙগে অনেক বিরক্ত স্বরে ইরা কলটা রিসিভ করেই বলে,,কেরে? এতো সকালে ঘুমাতেও দিবে না এখন মানুষ।
—দোস্ত জলদি ভার্সিটি আয়।একটা গুড নিউস আছে।(চৈতী)
—গুড নিউজ!রিয়েলি?অকে আসসি।

ভার্সিটি পৌঁছে চৈতীকে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো ইরা।ক্যাটিনে বসে বসে কফি খাওয়া হচ্ছে তোর,মনে মনে বলছে ইরা।দৌড়ে পিছন থেকে ঝাপড়ে পরে চৈতীর গায়ে।
—উফফ রে! ভয়ই পাওয়ায় দিলি একদম (ভীত স্বরে বলে চৈতী)
—হা হা।আমাকে ফেলে একা একা কফি খাচ্ছিলি।তাই দেখালাম।(শয়তানির হাসি হেসে বলে ইরা)
ক্যাটিনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন ছেলে ইরা আর চৈতীকে দেখে বারবার মুখ লুকানোর চেষ্টা করছে।সেই ছেলেগুলো আর কেউ না,তূর্যর হাতের কেলানি খেয়ে এক একজনের হাল দেখার মতো।তা বুঝতে পেরেই ইরা আর চৈতী একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
—-দোস্ত। কি যেনো গুড নিউজ শুনাবি বললি কলে?(উত্তেজিত স্বরে বলে ইরা)
—-আমাদের ভার্সিটি থেকে আগামী সপ্তাহে ট্যুরে নিয়ে যাবে দোস্ত। তাও ঢাকার বাইরে।আমি এই নিউজটা শুনতে পেয়েই খুব এক্সসাইটেট হয়ে আছি।
—ওহ রিয়েলি দোস্ত!আমিও শুনে এক্সসাইটেট হয়ে গেলাম।কোথায় নিয়ে যাবে রে?
—শুনলাম জাফলং, সিলেট।
—ওহ ওয়াও!
খুশিতে নাচতে নাচতে ইরা ক্যান্টনের দোকানে গিয়ে দুকাপ কফি নিয়ে চৈতীর দিকে আসছে।সামনে এক শরীরের যে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রতি কোনো খেয়ালই করলো না ইরা।যা হওয়ার হলো আনমনে তূর্যর লম্বা শরীরের সাথে ধ্যাক্কা লেগে সব কফি তার গায়েই ঢেলে দিলো।জোরে আর্তনাদে চেচিয়ে উঠলো তূর্য।
“তুই তো গেলি রে ইরা।আর কারো শরীর পেলি না কফি ফেলার জন্যে?সোজা এই আফ্রিকান বানোরের গায়েই ঢেলে দিলি?”(মনে মনে ভয় জোড়ানো কন্ঠে বলল ইরা)
—শরীরটা পুরো জ্বলে গেলো রে!সেদিন তো কালা ছিলে কথা পুরো না শুনেই অজানা একজনকে থাপ্পড় মেরে দিলে।আজ কি অন্ধ ও হয়ে গেসো নাকি?(রাগ জোড়ানো কন্ঠে বলল)
—-ন..না।স..সরি তু তূর্য ভাইয়া!

বলতে না বলতেই এক হেচকা টানে খালি ক্লাস রুমে নিয়ে আসে ইরাকে।ইরার মুখে এখন ভয় পুরো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।চোখ দিয়ে যেনো আগুনের লার্ভা বেরিয়ে আসাটা স্পষ্ট দেখতে পারছে এখন ইরা তূর্যের চোখে।ভয় তার আরো বারছে।দেওয়ালে ইরাকে চেপে ধরলো তূর্য।এক হাত দিয়ে ইরার হাত শক্ত করে ধরলো।আরেক হাত দেওয়ালে চেপে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইরার মুখ বরাবর।আগুনের লার্ভার মতো কটমটিয়ে তূর্য বলে,
—এই মেয়ে তোমাকে না ওয়ান করেছি দ্বিতীয়বার এমন ভুল না করতে।
—এটা কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি?হঠাৎই হয়ে গেলো।হাতটা ছাড়ুন।ব্যথা পাচ্ছি।
—হাটার সময় তোমার চোখ কই থাকে হ্যাঁ? আমার বুকের সব লোম জ্বলে গেসে গরম কফি পরে।তা কি বুঝো তুমি
—ভালোই হয়েছে বানরের সব লোম পুড়ে গেসে(আস্তে আস্তে মিটমিট হেসে বলল ইরা)
—কি কিছু বলেছো তুমি?হ্যাঁ?
— না না ভাইয়া কিচ্ছু বলিনি।

ইরার হাত এভাবে কিচ্ছুক্ষণ শক্ত করে চেপে ধরে আরও চাপ দিচ্চিলো।এভার ইরার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে তূর্য ছেড়ে দিলো।বেরিয়ে পরলো রুম থেকে।কিচ্ছুক্ষন পর চৈতী দৌড়ে এলো ইরার কাছে।ইরার হাত লাল হয়ে গেসে।
— দেখছিস! এই আফ্রিকান বানর,খাটাসটা কি অবস্থা করেছে আমার হাতের।
—আহা!আসলেই।বাট যাইই বলিস তোরও দোষ ছিলো। তুই বেখালি ভাবে হাটছিলি।ভাইয়াকে ব্লু টি-শার্ট এ খুব হ্যান্ডসাম লাগছিলো রে।বাট উনার শার্টে কফি ফেলে দিয়ে সব ভেস্তে দিলি।তো উনি রাগবে নয়তো কি করবে।চল এখন ক্লাসে।


‘🍁

এক সপ্তাহ পর,
ফোনের রিংটোন সেই তখন থেকেই বেজে যাচ্ছে ইরার মোবাইলে ।চৈতী কল দিয়েই যাচ্ছে।
আরে ইরার বাচ্চা কলটা ধর।আজ আমাদের ভার্সিটি থেকে ট্যুরে যাওয়ার দিন।এই দিনও তোর ঘুমাতে হয়?একটু পর বাস ছেড়ে দিবে।কখন আসবি?বিড়বিড় করে বলতে লাগলো চৈতী।
পিছন থেকে তূর্যর ফ্রেন্ড রিয়াদ এসে চৈতীকে দেখে বলে উঠলো,
—কি চৈতী এখনো উঠে বসো নি বাসে।ছেড়ে দিবে তো।
—আমার ওই ফাজিল ফ্রেন্ডটা আসিনি(মন খারাপ করে বলে চৈতী)
—আমারো ওই রাগী ফ্রেন্ড তূর্য এখনো আসছে না।শালাকে কতো কল দিচ্ছি।উফফ চলতো আমরা গিয়ে বাসে বসি।ওদের শিক্ষে হওয়া দরকার।
—ঠিকি বলেছেন ভাইয়া।চলেন।যাওয়া যাক।

ঘড়িতে ৮টা বেজে গেছে। তা দেখে এক লাফে ইরা রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরল।”যা কাম সাড়লো।মিস হয়ে গেলো রে বাস”,মনে মনে বলে ইরা।বলে সামনে তাকিয়েই দেখে তূর্য ভাইয়াও আফসোসের মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
—ভাইয়া।আপনি এখানে কি বেপার?
—আমিও করতে পারি সেইম কুয়েশ্চন তোমাকে? (ভ্রু কুচতে বলল তূর্য)
—লেট হয়ে গেলো আর বাস টাও মিস হয়ে গেলো।(করুণ স্বরে বলে)
—তো এখন কি করবে?আমি যাচ্ছি।দেখি সামনে কোনো বাস পেলে উঠে চলে যাবো।যদি চাও আমার সাথে যেতে পারো (আড় চোখে চেয়ে বলে তূর্য, ইরার দিকে)
ইরা মনে ভাবতে ভাবতে বলে,কি আর করার এখন এই আফ্রিকান বানোনের সাথেই শেষমেষ আমাকে যেতে হবে ভাবি নি,হুহ।হে আল্লাহ রক্ষে কইরা এই জল্লাদতার আক্রমণ মন থেকে(আকাশের দিকে চেয়ে)
—কি হলো আসবে নাকি আমি একাই চলে যাবো।(চেচিয়ে বলে)
—হ্যাঁ, হ্যাঁ আসসি ভাইয়া।
তারা বাস খুঁজার পথে রওনা হলো।সামনে একটা বাস দেখে দুজনেই উঠে বসে।রাত ঘনিয়ে এলো। বাস থামলো একটা রেস্তোরাঁর সামনে।সব যাত্রী রাতের খাওয়া সাড়তে নামলো।ইরা আর তূর্যও নেমে পরল।
—তুমি একটু থাকো আমি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি।(বলে তূর্য)
—ভাইয়া দ্রুত আসবেন এমন ঘূট ঘূট অন্ধকারে ভয় লাগছে।
তা শুনেই তূর্য হেসে চলে গেলো। ইরা দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ কিছু বখাটে এসে ইরাকে বিরক্ত করতে শুরু করলো,
—কি গো সুন্দরী! এতো রাতে কার অপেক্ষায় হুম?(শয়তানির হাসি দিয়ে বখাটদের একজন বলে)
ইরা এবার বেশ ভয় পেয়ে যাচ্ছে।ইরা ভয়ে ভয়ে বলে-প্লিজ দুরে থাকুন নইলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।বখাটদের একজন তার কাছে এগিয়ে আসসে আর বলছে কি ভালো হবে না গো,,বলে ইরার গায়ে টাচ করার আগেই পিছন থেকে হাত শক্ত করে চেপে ধরলো কেউ একজন।
—কে রে আমার হাত এভাবে চাইপা ধরছোস?বলেই মুখ ঘুরিয়ে দেখলো তূর্য দাঁড়িয়ে। এখন ইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।তূর্য ইরার দিকে তাকিয়ে বলে,তুমি বাসে গিয়ে বসো ইরা।আমি এদের দেখে নিচ্ছি।
সব গুলোকে ইচ্ছে মতো পিটালো তূর্য।হাপাতে হাপাতে বাসে উঠে তূর্য ইরার পাসে এসে বসলো।
সকালে ইরা নিজেকে তূর্যের কাঁধে মাথা রেখে আধো শোয়া অবস্থায় পেয়ে লাফিয়ে উঠে।তূর্য ঘুম তখনো।
কিভাবে ঘুমিয়ে গেলাম আমি এই আফ্রিকান বানোরের গায়ে।না থাক উনাকে আফ্রিকান বানোর না বলি।কালকে ব্যাটা আমাকে বাঁচিয়েছে।একটা থ্যাংকস তো দেওয়া উচিত,, মনে মনে বলে ইরা আর মুচকি হাসসে।

জোরে হর্ণ বাজার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তূর্যর।
সিলেট পৌঁছে গেলো তারা।

_____________________________

চলবে🌼

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here