#ভালবাসা_তুই
#পর্ব_৩
#লেখিকা_সাদিয়া_আক্তার
_________________________
পিচঢালা রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে তূর্য আর ইরা।কী সুন্দর দেখতে লাগছে সিলেটের পিচঢালা সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পথগুলো। আহা! দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেলো আমার।নয়তো একটু আগে এই তূর্য নামের বানোরটা আমার সাথে যা করলো, তার জন্যে আজ সারাদিনই আমার মুডটাই খারাপ থাকতো ভেবে।কিভাবে টেনে হেচড়া আমাকে বের করলো বাস থেকে, ভেবেছিলাম ব্যাটার ইম্যাজেন্সি বাথরুম পেয়েছে,,না, ব্যাটা খচ্চর আমাকে হুদ্দাই এভাবে টেনে নামালো,আবার বলে কি তারাতাড়ি নামো,নয়তো আমার জন্যে গাড়ি মিস করবে,মনে মনে মুখ ভ্যাচকিয়ে তূর্যের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্দার করে যাচ্ছে ইরা।হঠাৎ তূর্যের ডাকে ইরার বিড়বিড় করা থেমে যায়।
তূর্য ভ্রু কুচকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বলে,
—এই মেয়ে।কি করছো?ওখানে দাঁড়িয়ে আর তখন থেকেই কি বিড়বিড় করেই যাচ্ছো? যত্তসব!
রাগটাকে হাসি দিয়ে চেপে ইরা বলে,
—–পরিবেশটা কি সুন্দর না!তাতে মুগ্ধ হয়েই মনে মনে প্রশংসা করছিলাম আর কি।
—-হয়েছে।এখন চল সামনে যাই।গাড়ি খুঁজতে হবে। আমাদের ভার্সিটির বাসটাকে ধরতে হবে।যেভাবেই হক।
—–জ্বী, জ্বী চলেন।(ইরা)
______________________________________
“স্যার, বাসটা থামান।আমাদের হারানো দুইজন ব্যাক্তিকে খুজে পাওয়া গেসে স্যার,ওইযে ওরা দুজন হেটে যাচ্ছে সামনে”–চৈতী চিল্লিয়ে স্যারকে বলে।
স্যার ড্রাইভারকে বাস রাখতে বলল।চৈতী বাস থেকে এক দৌড়ে নেমে ইরাকে পিছন থেকে এক ঘুষি দিয়ে বলে,
—কি রে শালী?তোকে সেই কখন থেকে কল দিলাম ধরলিই না।
চৈতীর ঘুষিতে পিছে তাকিয়ে এক বিশ্ব জয়ের হাসি হেসে ইরা জড়িয়ে ধরে বলে,
—-দোস্ত তুই।আহ!এভাবে আমাকে ফেলে গেলি কেমনে।আমি তো ভাবসি জাফলং এ গিয়েই দেখা হবে তোর সাথে।
—আচ্ছা বাকি কথা পরে হবে।অনেক কথা হবে।চল এখন বাসে উঠ।
ততোক্ষনে রিয়াদ তূর্যেকে দেখতে পেয়ে বাস থেকে নেমে বলে,
—কিরে দোস্ত!শালা এতো লেট করিস অল টাইম মেয়েদের মতো। তাই বাসটাও আজ মিস করলি!
তূর্য রাগী লুকে বলে,
—কি বলিস?কার মুখ দেখে যে উঠলাম যে আজই লেট হতে হলো আর কার কার সাথে যে দেখে হলো (ইরার দিকে চেয়ে বলে)।ইরা তূর্যের এই কথা শুনে রেগে আগুন হলেও কিছু বলতে না পেরে চলে যাই চৈতীর সাথে।
রিয়াদ বলে,
—আচ্ছা চল। বাসে উঠে কথা হবে।
🍁
বাস তার আপন গতিতে চলছে। বাস পৌঁছে গেলো তার গন্তব্যে। সবাই নেমে হোটেলে ঢুকে নিজ নিজ রুম খুজে ফ্রেস হতে চলে গেলো। ইরা আর চৈতীও তাদের রুম পেয়ে ফ্রেস হয়ে লাঞ্চ সেরে নিলো।
—-কি রে দোস্ত! ভালোই তো তূর্য ভাইয়ার নামে বদনাম করিস।আর আসলি তার সাথেই বাহ! বাহ!.. তো কতোদুর,হুম?(মিটমিট শয়তানি মাখা হাসি হেসে বলে)
—-আরেএ দুর দোস্ত যা তা কি বলে যাচ্ছিস।তোর মতো দোস্ত আছে,তাই এইরকম একটা বানোনের সাথেই আমাকে আসতে হয়েছে।পুরো জার্নি আমাকে হেনোস্তা করে ছাড়ছে।ইচ্ছে করছিলো ব্যাটাকে গুলি মেরে মাথার খুলি উড়িয়ে দেই।বাট জানোস, ব্যাটা আমাকে কিছু গুন্ডার হাত থেকে বাচিঁয়েছে।
—ওহ আচ্ছা।তাই নাকি।তুই যাইই বলিস, তূর্য ভাই যতোই রাগী হক ছেলে হিসেবে জোস।
—এতোই জোস লাগলে যা না তুই।গলায় জুলে পর।
—-না। আমি কেন যাবো।আমার তো….(একটু লজ্জা পেয়ে)
—-হ্যাঁ কি তোর?বুঝলাম না লজ্জা পাচ্ছিস কেন হঠাৎ?
—-আসলে বাসে জার্নির পথে তূর্য ভাইয়ার ফ্রেন্ড রিয়াদ ভাইয়া আমাকে কোমপানি দিয়েছিলো।
শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে ইরা বলে,
–হ্যাঁ তো?
—তো কিছু না।(কিছুটা লজ্জা পেয়ে)
—হাহাহা।তো আমাদের মিস চৈতী প্রেমে পরেছে।আহা!বেচারার চেহারা দেখার মতো।
—দুর।চুপ কর দোস্ত।
🍁
পরদিন সকালে সবাইকে নিয়ে বাস রওনা দিচ্ছে জাফলং এর উদ্দেশ্যে।
প্রকৃতির কন্যা বলা হয় জাফলং কে।উঁচু উঁচু পাহাড় ঘেষে সাপের মতো এঁকেবেঁকে যাওয়া সড়ক,সেইসাথে গা বেয়ে অজস্র ধারায় ঝর্ণা,চারদিকের সবুজাভ চূড়ায় তুলার মতো মেঘরাজির বিচরণ এই সবকিছুই ইরাকে ব্যাপক ভাবে মুগ্ধ করে যাচ্ছে বার বার।হঠাৎ চৈতীর ডাকে অনুভুতির জগত থেকে বেরিয়ে আসলো ইরা।
একসাইট্রেট মার্কা হাসি দিয়ে চৈতী বলে,
—-কী সুন্দর তাই না দোস্ত!চল পাহাড়ের চূড়ায় যায়।
—-হ্যাঁ দোস্ত খুব সুন্দর। এই প্রকৃতির মাঝে ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে। বাট পাহাড়ে উঠবো নারে।আমার বেশি উপরে উঠলে ভয় করে দোস্ত।
—-আরেএ কিচ্ছু হবে না।আমি আছি তো দোস্ত।
এই বলে চৈতী শক্ত করে ইরার হাত ধরে টেনে নিয়ে পাহাড়ে উঠতে লাগলো।দুর থেকে তূর্য তার ফ্রেন্ডেদের নিয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলার এক মাঝে দেখতে পেলো ইরা আর চৈতী পাহাড়ের বেশি চূড়ায় উঠে যাচ্ছে।তূর্য তা দেখে তাদের পিছন পিছন যেতে লাগলো। রিয়াদও তূর্যের সাথে চলল পিছনে।ইরা আর চৈতী পাহাড়ের এতো উঁচুয় এখন উঠে ভয় তো পাচ্ছে বাট বিরাট আকাশকে মাথার এতো কাছে দেখতে পেয়ে যেনো ভয়য়ের মতো কিছুকে ভুলেই গিয়েছে।চৈতী একদিকে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। অন্যদিকে এক অচেনা নতুন পাখি দেখতে পেলো ইরা।পাখির পাখমের রং যেনো ইরাকে তার দিকে নিয়ে যেতে বার বার আকৃষ্ট করছে।ইরাও আর কি করবে পাখিটিকে আরও কাছ থেকে দেখার প্রবণতায় কখন যে পাহাড়ের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলো তার কোনো খেয়ালি নেই।চৈতী হঠাৎ ইরারকে পাহাড়ের শেষ সীমানায় দেখে জোরে চিৎকার দিতেই ইরার হুশ ফিরে।নিজেকে এইভাবে দেখে ইরা ভয়ে কেঁপে উঠে। ভয় এতোটাই পেয়েছে যে,পা পিছলে যেই পরতে যাবে কার যেনো এক হেচকা টানে ইরা তার বুকে পরে যাই।ইরা অনেকক্ষন ভয়ে চোক মুখ ভয়ে খিচে আষ্ঠেপৃষ্ঠে শার্ট ধরে আছে তার।চোখ খুলে তাকাতেই দেখে সে আর কেউ নয় তূর্য।তূর্যের কাছে যে এখন কি কেলানির কেলান তাকে পেতে হবে তা ইরা ভালো করেই টের পাচ্ছে।সেই ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে তূর্যের গায়ে ঢোলে পরে।
কিছুক্ষণ পর নিজেকে হোটেলে তার রুমে আবিষ্কার করলো ইরা।একচোখ বন্ধ রেখে আরেক চোখ দিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে চারিদিকটা কিছুক্ষন পর্যবেক্ষণ করলো।দেখলো চৈতী পাশে বসে আছে।চোখ মুখে পানির ছাপ।
ইরার জ্ঞান ফিরে তাকানো দেখে চৈতী এক রুদ্ধশ্বাস ফেলে বলে,
—-দোস্ত তোর হুশ ফিরছে।আল্লাহ বাঁচাইলো।
—-হুম।মাথাটা জীম জীম করছে হালকা।বাট আমি কিছু মনে করতে পারছি না দোস্ত।আমি এখানে কিভাবে আসলাম?
—-তুই তো ভয়ে তূর্য ভাইয়ার কোলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলিস।তূর্য ভাইয়া তোর এই অবস্থা দেখে উনার মাথা খারাপ হয়ে যায়।পুরো পাহাড় চূড়া থেকে হসপিটাল পর্যন্ত তোকে কোলে তুলে নিয়ে যায়।একটু আগেই উনি নিজের রুমে গেলো।সারারাত তোর পাশেই ছিলো বসে।আমিই বললাম ভাইয়া আপনার এখন ঘুমের প্রয়োজন। প্লিজ যান এবার।
ইরা রীতিমতো অবাক হয়ে বলে,
—-কি বলিস! এই বানোরটা আমাকে কোলে নিয়ে হসপিটাল অবধি গিয়েছে?লাইক সিরিয়াসলি?আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
চৈতী আড় চোখে চেয়ে বলে,
—-তাহলে কি মিথ্যা বলছি নি?
(তবে সেই বানোরটা আমার জন্যে এতো কিছু করছে।
উফফ! ভাবতেই মনটা উড়ু উড়ু করছে,আমার খুশিতে নাচতে মন চাচ্ছে।ভালো হয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে।আর সেই পাখিকে উম্মাহ।পাখিটার জন্যে আজ এতো কিছু।)মনে মনে বিড়বিড় করে বলে ইরা।
—কি হয়েছে?কি বলছিস এভাবে বিড়বিড় করে।
এক অট্টা হাসি হেসে ইরা বলে,
—-কিছু না।
—-তোর মতিগতি কিছুই বুঝি না!
________________
চলবে🍂