#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক — #মাহমুদ
পর্ব —- ৮
,
ঘড়িতে রাত ৪ টা ৫ বাজে। কিন্তু এখনও চোখের পাতা এক করতে পারেনি ধ্রুব। এই কিছু দিন যাবদ ধরে নির্ঘুমে রাত কাটছে তার। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে তার সাথে। আগে তো বেশ শান্তিতে ঘুমাত সে। কিন্তু এই ২/৩ দিন ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম আসছে না তার। আর সবথেকে বড় কথা হলো, ইদানীং চোখ বন্ধ করলেই সে রূপাকে দেখতে পায়। কেন দেখতে পায়, তা সে নিজেও জানে না। মাঝেমাঝে মনে হয় সে রূপার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে। আবার কখনও মনে হয়, এটা তার মনের ভুল। সে বুঝে উঠে পারে না, এটা কী তার আদৌ মনের ভুল?
বিছানা ছেড়ে উঠে বসল ধ্রুব। খানিকক্ষণ মত এভাবেই এক ধ্যানে বসেছিল সে। এরপর কাথাটা গায়ের উপর থেকে সরিয়ে দিল। আচমকা বিছানা থেকে নামার সময় রূপার নিষ্পাপ মুখখানি দেখতে পেল সে। কী নিষ্পাপ দেখতে! ধ্রুব কিছুটা ঝুকে রূপার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
-“এটা যদি সত্যি না হত, সবকিছুই যদি আগের মত ঠিকঠাক হত, তাহলে হয়তো আমার থেকে সুখী এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়ত কেউ থাকত না।”(লেখক মাহমুদ)
কথাগুলো বলেই ধ্রুব উঠে পড়ল। কী যেন মনে কর আবারও বসল। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বুঝল রূপা শীতে থরথর করে কাঁপছে। গায়ে কাথা দেবার পরেও তার কাঁপুনিটা প্রবাগত বাড়তেই লাগল। ধ্রুব রূপার কপালে হাত রাখতেই বুঝল ওর গায়ে প্রচণ্ড জ্বর হয়েছে। তৎখানিক রূপাকে কোলে তুলে নিল ধ্রুব। তারপর ওকে বিছানায় শুইয়ে দিল সে। ওর গায়ের কাথাটা ভাল করে জড়িয়ে দিল। তবুও রূপার কাঁপুনি কিছুতেই কমলো না। ধ্রুব এবার চিন্তায় পড়ে গেল। কী করবে এখন? ধ্রুব আর কোন কিছু না ভেবেই ডক্টরের সাথে কথা বলে নিল।
ডক্টর জানিয়েছেন রূপার তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। রূপাকে কিছু খাওয়ানোর পর আপাতত নাপা খাইয়ে দিতে বলেছেন। তিনি এটাও বলেছেন রূপার কপালে জলপট্টি করে দিতে। এতে জ্বরটা হালকা হলেও কমে যাবে ওর। আর বলেছেন রূপার পাশে সারা সময় থাকতে। নয়ত রূপার জ্বর আবারও বেড়ে যেতে পারে যেকোন সময়। তিনি আরো বলেছেন বেশি কিছু সমস্যা হলে সকালেই তাকে নিয়ে যেতে। ধ্রুব ডক্টরের কথামত একে একে সবটাই করেছে। রূপার ঔষধ খাওয়া থেকে শুরু করে জলপট্টি করে দেয়া, সবকিছুই সে করেছে। কিন্তু ডক্টরের একটা কথায় মানতে পারছে না সে। ডক্টর বলেছিলেন, “আপনার ওয়াইফের খুব গরম উষ্ণতা প্রয়োজন। যেহেতু ওনি জ্বরে কাঁপছে, সেহেতু ওনার পাশে আপনার থাকাটা আবশ্যক। আমি কী বলতে চাইছি, নিশ্চয় আপনি বুঝতে পেরেছেন।” ডক্টর যখন ওকে এই কথাটা বলেছিলেন, তখন ধ্রুব বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। রূপার সাথে এক বিছানায় শোয়া তার পক্ষে ইম্পসিবল! কিন্তু এখন ডক্টরের কথাও ফেলা যায় না। রূপার যা অবস্থা তাতে তার ওর পাশে না শুইয়েও উপায় নেই। ধ্রুব এতকিছু না ভেবে রূপার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বিছানার ডান সাইডে রূপার দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়ল। কয়েক মিনিট ধরে ধ্রুব রূপার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তবে কতক্ষণ সে রূপার দিকে তাকিয়ে ছিল তা জানা নেই তার। কিন্তু যখন ধ্রুবের হুশ ফিরল তখন সে রূপাকে আবিষ্কার করল নিজের বাহুডোরে। খুব শক্ত করেই তাকে জাপটে ধরেছে রূপা। কখন এবং কীভাবে রূপা তার এতটা কাছাকাছি এল বুঝে উঠতে পারছে না সে। ধ্রুব কয়েকবার রূপাকে নিজের থেকে ছাড়াবার চেষ্টা করলেও পেরে উঠল না। এত জ্বরের মধ্যেও এত শক্তি কোথায় পেল মেয়েটা?
রূপা জ্বরপীড়িতার ঘোরে কান্নামিশ্রিত স্বরে কীসব আবল তাবল প্রলাপ করছে,
– “আপনি খুব পচা। সবসময় শুধু আমাকে মারেন। জানেন, আমার কতটা কষ্ট হয়? ছোটবেলা থেকেই আমি মায়ের ভালোবাসা পায়নি। বাবার আদর পেয়েছি, কিন্তু ততটা না। পাবো ও বা কীভাবে? বাবা যে বিয়ে করে নিয়েছিলেন। বাবা সব সময় বলতেন, এটা তোদের মা। এই মাও তোদের মায়ের মত তোদেরকে ভালোবাসবে, আদর করবে। তোদের সব আবদার এই মা’ই পূরণ করবে। সেদিন জানেন, আমি খুব খুশী হয়েছিলাম বাবার কথা শুনে। এটা ভেবেই বেশি খুশী হয়েছিলাম, আমরা আমাদের মাকে আবারও পেয়ে গেছি। এবার আমাদের মত সুখী পরিবার কেউ হবে না। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আমার ভাবনাটাই ভুল ছিল। কিছুদিন পর থেকে শুরু হলো অত্যাচার। মা আমাদের আর মা হয়ে উঠতে পারেননি। তিনি হয়ে উঠলেন সৎ মায়ের থেকেও খারাপ। উনি বিনা কারণেই আমাদেরকে রোজ রোজ মারধর করতেন। আর আমার ছোট বোনটিকে কী নির্মম ভাবেই না মারত। আমি ভাবতাম, একটা ছোট নিষ্পাপ বাচ্চাকে কীভাবে একটা মা মারতে পারে? আর শুধু উনিই মারতেন না, তার মেয়েও উনার সাথে সাথে মারত। এভাবে মাইর খেতে খেতে বড় হলাম। আর এই মাইর’ই আমার জীবন সঙ্গী হয়ে উঠল। দেখেন, এখনও ও আমার সাথেই আছে। আসলেই ও আমার সত্যিকারের বন্ধু। এজন্য বিয়ের পরেও আমার পিছু ছাড়েনি।”(লেখক মাহমুদ)
অবাক হয়ে ধ্রুব রূপার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটার মনে এত কষ্ট কখনো জানত না সে। রূপা যখন কথাগুলো বলছিল তখন ওর ঠোঁট কাঁপছিল। জ্বরের ঘোরে একটা মানুষ নিশ্চয় মিথ্যা বলবে না। সে মেয়েটার উপর কত ভাবেই অত্যাচার চালিয়েছে। কখনও গরম তেলে হাত চুবিয়ে দিয়েছে, কখনও কবর স্থানে একা রেখে এসেছে, কখনও বাইক থেকে ফেলে দিয়েছে আবার কখনও খুন্তির ছ্যাকাও দিয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও মেয়েটা কখনও উফ পর্যন্ত করেনি। সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেছে আচ্ছা মেয়েটা কী দিয়ে তৈরি? এত কষ্ট কীভাবে সহ্য করতে পারে একটা মানুষ?
রূপা আবারও অস্পষ্ট স্বরে বলল,
– “জানেন, আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে খুব ভালোবাসবেন, আমাকে কখনো কষ্ট দিবেন না, কিন্তু… আচ্ছা, আমি কী এমন দোষ করেছি যার জন্য আপনি আমার সাথে এমনটা করছেন? আমাকে কী একটুও ভালোবাসতে পারেন না? আমি কী আপনার ভালোবাসার যোগ্য নই? বলুন না, আমি কী আপনার যোগ্য নই? আমি কী দেখতে খুব পচা? আমাকে কী আপনার একটুও ভালো লাগে না? বলুন না প্লিজ…”
রূপা কথাগুলো বলেই ধ্রুবের শ্যার্ট খামছে ধরল। ধ্রুব এবার কিছু বললো না। চুপচাপ রূপার পাগলামি গুলো সহ্য করতে লাগল। রূপা বলল,
– “আজ আপনার আমাকে ভালবাসা দিতেই হবে। আপনার শ্যার্ট’টা খুলুন এক্ষুণি। আমি আপনার লোমশ বুকে ডুবে দিতে চাই। কি হলো? খুলুন না? প্লিজ… আমি আপনাকে ভালেবাসি, আপনার লোমশ বুকটাকে ভালোবাসি। প্লিজ খুলুন না…”
রূপার এই ধরণের কথাগুলো শুনে চমকে উঠল ধ্রুব। রূপা এমন কিছু বলতে পারে তার ধারণার বাইরে। মেয়েটার হলোটা কী? জ্বরের ঘোরে কীসব বলছে! মেয়েটার মাথা ঠিক আছে তো? অবশ্য জ্বরের ঘোরে মানুষ কী বলে না বলে কিছুই ঠিক থাকে না। কিন্তু রূপা যেসব পাগলামি করছে, তা একদমই ঠিক না। এখন এখান থেকে উঠতে পারলেই বাঁচা। ধ্রুব বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করলেও রূপার সাথে পেরে উঠল না। বাপ রে বাপ, মেয়েটার গায়ে এত শক্তি?
ধ্রুব বলল,
– “রূপা, আমাকে ছাড়ো। এমন পাগলামি করছো কেন? আর শ্যার্ট খুলতে বলছো কেন? এসব কিন্তু আমি একদমই লাইক করি না। ছাড়ো বলছি…”
ধ্রুবের কথা শুনে রূপা কেঁদে দিল। বলল,
– “আপনি মস্ত বড় পচা। আপনি আমাকে বকেছেন। আপনি খুব পচা।”
কথাগুলো বলতে বলতেই রূপা ধ্রুবের বুকে কিল ঘুষি দিতে লাগল। ধ্রুব আহ বলে কেকিয়ে উঠল। সেদিকে রূপার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে অস্ফুট স্বরে বলল,
– “আজ আমি আপনার সাথে মিশে যেতে চাই। আপনার লোমশ ভরা বুকে, ডুবে যেতে চাই।”(লেখক মাহমুদ)
রূপা কথাগুলো বলেই শ্যার্টের বোতাম খুলতে লাগল। ধ্রুব বাধা দেবার চেষ্টা করলেও লাভ হল না। একে একে রূপা সব বোতাম খুলে ফেললো। এরপর ধ্রুবের লোমশ বুকে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগল। ধ্রুব বলল,
– “রূপা প্লিজ, এমন পাগলামি করো না। আমাকে ছাড়ো বলছি…”
রূপা ধ্রুবের কোনো কথা কানে নিল না। ধ্রুবের বুকে চুমু দিতে দিতে উপরের দিকে উঠতে লাগল। এরপর ধ্রুবের ঠোটের সাথে ঠোট মিশিয়ে নিল। ধ্রুব আর বাধা দিল না। সেও ডুব দিল রূপার ভালোবাসার মাঝে।
চলবে,,,,,,,,,,
ক্যাটেসি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ