ভালোবাসার উষ্ণতা পর্ব ৭+৮

#ভালোবাসার_উষ্ণতা
#৭ম_পর্ব

চেয়ার থেকে উঠতেই যাবে তখন এক জন রমনী তার সামনে এসে দাঁড়ালো। রমনীটিকে দেখে যেন মাটি থেকে জমি খসে গেছে, রমনীটি আর কেউ নয় আবরারের ছোট বেলার বান্ধবী রাইসা। কালো শাড়ি পরিহিতা রাইসাকে দেখে মূহুর্তের জন্য খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে। প্রথমে ভেবেছিলো রাইসাই সে নাকি যে প্রাপ্তি সেজে সবার সাথে ছলনা করে যাচ্ছে। পরে নিজেকে শান্ত করে বোঝালো, এটা অসম্ভব। যতদূর জানে রাইসার বিয়ে হয়ে গেছে, বিয়ের পর কানাডা চলে গিয়েছিলো। আবরার ও রাইসার বিয়ে নিয়ে খুব একটা খুশি ছিলো না। কিন্তু রাইসাকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব খুশিতেই আছে, মা হতে চলেছে সে। অনেকটা উত্তেজিত ভাবেই জিজ্ঞেস করে অয়ন,
– তুমি? এখানে? কবে এলে রাইসা আপু কানাডা থেকে?
– তাহলে আমায় এখনো মনে রেখেছিস তোরা! খুব কেক খেতে ইচ্ছে করছিলো তাই এখানে আসা। বসতে পারি?
– হ্যা হ্যা বসো না, দুলাভাই কোথায়? তুমি একা যে?
– জানি না, আমি একাই এলাম। শুনলাম, আবরার নাকি বিয়ে করেছে? খুব সুখে আছে নারে?
– আপু তুমিও কি নিউজগুলোই দেখো আর বিশ্বাস করো?
– না বিশ্বাস করার কি আছে?
– না নেই, ভাই ইউ.এস.এ তে। কিছু কাজে গেছে।
– ও, বউ কে নিয়ে গেছে বুঝি?
– না, ও দেশে। তোমার কথা বলো, আসলে কবে? আর এতো বড় গুড নিউজ আমরা কেনো জানি না?
– আমি কখনো যাই ই নি। আর খোঁজ করিস নি বলে জানতে পারিস নি। এটা এমন কিছুই না। আর গুড নিউজ আসতে বেশি দেরি নেই, সাড়ে সাত মাস চলে৷
– কিন্তু তুমি তো
– বিয়েটা আমি করি নি অয়ন। একটা মানুষকে ভালোবেসে অন্য কাউকে বিয়ে করাটা বোধ হয় ঠিক হতো না। আর বিয়ের আগেই আমি এই জানের অস্তিত্ব টের পেয়েছি। ভালোবাসার স্মৃতিটাকে কিভাবে মুছে ফেলি বল। কিন্তু কি বল তো, মানুষটা আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখে নি। সেটায় আমার কষ্ট নেই, আমি আমার বাচ্চাকে ঠিক নিজের মতো করে গড়ে নিবো দেখিস।
– তোমার বাড়ির লোকজন জানে?
– হুম, বাবা আমার মুখ দেখেন না ছয় মাস হবে।
– তুমি আমাদের বলো নি কেন?
– বলে কি হবে?
– আমরা এতোটা পর বুঝি?
– যা আপন ছিলো সেই কথা রাখে নি, পরের কাছে কি চাইবো?
– তুমি এখন কোথায় আছো?
– এক বান্ধবীর বাসায়। একটা জব ম্যানেজ হয়ে গেছে, এভাবেই কাটছি। তোর সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো। আচ্ছা, আমি আসি। আবরার এলে একবার ওর সাথে দেখা হওয়াটা দরকার। আমাকে একটু জানাস কেমন?
– তুমি তোমার নাম্বারটা আমায় দাও। আর যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে জানাতে ভুলোনা কিন্তু।
– হুম, সেভ করে নে।

নম্বর সেভ করার জন্য মোবাইলের লক খুলতেই “প্রাপ্তি শেখ” এর ম্যাসেজ। তাতে লেখা,
” আপনি আমাকে কথা দিয়ে অন্য নারীর সাথে বসে রইবেন, এটা আমি আশা করি নি”

ম্যাসেজটা পেয়েই আশেপাশে নজর ঘুরালো অয়ন। অয়নকে খুব উত্তেজিত লাগছিলো, মথায় ঘাম জমে গেছে। রাইসা অয়নের অস্বাভাবিকতা দেখে জিজ্ঞেস করে,
– কি হলো? তুই এতোটা উত্তেজিত কেনো হচ্ছিস? কোনো সমস্যা
– না, কিছু না। তুমি নম্বর দাও।

রাইসাকে উবারে তুলে দিয়ে, ফোনটা আবার হাতে নেয় অয়ন। ম্যাসেজ অপশনে যেয়ে অই আইডিতে টাইপ করে,
– আপনি যদি ক্যাফেতে এসেই থাকেন তবে দেখা কেনো করলেন না। এক ঘন্টা আপনার অপেক্ষায় কাটিয়েছি। আর ওই নারীটি আমার বোন ছিলো।
– আমার সাথে দেখা করতে বেশ উতলা হচ্ছেন, বেশ কাল আমার চাচাতো বোন রোশনি শেখ আপনার সাথে দেখা করবে। তাকে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আমাকেও লাগবে।
– আচ্ছা, যা আপনার ভালো লাগে।

ম্যাসেজটা পাঠিয়েই রিয়াদকে ফোন দেয় অয়ন। শুধু একটা কথাই বলে,
– আইপি এড্রেস হ্যাক করো। কোন কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে ম্যাসেজ আসছে আমি জানতে চাই। তোমাকে তিন দিন সময় দিচ্ছি। আমি জানি না তুমি কিভাবে কি করবে।

ফোনটা রেখে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় অয়ন। আজ নিজে প্রাপ্তিকে বাড়ি নিয়ে যাবে সে। উদ্দেশ্য একটাই প্রাপ্তির মনে নিজের জন্য ভালোবাসা তৈরি করা। অনেক ভেবে ঠিক করেছে, একটা চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই। তারপর প্রাপ্তি যদি তাকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে প্রাপ্তিকে মনের মহারানী করে সারাজীবন নিজের মনের রাজত্বে রেখে দিবে। আর যদি তা না হয়, তবে আবরার আর প্রাপ্তির জীবনে বাধা হয়ে কোনোদিনও আসবে না।

বিকেল ৫টা,
স্থানঃ- নবজাগরণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
গেটের সামনে অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। প্রাপ্তি এখনো আসে নি, এমনকি মেয়েটার কাছে মোবাইলও নেই। এতো ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে, যদি একটু কথা শুনতো। আজকেই মোবাইল কিনে দিতে হবে। প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। আজ আসুক ওকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। রাস্তায় পড়ে থাকা ক্যানে লাথি বসাতেই যাবে তখন নজরে পড়লো প্রাপ্তি একটি ছেলের সাথে গেটের দিকে আসছে, তারা যথেষ্ট হাসাহাসি করছিলো যা কারোর কাছে দৃষ্টিকটু না হলেও অয়নের মুহূর্তের মধ্যে মেজাজ বিগড়ে দিতে যথেষ্ট। প্রাপ্তি সামনেই আসছিলো, খেয়াল করে দেখলো গেটের ঠিক অপসিটে গাড়িতে হেলান দিয়ে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অয়নকে দেখে মোটামুটি ভয়ে জমে গেছে প্রাপ্তি। এমনেই পান থেকে চুন খসলেই এই বান্দা চৌদ্দ গুষ্টির ষষ্ঠী করে দেয়। আর এখন তো একটা ছেলের সাথে সে ঘুরছে না জানি তার ভাগ্যে কি আছে।

অয়নের সামনে গিয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে গেলে, অয়ন থামিয়ে দেয়। গাড়ির দরজা খুলে নিজে বসায় প্রাপ্তিকে। তারপর রেষ্টুরেন্ট এ খায়াতে নিয়ে যায়। প্রাপ্তির কাছে এ যেনো অন্য অয়ন। এতো দামি রেষ্টুরেন্টে এই প্রথম গিয়েছে প্রাপ্তি। প্রাপ্তির প্রথমে অস্বস্তি লাগলেও অয়ন পাশে থাকায় তার অস্বস্তিকর পরিস্থিতি স্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। খাওয়া দাওয়া শেষে নদীর পাড়ে ঘুরতে নিয়ে যায় অয়ন তাকে। আজ তিন মাস পর বাহিরে এসেছে প্রাপ্তি। নদীর তীরের ঠান্ডা হাওয়া ভেতরে থাকা মানুষটাকে নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। আজ প্রাপ্তির খুব হালকা লাগছে, পাশে থাকা মানুষটাকেও আজ যেন খুব ভালো লাগছে। বেশ কিছুক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে পাশে তাকাতেই প্রাপ্তির শরীর জমে গেলো। অয়ন তখন …..
#ভালোবাসার_উষ্ণতা
#৮ম_পর্ব

বেশ কিছুক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে পাশে তাকাতেই প্রাপ্তির শরীর জমে গেলো। অয়ন তখন এক হাটু গেড়ে মাটিতে বসে আছে। হাতে বেশ কিছু গোলাপফুল, রক্তাক্ত লাল রং যেন ফুলগুলোকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকলে অয়ন বলতে লাগে,
– আজ যে কথাগুলো বলবো তা তোমার কাছে পাগলের প্রলাপ লাগতে পারে, তুমি সবসময় জিজ্ঞেস করতে না আমার সমস্যাটা কি? কেনো তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করি? আজ সব প্রশ্নের উত্তর আমি নিবো। তখন না বুঝলেও আজ বুঝি আমি ওই গুলো কেনো করতাম। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার জন্য উত্তপ্ত গরমের ঠান্ডা শীতল পরশ। তুমি আমার পাথর হৃদয়ের উষ্ণতা। আমার খালি জীবনের পূর্ণতা তুমি। আমি তোমার সাথে কোনো সময় ভালো ব্যবহার করতাম না এই ভয়ে যদি ভালোবেসে ফেলি তোমাকে। কিন্তু আজ আমায়ার ভয় আমার জীবনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাপ্তি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। আমাকে কি তোমার জীবনের ছোট্ট অংশ হবার সুযোগ দিবে?
– আপনি জানেন আপনি কি বলছেন?
– হু জানি। সব জেনেই বলছি, একটা সুযোগ কি দেয়া যায় না?
– আমি বিবাহিত অয়ন, আমি আপনার ভাইয়ের স্ত্রী।
– আমি জানি, কিন্তু তোমাদের বিয়েটা কি আদৌ বিয়ে? তুমি কি আমার ভাইকে ভালোবাসো?
– না হয়তো বাসি না, তবে আমি আমার স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে বাদ্ধ। আর আমি সেই মেয়েদের মতো হতে চাই না যারা শুধু টাকার লোভে ওই মানুষটাকে বিয়ে করেছে। উনি কি ভাববেন বলুন তো?
– ভাই কিছুই ভাববে না আমি সব ঠিক করে দিবো। একটা সুযোগ কি আমি পেতে পারি না বলো?
– না এটা সম্ভব নয়। আমি উনার সাথে প্রতারণা করতে পারবো না। ক্ষমা করবেন আমায়।
– বেশ, তুমি যদি সেটা ঠিক মনে করো এটাই হোক। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ভাই তিন মাস পর দেশে ফিরবে। এর মাঝে যদি আমি তোমার মনে জায়গা করে নিতে পারি তবে আমাকে বিয়ে করতে হবে তোমায়।
এবং আমি তা পারবো।
– চ্যালেঞ্জ করছেন?
– উহু, এটা আমার ভালোবাসার পরীক্ষা। যদি তোমার মনে নিজের জন্য জায়গা করতে পারি তবে তোমাকে কোনোদিন নিজ থেকে আলাদা হতে দিবো না।
– আর যদি তা পারেন?
– তোমার আর ভাইয়ের জীবন থেকে চিরকালের মতো সরে যাবো। প্রমিস
– আমি বাড়ি যাবো।
– আচ্ছা চলো।

বাড়ি আসার পথে রাস্তার দুজনের কোনো কথা হয় নি। গাড়ির গ্লাসে মাথা ঠেকিয়ে সারা রাস্তা প্রাপ্তি শুধু অয়নের বলা কথাগুলোই ভেবেছে। এতো মনের মাঝে যে ক্ষীণ ভয়টা ছিলো তা আজ যেন তীব্র হতে লাগলো। সত্যি যদি এই চ্যালেঞ্জ এ জিতে যায় অয়ন! তখন কি করবে? যত যাই বলুক না কেনো, ভালোবাসা কখন কার প্রতি জন্মাবে তা বলা কঠিন। যতই নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করা হোক না কেনো মনের উপর কোনো কিছুর জোর চলে না। হুট করে ব্রেক লাগতেই হুশ ফিরে প্রাপ্তির। বাহিরে তাকালে দেখতে পায় সিকদার ভিলার বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি। কোনো কথা না বলে সরাসরি বাড়ির ভেতরে চলে যায় সে। অয়ন তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে একটি বড় নিঃশ্বাস ছাড়ে৷

দুই সপ্তাহ পর,
সন্ধ্যা ৭ টা,
স্থানঃ হাভিলি রেস্টুরেন্ট, উত্তরা।
একটা টেবিলে বসে আসে অয়ন। আজ দুই সপ্তাহ “প্রাপ্তি শেখ” আইডিটি শুধু ঘুরিয়ে যাচ্ছে আজ দেখা করবে, কাল দেখা করবে। এই নিয়ে প্রায় ৫-৭ হাজার টাকার গিফট তাকে পাঠানো হয়ে গেছে। আজ অবশেষে সে দেখা করতে রাজি হয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কোন আইপি এড্রেস দিয়ে ম্যাসেজ গুলো পাঠানো হচ্ছে এটাও ট্রাক করা হয়ে গেছে। এখন শুধু ব্যাক্তিটির আশার অপেক্ষা। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেলো অয়ন। পাশ ফিরে তাকালে একটি নীল শাড়ি পরিহিতা নারী দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি অয়ন সিকদার ?
– জ্বী আপনি?
– আমি রোশনি শেখ। প্রাপ্তি আমাকে পাঠিয়েছে। এখানে বসা যাবে?
– জ্বী বসুন।
– আমাকে প্রাপ্তি পাঠিয়েছে আপনাকে এটা বলতে সে আপনার সাথে দেখা করবে না।
– কেনো?
– কারণ, সে এখন আর আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড না। এটা প্রাপ্তির আজকের ব্যাপার না, ও এমন বড়লোকদের পটায়; পটিয়ে পটিয়ে টাকা, গিফট এগুলো নেয়। আসলে এসব দেখেই বাবা ওকে একজনের সাথে নিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আমি জানি না কে তিনি তবে শুনেছি অসুস্থ একজন নাকি। যাক গে, আমি আপনাকে এগুলো বলতে এসেছি। এসব নর্দমায় কেনো মুখ দেন সত্যি বুঝি না। ভালো মেয়ের কি অভাব?

এতোক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো অয়ন। কিন্তু প্রাপ্তির নামের বাজে কথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না সে। একে তো নির্দোষ একটা মেয়ে যে জানেই না তার নামে ছেলেদের সাথে ছলনা করে যাচ্ছে উপর থেকে তার নামে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে। নিজেকে নিতান্ত শান্ত করে অয়ন জিজ্ঞেস করলো,
– প্রাপ্তি যদি বিবাহিতা হয় তবে তার হাসবেন্ড তো খুব সহজেই এসব কথা জেনে যাবে।
– ওর হাসবেন্ড তো অসুস্থ। জানবে কিভাবে?
– তোমাকে এখানে আসার কথা কি ওই জানিয়েছে?
– হুম, ওই আমাকে কালকে জানিয়েছে ফোন করে।
– ফোন নাম্বারটা পেতে পারি?
– জ্বী?
– ফোন নাম্বারটা পেতে পারি? বাংলা ভাষায় বলেছি
– ফো..ফোন নাম্বার?
– খুব কি কষ্ট হয়ে যাবে ফোন নাম্বার দিতে?
– ইয়ে.. মানে
– আসলে কি বলেন তো, প্রাপ্তির সাথে আপনার বিগত চার মাসে একবার কথা হয় নি। তাই অহেতুক নাম্বার কোথায় পাবেন? প্রাপ্তির আগে একটা মোবাইল ছিলো, আপনি কোনো ভাবে মোবাইলটা চুরি করেন। এবং তার পর থেকে প্রাপ্তিকে নিচু করতে ওর আইডি থেকে ছেলে ফাসানোর ধান্দা করেন। পরে এতে আপনার প্রেমময় ম্যাসেজে অনেক বাকরা ফাসতে থাকে তাই এটা আপনার একটা নিত্য দিনের কাজ হয়ে যায়। সমস্যাটা হয় যখন প্রাপ্তির বিয়ে ঠিক হয়ে যায় আপনি যেনো কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। তারপর তিন মাস আইডিটা বন্ধ থাকে। তারপর আবার এক মাস হয়েছে আইডিটি এক্টিভেট করেছেন আপনি।
– এসব কি বলছেন আপনি?
– আমি যে ভুল বলছি না তা আপনি খুব ভালো করেই জানেন। এতোদিন আমার সাথে প্রাপ্তির আগের নাম্বার দিয়ে আপনি ই কথা বলতেন চ্যাট করতেন। এখন যখন দেখছেন আমি নাছোরবান্দা তখন আপনি আমার সামনে এসে হাজির হয়েছেন এবং প্রাপ্তির নামে যা নয় তাই বলছেন।
– আপনি কি আজে বাজে কথা বলছেন? আমি ভদ্র ঘরের মেয়ে

এবার মেজাজ তুঙে উঠে গেলো অয়নের। দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,
– এখন ভালোয় ভালোয় স্বীকার করে নেন, নয়তো পুলিশের ডান্ডায় সব ঠান্ডা হয়ে যাবেন।
– আপনি এতো কিছু জানেন কিভাবে? আপনি কে?
– আমি ওর হাসবেন্ড। আর তোমার কৃতকর্মের জন্য আমি ওই নিস্পাপ মেয়েটাকে দিনের পর দিন শুধু কষ্ট দিয়েছি।
– আপনি? ওর হাসবেন্ড না অসুস্থ ছিলো?
– ওইটা তোমাদের ফ্রড পরিবারকে ধোয়াশায় রাখতে আমিই অসুস্থতার বাহানা দেই। যাক গে, এবার বলতো আবরার সিকদারের সাথে তোমার থুক্কু অনলাইনের প্রাপ্তি শেখের সম্পর্ক কতোদিনের ছিলো?
– আবরার সিকদার? আমি চিনি না। কে উনি?
– পুলিশের কাছে না নিলে দেখি মুখ খুলবে না।
– বলছি, বলছি। উনি অনেক পাকাও ছিলেন।এগারো মাস বা তার ও আগে উনার সাথে আমার দেড় মাসের মতো রিলেশন ছিলো। তারপর আমি ওকে ব্লক করে দেই। অই লোক এই ফোনেও অনেক ফোন করতো। কিন্তু তাও আমি রিসিভ করতাম না, পরে না পেরে ব্লক করে দিয়েছলাম। আর তার সাথে আমার যোগাযোগ হয় নি।
– এগারো মাস মানে এক বছর। এতোদিন আগে তার সাথে তোমার ব্রেকআপ হয়েছে? তুমি শিউর? সাত মাস আগে তোমার সাথে তার কথা হয় নি?
– হ্যা? এতে আনশিউর হওয়ার কি আছে? না হয় নি তার সাথে আর কথা।
– ঠিক আছে, আমি তোমাকে দুই ঘন্টার সময় দিচ্ছি প্রাপ্তির আইডি যাতে ডিএক্টিভ হয়ে যায়। আর যদি আমার চোখে পড়ে তো জেলে ঘানি টানার জন্য প্রস্তুত থাকবে তুমি।

বলেই গট গট করে ক্যাফের বাইরে চলে যায় সে। গাড়িতে উঠতেই একটা পিচ্চি গ্লাসে টোকা মারে।
– ভাই, ফুল নিবেন? তাজা বেলি ফুলের মালাও আছে। ভাবিরে দিলে খুশি হইয়ে যাইবে।
– সত্যি খুশি হবে তো?
– হো, ভাইজান।
– দে তাহলে।

মুচকি হাসি দিয়ে পিচ্চিটাকে বলে।
– এই নেন পনেরো টেকা।
– তুই এটা রাখ। আজ ভালো করে খাবি ঠিক আছে?
– এইটা তো এক হাজার টাকা।
– রাখতে বললাম তো। এই মালাটা খুব দামী লোকের জন্য নিচ্ছি।

বলে চোখ টিপ্পনী নিয়ে পিচ্চিটাকে এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে শিকদার ভিলার দিকে রওনা দেয় অয়ন। আজ তার মন খুব ভালো। এতোদিনের প্রতারকটিকে সে ধরতে পেরেছে। তবে একটা সন্দেহ তার মনের মধ্যে ঘাপ্টি মেরে আসেই। আবরারের যদি এই নকল প্রাপ্তির সাথে এক বছর আগ ছাড়াছাড়ি হয়ে থাকে তবে সাত মাস আগে সেদিন কেনো এতোটা তাড়াহুড়ো করে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলো! অয়ন জানতো সেদিন প্রাপ্তির সাথে দেখা করতেই এতোটা উত্তেজিত ছিলো আবরার। না এসবের জট আবরার ছাড়া কারোর পক্ষে ছাড়ানো সম্ভব নয়। ভাবতে ভাবতে একটা শাড়ির দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো অয়ন। তৎক্ষনাৎ ব্রেক কসে সে। দোকানের পুতুলের গায়ে একটি কালো শাড়ি খুব ভালো করে চোখে পড়ে তার। বিয়ের এতোদিন পরে প্রাপ্তির জন্য কিছুই কিনা হয় নি অয়নের। কি মনে কিরে শাড়িটা কিনে নেয় সে।

রাত ৯টা,
প্রাপ্তি তখন রান্নাঘরে রাতের খাবার রান্না করছিলো। হঠাৎ কেউ কোমড় জড়িয়ে ধরলে আৎকে উঠে সে। পেছনে ফিরতেই দেখে অয়ন তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। খানিকটা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে,
– লজ্জা করে না আপনার? এভাবে আমাকে ধরার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?
– প্রাপ্তি এভাবে বলছো কেন?
– আমি অন্য কারোর স্ত্রী ভুলে যাবেন না। আর কি জানি একবার বলেছিলেন, আমার মতো মেয়ে নগ্ন দাঁড়িয়ে থাকলেও আপনি নাকি ফিরে চাবেন না। তবে কেনো আমার কাছে এসেছেন?
– প্রাপ্তি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– আপনাদের ভালোবাসা খুব ভালো করে জানা আছে। লাগবে না আমার এরুপ ভালোবাসা যেখানে আমি শুধু অপমান পেয়েছি।
– আমি কতবার ক্ষমা চাইবো প্রাপ্তি? এই দুই সপ্তাহে কি আমার ভালোবাসা কোথাও বুঝতে পারো নি তুমি? এই দেখো আমি তোমার জন্য এই শাড়ি আর এই মালাটা এনেছি, দেখো।
– কেনো এনেছেন? আমি বলেছিলাম।

বলেই শাড়িটা আর মালাটা ছুড়ে ফেলে প্রাপ্তি। আর এক মূহুর্ত না দেরি করে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বসে থাকে। চোখের পানিরা বাধ মানছে না। না চাইতেও কেনো এই লোকটার দিকে মনটা ঘুরে। সে তো অন্য কারোর বউ, কেনো তবুও এই লোকটার রং এ মনটা রাঙতে চায়? প্রাপ্তি দোটানার বেড়াজালে আটকে আছে। যার থেকে মুক্তির রাস্তা তার কাছে নেই। হঠাৎ ঘরে চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে যায়। লোকমান কাকা “অয়ন বাবা, অয়ন বাবা” বলে চিৎকার করছেন। প্রাপ্তি এক মিনিট দেরি না করে অয়নের রুমের দিকে রওনা হয়। সেখানে যা দেখতে পায় তাতে মূহুর্তে হাত পা জমে যায় তার। অয়ন তখন….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি
চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here