ভালোবাসার ভেজা সন্ধ্যে পর্ব ১৮

#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১৮)

ঝুরি ঝুরি হাওয়ায়
উড়ে তাহার চুল
দিবে কি ইশারা
করতে একটু ভুল!!(রোকসানা)

অনুভবের গুনগুন শব্দ রিপ্তির কান ছেড়ে পুরো শরীরে দোল খেয়ে যাচ্ছে৷ কারো গান শুনেও বুঝি লজ্জায় লাল হতে হয়?? কুঁকড়ে লুকিয়ে পড়তে ইচ্ছে হয়,গানধারী মানুষটার মুখের দিকে তাকাতে হাজারবার ভাবতে হয়?? হ্যা হয়। আমার হয়,বারবার হয়। কারণ গানটা যে আমার কেউ গাচ্ছে। আচ্ছা এই কেউ টা কি নির্দিষ্ট কোনো সম্পর্কে বাধা যায় না??

রিপ্তি এক হাত অন্যহাতে রেখে কোলের উপর রেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবে বসে থাকলেও,সে স্বাভাবিক নেই। অস্বাভাবিকতার ঝড় বয়ছে,হাতের তালু ঘেমে চিপচিপে!

রিপ্তি একবার সাহস করে অনুভবের দিকে তাকালো। যাকে বলে চোরাচাহনি। কিন্তু সে ধরা খেলো। অনুভবের চোখদুটো যে তার দিকেই তা কি সে জানতো?? এবার সে শেষ। আজ এই রিকসায় সে আত্মত্যাগ করবে,আর এখুনি!

“” তুমি কি কিছু বলবে?””

রিপ্তির আত্মত্যাগের ইচ্ছে নিভে গেলো। আহা,কি সুন্দর কথা,কি সুন্দর কন্ঠ,এমন সুমিষ্ট কন্ঠের কথা সে শুনতে চায়,তার জন্য তাকে বাঁচতে হবে,আত্মত্যাগ নয়,আত্মগ্রহণ করতে হবে,বারবার,হাজারবার।

অনুভব গুনগুন বন্ধ করে রিপ্তির দিকে ঝুকে এলো। ফিসফিস করে বললো,,

“” কিছু শুনতে পারছো?””

রিপ্তি আড়ষ্টগলায় বললো,,

“” কি?””

অনুভব রিপ্তির কান ছুলো। বা’হাতে কানের পাতা চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো। নিজের ঠোঁটদুটো কানের ধারে নিতেই,রিপ্তি চোখ বন্ধ করে ফেললো। হাতের আঙুলগুলো জামা খামচে ধরেছে। এই প্রথম সে নতুনকিছু আবিষ্কার করলো। কারো নিশ্বাসের শব্দেও যে সুড়সুড়ি লাগে তা সে আজ জানতে পারলো। কিন্তু সুড়সুড়িটা কোথায় লাগছে? কানে? নাতো। তাহলে??

রিপ্তির নতুন অনুভূতিকে হাওয়াই উড়িয়ে অনুভব জোরালো কন্ঠে বললো,,

“” ট্রেণের শব্দ।””

রিপ্তি ফ্যালফ্যাল নয়নে অনুভবের দিকে তাকিয়ে রইলো। অনুভব কি ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছে?? অনুভব সরে বসে, শব্দ করে হেঁসে উঠলো। বন্ধ চোখে! হাসির ঝংকার নিয়ে কবিতা পড়ছে,,,

ঝক ঝকাঝক,ট্রেণ চলেছে
রাত দুপুরে ওই!
ট্রেণ চলেছে,চলেছে
ট্রেণের বাড়ি কই?!

~~~
বাড়ি পৌছুতে রিপ্তির অবাকের সীমা রইলোনা। তার বাসার সামনে এখানে,ওখানে মানুষভর্তি। ছোট বাচ্চা থেকে বুড়ো। বাড়ির উঠোনে,ইটের চুলা ধরানো,লাল আগুন জ্বলছে। আগুনের উপর বিশাল হাড়ি!রিপ্তি একবার সবার দিকে গাঢ় চাহনি একে বাসায় ঢুকে পড়লো। কাধ থেকে ব্যাগটা রেখে চেচিয়ে উঠলো,,,

“” ভাবী, ও ভাবী!””

মিন্মি রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো। গালে ময়লা নিয়ে,হাতদুটো ভেজা। শাড়ীর আঁচলে মুছতে মুছতে বললো,,

“” কখন এলি? হাত-মুখ ধুয়েছিস?””
“” না। বাইরে এতো মানুষ কেন? রান্নাও হচ্ছে দেখলাম। আজ কি বাসায় কিছু আছে?””
“” হুম।””
“” কি? আমাকে তো কেউ কিছু বললো না।””
“” মিলাদ!””
“” মিলাদ? কিসের?””
“” তোর জন্মদিনের।””
“” আমার জন্মদিন?””

রিপ্তির সন্দেহরাখা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় পেলোনা মিন্মি। তারমাঝেই তৃণা দৌড়ে এলো,কানে ফোন,চোখে মুখে আনন্দ নিয়ে রিপ্তিকে জড়িয়ে বললো,,

“” শুভ জন্মদিন,বান্ধুবী!””

রিপ্তি ত্যাড়াচোখে তৃণার দিকে চেয়ে আছে। খোঁচা মেরে বললো,,

“” তুই তো সবার শেষে আমাকে উইশ করিস। আজ এতো জলদি? ব্যাপার কি? নিশ্চয় ভাবীর কাছ থেকে শুনেছিস?””
“” উহু!””
“” তাহলে?””

তৃণা চট করে রিপ্তির কানে মোবাইল ধরিয়ে দিলো। যেটা তার কানে ছিলো। রিপ্তি অপ্রস্তুত হয়ে বললো,,

“” আরে,লাইনে কে আছে? কার কলে আমাকে ধরিয়ে দিচ্ছিস?””

তৃণা গভীর নিশ্বাস টেনে বললো,,

“” স্ট্রভেরী!””
“” মানে?””
“” ফ্লেভার,কেক কেক গন্ধ পাচ্ছি। বাসায় কেক বানানো হচ্ছে নাকি?””

রিপ্তি তৃণার চুল টেনে ইশারায় জানতে চাইলো ফোনের অপরপাশে কে? তৃণা চোখ মেরে,খোলা গলায় বললো,,

“” কথা বললেই তো বুঝবি। তুই কথা বল,আমি রান্নাঘর থেকে ঘুরে আসছি!””

তৃণা চলে গেলো। রিপ্তি কানে ফোন ধরে আছে। অপরপাশ থেকে কোনো শব্দ আসছেনা। আদৌ কেউ লাইনে আছে নাকি কে জানে! কিছু তো বলছেনা। রিপ্তি বেশ সময় নিয়ে সংকোচতার সহিত বললো,,

“” হ্যালো!””

সাথে সাথে অপরপাশ থেকে ছেলেকন্ঠ ভেসে এলো,,

সুখের পায়রা,বন্দী হোক
তোমার ইতিকথায়
সোনার কালিতে,শব্দ জমুক
স্মৃতির পাতায় পাতায়!!(রোকসানা)
——–শুভজন্মদিন,সুখপায়রা!

“” আপনি?””
“” অন্যকাউকে ভেবেছিলে নাকি?””

রিপ্তি মনে মনে বললো,আপনি থাকতে অন্যকাউকে ভাবতে পারি??
রিপ্তি চুপ। অনুভবও চুপ। কিন্তু মনদুটো কি চুপ?? না। তারা ঠিক দুজনের মতো করে বাক্যচয়ন করে যাচ্ছে,না বলা হাজারও কথা,মধুর প্রেমকথন। যা কারো কর্ণস্পর্শ করেনা। নিরবতা ভেঙে অনুভবই বললো,,

“” আজ যে তোমারও জন্মদিন বললেনা কেন? অন্যের জন্মদিনের উপহার চেটেপুটে খেয়ে নিলে,আর নিজেরটা লুকিয়ে রেখেছো। এটা কি ঠিক হলো?? উপহার তো তোমারও দেওয়া উচিত ছিলো।””
“” কাকে?””
“” কাকে আবার? আমাকে।””
“” আপনাকে কেন দিবো জন্মদিনতো আমার!””
“” তোমার বলে তুমি উপহার নিয়ে ভেগে যাবে? বিনিময়ে কিছু দিবেনা?? কিছু দিলেই না,দ্বিতীয়বার উপহার দেওয়ায় উৎসাহিত হবো।””
“” আমি কখন ভাগলাম? আর আপনি তো আমায় কোনো উপহার দেননি।””
“” সিউর?””
“” কি?””
“” কিছুনা।””

আবার নিরবতা। এবার তো নিরবতা ভাঙার পালা রিপ্তির। কিন্তু এবারও ভাঙলো অনুভব,,

“” কাল আসছো তো?””
“” কোথায়?””
“” আমায় উপহার দিতে?””
“” আমি কি বলেছি,আপনাকে উপহার দিবো?””
“” তাহলে উপহারের মালিকটাকে দিয়ে দিও।””
“” মানে?””
“” আমি অপেক্ষা করবো!””
“” কিসের?””

রিপ্তি আর কোনো উত্তর পেলোনা। লাইন কেটে গিয়েছে। নাকি কেটে দিয়েছে???

~~~

সাদা,খয়েরি,গোলাপি আর হলুদ রঙের কেকের দিকে চেয়ে আছে তৃণা। চোখে বেশ আগ্রহ,তবে কপালে
বিভ্রান্তিকর ছাপ।

“” দেখতে কেমন হয়েছে?””

ভাবীর প্রশ্নে রিপ্তির দুর্বল উত্তর,,

“” বুঝতে পারছিনা।””
“” কি?””
“” কেক একটা,রঙ চারটা! কেন? এটা কি কোনো বিশেষ কেক?””
“” হুম।””
“” কেমন বিশেষত্ব?””

মিন্মি বেশ উৎসাহসহিত বললো,,

“” সাদা অংশটাতে শুধু ডিমের,এটা বাবার। খয়েরীতে কোকো পাওডার দেওয়া,এটা রিপির,হলুদটাতে কলা দেওয়া,এটা তোমার ভাইয়া রাসেলের,আর গোলাপীটা…””
“” তোমার,এটাতে স্ট্রভেরী ফ্লেভার,তাইনা ভাবী?””

মিন্মি হাসলো। তৃণার গালে হাত রেখে বললো,,

“” আমি কেক পছন্দ করিনা। এটা তোমার। বিশেষত্ব বুঝলে?””

তৃণার চোখ ছলছল। কত অল্প সময়ে কেমন আপণ হয়ে গিয়েছে এই মানবীটা অথচ তারও একটা ভাবী আছে। দু বছর ধরে একসাথে থাকছে। কিন্তু হাড়ি আলাদা! মানবজাতি সত্যিই অদ্ভুত,তারা আরো বেশি অদ্ভুত,যাদের ভালেবাসায় সম্পর্কের দোহাই নেই।

তৃণা ভেজা গলায় বললো,,

“” হুম,ভালোবাসা!””

~~~

রিপ্তি গোসল সেরে রোদে দাড়িয়ে চুল শুকাচ্ছে। গাঢ় গোলাপী রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে। রোদের তাপটা একটু বাড়তেই সে হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো। নয়টা বেজে গিয়েছে! রিপ্তি আয়নার সামনে বসে চুল আচড়ালো,গাঢ়করে চোখে কাজল মাখলো,ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক,মুখে গোলাপী ফেসপাওডার,কানে ঝুমকো পড়ে ওড়নাটা গলায় ঝুলালো। কাধে ব্যাগ পড়ে ব্যস্ত পা চালাতে গিয়ে থমকে দাড়ালো। আয়নায় আরেকবার নিজেকে পরখ করে ওয়াশরুমে ছুটছে। পাঁচ,দশ মিনিট পড় বের হয়ে আসলো। আবার কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাসা থেকে বের হবে,তখনি মিন্মি বললো,,

“” জামা পাল্টালি যে? ওটাতে বেশি ভালো লাগছিলো রে রিপি। টিয়া রঙটা তোকে ঠিক মানাচ্ছেনা।””

রিপ্তি একগাল হেসে পথের পানে পা চালালো। ঘনঘন পা ফেলে যখন স্টেশনে পৌছুলো,তখন ট্রেণ তার অপেক্ষায়। অভিমানের তীব্র ডাকের ধোয়া ছাড়ছে নাক দিয়ে। রিপ্তি টিকেট ছাড়ায় ট্রেণে উঠে পড়লো। টিকেট কাটতে গিয়ে ট্রেণ মিস করার চেয়ে টিটিকে জরিমানা দেওয়ায় শ্রেয়!

কামড়া খালি। সাধারণত এই সময়টা অপর্যাপ্ত পরিমানে ভিড় থাকে। টিকেট ছাড়া সিট পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু রিপ্তি পেলো। সে যে সিটে বসেছে সেটা পুরোটাই ফাঁকা!

“” আমি ভেবেছিলাম,তুমি আজ শাড়ী পড়বে,কপালে টিপ,চোখে মোটা কাজল,ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক, হালকা মেকাপের ছোয়া আর খোলা চুল নিয়ে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটাবে!””

রিপ্তি চমকালো সাথে শিউরে উঠলো অনুভবের কথায়। সে তো সেজেছিলো,কিন্তু শাড়ীর বদলে কামিজ পড়েছিলো। মানুষটার কল্পনার শক্তি এতোটা বাস্তবিক কেন??

“” আপনি এখানে?””

অনুভব ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,,

“” অপেক্ষা করছিলাম।””
“” কার?””
“” আমার মায়াকন্যার!””
“” মায়াকন্যা?””

অনুভব একটু নড়েচড়ে বসলো। সিটে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলো। পায়ের উপর পা তুলে সাহেবীভঙ্গিমা। রিপ্তি একঝলক অনুভবের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করলো,এমন মেঘরঙের শার্টের সাথে কেউ লাল জুতো পড়ে???

“” সে রাতে আমার মায়াকন্যা এই স্টেশনেই নেমেছিলো।””

রিপ্তি বেশ কৌতুহলি গলায় বললো,,

“” আপনি কি করে জানলেন?””
“” অনুমান!””
“” ওহ!””

রিপ্তির কৌতুহলটা কেটে যাচ্ছে দেখে অনুভব আবার বললো,,

“” সেদিন আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ছিলো। ১১ টায় পরীক্ষা। আর আমি তার বিরহে পুড়ছিলাম। চোখে রাজ্যের ঘুম আর বুকে হারিয়ে ফেলার দহন নিয়ে এক্সাম হলে বসলাম। ভেবেছিলাম চান্স তো দুর,ওয়েটিংলিস্টেও থাকবোনা। কারণ খুব ইম্পর্ট্যান্ট কিছু টপিক আমার মিস হয়ে গিয়েছিলো। ঐ মায়াকন্যার জন্য।””
“” সে কি করেছিলো? সে কি বলেছিলো মিস করতে?””
“” না। কিন্তু তার পিছু ধরতে গিয়েই তো। কি দরকার ছিলো ওভাবে আমার সামনে আসার? আমার যাত্রার সুতো কাটার?? আমি কি বলেছিলাম আসতে?””
“” সেও তো বলেনি,তার পিছু ধরতে।””
“” বলেছে,আলবাৎ বলেছে। মুখে না বললেও মুখের হাঁসিটা বলেছে।””

রিপ্তি সন্দেহগলায় বললো,,

“” হাঁসি? আপনি তো বলেছিলেন,ও কাঁদছিলো।””
“” সে তো পরে। তার আগে হাসছিলো। আলতা পায়ে শাড়ীর কুঁচি লেগে যখন পড়ে যাচ্ছিলো,তখন আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো,দৌড়ে গিয়ে ধরি। কোলে তুলে চোখের পলকে তার রাস্তা অতিক্রম করে দেই।””
“” আপনি সেদিন কোথায় ছিলেন?””
“” তার পেছনে।””
“” কোন জায়গায়?””
“” আমার এক স্যারের বাসার সামনে। ঐ যে বললাম না ইম্পর্ট্যান্ট টপিক মিস করেছি? উনার কাছ থেকেই আনার কথা ছিলো।””
“” বাসার ভেতরে ঢুকেননি?””
“” বাদাম খাবে?””

রিপ্তি আবার চমকালো। রিপ্তির অনুমতি ছাড়াই সে বাদাম কিনে রিপ্তির হাতে ধরিয়ে দিলো।

“” কি হলো খাবেনা?””
“” না।””
“” তাহলে ছিলে দাও,আমি খাই।””
“” পারবোনা।””

অনুভব বাদাম নিজের কাছে নিয়ে ছিলতে শুরু করলো। একে একে মুখে পুরে বললো,,

“” তুমি বড্ড আলসে। সামান্য বাদাম ছিলতেও অনুরাগ।””

রিপ্তি চুপ। তার মাথার সব এলোমেলো। আবার সব ঘেটে গিয়েছে। এই ছেলেটা চাইছে কি?

~~~
“” নার্ভাস?””
“” কোন ব্যাপারে?””

অনুভব রিকসার ভাড়া মিটিয়ে মানিব্যাগটা পকেটে রাখতে রাখতে বললো,,

“” আজ তোমার প্রথম ক্লাস না?””
“” হুম।””
“” তুমি তো ভুল করে ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট চলে এসেছো। তাই জানতে চাইলাম নার্ভাস নাকি।””
“” একটু!””
“” কেন?””
“” আমি ইংলিশ পারিনা তাই।””

অনুভবের সন্দেহিদৃষ্টি। হাঁটা থামিয়ে দিয়েছে। রিপ্তি বিরক্ত নিয়ে বললো,,

“” কি হলো?””
“” আমার যতদুর মনে পড়ে,আমি তোমার জে.এস.সি রেজাল্টের ভাগিদার হয়েছিলাম। ভালো রেজাল্টের জন্য স্যার আমাদের পুরো ক্লাসে মিষ্টি বিলিয়েছিলেন। স্যারের মুখেই শোনা,যেখানে সবাই ইংলিশে টেনেটুনে পাস করেছে,সেখানে তোমার ইংলিশে এ+ ছিলো!””
“” তো?””
“” তুমি যে বললে,তুমি ইংলিশ পারোনা। তাহলে কি অন্যেরটা কপি করেছিলে?””

রিপ্তি মুহুর্তেই রেগে গেলো। রগচটা চাহনি রেখে, ধপধপ পা ফেলে সামনে এগিয়ে গেলো। একবারটির জন্য পিছু ঘুরলোনা।

~~~
পুরো ক্লাসজুরে নতুন নতুন সহপাঠী। রিপ্তি ঠিক কার পাশে গিয়ে বসবে বুঝতে পারছেনা। একরকম দ্বিধাহীনতায় ভুগে সবার শেষের বেঞ্চে বসে পড়লো। সকলেই নতুন,তবুও চলছে একে অপরের ফিসফিসানি। ঠিক কি নিয়ে ফিসফিস চলছে তা মাথায় নিচ্ছেনা সে। তবে মাথায় না নিলেও হঠাৎ করেই কানে আসলো,

“” আজ মহসীন স্যারের ক্লাস আছেনা?””
“” হুম।””
“” কোন পিরিয়ডে?””

দ্বিতীয় মেয়েটি চট করে ব্যাগে হাত দিলো। দুইতিন পৃষ্ঠার ক্লাস রুটিনটা উল্টাচ্ছে,পাল্টাচ্ছে। মনে হচ্ছে মেয়েটি রুটিনটা ঠিক বুঝে উঠছেনা। বারবার মাথা চুলকাচ্ছে,তো পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে। তারমাঝেই ঘন্টা পড়লো। রিপ্তি তখনো সুক্ষ মনোযোগ রাখলো,মেয়ে দুটির মাঝেই। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা। হঠাৎ করেই মাথা যন্ত্রণার ঘন্টাও বেজে গেলো। রিপ্তি দুহাতে কপালপার্শ্বে চেপে ধরলো। রজনীগন্ধার গন্ধ পাচ্ছে। আগের মেয়েদুটো আবার ফিসফিসিয়ে উঠলো,,

“” আরে এখনি তো মহসীন স্যার আসবেন। সেই মাতাল করা গন্ধ নিয়ে। ইশ! আমার ভাবতেই কেমন কেমন ঠেকছে। স্যার কোন পারফিউম ইউস করে রে?””

রিপ্তি আর একদন্ড বসে থাকতে পারলোনা। চোখের কার্নিশে যন্ত্রণার পানি জমেছে। বের হচ্ছেনা। বের হলে বুঝি যন্ত্রণা কিছুটা কমতো। রিপ্তি চটজলদি উঠে দাড়ালো। দ্রুতপায়ে ক্লাস থেকে বের হতে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। দরজার মাঝে আটকে আছে সে। তার পাশেই আরেকটি বিশালবক্ষধারী পুরুষের শরীর। রিপ্তির মাথা নিচু থাকলেও সে বুক অবধি দেখতে পারছে। মাথা তুলে উপরে তাকানোর ইচ্ছে হলোনা। সব মানুষের মুখ দেখতে নেই। সে নাহয় পৃথিবীর একটি মানুষের বুকঅবধিই দেখলো!

রিপ্তি দৌড়ে বেরিয়ে এলো। ছুটছে তো ছুটছেই। চোখদুটো কাউকে খুজছে। অধীরচিত্তে!

রিপ্তিকে এভাবে ছুটে বেরিয়ে আসতে দেখে অনুভব সামনে এগিয়ে গেলো। দুকদম এগুতেই রিপ্তি ঝাপিয়ে পড়লো অনুভবের বুকে।ব্যাকুল কন্ঠে বললো,,

“” আমাকে দুরে নিয়ে যান। এখান থেকে অনেকদুর। যেখানে কোনো ফুলের গন্ধ নেই!””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here