#পর্ব_১১
গল্পঃ #ভালোবেসে_মরেছি🍂❣
writer: #Ashura_Akter_Anu
_____________________
মিহুর দৃষ্টি সামনে বসে থাকা অর্নবের দিকে। ওর বিছানার পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছে অর্নব।বাথরুমে পড়ে গিয়ে পা টা মচকে যাওয়ায় কিছুদিন ভার্সিটি যাওয়া হয়ে ওঠেনি ওর।মিহুর ভার্সিটি না যাওয়া নিয়ে আর কেউ টেনশন করুক বা না করুক অর্নব ঠিকই চিন্তা করছিল।তাইতো থাকতে না পেরে চলে এলো মিহুকে দেখতে।
কিছুটা রেগেও আছেন উনি।ওদের বাসায় এসে দু একটা বকা ঝকাও দিয়েছেন মিহুকে।বকা খাওয়ার সময় মিহুর মনে হচ্ছিল অর্নবের অক্সিজেন এতদিন এখানে ছিল।যেন ওকে দেখে স্বস্তি পেল অর্নব।
এমনটা দেখে মিহুর যতটা হাসি পাচ্ছিল ঠিক ততটাই সন্দেহও হচ্ছিল।কারন এসব লক্ষন তো ভালো নয়।নিশ্চয়ই কোন ভেজাল আছে।। অর্নবকে চুপচাপ গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে ও বলে,
-আচ্ছা স্যার একটা প্রশ্ন করি?
অর্নব কিছু ভাবছিল। মিহুর কথায় ধ্যান ভাংলো।একটু ভড়কে গিয়ে বললো,
“হ্যা!বলো?
‘আচ্ছা অন্য কোন স্টুডেন্ট হলেও কি আপনি তাকে তার বাসায় গিয়ে দেখে আসতেন?!”
মিহুর এমন প্রশ্নের জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না অর্নব।সে জানে এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।তাই মিহুকে একটা ধমক দিলেন,
‘শাট আপ!,তুমি এত বকবক কেন করো বলতো?পা মচকে বিছানায় পড়ে আছে তাও তোমার কথা শেষ হয়না?”
অন্যদিকে তাকিয়ে মিহু জবাব দেয়,
“আসলে কি স্যার সবকিছু তো থেকে যায়না।যেটা থাকার সেটা হলো কথা।তাই মনখুলে কথা বলাটা আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয়।”
কথাগুলোর মাঝে অর্নব একটা বিষন্নতা খুজে পেয়েছে।ওর কিছুক্ষণের জন্য এটা মনে হচ্ছিল এই দূরন্ত মেয়েটার মাঝে কিছু তো আছে।যা সে প্রকাশ করে না।যাতে মানুষ না বোঝে সে কারনে হাসির পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখে ভেতরের সেই মিহুকে।।।।.
“মিহু!আমি এখন উঠি,অনেক সময় হয়ে গেছে এসেছি,তোমার বাবা মায়ের সাথেও তো দেখা হলোনা’
‘বাবা মা গ্রামের বাড়িতে গেছেন,দাদুর শরীরটা খহব খারাপ তো,তাই আমার ছোট ভাইকে রেখে গেছেন।আজ সন্ধ্যায়ই চলে আসবেন বোধহয়।’
” ওকে তাহলে আমি আসি, বাই,এ্যান্ড টেক কেয়ার।লাফালাফি করোনা একদম কেমন?(একটু হেসে দিয়ে)’
অর্নব যাওয়ার সময় আবারও ফিরে তাকাল,আর নরম সুরে বলল,
‘মিহু?!’
‘জ্বি স্যার বলুন?’
‘নাহ কিছুনা,এমনি’
বলে একটা নজরকাড়া মুচকি হাসি দিল,এবং চলে গেল।
মিহুর মনে মনে একটা কথাই চলছিল,
“আমি যা ভাবছি যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তো….”
_____________________
আজ মিহুর পা টা ঠিক হয়েছে অনেকটা।হাটতে পারবে এমন।ওদের বাসা থেকে কিছুটা রাস্তা হেটে তারপর বড় রাস্তায় গিয়ে রিকশা ধরতে হয়।হালকা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে দেখে রাস্তায় থাকা কয়েকটা গাঁজাখোর টাইপের ছেলেরা মিহুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-দেখ দেখ হাটতে পারছেনা,এই যে, এভাবে হাটছো কেন,?পায়ে ব্যাথা?এসো আমি কোলে তুলে নিয়ে যাই কেমন?
মিহু ওদের নজরআন্দাজ করেই চলে যেতে নিলে ওরা আবারও বলে ওঠে,
-কি হলো?আমাদের দেখে পছন্দ হচ্ছেনা বুঝি?
পাশ থেকে আরও একজন বলে,
-আরে এভাবে পছন্দ হবে না, ঘরে নিয়ে গেলে ঠিকই পছন্দ হবে।।
মিহুর আর সহ্য হচ্ছেনা। চোখ বেয়ে পানি পড়বে পড়বে ভাব।।।হঠাৎ ছেলেগুলোর মাঝে একজনের মুখে জোড়ে একটা ঘুষি পড়লো।
ঘুষিটা এতটা জোরেই পড়লো যে ছেলেটার নাক ফেটে গেল।
বাকি ছেলেগুলোর পেটে মুখে পিঠে সমানে লাথি পড়তে থাকলো৷।একে একে সব কটা ছেলেকে মেরে কাত করে মিহুর হাত ধরে টেনে এনে গাড়ির সাথে চেপে ধরলো। সে অর্নব।
মিহুর গলার দুপাশে দু হাত রেখে গাড়ির সাথে চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগল,
-আর কোনদিন যদি একা একা বের হতে দেখেছি তাহলে ঠ্যাং ভেঙে বসিয়ে রাখবো,কাল থেকে যদি পরনে বোরখা না দেখি তাহলে খুন করে দেব বলে দিলাম।
অর্নবের চোখে এতটা রাগ মিহু এর আগে দেখেনি।ওই ছেলেগুলোর বলা কথাতে এমনিতেই চোখে জল জমে ছিলো। এদিকে অর্নবের অমন ব্যবহারে মিহু কেদেই দিল।
মিহুর কান্না দেখে অর্নবের এতক্ষনে হুশ ফিরলো।
নিজেকে ওর থেকে দুরে নিয়ে শান্ত গলায় বলতে শুরু করলো,
“লুক আই অ্যাম সরি,বাট তুমি এদিকে একা কেন আস বলতো?’আর হ্যা কাল থেকে বোরখা পরবা কেমন??
মিহু অবাক হয়ে অর্নবের দিকে তাকিয়ে আছে।ইনি কে?এতো কেয়ার কেন করে আমার?
অর্নব মিহুকে আবারও বলে,
‘কথাগুলো কানে গিয়েছে?নাকি চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়েছ?”
‘স্যার আগে একটা কথা বলুন,আপনি এখানে কি করছিলেন?’
অর্নব এবার একটু দোটানায় পড়ে গেল।কি জবাব দেবে?কোন জবাব না দিয়েই মিহুকে বলল,
‘অতশত তোমার জানতে হবে না,গাড়িতে ওঠো।’
“কিন্তু স্যার?’
” গাড়িতে ওঠো বলছি”
মিহু আর কোন উপায় না পেয়ে গাড়িতে উঠে বসল,তারপর ওর দুজনেই ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দিল।।।।
_________________
ওদিকে মিহু ও অর্নবের দিকে কেউ যে নজর রাখছে তার খবর তো জানেনা।
আড়ালে বসে হেসেই চলেছে সে।
….
.
.
.
#চলবে___
.
.
..
.
.
★