ভালোবেসে মরেছি পর্ব ১৭

#পর্ব_১৭
গল্পঃ #ভালোবেসে_মরেছি🍂❣
writer: #Ashura_Akter_Anu
__________________
প্রিয়,
চাইলে তোমার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নগুলো আমায় দিও,
আমিও না হয় ইচ্ছে হলে তোমার সপ্নে নিজেকে বুনবো,
পারি আর না পারি,, তোমার স্বপ্নগুলোকে অতি যতনে ভালোবাসবো,
অধীর ধারায় যখন বইবে তোমার চোখের জল,
কনিষ্ঠা দিয়ে ছুঁয়ে দিব যাতে তোমার নরম গালে পরে ওই হাসিমাখা টোল❣
~
শীতল হাওয়ার স্পর্শে যখন ঘুম ভাঙ্গে, সকালটা তখন এমনিতেই ফুরফুরে মনে হয়।কিছুটা ঠান্ডা হাওয়া,এক টুকরো রোদের ঝলকানি সাথে বুকে জড়িয়ে থাকা প্রিয় মানুষটি,ব্যাস,সকালটা সুন্দর করার জন্য শুধু এটুকুই যথেষ্ট।
অর্নবের আজকের সকালটা কিছুটা এমনই হয়েছিল। বাসের জানালা দিয়ে বয়ে আসা পাহাড়ি ঠান্ডা বাতাস,একটু রোদ্দুর সাথে বুকে জড়িয়ে থাকা মিহু।অর্নবের কাছে সকালটা খুবই স্পেশাল ছিল।অবশ্য আরও স্পেশাল হতো যদি মিহু উঠে না পড়ত। মিহুর ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় তেমন কিছুই করা হয়নি।

ওরা এখন সাজেক এ। এখানে থাকার জন্য হিমালয়া রিসোর্টে সবার জন্য রুম বুক করা হয়েছিল। ওরা সবাই এখন রিসোর্টের সামনেই দাড়িয়ে আছে। রিসোর্টটা দোতলা টাইপের দেখতে। কারন নিচের প্রায় পুরোটা অংশ বাঁশ দিয়ে উঁচু করে তৈরি করা। যারা নতুন যাবে এখানে তাদের কাছে ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর হতে পারে। রিসোর্টের সামনেই পাহাড়ে ঘেরা একটা সুবিশাল দৃশ্য যা দেখে যে কারও মন ভালো হয়ে যাবে৷ মনে হবে যেন আকাশকে ছোয়ার সুযোগ এখান থেকেই পাওয়া যায়। সবাই প্রচুর ব্যাকুল ঘুড়তে যাওয়ার জন্য। তবে অর্নব সবাইকে পই পই করে বারন করে দিয়েছে এতদুর জার্নি করে আসা হয়েছে তাই আগে খাওয়াদাওয়া করে রেস্ট নিতে হবে। তারপর বাকি সবকিছু।।
যে যার রুমে রেস্ট নিতে চলে যায়। এদিকে মিহু আরেক ঝামেলায়। ওর যে রুমটা তার পাশের রুমের দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে অর্নব।কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। মিহুর বোঝা শেষ যে ওর পাশের রুমটাই ব্যাটা নিজের জন্য ঠিক করেছে।ফোনে কথা বলা শেষ হলে অর্নব মিহুর দরজার দিকে তাকায়।দেখে মিহু অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর তাকানোতে বিরক্তির ছাপ ছিল। অর্নবের বুঝতে দেরি লাগে না যে,কেন মিহু ওভাবে তাকিয়ে আছে।

একটুপর সে মিহুর দরজার পাশ ঘেষে এসে দাড়ায়।কাঠের দেয়ালে হাতের তালু চেপে ধরে চোখ কিঞ্চিৎ ছোট করে মিহুর দিকে তাকায়।

‘চিন্তার কোন কারন নেই ওটা চৈতি ও তিথির রুম।নিশ্চয় ডাবল বেড ওয়ালা কোন রুম এখনই নিজের জন্য বুক করবোনা।আগে তোমাকে বিয়ে করি দেন ডাবল বেড আছে এমন কোন রুম বুক করবো সাজেক এসে’কি বল?”(চোখ মেরে)

মিহু এতে খানিক লজ্জা পায়। আবার অবাকও হয়।উনি কিভাবে জানলেন, যে এ বিষয় নিয়ে ভাবছি?

‘অত ভেবোনা, মাথা খারাপ হয়ে যাবে।বলেছিলাম না?আলাদা সংযোগ আছে একটা।'(বুকের বা পাশে হাত দেখিয়ে)

মিহু কথা না বাড়িয়ে রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।অর্নব বাইরে চলে আসে।

স্নিগ্ধ বাতাসটা মুগ্ধ করার মতো। রিসোর্টের বারান্দায় অর্নব চেয়ারে বসে হাতের উল্টো পিঠ ভাজ করে গালের কাছে রেখে দৃষ্টি সামনের দিকে দিয়ে আছে।সামনেই খোলা চুলে ওই মেয়েটি পাহাড়ের দৃশ্যের দিকে চেয়ে আছে। বাতাসে চুলগুলো উড়ছে।মেয়েটার আসল নাম অর্নি হলেও মিহুকেই অর্নব ভালোবেসেছে। ভালোবাসার গভীরতা ওর দিক থেকে বাড়ছেই।প্রতিটাদিন যেন সে নতুন করে মিহুর প্রেমে পড়ে।আচ্ছা এতটা ভালোবাসা মিহু বুঝবে তো?
নাকি ওর ভালোবাসাটা অর্নবকে একটু একটু করে মেরে ফেলবে?
🍂
__________________
পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে হাটছে সবাই।সবার সামনে অর্নব ও তার পেছন পেছন সব স্টুডেন্টরা। ওদের গন্তব্য সাজেকের কংলাক ঝর্না।অনেকক্ষণ হয়ে গেল।সবাই প্রায় হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।ঝর্নায় যাওয়ার রাস্তাটা অনেকটা জঙ্গলে ঘেরা ও উঁচু নিচু। একজন স্থানীয় লোক ওদের সবাইকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য রয়েছেন।
..
এরই মাঝে তিথি চিৎকার দিয়ে উঠলো।রাস্তাটা অনেকটা পিচ্ছিল হওয়ায় হাটতে অসুবিধা হচ্ছিল সবারই। কিন্তু তিথি একেবারে পা মচকে বসে আছে। অর্নব তাড়াতাড়ি করে তিথির কাছে গিয়ে বসলো। এবল ওর পা নিজের হাটুর ওপর রাখলো। এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে অর্নব জানতো। তাই সাথে করে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসেছিল৷ তিথির পা ভালো করে হাত দিয়ে দেখে নিল। তিথি তো অর্নবের এমন কাজে মুগ্ধ। শীতল চোখে অর্নবের দিকে তাকিয়ে আছে সে।। অর্নব অতি যত্ন সহকারে তিথির পা ব্যান্ডেজ করে দিল।

ওদিকে অর্নবের এমন করায় একজন রাগে ফুঁসে উঠেছে। হাতে থাকা লাঠিটা দিয়ে মাটির ওপর বারবার আঘাত করছে।

ওর মনে হচ্ছে,

অর্নবের এত আদিক্ষেতা করার কি প্রয়োজন?ব্যাথা কি ওনার লেগেছে?আমারই তো ফ্রেন্ড, আমিও তো কাজটা করতে পারতাম।দরদ দেখাচ্ছে হুহ।ওভাবে পা ধরে রাখার কি আছে।উপর উপর দিয়ে কাজটা করলেও তো পারতো।ধুর।

আবার তৎক্ষনাৎ ভাবে,আরে আমি কি পাগল হলাম নাকি?যা করে করুক।আমার কি।(মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল)

তিথিকে নিয়ে এগোনো মুশকিল হবে,
তাই অর্নব সবাইকে এগোতে বলে নিজে তিথিকে সাথে করে রিসোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দিল। এতে মিহু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।চোখ বন্ধ করে চিতকার দিয়ে বলে উঠলো,

‘আরে থামুন’

শুনে সবাই মিহুর দিকে চোখ করে তাকিয়ে আছে। মিহু চোখ খুলে সবাইকে দেখে আমতা আমতা করে বলে,

-আ আ বলছিলাম যে আমিও আপনাদের সাথে যাবো স্যার?(অর্নবের দিকে তাকিয়ে)

তিথির এ অবস্থা দেখে অর্নবের মনে হলো মিহুরও সাথে যাওয়া উচিত। তাই ওর সাথে সম্মতি দিয়ে নিজের সাথে নিল।
_________
তিথিকে রিসোর্টে পৌঁছে দিয়ে অর্নব ও মিহু আবারও রওনা দিল কংলাক ঝর্ণার উদ্দেশ্যে।

অর্নব একটা জিনিস খেয়াল করেছে,রিসোর্টে তিথিকে পৌছে দেওয়ার পর যখন পা আবারও ব্যান্ডেজ করিয়ে দিল তখন মিহুর চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না।কেমন একটা রাগীভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল। রাগের কারনটা অর্নবের বুঝতে দেরি হয়নি।

হাটতে হাটতে অর্নব বলে,

–তিথির পায়ে খুব ভালোভাবেই লেগেছে।খারাপই লাগছে।

–আপনার তো আবার ফেরত আসা উচিত হয়নি।যান না রিসোর্টে ফিরে যান।যত্তসব।

কথাগুলো ফিসফিস করে বললেও অর্নবের কানে পৌঁছে। অর্নব মিহুর এমন কথায় হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছেনা। তবে এই মূহুর্তে হাসাটাই বেটার অপশন হবে বলে হো হো করে হেসে দেয়।

অর্নবের হাসি দেখে মিহু বোকার মত দাড়িয়ে থাকে। চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্ন করে,

–হাসছেন কেন?কোন জোকস শুনলেন নাকি?

–নাহ তা নয়, তবে জোকস এর চেয়ে কম ও নয়।

–ওহ তা কি শুনলেন?আমিও একটু শুনি?

অর্নব ইচ্ছে করেই একটু কড়া গলায় উত্তর দেয়,

–সব কথা শুনতে হবে না,হাটায় মনোযোগ দাও নইলে তিথির মত পা মচকে বসে থাকবে।

মিহু মনে মনে ভাবছে,

–আবার তিথি?এ ঘুরতে এসেছে নাকি তিথির যত্ন নিতে এসেছে?!ধ্যাত।

কিছুটা অভিমান করেই মিহু চুপচাপ হয়ে গেল।অর্নব তো মুচকি হেসেই চলেছে। আর যাই হোক,যেহেতু জেলাস ফিল করছে সেহেতু আস্তে আস্তে এগোচ্ছে ব্যাপারটা।

অর্নব এর আগে অনেকবার এখানে এসেছে তাই ঝর্নায় যাওয়ার পথটা ওর চেনা।তাই বেশি সময় লাগলোনা ওদের দুজনের কংলাক ঝর্নায় পৌঁছাতে।

সবাই সেখানে বসে নিজেদের মত এনজয় করছে।কেউ ছবি তুলছে,কেউ গোসল করছে। আবার কয়েকজন মিলে কিছু খেলছে।

অর্নব একটা সাদা শার্ট ও মিষ্টি কালারের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে এসেছে। সেও গিয়ে স্টুডেন্টদের সাথে যোগ দেয়। ঝর্নার পানি শার্টে পরতেই পুরো ভিজে গিয়ে অর্নবে ফর্সা বুক ও পিঠ দেখা যায়।
মিহু হা করে তাকিয়ে আছে।
দেখে মনে হবে অর্নব জিম করে রোজ,কারন সে একদমই ফিট।
অর্নব ওর দিকে তাকাতেই দু চোখের ভ্রু নাচিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে।সাথে সাথে মিহু চোখ সরিয়ে নেয়।ব্যাপারটা মিহুকে অনেকটা লজ্জা দেয়।
🍂
ভালোবাসতে রাজি তবে মরতে নয়?
তাহলে ভালো কিভাবে বাসলে?
আমি ভালোবাসি কারন তোমার ভালোবাসায় আমি মরতে পারবো।
তুমিও পারবে যদি সত্যি ভালোবেসে থাক।
অপেক্ষা কর প্রেয়সী।এখনও যে অনেক দেরী।🍂❣
.
.
#চলবে___
.
.

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here