#ভীন_দেশের_গল্প
#পর্ব_৩
লেখনীতে- #অলিন্দ্রিয়া_রুহি
মহুয়া বিছানার উপর আয়েশী ভঙ্গিমায় বসে রয়েছে। অপেক্ষা করছে মাজহাবের। তার পাশেই অবহেলিত রূপে পড়ে রয়েছে মাজহাবের দেওয়া সবচেয়ে পছন্দনীয় রঙের একটি শাড়ি। বিয়ের রাতে স্ত্রীকে কিছু একটা উপহার দিতে হয় বলে মাজহাব অনেক খুঁজে এটা নিয়ে এসেছে। বলা ভালো, প্রায় একশোটা শাড়ি বেছে তবেই নিয়ে এসেছে। অথচ যার জন্য এই খাটুনি, তার কাছে শাড়িটির মূল্য শূন্যের কোঠায়। মহুয়া বাঁকা ঠোঁটে হাসল। রুবার কাছাকাছি থাকার জন্য এই বিয়ের নাটকটা সাজাতে হয়েছে তাকে। মাজহাব কামুক পুরুষ। সুন্দরী নারী দেখলে তার মাথা ঠিক রাখা দায়। তাই তো নিজের অপার সৌন্দর্য দিয়ে তাকে হাতের মুঠোয় করেছে মহুয়া। প্রতিটি পরিকল্পনার পেছনে ছিল রুবার জাদুকাঠি। রুবা যেমন যেমন বলেছে, ঠিক তেমন তেমন করেছে সে। অবশেষে আজ বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। এবার মাজহাবকে আর প্রয়োজন নেই। এই বাড়িতে ঢোকাই ছিল মহুয়ার আসল উদ্দেশ্য।
মাজহাব ঘরের ভেতরে ঢুকলে মহুয়া চিন্তার গতিপথের লাগাম টানলো। নিজের বসার ভঙ্গিমা পরিবর্তন করে দ্রুত হাতে পাশ থেকে তুলে নিলো শাড়িটি। ঠোঁট বাঁকিয়ে কিশোরীর ন্যায় আহ্লাদী কণ্ঠে বলে উঠল,
-‘এতক্ষণ লাগল আসতে!’
মাজহাবের বুকে ধাক্কা লাগে। লাবণী কোনোদিন এভাবে বলেনি! একজন পুরুষ সবসময় চায় তার স্ত্রী তার কাছে আবদার করুক, অভিযোগ করুক। তবে সেই আবদার গুলো, অভিযোগ গুলো হবে খুনসুটিতে ভরপুর। লাবণীর ঠান্ডা স্বভাব তাদের সম্পর্ককেও ঠান্ডা করে দিয়েছে। মাজহাব এক চিন্তার মাঝেই আরেক চিন্তার উদয় ঘটায়। হঠাৎ করে লাবণীর কথা এত মনে পড়ছে কেন?
পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে লাবণীকে গুটিশুটি পায়ে দরজার কাছটায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গলায় কাঠিন্য যোগ করে মাজহাব। বলল,
-‘সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকার জন্য ডাকিনি। এদিকে আয়। ওকে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে যা।’
লাবণীর রা নেই। নিঃশব্দে এগিয়ে যায় মহুয়ার দিকে। মহুয়া শব্দ ছাড়া হাসল। তার কেমন যেন সুখী সুখী লাগছে। বলা ভালো, অন্যের দুঃখে সুখ খুঁজে নিতে ওস্তাদ সে। পাছে মাজহাব তার ঠোঁটের হাসি না দেখে ফেলে, এই কারণে দ্রুত ঠোঁট আঁটকায়। মাজহাবের দিকে তাকিয়ে মেকী রাগের সুরে বলল,
-‘তুমি দাঁড়িয়ে কেন? তুমি গেলেই না ও শাড়ি পরাবে।’
মাজহাব কিছু একটা বলতে গিয়েও কথা আঁটকে নিলো। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো।
লাবণী কাজে নেমে পড়ে। অভিজ্ঞ হাতে মহুয়াকে শাড়ি পরিয়ে দিতে লাগল একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে। তাকে দেখে বোবা মানুষ লাগছে। মহুয়া ক্ষণকাল চেয়ে চেয়ে দেখল। চুপচাপটা ঠিক জমছে না। সে নিরবতা ভাঙতে বলল,
-‘তোমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিলাম লাবণী। কিছু মনে কোরো না।’
-‘আচ্ছা।’ দায়সারা জবাব।
লাবণীর বুকের আগুনে আরেকটু ঘি ঢালতে মহুয়া বলল,
-‘আমি ওকে মানা করেছিলাম এখন এসব শাড়ি পরার কী দরকার! না, তার এক কথা, আমাকে এখনই এই শাড়ি পরতে হবে। তারপর নাকি আমাকে আদর করবে! অদ্ভুত মানুষ উনি..না বলো? আচ্ছা, তোমার কাছেও কী এরকম আবদার করতো উনি?’
তোলপাড় শুরু হয়ে ভেতর বাড়িতে। অথচ বাহির থেকে স্থির, একদম শান্ত। মাথাটা দু’দিকে নেড়ে ছোট্ট করে জবাব দেয় লাবণী।
-‘উঁহু।’
-‘ওহ। তাহলে তুমি ভাগ্যবতী ছিলে। সেরকম ভাবে স্বামীর জ্বালানো পাওনি। আমাকে দেখো না, বিয়ে হতে না হতেই জ্বালিয়ে শেষ করে ফেলছে। সামনে আর কী কী যে সহ্য করতে হবে কে জানে!’
বুকের ভেতরে চাপানো কষ্টগুলো দলা পাঁকিয়ে উপরে উঠে আসার জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করেছে। লাবণীর ভয় হয়, নিজের দুর্বলতা যদি চোখ বেয়ে নেমে আসে? এই দুর্বলতা যে কাউকে দেখানোর প্রয়োজন নেই। লাবণী একা,বড্ড একা। কে কী বলল, কে কী করল, তার সেসবে বিন্দুমাত্র কান দেওয়ার দরকার নেই।
পুনরায় ছোট্ট করে জবাব দেয় লাবণী।
-‘শেষ। আমি আসি তাহলে।’
পা বাড়ায় ঘর ছাড়ার উদ্দেশ্যে। পেছন থেকে তার একটি হাত টেনে ধরল মহুয়া। লাবণীর চোখে চোখ রেখে বলল,
-‘আমার কথায় কষ্ট পেলে? তোমার বাকী জীবন টা এখনো পড়ে আছে লাবণী। নতুন ভাবে আবার চাইলে শুরু করতে পারবে সব। তুমি যদি চাও,তবে আমি খুঁজে দিবো। কোনো দারোয়ান টারোয়ান অথবা ড্রাইভার পেয়েই যাবো তোমার জন্য!’
ঠোঁট ছিটকে বিদ্রুপ বেরিয়ে এলো। অন্যসময়ের মতো এবারেও পাশ কেটে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো লাবণী। তারপর কী মনে হতে থমকে দাঁড়াল। আঁখিদুটি স্পষ্ট করে কণ্ঠে জোর এনে প্রত্যুত্তর করল,
-‘আমার কথা ছাড়েন। যে প্রথম স্ত্রী থাকতেও দ্বিতীয় স্ত্রী আনতে পারে,সে দ্বিতীয় স্ত্রী কে ছেড়ে তৃতীয় বিয়েও করতে পারবে।’
তারপর আর এক মুহূর্তও নয়, হন্যপায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় লাবণী। এহেন কথা শুনে রাগে ফেটে পড়ার কথা থাকলেও শব্দ করে হেসে উঠে মহুয়া। আয়নায় নিজেকে আপাদমস্তক দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে স্বগতোক্তি করল,
-‘আমার বশ থেকে ছাড়া পাওয়া এতোটাও সহজ নয় লাবণী বিবি। সে তো আর তুমি জানো না…’
ঘরের দিকেই এগোচ্ছিল মাজহাব। পথিমধ্যে লাবণীর সঙ্গে ধাক্কা লাগে তার। লাবণী খেয়াল করেনি। ধাক্কা লাগার সাথে সাথে দু’হাতে লাবণীর পিঠ আঁকড়ে ধরে তাকে পড়ার হাত থেকে বাঁচায় মাজহাব। লাবণী মোচড় দিয়ে সরে দাঁড়াল। তার চোখের দৃষ্টি ঘোলা। অদ্ভুত রাগ হচ্ছে এই মানুষটার প্রতি। এখন তো মনে হচ্ছে, ফাও ফাও এই সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো মানে নেই। তারচেয়ে সে এই বাড়ির কাজের লোক হিসেবেই থাকবে। অন্তত কাউকে হারানোর মতো জঘন্য আর তীব্র কষ্ট তো হবে না বুকের মধ্যে!
-‘কী হয়েছে?’ মাজহাব প্রশ্ন ছুঁড়লো। লাবণী গাঁকগাঁক করে বলে,
-‘কিছু না। আপনি নাকি আমাকে তালাক দিবেন?’ পালটা প্রশ্ন ছোঁড়ে লাবণী। মাজহাব সামান্য অপ্রস্তুত হয়। গলায় গাম্ভীর্য এনে বলে,
-‘হুম।’
-‘তাহলে দ্রুত দিয়ে দিন। যদি পারেন কালকেই…’
তারপর পুনরায় ছুটে চলে আসে লাবণী। মাজহাব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রয়৷ সে ভেবেছিল লাবণীকে তালাক দেওয়া এতোটা সহজ হবে না। হয়তো লাবণীই চাইবে না। কিন্তু এখন লাবণী নিজে থেকেই তালাকের জন্য পাগল হয়ে উঠেছে! মাজহাব বিড়বিড় করে বলে,
-‘অদ্ভুত!’
★
-‘পেয়ারের বিবির সঙ্গে কী এমন আলাপ করলে?’
ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই মহুয়ার প্রশ্ন শুনে কপালে ঈষৎ ভাঁজের সৃষ্টি হয় মাজহাবের। সে ভ্রু-যুগল বাঁকিয়ে প্রশ্ন করে,
-‘মানে? কার সাথে কীসের আলাপ?’
-‘ওহ, এখন না বোঝার নাটক কোরো না। আমি সবই দেখেছি। লাবণীকে একদম জড়িয়ে ধরা.. আবার কী সব কথা বললে..’
-‘তেমন কিছুই না মহুয়া। আর ও পড়ে যেতে নিচ্ছিলো দেখে ওকে ধরেছি।’
-‘তাই?’
মহুয়ার ভাবভঙ্গি ভালো ঠেকে না মাজহাবের নিকট। সে এগিয়ে গিয়ে মহুয়ার হাত দুটি নিজের হাতের মুঠোয় ভরে নেয়। বলল,
-‘বাচ্চা হয়ে গেছো? আরে বাবা আমি বলেছি তো ওকে তালাক দিয়ে দিবো। ওর প্রতি আমার যদি ইন্টারেস্ট বা ভালোবাসা থাকতো, তবে কী তোমাকে বিয়ে করতাম বলো?’
মহুয়া এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নেয়। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে মেকী অভিমানের সুরে বলে,
-‘কিন্তু অভ্যাস কী এত সহজে ছাড়া যায় মাজহাব? ওর সঙ্গে কত বছর ধরে আছো! এত সহজেই ওকে ছেড়ে দিতে পারবে না, আমি জানি।’
-‘ভুল। ভুল জানো তুমি। তুমি দেখতে চাও, আমি কী করতে পারি আর কী পারি না?’
মহুয়া মুখ ফিরায়। মাজহাবের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বলল,
-‘হুম, দেখতে চাই।’
-‘তাহলে আগামীকালকেই ধর্মীয় ভাবে আমার আর লাবণীর তালাক হয়ে যাবে। কাগজে কলমে হতে একটু দেড়ি হবে। তা তো তুমি জানোই। তারপরও যতদ্রুত পারব, কাগজে কলমেও তালাক দেবো আমি। এবার হ্যাপি?’
চোখজোড়া ঝিলিক দিয়ে উঠে। ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি। যেন খুব খুশি হয়েছে, এমন ভঙ্গিতেই মহুয়া জবাব দেয়,
-‘জি স্যার, বড্ড হ্যাপি।’
অপরদিকে মনে মনে সে বলে চলে, ‘ওয়েলডান মহুয়া, ওয়েলডান। এ ঘরে ঢুকেই সর্বপ্রথম চাল তুমি চালতে পেরেছো। আর কিছু সময় মাত্র। তারপরই লাবণীকে দিয়ে চালা হবে ব্লাড স্টোন হাতানোর প্রথম ছলটি..’
-‘মহুয়া জানো, আমি ভেবেছিলাম লাবণী যখন শুনবে ওকে তালাক দেওয়ার কথা, অনেক কান্নাকাটি করে ঝামেলা সৃষ্টি করবে। কিন্তু ও নিজেও তালাক নিতে চাইছে। আমাকে মাত্রই বলল। একটু অবাকই হলাম আমি।’
মহুয়ার ধ্যান ভাঙে মাজহাবের কথার তীরে। মাজহাব ততক্ষণে বিছানার উপরে পা তুলে বসেছে। মহুয়া মনে মনে বলল, ‘এখনই সময়।’ তারপর দ্রুত গিয়ে মাজহাবের পাশে বসে বলল,
-‘একটা কথা বলি? তুমি আমাকে বিশ্বাস করো?’
-‘অবশ্যই করি। কী বলতে চাও বলো তো।’
তবুও কিছুটা সময় নিয়ে একটা নাটকীয় সূচনার সৃষ্টি করে মহুয়া। তারপর ধীরস্থির ভাবে বলল,
-‘আমার মনে হয়, ওই মেয়েরও কোথাও কোনো চক্কর আছে বুঝছো? তাই তো তোমার থেকে ছাড়া পেয়ে উড়ে চলে যেতে চায়। আবার দেখোই না, এই যে তুমি বিয়ে করলে, কই, ও তো একবারও কোনো কিছু বলে নাই। অন্য কোনো বউ হলে কী এতোটা স্থির থাকতো নিজের স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে?’
কঠিন ভাবনায় নিমজ্জিত হলো মাজহাব। মহুয়ার প্রতিটি কথা তার মস্তিষ্কে আলোড়ন তৈরি করেছে। মহুয়া বুঝতে পারল, তার কথায় কাজ হয়েছে। সে পুনরায় আগুনে আরেকটু ঘি ঢালতে বলল,
-‘ওকে তালাক দিয়ে এই বাড়ি থেকে বের করে দাও মাজহাব। তারপর ও যেখানে যা খুশি করে বেড়াক। আমরা আমাদের মতো নতুন জীবন শুরু করি। তোমার বাড়িতে থেকে,তোমার খেয়েপড়ে,অন্য কোথাও সম্পর্কে জড়ালে বিষয়টা সমাজের চোখে কতটা নিম্নমানের হবে ভেবে দেখেছো? তখন তোমার সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে। আমার স্বামীর খারাপ হোক কিছুতে, এটা আমি কক্ষনো চাই না মাজহাব।’
মাজহাবের প্রাণ শান্ত হয়। নাহ, সে কোনো ভুল করেনি মহুয়াকে বিয়ে করে। মহুয়ার মতো মেয়ে তাকে এতোটা ভালোবাসে! আনন্দে আপ্লুত হয়ে উঠে ভেতরটা। মহুয়ার প্রতিটি কথায় সমর্থন প্রদান করে মাজহাব। সিদ্ধান্ত হয়, আগামীকাল তালাকের পর লাবণীকে এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য জানিয়ে দেওয়া হবে। মাজহাবের বুকের ভেতর মেকী ভালোবাসার সহিত মাথাটা রাখে মহুয়া। মনে মনে নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সে। আসতে না আসতেই কতগুলো কাজ করে ফেলল! রুবা কে জানাতে হচ্ছে..
★
চোখের পানিতে বুক ভেসে যায়, তবুও ঠোঁট ফুঁড়ে শব্দ সৃষ্টি হয় না। নিকষ কালো রাতের আঁধারে ঘন চোখে চেয়ে রয় লাবণী। মাথায় থাকা বালিশটি জানে, লাবণীর ভেতরের তোলপাড়ের ভয়ংকর ধ্বনি।
‘কেন, কেন করলেন এরকম আপনি? আমার বাবা মা নেই, আমার পরিবার নেই, আমি কোথায় জন্মগ্রহণ করেছি, কে আমার বাবা মা, আমি কিছুই জানি না। ছোটবেলা থেকেই ধুকে ধুকে বড় হয়েছি। আপনার আম্মা আমাকে নিয়ে এসে নতুন জীবন দান করেন। তারপর যখন আপনার সঙ্গে আমাকে জোড়া লাগিয়ে দিলেন, আমি ভেবেছিলাম অবশেষে আমার সব কষ্ট চলে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু এটা কী করলেন আপনি মাজহাব? আপনি রাতের পর রাত কাজের বাহানায় ঘরের বাইরে থেকেছেন, ছুটির দিন গুলোয় বন্ধুদের নিয়ে মেতেছেন, আমাকে নিয়ে দূরে ঘুরতে যাওয়া তো দূর, কখনো সবচেয়ে কাছের মার্কেটেও যাননি। শুধু যখন যখন আপনার শরীরে তৃষ্ণা জেগেছে, তখন তখন হাত বাড়িয়ে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন। আমিও সেই ডাকে সাড়া দিয়েছি,কখনো বিন্দুমাত্র অযুহাত দেখাইনি। কেন জানেন? কারণ আমি আপনাকে সম্মান করতাম। আপনাকে…আপনাকে ভালোবাসতাম! আপনার প্রতি একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করতো আমার। আপনার করা প্রতিটি আদেশ আমার জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াতো যেন! আর আপনি.. এভাবে তার প্রতিদান দিলেন মাজহাব? একটুও দয়া হলো না আমার প্রতি? এতোটা পাষাণ আপনি কী করে হতে পারেন মাজহাব?’
অন্তর কাঁপিয়ে কথাগুলো নিসৃত হয়। অথচ নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরেছে লাবণীকে। মনের ঝড় মনেই চেপে বাথরুমের দিকে এগোয় সে। চোখেমুখে পানির ঝাপটা দেওয়া প্রয়োজন। ঘুম দরকার, খুব দরকার…তবে যদি মনটা একটু শান্ত হয়!
একটা চাপা হাসির শব্দ ধীরে ধীরে জোরালো হয়ে উঠে। লাবণীর কান খাড়া হয়। সে বোঝার চেষ্টা করে কে হাসছে? হাসিটা মোটেও স্বাভাবিক লাগল না। কেমন যেন খসখসে..! লাবণী বাথরুমের বেগ ভুলে যায়। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রাতের নিস্তব্ধতায় কান পাতলো। শোনার চেষ্টা করে। তারপর এগিয়ে যেতে শুরু করে। এগোতে এগোতে রান্নাঘরের সামনে এসে থমকে দাঁড়াল। শব্দটা ভেতর থেকেই আসছে। কেমন যেন ভয় ভয় করছে লাবণীর। আশেপাশে চেয়ে কারো অস্তিত্ব না পেয়ে সে আরও ঘাবড়ে যায়। চোখ বুঁজে নিজের মনে সাহস সঞ্চয় করল। তারপর ধীরে ধীরে চোখ খুলে রান্নাঘরের ভেতর ঢোকে। ফ্রিজের সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার পেছনটা স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়। লাবণী দু’কদম পিছিয়ে ভয়ে আর্তনাদ করে উঠে। মুখ দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসে একটি শব্দ, ‘আল্লাহ!’
(চলবে)
(