ভরা কলেজ ক্যাম্পাস-এ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মেহেক।ভয়ে হাত -পা কাঁপছে। এতগুলো ছেলের মাঝে মেহেক একা একটা মেয়ে। ওর সামনে রাগে চোখ-মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে ওদের কলেজের ভি. পি। মেহেক যদি জানতো এটা মীরদের কলেজ তাহলে কখনও এই কলেজে ভর্তি হতো না।মেহেকের বাবা ও ভাই মিলে না জানিয়ে ওকে আর ওর বন্ধুদের এই কলেজে ভর্তি করেছে। মেহেক ওর কলেজের নামও জানে না।
দুই ঘন্টা আগে……
কখন থেকে মেহেকের মা মেহেককে ডেকেই চলছে। কিন্তু ওর কোনো হুশ নেই। পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। ঘুমাবে না কেন?রাত তিনটা পর্যন্ত ফেসবুক চালানো হয়েছে। আজ ওর কলেজে ২য় দিন। সে খেয়াল ওর একদম নেই।
মেহেকের বাবাঃকি ব্যাপার মেহেক উঠেনি?
মেহেকের মাঃউঠলে কি আমাকে এত ডাকতে হয়?
মেহেকের বাবাঃসরো তুমি, আমি ওঠচ্ছি ওকে।
মেহেকের মাঃ হ্যাঁ,উঠাও তুমি। ৯টা বেজে গেছে। ১০টায় ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। কালকে ১ম দিন ছিলো।সে তো আর যায়নি।সারাদিন পাড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে।আজ ২য় দিন আজকেতো যাবে।
(মেহেকের মা চলে গেলো। মেহেকের বাবা ওর মাথায় হাত রেখে ডাকতে লাগলো।)
মেহেকের বাবাঃমেহেক মা-মনি উঠে পরো।কলেজে যেতে হবে তো।
মেহেকঃবাপি প্লিজ, আরেকটু ঘুমাই না।
মেহেকের বাবাঃনা,আর নয়।ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে। প্লিজ আমার লক্ষ্মী মা,উঠে পরো।
মেহেককে আগত্যা উঠতেই হলো।ওর বাবা চলে যেতেই ওয়াশ রুমের দরজায় হেলান দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
মেহেকের বাবাঃ মেহেক, জলদি করো।
মেহেকঃ হ্যাঁ,বাপি।জলদি করছি।
মেহেকের বাবাঃ কোথায়? তুমি দেখি হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছো।
মেহেকঃনা বাপি, একদম না।
মেহেক দরজা থেকে উঠে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো।ঘুম ঘুম চোখে দাঁত ব্রাশ করছে।কতখন পর পর বেসিনের ওপর ঝিমিয়ে পড়ছে।কোনো রকম দাঁত ব্রাশ আর গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলো।কাবার্ড থেকে টপস্,জিন্স আর ওড়না নিয়ে রেডি হতে চলে গেলো।
মেহেক রেডি হতে থাক।ততক্ষণে আমি আপনাদের ওর পরিচয় দিয়ে দেই।মিরাজ খান ও মাহিয়া খানের ১ছেলে ও ১ মেয়ে। ছেলে মেহের খান ও মেয়ে মেহেক খান। সোহেল খানের একমাত্র ছেলে মিরাজ খান। সোহেল খান মারা গেছে ১০-১২ বছর আগে। তার স্ত্রী মিশি খানও মারা গেছেন ৫ বছর আগে। মিরাজ খান একমাত্র ছেলে হওয়ায় অনেক জেদি ও রাগী।একদম তার অবিকল তার মেয়ে মেহেক। ছেলেটা ওর মায়ের মতো নম্র,ভদ্র ও শান্ত।যার কারণে মা তার ছেলেকে আর বাবা তার মেয়ে কে বেশি ভালোবাসেন।মেহেরের বয়স ২৫ বছর। দেখতে উচাঁ,লম্বা ও সুন্দর। পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেস দেখছে।মেহেকের বয়স ২১।
ওর গায়েঁর রং উজ্জল সুন্দর। চোখ দুটো অপূর্ব, টানা টানা চোখে ভাসা চাহনি দেখে যে কেউ পাগল হয়ে যাবে।হাসিটাও খুব মায়াবী। মেহের ও মেহেকের দুজন দুজনের সাথে টম and জেরি সম্পর্ক। কখনওই দুজনের মিলে না।
মেহেরের মতো ভালো ছেলে আর মেহেকের মতো ফাজিল, দুস্টু মেয়ে ওদের চৌদ্দ গুসঠিতে একটাও নেই।বাবার অতি আদরে বাঁদর হয়েছে। দু বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছে। গ্রামে থাকতে মেয়ের জন্য কম নাকানি-চুবানি খান নি মিরাজ খান।বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে কারো ফলের গাছ খালি করা,কাউকে পুকুরে চুবানি খাওয়ানো,ঘুষি দিয়ে নাক ফাটানো ছিলো নিত্যদিনের ব্যাপার।প্রতিদিন মেয়ের বিচার করতে করতে দিন শেষ। যেটা তার ছেলেকে দিয়ে হওয়ার কথা সেটা তার মেয়েকে দিয়ে হতো। ভেবেছিলো ঢাকার কলেজে ভর্তি হলে মেয়ে ঠিক হয়ে যাবে। তাই দু বছর আগে ঢাকার এক নাম করা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়। তারা সবাই তাদের ঢাকার বাড়িতে উঠলো।কিন্তু তাতে দুষ্টুমি কিছুটা কমলে পুরোপুরি কমে নি।এখন বাড়িতে বিচার আসে হয় কোনো ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে, নয়তো ঘুষি দিয়ে নাক ফাটায়েছে কিংবা হাত পা ভেংগেছে।মেহের আর তার বাবাকে সবকিছু সামলাতে হয়।মেহেকের কাছে সবসময় তার রক্ষাকবচ প্রিয় হকি স্টিক থাকে। সে হকি খেলতে খুব পছন্দ করে। তাই মিরাজ সাহেব তার মেয়ের জন্য থাইল্যান্ড থেকে একটা শক্ত, মজবুত, সুন্দর দেখতে হকি স্টিক এনে দিয়েছে। ওটাকে পার্ট পার্ট ভাজ করে ব্যাগে রাখা যায়। তাই সব সময় ওর ব্যাগই থাকে।
খাবার টেবিলে……..
মেহেরঃ মাম্মি,তাড়াতাড়ি খাবার দেও।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মাহিয়াঃদিচ্ছি বাবা। একটু দেরি কর।
মেহেরঃ শয়তানটাকে যে দেখছি না।ও আজ কলেজে যাবে না।
মাহিয়াঃ যানি না, বাবা। এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারি না। বাবার আদরে বাঁদর হয়েছে।কে জানে আজ আবার কারো মাথা, নাক ফাটিয়ে আসে নাকি।
মেহেরঃ যত দোষ বাপির। কেন থাইল্যান্ড হকি স্টিক টা এনে দিতে গেল। সে কি জানে না তার মেয়ে এটাকে কি কাজে লাগাবে।
মাহিয়াঃ বাবার আদরের মেয়ে। আবদার করেছে না এনে কি পারে।
মেহেরঃ ওর স্টিকের তেরোটা আমি বাজাবই।
(মেহেকে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মেহেরের শেষ কথাটি শুনলো)
মেহেকঃ খবরদার ভাইয়া, আমার স্টিকের দিকে তাকাবি না।তা না হলে তোকে আমি আমার স্টিকের গুরুত্ব বোঝাবো।
মেহেরঃ মাম্মি,শুনেছো ও কি বলে?
মাহিয়াঃ মেহেক তুমি দিনকে দিন বেয়াদব ও অভদ্র হয়ে যাচ্ছো।
মেহেকঃভালে আছিলাম কবে🙄🙄?
মাহিয়াঃ মেহেক…. 😠😡
মেহেকঃ দেখ ভাইয়া,আমি কাউকে শুধু শুধু মারি না। কেউ যদি আমার সাথে কিংবা কোনো মেয়ের সাথে অসভ্যতামী করে তাহলে আমার স্টিক-টাকে কাজে লাগাই।
মেহেরঃ তোকে এতো মাদার তেরেসা হতে হবে না।
মেহেকঃ আমি মোটেও মাদার তেরেসা নই।
মাহিয়াঃ মেহেক তুই বড় হয়েছিস।এবারতো একটু ভালো হবি।
মেহেকঃ আমি অনেক ভালো। তোমার বিশাল বড় কপাল আমার মতো একটা মেয়ে পেয়েছো।😁😁
মাহিয়াঃ আহ্,কি আমার কপালটা!
মেহেরঃ মাম্মি,তোমার কপালটাকে তুমি একটা চুমা দাও যে ওর মতো একটা ভদ্র, শান্ত,ভালো মেয়ে পেয়েছেো।😏
মেহেকঃ ভাইয়া,ভালো হবে না কিন্তু। 😤
(কথাটা বলেই মেহেরের প্লেট থেকে সেদ্ধ ডিম নিয়ে মুখে পুরে দিলো।)
মেহেরঃ মাম্মি,আমার ডিম…..😭😭
মেহেকঃ তোর ডিম,কোথায়? কখন পারলি?🧐🧐
(মাহিয়া খান কিচেনে চলে গেলেন খাবার আনতে।)
মেহেরঃ মেহেকের বাচ্চা তোকেতো আমি……
(কথাটা বলেই মেহের সামনে থাকা ভাতের বোল থেকে চামচ হাতে নিলো।আর মেহেক ডালের বাটি থেকে ডালের চামচ হাতে নিলো। দু- জন এমনভাবে চামচ দিয়ে মারামারি করছে যেনো দু-জনেই তলোয়ার চালাচ্ছে।মেহের চামচ দিয়ে বারি দিতে নিলে মেহেক চামচ দিয়ে ঠেকাচ্ছে।আবার মেহেক চামচ দিয়ে বারি দিতে নিলে মেহের ঠেকাচ্ছে।পুরো টম এন্ড জেরির তলোয়ার যুদ্ধ। এসব দেখে কাজের বুয়া লিমা দৌড়ে মাহিয়া খানের কাছে ছুটে গেল।
লিমাঃভাবি,ভাবি চামচ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। হি হি 😁
মাহিয়াঃ না,এদের জালায় আর বাড়িতে থাকা যাবে না।নে– তুই প্লেটটা ধর,আমি আসছি।ছেলে -মেয়ে দুটো আমায় পাগল বানিয়ে ছারবে।
(মাহিয়া খান খাবার টেবিলে গিয়ে দেখলেন এখনও চামচ যুদ্ধ চলছে। সে ছেলে -মেয়ে কান ধরে টান দিলেন)
মাহিয়াঃ এই হতচ্ছারা,পাঁজি, বজ্জাত।কবে বড় হবি তোরা?
মেহেরঃ মাম্মি, লাগছে।ছারো, ছারো। উহু হু হু😥😥
মেহেকঃ মাম্মি, আমারও খুব লাগছে। আউচ! নো😭
মিরাজঃ আরে করছো টা কি? কান মুলছো কেন ওদের? ছেরে দাও,ব্যাথা পাচ্ছে তো।(সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে)
মাহিয়াঃ পাক,বেশি করে পাক।তুমি আর ওদের হয়ে কথা বলতে এসো না।এত বড় হয়েছে এখনো টম আন্ড জেরির মতো লেগে থাকে।কবে বুঝবে ওরা নিজেদেরটা।
মেহেকঃ বাপি —ই ই ই ই😭😭😭(কানে হাত বুলাতে বুলাতে)
মাহিয়াঃ খবরদার, ন্যাকা কান্না করবি না।
মিরাজঃ ওরে আমার সোনা মেয়ে। দেখি লাগে নি তো।
মেহেরঃবাপি,তুমি এমন ভাব করো যেনো তোমার একটাই মেয়ে। ছেলের কথাতো ভুলেই যাও।
মিরাজঃ চুপ কর। সব তোর দোষ।
মেহেকঃ হ্যাঁ, বাপি সব ভাইয়ার দোষ।ভাইয়া আগে আমাকে মেরেছে। 😜
মেহেরঃ কী ই ই ই?🤬🤬
মেহেকঃ হুম বাপি।(বাবাকে জড়িয়ে ধরে)
মেহেরঃ তোর আজকে খবর আছে। শুরু তুই করে এখন আমাকে দোষ দিচ্ছিস।তোকে তো আমি……. পরে দেখে নিবো।
(এই কথা বলে মেহের খাবার টেবিল ছেরে উঠে গেল)
মেহেকঃ আরে যা যা। তুই আমার কিছু করতে পারবি না।
মাহিয়াঃ হলো তো এবার। ছেলেটা না খেয়ে উঠে গেল।এটাই তো চাইছিলে তোমরা বাপ- মেয়ে মিলে তাই না।
(মাহিয়া খান উঠে চলে গেলো মেহের কে ডাকতে)
মেহেকঃ বাপি, দেখছো মাম্মি একটুও আমাকে ভালোবাসে না।( মুখ গোমড়া করে)
মিরাজঃতাতে কি হয়েছে? আমিতো আমার মা-কে ভালোবাসি।
মেহেকঃ ইউ আর মাই কিউট বাপি।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।(জড়িয়ে ধরে)
মিরাজঃ আমিও। নেও তারাতাড়ি খেয়ে নাও। হা করো।
(মিরাজ খান তার মেয়ে কে খাইয়ে দিলেন।খাওয়া শেষ হলো)
মেহেকঃবাপি,আমার কিছু টাকা লাগবে।
মিরাজঃ কত টাকা মা-মনি?
মেহেকঃ ২-৩ হাজার টাকা হলেই চলবে।
(মিরাজ খান পকেট থেকে টাকা বের করে তার মেয়ের হাতে দিলেন।)
মেহেকঃ থ্যাংকি ইউ বাপি।ইউ আর মাই লাভলী বাপি।আই লাভ ইউ।
মিরাজঃ লাভ ইউ টু।একদম দুস্টুমি করিস না।ভালো মেয়ে হয়ে থাকিস।
মেহেকঃ ওকে বাপি।বাই বাই।(যেতে যেতে)
মিরাজঃ গাড়ি নিয়ে যা।
মেহেকঃআমি আমার বাইক নিয়ে চলে যাবো।
মিরাজঃ একদম না। গাড়ি নিয়ে যা।
মেহেকঃনা বাপি, আমি আমার রিম-কে (বাইকের নাম)নিয়ে যাবো।
মিরাজঃ মেহেক শোন……
(চলবে)
💞ভুল করে একবার, বল না তুই আমার 💞
Part-01
Writer _Raidah_Islam_Nova
Next part gulu kutay pabo
Kothai pabo bolen