💞ভুল করে একবার বল না তুই আমার 💞
Part- 02
Writer _Raidah _ Islam _Nova
মেহেকের বাবার কথা শোনার আগে মেহেক বাইক স্টার্ট দিয়ে সোজা কলেজে রওনা দিলো।কাধেঁ একটা ছোটো বেবি ডল ব্যাগ। ব্যাগের ভেতর ওর প্রিয় রক্ষকবচ হকি স্টিক ছাড়া আর কিছু নেই। ওর রক্ষকবচে একটা নাম আছে হির। যার কারণে ওর সব বন্ধু বান্ধবীরা ওকে হির বলে ডাকে। মেহেক আর ওর বন্ধুরা একে অপরের সাথে গ্রামের ভাষায় কথা বলে। তবে অন্য কারো সাথে না।
(ডমেটো কুসিটা আ আ ডমেটো কুসিকা আ আ মেহেকের ফোন বেজে উঠলো। এটা ওর ফোনের রিং টোন)
মেহেকঃ ধুর আর ভাল্লাগে না। এই মাঝ রাস্তায় কে ফোন দিলো।
(বাইক সাইড করে ফোন ধরলো।)
মেহেকঃ হারামজাদা, ফোন দেওয়ার সময় পাশ না।দাড়াঁ আইয়া লই। তোরে কাচাঁ চাবাইয়া খাইয়া ফেলামু একটু লবণ ও লমু না।ফোন কাট……
( ফোনের অপর পাশে থাকা মানুষটা ফোন কেটে দিল।বড়সোর একটা ঢোক গিলে শাবাব ওর বন্ধুদের দিকে তাকালো।)
শাবাবঃ হারামজাদা এবং জাদি তগো লিগা আমি বকা খাইলাম।
আফজাঃ কেন কি হয়ছে?
শাবাবঃ ফোন ধইরা হির আমারে কইলো খবর আছে।আমারে কাঁচা চাবাইয়া খাইয়া ফালাইবো।যদি আমারে কিছু কয়, তয় তগো দেহিস আমি কি করি।
( সবাই এক সাথে হেসে উঠল শাবাবের কথা শুনে।আধা ঘন্টা ধরে ওরা হির মানে মেহেকের জন্য অপেক্ষা করছে। আফজা,শাবাব, ববি,নূরি,রাইম,কায়সার আর মেহেক ৭ জন আগের কলেজের বন্ধু। একসাথে মীর কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছে। সব যেনো কলিজার টুকরা।পড়াশোনায় একদম ভালো না। কিন্তু ভালো ফলাফল কিভাবে করে কে জানে।সবসময় ক্লাসের শেষের বেঞ্চে এই সাতজনকে দেখা যায়। ওদের গ্রুপের নাম রংধনু ।রংধনুর যেমন সাতটি রং তেমনি ওদের সাতজনের ও সাতটি গুণ আছে।
শাবাব ভালো ছবি আকঁতে পারে।
কায়সার পড়াশোনায় ভালো। রাইম গান গাইতে পারে।
আফজা বিউটিশিয়ান।মেহেক ক্লাসিকাল ডান্স করতে পারে। ববি রক ডান্স না-কি জানি ঐ যে ব্যাঙের মতো ফালাইন্না নাচ আসলে ঐ টাকে নাচ বলে কিনা সন্দেহ আছে,খালি ফালায় ঐ নাচ ভালো পারে। আর নূরি ভালো গল্প লিখতে পারে। ওদের গ্রুপের আরেকটা নাম আছে “পাগলনি গ্রপ”।কেউ যদি পাগলনি গ্রুপ দেখতে চায় তাহলে হাত ধরে এনে ওদের সামনে ছেড়ে দিবে। ওদের চিনে না এমন মানুষ ওদের আগের কলেজে ছিলো না।পড়ালেখায় তো ঘোড়ার ডিম।
(মেহেক বাইক নিয়ে চলে এসেছে।বাইক সাইড করে সোজা ওর গ্রুপ পাগলনি থুক্কু রংধনু সামনে দাড়াঁলো।)
মেহেকঃ কোন ছেমড়ায়রে আমারে মাঝ রাস্তায় ফোন দিছে।
ববিঃ হির, ঐ ডা আর কেউ না কাবাব…..
সোজা শাবাবের কলার ধরলো…..
মেহেকঃ হারামজাদা তোগো না কইছি মাঝ রাস্তায় থাকলে আমারে ফোন করবি না। কথা কি কান দিয়া ঢুকে না। যদি ফোন ধরতে গিয়া আমি এক্সিডেন্ট করতাম।
শাবাবঃ আমি কি জানি হির তুই রাস্তায়?
মেহেকঃ জানস না দেইখা এবার মাফ করলাম। পরের বার কিন্তু আমার হিররে দিয়া তোর মাথা ফাটামু।( কলার ছেরে দিয়ে)
আফজাঃ এই কলেজে কি র্যাগিং হয় না?সিনিয়রদের যে দেখতাছি না।
রাইমঃ জি না।র্যাগিং করাতো দূরে থাক কেউ যদি এটার নামও নেয় তাহলে তার খবর আছে।
ববিঃ বাহ্,বাহ্ এতো ভদ্র কলেজ।
শাবাবঃ এতো ভদ্র কলেজে আমরা অডদ্ররা কি করতে আইছি?
মেহেকঃ কলেজটারে ভাইজা খাইতে। বাই দ্যা ওয়ে কলেজের নাম কি রে?
কায়সারঃকলেজে ঢোকার সময় কি চোখ বন্ধ কইরা ঢুকছিলি? গেইটের উপরে নাম দেখস নাই।
মেহেকঃ উপরে নাম দেখতে গেলে তো আমার ঘাড়ডা মটকাইয়া যাইতো।যেই উঁচা গেইট।
নূরিঃ ক্লাসে বকবক করনের টাইমে স্যারেই কইবো নে।চল এবার।
ববিঃ হির, দেরি হইয়া যাইতাছে ক্লাসে চল।
কথা না বাড়িয়ে সোজা ক্লাসে গেল। ওরা ঢোকার ৫ মিনিট পর ক্লাসে একাউন্ট টিচার ঢুকলো। ওরা ৭জনই কমার্স ডিপার্টমেন্ট একাউন্টিং-এ অনার্স নিয়েছে।ক্লাসের লাস্ট দুইটা বেঞ্চে সাতজন বসছে।
ক্লাস রুমে…..
মেহেকঃ ঐ রুহ আফজা,স্যার এতো বকবক করে কে?
আফজাঃ হের কামই এডা।সারাক্ষণ বকবক করা।
নূরিঃ হির, এইডা কি ক্লাস রে?
মেহেকঃ মনে হয় ইংরেজি। দেখস না স্যার ইংরেজিতে কি জানি লেখতাছে।
ববিঃ কোন চাপ্টার?
মেহেকঃ কোন চাপ্টার হেইডা ছাড়,আগে বল ইংরেজি ফাস্ট পেপার না সেকেন্ড পেপার?
আফজাঃ মনে হয় সেকেন্ড পেপার। দেখস না কেমন প্যাঁচ গোছ লাগে। আবার 1,2,3 অংক দেখা যাইতাছে।
মেহেকঃ আমিতো শুনছি অনার্সে ইংরেজি নাই।তোরাতো ভালো কইরা জানস ইংরেজি আর ভালোবাসা এই দুইডায় আমার এলার্জি।
ববিঃ আমিও শুনছিলাম ইংরেজি নাই।
নূরিঃ এই স্যার বোধহয় ভূলে আমগো ক্লাসে ঢুইকা গেছে। হেরে কেউ বাইর কইরা দে।
মেহেকঃ ধুর ভাল্লাগে না।ইংরেজি নাই দেইখা একাউন্টিং -এ অনার্স নিলাম। হেই জায়গায়ও ইংরেজি। যেই হারামজাদা, বিলাই, শয়তানে ইংরেজিরে ইন্টারন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজ বানাইছে হেরে যদি পাইতাম,তইলে আমার হিররে দিয়া বাইরাইয়া মাথাডারে গুরা গুরা করতাম।
আফজাঃ আমিও তোর লগে আছি।
ইংরেজিতে B গ্রেড পাওয়ার কারণে মেহেক A গ্রেড পায়নি।যার কারণে সরকারি ভার্সিটিতো দূরেই থাক এই বেসরকারি কলেজে চান্স পাইতে নাকানি -চুবানি খাইতে হইছে।
মেহেকের কথা শুনে পেছন থেকে কায়সার ওর মাথায় টোকা দিলো।
কায়সারঃ হির এটা ইংরেজি ক্লাস না।
মেহেকঃ ঐ ছেমরা, তোরে কেডা কইছে?দেখস না স্যার ইংরেজিতে কথা কইতাছে আর ইংরেজিতে কি জানি লেখতাছেো?
কায়সারঃএটা একাউন্ট ক্লাস। আর উনি একাউন্ট টিচার।
মেহেকঃ কেউ এডারে পাবনায় ভর্তি করতো।এডায় পাগল হইয়া গেছে।
কায়সারঃ বই কিনছোত?
মেহেকঃ না,বাপি টাকা দিছিলো। খাইয়া ফেলাইছি।🙄
কায়সারঃ এ জন্য কিছু বুঝতাছত না।
আফজাঃ ঐ কি বুঝতাছি না।আমরা ঠিকই বুঝতাছি এডা ইংরেজি ক্লাস, তুই বুঝতাছত না।
কায়সারঃ আরে ছেমরিরা, অনার্সের সব বই ইংরেজিতে। ইংরেজি নাই ঠিক কিন্তু একাউন্টিং-এর সব কিছু ইংরেজিতে পড়তে লিখতে হইবো।
মেয়ে ৪জনঃকি কইলি?(সবাই একসাথে)
মেহেকঃ অ্যাঁ..
কায়সারঃ অ্যাঁ না হ্যাঁ।
মেহেকঃ যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়।কই দেখি বইটা?
কায়সারঃ এই নে।
বইটা হাতে মেহেকের মাথা খারাপ হয়ে গেলো। ওর যত ভয় ইংরেজি নিয়ে। যার কারণে একাউন্টিং- এঅনার্স নিলো।এখন কি না অনার্সের সব বই ইংরেজিতে। টাকার সংখ্যাগুলোও ইংরেজিতে। মানে 1,2,3….হি হি
রাইমঃ দোস্ত,কি হয়ছে রে?ওরা মাইয়া চারডায় মুখটারে পেঁচির মতো কইরা রাখছে কেন?
শাবাবঃওগো মুখটা বাংলা ৫ এর মতো হইয়া রইছে কে?
কায়সারঃ এতক্ষন কই আছিলি, উগান্ডায়?
রাইমঃনা দোস্ত,তোর সাথে ক্লাসেই ছিলাম।
শাবাবঃআমি আর রাইম মিলে বেঞ্চের নিচে ফোন ধইরা পাবজি খেলতা ছিলাম।
কায়সারঃতাইলে ঐডায় খেলতে থাক।স্যার যখন কান ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়া করায় রাখবো,তখন পাবজির মজা বুঝবি।(রেগে)
রাইমঃ আমরাতো পেছনে বইছি। স্যার, আমাদের দেখবো না।
মেহেক,কায়সারের কথা শুনে ওর ব্যাগটাকে পুতুলের মতো জড়িয়ে ধরে পেছনের দরজা দিয়ে দিলো দৌড়।ওকে আর পায় কে?
(চলবে)