#ভ্রম_নাকি_তুমি!(২য় পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda
বাথরুমের মেঝেতে তাকিয়ে কিছু একটা দেখতে পেল আয়ান। কি ওটা? এয়ারিং এর মতো মনে হচ্ছে। ততক্ষনে অবনীকা আয়ানের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে একদম গুটিশুটি মেরে গেছে। আয়ান ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অবনিকা ওর শার্ট খামচে ধরলো।
– আপনি যাবেন না প্লিজ। ভেতরে ভূত আছে।
– ভূত বলে কিছু হয়না৷ আপনি দাঁড়ান আমি দেখে আসি।
অবনিকাকে হাত টা সরিয়ে দিয়ে আয়ান ভেতরে গেক। পায়ের আঙুল এর ওপর ভর করে বসে এয়ারিং টা হাতে নিলো। এয়ারিং টা ভালো করে দেখতেই আয়ান চমকে গেল। এটা তো অবনীর কানের দুল। এটা এখানে কি করে এলো? আয়ান অবনীকে ওদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী তে এই ডায়মন্ড এর এয়ারিং জোড়া গিফট করেছিলো। এটা তো অবনীর লকারে ছিলো। এখানে কি করে এলো? হতে পারে এটা অন্য কারো দুল। নিশ্চিত হওয়ার জন্য লকার খুলে দেখতে হবে।
অবনী মারা যাওয়ার পরে আয়ান অবনীর সব জিনিস পত্র ওর লকারে রেখে দিয়েছে। অবনীর লকারে যে পাসওয়ার্ড দেয়া তা শুধু অবনী জানতো আর আয়ান জানে। এছাড়া অন্য কেউ কেউ এটা জানেনা তাই এই এয়ারিং আয়ান কিংবা অবনী ছাড়া অন্য কারো কাছে থাকার কথা না। আয়ান এয়ারিং টা হাতে নিয়ে উঠে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে এলো।
– ক্কি কি এটা? কার এয়ারিং?
অবনীকার প্রশ্নের কোন উত্তর দিলো না আয়ান। তাড়াতাড়ি করে অবনীর লকার খুললো। লকার খুলতে আরেক দফায় অবাক হলো। কারণ সেখানে একটি মাত্র এয়ারিং ছিলো। তার মানে আয়ান এর হাতে যে এয়ারিং টা সেটা অবনীর ই। কিন্তু এটা বাইরে কি করে এলো? অবনীকা বের করেছে? না তো। ও কি করে জানবে পাসওয়ার্ড? ও আসার পর আয়ান একবারো এই লকার খোলে নি। তাই লুকিয়ে দেখার ও কোন উপায় নেই। তাহলে কিভাবে?? আয়ান এর মাথায় এখন প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। তাছাড়া অবনীকা বলছিলো যে ওকে কেউ ধাক্কা মেরেছে। হতে পারে ও পা পিছলে পড়ে গেছে বেসিনের ওপর তাই ওর কপাল কেটে গেছে। কিন্তু এয়ারিং টা? আয়ান আবার এয়ারিং টা সেখানেই রেখে দিলো। অবনীকা কে কিছুই বুঝতে দিলো না।
– আপনি কিছু বলছেন না কেন?? এটা কার? আর বাথরুমে কেন?
– এটা অবনীর। আর বাথরুমে কি করে গেছে সেটা আমিও জানিনা।
একদম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা গুলো বললো আয়ান। কিন্তু অবনীকার মুখ থেকে ভয়ের ভাব টা এখনো যায়নি। অবনীকা আর কথা বাড়ালো না। আয়ানের মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছে যে আয়ান এখন এসব নিয়ে কথা বলতে চায়না। আয়ান ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স টা বের করে অবনীকার হাতে দিলো।
– নিন ওষুধ লাগান।
– না না। খুব জ্বলবে। তার থেকে এরকম থাকুক। কালকেই ঠিক হয়ে যাবে। আপনি চিন্তা করবেন না। ঘুমিয়ে পড়ুন আপনি।
আয়ান কোন কথা না বলে নিজে ওষুধ লাগিয়ে দিলো। ওষুধ লাগাতে গিয়ে অবনিকার চোখ মুখ দেখে আয়ান এর হাসি পেল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। চুপচাপ ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে দিলো।
এরপর দু তিনদিন ভালো কাটলো। রাত ১১ টা বাজে। সবাই ডিনার শেষে যে যার ঘরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ আয়ান এর মা আতঙ্কিত অবস্থায় দৌঁড়ে আসলো আয়ান এর ঘরে।
– কি হয়েছে মা, তুমি এভাবে হাপাচ্ছো কেন?
– ও ও ওখানে কে যেন আছে।
– কোথায় কে আছে?
– আমার রুমের বেলকনিতে কে যেন নূপুর পায়ে দিয়ে হাটছে। আমি সেখানে গেলাম কিন্তু কেউ ছিলো না। কিছুক্ষণ পরেই শব্দটা থেমে গেল।
– মা ওটা তোমার মনের ভুল।
– না আমার কোন ভুল হয়নি। আমি একদম স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি।
– কই চলো আমি গিয়ে দেখি।
– শব্দটা তো থেমে গেছে।
– ওহ আচ্ছা। এসব নিয়ে অযথা চিন্তা করো না। কেউ ছিলো না। ওটা তোমার মনের ভুল।
মিরা রহমান আর কোন কথা না বলে আয়ান এর ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। আর আয়ান ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। আয়ান কে ওয়াশরুমে যেতে দেখে অবনিকা ঘর থেকে বের হয়ে মিরা রহমান এর পিছু পিছু এক প্রকার দৌড়ে গেল।
– মা একটু দাঁড়ান।
মিরা রহমান ভয় পেয়ে গেলেন নুপুর এর শব্দ পেয়ে। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখলেন অবনিকা।
– ও তুমি। তুমি নূপুর পরো?
– না মা এটা পায়েল। এক পায়ে পরেছি।
– ওহ আচ্ছা। কিছু বলবে?
এইবার অবনিকা একটু ইতস্তত করলো। ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায় কিন্তু সাহস করতে পারছে না। দ্বিধাবোধ করছে।
– কি বলতে চাও? বলো আমাকে।
– আসলে মা কথা টা আপনাকে বলা ঠিক হবে কিনা আমি জানিনা। তবুও আপনাকে বলছি। সেদিন রাতে আমিও শুনেছিলাম এরকম শব্দ। এই শব্দ শুনে বাথরুমে যেতেই কেউ আমাকে ধাক্কা মেরে বেসিনের ওপর ফেলে দেয় আর আমার কপাল কেটে যায়। আয়ান বলতে মানা করেছিলো বলে আমি আপনাদের এসব বলিনি। আপনারা চিন্তা করবেন তাই বলেছি অসাবধানতার জন্য বাথরুমে স্লিপ কেটে গিয়েছি।
অবনিকার কথা শুনে এইবার মিরা রহমান এর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। প্রচন্ড ভয়ে মুখের রক্ত সরে গিয়ে পুরো মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তিনি কোন কথা না বলে সোজা নিজের ঘরে চলে গেলেন।
পরদিন সকালে অবনীকা রান্নাঘরে বসে কাজ করছিলো। কিছুক্ষণ পরে ওর শাশুড়ি এসে পাশে দাঁড়ালেন। দুজনে চুপচাপ কাজ করছিলো। হঠাৎ ওর শাশুড়ী খেয়াল করলো অবনীকা ফ্রিজ থেকে এক গ্লাস কি যেন বের করলো একেবারে লাল টকটকে। দেখে মনে হচ্ছে রক্ত। অবনীকা ওর শাশুড়ির মুখের কাছে গ্লাস টা ধরে বললো,
– সারারাত আপনার চিন্তায় ঘুম হয়নি, তাই না মা? এই নিন ঠান্ডা রক্ত। খেলে সব রকমের চিন্তা, ভয় সব কিছু দূর হয়ে যাবে। দেখবেন প্রচুর শান্তি লাগছে। খুব সুন্দর ঘুম হবে।
– কি কি বলছো তুমি?
– আরে নিন না মা, খেয়ে তো দেখুন একবার। অনেক স্বাদ পাবেন।
অবনীকা ওর আরো কাছে এগিয়ে আসতেই মিরা এক দৌঁড়ে ওপরে চলে গেলেন। পরপরই আয়ান ওর মাকে সাথে নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকলো। ঢুকে দেখে মিরা কিছু একটা খাচ্ছে। একটু কাছে এগোতেই দেখে ডালিমের রস খাচ্ছে ব্লেন্ড করে।
– অবনিকা, এটা কি খাচ্ছো তুমি?
– ওই আসলে কাল রাতে আমার ভালো ঘুম হয়নি। তাই শরীর টা কিছুটা দুর্বল আর ক্লান্ত লাগছে। এজন্য কিছু ফ্রুটস মিক্স করে ব্লেন্ড করে ফ্রিজে রেখেছিলাম। একটু ঠান্ডা হওয়ার পরে খাচ্ছি। মাকেও বলেছিলাম খেতে কিন্তু উনি তো দৌঁড়ে চলে গেলেন। কি হলো কিছুই বুঝলাম না।
– না না আয়ান ও রক্ত খাচ্ছে। তুই ভালো করে দেখ ওটা রক্ত।
– মা এসব কি বলছো তুমি? এটা রক্ত হতে যাবে কেন? দেখতে পাচ্ছো না এটা জুস?
– না না ও মিথ্যে বলছে।
এবার আয়ান অবনীকার হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে বাকিটুকু নিজেই খেয়ে নিলো।
– এই যে দেখো এটা আমি খেয়ে নিলাম। কোন রক্ত টক্ত না। ভয় পেও না হুম? চলো রেস্ট নিবে তুমি।
অবনিকা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আয়ান ওর অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,
– আসলে কাল রাতে মা ভয় পেয়েছে। তার ইফেক্ট এখনো যায়নি হয়তো। তাই জন্য এরকম উল্টো পালটা বলছে। কিছু মনে করবেন না। কেমন?
অবনিকা একটা শুকনো হাসি দিলো। কিছুক্ষণ পরে অবনিকা খাওয়ার টেবিলে ডাকলো সবাইকে। খেতে বসে আয়ান এর একটা ফোন আসলো। কথা বলতে বলতে আয়ান অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,
– কি? অবনী? আচ্ছা আমি এখনিই আসছি।
সবাই একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। আয়ান কোন কথা না বলে খাবার রেখেই চলে গেল। আয়ান এর ছোট ভাই আয়ান এর পিছনে পিছনে গেল। কিন্তু আয়ান তাকে বাঁধা দেয়াতে ওর সাথে যেতে পারলো না। অবনিকা আয়ান এর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে মুখে বিস্ময়। সাথে কিছুটা কষ্টের ছাপ ও দেখা যাচ্ছে। আয়ান এর মা বুঝতে পেরে অবনিকার কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো।
– আমি বুঝতে পারছি, আয়ান এর মুখে অবনীর নাম শুনে তোমার কেমন লাগছে। তুমি চিন্তা করো না। ওকে একটু সময় দাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।
– মা অবনী কি তাহলে বেঁচে আছে?
– নাহ।
– তাহলে আয়ান কোথায় গেলো?
– জানিনা, আয়ান আসুক। ওর কাছেই জিজ্ঞেস করে নিও। তবে অবনী বেঁচে নেই। আমরা সবাই দেখেছি ওর লাশ।
– ওহ আচ্ছা।
অবনী নিজের ঘরে চলে গেল। রাতে আয়ান এসে দেখে ওর ঘরের দরজা বন্ধ। হালকা টোকা দিতেই দরজা খুলে গেল। পুরো ঘর অন্ধকার। আয়ান আস্তে এক পা দু পা করে হাটছে। হঠাৎ কিছুর সাথে ধাক্কা খেল। অন্ধকারে টাল সামলাতে না পেরে উপুড় হয়ে পড়ে গেল। হাতের নিচে হঠাৎ অনুভব করলো,,,,,
[