#ভয়ংকর_প্রণয়
পর্ব 14
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain
রাত বারোটা বাজে নাফিয়ার ঘুম পাচ্ছেনা ।এক ভয়ংকর অনুভূতি তাকে গ্রাস করছে বারবার ।কি হবে কাল ? ভাবতেই তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ঝংকার দিয়ে উঠল ।উফফফ ভেতরটা কেমন ঢোল পেটানোর মত আওয়াজ হচ্ছে ।পরোক্ষনেই মনটা আবার কি ভেবে যেন নেচে উঠল ।ঠোটে মনমাতানো হাঁসি তার ।এতোদিন পর স্পর্শের সাথে দেখা হবে ভাবতেই তার মন কেমন এক অনুভূতির বেড়াজালে জড়িয়ে যাচ্ছে ।সে ভাবে আচ্ছা তার যেমন অনুভূতি হচ্ছে স্পর্শের-ও কি ঠিক তেমন-ই অনুভূতি হচ্ছে ? পরোক্ষনেই তার ভেতরের কেউ তাকে ব্যঙ্গ করে বলে উঠল , হাহ কই স্পর্শ আর কই তুই ?স্পর্শের কথা ভাবা বন্ধ কর ।ও তোকে নিয়ে ভাবা তো দূর উল্টো তোকে গাধা ভাবে ।আর ও তোকে নিয়ে ভাববে-ই বা কেন ? দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পরেছে ? এসব ভাবতেই নাফিয়ার মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল ।নিজের মনকে বারবার সাবধান করা স্বত্তেও তারপরো তার বেহায়া মনটা স্পর্শকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে চায়না ।তার মনপ্রান সব স্পর্শকেই ভাবে ।স্পর্শের কথা ভাবতেই বারবার শরীরে শিহরণ খেলে যায় ।কাল তারা সবাই কক্সবাজার যাবে ।সবাই বলতে আরদিন ভাইয়া , তার বন্ধুরা , রিয়া আপু , এমনকি তিন্নি ,তিন্নির বোন তুশি আপু , তুশি আপুর হাসবেন্ড আর সে যাবে ।কাল ভোরেই তারা রওনা দিবে ।এতদিন পর তিন্নির সাথে দেখা হবে ভাবতেই নাফিয়ার খুব খুশি খুশি লাগছে ।কতদিন দেখা হয়না মেয়েটার সাথে !
কিরে এভাবে মিটমিট করে হাঁসছিস কেন ? রিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল ।
নাফিয়া কোনো প্রত্যুত্তর করলনা । রিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
তুমি না ঘুমিয়ে পড়েছিলে ?
উহ ঘুমাইনি চোখজোড়া বুঝে ছিলাম মাত্র ।চোখ খুলে তোর দিকে তাকাতেই দেখলাম তুই মিটমিট করে হাঁসছিস সেই কখন থেকে ।এখন বল হাঁসছিলি কেন ?
নাফিয়া আমতা আমতা করে বলল , একটা কথা মনে পরেগিয়েছিল তো তাই মনে পরতেই হাঁসি পেয়ে গেল ।
রিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল , কি কথা ? বল তো আমায় শুনে আমিও একটু হাঁসি ।
নাফিয়া মুখ মলিন করে বলল তেমন কিছু না আপু ।
রিয়া ওহ আচ্ছা… বলেই চোখজোড়া বুঝল ।
নাফিয়ার মনে হচ্ছে কেন যেন রিয়া আপুর মনটা খুব খারাপ ।কালকে কক্সবাজারে যাবে অথচ আপুর মনে কোনো ফিলিংস নেই ।কক্সবাজার যাওয়ার ব্যাপারে কোনো কথাও বলেনি বরং কক্সবাজারে যাওয়ার কথা শুনে সারাক্ষণ চেহারাটা মলিন করে রেখেছে ।অথচ এই রিয়া আপু-ই কোথাও যাওয়ার নাম শুনলেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় ।কি এমন হয়েছে যার কারণে রিয়া আপুকে এমন মলিন দেখাচ্ছে ?সে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল
আপু তোমার কি মন খারাপ ?
রিয়া নাফিয়ার কথা শুনে চোখজোড়া মেলল ।সে নাফিয়ার দিকে তাকালোনা ।উপরে ঘুরন্ত ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল
কই নাতো !
নাফিয়া ম্লান হেঁসে বলল , কি হয়েছে আপু তোমার ? যেদিন থেকে শুনলে আমরা কক্সবাজার যাবো ঐদিন থেকেই তোমাকে মলিন দেখাচ্ছে ।কক্সবাজার যাওয়ার কথা শুনে তোমাকে একটুও খুশি হতে দেখেনি অথচ সেই তুমি-ই কোথাও যাওয়ার নাম শুনলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাও ? আমার ভালো লাগছেনা তোমার গম্ভীর চেহারাটা দেখতে , আমি আমার হাঁসিখুশি রিয়া আপুকে খুব মিস করছি ।কি হয়েছে ? আমায় বল প্লিজ !
রিয়া নাফিয়ার দিকে মুখ করে শুয়ে মিনমিনে গলায় বলল,
আয়ান ভাই আমায় ভালোবাসে নাফিয়া।
এই কথা শুনে নাফিয়া একটুও চমকালো না ।কারণ ঐ দিন রিসোর্টে দেখেছিল আয়ানকে রিয়ার পেছনে ঘুরঘুর করতে ।
আর তখনি সে বুজতে পেরেছিল এই আয়ান ছেলেটা তার রিয়া আপুকে ভালোবাসে ।যদিও সে শিউর ছিলনা ।এখন রিয়া আপুর কাছ থেকে কথাটা শুনে শিউর হল ।
নাফিয়া ভ্রুকুটি করে বলল এটাই মন খারাপের কারন ? তোমার যদি তাকে ভালো না লাগে তাহলে তাকে না করে দিবে সিম্পল !
উহ এর জন্য আমার মন খারাপ না ।কক্সবাজার যাওয়ার কথা শুনে মনে মনে আমিও ভীষন খুশি হয়েছি এই ফার্স্ট টাইম যাচ্ছি কিনা !কিন্তু এই খুশিটা আমি প্রকাশ করতে পারছিনা ।মনে একরাশ চিন্তা আর ভয় কাজ করছে ।কারন আমি ভয় পাচ্ছি ঐ আয়ান বজ্জাতটা যদি কক্সবাজারে গিয়েও আমার পেছন পেছন ঘুরঘুর করে ।তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ।আরদিন ভাইয়া যদি কোনোভাবে টের পেয়ে যায় তাহলে আর আমাদের কাউকে আস্ত রাখবেনা সে ।
তুমি কি ভালোবাসো আয়ান ভাইকে ?
নাফিয়ার কথা শুনে রিয়ার গাল লাল হয়ে গেল ।সে লজ্জাবতী হয়ে নিঁচুস্বরে জবাব দিল
জানিনা ।
রিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল ,
তুই খুব খুশি তাইনা ?
নাফিয়া মন মাতানো হাঁসি দিয়ে বলল ,
আমি খুব খুব খুব খুশি আপু ।এতোটা খুশি যে বোঝাতে পারবোনা তোমায় !
নাফিয়ার কথা শুনে রিয়ার কেন যেন খুব হাঁসি পেল ।সে দুষ্টু হাঁসি দিয়ে বলল
হুম হুম বোন আমার খুশি তো হবেই ।কাল কতদিন পর স্পর্শ ভাইকে দেখতে পাবে যে !
রিয়ার কথা শুনে নাফিয়া খুঁক খুঁক করে কেশে উঠল ।সে নিজেকে সামলে আমতা আমতা করে বলল,
আ…কি বলছ আপু এসব ? আমি খুশি কারন অনেকদিন পর আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড তিন্নিকে দেখতে পাব তাই।
আমায় উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই ।শোন আমি রিসোর্টে দেখেছিলাম স্পর্শ ভাইকে তোর কানে কাঠগোলাপ গুজে দিতে আবার সুইমিংপুল্ রিয়া আরো কিছু বলার আগেই নাফিয়া চমকে তড়িৎগতিতে বলে উঠল
তুমি কিভাবে দেখলে আপু ?
রিয়া কোনো জবাব দিল না ।একটা রহস্যজনক হাঁসি দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে চোখজোড়া বুজল ।আর নাফিয়া তখনো আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল রিয়ার দিকে ।
স্পর্শ প্রতিদিনকার মত আজকেও বারান্দায় বেতের চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসে সিগারেট টানছে টেবিলে পায়ের উপর পা তুলে । নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আকাশে থাকা অসংখ্য ঝিকিমিকি তারাগুলোর দিকে ।তার দৃষ্টি আকাশের তারাগুলোর দিকে হলেও তার ব্রেন আর মন অন্যদিকে ।ভেবে চলছে সে কিছু একটা ! সিগারেটের জ্বলন্ত আগুনের তাপ হাতের আঙ্গুলে পড়তেই সে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এল ।শেষ হওয়া সিগারেট টা ছুড়ে ফেলে দিল ।সিগারেটের প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট নিতে গেলেই দেখতে পেল সিগারেট সব শেষ হয়ে গেছে।রুমে গিয়ে প্রত্যেক ড্রয়ারে খুঁজেও সিগারেটের কোনো প্যাকেট পেলনা ।
নিরাশ হয়ে বারান্দায় এসে বসে পড়ল বেতের চেয়ারটায় ।তার একটা খারাপ অভ্যাস আছে যে পর্যন্ত না তার চোখজোড়া ঘুমে ভার না হবে ঐ পর্যন্ত সিগারেট টানতেই থাকবে ।সে এটা তার লাইফের একটা রুটিন ভেবে নিয়েছে ।তার রুমে আর কিছু না থাকলেও সিগারেটের প্যাকেটগুলো এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেই ।কিন্তু আজকে কিভাবে যে ভুলে গেল ? দোকান থেকে কিনে আনতে ।বিরক্ত লাগছে এই মুহূর্তে তার ।এই মুহূর্তে বিরক্তিভাবটা কাটানোর জন্য কিছু একটা চাই তার !
পরোক্ষনে কি যেন একটা ভাবতেই স্পর্শ ঠোটজোড়া প্রশস্ত করে হাঁসল ।
ফোনের স্ক্রিনে থাকা নাফিয়ার একটা পিকে স্পর্শ গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।নাফিয়ার এই পিকটা ক’দিন আগে আরদিনের ফোন থেকে নিয়েছিল ।নাফিয়ার মলিন চেহারার পিকটায় স্পর্শ আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে আনমনা হয়ে বলল
দিনকে দিন তুমি আমার এক ভয়ংকর নেশায় পরিনত হচ্ছ ।উমমম এই ফার্স্ট টাইম আমার অনুভূতিরা কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ।না চাইতেও বারবার আমার মনপ্রান আজকাল তোমার কথা-ই ভাবে ।আচ্ছা এটাকে কি বলে ?
চলবে,
@Nusrat Hossain