#মন_পাড়ায়
#পর্ব_৫১
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা
সৈকত জ্যোতির বাসায় যেয়ে বসেছিলো ড্রইংরুমে। একটি ছেলে এসে বলল,
“স্যার কিছু নিবেন?”
সৈকত হেসে বলল,
“আরে তুমি কেমন আছো? আর তোমাকে না বলেছিলাম ভাইয়া বলে ডাকবে?”
“মেডাম মানা করেছে৷ বলেছে আপনাকে ভাই বলে ডাকলে চাকরি থেকে বাহির করে দিবে।”
সৈকতের মুখটা মুহূর্তে মলিন হয়ে গেল। মানুষগুলো একটু উপার্জনের জন্য এত কষ্ট করে, আমাদের কাজগুলো করে দেয়, আমাদের জীবন সহজ করে দেয় অথচ তারা বিন্দু পরিমাণ সম্মানও পায় না। তাদের নিচু দেখাতে দেখাতে মানুষরা মনুষ্যত্বই ভুলে যায়।
সৈকত গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
“জ্যোতিকে শুধু একটু ডেকে দেও। আর কিছু লাগবে না। আর হ্যাঁ আজকের পর থেকে দেখা হলে ভাইয়া বলে ডাকবে।”
“কিন্তু মেডাম…..”
“আজ আজকের পর থেকে আর এখানে আসা হবে না তাই বললাম।”
ছেলেটা বিস্মিত দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো সৈকতের দিকে। এরপর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ-সূচক উওর দিয়ে চলে গেল। আর কিছু সময় পর এলো জ্যোতি। জ্যোতি এসেই সৈকতের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“তুমি কোথায় ছিলে এতদিন? একবারও কল ধরে আমার সাথে কথাও বলতে পারো নি?”
“সরি জ্যোতি।”
“আরে না সমস্যা নেই। আমি আসলে রাগ করি নি।”
“আমি এইজন্য সরি বলছি না।”
“তাহলে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে জ্যোতি।
“আমি…. আমি……” বারবার তার গলায় কথা আটকে আসছে। সৈকত বহু কষ্টে গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি তাই। আমি শুধু তোমার সাথে এইজন্য সম্পর্ক রেখেছি যেন প্রভা ভাবি নির্দোষ তা প্রমাণ করতে পারি। ভাইয়ার কাছে এইটা প্রমাণ করতে পারি যে বিনয় ভাইয়া আর নূহার সম্পর্ক ছিলো।”
সৈকত কথাগুলো এক নিশ্বাস বলে তাকাল জ্যোতির দিকে। তার মুখটা রাগান্বিত দেখাচ্ছে কিন্তু সে যতটা ভেবেছিল ততটা না।
জ্যোতি জিজ্ঞেস করল,
“তাহলে প্রমাণ পেয়েছ? এবার তাহলে আমার জীবন থেকে চলে যাবে?”
সৈকত কেশে তার গলা পরিষ্কার করে বলল,
“আমি বিবাহিত জ্যোতি। ঝিনুকের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সাত মাসের মতো হবে।”
চকিতে জ্যোতি তাকায় সৈকতের দিকে। উঠে দাঁড়িয়ে সাথে সাথে এক চড় মেরে বসে সৈকতের গালে। চেঁচিয়ে উঠে,
“আমাকে কী মনে হয় তোমার? আমি কোনো খেলনা যে দুইবছর নিজের স্বার্থের জন্য খেলে ফালিয়ে দিয়েছ?”
সৈকত মাথায় নিচু করে রেখেই বলল,
“আমি জানি জ্যোতি আমার ভুল হয়েছে। তোমার সাথে অন্যায় করেছি আমি।” আবার মাথা তুলে তাকায় জ্যোতির দিকে। বলে, “কিন্তু এতে অধিকাংশ অবদান তোমারও আছে।”
“আমার!”
“তুমি জানতে তোমার বোনের মানসিক সমস্যা আছে, তুমি জানতে তোমার বোন অর্ক ভাইয়াকে ধোঁকা দিচ্ছে সাথে একটা সংসার নষ্ট করছে, তুমি জানতে যে নূহা আর বিনয় ভাইয়ার মৃত্যুর পিছনে প্রভা ভাবি কিছু করে নি। জানতে না? তুমি জানতে যে প্রভা ভাবির হাত নেই বিনয় ভাইয়া ও নূহার মৃত্যুর পিছনে তবুও তুমি কিন্তু তবু্ও যখন ভাবির উপর আরোপ লেগেছিল তুমি তখনও কিছু বলোনি। কেন জ্যোতি কেন? শুধু তোমার বোনের কথাই চিন্তা করলে? অন্যকারো জীবনের মূল্য নেই তোমার কাছে?”
জ্যোতির মুখে বিন্দু পরিমাণ সংশয় দেখা গেল না। সে আগের সুরেই বলল,
“কারণ আমি যখন রাতে অসুস্থ থাকতাম তখন মানুষ এসে আমাকে দেখতো না, যখন আমি
না খেয়ে ঘুমাতাম বা কাঁদতাম তখন মানুষ এসে আমার পাশে বসতো না, যখন আমি একা রাতে ভয় পেতাম তখন কেউ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো না, যখন আমার মা ছয় বছরের আমাকে ফেলে অন্য লোকের সাথে চলে গিয়েছিল তখন মানুষ এসে আমার যত্ন নেয় নি। শুধু আমার আপু নিয়েছে। মানুষ শুধু কথা শুনিয়েছে। এইজন্য আমি মানুষের কথা চিন্তা করা ছেড়ে দিয়েছি। আমার জীবন ঘিরে শুধু ছিলো আমার বোন ও বাবা। আর তুমি যুক্ত হলে কিন্তু তুমি….. আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আমি জানতাম তবুও তোমাকে কখনো কিছু বলি কি কিন্তু তুমি তো আমাকে ধোঁকা দিচ্ছিলে।”
“তোমার বোনও তো ধোঁকা দিয়েছে আমার ভাই ও ভাবিকে। ভাবি কত কিছু সহ্য করেছে তুমি জানো? তোমার এখন যে কষ্ট লাগছে না তা হাজারোগুণ বেশি করো। এর মধ্যে আবার তার উপর দুইটা খুনের আরোপ লেগেছিলো। তুমি বুঝতে পারছ তার সাথে তার দুইটা বাচ্চার জীবন নষ্ট হয়ে যেত।”
“ওই মেয়ের জন্য আমার বোন মারা গেছে। নূহা আপু বিনয়কে ভালোবাসতো, প্রভা কেন আমার বোনের খুশির মাঝে আসছে?”
সৈকত এবার উঠে দাঁড়িয়ে উঁচু স্বরে বলে,
“ভাবি মাঝে এসেছে? আর ইউ সিরিয়াস? তোমার বোন একটা বিবাহিত পুরুষের সাথে সম্পর্ক করেছে। এটাকে পরকীয়া বলে। আফসোস এই পৃথিবীতে দেহের খুন করার শাস্তি তো আছে। আত্নার খুনের শাস্তি নেই। শাস্তি থাকলে…….”
জ্যোতি সৈকতের কথা কেটে বলল,
“শাস্তি থাকলে তুমিও শাস্তি পেতে।”
কথাটায় সৈকত একটুখানি সময় চুপ করে থাকলো। তারপর বলল,
“আমি জানি আমি তোমার সাথে ভুল করে এইজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”
“তোমার এই ক্ষমা দিয়ে আমি কী করব? যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ তোমার লাইফ আমি হেল করে ছাড়ব। নাউ গেট লোস্ট।”
সৈকত একটু সময় সেখানেই স্থির থেকে কিছু একটা ভাবলো। তারপর বলল,
“তুমি তোমার সে বোনকে নিয়ে এতকিছু করেছ কিন্তু তোমার সেই বোন তোমার উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিলো।”
“আপু অসুস্থ ছিলো তাই এমন করেছ। মেন্টাল ডিসওর্ডার ছিলো আপুর। আপু কত কষ্ট করেছে তুমি জানো? আমাদের অতীত কত জঘন্য ছিলো তা বুঝতে পারবে? মা আমাদের ছোট বেলায় ফেলে চলে গেছে। বাবার কাছে আমাদের খোঁজ নেবার জন্যও সময় হতো না। প্রতি রাতে দেখতাম বাবা একেক মেয়েকে এনে তার রুমে যাচ্ছে। এদিকে আমরা না খেয়ে বসে থাকলেও তার হুস নেই। এতটুকু বয়সে কখনো এইসব সহ্য করেছ? এতকিছু সহ্যের পর তোমার মনে হয় মনে কারও জন্য মায়া-দয়া বাকি থাকে? মন পাথর হয়ে যায়।”
সৈকত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সবার জীবনেই কষ্ট থাকে জ্যোতি। কিন্তু আমি বুঝি ছোটবেলার কষ্টগুলো যে মস্তিষ্কে ও হৃদয়ে গভীর ছাপ ছেড়ে যায়। তুমি কি অবস্থায় জীবন পাড় করেছ হয়তো আমি ভাবতেও পারব না কিন্তু আমাদের অতীতে নয় বর্তমানে বাঁচা উচিত। তুমি এত খারাপ না যত দেখাও শুধু নিজের চিন্তাভাবনাটা পাল্টাও। আবারও বলছি পারলে মাফ করে দিও আসি।”
সৈকত বেরিয়ে আসার পর জ্যোতি সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তার চোখে তখনও বিন্দুমাত্র জল ছিলো না। সে তার রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে। নিজের চুল টেনে ধরে হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে আর নিজের রুমের জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। ভাঙচুর করতে শুরু করে রুমের কাঁচের জিনিস।
সৈকত জ্যোতির বাড়ির বাহিরে এসে মোবাইল বের করে রেকর্ডিং অফফ করল। আর তা এডিট করে প্রথম ও শেষের কথোপকথন কেটে দেয়। যদিও সে এখানে এসেছিলো শুধু মাফ চাইতেই কিন্তু যখন ড্রইংরুমে বসে সে জ্যোতির অপেক্ষা করছিলো তখন তার মাথায় এলো অর্ক হয়তো শুধু নূহার রোগ জেনে বিনয় ও নূহার সম্পর্কের কথা বিশ্বাস নাও করতে পারে। তাই সব রেকর্ড করে রেখেছিল। সাথে সাথে নূহার রোগ সম্পর্কে লিখে সাথে এই রেকর্ডিং পাঠিয়ে দিলো।
.
.
অর্ক তার কেবিনে বসে বেখেয়ালিভাবেই চিঠিগুলো দেখছিলো। আর তার বুকের ভেতর বইছিলো অজস্র অগ্নি ঢেউ। তার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে তিনটি মানুষকে তার জীবনে এতটা শ্রেষ্ঠ স্থান দিয়েছে সে মানুষগুলোই যেন অচেনা। তার বাবা, বিনয় ও নূহা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো আর আজ তাদের চেনাটাও যেন জটিল। বিনয় ও নূহা তার সাথে এত জঘন্য কাজ করতে পারলো? এই তার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার পরিণাম। সবাই কী এমন বিশ্বাসঘাতক এই পৃথিবীতে?
হোয়াইটস এপ-এ মেসেজ এলো অর্কের ফোনে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সৈকতের মেসেজ। সাথে সাথে সে ফোনটা হাতে নিলো। সৈকত তাকে ব্লক করে রেখেছিলো তাই সৈকতের মেসেজ পেয়ে সে ব্যাকুল হয়ে পড়লো। সে সাথে মেসেজে যেয়ে দেখে প্রথম মেসেজটা হলো নূহার অসুস্থতা নিয়ে তা একটু পড়ে সে ভয়েস রেকর্ডিং চালু করলো।
‘তুমি জানতে তোমার বোনের মানসিক সমস্যা আছে, তুমি জানতে তোমার বোন অর্ক ভাইয়াকে ধোঁকা দিচ্ছে……… ”
রেকর্ডিং শোনার পর সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সৈকতকে কল দিলো কিন্তু সৈকত তা ধরলো না। পরিবর্তে মেসেজ দিলো,
“আমি ভালো আছি। দয়া করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। নিজের পথ নিজে তৈরি করার চেষ্টা করছি আমি, পিছুটান রেখে আটকাবে না। আর একটা জিনিস চাইব, ঝিনুক আজ তোমাকে জ্যোতির কথা জিজ্ঞেস করবে। ওকে এই রেকর্ডিং শোনাবে। থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া, ফর এভরিথিং। আর সরি তোমার মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমি আজ পর্যন্ত আমার জন্য এতকিছু করলে অথচ তোমার সাথে আমি কতই না দুর্ব্যবহার করলাম। আর শোনো, যেদিন আমি তোমার মতো নিজের পরিচয় তৈরি করব সেদিন আমরা আবার একসাথে ভায়োলিন ও পিয়ানো বাজাব। যদিও পিয়ানো বাজানোর কিছুই মনে নেই তবুও, হাহা-হা । তোমার দোয়া সবসময় সাথে রেখো ভাইয়া। আমি চাই না যে তুমি আমার জন্য আমার পথ সহজ করো, আমি চাই সে কঠিন পথে তুমি আমাকে সাহস দিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলো যে ‘পথ কঠিন হোক কিন্তু তবুও তুই তোর লক্ষ্য জয় করতে পারবি। এগিয়ে যা।’ ওহ হ্যাঁ শেষ কথা, আমি আমার জীবনে হয়তো সবচেয়ে বেশি তোমাকে ভালোবাসি নি কিন্তু তোমাকে ও প্রভা ভাবিকে সবচেয়ে বেশি সম্মান করেছি। ধন্যবাদ ভাইয়া, আমার জীবনটা এত সুন্দর করার জন্য।”
অর্কের চোখদুটো সিক্ত হলে এলো আর হৃদয়ে ছেলে গেল উষ্ণতা। আজ এত বছর পর সৈকত তাকে ভাইয়া ডেকেছে!
সে মৃদু হাসলো সে ফোনের দিকে তাকিয়ে। মৃদুস্বরে বলল,
“না সবাই বিশ্বাস নিয়ে খেলতে জানে না। যে আপন সে কখনো তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলবে না, যদি কেউ তোমার বিশ্বাস নিয়ে খেলে তাহলে ভেবে নেওয়া উচিত সে কখনোই তোমার আপন ছিলো না।”
.
.
রাত তখন ১১.৩০। বাসায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রভা দরজা খোলার পর থেকে শব্দ করছে না। বারবার উঁকি মেরে দেখছে তা ভালোভাবেই খেয়াল করল অর্ক। সে হেসে বলল,
“কী দেখছ এভাবে?”
প্রভা বাচ্চাদের মতো মাথা ডানেবামে নাড়িয়ে বলল,
“কিছু না তো।”
অর্ক প্রভার বাহু ধরে এক টানে তার কাছে নিয়ে এলো। দুই হাত প্রভার পিঠে জড়িয়ে তাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে বলল,
“কিছু তো আছে। না বললে ছাড় নেই।”
“কী করছেন? বাচ্চারা অথবা বাবা দেখলে কী ভাববে?”
“ভাববে বউটা আমার কথা মানে না।”
কথাটাতেই লালিমা মেখে গেল প্রভার মুখখানায়। সে মাথা নিচু করে বলল,
“আপনি রাগ করবেন ভেবে জিজ্ঞেস করি নি। খেয়ে এসেছেন?”
“না। তুমি খেয়েছ?”
প্রভা মাথা উঁচু করে তার থুতনি অর্কের বুকে ঠেকিয়ে বলল,
“না।”
সাথে আয়াথে অর্ক প্রভাকে ছেড়ে দিলো। পিছিয়ে যেয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল,
“খাও নি কেন? তোমার শরীর খারাপ করার ইচ্ছা আছে?”
প্রভার মুখ মুহূর্তে ম্লান হয়ে গেল। সে বলল,
“আপনিও তো খান নি।”
“আমি সারাক্ষণ অফিসে এক কেবিনে বসে কাজ করি আর তুমি সারাটাদিন এই ঘরে থেকে রান্না কর, ছোট বড় সবকিছু জায়গায় আছে কি’না আর পরিষ্কার কি’না খেয়াল রাখো, বাচ্চাদের পিছনে দৌড়াদৌড়ি করো সাথে সবার খেয়াল রাখছ তা তো আছেই। এখন কার বেশি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা উচিত? তুমি অসুস্থ হলে আমার বাচ্চা দুইটার কী হবে? আমার কী হবে? তোমাকে আমি আগে বলেছি না যে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে?”
প্রভা বুঝতে পারলো না এই মুহূর্তে তার ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছে। একবার কান্না আসছে বেশ অর্কের রাগ দেখে আবার খুশিও লাগছে তার যত্ন দেখে।
সে চিকন সুরে বলল,
“আমার আপনার অপেক্ষা করতে ভালো লাগে।”
অর্ক বলল,
“সোজা রুমে যেয়ে বসে থাকবে।”
“কেন?”
“যেতে বলেছি।”
ধমকটা খেয়ে প্রভা এক দৌড় দিলো রুমের দিকে। বিছানায় বসে রইলো।
অর্ক খানিকক্ষণ পর এক বড় প্লেটে ভাত ও তরকারি নিয়ে এলো। ভাত মাখিয়ে প্রভার দিকে খাবারের লোকমা এগিয়ে দিলো। প্রথমে প্রভা একটু অবাক হলো অর্কের এমন কান্ডে কিন্তু পরক্ষণেই তার ঠোঁটের কোণে এঁকে এলো মুচকি হাসি। সে খাবার খেয়ে নিতেই অর্ক বলল,
“আমিও ক্ষুধার্ত খাইয়ে দিবে না?”
প্রভাও হেসে যেয়ে হাত ধুয়ে এসে একই প্লেট থেকে খাইয়ে দিলো অর্ককে।
প্রভা অর্কের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখছিল। অর্ক গেছে শাওয়ার নিতে। অর্কের এই এক বাজে অভ্যাস সে রাতে গোসল করে ঘুমায়। অর্ক বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে প্রভা আলমারির কাছে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছে। অর্ক তার দিকে এগোল। প্রভা আলমারি লাগিয়ে পিছনে ঘুরতেই সে জোরে তার মাথা নাড়ালো আর প্রভার মুখখানি ভরে গেল জলের ছিটায়। প্রভা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো অর্কের দিকে৷ কিছু বলতে যাবে আর অর্ক আলমারিতে হাত রেখে প্রভার দিকে ঝুঁকে এলো। তার মুখোমুখি হয়ে আঙুল দিয়ে তার গাল ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি জানো তুমি আমার করা সবচেয়ে সুন্দর ভুল।”
কথাটা শুনতেই প্রভার মুখ এক মুহূর্তের জন্য মলিন হয়ে গেল অতীতের কিছু কথা মনে করে। পরক্ষণেই সে মৃদু হেসে অর্কের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“আর আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে উওম সত্য।”
অর্ক অন্যহাত দিয়ে প্রভার কোমর জড়িয়ে ধরে এক টানে তাকে কাছে টেনে নিলো। প্রভার খোলা কৃষ্ণকেশে নাক ডুবিয়ে বলে,
“প্রভা….”
প্রভা অর্কের উষ্ণ নিশ্বাসের অনুভূতিতে কেঁপে উঠছে বারবার। সে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে অর্কের গেঞ্জিটা।
তার নিশ্বাস ভারী হতে থাকে তার উন্মুক্ত কোমরে অর্কের ছোঁয়ায়।
আর অর্ক মাতাল হতে থাকে প্রভার মাতোয়ারা ঘ্রাণে। সে এই নেশায় আসক্ত হয়েই আনমনেই বলে দেয়,
“ভালোবাসি…..ভালোবাসি প্রভা। বহু বছর ধরে তোমায় ভালোবাসি আর সারাজীবন তোমাকেই ভালোবাসতে চাই।”
#মন_পাড়ায়
#পর্ব_৫২
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা
“ভালোবাসি…..ভালোবাসি প্রভা। বহু বছর ধরে তোমায় ভালোবাসি আর সারাজীবন তোমাকেই ভালোবাসতে চাই।”
কথা বলে অর্ক নিজেই চমকে গেল। তার মতে এখন এইসবের সঠিক সময় না। যদি প্রভা তাকে ভুল বুঝে অথবা রাগ হয়?
অর্ক আশঙ্কা নিয়ে মুখ তুলে তাকায় প্রভার দিকে। প্রভা স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“বহুবছর?”
অর্ক উত্তর দিলো না। নিজের উপর রাগ উঠছে তার।কেন সে কথাটা বলতে গেল। বিনয় তার উপর জেদ করে প্রভার সাথে বিয়ে করেছে তা প্রভা জানতে পারলে কষ্ট পাবে। হোক বিনয় শত খারাপ কিন্তু প্রভার ভালোবাসা সে। আর অর্ক অনুভব করতে পারে সে আজও কোথাও না কোথাও বেঁধে আছে আগের সে ভালোবাসার বাঁধনেই।
অর্ক প্রভার কাছ থেকে দূরে সরে বিছানার কাছে যেয়ে বলল,
“রাত হয়েছে তাই না? আমাদের ঘুমিয়ে পড়া উচিত।”
“সেদিন রাহানও এমন কিছু বলেছিলো তাই না?”
প্রভার প্রশ্ন শুনে অর্ক চোখ বন্ধ করে নিলো। সে চেয়েছিল মেয়েটাকে তার অতীত থেকে দূর রাখতে। সে অতীতের কষ্টগুলো থেকে দূর রাখতে কিন্তু আফসোস তা কোনোভাবেই হয় না। মাঝেমধ্যে তার মনে প্রশ্ন আসে, অন্যকেউ কী প্রভাকে তার থেকে বেশি খুশি রাখতে পারতো না?
প্রভা আবারও জিজ্ঞেস করল,
“উওর দিলেন না যে? রাহান ওদিন যা বলেছে সবই স্মরণে আছে আমার। এতদিন শুধু ঘরের এমন অবস্থায় কিছু জিজ্ঞেস করি নি।”
“অতীতের কথাগুলো না টানলে হয় না। অতীত তো চলেই গেছে।” অর্কের কন্ঠে অসহায়তা।
প্রভা বলল, “অতীত চলে যেতে পারে মনের প্রশ্ন নয়।”
অর্ক গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
“তোমাকে আমি বলেছিলাম এক মেয়ের কথা? আমার প্রথম ভালোবাসার কথা? আমার সে প্রথম ভালোবাসা তুমি ছিলে।”
প্রভা অবাক হলো আবার হলোও না। রাহানের সেদিনের কথায় সে এতটুকু আন্দাজ করতে পেরেছিলো যে অর্ক তাকে আগে থেকে পছন্দ করতো। কিন্তু ভালোবাসতো? এই কথা সে কখনো ভাবে নি। যে মেয়েটাকে আজও ভালোবাসার কথা অর্ক ক’দিন আগে বলেছি সে নিজে প্রভা ছিলো?
বুকের ভেতর যে তীক্ষ্ণ বেদনার আভাস ছিলো তা মিথ্যে ছিলো?
প্রভা নিঃশব্দে যেয়ে বসলো অর্কের পাশে। মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল,
“ক’বছর ধরে?”
“তেরো বছর।”
চকিতে প্রভা তাকায় অর্কের দিকে। তার চোখে ভয়ানক বিস্ময়। সে বিস্মিত সুরে বলে উঠে,
“কীভাবে?”
অর্ক তাকায় না প্রভার দিকে। আনমনে অন্যকোথাও দৃষ্টি আবদ্ধ করে বলে,
“ছিলো এক চমৎকার সকাল। বছরের প্রথম দিনে তোমার হাসির দর্শনে আমি আমার জীবনের দর্পন দেখেছিলাম। আমি তোমার সেদিন থেকে চারবছরে শুধু চারদিন দেখেছিলাম অথচ সারাটা জীবন সে হাসিটি আমার চোখের সামনে ভাসতো। আজও ভাসে। আমি নিদ্রার রাজ্য থেকে বের হতেই সর্বপ্রথম সে হাসিটি আমার দিন সুন্দর করে তোলে।”
“আপনি চারবছর ধরে শুধু আমাকে চারদিন দেখে ভালোবেসেছেন! কীভাবে সম্ভব?”
অর্ক তাকাল প্রভার দিকে। বলল,
“ভালোবাসা তো কোনো তিথি দেখে হয় না প্রভা। ভালোবাসা কার, কখন, কীভাবে হয় কেউ বলতে পারে না। আর সত্যি বলব? তখন আমি তোমাকে যতটা ভালোবাসতাম শুধু সে হাসিটার জন্য আর আজ ভালোবাসি সম্পূর্ণ তোমার জন্য। আজ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমি কেন তোমাকে ভালোবাসি তাহলে হয়তো আমার কাছে উওর হবে না অথবা এতগুলো উওর হবে যা শেষ হবে না।”
অর্ক এক মুহূর্তের জন্য থেমে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কী আমার উপর রাগ করেছ?”
“রাগ করব কেন?”
“তোমাকে ভালোবাসি যে তাই। তুমি কখনো চাইতে না আমি তোমায় ভালোবাসি।”
প্রভা অদ্ভুতভাবে হেসে বলল,
“তখন আর এখনের মাঝে অনেক পার্থক্য মিঃ অর্ক। আমি চাই আপনি আমাকে ভালোবাসেন এবং আমাকে নতুন করে ভালোবাসা শেখাতে পারেন।” হঠাৎ করে ভেজা হয়ে এলো প্রভার কন্ঠ,
“আমি না…..আমি কখনো চাই নি আবার কাউকে ভালোবাসতে। আমি হাজার নিজেকে বুঝাতাম যে বিশ্বাস মানুষের উপর ভাঙে সম্পর্কের না। কিন্তু ভালোবাসাটা একবার ভাঙলে তা যে জোরা লাগানো যায় না। ভয় লাগতো। যদি আবার যে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়? যদি আবার….আবার নিজের আত্নার টুকরোগুলোকে সামলাতে না পারি? যদি আবার মরতে ইচ্ছে হয় তখন…..”
কথাটা প্রভা সম্পূর্ণ করতে পারলো না। এর পূর্বেই অর্ক প্রভার বাহু ধরে টান দিয়ে তার কাছে এনে বলল,
“এইসব কথা ভুলেও কখনো মুখে আনবে না প্রভা। তুমি আমার থেকে দূরে থাকো আমি সহ্য করতে পারব কিন্তু মৃত্যুর কথা ভুলে মুখেও আনবে না।”
প্রভা অর্কের চোখে থেকে চোখ সরাতে পারলো না। অর্কের চোখজোড়া সিক্ত। অর্কের চোখে তার জন্য জল? মানুষটা না সহজে কারও জন্য কাঁদে না?
আসলে এতটা ভালোবাসে মানুষটা? যদি প্রভার জীবনে কখনো বিনয় নামক মানুষটা না আসতো তাহলে কী অর্কই হতো তার প্রথম ভালোবাসা?
আর এই পোড়াকপালে কতগুলো দুঃখের পর মানুষটা জুটলো। সে নিজে কখনো কি পারবে আবার ভালোবাসবে? খুব করে চায় যে। খুব করে চায় আবার ভালোবাসতে, অর্ককে ভালোবাসতে। পারবে কী? পারবে সে অতীতের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে? পারবে আবার ভালোবাসতে?
অর্ক প্রভার গালে হাত রেখে বলল,
“আমি শুধু চাই তুমি আমার পাশে থাক। ভালোবাসার দাবি আমি তোমার থেকে কখনো চাইব না।”
প্রভা অর্কের সে হাতের উপর হাত রেখে জোরপূর্বক হাসলো। তবে কিছু বলল না।
অর্ক প্রভার কপালে এক ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলল,
“ঘুমিয়ে যাও। সকালে আবার বিনু ও অদিনের স্কুল আছে।”
“আপনি ঘুমান আমি লাইট অফফ করে আসি।”
প্রভা বাতি বন্ধ করে বিছানায় এসে বসে। একপলক অর্কের দিকে তাকিয়ে আবার তাকাল নিজের পায়ের দিকে। ছোট এক নিশ্বাস ফেলে পায়ে পরা নুপুরটা খুলে রাখলো। আজ প্রথম এই নুপুরটা খুলেছে সে। তাও সারাটা জীবনের জন্য। ভীষণ স্বাধীন লাগছে তার নিজেকে। মনে হচ্ছে বড় কোনো এক জঞ্জাল থেকে আজ মুক্তি পেয়েছে সে। এইটা যেন সুন্দর নুপুর নয় যেন শিকল ছিলো এই জীবনের। সে উঠে এক টেবিলের ড্রয়েরে রেখে দিলো নুপুরটা। রেখেই মৃদু হাসল। বিছানার কাছে এসে মৃদু নীল আলোয় সে দেখে অর্ক তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে হেসে জিজ্ঞেস করল,
“ঘুমান নি?”
“তুমি কী করছিলে?”
“অতীতের বাঁধন থেকে মুক্তি নিচ্ছিলাম যেন বর্তমানটা ভালো লাগে। কিন্তু অবাক কান্ড হলেন আমার অতিরিক্ত ভালো লাগছে।”
অর্ক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রভার দিকে। হাতের ইশারায় বলল কাছে আসতে। প্রভা বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করল,
“কিছু বলবেন?”
অর্ক কিছু বলল না, শুধু একটানে ভরে নিলো প্রভাকে নিজের বুকের মাঝারে।
প্রভা একটুখানি হকচকিয়ে যায় প্রথম প্রথম। এরপর বলে,
“আমার দুর্ভাগ্য আমি আপনাকে এখনো ভালোবাসতে পারি নি কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনার সাথে মনের কোনো সম্পর্ক নেই আমার। এই মন পাড়ায় মায়ানগরীটাই আপনার।”
অর্ক মৃদু কন্ঠে বলল,
“এতটুকুই আমার জন্য বহুত।”
.
.
সকালে অর্ক নাস্তার জন্য বসবে আর তখনই নিজের বাবাকে নাস্তা করতে দেখে উল্টো পথ ধরলো। অর্কের বাবা ডাক দিলো,
“অর্ক বাবা তোমায় যাচ্ছ?”
“অফিসে।”
“নাস্তা করে নেও। তারপর আমরা একসাথে যাব।”
“আপনার সাথে যাওয়ার আমার আর ইচ্ছা নেই।”
অর্ক যেতে নিলেই পিছন থেকে অদিন দৌড়ে এসে তার পা জড়িয়ে ধরে। অর্ক নিচে তাকিয়ে দেখে অদিনকে কোলে তুলে বলে,
“গুড মর্নিং প্রিন্স।”
অদিন অর্কের মুখের ওপর আঙ্গুল তুলে বলে,
“নো গুড মর্নিং। প্রিন্স রাগে আছে।”
“কেন? আমার প্রিন্স রাগে আছে কেন?”
“কেউ নিজের পাপার সাথে এভাবে কথা বলে? ব্যাড ম্যানারর্স। এক্ষুনি দাদুভাইকে সরি বলো।”
“আচ্ছা বাবা পরে……”
অদিন উঁচু স্বরে বলল,
“এক্ষুনি।”
“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।”
“তোমার বাবাকেই তো সরি বলতে বলেছি।”
অর্ক অদিনকে একটা চেয়ারে বসিয়ে তার বাবার দিকে তাকালো। একটু কেশে বলল,
“সরি।”
“গুড বয়। এখন চুপচাপ খেতে বসো।”
অদিন আদেশের সুরে বলল। আবার অর্কের দাদুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“দাদু এইবার তুমি হ্যাপি তো?”
অর্কের বাবা উওর দিলেন না। অর্ক তার বাবার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
“দেখেছেন আপনি যে বাচ্চাদের দুইদিন আগে হোস্টেলে পাঠানোর কথা বলেছেন তারাই আজ আপনার চিন্তা করছে। সৈকতও আপনাকে কম ভালোবাসতো না। আপনি কবে বুঝবেন বাবা আপনি আপনজনদেরকেই নিজের থেকে দূর করছেন শুধু।”
ইতিমধ্যে ভাদ্র ও বিনুকে নিয়ে এলো প্রভা। দুইজনকে দুই চেয়ারে বসে খাবার প্লেটে দিচ্ছিল। ভাদ্র সৈকতের কথা শুনে উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“সৈকত! সৈকত আসবে ভাইয়া? মাও আসবে?”
বলেই হাত তালি দিতে শুরু করলো। আবার পাশে বসা বিনুকে বলল,
“সৈকত আসলে আমরা অনেক খেলব।”
অর্ক কিছু মুহূর্ত অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তারপর তার বাবার দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,
“আমাদের ভাদ্রের ব্যবহার বাচ্চাদের মতো। এমনকি অদিন থেকে বেশি বাচ্চামি করে আর ওকে বিয়ে করাতে চাচ্ছেন আপনি? এর দ্বারা শুধু অঞ্জলির না আমাদের ভাদ্রের জীবনও নষ্ট হয়ে যাবে। আপনার কী মনে হয় ও বিয়ের মতো একটা সম্পর্কের ভার নেওয়ার যোগ্য? যা যেমন চলছে তেমন চলতে দিন। এতগুলো জীবন নষ্ট করেন না। যদি ওর চিন্তা করে এইসব করছেন তাহলে বুঝে রাখুন ভাদ্রের জন্য ওর দুইটা ভাই আছে। আর সৈকত সেদিন শুধু অঞ্জলি আর ওর মা’য়ের জন্য আপনার সাথে ঝগড়া করে নি। ভাদ্রের জন্যও করেছে। সৈকত আপনার ও আমার থেকে বেশি ভালোবাসে ভাদ্রকে। সেদিন আপনি ভুল ছিলেন বাবা, আপনি ভুল ছিলেন।”
বলেই উঠে দাঁড়ায় অর্ক। প্রভা বলল,
“নাস্তা….”
“আমি অফিসে নাস্তা করে নিব। ওদের ঠিক মতো খাইয়ে দেও।”
বলেই অর্ক বেরিয়ে পড়ে।
.
.
ঝিনুক ঘুম থেকে উঠে সকাল দশটায়। তাও ফোনের শব্দে। চোখ খুলে দেখে অঞ্জলির ফোন। সে ঘুম ঘুম চোখেই ফোন রিসিভ করে।
“হ্যালো ঝিনুক…….”
“হুঁ।”
“আজ দুপুরে ফ্রী আছিস? অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।”
“তোকে আবার বিয়ের কথা বলেছে না’কি?”
“তেমন কিছু না। তুই আয় তারপর জানবি। কারও সাথে দেখা করাব। বারোটায় ভার্সিটিতে থাকবি।”
উওর না শুনেই অঞ্জলি কল কেটে দিলো। ঝিনুকও আর কল দিলো না। ফোনটা পাশে রেখে আবার চোখ বন্ধ করতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো। সকাল দশটা বাজে অর্থাৎ তার দুলাভাই চলে যেতে পারে বাসা থেকে। সে গতরাতে দুইটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলো বলে সময়ের হুশই ছিলো না। সে দৌড়ে গেল প্রভার রুমে। সেখানে কেউ-ই ছিলো না। সে রান্নাঘরে প্রভাকে যেয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আপু দুলাভাই কী চলে গেছে?”
“সে তো সাড়ে সাতটায় অফিসে চলে গেছে। কি কাজ চলছে তাদের। কেন রে?”
“আপু তোমার ফোনটা দাও। আমার ফোনে টাকা নেই।”
“আমার রুমে আছে। ড্রেসিং টেবিলের উপর।”
ঝিনুক আবারও সে রুমে যেয়ে আপুর ফোন নিয়ে অর্ককে কল দিয়ে বলে যে সে অর্কের সাথে দুপুর তিনটায় দেখা করতে আসবে। ফোনটা রাখতে যেয়ে পারফিউমের বোতলের নিচে একটা ছবি পেল সে। ছবিটা কাছে নিয়ে দেখে সে একটা ছবি দেখলো। ছবি দেখেই বুঝা যাচ্ছে ছবিটা অনেক বছর আগের। ছবিতে তিনটা মেয়ে ও দুইটা ছেলে বসা। যেখানে তার মা-ও আছে। ঝিনুক কিছু না বলে ছবিটা রেখে চলে গেল সেখান থেকে।
ঘুমাই লাই ছাড়ানোর জন্য গোসল করে নিলো। এরপর নাস্তা ও কফি নিয়ে বসলো। কাল রাত পর্যন্ত সৈকতের সাথে দেখা করবে বলে তার মন বেশ ফুরফুরে ছিলো কিন্তু সকালে তার মা’য়ের ছবিটা দেখার পরপরই তার মেজাজ বিগড়ে গেল।
ঝিনুক রুটি এক টুকরো করে মুখে নিতে যাবে তখনই আবার ছবিটা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সে খাবার প্লেটে রেখে দৌড়ে যায় আবার প্রভার রুমে। তার মাঝে অস্থিরতা। সে ছবিটা নিয়ে আবার দেখল। কাঁপছিল সে রীতিমতো। তার চোখদুটো বড় বড় হয়ে আছে। সে ছবিটা নিয়ে প্রভার কাছে গেল।
প্রভা রান্না করছিলো। ঝিনুক দৌড়ে এলো তার কাছে। সে বলল,
“আপি…আপি….”
প্রভা বলল, “বল সোনা শুনছি।”
“এদিকে তাকাও।”
“রান্না করছি তো। তরকারি পুড়ে যাবে তুই বল।”
ঝিনুক খালি হাতেই তরকারির কড়াই নিচে নামিয়ে রেখে বলল,
“এবার শুনো।”
প্রভা ঝিনুকের কান্ড দেখে বাকরুদ্ধ। সে ঝিনুকের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“তুই পাগল হয়ে গেছিস না’কি? কত গরম ছিলো কড়াইটা। দেখি হাত দেখা।”
“আপি এই ছবি আগে দেখো। খালামণি বলেছিলো আমার….আমার মা আর বাবা বন্ধু ছিলো তাই না? এখানে আছে সে?”
প্রভা মলম আনতে যেতে নিলেই ঝিনুক আবার উঁচু স্বরে বলল,
“আপি আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি। বলো এখানে আছে না’কি?”
“তোর হাতে…..”
“বাদ দেও আমার হাত। তুমি বলো….বলো না আমার বাবা আছে এইখানে?”
বলতে বলতে কেঁদেই দিলো ঝিনুক। তার কন্ঠের কম্পনে প্রভার নিজের বুকের ভেতরটাও ছ্যাত করে উঠলো। সে বলল,
“সম্ভবত। খালামণি সবসময়ই এই ছবি রাখতেন নিজের কাছে। ছবিটা দেখে কাঁদতেন। ওই লোককে আমরা কেউ কখনো দেখি নি। কিন্তু এই দুইজনের মধ্যে থাকতে পারে।”
কথাটা শোনা মাত্রই ঝিনুক দৌড় দিলো। প্রভাও গেল তার পিছনে। নিজের রুমের থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হতে নিলেই প্রভা তার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
“এসে বলব আপি। এখন থামানোর চেষ্টা করো না প্লিজ।”
চলবে…….
[