ভার্সিটিতে এসেই র্যার্গিং এর খপ্পরে পরল ইশফা।ইশফার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলা হয়েছে তাকে সেটা দিয়ে আসতে।ইশফা কোন ঝামেলায় পরতে চায় না।তাই সে চিরকুট টা নিয়ে গুটিগুটি পায়ে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেল।
ছেলেটা উল্টোদিকে ঘুরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল।ইশফা পিছনে গিয়ে দাড়াতেই ছেলেটার কল আসায় ছেলেটা কথা বলতে বলতে উঠে একটু দূরে চলে গেল।ছেলেটার বন্ধুরা ইশফাকে ওদের সামনে দাড়াতে দেখে ইশফার দিকে সন্দিহান চোখে তাকালো।ইশফা কোন কথা না বলে চুপচাপ সেখানেই দাড়িয়ে রইল।
—এই যে মিস বোরখাওয়ালী কিছু বলবে?
বন্ধুদের থেকে এলি নামের মেয়েটি ইশফাকে গম্ভীর হয়ে কথাটা বলল।
ইশফা তোতলাতে তোতলাতে বলল….
—আ..সলে এই চি..রকুট টা সি..নিয়র আ..পুরা ঐ ভা..ইয়াকে দি..তে ব..লেছে।(ছেলেটিকে ইশারা করে)
ইশফার কথা শুনে সবাই উচ্চ স্বরে হেসে দিল।হাসতে হাসতে শিপন ইশফাকে ব্যঙ্গ করে তুতলিয়ে বলল….
—তু..মি ঐ ভা..ইয়াটাকে চি..রকুট দিতে এ..সেছো।তা কো..থায় চি..রকুট আমাদেরকেও এ..কটু দেখাও।দে..খি কি লিখা আছে তা..তে।
ছেলেটা যে ইশফাকে অনুকরন করে এভাবে কথাগুলো বলল তা আর ইশফার বুঝতে বাকি রইল না।ছেলেটার কথা শেষ হতেই সবাই আবারও একসাথে উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো।আর ইশফা কাচুমাচু করে সেখানেই দাড়িয়ে রইল।
হেনা ইশরার হাত থেকে চিরকুটটা নিয়ে খুলে উলোট পালোট করে দেখতে লাগলো।চিরকুটে কিছুই লিখা নেই।হেনা হাসতে হাসতে বলল…..
—দেখ তোরা সানকে চিরকুট দেওয়ার সাহস দেখাতে এসেছে।অথচ বেচারী সাহসের ঠেলায় চিরকুটে কিছু লিখতেই পারে নি।
হেনার কথায় আরেক দফা সবাই দাত কেলিয়ে হাসলো।
এলি ইশফার মুখোমুখি দাড়িয়ে রাগি গলায় বলল….
—এই মেয়ে কে তোমাকে এই চিরকুট দিতে বলেছে?নাম বল তার।
ইশফা কাপাকাপা গলায় বলল….
—আ..মি জানি না।
এলিঃজানো না মানে।ফাজলামি করো আমাদের সাথে। তাড়াতাড়ি নাম বল।নাইলে তোমার খবর আছে।
ইশফাঃআমি সত্যিই তাদের চিনি না।আমি তো আজ নতুন এসেছি।সত্যি বলছি কাউকেই আমি চিনি না।
নিরবঃআরে ছাড়না হেনা।দেখছিস মেয়েটা ভয় পেয়ে আছে।এই পিচ্ছি যাও তুমি।
এলিঃযাবে মানে?এই মেয়েকে কি এভাবেই ছেড়ে দিব নাকি।কত্ত বড় সাহস আমার সানকে চিরকুট দিতে আসে।এর তো খবর নিয়েই ছাড়বো সাথে ঐ মেয়ে গুলোরো।
—সান তোর হল কবে?
হেনার কথা শুনে এলি কথা ঘুড়িয়ে বলল…
—আরে আমাদের সানকে চিরকুট দিতে এসেছে এভাবে এভাবেই কি একে ছেড়ে দিব নাকি।এই মেয়ে তুমি সানকে চিনো?জানো সান কে?সান এই ভার্সিটির ভিপি।মেয়েরা সান এর দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায় না আর সেখানে তুমি ওকে লাভ লেটার দিতে এসেছো?কত বড় সাহস তোমার।
নিরবঃঅনেক হয়েছে এবার থাম তোরা।নতুন তো বুঝতে পারেনি।এই যে পিচ্ছি যাও তুমি।
শিপন ফিসফিস করে নিরবকে বলল…
—যাবে মানে? অনেক দিন পর এমন একটা পিস পেয়েছি। এমনে এমনেই কি ছেড়ে দিব।কিন্তু বুঝতাছি না মামা তোমার এত দরদ লাগছে কেন?লাড্ডু ফুটটাছে নাকি মনে।(চোখ টিপে)
নিরব রাগ দেখিয়ে বলল….
—তোদের সাথে কথা বলাই বেকার। যা খুশি কর তোরা।
কথাটা বলেই নিরব হন হন করে চলে গেল।
সান ফোনের দিকে তাকিয়ে ওদের সামনে এসে বলল….
—কি হচ্ছে এখানে?
এলিঃদেখোনা সান এই বোরখাওয়ালী কত বড় সাহস ও তোমাকে চিরকুট দিতে এসেছে।
সান গম্ভীর গলায় বলল….
—তুমি আমাকে চিরকুট দিতে এসেছো?
ইশফা কোন কথা না বলে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।সান আবার বলল….
—কি হল কথা বলছো না কেন?
ইশফা এবারো চুপ করে দাড়িয়ে রইল।সানের বাজে স্বাভাবের মধ্যে একটি হচ্ছে এক কথা বার বার বলা পছন্দ করে না।ইশফাকে চুপ থাকতে দেখে সান এবার ধমক দিয়ে বলল….
—এই মেয়ে কি বলছি কানে যাচ্ছে না।কথা বলছো না কেন?
সানের ধমক খেয়ে ইশফা কেপে উঠল।টলমল চোখে থেমে থেমে বলল….
—আ…মি ই..চ্ছে করে আ..সি নি।আ..মাকে সি..নিয়র আ..পুরা ব..লেছে তাই এ..সেছি।
এলিঃসান ও মিথ্যে বলছে। আমরা ছাড়া এই ভার্সিটিতে কেউ র্যাগ করে না।
সানঃমিথ্যে বলবে তাও আবার সান কে?তার পরিনতি কি হবে ভেবে দেখেছে?সান সব সহ্য করতে পারে মিথ্যে না।সান…
আর কিছু বলার আগেই সানের ফোনটা বেজে উঠল।সান ফোন রিসিভ করে অপর পাশের কথা শুনে বলল….
—আসছি।
সান কল কেটে ফোন পকেটে ভরে গম্ভীর গলায় বলল…..
—ডাক পরেছে।চল তোরা একে পরে দেখে নিব।
কথাটা বলেই সান ইশফার দিকে একবার রাগি লুকে তাকিয়ে গটগট করে চলে গেলো।সান এর কথার উপর দিয়ে কারো কথা বলার সাহস নেই।তাই তারও সানের পিছু পিছু চলে গেলো।
ওরা চলে যেতেই ইশফা চোখ মুছে ক্লাশের দিকে পা বাড়ানোর আগেই দুজন এসে ইশফার পথ আটকালো।একজন বিশ্রি একটা হাসি দিয়ে বলল….
—রুপসী হোক বা পেত্নী।সবাই এতো সান সান করে কেন?দেখলি তো সান কোন দাম দিল না।কিভাবে এটিটিউড নিয়ে চলে গেল।
অপর জনঃঠিক বলেছিস।সান এর কাছে দাম না পেলেও মেয়েরা যে কেন সান এর পিছু পড়ে থাকে বুঝি না কিছু।
ইশফা কোন কথা না বলে পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই একজন ইশফার হাত ধরে বলল….
—এই যে ফুলটুসি আমাদের দিকেও একটু তাকাও।আমরাও কিন্তু সানের থেকে কোন অংশে কম না।চাইলে…..
কথাটা শেষ করার আগেই ইশফা ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে ছেলেটার গালে এক চড় বসিয়ে দিল।তার পর ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা ক্লাশের দিকে পা বাড়ালো।
ইশফার হাতে চড় খেয়ে ছেলেটা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইল।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কয়েকজন তার দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ মিটমিট করে হাসছে,কেউ আবার কানাঘুষা করছে।ছেলেটা রেগে বিরবির করে বলল….
—একে আমি দেখে নিব।থাপ্পরে জবার সুদে আসলে পুষিয়ে নিব।
💦💦💦💦💦
এক হাতে কান আরেক হাতে বই ধরে এক পা উঠিয়ে দাড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে একটি মেয়ে।মেয়েটির এমন কান্না দেখে সামনের মানুষটার কোন হেলদুল নেই।সে এক মনে নিজের কাজ করেই যাচ্ছে।মেয়েটা কিছুক্ষন কান্না করার পর সামনের মানুষটার কোন হেলদুল না দেখে বির বির করে বলল…
—ধূর ছাই।আমার কান্নাটাই বেকার গেলো।হুদ্দা মিছা কাইন্দা চোখের পানি অপচয় করলাম।এই নবাবের তো আমার কান্নায় কিছুই যায় আসে না।সবার লগে কত সুন্দর কইরা কতা কয় আর আমার লগে ভাব লইয়া বইয়া থাকে।হুহ ঢং।
মেয়েটা বিরবির করে ইচ্ছে মত সামনের মানুষটাকে বকছে।
সামনের মানুষটা মেয়টার কথা সব শুনেও না শোনার ভান করে নিজের কাজ করেই যাচ্ছে।
কিছুক্ষন বকাঝকার পর মেয়েটা করুন কন্ঠে বলল….
—জিদ ভাইয়া….এবারের মত আমাকে মাফ করে দাও।আমি কালকেই সত্যি সত্যি পড়া কমপ্লিট করবো।প্রমিস….
সামনের মানুষটি মোটা বেত দিয়ে টেবিলে একটা বাড়ি দিয়ে বলল….
—খবর দার ইশু আমাকে জিদ ভাইয়া বলে ডাকবি না।তোর ঐ শট নাম আমার লাগবে না।আমার নাম জিদান।জিদান ভাইয়া বললেই খুশি হব।
ইশু ভেঙচি কেটে বলল….
—হুহ ঢং আসছে পুরো নাম ধরে ডাকতে বলতে। তাহলে আমাকে কেন ইশু বলে ডাকো।পুরো নাম বলতে পারো না।মুখে কি ফোসকা পরে।
জিদান রাগি গলায় বলল….
—আবার মুখে মুখে কথা বলিস তোকে তো আমি….
জিদান ইশুর দিকে বেত নিয়ে তেড়ে যেতে নিলেই ইশু ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে করতে বলল….
—তুই একটুও ভালো না ভাইয়া।তুই অনেক পচা।আমাকে একটুও আদর করিস না।শুধু শুধু আমাকে বকিস।আমি সবার কাছে তোর নামে বিচার দিব।আমি তোর একমাত্র ছোট্ট একটা বউ।আমার সাথে একটু ভালো ব্যবহার করলে কি হয় তোর?
জিদান কপালে ভাজ ফেলে রাগি লুকে ইশুর দিকে তাকাতেই ইশু ঢোক গিলে বলল…
—এমনে চাইয়া রইছোস ক্যান।আমি কইছি আমি তোর একমাত্র ছোট বোন।ইদানিং কানে বেশি শুনোস নাকি?কানের ডাক্তার দেখাইস।বোইন কইছি বয়রা বউ না।
জিদান চিবিয়ে চিবিয়ে বলল….
—আমি বয়রা?কানে বেশি শুনি?আর কি বললি তুই ছোট?তুই আমার একটা মাত্র ছোট বোন?তাহলে বুচি কি?
ইশু বেবি ফেস করে বলল…
—আমি তো বুচির ছোট?বুটি তো আমার অনেননক বড়?
জিদান ভ্রু কুচকে বলল….
—বুচি তোর অনেক বড়?তা কত বড় শুনি?
ইশু হাতের আঙুল গুনে আঙুল দেখিয়ে বলল….
—বুচি আমার ৩ মিনিটের বড়।ভাবতে পারছো কত বড়!এক মিনিটে ৬০সেকেন্ড দুই মিনিটে ১২০সেকেন্ড।তিন মিনিটে…তিন মিনিটে… (মাথা চুলকিয়ে) তিন মিনিটে কত সেকেন্ড হয় রে ভাইয়া?(বোকা ফেস করে)
জিদান কপাল হাত দিয়ে বলল….
—এই জন্যই তো তুই গনিতে ডাব্বা পাস।তিন মিনিটে কত সেকেন্ড তাই বলতে পারিস না গাধী।
ইশু কপট রাগ দেখিয়ে বলল….
—একদম আমাকে গাধি বলবে না।আমি গনিত অনেক ভালো পারি।আসলে হয়েছে কি,গনিত পরিক্ষার দিন রুটিনের মধ্যে সুন্দর করে ইংরেজীতে মেথ…মেথ….মেথ….
—মেথমেটিক্স
—হ্যা।সে যাই হোক সুন্দর করে ওটা লিখা ছিল।আমি ভেবেছি বাংলা বা অংক বইয়ের নাম তো আর ইংলিসে সুন্দর করে লিখা থাকবে না তাই বাংলা,অংক বই বাদে সব বইয়ের নামের সাথে রুটিনের নাম মিলিয়েছি। কিন্তু কোনটাই মিলে নি।এই চাকরি করতে করতেই আমার রাত পার হয়ে গেছে।সকালে ঘুমের জ্বালায় চোখে দেখতে না পেরে উঠে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্কুলে গিয়েছি।এখানে আমার কি দোষ বল।(অসহায় ফেস করে)
জিদান হাত জোর করে বলল….
—বোইন মাপ চাই। তোরে আর আমি পড়াতে আসুম না।আমার এতো সুন্দর লাইফটা পাগলা গারদে কাটানোর ইচ্ছা নাই আমার।
ইশু খুশি হয়ে বলল…..
—ইয়েয়য়….ভাইয়া আর আমাকে পড়াতে আসবে না। কি মজা কি মজা।(হাতে তালি দিয়ে)
হাতে সিগারেট এর তাপ লাগতেই ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে এলো জিদান।পুরোন কথা মনে করে আনমনেই হেসে ফেলল ।বিরবির করে বলল….
—কোথায় আছিস তুই ইশু।এখনো কি আগের মতই আছিস না চেঞ্জ হয়েছিস?অনেক তো বড় হয়ে গেছিস তাই না রে।ফিরে আয় না আমার কাছে।একবার এসে দেখে যা তোর জিদ ভাইয়া ভালো নেই তোকে ছাড়া।একটুও ভালো নেই।
💦💦💦💦💦
ইশফার আজ ক্লাশ করতে ভালো লাগছে না।কোন রকম কয়েকটা ক্লাশ করে ক্লাশ থেকে বের হয়ে গেলো।ইশফা করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় হুট করে একজন ইশফাকে টান দিয়ে অন্ধকার একটা রুমে নিয়ে গেল।হুট করে এমন হওয়ার ইশফার ব্যপারটা বুঝতে একটু সময় লাগলো।যখন বুঝতে পারল তখন চিৎকার দেবার জন্য মুখ খোলার আগেই শক্ত একটি হাত ইশফার মুখ চেপে ধরল।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_02_03
ওয়াসরুমে সাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে রয়েছে ইশফা।রাগে তার ফর্সা মুখটা পুরো লাল হয়ে রয়েছে।নিজের রাগ কমানোর জন্য এক হাতের নখ আরেক হাতের বিভিন্ন জায়গায় চেপে ধরছে।সে সব জায়গায় পানি লাগার কারনে জ্বলে যাচ্ছে।কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।সে তার রাগ কমানোর জন্য হাতের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত করেই যাচ্ছে। তারপরেও যেন তার রাগ কমছে না।
তখন ক্লাশরুমে তার মুখ চেপে ধরার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার হাতে একটা টিস্যু আর একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে লোকটা তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।ছাড়া পেতেই ইশফা দ্রুত ক্লাশ রুম থেকে বের হয় যায়।ক্লাশ রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না।ইশফা ভ্রু কুচকে হাতের চিরকুট আর টিস্যুটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চিরকুটটা খুলতেই দেখতে পায় সেখানে সুন্দর করে লিখা…..
“সব সময় শুনে এসেছি মেয়েদের কাজল কালো চোখে নাকি ছেলেরা হাড়িয়ে যায়।কিন্তু আমি তো তোমার কাজল ছাড়া ঐ চোখেই হাড়িয়ে গেছি।টিস্যু দিয়ে সুন্দর করে চোখ মুছে নাও।খবরদার আর যেন তোমার ঐ চোখে পানি না দেখি।তাহলে কিন্তু আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না।বাঘীনীকে বাঘীনী রুপেই মানায় ছিদ কাদুনে রুপে নয়।”
লিখাট পড়েই ইশফা রাগে চিরকুট আর টিস্যু টুকরো করে মোচরিয়ে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
এক ঘন্টার মত সাওয়ার নিয়ে ইশফা ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বেডে শরীর বিছিয়ে দিতেই তার ফোনটা বেজে উঠল।ফোনের স্কিনে “মি”লেখাটা দেখে রিসিভ করে ফোন কানে ধরতেই অপর পাস থেকে ভেসে আসে….
—হাই বেবি….কি অবস্থা?কেমন কাটলো প্রথম দিন?
ইশফা গম্ভীর গলায় বলল….
—ভালো।
ইশফার গম্ভীর গলার কথা শুনে অপর পাশ থেকে চিন্তিত শুরে ভেসে আসে…..
—কি হয়েছে তোমার?কথা এমন শোনা যাচ্ছে কেন?নিশ্চই কোন ঝামেলা করেছো তা না?
—মাথা ধরেছে।পরে কথা বলি ঘুমোব।
—ওকে টেক কেয়ার।আল্লাহ হাফেজ।
—আল্লাহ হাফেজ।
কথা শেষ করেই ইশফা ঘুমের দেশে পাড়ি দেবার জন্য চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল।
💦💦💦💦💦
ড্রয়িংরুম জুড়ে পানির পাত্র হাতে নিয়ে সান এর পিছু পিছু ছুটছে সিনথিয়া।সিনথিয়া সানের পিছু পিছু ছুটছে আর চেচিয়ে বলছে….
—ভাইয়া থাম বলছি।ভালো হবে না কিন্তু।
সান ছুটতে ছুটতে বলল…..
—মাথা খারাপ না পেট খারাপ। আমি তোর হাতে ধরা দিব।তুই ডাইনী যে একবার আমাকে ধরতে পারলে কি করবি তা আমার জানা আছে।
—বজ্জাত পোলা তুই কি ছেড়ে দেবার কাজ করেছিস যে তোকে ছেড়ে দিব।ইচ্ছে তো করছে তোর চুল ছিড়তে।
—আগে আমাকে ধর তার পর না হয় চুল ছিড়িস।
দু’ভাই বোনের ঝগড়া শুনে মিসেস শিকদার রান্না ঘর থেকে হাতে খুনতি নিয়ে এসে কোমরে হাত দিয়ে রাগি গলায় বলল….
—চুপচাপ দাড়াও তোমরা।যদি কেউ ছোটাছুটি কর তাহলে খবর আছে।
মায়ের ধমক খেয়ে দু’জন ভদ্র বাচ্চার মত দাড়িয়ে রইল।
মা দুজনের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….
—কি হয়েছে তোমাদের?এমন বাদরের মত ছোটাছুটি করছো কেন?
মায়ের কথা শুনে সিনথিয়া ন্যাকা কান্না করে হাতের পানির পাত্র টা দেখিয়ে বলল….
—দেখ আম্মু ভাই আমার সব মেকাপ পানিতে গুলিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে।
মা গম্ভীর হয়ে বলল….
—সান তুমি এগুলো নষ্ট করেছো?
সানঃআম্মু সেদিন নিউজে দেখলাম এই সব আটা ময়দা মাখার কারনে স্কিন নষ্ট হয়ে গেছে অনেকের।মুখের মধ্যে বড় বড় পিম্পল উঠেছে।শুধু পিম্পল না বড় বড় ফোসকাও পরেছে।পুরো মুখ নষ্ট হয়ে গেছে।ও যেই হাড়ে এই আটা ময়দা মেখে ডাইনী সাজে কোন দিন যেন ওর মুখও নষ্ট হয়ে যায়।তাই এগুলো নষ্ট করেছি।ফেলে দিলে তো এই ফকন্নী কুড়িয়ে এনে সেগুলো মুখে মাখবে তাই পানি তে গুলিয়েছি।ভালো করেছিনা আম্মু।(দাত কেলিয়ে হেসে)
সিনসিয়াঃআম্মু ভাই মিথ্যে বলছে ভাই আমাকে একটা পেন্টিং একে দিতে বলেছিল না করেছি দেখে ও এমন করেছে।আম্মু জানো ভাই আমাকে দিয়ে……
আর কিছু বলার আগেই সান সিনথিয়ার মুখ চেপে ধরে দাতে দাত চেপে ফিসফিস করে বলল……
—আমার ডাইনী সরি হুর পরি বোন আমার।আমি কালকেই তোকে শপিংয়ে নিয়ে যাবো।তোর মেকআপের যা যা লাগবে সব কিনে নিস।এগুলো তো ডেট এক্সফেল হয়ে গেছিলো তাই তো নষ্ট করেছি।তা না হলে কি আমি এমন করতাম বল।
মিসেস শিকদারঃএই সান তুমি ওর মুখ চেপে ধরেছো কেন?কি বলছিলো ও?
সান সিনথিয়ার মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল….
—কিছু না আম্মু।তুমি তো জানোই এই পাগলে সারাদিন কিছু না কিছু বলতেই থাকে।
সান এর কথা মনে হয় না মিসেস শিকদারের পছন্দ হল।তাই সে সিনথিয়ার দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই সিনথিয়া সানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে মেকি হেসে বলল….
—কিছু না আম্মু।আমাদের ভাই বোনদের ব্যপার আমাদের উপর ছেড়ে দাও।
মিসেস শিকদার দুজনের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো।কেননা সে তাদের ছেলেমেয়ের ভালো মত চিনে।একবার যখন বলেছে কিছু না তাহলে বোম ফাটালেও তাদের পেট থেকে কথা বের হবে না।
মিসেস শিকদার চলে যেতেই সিনথিয়া দাত বের করে হেসে বলল….
—তা কাল কখন নিয়ে যাবে শপিং এ ভাই?
সান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে সিনথিয়ার দিকে আগাতে নিলেই সিনথিয়া ভৌ দৌড়।সান ও সিনথিয়ার পিছু পিছু ছুটতে লাগলো।
সান সিনথিয়া দৌড়াতে থাক ততক্ষনে আমরা তার পরিচয় জেনে নেই।
সানজান শিকদার।ডাক নাম সান।শিকদার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত CEO।শিকদার বাড়ির বড় ছেলে।বাড়িতে বাবা,মা,বোন আর দাদুকে নিয়েই তাদের সুখি পরিবার।সান এর দুইটি রুপ।সান কাছের মানুষদের সাথে খুব ফ্রি।দুষ্টুমি, ফাজলামি তে সবাইকে মাতিয়ে রাখে।যদিও রাগটা নাকের ডোগায় থাকে।কাছের মানুষ ছাড়া সবাই সানকে গম্ভীর, রাগি, বদমেজাজী হিসেবে চিনে।কিন্তু তাতে সানের কোন মাথা ব্যথা নেই।সে তার দু’রুপকেই পছন্দ করে।ভার্সিটির কারো সাহস নেই সান এর উপর দিয়ে কথা বলার।সান পড়াশুনার সাথে সাথে বাবার ব্যিজনেসেও সাহায্য করে।
💦💦💦💦💦
ইশফার ঘুমের মধ্যে চোখের মধ্যে র্তীব আলো লাগার কারনে ঘুম ছুটে গেল।ইশফা চোখ খিচে বন্ধ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বলল…
—আব্বু…লাইট অফ করো।চোখে লাগছে তো।
ইশফার বাবা ইশফার মাথার সামনে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….
—তা তো হচ্ছে না মামুনি।এখন তো তোমাকে উঠতে হবে।
ইশফা বাবার কোলে মাথা রেখে বলল….
—উহু….এখন উঠবো না।আরেকটু ঘুমোব। আব্বু প্লিজ লাইট অফ করো।(অদুরে কন্ঠে)
—যতই আদর দেখাও না কেন মামুনি কাজ হবে না।তুমি স্কুল থেকে এসে না খেয়েই ঘুমিয়ে রয়েছো।তা কি আমি জানি না মনে করেছো।
—ওফ আব্বু তুমি আমাকে রাগানোর জন্য আবার স্কুল বলছো।সো স্যেড আব্বু। আমি রাগছি না।আর একটু ঘুমাই তার পরে এক সাথে রাতের খাবার খাব।
—আরেকটু ঘুমালে রাতের খাবার না একসাথে সকালের নাস্তা খেতে পারবে।কটা বাজে সেই খেয়াল আছে তোমার?
—কটা বাজে?৫টা নাকি ৬টা?
—সাড়ে ১০টা বাজে।
ইশফা লাফ দিয়ে উঠে বলল…..
—কিহহহ…..সাড়ে ১০টা।আল্লাহ আব্বু আমাকে আগে ডাক দাও নি কেন?আমার না রান্নার কথা ছিল।
ইশফার বাবা মুচকি হেসে বলল……
—পাগলি মেয়ে।ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।
ইশফা গাল ফুলিয়ে বলল….
—এটা ঠিক না আব্বু।এতোদিন তুমি রান্না করে খেতে একা ছিলে বিধায় এখন তো আমি আছি।তুমি আমাকে কেন আগে ডেকে দিলে না?
ইশফার বাবা ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….
—আমার একটু ইচ্ছে হল আমার মাকে রান্না করে খাওয়াতে।তাই ডাকি নি।এখন তাড়াতাড়ি আয় তোর পছন্দের খাবার রান্না করেছি।
ইশফা খুশি হলে বলল….
—সত্যি।আমি এখনি ফ্রেস হয়ে আসছি।কিন্তু কাল থেকে কিন্তু আমি রান্না করবো।মনে থাকে যেন।(শাসনের সুরে)
ইশফার বাবা ইশফার গাল টেনে বলল……
—পাগলি মা আমায়।তাড়াতাড়ি আয়।
কথাটা বলে সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ইশফা মুচকি হেসে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।
💦💦💦💦💦
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাবার পর বহু চেস্টা করেও ঘুমের দেশে পাড়ি দিতে পারে নি ইশরা।তাই চুপিচুপি রুম থেকে বেরিয়ে চোরের মত পা ফেলে ছাদে চলে আসে।ছাদের এক কোনে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আকাশের ঐ অর্ধেক ওঠা চাদ টার দিকে তাকিয়ে রইল।চাদের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে ভাবতে মুহূর্তের মধ্যে মনের মধ্যে জমা হল এক রাশ অভিমান।তার সাথে চোখ দিয়ে বেড়িয়ে এল লোনা জল।চাদের দিকে তাকিয়ে অভিমানের সুরে বিরবির করে বলল…..
—দেখেছো চাদ তুমিও একা আজ আমিও একা।আচ্ছা বলতে পারো কেন সব সময় কাছের মানুষগুলো আমাকে একা করে রেখে যায়?আমি কি অনেক পচা?আমি না হয় একটু বেশিই দুষ্টুমি করি তাই বলে কি তারা আমাকে এভাবে কষ্ট দিবে?তাদের কি একটুও কষ্ট হয় না আমার জন্য?
💦💦💦💦💦💦
ইশফা রিকশা জন্য অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার কারনে ভার্সিটিতে পৌচ্ছাতে একটু দেড়ি হয়ে গেলো।তাড়াহুড়ো করে ক্লাশের দিকে পা বাড়াতে লাগলো।ইশফা ক্লাশে পৌচ্ছাবার আগেই কয়েকজন ইশফার সামনে এসে পথ আটকে দাড়ালো।ইশফা পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই…..
#চলবে,
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গল্প কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না।গল্প কি চলবে নাকি চাট্টি বাট্টি গোল করে পালাবে?বাই দা রাস্তা চালের বস্তা ইশফাকে চিরকুটটা কে দিল?আর সামনেই বা কে পরল🤔ধন্যবাদ)
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_03
ইশফা রিকশার জন্য অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার কারনে ভার্সিটিতে পৌচ্ছাতে একটু দেড়ি হয়ে গেলো।তাড়াহুড়ো করে ক্লাশের দিকে পা বাড়াতে লাগলো।ইশফা ক্লাশে পৌচ্ছাবার আগেই কয়েকজন ইশফার সামনে এসে পথ আটকে দাড়ালো।ইশফা পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই একজন ইশফার ব্যাগ ধরে বলল….
—কই যাস?আমাদের কে কি চোখে পরে না ?
ইশফা তাদের দিকে ভালো মত খেয়াল করে তাকাতেই তাদের চিনতে অসুবিধে হল না।তারা আর কেউ না কালকের সিনিয়র আপুগুলো।তাদের দেখেই ইশফার মাথা গরম হয়ে গেলো।তার পরেও নিজের রাগটাকে দমিয়ে সুন্দর করে বলল….
—আপুরা আমার ক্লাশ আছে।
তাদের থেকে একজন মেয়ে বলল…..
—বইয়ের ক্লাশ পরে করিস আগে আমরা তোর ক্লাশ নিয়ে নেই।
আরেক জন মেয়ে বলল…..
—প্যাচাল বন্ধ।আগে বল কালকে যে সান জানুর কাছে তোরে দিয়া একটা চিঠি পাঠিয়েছি সেটা তাকে দিস নি কেন?
ইশফাঃ আমি তো ঐ ভাইয়াকে চিরকুটটা দেবার আগেই তার বন্ধুরা সেটা নিয়ে নিয়েছে।
—হুম তারা চিঠি নিয়েছে কিন্তু তাতে কিছু লিখা ছিলো না।আমি যেই চিঠিটা দিয়েছিলাম সেটা কই?
ইশফা এবার কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।ইশফাকে চুপ করে থাকতে দেখে মেয়েগুলো ওর সাথে ধমকা ধমকি করতে লাগলো।তার পরেও ও কোন উওর দিচ্ছে না।
—এখানে কি হচ্ছে?
পিছন থেকে নিরবের কথা শুনে মেয়েগুলোর থেকে একজন মেয়ে বলল….
—নিরব তুই তোর কাজে যা।আমাদের কাজে নাক গলাতে আসিস না।
নিরব হাত ভাজ করে দাড়িয়ে বলল….
—বাহ্ সাহস তো দেখছি বেশি বেড়েছে তোদের?কাল তাহলে তোরাই এই মেয়েটাকে সান এর কাছে চিরকুট দিয়ে পাঠিয়েছিলি?
প্রথম মেয়েটা বিরক্ত হয়ে বলল….
—হা পাঠিয়েছি তাতে তোর কি? তুই তোর কাজে যা।আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দে।
নিরবঃআমার কিছুই না।সান তো তোদেরকেই খুজছে। যাই গিয়ে খবরটা দিয়ে আসি।তোরাই সে যারা কালকে এই মেয়েটাকে সান এর কাছে চিরকুট দিয়ে পাঠিয়েছিস।
সান এর নাম শুনতেই মেয়েরা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।মেয়েগুলো চলে যেতেই ইশফা ক্লাশের দিকে পা বাড়াতে নিলেই নিরব বলল….
—এই যে পিচ্ছি।আমি তোমাকে ওদের কাছ থেকে বাচালাম আর তুমি ধন্যবাদ না দিয়েই চলে যাচ্ছো।
ইশফা ঘুড়ে দাড়াতেই নিরব মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে বলল….
—হাই আমি নিরব।সান এর বন্ধু।এখানে কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবে আমি স্লভ করে দিব।
ইশফা নিরবের হাতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল….
—সান কা চামচা।
নিরব শুনতে না পেরে বলল….
—সরি….
—আমার দেড়ি হচ্ছে।
কথাটা বরে ইশফা আর দেড়ি না করে ক্লাশের দিকে পা বাড়ালো।
💦💦💦💦💦💦
ক্লাশে ঢুকে ইশফা মুখের থেকে হিজাব সরিয়ে একটা বড় নিশ্বাস ছাড়লো।ইশফা বোরখার সাথে সব সময় হিজাব তো পড়বেই সাথে হিজাব দিয়ে সুন্দর করে মুখ ঢেকে রাখবে।তার আবার বোরখার সাথে হিজাব পড়ে মুখ খুলে রাখা পছন্দ না।স্যার এখনো ক্লাশে আসে নি।ক্লাশ শুরুর আরো ৫মিনিট বাকি আছে।হঠাৎ একটা মেয়ে হুড়মুড় করে ক্লাশে ঢুকে ইশফার পাশে এসে বসে পরল।এদিন ওদিক একবার তাকিয়ে ইশফার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল….
—হাই….আমি রিধি।
ইশফা মুচকি হেসে হাত মিলিয়ে বলল….
—আমি ইশফা।
—তুমি কি এখানে নতুন?
ইশফা মাথা নেড়ে হ্যা বলতেই রিধি বলল….
—জানো আমিও না নতুন।একা একা কি আর ভালো লাগে বল।আমার হাড়ামী বন্ধুগুলোকে কত করে বললাম এখানে ভর্তি হতে কিন্তু ওরা শুনলোই না আমার কথা।ওদের রাজি না করাতে পেরে আমিও পরে ঠিক করেছিলাম ওদের সাথে ভর্তি হব।কিন্তু বাবার চাপে এখানেই ভর্তি হলাম।আচ্ছা বাদ দাও সে সব কথা তুমি কি আমার ফ্রেন্ড হবে?(হাত বাড়িয়ে)
ইশফা মুচকি হেসে হাত মিলাতেই রিধি বলল….
—থ্যাক্স আল্লাহ্।কারো কান পচানোর ব্যবস্থা করে দিলে।আমি কিন্তু প্রচুর কথা বলি তুই কিন্তু কিছু বলতে পারবি না।আর শোন কোন তুমি,আপনি চলবে না।বন্ধুদের মধ্যে তুই বেটার।
ইশরা মুচকি হেসে বলল….
—ওকে।
আর কিছু বলার আগেই স্যার চলে আসলো।ইশফা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে স্যার ঠিক টাইমেই চলে এসেছে।ইশফা এক পলক রিধির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল….
—ইয়া আল্লাহ্ পাচ মিনিটেই এতো কথা বললো মেয়েটা বাকি সময়ে কি করে আল্লাহ্ মালুম।
💦💦💦💦💦💦
ইশরা কলেজে যাবার জন্য তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে…..
—ও মা….
তাড়াতাড়ি আমার ব্যাগ গুছিয়ে দাও আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ইশরার মা এতোক্ষন ইশরার দরজার সামনেই দাড়ানো ছিল।ইশরা নিজের কাজে ব্যস্ত থাকায় তাকে দেখতে পায় নি।ইশরার কথা শেষ হতেই ইশরার মা বলল…..
—এখন ব্যাগ গোছানোর কথা বলছো কেন?একটু আগে যখন ডেকে গেলাম তখন তো আমাকে ঝাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিলে।আমার মাথা ধরেছে আমাকে ডাকবেনা বললে।এতো তাড়াতাড়ি মাথা ঠিক হয়ে গেলো?
ইশরা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের কাজ করতে করতে বলল…..
—আম্মা জান।আমার মাথা ঠিক হওয়ার মেডিসিন ফোন করে আমার মাথা ঠিক করে দিছে।
মা রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে দিতে দিতে বলল….
—তোকে নিয়ে আর পারি না।একটু কিছু হলেই কান্না করে সব ভাসিয়ে ফেলবে।গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।এতো বড় মেয়ে হয়ে গেছে এখনো ব্যাগ গোছাতে পারে না।তাকে নাকি এখনো আমার ব্যাগ গুছিয়ে দিতে হবে।
ইশরা রেডি হয়ে মায়ের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে মাকে একটা আদর দিয়ে বলল…..
—আসছি।
—আসছি মানে।আরে নাস্তা তো করে যা।
ইশরা তাড়াহুড়ো করে যেতে যেতে বলল….
—কেন্টিন থেকে খেয়ে নিব।
💦💦💦💦💦💦
জিদানের মা জিদানের রুমে এসে ছেলেকে বিশাল বড় ব্যাগ প্যাক করতে দেখে চিন্তিত সুরে বলল….
—কি ব্যপার বাবা কোথাও যাচ্ছো তুমি?সকাল সকাল এতো বড় ব্যাগ গোছাচ্ছো কেন?
জিদান ব্যাগ প্যাক করতে করতেই বলল…..
—হুম যাচ্ছি।এখানে বসে থেকে কি করবো।আমার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে জব ঠিক করেছি।
জিদানের মা হালকা চেচিয়ে বলল….
—কি তুমি চাকরী করবে?তোমার বাবার এতো টাকা পয়সা আর তুমি করবে চাকরী?
—বাহিরে পড়াশুনা করতে পাঠিয়েছিলে কি ঘড়ে বসে থাকার জন্য?
—তাই বলে…..
জিদান মাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল…..
—তাড়াতাড়ি খেতে দাও মা।দেড়ি হলে বাস ধরতে অসুবিধে হবে।
মা করুন চোখে তাকিয়ে বলল…..
—না গেলে হয় না।
জিদান হাতের কাজ রেখে এক হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল…..
—খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।কিছু অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেই চলে আসবো।
জিদানের মা জিদানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল….
—কি কাজ?তুমি কোন কাজের কথা বলছো?
জিদান কথা ঘুড়িয়ে বলল…..
—কিছু না।মা তাড়াতাড়ি খেতে দাও তো। আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ছেলের ব্যস্ততা দেখে জিদানের মা বলল…..
—ঠিক আছে।তুমি তাড়াতাড়ি আসো।আমি খাবার দিচ্ছি।
কথাটা বলেই তিনি চলে গেলেন।
মা চলে যেতেই জিদান একটা র্দীঘ নিশ্বাস ফেলে কাজে লেগে গেল।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা,রিধি,তুশি অফ টাইমে মাঠের এক কোনে বসে গল্প করছে।তুশি ইশফার বেস্ট ফ্রেন্ড।তারা এক সাথেই এই ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে।তুশি খুব ঘুম কুমারী মেয়ে।ঘুমের জন্য কালকে ভার্সিটিতে আসতে পারেনি।আর আজকেও ঘুমের জন্য ক্লাশে পৌচ্ছাতে দেড়ি হয়ে গেছে।অফ টাইম শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা তাদের গল্প সেখানেই ইতি টেনে ক্লাশের দিকে পা বাড়ালো। তুশির হাতের কোল্ড ড্রিংকস ইশফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে নানান ভাবে সেলফি নিতে ব্যস্ত।ইশফা তাড়া দিয়ে বলল….
—পরে সেলফি নেবার অনেক টাইম পাবি এখন তাড়াতাড়ি ক্লাশে চল।
তুশি তার পরেও তার সেলফি নিতে ব্যস্ত।সে জায়গায় জায়গায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে সেলফি নিচ্ছে।
ইশফা বিরক্ত হয়ে বলল….
—ঐ আর কতো সেলফি নিবি।ক্লাশের দেড়ি হচ্ছে তো।
—হয়ে গেছে।যাস্ট এক মিনিট।
—তোর এক মিনিটে তোর কাছে রাখ। এক সেকেন্ড সময় বেশি লাগলে এই কোল্ড ড্রিংকস তোর মাথায় ঢালুম।
তুশি আসে পাশে তাকিয়ে দেখে বলল….
—কি ভাবে ঢালবে।তুমি ঢালার আগেই আমি ছু মন্তর হয়ে যাবো।
—দেখবি কিভাবে?
কথাটা বলার সাথে সাথেই ইশফা তুশির দিকে কোল্ড ড্রিংকস ছুড়ে মারতেই তুশি সরে গেল।আর তা লাগলো সানের গায়ে। হুট করেই যে তাদের সামনে সান আর নিরবের আগমন ঘটবে তা ইশফা ভাবতেও পারে নি।
সান শার্ট ঝেড়ে ইশফার দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল…..
—ইউ স্টুপিট কি করলে এটা?
ইশফা একবার তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল….
—আমি ইচ্ছে করে করি নি।আমি তো ওকে…..আর সামনে আপনি চলে আসলেন।
সান ইশফার দিকে একবার রাগি চোখে তাকিয়ে শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে কোন কথা না বলে চলে গেলো।
💦💦💦💦💦💦
সান,নিরব মাঠের এক কোনে দাড়িয়ে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে।ঝড়ের গতিতে ইশফা সান, নিরবের সামনে এসে দাড়ালো।তুশি আর রিধি ইশফা থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে।নিরব ইশফাকে দেখে মুখের মধ্যে লম্বা একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল…..
—আরে পিচ্ছি যে।কিছু বলবে।
ইশফা নিরবের কথার কোন উওর না দিয়ে এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলল।ব্যাগ থেকে ইন এর বোতল বের করে সান এর শার্টে ছুড়ে মারল।তার এই কাজে নিরব,রিধি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।ইশফা যে এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে তা কেউ ভাবতেও পারে নি।
সান রেগে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল….
—ইউ ইডিয়েট কি করলে এটা তুমি?
ইশফাঃশার্ট যখন কিনে দিতে হবে তাহলে একটু নষ্ট হওয়াতে কেন কিনে দিব।তাই বেশি করে নষ্ট করে দিলাম।কালকে আপনার শার্ট পেয়ে যাবেন।
কথাটা বলেই ইশফা গটগট করে সেখান থেকে চলে গেলো।
ইশফা চলে যেতেই নিবর বলল……
—এই পিচ্ছির কথা তো কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না।
সান নিরবের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নিরব শুকনো ঢোক গিলে বলল…..
—না মানে তখন তো তুই ওকে কিছু বলিস নি।তাহলে হঠাৎ এসে এমন কান্ড করল কেন?কেউ কি ওকে কিছু বলেছে?
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_04
সান ভার্সিটি থেকে রেগে বাড়িতে চলে এসেছে।বাড়িতে ঢুকেই দেখে সিনথিয়া আর তার দাদু মিলে ডিজে গান ছেড়ে নাচ করছে।দাদুর নাচ বলতে সোফায় বসে সে হাত পা নাড়াচ্ছে।সান রেগে গিয়ে গান বন্ধ করে দিল।গান বন্ধ হওয়াতে সিনথিয়ার নাচ থেমে গেলো।সানকে পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার আর বুঝতে বাকি রইল না গান কে বন্ধ করেছে।সিনথিয়া বিরক্ত হয়ে বলল….
—উফ্ ভাই গান কেন বন্ধ করলে?নাচার একটা মুড চলে এসেছিলো।মুডটাই খারাপ করে দিলে।
সান সিনথিয়াকে এক রাম ধমক দিয়ে বলল….
—সারাদিন তো শুধু বাদরের মত ফালাফালি করিস।পড়ালেখা নেই?যা পড়তে বস।
কথাটা বলেই সান গটগট করে রুমে চলে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।
দাদু সানের যাওয়ার দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল….
—এর আবার কি হল?এমন গরম হয়ে আছে কেন?
সিনথিয়া ভেংচি কেটে বলল…
—কি আর হবে দেখো গিয়ে নিশ্চই কোন ঝামেলা করে এসেছে।নিজে সারাদিন ঘুরে বেরায় আর আমাকে বলে পড়তে বসতে।আমার মত মাসুম একটা মেয়ের উপর হুকুম চালাস না দেখিস তোর কপালে একটা জল্লাদ বউ জুটবে।মিলিয়ে নিস আমার কথা।
দাদু সিনথিয়ার কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল…..
—জল্লাদ বউ জুটলে তো তোরি সমস্যা।তোরি তো চুল ছিড়বে।
—মোটেও না।আমার ভাবী আমার চুল ছিড়বে না।আমাকে খুব আদর করবে।ভাবী আসলে আমি আর ভাবি মিলে ওর চুল ছিড়বো।হনুমান একটা সব সময় আমাকে বকে।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা রুম জুড়ে পায়চারী করছে আর “মি” দিয়ে সেভ করা নাম্বারটাতে বার বার কল করছে।কিন্তু যাকে ফোন দিচ্ছে তার ফোন ধরার কোন নাম গন্ধ নেই।ইশফার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।হাতের ফোন টা বিছানায় ছুড়ে মেড়ে বিছানার এক কোনে মাথা চেপে বসে রইল।
ইশফার এমন হুট করে রেগে যাওয়া আর এমন অদ্ভুত কান্ড করার কারণ হল এলি।ইশফার রাগ বরাবরই একটু বেশি।কেউ তাকে কিছু বললে সে তাকে ছেড়ে দেয় না।ইশফার ক্লাশ শেষে করিডোর দিয়ে যাবার সময় এলি ইশফার সামনে এসে দাড়ায়।সান এর গায়ে তখন কোল্ড ড্রিংকস লাগার কারনে ইশফাকে যা না তাই শুনিয়ে দেয়।ইশফা প্রথমে চুপ করে থাকলেও এলি যখন শার্ট নিয়ে খোটা দেয় আর তার ফ্যেমিলিকে নিয়ে বাজে কথা বলে তখন সেও দু’কথা শুনিয়ে দেয়। এলিকে কথা শুনিয়ে যাওয়ার সময় সামনে সান কে দেখতেই তার রাগটা আরো বেড়ে যায়।তাই তো রাগ ঝাড়তে তখন এমন একটা কান্ড করেছে।
ইশফা মাথা চেপে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তার ফোনটা বেজে উঠল। ফোন বাজতেই এক হাত মাথা থেকে সরিয়ে ফোনের দিকে তাকালো।ফোনের স্ত্রিনে “মি” লিখাটা দেখে ইচ্ছে মত ঝাড়ি দেবার প্রস্তুতি নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ভেসে এল…..
—সরি সরি সরি আসলে আমি ওয়াসরুমে ছিলাম।তাই ফোন ধরতে পারিনি।প্লিজ রাগ করো না বেবি…..
ইশফা রেগে কটমট করে বলল…..
—খবরদার আমাকে ও সব ভেবি,টেক্সি বলে ডাকবে না।
—ঠিক আছে ঐ সব ভেবি,টেক্সি বলবো না।জানু তো বলতে পারবো।তাই না জানু…..
—আমি এখন ফাজলামোর মুডে নেই।
—তা কোন মুডে আছো তুমি?
—দেখো ফাজলামি পরে করো।আগে বল কাজ হয়েছে?শার্ট কিনেছো?
—না যাবো এখন কিনতে।শার্টের সাইজ বল আর কালার বল।
ইশফা শুকনো ঢোক গিলে বলল…..
—কালার আর সাইজ?
—তা ছাড়া কিনবো কি ভাবে?
ইশফা একটু ভেবে বলল….
—কালারটা অফ হোয়াইট কালার হবে মনে হয়?
—অফ হোয়াইট নাকি ময়লা হোয়াইট শার্ট পরে আসার কারনে অফ হোয়াইট মনে হয়েছে কোনটা?(হাসতে হাসতে)
ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল…..
—তুমি….
অপর পাশ থেকে হাসতে হাসতে বলল…..
—ওকে অফ হোয়াইট কালার আর সাইজ?
—আমি কি করে সাইজ বলবো?
—তা আমি কি জানি?সব সময় বলি মাথাটা একটু ঠান্ডা রাখতে।না তা করবে কেন।পারে শুধু মাথা গরম করে চলতে।
—তুমি আমাকে বকছো।লাগবে না তোমার শার্ট কেনা।
—আসছে শার্ট কেনা লাগবে না বলতে।এখন রাগ না দেখিয়ে সাইজ বল।
—আরে আমি কি করে বলবো?তুমি মাপ দেখে একটা কিনে নিও।
—বললেই হল।মাপ দেখে একটা কিনে নিও।আমি তো তাকে দেখিও নি।সে দেখতে আমাদের চেনা জানা দেখতে কারো মত হবে কিনা ভেবে বল।
ইশফা কিছুক্ষন ভেবে আনমনে বলল…..
—ভাইয়ার মত।
কথাটা বলতে না বলতেই অপর পাশ থেকে আর কোন কথা না বলে লাইন কেটে দিল।ইশফা অপর পাশ থেকে কথার আওয়াজ না পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা ভার্সিটিতে আসার পর থেকে সান কে খুজে যাচ্ছে।কিন্তু কোথাও তাকে পাচ্ছে না।রিধি হাপাতে হাপাতে ইশফার সামনে এসে বলল…..
—ইশু কখন থেকে ডাকছি শুনতে পারছিস না।আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে খুজছিস?
ইশফা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল….
—মিঃবাদর আর তার চেলাদের।
রিধি হালকা চেচিয়ে বলল….
—হোয়াট? কে বাদর?কার কথা বলছিস তুই ইশু?
—এই ইশু বলা বন্ধ কর।ইশু আমা….পুরো নাম ধরে ডাক অথবা অন্য নামে ডাক।
—আচ্ছা ঠিক আছে তা ডাকবো।এবার বল তুই কার কথা বলছিস?
—কেন আবার ঐ সান না ফান এর কথা।বাদরের মত লাফাতে লাফাতেই তো সামনে আসলো।তাই তো কোল্ড ড্রিংকস তার উপর পরলো।
—সব দোষ এখন তার তুমি কিছুই করোনি।
পিছন থেকে কথাটা বলে তুশি ইশফার সামনে এসে দাড়ালো।
ইশফা তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল….
—আসতে এতো দেড়ি হল কেন?আগে না আসতে বলছি।
তুশি বড় করে একটা হাই দিয়ে বলল….
—তোর জন্য আমার সাধের ঘুম হারাম কইরা আইছি ছেড়ি শুকরিয়া আদায় কর।
ইশফাঃপ্যাচাল বন্ধ কইরা আগে ঐ বাদরেরে খোজ।
রিধিঃআরে ভাইয়া তো তোর জন্য অডিটোরিয়াম রুমে বসে আছে।আমি এই মাত্র দেখে আসলাম।
ইশফা রিধির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল….
—কোন ভাইয়া?আর তোর ভাইয়া আমার জন্য বইসা থাকবো কেন?
ইশফার কথা শুনে রিধি আমতা আমতা করতে লাগলো।ফট করে তুশি বলল…..
—ঢং কোন ভাইয়া জিগ্যেস করছে।তুমি জানো না কোন ভাইয়া?তুই যার কথা বলছিস রিধি তার কথাই বলছে।আজকে তো তুই তারে শার্ট গিফরোট করবি অন্তরে অন্তরস্থল থিকে তাই সে অধিক আগ্রহে তোমার অপেক্ষায় বসে আছে বালিকা।
ইশফা একবার তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রিধিকে বলল….
—চল রিধি।এই তার ছিড়া মেন্টেলের আমাদের সাথে আশার দরকার নাই।
তুশি আরেকটা হাই দিয়ে বলল….
—যা যা তোরাই যা।আমি বরং ক্লাশে বইসা একটু ঘুমাইয়া নেই।
ইশফা তুশির পিঠে এক তাল ফালাতেই তুশি হালকা চেচিয়ে বলল…..
—ঐ ছেমড়ি তোর সমস্যা কি?মারোস ক্যান?
ইশফা কিছু না বলে তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরল।
💦💦💦💦💦💦
সান অডিটোরিয়াম রুমে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।ইশফা,রিধি,তুশি বাহিরে দাড়িয়ে আছে।ইশফা এতোক্ষন সাহস দেখালেও এখন কেন যেন সান এর সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।ইশফা তুশির হাতে শপিং ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বলল…..
—যা এটা দিয়ে আয়।আমি এখানেই আছি।
তুশি সাথে সাথে শপিং ব্যাগটা ইশফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল…..
—আকাম করছেন নিজে,নিজেই যান।আমি পারতাম না।
ইশফা তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রিধির দিকে তাকাতেই রিধি হাত জোড় করে বলল…..
—মাপও চাই দোয়াও চাই।আমি ঐ সিংহের গুহায় যাবো না।তারে দেখলেই আমার ভয় করে।কেমন করে তাকায়।আমি পারবো না।
ইশফা রাগ দেখিয়ে বলল….
—তোদের যেতে হবে না।আমিই যাবো।সব কয়টা ভীতু।
তুশিঃতুমি যখন এতো সাহসী তাহলে তুমিই যাও।আমগো কও ক্যান।
ইশফা রাগি গলায় বলল…..
—যাচ্ছিই তো।তোর বলতে হবে না।
ইশফা গুটিগুটি পায়ে সান এর সামনে গিয়ে শপিং ব্যাগটা সামনে ধরে বলল…..
—এটা আপনার।
💦💦💦💦💦💦
আওলাদ খান (জিদানের বাবা )চেয়ারে বসে রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন হাফসা বেগমের দিকে(জিদানের মা)।স্ত্রীর মুখে ছেলের ব্যপারে সব কথা শোনার পর থেকেই সে রেগে আছে।স্বামীকে এমন রেগে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাফসা বেগম ভয়ে গুটিয়ে রয়েছেন।আওলাদ খান গম্ভীর গলায় বলল….
—ছেলে কবে বাড়ি থেকে বের হয়েছে?
হাফসা বেগম কাপা কাপা গলায় বলল….
—কালকে।
কথাটা শোনার সাথে সাথেই আওলাদ খান সামনের চেয়ারে লাথি দিয়ে চেচিয়ে বললেন…..
—ও কালকে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে আর আজ তুমি আমাকে বলছো?কেন গিয়েছে ও?কি নেই আমার?টাকা-পয়সা কোনটার তো অভাব নেই।তাহলে কেন ও আরেক জনের দুয়ারে ভিক্ষা করতে গেছে?কার জন্য আমি এতো খাটছি?কার সুখের কথা ভেবে আমি এতো কিছু করছি?কি নেই আমার, বল কিসের অভাব এখানে?
—সুখ।সুখের অভাব এখানে।টাকা-পয়সা থাকলেই তো আর হয় না।সুখটা তো লাগবে।টাকা-পয়সা ইট,পাথরের বড় দালান থাকলেও এখানে সুখ নেই।
কথাগুলো মনে মনে বলে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন হাফসা বেগম।চোখের পানি ফালানো ছাড়া সে আর কিছুই করতে পারবে না।
#চলবে,
(