#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১৭
★আরও পাঁচ দিন পার হয়ে গেছে। আদিত্য এখন প্রায় সুস্থ। এখন আবার অফিসেও যেতে শুরু করেছে আদিত্য। মাত্রই বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে আদিত্য। গাড়িতে বিহান ড্রাইভ করতে করতে বলে উঠলো।
–আদি ইনফরশেন কারেক্ট। আমগো এক্সিডেন্ট ওই হালার পো রশিদ খানের লোকেরা করছে। ওরাতো আমগো মারার লাইগ্যা এক্সিডেন্ট করছে। তয় আগমো কপাল ভালা দেইখা বাইচ্চা গেছিগা।
আদিত্য বলে উঠলো।
–জানতাম এটাই ওদেরই কাজ হতে পারে। কাপুরুষের মতো পিছন থেকে বার করাই ওদের অভ্যাস। সেদিন আমরা ওর লোককে মেরেছি।সেটারই বদলা নেওয়ার জন্য ওরা এসব করছে।
–তাইলে অহন কি করবার চাছ?
–আপাতত কিছুই না। ওদের কে একটু স্পেস দেব। ওরা যখন বড়ো কোন ক্রাইম করার প্ল্যান করবে, তখনই ওদের হাতেনাতে ধরে উচিৎ শিক্ষা দিব।
–হ ঠিক আছে তুই যেমতে কছ।
–আচ্ছা শোন, আমাদের বাসায় আর বাসার এরিয়ার চারপাশে সিকিউরিটি আরও বাড়িয়ে দিতে হবে। আমি নূরকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে চাইনা। আমার শত্রুরা আমাকে দমন করার জন্য নূরের ক্ষতি করার চেষ্টা অবশ্যই করবে।তাই আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।
–টেনছন লইস না। ছব ওইয়া যাইবোগা।
___
অনেকক্ষণ হলো আবির এসেছে। নূরের সাথে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আর এদিক ওদিক তাকিয়ে নিলাকে খুঁজছে। আজতো মেয়েটার সাথে কথা বলতেই হবে।তার আসলে হয়েছেটা কি সেটা জানতেই হবে। নাহলে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না।
এসব ভাবনার মাঝেই আবির দেখলো নিলা ছাদে কাপড় শুকাতে যাচ্ছে। এটা দেখে আবির নূরকে বললো।
–ভাবিডল তুমি খেলা করো।আমি এখুনি আসছি হ্যাঁ?
–আচ্ছা।
আবির তড়িঘরি করে ছাদের দিকে দৌড়ালো। ছাঁদে এসে আবির ছাদের দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দিল। নিলা কাপড় নাড়ছিল। দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে পেছনে ফিরে তাকালো নিলা। আবিরকে এখানে দেখে একটু চমকে গেল নিলা। তবুও কিছু না বলে চুপচাপ হেঁটে আবিরের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই, আবির খপ করে নিলার হাত চেপে ধরলো। নিলা একটু কেঁপে উঠল, হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। আবির এবার একটানে নিলাকে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার হ্যাঁ? এমন আজব বিহেব করছ কেন? মাথায় কি গ্যাস্টিক হয়েছে? টেল মি ড্যাম ইট।
নিলা অন্য দিকে মাথা ঘুড়িয়ে রেখে বললো।
–কিছুই হয়নি। আমাকে ছাড়ুন,যেতে দিন প্লিজ।
আবির এবার আরও একটু রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–হয়নি মানে? আমাকে কি তোমার ইডিয়ট মনে হয়? আমি কিছু বুঝতে পারিনা? কয়দিন হলোই দেখছি তুমি আমকে চরম পরিমানে এভয়েড করছ। আমার সাথে কথা বলোনা।কিছু বললে জবাব দাওনা। আমি যতক্ষণ এই বাসায় থাকি,তুমি নিজের রুমে বসে থাক। কেন করছ এমন? কিছু কি হয়েছে বলো? আমার কোন কাজে যদি তুমি নারাজ হয়ে থাক,তাহলে সেটা আমাকে বল।এভাবে ইগনোর কেন করছ?
নিলার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। তবুও সে নিজেকে আটকে রেখে বলে উঠলো।
–নিজেকে এতো গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কিছুই নেই। আপনি আমার তেমন কিছুই হন না যে,আপনার ওপর আমি নারাজ হবো। এটা আমার লাইফ। আমি যেভাবে খুশী সেভাবে থাকবো। সেটা নিয়ে আপনাকে কৈফিয়ত দেওয়া আমি জরুরি মনে করিনা। আমি যাই করিনা কেন তাতে আপনার কি?
নিলার কথায় আবিরের রাগ আরও তরতর করে বাড়তে লাগলো। আবির এক হাতে নিলার চোয়াল শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো।
–আমার কি তাইনা? তুমি বুঝনা আমার কি? এতটাও অবুঝ তুমি না যে, আমার মনের কথা তুমি বোঝনা। তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না তোমার ইগনোরেন্স আমাকে কতটা পোড়াচ্ছে। ভালোবাসি তোমাকে ড্যাম ইট।
নিলা চমকে তাকালো আবিরের চোখের দিকে। এই চোখের ভাষায় সে আবিরের কথার সত্যতা দেখতে পাচ্ছে। উনি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে? পরক্ষণেই নিলার শরিফা বেগমের বলা কটুবাক্য গুলো মনে পড়ে গেল। নিলা আর সহ্য করতে পারলোনা। সর্বশক্তি দিয়ে আবিরকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে সরিয়ে দিল। তারপর তিব্র কন্ঠে বলে উঠলো।
–অনেক হয়েছে। কি পেয়েছেন কি আপনারা হ্যাঁ? আমাকে কি খেলনার পুতুল পেয়েছেন? যার যা খুশী তাই করে যাবেন আমার সাথে? ছেলে এসে ভালোবাসার কথা বলবেন, আর মা এসে আমাকে আমার পরিবারকে অপমান করে যা খুশি তাই বলে চলে যাবেন? এটা আপনাদের মা ছেলের কোন খেলা নাকি?
আবির অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এক মিনিট, মা বলেছে মানে? তারমানে মা তোমাকে কিছু বলেছে তাইনা? কি বলেছে মা তোমাকে?
–সেটা আপনি আপনার মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। আর প্লিজ আমার কাছ থেকে দূরে থাকবেন।এটা আমার বোনের বাসা। আমি শুধু আমার আপুর জন্য এখানে আছি। আমি চাইনা আমার জন্য এই বাসায় কোন সমস্যা হোক। তাই প্লিজ আমাকে আর জ্বালাবেন না দয়া করে।
কথাগুলো বলে নিলা চলে যেতে নিলেই আবির আবারও নিলার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে আটকে নিয়ে বললো।
–যাবার আগে ভালো করে শুনে যাও। আমার মা তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকলে তার জন্য আমি অনেক দুঃখিত। প্লিজ পারলে ক্ষমা করে দিও। তবে তাই বলে যে,তুমি আমার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে। সেটা কখনোই ভেব না। আবির রহমানের ভালোবাসা এতো সস্তা না যে,এইটুকু ঠুনকো কারনেই সব শেষ হয়ে যাবে। ভালো তো তোমার আমাকেই বাসতে হবে মিস কচি লঙ্কা।
কথাটা বলে আবির নিলার গালে একটা চুমু খেয়ে, নিলাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল।
আর নিলা ওখানেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে আবিরের শেষের কথাগুলো ভাবতে লাগলো।
_______
শরিফা বেগম ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে ছিলেন। আশরাফ রহমান অফিসে গেছেন। তখনই আবির ওখানে হনহন করে এলো। শরিফা বেগমের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো।
–তুমি কি বলেছ নিলাকে?
শরিফা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এটা কি ধরনের ব্যবহার আবির? মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাকি ভুলে গেছ তুমি?
আবির নিজের রাগ সহ্য করতে না পেরে টি টেবিলের ওপর থাকা ফুলদানিটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে ঠাস করে আছাড় মেরে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–টেল মি ড্যাম ইট। হোয়াট ডিড ইউ সে টু হার?
আবিরের হঠাৎ এমন ব্যবহারে শরিফা বেগম চমকে গেলেন।আবিরকে এতো রাগ করতে সে কখনো দেখেনি। উনি বুঝতে পারলেন ছেলে তার প্রচুর রেগে আছে। তাই উনি বলে উঠলেন।
–কি বলবো,ওদের মতো থার্ডক্লাশ মেয়েদের যা বলা দরকার তাই বলেছি। ওরা পুরো প্ল্যানিং করে আদিত্যকে ফাঁসিয়ে ওই পাগল মেয়েটাকে ওর গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। এখন আবার ছোটটাকে লেলিয়ে দিয়েছে তোর পেছনে। ভাবতে পারিস কতবড় ধান্দাবাজ ওরা?
আবির হঠাৎ ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে হাতে তালি বাজাতে লাগলো। আবিরের কান্ড দেখে শরিফা বেগম একটু থতমত খেয়ে গেলেন। আবির কোনরকমে একসময় হাসা বন্ধ করে তিরস্কার করে বলে উঠলো।
–ওয়াও মা ইউ আর গ্রেট। নট ওনলি গ্রেট।ইউ সুপার গ্রেট। সত্যিই তুমি আজ একটা প্রবাদ বাক্য সত্যি করে দিলে। “যার মনে যা, ফাল দিয়ে ওঠে তা”।
–মানে?
–মানে, যে যেমন মনের মানুষ। তার কাছে বাকি সবাইও তেমনই মনে হয়।
শরিফা বেগম তেতে উঠে বললেন।
–আবিরর, কি বলতে চাও তুমি? ভুলে যেওনা তুমি তোমার মায়ের সম্বন্ধে কথা বলছ।
–আপসোস মা এটাই তো করতে পারিনা। ভুলতে পারিনা যে, তুমি আমার মা। যে মা নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে।
–আবিরররর!!
–ডোন্ট শাউট মা। চিল্লিয়ে লাভ নেই। তুমি কি ভেবেছ আমি কিছুই জানিনা? সবই জানি আর বুঝি আমি? তুমি যে কেন নূর ভাবিদের সহ্য করতে পারো না।সেটাকি আমি বুঝিনা ভেবেছ?
–কি বলতে চাও তুমি?
–তুমি ভালো করেই জানো আমি কি বলতে চাই। আয়াত নাহয় ছোট ছিল তাই হয়তো ওর সবকিছু মনে নেই। তবে আমার সবকিছু মনে আছে মা। কিভাবে তুমি আদি ভাইকে ছোট বেলায় অত্যাচার করতে। তা সবই আমার মনে আছে। আদি ভাই নিজের কষ্ট কাওকে বলতো না। ঘরের এককোনায় বসে মা বাবার ছবি বুকে জড়িয়ে একা একায় কাঁদত। আমি দেখেছি ভাইয়ের সেই অসহায়ত্ব। ভাইয়ের কষ্ট দেখে আমি নিজেই কেঁদে ফেলতাম। কিন্তু তোমার মতো পাষাণের মন গলতো না। কতটা পাষাণ হলে কেও ওমন মা বাপ ছাড়া মাছুম এতিম বাচ্চাটাকে কষ্ট দিতে পারে। ছিহ ভাবতেও আমার শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে।
কথাগুলো বলতে বলতে আবিরের চোখ ভরে উঠলো।চোখের পানি মুছে আবার বলে উঠলো।
–আর যখনই ভাই টাকা পয়সা ওয়ালা হয়ে গেল। হঠাৎই তখন ভাইয়ার প্রতি তোমার দরদ একদম উপচে পড়লো। তুমি কি ভেবেছ আমি কিছুই বুঝিনা। তুমি ভেবেছিলে সারাজীবন ভাইয়ার টাকায় আয়েশ করবে। আর সম্পত্তি নিজের করে নিবে। কিন্তু যখনি ভাইয়া বিয়ে করলো। তোমার সেই স্বপ্ন ভেঙে যেতে শুরু করায় তোমার এত রাগ তাইনা? আর এইজন্যই তুমি ভাবি আর তার পরিবারকে সহ্য করতে পারো না। ঠিক বলেছি না?
আবিরের কথায় শরিফা বেগম থতমত খেয়ে গেলেন। তার ছেলে যে তার সবকিছু যানে,সেটাতো তার জানাই ছিলনা। এখন ছেলেকে কি বলবেন তিনি? তবুও আমতা আমতা করে বললো।
–দেখ এমন কিছুই না। আর আমি যা করেছি তা তোমাদের ভালোর জন্যই করেছি। তোমাদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য করেছি।
–টু হেল ইউর ভবিষ্যত। এমন ভবিষ্যতে আমি লাথি মারি। আমাকে কি নিজের মতো স্বার্থপর ভেবেছ নাকি? কখনোই না। আমাকে কখনো নিজের মতো ভাববে না। একটা কথা ভালোভাবে কান খুলে শুনে রাখ মা। আমার বউ যদি কেউ হয়, তাহলে সেটা নিলাই হবে অন্য কেউ না। আমাকে তোমার কন্ট্রোলে রাখার মোটেও চেষ্টা করবে না। শেষমেশ ছেলেকেও হারাবে তুমি। কথাটা মনে রেখ।
কথাটা বলেই আবির হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
শরিফা বেগম রাগে কিড়মিড় করতে লাগলো। আজ ওই মেয়েটার জন্য তার ছেলে তার সাথে এমন ব্যবহার করে গেল। সব ওই পাগল মেয়েটার জন্য হয়েছে। ওই মেয়েটাকে তো কিছুতেই ছাড়বো না। ওর একটা ব্যবস্থা তো আমি করেই ছাড়বো। শরিফা বেগম মনে মনে এসব প্লান করতে লাগলো।
এদিকে এতক্ষণ ধরে আবিরের সব কথা আয়াত ওপর থেকে শুনেছে। ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না যে, ওর মা সত্যিই এরকম? এইজন্যই বুঝি বিহান সবসময় ওর মাকে নিয়ে কটুকথা শোনায়।
______________
রাত ১০টা
আদিত্য আর নূর একটু আগেই ডিনার শেষ করে এসেছে। আদিত্যর একটু পানির পিপাসা পেয়েছিল তাই সে গ্লাসে পানি ঢেলে মাত্রই মুখে দিয়েছিল।তখনই হঠাৎ নূর বলে উঠলো।
–আচ্ছা হিরো ঠোঁট কি খাওয়া যায়?
বেচারা আদিত্যের গলায় পানি আটকে গেল নূরের কথা শুনে। বিষম খেয়ে নাক মুখ দিয়ে পানি উঠে গেল। কাশতে কাশতে বেচারার হাল বেহাল। কোনরকমে নিজের কাশি থামিয়ে নূরের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললো।
–কি বললে তুমি?
নূর আবারও সোজাসাপটা বলে উঠলো।
–বলছি যে ঠোঁট কি খাওয়া যায়? খেতে কেমন লাগে? ওটা কি ইয়াম্মি?
আদিত্যের এবার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। আদিত্য আমতা আমতা করে বললো।
–তু তুমি কোথাথেকে শুনেছ এসব? ঠোঁট কি আবার খাওয়া যায় নাকি?
–হ্যাঁ যায়তো। আজ না আমি টিভিতে দেখেছি। একটা ছেলে মেয়ে একজন আরেকজনের ঠোঁট খাচ্ছিলো। ওদের দেখে মনে হচ্ছিল ওদের ঠোঁট খেতে অনেক মজা লাগছিল। নিশ্চয় অনেক ইয়াম্মি খেতে। আমিও খাবো ঠোঁট।
আদিত্য হতভম্ব হয়ে গেল। কি বলে এই মেয়ে? সেকি টিভিতে বসে বসে এইসব দেখে? আদিত্য বিস্ময় নিয়ে বললো।
–তুমি টিভিতে বসে বসে এইসব দেখ?
–হ্যাঁ দেখিতো।তাতে কি হয়েছে?
–তাতে অনেক কিছু হয়েছে। ওইসব পঁচা জিনিস। ওগুলো দেখতে হয়না। খবরদার আর দেখবে না ওসব।
–কেন? কেন দেখবনা? পঁচার কি হলো এখানে? ওরাতো অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছিল।একদম পঁচা ছিল না। আমিতো দেখবই। আর এখন আমি ঠোঁট খাবো। আচ্ছা আমি তোমার ঠোঁট খাই কেমন?
কথাটা বলেই নূর আদিত্যের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
আদিত্যর এবার চোখ দুটো কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। বেচারা ঢোক গিলে তড়িৎ গতিতে সরে গিয়ে বলে উঠলো।
–এই এই একদম না। কি করছ এসব? চুপ করে বসো।
আদিত্যের কথায় নূর মুখ ছোট করে বসে রইলো। আদিত্য বুকে হাত দিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কেমন একটা উইয়ার্ড সিচুয়েশনে পরে গেছে। কি করবে এখন বুঝতে পারছে না ও। নিজেকে একটু শান্ত করে নূরের সামনে বসে শান্ত সুরে বললো।
–দেখ এঞ্জেল এসব করতে হয়না। তোমার এসব করার সময় হয়নি এখনো।
নূর ঠোঁট উল্টিয়ে বললো।
–তো কখন আসবে সময়?
–সেটাতো জানিনা। তবে যখন আসবে তখন তুমি নিজেই বুঝতে পারবে।
নূর হালকা অভিমানী সুরে বলে উঠলো।
–হুহ্ আমি জানি তুমি এমনই বলছ এসব। আমাকে ঠোঁট খেতে দিবেনা তো তাই এসব বলছ। আমি বুঝি বুঝিনা? আমি সবই বুঝি। আমি অনেক ইনটেলিজেন্ট। ঠিক আছে তুমি তোমার ঠোঁট খেতে না দিলে। দুনিয়াতে কি তোমারই একার ঠোঁট আছে? আর কারো নেই বুঝি? আমি অন্য কারোও ঠোঁট খাবো।
কথাটা শোনার সাথে সাথে আদিত্যের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো।আদিত্য রাগে এই মুহূর্তে ও নূরের মানুষিক অবস্থার কথা ভুলে গিয়ে জোরে ধমক দিয়ে বললো।
–শাট আপ ইডিয়ট। কি আবোল তাবোল কথা বলছ এসব? আর কখনো এই কথা বললে, ধরে একটা আছাড় মেরে দেব।
আদিত্যের ধমক শুনে নূর ঠোঁট ফুলিয়ে ন্যাকা কান্না শুরু করে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।
–এ্যাএএএ আমাকে বকা দেয়। পঁচা একটা। পঁচা হিরো। একেতো ঠোঁট খেতে দিলনা, আবার আমাকে বকাও দেয়। পঁচা পঁচা পঁচা, তোমার সাথে কথা নেই, কাট্টি। 😤
নূর অভিমান করে বেড থেকে উঠে সোফায় গিয়ে বসলো।
আদিত্য চোখ বন্ধ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে নিল। ওতো ভুলেই গিয়েছিল যে,নূর কতটা অবুঝ। এভাবে ওর ওপর রাগ করাটা ঠিক হয়নি। আদিত্য চোখ খুলে নূরের দিকে তাকালো। নূর সোফায় বসে নাক টেনে টেনে গাল ফুলিয়ে অভিমান করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। রাগের মাথায় নূরকে ধমক দিয়ে এখন নিজেরই আপসোস লাগছে আদিত্যের। ইশশ এঞ্জেল টাকে কিভাবে বকা দিলাম, পরিটা আমার কেমন অভিমান করে আছে। এখন এই মান ভাঙাতে নাজানি কতো মেহনত করতে হয়।
আদিত্য আস্তে উঠে গিয়ে নূরের পাশে বসলো। আদিত্যকে আসতে দেখে নূর মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল। আদিত্য নরম সুরে বললো।
–আই এ্যাম সরি সোনাপাখি। আমি তোমাকে বকা দিতে চাইনি। আসলে তোমার ওই কথাটায় আমার রাগ উঠে গিয়েছিল। তাই বকা দিয়ে ফেলেছি।
আদিত্য দুই কানের লতি ধরে বললো।
–এই দেখ কান ধরছি। আর হবেনা এমন। হিরো অনেক গুলো সরি,প্লিজ মাফ করে দাও। তাকাও আমার দিকে এঞ্জেল।
নূর আরচোখে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য কান ধরে অপরাধী ফেস বানিয়ে আছে। নূরের একটু মায়া হলো। ক্ষমা করবে কি করবে না তাই ভাবছে। নূরকে চুপ থাকতে আদিত্য বলে উঠলো।
–ঠিক আছে, ক্ষমা না করলে আর কি করার? ভেবেছিলাম কালকে এঞ্জেলের জন্য রসমালাই নিয়ে আসবো। কিন্তু এঞ্জেল তো কথাই বলছে না,তাহলে আর কিভাবে আনবো?
নূর একলাফে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–সত্যিই? রসমালাই আনবে?
আদিত্য বলে উঠলো।
–কিভাবে আনবো? আমাকে তো তুমি মাফই করছ না।
–না না মাফ করে দিয়েছি তো। লড়াই লড়াই ফিট্টুস। আমি আর তুমি জান্টুস।
নূরের এমন উদ্ভট কথা শুনে আদিত্য হেঁসে উঠলো। নূরও সাথে হেঁসে উঠলো। আদিত্য নূরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল। নূরও বিড়াল ছানার মতো আদিত্যর বুকের সাথে মিশে রইলো।
চলবে……