#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১৮
★ এরইমধ্যে আরও এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। আবির সেদিন ওর মায়ের সাথে রাগারাগি করে আদিত্যের বাসায় চলে এসেছে। সেদিন থেকে আবির এই বাসায়ই আছে। আদিত্য দু একবার জিজ্ঞেস করেছিল বাসায় সব ঠিক আছে কিনা। আবির বলেছে, সব ঠিক আছে ভাবিডলের সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে তাই এখানে থাকে। আদিত্যও আর মাথা ঘামায় নি। আর নূরও আবিরের সাথে অনেক হাসিখুশি থাকে। দুজন যে একই প্রকৃতিকে লোক। তাইতো তাদের জমে ভালো। দুজন সারাদিন নানান রকমের নতুন নতুন দুষ্টামী করে বেড়ায়।
আবির নূরের সাথে আড্ডা দেওয়ার সাথে সাথে, নিলার পেছনেও লেগে থাকে। নিলার সাথে খুনসুটি করে,ওকে মানানোর নানান তালবাহানা করে। নিলা এখন আর চেয়েও আবিরকে এভয়েড করতে পারে না। নিলা উপরে উপরে রাগ দেখালেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই আবিরের প্রতি টান অনুভব করছে। সেদিন আয়াত বাসায় এসে নিলার সাথে কথা বলেছিল। নিলার পাশে বসে শান্ত সুরে বলেছিল।
–দেখ নিলা, আমি জানি আমার মা তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। তারজন্য আমি অনেক দুঃখিত। তাই বলে তুমি মায়ের শাস্তি ভাইয়াকে দিবে এটাকি ঠিক বলো? তুমি জানো সেদিন ভাইয়া তোমাকে নিয়ে মায়ের সাথে অনেক প্রতিবাদ করেছে। আর বলেছে বিয়ে করলে সে তোমাকেই করবে আর কাওকে না। আমি জানি তুমি হয়তো ভাইয়াকে ভরসা করতে পারছনা।ভাইয়াকে হয়তো তোমার ক্যারেক্টরলেস মনে হয়। ভাইয়ার যে ইমেজ তাতে তোমার তাকে ভরসা না করাটাই স্বাভাবিক। তবে একটা কথা আজ বলতে চাই তোমাকে। তুমি হয়তো ভাববে আমি বোন বলে ভাইয়ের তরফদারি করছি। কিন্তু আমি সত্যি বলছি,ভাইয়া যেমনটা সবার সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করে আসলে ও তেমনটা না।ওর আসলে সবার সামনে নিজেকে প্লে বয়, ক্যাসনোভা ভাব দেখাতে পছন্দ করে। তবে ও যতই মাস্তি মজা করুক কিন্তু ও আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের সাথে সিরিয়াস রিলেশনশিপে যাইনি। হ্যাঁ মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে, মাস্তি করে তবে এগুলো শুধুই ফানের জন্য করে। তুমি হয়তো ভাববে আমি কিভাবে জানবো। আসলে আমি আর ভাইয়া নিজেদের ভেতরে অনেক ফ্রী। আমি ভাইয়ার সব কিছুই জানি। আর ওর মনের কথাও বুঝতে পারি। তাইতো ভাইয়া যে তোমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে, সেটা আমি উপলব্ধি করেছি।কারণ কাওকে ভালোবেসে না পাওয়ার কষ্টটা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ বুঝবে না। তাই তোমাকে বলছি তুমি প্লিজ ভাইয়াকে একটা চাঞ্চ দিয়ে দেখ। আশা করি তুমি পস্তাবেনা।
নিলা সেদিন শুধু আয়াতের কথাগুলো শুনেছিল।প্রতিত্তোরে কিছুই বলেনি। তবে সেদিনের পর থেকে আবিরের প্রতি ওর একটা অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে।
____
ড্রয়িং রুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিল। তখনই একটু পরে ওখানে আয়াত এসে উপস্থিত হলো। বিহানও ওখানেই ছিল তবে একটাবারের জন্যও আয়াতের দিকে তাকালো না।আয়াতের সাথে ছিল ওর এক ছেলে ফ্রেন্ড। আয়াতকে দেখে আদিত্য হাসিমুখে বললো।
–আরে আয়ু, কেমন আছিস? আর এই ছেলেটা কে? চিনলাম নাতো।
আয়াত আরচোখে বিহানের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বিহানকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো।
–ভাইয়া ও হলো রিয়াদ। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ও না অনেক ভালো। আমার অনেক খেয়াল রাখে। আমাকে সবসময় হেল্প করে।
–ওও আচ্ছা। আয় বস তোরা।
আয়াত ছেলেটাকে নিয়ে বিহানের পাশাপাশি সোফায় গিয়ে বসলো। আর বিহানকে শুনিয়ে শুনিয়ে রিয়াদের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলতে লাগলো। আসলে আয়াত বিহানকে জেলাস করার জন্যই রিয়াদকে নিয়ে এসেছি। মনে মনে ভাবছে আজতো সে বিহানকে জ্বলিয়ে কয়লা করে ছাড়বে। তবে বেচারি আয়াতের প্ল্যান সফল হওয়ার কোন লক্ষ্মণ দেখছে না। বিহানতো একবারের জন্যও ওর দিকে তাকাচ্ছেও না। হতে পারে ভেতরে ভেতরে রাগছে তাই তাকাচ্ছে না।কথাটা ভেবে নিজে নিজেই খুশি হতে লাগলো আয়াত।
কিছুক্ষণ এভাবেই চলার পর বিহান হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চলে গেল। আয়াত ভাবলো হয়তো বিহান জেলাস হয়ে এখান থেকে চলে গেছে। এটা ভেবে আয়াত মনে মনে খুশি হয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে গেল। আয়াত বাইরে এসে দেখলো বিহান ফোনে কথা বলছে। আয়াত বিহানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বিহান কথা শেষ করে ঘুরতে নিলেই আয়াতকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি ওইলো,আপনে এইহানে ক্যালা?
–এমনি আমার মন চেয়েছে তাই।কেন আমি কি এখানে আসতে পারি না?
–ক্যান পারবেন না? এইডা আপনের ভাইয়ের বাছা।আপনে যেইহানে খুছি হেইহানে যাইবার পারেন।
কথাটা বলেই বিহান চলে যেতে নিলে আয়াত বলে আবির।
–আচ্ছা শুনুন, রিয়াদ সত্যিই অনেক ভালো তাইনা? আমার কত্তোওও কেয়ার করে। সত্যি ওর মতো ছেলে হয়না। আমার তো মনে হয় ও হয়তো মনে মনে আমাকে ভালোও বাসে।তবে বলতে পারে না। আপনার কি মনে হয়?
বিহান আয়াতের দিকে ঘুরে বলে উঠলো।
–হ এক্কেরে ঠিক কইচেন। আমারও তাই মনে হয়। তাইলে কবে খাইবার পারুম?
আয়াত থতমত খেয়ে বললো।
–কি খাবেন?
–আরে আপনার আর আপনার ওই কেয়ারিং আবালের বিয়ার দাওয়াত, আর কি? হাঁচা কইতাছি, মেলা দিন হইলো কব্জি ডুবাইয়া বিয়ার দাওয়াত খাইনা। জলদি জলদি শাদির আয়োজন কইরা ফালান। আমিও হ্যালা মন ভইরা খাইবার পারুম।চিন্তা কইরেন না।ফ্রী ফ্রী দাওয়াত খাইতাম না।একখান কাইল্লা ছাতা গিফট করুমনে। হেরপর ছাতার নিচে আপনেরা দুজন গান গাইয়েন,পেয়ার হুয়া ইকরার হুয়া। চাইলে ফ্রীতে নাগীন ডান্সও দেখাই দিমুনে। আমার জে কি খুছি লাগতাছে মাইরি। আমি অহন যাই বিয়ার লাইগ্যা নতুন জামাকাপড় তো বানাইতে দিতে হইবো তাইনা?
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে অতি উৎসাহ নিয়ে চলে গেল বিহান।
আর বেচারি আয়াত ওখানেই হা দাঁড়িয়ে রইলো। তার প্ল্যান যে এভাবে তার মাথার ওপর ঘোল ঢেলে দিবে। সেটাতো তার জানাই ছিলনা। যাকে জেলাস করতে চাইলাম,, সে উল্টো এখন আমার বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।। বাহ্ কি কপাল আমার।
__________
আদিত্য অফিস থেকে মাত্রই ফিরেছে। দরজার সামনে এসে দেখলো দরজা খোলা। আদিত্য একটু অবাক হলো। কারণ রোজ ও আসলে নূর দরজা খুলে দেয়। তাহলে আজ কি হলো? আদিত্য ভেতরে ঢুকে সামনে তাকাতেই দেখলো নূর একটা টেবিলের সামনে চেয়ারে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে। সাথে আয়াত আর নিলাও আছে। ওদের কিছুটা সামনে ফ্লোর থেকে একটু উঁচু করে স্টেজের মতো বানানো হয়েছে। যেখানে আবির রিমোট হাতে নিয়ে মুখের সামনে মাইকের মতো ধরে কি কি যেন বলে যাচ্ছে। আদিত্য এসব দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এসব কি হচ্ছে এখানে?
আদিত্যকে দেখে নূর উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–আরে হিরো তুমি এসে গেছ,দেখ দেখ আমরা না রিয়ালিটি শো রিয়ালিটি শো খেলছি। আমাদের শোয়ের নাম “কে হবে সেরা পুরুষ। অনেক মজা হবে। তুমিও আসোনা খেল আমাদের সাথে।
এসব দেখে তেমন একটা অবাক হলো না আদিত্য। কারণ এইসব দেখে অভ্যাস হয়ে গেছে ওর। আজকাল এদের কাজই এই।রোজ নতুন নতুন কিছু করা। সাথে এই আবির পাগলটা তো আছেই। তাই আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–তোমরা খেল,আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
–আচ্ছা।
আদিত্য সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।
আর এদিকে আবির তার মহান উপস্থাপনা শুরু করে দিল। রিমোট মুখের সামনে মাইকের মতো ধরে বলে উঠলো।
–তো সাহেবান, মেহেরবান, কাদরদান,পানদান,থুকদান,নূরজাহান, শাহরুখ খান, সালমান খান। যে আমার কথা বুঝেনাই সে উগাণ্ডায় গিয়া লাথি খান।
তো শুধি দর্শকশ্রোতা, আপনাদের সবাইকে স্বাগতম জানিয়ে শুরু করছি, আমাদের আজকের এই শো যার নাম পঁচা শাবান নিবেদিত কে হবে সেরা পুরুষ। সবার আগে স্বাগতম জানাবো আমাদের সম্মানীয় বিচারক মন্ডলিকে। তো জোরদার তালিয়া হয়ে যাক আমাদের প্রধান বিচারক সম্মানীয় রানী সাহেবার জন্য।
আবিরের কথায় সবাই তালি বাজাতে লাগল। নূর খুশি হয়ে নিজের জন্য নিজেই তালি বাজাচ্ছে। এরই মধ্যে ওখানে বিহানও এলো। বিহান এসে সোফায় বসে ওদের কান্ড দেখতে লাগলো।
আবির আবার বলে উঠলো।
–তাহলে ডেকে নেওয়া যাক আমাদের আজকের প্রতিযোগীদের। তো প্রথমে হবে বিড়াল হাঁটা (ক্যাট ওয়াক) রাউন্ড। আমি এক এক করে প্রতিযোগীদের নাম নেব। তারা বিড়াল হাঁটা করে দেখাবে। আর আমাদের বিচারক মন্ডলী তাদের বিড়াল হাঁটায় নাম্বার দিবে।
প্রতিযোগিরা আর কেউনা, বরং বাসার মেল সার্ভেন্ট আর গার্ডস রা। আবির প্রথমে একটা গার্ডের নাম নিয়ে বলে উঠলো।
–তো আমাদের মাঝে আসছে এখন পাতিলের তলার কালির মতো চকচকা সুন্দর,দ্য হ্যান্ডসাম বয় কালু মিয়া।
কথাটা বলে আবির ওখান থেকে সরে গেল।
আর কালু মিয়ার এন্ট্রি হলো। সাদা শার্ট প্যান্ট পরে কোদালের মতো সুন্দর দাঁত গুলা বের করে আবালের মতো হাসি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। হাঁটার সময় পা দুটো এমন ভাল ফেলছে, মনে হচ্ছে সে ক্যাট ওয়াক না ব্যাঙ ওয়াক করছে। তাকে দেখে বিহান বিশেষ টিপুনি করে বলে উঠলো।
–ওয়াহ,বোল্লাহ, বোল্লাহ কেয়া বাত কালু মিয়া। বহুত আচ্ছা, পুরা চন্দ্রগ্রহণ লাগতাছো মাইরি।
বিহানের কথায় কালু মিয়া তার সুন্দর দাঁত গুলা আরও প্রসারিত করে ফেলল। হাঁটা শেষ করে দাঁড়িয়ে রইলো। নূর তার নাম্বার বোর্ড থেকে দুই নাম্বার বের করে দেখাল। তারমানে সে দুই নাম্বার পেয়েছে। কালু মিয়া মাথা ঝুকিয়ে বিচারককে সম্মান জানিয়ে আবার উল্টো দিকে একই ভাবে হেঁটে চলে গেল। এবার আবির আরেক গার্ডের নাম নিয়ে বললো।
–তো এবার আমাদের মাঝে আসছেন উনি যার পেটের ভিতর আটলান্টিক মহাসাগর লুকিয়ে আছে। যার ভুরি শুধু ভুরি না পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। তার পেট ফাটলে আজই দুনিয়া দারি ধ্বংস হয়ে যাবে। সে হলো আমাদের ওয়ান এন্ড ওনলি শমসের আলী।
নাম নিতেই শমসের আলী তার মহান পেটখানা নিয়ে হাজির হলেন। পরনে লু্ঙ্গি আর ঢোলা শার্ট। দুই পা ফারাক করে হাঁসের মতো প্যাক প্যাক করে হেঁটে আসছেন। তাকে দেখেও বিহান টিপুনি করে বললো।
–ওয়াহ ছমছের মিয়া, খাতারনাক। আইজকা তো ছব ছেড়িরা তোমারে দেইখ্যা হাঁটু ফেল (হার্ট ফেইল) কইরা লইবো। হাঁচা কইতাছি, লেইখ্যা লও।
শমসের আলী খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।
–কিযে কননা স্যার।
নূর শমসের আলীকে তিন নাম্বার দিল। এইভাবে আবির এক এক করে সব আজব আজব আইটেমের মডেল গুলো ডেকে তাদের ক্যাট ওয়াক দেখাল। আবির শেষের ক্যান্ডিডেট কে ডাক দিল,ঠিক সেই সময়ই আদিত্য সিড়ি বেয়ে নেমে এলো। প্রতিযোগির জায়গায় আদিত্যই সেখান দিয়ে হেঁটে আসছে। আদিত্য শাওয়ার নিয়ে একটা টিশার্ট আর টাওজার পরেছে। এক হাতে চুলগুলো ব্রাশ করে আরেক হাতে মোবাইল টিপতে টিপতে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। নূর দুই হাতের তালুর মধ্যে মুখটা ঠেকিয়ে একধ্যানে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে।মনে মনে ভাবছে, হিরোটা কতো সুন্দর। সেরা পুরুষ তো আমার হিরোরি হওয়া উচিত।
আদিত্য নূরের সামনে আসতেই নূর ওর হাতের কাছে থাকা সবগুলো নাম্বারের বোর্ড তুলে ধরলো। আদিত্য সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এগুলো কি এঞ্জেল?
নূর বলে উঠলো।
–এগুলো নাম্বার। তোমাকে সবগুলো নাম্বার দিলাম। তুমি সবার সেরা পুরুষ।
আদিত্য হালকা হেঁসে দিল। আবির আদিত্যর কাছে এসে বললো।
–কি করছো ভাই?তুমি এই কম্পিটিশনে আসলে তো বেচারা প্রতিযোগিদের কলা গাছের সাথে গলায় দড়ি দিতে হবে।
আদিত্য বলে উঠলো।
–শাট আপ ইডিয়ট। আমি কেন প্রতিযোগি হতে যাবো। আমিতো এমনই এখানে আসছিলাম।
–ওওও তাও ভালো।
আদিত্য গিয়ে সোফায় বসলো।
আবির আবার বলতে লাগলো।
–তো দর্শকবৃন্দ আমাদের এক রাউন্ড শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের দ্বিতীয় রাউন্ড হবে। আর দ্বিতীয় রাউন্ডে আমাদের প্রতিযোগিদের নিজেদের ট্যালেন্ট দেখাতে হবে। তো সবার প্রথমে আসছে কালু মিয়া। আর কালু মিয়া আমাদের তার মধুর কন্ঠে গান শোনাবে। তালিয়া,
একটু পরে কালু মিয়া স্টেজে এসে হাতে গ্লাস নিয়ে মাইকের মতো সামনে ধরে ফাটা বাঁশের মতো সুরেলা কন্ঠে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ তুই আর চান্দ(তুমি আমার চাঁদ)
♬ ♬ আই চান্দেরই বাত্তি(আমি চাঁদেরই আলো)
♬ ♬ যুগে যুগে আই তোরে বাসুম ভালো
(যুগে যুগে আমি তোমায় বাসবো ভালো)
♬ ♬ তুই আর চান্দ
♬ ♬ আই চান্দেরই বাত্তি
♬ ♬ যুগে যুগে আই তোরে বাসুম ভালো
কালু মিয়ার এমন দুর্ধর্ষ কন্ঠ শুনে পুরো বাড়ি যেন কেঁপে উঠল। সবাই দুই হাতে কান চেপে ধরে তাকে ধামতে বললো। কালু মিয়া থেমে গেলে সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
এরপর এলো শমসের আলী। সে এসে ডান্স শুরু করে দিল। তার ডান্সের তাড়নায় বাড়িতে যেন ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেল। সবাই যার যার চেয়ার চেপে ধরে পরে যাওয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করলো। তারপর এলো আরেকজন। সে বললো সে অভিনয় করে দেখাবে। আবির এ্যাকশন বলতেই,লোকটি ড্রামাটিক ভাবে বলে উঠলো।
–চৌধুরী সাহেব, আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি।আমি একজন সত্যিকার প্রেমিক।আমার ভালোবাসা টাকা দিয়ে কিনা যাবেনা। আপনি ভাবলেন কি করে আপনার এই সামান্য দশ লাখার টাকার কাছে আমি আমার ভালোবাসাকে বিক্রি করে দিব? হ্যাঁ তবে পঞ্চম লাখ হলে নাহয় ভেবে দেখতে পারি। আসলে আমার ভালোবাসা একটু হাই লেভেলের তো। তাই এর মূল্যও বেশি। আগের চৌধুরী সাহেব তো চল্লিশ পর্যন্ত অফার করছিল। আপনি পঞ্চাশ দিলে ডিল ডান করতে পারি।😎
বিহান মুখে দুই আঙুল ঢুকিয়ে শিস বাজিয়ে বললো।
–জিও মামা, কি ডায়লগ ঝারছো মাইরি। একদম খাপে খাপ মাইনকার বাপ।
এরপর আরও কিছু আউলা ঝাউলা ট্যালেন্ট প্রদর্শন হলো।
এরপর এলো দ্বিতীয় রাউন্ড। এই রাউন্ডে সবাইকে বিচারকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সবার প্রথমে কালু মিয়াকে নূর প্রশ্ন করলো।
–আচ্ছা তুমি পড়াশোনা কতদূর করেছ?
কালু মিয়া বলে উঠলো।
–রাণী সাহেবা আই এপ্রিল পর্যন্ত পরছি।
সবাই ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এপ্রিল পর্যন্ত আবার কিভাবে পড়ে?
–আরে হইছে কি, আরে আর বাপ মা জানুয়ারিতে ভর্তি করাইছিল ইশকুলে(স্কুলে)। আর এপ্রিলেই আরে মাশটররা ইশকুল তোন উষ্টা মাইরা বাইর কইরা দিছে। এল্লাই আই এপ্রিল পর্যন্তই পড়ছি।
কালু মিয়ার কথায় সবাই হাসতে লাগলো।
এবার আরেজনকে নিলা বললো।
–আচ্ছা আপনি আপনার নিজের সম্বন্ধে কিছু বলুন।
লোকটি হঠাৎ নেকা কান্নার সুরে মেলোড্রামা করে বললো।
–মেডাম কি কমু। আমার জীবন টা অনেক কষ্টের ম্যাডাম। আমি অনেএএএক কষ্ট কইরা এতদূর আইছি। আপনি জানেন ম্যাডাম?আমরা এতটাই গরীব এতটাই গরীব যে, আমার তো আটমাসেই জন্ম হয়ে গিয়েছিল। আর জন্ম নিতেই আমি কাইন্দা হালাইছিলাম। ভাবতে পারেন কতো গরীব ছিলাম? আমরা এতটাই গরীব যে, জীবনে একখানের বেশি বিয়া করবার পারি নাই। কত কষ্ট আমার😭
লোকটার কথা শুনে নূর নাক টেনে টেনে কাঁদতে লাগলো।আদিত্য এতক্ষণ ফোনে কিছু একটা করছিল। নূরের কান্নার শব্দ শুনে আদিত্য চমকে গেল। আদিত্য দ্রুত নূরের কাছে গিয়ে নূরের মুখটা ধরে চিন্তিত সুরে বললো।
–হেই এঞ্জেল কি হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন?
নূর আদিত্যের দিকে ঝুঁকে গিয়ে ফিসফিস করে বললো।
–আরে হিরো, আমি সত্যি সত্যিই কাঁদছি নাতো। রিয়ালিটি শোতে এভাবে কথায় কথায় কেঁদে ফেলতে হয়। এটাই নিয়ম। এতে শো হিট হয়।
নূরের কথায় আদিত্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হালকা হাসলো। তারপর আবার সোফায় গিয়ে বসলো।
সব রাউন্ড শেষে জিতে গেল কালু মিয়া।কালু মিয়া হয়ে গেল সেরা পুরুষ। নূর একটা নকল ট্রফি কালু মিয়ার হাতে তুলে দিল। কালু মিয়া ট্রফি হাতে নিয়ে ন্যাকা কান্না করে বললো।
–আমি আমার এই জিতের জন্য আমার চৌদ্দ গুষ্টি, আমারে উষ্টা মারা মাশটার,আমারে লাথি মারা গার্লফ্রেন্ড রে,আমারে ঝাটা পেটা করা বউরে ধন্যবাদ দিবার চাই।
কালু মিয়ার কথায় সবাই হাসতে লাগলো। অতঃপর শেষ হলো এদের শো।
চলবে….
(আপনাদের নাইস নেক্সট দেখে দেখে আমি ফেডআপ হয়ে যাচ্ছি। লেখার মনমানসিকতাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জানিনা এমন চলতে থাকলে কতদিন গল্প কন্টিনিউ করতে পারবো😔)