মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ৩৯

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩৯

★ সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার ঢেকে গাঢ় রাত হয়ে গেছে। ড্রয়িং রুমের সোফায় আবির, বিহান,আয়াত আর নীলা বসে আছে। এরই মধ্যে কাজী সাহেবও চলে এসেছেন। একটু পরেই আদিত্য নূরের হাত ধরে সিড়ি বেয়ে নেমে এলো। বিহান ওদের দেখে মুখে আঙুল ঢুকিয়ে শিস বাজিয়ে উঠলো। সবাই খুশি হয়ে তালি বাজাতে লাগল।

দুজন নিচে এসে সোফায় বসলে, কাজী সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করলো। বিয়ে পরানো শেষে সবাই মোনাজাত ধরলো। মোনাজাত শেষে মিষ্টি মুখ করানো হলো। একটু পরে কাজী সাহেব বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। সবাই একসাথে রাতের ডিনার শেষ করে সোফায় বসে কথাবার্তা বলছে।
আবির নূরের পাশে এসে বসে বললো।
–ওয়াও, অ্যাম সো হ্যাপি। আমার কিউট ভাবিডল টা আবার ফিরে এসেছে। এখন আমরা আবার আগের মতো মাস্তি করবো।
কথাটা বলে আবির নূরের দিকে হাই ফাই করার হাত বাড়িয়ে দিল।
নূরও হাসিমুখে আবিরের হাতে হাত মিলিয়ে হাই ফাই দিয়ে বললো।
–অফকোর্স দেবর। উই গোনা বি রক।🤘

–ইশশ কতদিন পর দেবর ডাক শুনলাম। কলিজাখান ঠান্ডা হয়ে গেল।

আবিরের কথায় সবাই হেসে দিল। এভাবে সবাই নানান কথার আড্ডা জুড়ে দিল। বেচারা আদিত্য মনে মনে চরম বিরক্ত। এতদিন পরে নিজের বউকে কাছে পেয়ে কোথায় একটু তার সাথে সময় কাটাবে, কিন্তু এই আপদ গুলো তো ছাড়ছেই না ওকে। আর এই ম্যাডামও কি সুন্দর আড্ডায় মজে গেছে। যেন এসবের জন্যই এখানে এসেছে। নাহ আমাকেই কিছু করতে হবে। কথাটা ভেবে আদিত্য গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–বলছিলাম রাত তো অনেক হলো। তোদের নিশ্চয় ঘুম পাচ্ছে। রুমে গিয়ে শুয়ে পর তোরা।

ওরা সবাই ভালো করেই জানে যে আদিত্য তাদের কেন তাড়াচ্ছে। তাই আবির বাঁকা হেসে বললো।
–কি বলো ভাইয়া? ঘুম? আর আমাদের? কে ছড়াচ্ছে এসব মিথ্যে অপবাদ? আরে ঘুম তো দূরের কথা ঘুমের খালা খালুও আমাদের কাছে নেই। কিরে বিহান তোর কি ঘুম ধরেছে?

বিহান আবিরের দুষ্টুমি ধরতে পেরে ওর সাথে সায় দিয়ে বলে উঠলো।
–আরে কি কছ? ঘুম আবার কোন বাপের পোলা? হ্যারে তো আমি চিনিই না। আইজকা প্রথম নাম ছুনলাম।

আয়াত আর নীলাও ওর দুষ্টুমিতে সায় দিল।
আবির বলে উঠলো।
–দেখেছ আমাদের কারোরই ঘুমের কোন প্ল্যান নেই। আরে আজকে তো আমরা পার্টি করবো। ভাবিডল আসার খুশিতে সারারাত পার্টি হবে তাইনা ভাবিডল?

নূর একবার আরচোখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য চোখ গরম করে তাকিয়ে চোখের ইশারায় মানা করতে বলছে।
নূর জানে এরা সবাই আদিত্যকে জ্বালানোর জন্যই এসব করছে। তাই সেও একটু মজা নেওয়ার জন্য ওদের সাথে সায় দিয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। আজকে তো আমরা সারারাত পার্টি করবো।

এদের কথাবার্তায় আদিত্যের চোখ কপালে উঠে গেল। বেচারা কই আরও এদের বিদায় করতে চাচ্ছে। আর এরা কিনা সারারাত পার্টি করার প্ল্যান করছ? আর আমার বউটাও আছে একজন। কি সুন্দর ধেই ধেই করে রাজি হয়ে গেল। নিজের বরের কোন চিন্তাই নেই তার।

আদিত্যের আপসোসের মাঝেই আবির উঠে গিয়ে মিউজিক প্লেয়ারে #পার্টি অল নাইট গানটা প্লে করে দিল। তারপর উড়াধুরা ডান্স শুরু করে দিল। বিহান আয়াত আর নীলাও ওর সাথে যোগ দিল। আবির এসে নূরের হাত ধরে নিয়ে ডান্স ফ্লোরে। তারপর সবাই মিলে নাচানাচি শুরু করে দিল। এসব দেখে আদিত্য চরম বিরক্ত।

দশ মিনিট এভাবে চলার ছন্দের আদিত্যের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। আদিত্য উঠে গিয়ে ঠাস করে মিউজিক প্লেয়ার টা বন্ধ করে দিল। মিউজিক বন্ধ হওয়ায় সবাই নাচা বন্ধ করে আদিত্যের দিকে তাকালো। আদিত্য ঘোরের কোনা থেকে একটা লাঠি বের করে নিয়ে এলো।তা দেখে সবাই ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। আদিত্য ওদের সামনে এসে আয়াত আর নীলার উদ্দেশ্যে বললো।
–তোমারা দুজন এখনই নিজেদের রুমে যাও। রাইট নাও।

বলতে দেরি, আয়াত আর নীলার ওখান থেকে ফুরর হতে দেরি লাগলো না। দুজন দ্রুত ওখান থেকে চলে গেল। আদিত্য এবার আবির আর বিহানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আবির বেচারা ভয়ে ভয়ে বললো।
–ভাই কি করছো আমি না তোমার কিউটি গুলু গুলু ভাই?

বিহানও ভয়ে ভয়ে বললো।
–হ আদি, আর আমি না তোর জিগরি কলিজার দোস্ত? আমগো লগে এ্যামতে করবি তুই?

আদিত্য ওদের কোন দোহাই না মেনে লাঠি নিয়ে ওদের দিকে তেড়ে আসতে আসতে বললো।
–আজকের দিনে তোদের কাওকে আমি চিনিনা। তোরা দুটো এখুনি বের হবি আমার বাসা থেকে। যা দূর হ।

ওরা দুজন লেজ গুটিয়ে বাইরের দিকে দৌড় দিল। ওরা দরজার বাইরে আসতেই আদিত্য ঠাস করে ওদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিল। আবির দরজার বাইরে থেকে মেলোড্রামা করে বললো।
–বাহ ভাই বাহ্। আজ বউ পেয়ে ভাইকে পর করে দিলা? এত রাইতে আমাদের মতো অবলা দুটো নওজোয়ান ছেলেকে বাসার বাইরে বার করে দিলা? এখন যদি রাস্তার গুন্ডি মাস্তান মেয়েগুলো আমাদের ইজ্জতের ওপর হামলা করে। তখন আমাদের কি হবে?

বিহান চোখ মুখ কুঁচকে বললো।
–ইয়াক, ছিহ্। কিছব আবালা মার্কা কথা কছ? লাগতাছে তোর হার্ড ড্রাইভে ভাইরাস ধইরা গ্যাছেগা। ভালো কইরা সার্ভিসিং কর। হালার খালি আজাইরা কথাবার্তা।

–আরে তো কি করবো? এতো রাতে এখন যাবো কই?

–চল আমার লগে। আমার কোয়ার্টারে আইজা হুইয়া থাকিস।

–হুম ঠিক আছে চল।

আদিত্য দরজা লাগিয়ে পেছনে ফিরে এবার নূরের দিকে সরু চোখে তাকালো। নূর এবার কোনদিকে পালাবে সেই রাস্তা খুঁজছে। আদিত্য যে এবার ওর বারোটা বাজাবে সেটা নিশ্চিত। নূর দুই হাতে শাড়িরটা একটু উঁচু করে ধীরে ধীরে পেছাতে লাগলো। তারপর উল্টো ঘুরে দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিল। তবে তার কাজে সফল হলোনা সে। নূর দৌড় দিতেই আদিত্য পেছন থেকে দৌড়ে এসে নূরের হাত ধরে ফেললো। নূরের হাত ধরে ওকে দেয়ালের সাথে আটকে দিয়ে বললো।
–এখন পালাচ্ছ কেন? তখন তো খুব মজা নিচ্ছিলে। এখন কোথায় যাবে হ্যাঁ? আমাকে অনেক জ্বালিয়েছ তুমি। এখন আমার পালা। এখন থেকে আমি তোমাকে জ্বালাবো। আর তোমাকে আমার সব জ্বালা সহ্য করতে হবে।

নূর লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে। নূরের এই লজ্জাবতী লাজুক চেহারা আদিত্য প্রথম দেখছে। এই লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখখানা যেন আদিত্যের অবাধ্য চাহিদা গুলো আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে আজ আর কোন সংশয় নেই। আজ সব অবাধ্য চাহিদা গুলোকে আজাদ করে দিবে সে। আজ আর নিজেকে আটকাবে না সে। কেনই বা রাখবে ওর এঞ্জেল টা যে এখন পরিপূর্ণ ভাবে ওর বউ হয়ে উঠেছে।

আদিত্য নূরের দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে ধীরে ধীরে নূরের অধর পানে ঝুঁকতে লাগলো। আদিত্য ঠোঁট নূরের ঠোঁটে ছুঁইছুঁই তখনই হঠাৎ নূর আদিত্যের নাকের ডগায় টুস করে কামড় বসিয়ে দিল। আদিত্য একটু হকচকিয়ে উঠে নূরকে ছেড়ে নিজের নাকে হাত দিল। নূর সেই সুযোগে ওখান থেকে দৌড়ে পালালো। সিঁড়ির কাছে এসে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো।
–তোমাকে আমিই সারাজীবন জ্বালিয়ে যাবো বুঝেছ হিরো?
কথাটা বলে নূর বাচ্চাদের মতো জিব দেখালো।

–তবেড়ে দুষ্টু, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের দিকে ছুটলো। আদিত্যকে আসতে দেখে নূরও হাসতে হাসতে দৌড়ে ওপরে উঠে গেল। নূর আগে আগে দৌড়াচ্ছে আর আদিত্য ওর পেছনে পেছনে।

নূর দৌড়ে এসে ওর রুমে ঢুকে রুমের দরজা আটকে দিল। আদিত্য দরজার কাছে এসে দরজায় টোকা দিয়ে বললো।
–নূর দরজা খোল। দরজা কেন আটকালে?

নূর ভেতর থেকে শুধু হাসছে। কিন্তু দরজা খুলছে না। আদিত্য এবার একটু আদুরে গলায় বললো।
–নূর সোনা,মাই এঞ্জেল। আমার সোনা বউটা দরজা খোল না?

নূর এবার ভেতর থেকে বলে উঠলো।
–উঁহু খুলবো না।

–এমন করেনা প্লিজ? তুমি না আমার লক্ষী সোনা বউ? প্লিজ খুলনা?

–তাহলে আগে বাসর ঘরে ঢোকার টাকা দাও তারপরে ঢুকতে দেব।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কিসের টাকা?

–বারে, তুমি কি ভেবেছ তুমি আমার দেবর ননদ কে তাড়িয়ে দিবে তাই বলে আমি ওদের হক আদায় করবো না? ওরা নেই তো কি হয়েছে? আমি ওদের হয়ে ওদের হক আদায় করবো। তাই ফটাফট টাকা ছাড়ো। নাহলে ঘরে ঢোকা ক্যান্সেল।

–না না এমন করোনা প্লিজ। আমার সবকিছু তো তোমারই। তাহলে এখানে দেওয়ার কি আছে?

–উঁহু, ওইসব শুকনো কথায় চিঁড়ে ভিজবে না। আগে মাল ছাড় তারপরে কথা।

— আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। কিন্তু আমি এখান থেকে কিভাবে টাকা দিব? আমার ওয়ালেট আর সবকিছু তো রুমের ভেতরে আছে। তুমি দরজা খোল তারপর রুমে এসে দিচ্ছি তোমাকে।

–উঁহু উঁহু ওইসব চালাকি আমার সাথে খাটবে না। আগে মাল তারপর দরজার খোলা। তুমি আমাকে বলো তোমার সবকিছু কোথায় রাখা আছে আমি এনে দিচ্ছি তোমাকে।

–ওকে ফাইন। কাবার্ডের সেকেন্ড ড্রয়ারে দেখ আমার চেকবুক আছে। একটা কলম আর চেকবুক টা নিয়ে এসো।

আদিত্যের কথামতো নূর গিয়ে কাবার্ড থেকে চেকবুক আর কলম এনে দরজার নিচ দিয়ে আদিত্যকে দিল। আদিত্য চেকবুক আর কলম নিয়ে একটা চেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার অ্যামাউন্ট লিখে চেকটা ছিঁড়ে আবার দরজার নিচ দিয়ে নূরের কাছে দিয়ে বললো।
–নাও এখন হয়েছে? এখন তো খোল?

নূর বলে উঠলো।
–ঠিক আছে দরজা খুলে দিচ্ছি। তবে কিন্তু আগেই ঢুকবে না। আমি যখন ঢুকতে বলবো তখন ঢুকবে ঠিক আছে?

–ওকে বাবা ঠিক আছে। তুমি জা বলবে তাই হবে। আগে দরজটা তো খোল।

নূর একটু পরে দরজার লক খুলে দিল। তারপর তাড়াতাড়ি করে গিয়ে বেডের ওপর লম্বা ঘোমটা টেনে সুন্দর করে বসলো। বসে থেকেই একটু গলা উঁচিয়ে আদিত্যকে ভেতরে আসার অনুমতি দিল আদিত্য এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মুচকি হেসে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। নূরকে এভাবে ঘোমটা টেনে বসে থাকতে দেখে আদিত্য মুচকি হেসে দরজা বন্ধ করে ধীরে ধীরে নূরের কাছে এগিয়ে আসলো। নূরের হাত পা কেমন যেন কাঁপছে, বুকের হার্টবিট অস্বাভাবিক ভাবে চলছে। নূর বুঝতে পারছে না আদিত্য কতবার ওর কাছে এসেছে। ওকে জড়িয়ে ধরেছে, বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছে। তাহলে আজ কেন এমন লাগছে? যেন আজকে নতুন করে ওর কাছে আসছে আদিত্য।

আদিত্য নূরের সামনে বেডের ওপর এসে বসলো। তারপর দুই হাত বাড়িয়ে নূরের ঘোমটাটা ধীরে ধীরে উঠালো। ঘোমটা উঠিয়ে দেখলো নূর কেমন চোখ টেরা করে ফানি ফেস বানিয়ে রেখেছে। আদিত্য সেটা দেখে ফিক করে হেসে দিল। নূরও আদিত্যর সাথে হেঁসে দিল। আদিত্য নূরের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে নাকে নাক ঘষে মায়াবী কন্ঠে বললো।
–জানো আমার এই দুষ্টু এঞ্জেল টাকে আমি কতো মিস করেছি?

নূর নরম গলায় অপরাধী সুরে বলে উঠলো।
–আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাইনা?

–উঁহু, এতে তোমার কোন দোষ নেই। তুমিতো আর ইচ্ছে করে কিছু করোনি। তাই ওসব ভুলে যাও। তুমি আমার জীবনে ফিরে এসেছ এটাই বড়ো কথা। আর কোন অভিযোগ নেই আমার। তুমি আমার পাশে থাকলে আমার আর কিছু চাইনা। কিছু না।

নূর আবেগি চোখে তাকিয়ে বললো।
–এতো কেন ভালোবাসো আমায়? আমি কি এতো ভালোবাসার যোগ্য?

–তুমি এর চেয়েও বেশি ভালোবাসার যোগ্য। তোমাকে যতই ভালোবাসি মনে হয় কম হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করে আরও বেশি করে ভালোবাসতে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের কপালে সময় নিয়ে পরম আদরে চুমু খেল। নূর আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল। আদিত্য নূরের দিকে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে বললো।
–তুমি না আমাকে খেতে চেয়েছিলে? বলেছিলে আমাকে নাকি চকলেটের চেয়েও ইয়াম্মি লাগে। তখন তো আমি মানা করেছিলাম। তবে আজ কোন মানা নেই। তুমি চাইলে আমাকে পুরোটা। খেয়ে ফেলতে পারো। নাও অ্যাম অল ইউরস।

নূর লজ্জায় লাল হয়ে আদিত্যর বুকের ভেতর লুকিয়ে পড়লো। আদিত্য মুচকি হেসে দুহাতে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। আদিত্যের ছোঁয়ায় নূর কেঁপে উঠল। সারা শরীরে এক শিহরন ছড়িয়ে পড়লো। আদিত্য নূরকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায়ই নূরের মাথার ওড়নাটা ধীরে ধীরে খুলে নিল। নূরের কানের দুল খুলে কানে চুমু খেল। নূর কেঁপে উঠে আদিত্যর পাঞ্জাবি শক্ত করে খামচে ধরলো। আদিত্য এবার আরেক কানের দুল খুলে সে কানেও চুমু খেল। এরপর নূরের গলার নেকলেস টা খুলে নিয়ে গলায় চুমু খেল। নূর আরও বেশি কাঁপতে শুরু করলো। সারা শরীরে শিহরণ ছড়িয়ে পড়লো ওর।

আদিত্য এবার ধীরে ধীরে নূরকে বালিশে শুইয়ে দিল। নূরের লালিমা ছড়ানো মুখটার দিকে নেশালো চোখে তকিয়ে রইলো। আদিত্যর এমন চাহুনি দেখে নূর আরও লজ্জায় মিয়িয়ে পড়লো। লাজুক হেসে শাড়ির আঁচল টেনে মুখের দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো নূর। জর্জেট শাড়ী হওয়ায় শাড়ীর ভেতর থেকেই নূরের মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আদিত্য মাথা ঝুকিয়ে নূরের ঠোঁটের ওপর থেকে আঁচলের অংশ কামড়ে ধরে আঁচল টা সরিয়ে দিল। নূর চোখ বন্ধ করে কাঁপছে। নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে ওর। আদিত্যের নেশা বেড়ে যাচ্ছে। আদিত্য নূরের কপালে চুমু খেয়ে, দুই চোখের পাতায়, দুই গালে চুমু খেল। তারপর নূরের অধর যুগলে ডুব দিল। নূরের অধরসুধাপান করতে লাগলো। নূরও আর চুপ থাকতে পারলোনা। আদিত্যের ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে আদিত্যের চুল খামচে ধরে তার ভালোবাসায় নিজেকে বিলিয়ে দিল। দুজনেই এক স্বর্গীয় সুখের রাজ্যে পারি দিল। পূর্ণতা পেল ওদের ভালোবাসা।
___

এক নতুন সকাল। নতুন জীবনের নতুন উদ্দীপনার সকাল। আদিত্যের জীবনের সবচেয়ে সুখকর একটা সকাল। এই সকাল নিয়ে এসেছে ওর জীবনে সীমাহীন সুখের জোয়ার। যে সুখের জোয়ারে ভাসতে চায় ও সারাজীবন।

ঘুমন্ত নূরের গালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করছে আর নূরের মায়াবী মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে আদিত্য। ঘন্টা খানিক আগে ঘুম ভেঙেছে আদিত্যের। তখন থেকে এভাবেই নূরের দিকে তাকিয়ে আছে আদিত্য। এই মুখখানায় যেন রাজ্যের যত মায়া ঢেলে দিয়েছে। আদিত্য যত দেখে ততই যেন ওর শরীর মন প্রশান্তিতে ভোরে যায়। সারাজীবন তাকিয়ে থাকলেও যেন ক্লান্ত হবেনা ও। কিছুক্ষণ পর নূরের কপালে চুমু খেয়ে গায়ে চাদর টেনে দিয়ে, রোজকার অভ্যাস অনুযায়ী আদিত্য জগিংয়ে চলে গেল।

ঘন্টাখানিক পর ফিরে এলো আদিত্য। নূর এখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের পাশে গিয়ে বসলো। নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললো।
–এই ঘুম পাগলিটা, ঘুম ভাঙেনি এখনো? অনেক বেলা হলোতো? এখন উঠ।

নূর একটু নড়েচড়ে উঠে চোখ বন্ধ অবস্থায়ই ঘুমুঘুমু কন্ঠে বললো।
–উমমম ডিস্টার্ব করোনা আমাকে। ঘুমুতে দাওনা? দুষ্টু হিরোটা কাল রাতে আমাকে ঘুমুতে দেয়নি।

নূরের কথায় আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর নূরের মুখের কাছে ঝুঁকে দুষ্টু হেসে বললো।
–আচ্ছা তাই? কি করেছে দুষ্টু হিরোটা কাল রাতে?

নূর ঘুমের ঘোরেই বলছে।
–অনেক জ্বালিয়েছে আমাকে। একটুও ঘুমুতে দেয়নি।

–আচ্ছা কিভাবে জ্বালিয়েছে?

–হিরোটা না আমাকে,,,
এতটুকু বলতেই হঠাৎ নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নূর ফট করে চোখ খুলে দেখলো আদিত্য ওর মুখের ওপর ঝুঁকে আছে। নূর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর গায়ের ওপর একটা চাদর ছাড়া আর কিছুই নেই। নূরের লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। আদিত্য আবার বলে উঠলো।
–কি হলো বলোনা কিভাবে জ্বালিয়েছে তোমার হিরোটা?

নূর লজ্জায় চাদর টেনে মাথা ঢেকে নিয়ে লাজুক কন্ঠে বললো।
–জানিনা যাও অসভ্য।

–কিহ্ আমার মতো এমন ভদ্র ছেলের নামে এতোবড় বদনাম? এটা কিছুতেই মানা যায় না। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
কথাটা বলে আদিত্য দুষ্টু হেসে নূরের চাদরের ভেতর ঢুকে গেল। তারপর নূরকে কাতুকুতু দিতে লাগলো। নূর মোচড়ামুচড়ি করতে করতে খিলখিল করে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে বললো।
–ওকে ওকে সরি সরি আর বলবো না। প্লিজ ছেড়ে দাও।

আদিত্য থেমে গিয়ে নূরের কপালে চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর চাদর সহ নূরকে কোলে তুলে নিল। নূরকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।

চলবে…..
(ছোট ছোট করবেন না প্লিজ । আমারও ইচ্ছে হয় বড় করে দেওয়ার। তবে সবসময় সম্ভব হয় না। যখন পারি তখন ঠিকই দেই। তাই বলে প্রতিদিন একই রকম দেওয়া সম্ভব হয় না। আর যদি সব পর্ব বড়ো করতে গেলে আমাকে একদিন পরপর গল্প দিতে হবে। এখন আপনারাই ভেবে দেখুন কোনটা ভালো হবে।

রিচেক করিনি। ভুল ত্রুটি মার্জন করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here