মহুয়া পর্ব -০৬

#মহুয়া
#শার‌মিন_আক্তার_সাথী
পর্ব: ৬

‌তি‌থি রিদুকে কল কর‌লেও, ফোনটা হৃ‌দিতা রি‌সিভ ক‌রল। তি‌থি বলল,
_” হ্যালো ভাইয়া।
হৃ‌দিতা বলল,
_” তি‌থি আমি হৃদিতা।
_” কেমন আছেন আপু?
_” ভা‌লো তু‌মি?
_” জি ভা‌লো। আপ‌নি কি হস‌পিটা‌লে?
_” হ্যাঁ।
_” ভাইয়া কোথায়?
_” সেও হস‌পিটা‌লে।
_” প্রিয়‌তি আপু কেমন আছে?
দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে হৃ‌দিতা বলল,
_” অবস্থা ভা‌লো না।
_” মাথা কি বে‌শি ফাঁট‌ছে।
_” হ্যাঁ পাঁচটা সেলাই লাগ‌ছে। প্রচুর ব্লাড গে‌ছে। তাছ‌াড়া ভাবির বাচ্চাও নষ্ট হ‌য়ে গে‌ছে।
_” কী বাচ্চা মা‌নে?
_” ভা‌বি প্রেগ‌নেন্ট ছিল। ভা‌বির এ অবস্থা দে‌খে ভা‌ইয়া এম‌নি‌তেই ভে‌ঙে প‌ড়ে‌ছে, এখন বাচ্চা নষ্ট হবার কথা শু‌নে বেচারা একেবা‌রে ভে‌ঙে প‌ড়ে‌ছে।

‌তি‌থির খুব কষ্ট হ‌চ্ছে। গলা আট‌কে আস‌ছে। জি‌জ্ঞেস করল,
_” আপু ঠিক হ‌বে তো?
_” হ্যাঁ ঠিক হ‌বে। ত‌বে যখন তি‌নি জান‌তে পার‌বে তার বাচ্চাটা নেই তখন কী কর‌বে আল্লাহই জা‌নেন। মাথায় আঘাত লে‌গে‌ছে তাই ডাক্তার আপাতত বাচ্চা নষ্ট হবার কথা বলতে নি‌ষেধ কর‌ছেন। সুস্থ হ‌লে তারপর বলতে বল‌ছে।
_” আপু একটা কথা ব‌লি?
_” হ্যাঁ বলো।
_” ভাইয়া‌কে ব‌লো আপু‌কে আপনাদের বা‌ড়ি নি‌য়ে যে‌তে। এখা‌নে থাক‌লে হয়ত দেখা যা‌বে প্রেমা আপু এক‌দিন আপু‌কে মেরেই ফেল‌বে। ও তো মে‌য়ে না ডাইনী।
কথাটা বলে শেষ কর‌তে পারল না, এর ম‌ধ্যে তি‌থির গালে স‌জো‌রে একটা চড় পড়ল। হাত থে‌কে মোবাইলটা প‌ড়ে গি‌য়ে বন্ধ হ‌য়ে গেল। তি‌থি চোখ বড় ক‌রে সাম‌নে থাকা মানুষটার দি‌কে তাকাল। দেখল প্রেমা রাগী চো‌খে ওর দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। প্রেমার চোখ থে‌কে আগুন ঝরছে। তি‌থির চোখ থে‌কে বড় বড় আকা‌রের জলকনা ঝরতে লাগল। প্রেমা চিৎকার ক‌রে বলল,
_” আমি ডাইনী? আমার বাবার খাস, আমাদেরটা প‌রিস আবার আমা‌কেই যা তা ব‌লিস? তোর বাবা তো দি‌নের পর দিন বিছানায় প‌ড়ে আছে। আমার বাবা না দি‌লে কি খাই‌তি তোরা? ভিক্ষা করতে হত।

‌প্রেমার চিৎকার শু‌নে তি‌থির মা দৌ‌ড়ে আসল। তারপর বলল,
_” কী হ‌য়ে‌ছে প্রেমা চিৎকার করছ কেন?
_” চা‌চি তোমার মে‌য়ে‌কে ব‌লো আশ্রিতা আশ্রিতার মত থাক‌তে। আমা‌দের খা‌বে, পরবে আবার আমা‌কে যা তা বল‌বে?
‌তি‌থির মা কিছু বুঝ‌তে না পে‌রে বলল,
_” কিন্তু হ‌য়ে‌ছেটা কী?
‌তি‌থি এব‌ার মুখ খুলল। বলল,
_” আপু ভু‌লে কেন যাচ্ছ এ বা‌ড়ি তোমার বাবার নয়, দাদাজা‌নের। তো এ বাড়ি‌তে ‌তোমার যতটা অধিকার ততটা আমাদের। বাবা নাহয় দু বছর য‌‌াবত অসুস্থ তা ব‌লে তোমা‌রা আমা‌দের কো‌নো খরচ বহন ক‌রো না। সেটা বল‌লে তোমরা মিথ্যা বল‌বে। হ্যাঁ চাচাজান আমা‌কে কাপড় দেন, পড়ার খরচ দেন কিন্তু তা তো তার আয়ের টাকা নয়! অামা‌দের ধানী জ‌মি থে‌কে, আর সব‌জির চাষ ক‌রে তো কম টাকা আসে না। তা‌তে চাচার যতটা ভাগ ততটা বাবারও। চাচা পু‌রোটা নেয়, আমা‌দের ভাগ দেয়না। শুধু খাওয়া পড়ার খরচ দেয়। হিসাব কর‌লে তোমরা আমা‌দের টাকা মে‌রে খাচ্ছ, তোমার বাবার টাকায় আমারা খাই না।

প্রেমা তি‌থির কা‌ছে তে‌ড়ে গি‌য়ে বলল,
_” যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। আজ তোর মুখ ভে‌ঙে ফেলব।
তি‌থির মা ঠাস ক‌রে প্রেমার গা‌লে চড় ব‌সি‌য়ে বলল,
_” তোর সাহস তো কম নয়। আমার সামনে দাঁ‌ড়িয়ে আমার মে‌য়ে‌র গা‌য়ে হাত তুল‌ছিস? ও তো ভুল কিছু বলে‌নি? আসুক তোর বাবা তা‌কে বলব, তিথির বাবার ভাগ বু‌ঝি‌য়ে দি‌তে। তোর মত দজ্জাল যে বা‌ড়ি‌তে আছে সে বা‌ড়ি‌তে থাকব না। এ বা‌ড়ি‌তে আমা‌দের ভা‌গের অংশ ভাড়া দি‌য়ে চ‌লে য‌াব এ নরক থে‌কে। যে বা‌ড়ি‌তে, এক অসভ্য মে‌য়ে নি‌জের র‌ক্তের বড় বোন‌কে মা‌রে, তার সন্তান‌কে খুন ক‌রে, তেমন খু‌নির মুখ দেখাও পাপ। তোর মু‌খে থু। চল তি‌থি ঘ‌রে চল। এই জা‌নোয়ারটার মুখ দেখ‌লে আমাদের অমঙ্গল হ‌বে। অলক্ষী জা‌নি কোথাকার।

‌প্রেমা গা‌লে হাত দি‌য়ে ঠায় দাঁ‌ড়ি‌য়ে রইল। এমন ঝটক‌া অনেক‌দিন পর পেল ও। ওর নী‌রিহ চা‌চি, যে কিনা মু‌খের উপর কথা পর্যন্ত ব‌লে না সে এমন ক‌র‌বে তা চিন্তাও কর‌তে পা‌রে‌নি ও।

৮!!

রিদু প্রিয়‌তির ডানহাতটা নি‌জের দু হা‌তের মা‌ঝে নি‌য়ে ওর পা‌শে ব‌সে আছে। কে‌বি‌নে দেয়া হ‌য়ে‌ছে প্রিয়‌তি‌কে। বেশ ক‌য়েক‌দিন হস‌পিটা‌লে থাক‌তে হ‌বে। বেহুশ অবস্থায়ই ইন‌জেকশন দি‌য়ে ডি এন সি ক‌রে‌ছে ডাক্তার। সা‌থে মাথায় সেলাই ক‌রে‌ছে। দু‌টো প্রেশা‌রে প্রিয়‌তির শরীরটা নি‌স্তেজ হ‌য়ে আছে। চোখ পিট‌পিট ক‌রে মে‌লে আবার বন্ধ ক‌রে ফেল‌ছে। মাথা যন্ত্রনায় তাকা‌নোর মত শ‌ক্তি পা‌চ্ছে না। পে‌টেও প্রচন্ড যন্ত্রনা হ‌চ্ছে। ম‌নে হ‌চ্ছে পে‌টের ম‌ধ্যে কেউ কাটা‌ছেড়া ক‌রে ক্ষত‌বিক্ষত ক‌রে‌ছে। প্রিয়‌তি বাম হাতটা পে‌টে দি‌তে চাইল কিন্তু ক্যা‌নোলার কার‌ণে পারল না। টান লাগল। শরী‌রে রক্ত দেয়া হ‌চ্ছে। প্রচন্ড যন্ত্রনায় অনুভূ‌তি শ‌ক্তি নষ্ট হ‌য়ে গেছে। গলা শু‌কি‌য়ে কাঠ হ‌য়ে গে‌ছে। পা‌নি খে‌তে ইচ্ছে কর‌ছে কিন্তু বলার মত শ‌ক্তি নেই। আবার চো‌খের পাতা ঝাপসা হ‌য়ে আসল। ঘুমা‌তে ইচ্ছা কর‌ছে। মাথা যন্ত্রনায় ঘুমটা ঠিকভা‌বে আস‌ছে না। যন্ত্রনায় শরী‌রের প্র‌তিটা অং‌শের অনুভূ‌তি ভোতা হ‌য়ে গে‌ছে। প্রিয়‌তি ম‌নে ম‌নে ভাব‌ছে,
_” মন ভ‌রে ঘুমা‌লে আমি সুস্থ হব। আমার ব্যথা কমবে। হে আল্লাহ আমা‌কে ঘুম দাও, প্রচুর ঘুম।

‌রিদু প্রিয়‌তির কপা‌লে চু‌মো খে‌য়ে বলল,
_” আমার ক‌লিজাটার কি বে‌শি কষ্ট হ‌চ্ছে?
‌প্রিয়‌তি হালকা মাথা নাড়ার চেষ্টা করল। কিন্তু না পে‌রে ঠোঁট নে‌ড়ে বলল,
_” হুঁ।
‌রিদু ঠোঁ‌টে আলত চু‌মো খে‌য়ে বলল,
_” এইত ক‌দিন তারপর সুস্থ হ‌য়ে যা‌বে জান। একটু সহ্য ক‌রো।
‌রিদু‌ প্রিয়‌তি‌কে সহ্য কর‌তে বল‌ছে কিন্তু নি‌জেই প্রিয়‌তির কষ্ট সহ্য কর‌তে পার‌ছে না। প্রিয়‌তি ডান হা‌তের একটা আঙুল দি‌য়ে নি‌জের ঠোঁট দেখাল। তারপর ম‌লিন মু‌খে হালকা হাসল। রিদু বুঝল প্রিয়তির‌ কী চাই? রিদু প্রিয়‌তির ঠোঁ‌টে আরও দু‌টো আলত চু‌মো খেল। তারপর ব‌লল,
_” সুস্থ হও তখন হাজার, লা‌খো চু‌মোতে ভ‌রি‌য়ে দিব। এখন ছটফট না ক‌রে ঘুমা‌নোর চেষ্টা করো তো।

‌প্রিয়‌তির বাবা মা কে‌বি‌নে আসল। রিদু নি‌চু গলায় বলল,
_” বাই‌রে চলুন।
তারা নিঃশ‌ব্দে বাই‌রে গেল। রিদু তা‌দের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
_” আপনারা দয়া ক‌রে আর আমার স্ত্রীর চার পা‌শে আস‌বেন না।
পলাশ রে‌গে বলল,
_” তোমার স্ত্রীর আগে ও আমার মে‌য়ে।
_” আপনার মে‌য়ে ছিল এবং থাক‌বে কিন্তু‌ বর্তমা‌নে আমি ওর স্বামী। আর আইনি ম‌তে আমি এখন ওর অভিবাবক। আমার স্ত্রীর সা‌থে আমি আপনা‌দের দেখা কর‌তে দিব না। আপনারা আস‌তে পা‌রেন। আর হ্যাঁ আপনাদের ঐ কাল না‌গিনী মে‌য়ে‌কে শিক্ষা দেবার সব ব্যবস্থা‌ হয়ে গে‌ছে। পু‌লিশ বোধ হয় আপনাদের বা‌ড়ির প‌থে। আমার স্ত্রী‌কে মে‌রে, আমার সন্তান‌কে খুন ক‌রে ও রক্ষা পা‌বে ভে‌বেছেন? নো নেভার। ও‌র না‌মে আমার সন্তান‌কে হত্যার, স্ত্রী‌কে প্রা‌ণে মে‌রে ফেলার এবং আমার সংসার ভাঙার মামলা করে‌ছি অামি। ঐ খু‌নি জে‌লে যা‌বে এখন?
রে‌হেনা বেগ‌মের মুখ ভ‌য়ে চুপ‌সে গেল। তি‌নি পলাশ‌কে বল‌লেন,
_” প্রেমা‌কে ফোন করো

চল‌বে________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here