“খালামণি, তুমি কি বলবা বাবা কেনো আমার বিয়েটা ভেঙ্গে দিলো? আমি অনেকক্ষণ থেকে প্রশ্ন করছি। তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ কেনো? ছোট কোনো বিষয় নিশ্চয়ই হয়নি? বাবা নিজেই যখন বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে তাহলে বাবা এত চিন্তা কেনো করছে? এমন তো আর না তার মেয়ের কোনো ত্রুটি আছে দেখে ছেলেপক্ষ বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। তাহলে কি সমস্যা? দেশে কি ছেলের অভাব হয়েছে?”
ঘন্টাখানিক আগে বাসায় অনেককিছু ঘটে গিয়েছে। তখন কাজের মেয়টার চিৎকার শুনে অরিত্রা ও খালামণি নিচে নেমে এসে দেখে, মোতাহার আহমেদ রিডিংরুমের মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। অরিত্রা ছুটে গিয়ে তাকে চিৎ করে শোয়ালো। বছর আটারো-কুড়ির কাজের মেয়েটার চোখে মুখে আতঙ্ক। মোতাহার আহমেদকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে বড়সড় ভয় পেয়েছে। সে হড়হড় করে বললো, “হামি চা নিয়া আইছি! ওমা দেহি কি খালুজান মাটিত পইড়া আছে। কত কতা কইয়া ডাকিচ্চি! কোনো বাতচিৎ করেনা!”
অরিত্রা টেবিলের উপরে ঢেকে রাখা পানির গ্লাস নিয়ে মোতাহার আহমেদের মুখে কয়েকফোঁটা পানি ছিটাতেই মোতাহার আহমেদের জ্ঞান ফিরলো। অরিত্রা আর খালামণি তাকে ধরে মেঝে থেকে উঠায় নিয়ে চেয়ারে বসালো। কাজের মেয়েটা গ্লাসে করে পানি এনে দিলো। মোতাহার আহমেদ এক নিঃশ্বাসে সম্পূর্ণ গ্লাসের পানি শেষ করে মুখ হা করে বসে আছেন। তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, নিঃশ্বাস নিতে গেলে বুকের কাছে ব্যাথা হচ্ছে।
ঘড়িতে রাত নয়টা বেজে সতের মিনিটের ঘরে বড় কাঁটাটা!
মোতাহার আহমেদ এখন খানিকটা সুস্থ। তাদের পরিচিত একজন ডাক্তার এসে তাকে দেখে গেছেন কিছুক্ষণ আগে।তার প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিলো। তার পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছেনা রাতে। ডাক্তার ঘুমের ঔষধ দিয়ে গিয়েছেন। এখন বিছানায় বাচ্চাদের মতো জড়সড় হয়ে ঘুমাচ্ছেন মোতাহার আহমেদ। অরিত্রা এসব কিছু মধ্যেও অত্যন্ত স্বাভাবিক আচরণ করছে, যেনো কিছুই ঘটেনি। কিন্তু ঘন্টাখানিক আগেও মোতাহার আহমেদের এমন অবস্থা দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য যেনো তার দুনিয়া ওলটপালট হয়ে গিয়েছিলো।
এখন অরিত্রা গেস্টরুমে খালামণির সামনে বসে আছে। বাবা নিশ্চিত কোনোকিছু নিয়ে টেনশনে অসুস্থ হয়েছে। অরিত্রা অনেক্ক্ষণ থেকে বাবার অসুস্থতার পেছনে আসলে ঘটনা কি জানার চেষ্টা করছে।
খালামণি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে বসে থাকলো। তারপর ক্ষীণকণ্ঠে বললো,
“অনুপম সুস্থ না, অরিত্রা… ও অসুস্থ”
“আজব তো! সেটা তো আমি জানি.. ওর জ্বর অনেকদিন থেকে। খারাপ কোনো জ্বর হয়তো। কমতে সময় লাগবে। জ্বরের জন্য নিশ্চয়ই বিয়ে ভেঙ্গে দেয়নি বাবা?”
“তুই ভুল জানিস অরিত্রা। অনুপমের জ্বর আসেনি। ও মানসিকভাবে অসুস্থ!”
“কি? মানে কি? তুমি কি বলতে চাচ্ছ? অনুপম পাগল?”
“সোজা কথায় বলতে গেলে একরকম তা-ই। অনুপমের একটা মানসিক রোগ আছে। যেকারণে ও মাঝেমাঝেই অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে, অদ্ভুত সব কাজ করে, নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। তখন ও কারো সাথে কথা বা দেখা করার মতো পরিস্থিতিতে থাকেনা। একারণেই অনুপমের সাথে আমাদের কাউকে এতদিন কথা বলতে দপয়া হয়নি। তোর সাথে কথা হয়েছে এর মাঝে?”
অরিত্রা উত্তর দিলোনা। একদৃষ্টে মেঝের কোণার দিকে তাকিয়ে যেনো কোনো গভীর প্রশ্নে ডুবে রইলো।
“কি হলো? তুই জানতি এসব? অনুপম কখনো বলেছিলো ওর অসুখের কথা?”
“না।”
“তাহলে ভাব! এতদিন তোর সাথে ঘুরলো, কখা বললো, আর এতবড় একটা কথা কেমন লুকিয়ে গেলো! ভাবতে পারিস!”
“আমারো তো ছোট থেকে কত অসুখবিসুখ হয়েছে। সব কি বিয়ের আগে আমিও খুলে বলেছি নাকি?”
“তোর আবার কবে কি হলো?”
“কেনো? ওই যে একবার আমার টাইফয়েড হলো? দশদিন মেডিকেলে পড়ে ছিলাম আমি। তারপর একবার যে সিঁড়ি থেকে পা মচকে পড়ে গিয়েছিলাম, আমার পায়ের রগ ছিঁড়ে গিয়েছিলো। দুমাস আমি হাঁটতে পারিনি! কই আমি তো বলিনি এসব?”
খালামণি চোখ বড়বড় করে বললো,
“এসবের সাথে তুই পাগলের পাগলামির তুলনা করতিছিস? এগুলো তো ঠিক হয়ে যায়। পাগল তো আর রাতারাতি ভালো হয়ে যায়না!”
“কে বলেছে? এদুনিয়ায় কতশত পাগল মানুষ আমাদের মাঝেই দিব্যি হেঁটে চলে খাচ্ছে ঘুরছে! সব রোগই সেরে যায়। আমরা সবাই ই একরকম মানসিক রোগে ভুগি! বুঝলে খালামণি?” অরিত্রার ভাবভঙ্গিতে মনে হলো যেনো মানসিক রোগ থাকাটাই স্বাভাবিক। না থাকাটা বরং অস্বাভাবিক।
তিন সপ্তাহ কেটে গেলো। অনুপম কিংবা ওদের বাড়ির কারো সাথে আর যোগাযোগ করেনি অরিত্রা। মোতাহার আহমেদ প্রচন্ড রেগে আছেন তাদের উপর। অনুপমদের কথা উঠলেই বলছেন, “ছেলে যে পাগল, তা আমাদের কাছে লুকিয়েই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলো! সাহস কতো! আমরা জানতে না পারলে তো আমার মেয়েটার সর্বনাশ হয়ে যেতো।”
চিৎকার চেঁচামেচি করলেও চিন্তায় চিন্তায় অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। তার ধারণা, বিয়ে কথাবার্তা ফাইনাল হওয়ার পর বিয়ে ভাঙ্গা অমঙ্গলের লক্ষণ। এরপর তার মেয়ের বিয়ে দিতে গেলেই বুঝি বাঁধা আসবে!
অরিত্রা নির্বিকার। বিয়েটা ভেঙ্গে যাওয়ায় তার ভেতর কোনোরকম পরিবর্তন হয়নি। সে তার কলেজ, পড়াশুনা, টিউশনি সব নিয়েই ব্যস্ত আছে। অবশ্য এ কয়দিনে অরিত্রা যে অনুপমের কথা একেবারেই ভাবেনি, তাও না.. প্রতিদিনই সে ভাবে, অনুপমকে একবার ফোন ফোন করবে। প্রশ্ন করবে, উনি এখন কেমন আছেন, উনার পাগলামির রেঞ্জ কতদিনের। কিন্তু শেষ অবধি আর ফোন করেনা।
অরিত্রা গত একমাসে মহীপুরে যায়নি আর। আজ অনেকদিন পর কলেজ ফাঁকি দিয়ে এসে বসলো টিস্টলে। টিস্টল বন্ধ আজকে। কে জানে, আজ হয়তো চাওয়ালার কোনো বিপদ, ব্যস্ততা কিংবা উৎসব। চায়ের দোকানের ব্রেঞ্চটা বাইরেই রাখা আছে। অরিত্রা গিয়ে সেখানে বসে পড়লো। এঅঞ্চলে বেশ কয়েকটা চায়ের স্টল আছে। অরিত্রা অন্য কোনো স্টলে কখনো যায়না। অভ্যাসের কারণেই হয়তো যায়না! অরিত্রা মিনিটদশেক চুপচাপ বসে থাকলো। রাস্তায় লোকজন তাকে দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে। অরিত্রার আজ বিরক্ত লাগছেনা। বরং সেও উৎসুক হয়ে লোকজনের কৌতুহলী চেহারা দিকে তাকিয়ে আছে, মাঝে মাঝে মুচকি হাসিও দিচ্ছে। অচেনা লোকগুলো ভ
অপ্রস্তুত হয়ে উল্টো চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।
আজ আর বেশিকিছু না ভেবে ফোন করেই ফেললো অরিত্রা । অনুপমের ফোনে রিং হয়েই যাচ্ছে কেউ তুলছেনা। অবশেষে ল্যান্ডফোনে কল করতেই মিনু ধরলো।
“মিনু, তোমার ভাইয়া এখন কেমন আছে?”
“ভালো।”
“ওনার সাথে কথা বলা যাবে?”
“না।”
“কেনো? এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি?”
মিনু চোয়াল শক্ত করে বললো,
“ভাইয়া চেম্বারে এখন।”
“ও আচ্ছা। তুমি ভালো আছো?”
“হ্যাঁ। তুমি ফোন করেছিলে কেনো?”
“একটা জরুরী কথা জানার ছিলো!”
“কি কথা?”
অরিতৃরা স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
“তোমার ভাইয়ের যে বউ হবে, তাকে কি আমার এনগেজমেন্টের আংটিটা ফেরত দিয়ে দিতে হবে? নাকি ওটা আমি রেখে দিবো?”
মিনু এতটাই অবাক হয়েছে যে কি বলবে বুঝতে পারলোনা। অরিত্রা বেশিকক্ষণ উত্তরের অপেক্ষা করলোনা। অতি সন্তোর্পনে ফোন নামিয়ে রাখলো।
মোতাহার আহমেদ অরিত্রার জন্য ছেলে খুঁজছেন। ইতোমধ্যে তিনি একজনকে পছন্দ করেও ফেলেছেন। ছেলে আর্মি। দেখতে ভালো, উচ্চবংশীয়। তিনি অরিত্রার মতামত নিয়েই চিন্তিত ছিলেন; মেয়েটার মনের উপর এসবের ঠিক কতটা প্রভাব পড়ছে তিনি বুঝতে পারছেন না। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার, অরিত্রা ছেলের সম্পর্কে কিছু জানতে না চেয়ে এক কথায়ই রাজি হয়ে গেলো। তাকে দেখে মনে হচ্ছেনা যে সে জোর করে বিয়েতে রাজি হলো নাকি মন থেকেই রাজি হলো।
সেদিন বিকেলে অরিত্রার নামে একটা চিঠি এলো তাদের বাসায়। প্রেরকের নামের জায়গায় কিছুই লেখা নেই। অরিত্রা দারুণ অবাক হয়েছে। আজকালকার প্রযুক্তির যুগেও যে কেউ কাউকে চিঠি পাঠায়, তা ভাবাই যায়না। অরিত্রার অবশ্য বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে ব্যাপারটা। অনেকটা বিস্ময়, কৌতুহল নিয়ে চিঠির ভাঁজ খুললো অরিত্রা। গোটা গোটা হরফের পরিচ্ছন্ন হাতের লেখা। প্রতিটা অক্ষর যেনো অত্যন্ত যত্ন করে, আগ্রহ নিয়ে লেখা।
“প্রিয় অরিত্রা,
কেমন আছো? ভালোই আছো নিশ্চয়ই। আমার উপর অনেকটা রাগ, ঘৃণা নিয়ে আছো, তাইনা? তোমার সামনে গিয়ে কথা বলার কিংবা সরাসরি কথা বলার সাহস আমার নেই। ঠিক সাহস না, আসলে অপরাধবোধ থেকেই পারছিনা। তাই বাধ্য হয়ে এ চিঠি লেখা।
আচ্ছা, তোমাকে আজ একটা গল্প বলি। একটা নয় বছরের ছেলের গল্প। বাবা-মার আদরের একমাত্র ধন। তার বাবা হাইকোর্টের বিচারক, সারাজীবন ন্যায়ের পথে চলেছেন। কিন্তু এই অতিরিক্ত সত্যবাদিতাই তাঁর জীবনের কাল হলো।
একদিনের কথা। সেদিন রাতে জ্যোৎস্নার আলোয় চারিদিক আলোকিত হয়ে আছে। ছেলেটার নানু অসুস্থ হঠাৎ। মা সন্ধ্যাবেলায় নানুবাসায় চলে গিয়েছে। বাসায় ছেলেটা, তার বাবা আর একটা কাজের মেয়ে আছে। রাতে খেতে বসে ছেলেটি বায়না ধরলো, বাসার কোনো খাবার সে খাবেনা, তার পিজ্জা খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে। বাবার আর কি করার, তিনি বাধ্য হয়ে অতরাতেই রেস্টুরেন্ট থেকে পিজ্জা আনতে গেলো। এটা সেসময়ের কথা যখন ফুডপান্ডার মতো সুযোগ সুবিধা ছিলোনা, অর্ডার করলেই রাতে খাবার বাড়িতে এসে যেতোনা! রাত বারোটা পেরিয়ে তিনের ঘরে মিনিটের কাঁটা পৌছোলো, কিন্তু বাবা তখনো ফিরেনি। বাবা সেদিন রাতে আর ফিরলোইনা। বাড়ির ল্যান্ডফোন থেকে অনর্গল বাবার ফোনে কল করে গেলো ছেলেটা, বাবা ফোনও ধরলোনা। জ্যোৎস্নার আলোয় সারারাত অভিমান করে শূণ্য উদরে বেলকনিতে বসে কাটিয়ে দিলো ছেলেটা। কাজের মহিলাটা কত্ত সাঁধলেন, কিন্তু কিছুতেই ছেলেকে খাওয়াতে পারলেন না। পরদিন ফিরলো বাবা। ঠিক বাবা না, বাবার লাশ, কুপিয়ে হত্যা করা লাশ। স্তব্ধ হয়ে নির্বাক প্রাণীর ন্যায় বসে ছিলো ছেলেটি সেদিন। তার বাবা তাঁর সত্যনিষ্ঠার শাস্তি পেয়েছিলো। ছেলেটি সেদিন একবিন্দুও কাঁদেনি, কাঁদতে পারেনি। হতভম্ব হয়ে কেবল দেখেছে, শুনেছে, কিছুটা বুঝেছে, কিছুটা বুঝেনি! মায়ের আর্তচিৎকার, কান্নামাখা বিলাপ শুনেছে, সান্তনা দিতে পারেনি। কেবল এতটুকু বুঝে নিয়েছে হঠাৎ করেই যেন একপাহাড় দায়িত্ববোধ তার উপর চেপে বসেছিলো।
এরপর সময়ের বিবর্তনে সব বদলে গেলো। ছেলেটি বড় হলো। কলেজ জীবনে প্রথম প্রেম এলো। মা, প্রেম আর দায়িত্ববোধ নিয়ে ভালোই কাটছিলো। কলেজপড়ুয়া মিষ্টি কিশোরী মেয়েটা বৃষ্টি ভালোবাসতো, জ্যোৎস্না ভালোবাসতো, বর্ষার কদম ভালোবাসতো, কৃষ্ণচূড়া ভালোবাসতো। ছেলেটা প্রতিদিন কৃষ্ণচূড়ার গুচ্ছ নিয়ে মেয়েটার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। কলেজ জীবন শেষে যখন দুজনার ভিন্ন শহরে পাড়ি জমানোর সময়, তখন ক্ষণিকের বিচ্ছেদের পূর্বে শেষ দেখা করার কথা ছিলো। মেয়েটা লাল শাড়ি পড়েছিলো, আর ছেলেটা নীল পাঞ্জাবি। ছেলেটা প্রায় আধঘন্টা অপেক্ষা করার পর মেয়েটির দেখা পেলো, রক্তলাল শাড়িতে মেয়েটি হেঁটে আসছে। মেয়েটার আর তার কাছে হেঁটে আসা হয়নি। রাস্তা পার হয়ে আসার পূর্বেই মালবাহী ট্রাক ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে গেলো তাকে। ছেলেটা সেদিনেও কাঁদেনি। ভালোবাসার মানুষগুলো বরাবর তাকে ফেলে পাড়ি দিয়েছে না ফেরার দেশে। এরপরে ছেলেটি আর কাউকে ভালোবাসেনি, জানো? ভালোবাসতে পারেনি ভয়ে। সেদিনও সারারাত সে ব্যালকনিতে বসে কাটিয়েছে।সেদিনেও ঘোর জ্যোৎস্না ছিলো। জ্যোৎস্নার আলোয় দুজনের ক্ষণিকের মিলন আচমকা যেনো চিরকালীন বিরহে পরিণত হয়েছিলো।
বাবার মৃত্যুর পর পর ধীরেধীরে যেমন সবকিছুর সাথে সে মানিয়ে নিয়েছিলে। তেমনিভাবে মেয়েটার মারা যাওয়ায় সব অস্বাভাবিক করে তুললো।
ছেলেটি আর জ্যোৎস্না ভালোবাসেনা। জ্যোৎস্না রাত মানে তার কাছে মৃত্যু, ভয়ঙ্কর কোনো মৃত্যুছায়া। জ্যোৎস্নার আলোয় অজানা, অচেনা একরাশ ভয় তাকে গ্রাস করে ফেলে। মাথার ভিতর সব যেনো এলোমেলো হয়ে যায়। পুরোনো ঘটনাগুলো তাড়া করে বেড়ায়। এরপর থেকে প্রতিমাসের কিছুদিন ছেলেটা অসুস্থ থাকতো। প্রতিমাসেই…
সবাই তখন কেনো যেনো ভয় পায় আমায়..
এই ছেলেটি কে জানো, অরিত্রা? এটা আমি। তোমাকে কথাগুলো জানাতে না পেরে অপরাধবোধ হচ্ছিলো প্রচুর। এ মানসিক চাপ হতে মুক্তি পেতে তোমাকে আমার অসুস্থতার কারণ জানালাম। মা অনেক ডাক্তা দেখিয়েছেন আমাকে। ডাক্তার কাউন্সেলিং করায়, অনেক ওষুধ দেয়! জানো, ওষুধগুলো খেলে কেবল ঘুমঘুম পায়, চোখ মেলে থাকতে পারিনা। জোর করে জেগে থাকলে মাথায় যণ্ত্রণা হয়। আমি প্রায়ই ওষুধগুলো না খেয়ে ফেলে দিতাম। ওষুধে কাজ হতোনা তাই। গত সাতমাস হলো আমি সময়মতো ওষুধ খাচ্ছি। এখন আর প্রতিমাসে অসুস্থ হইনা। ডাক্তার বলেছে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
তুমি আমায় জিজ্ঞেস করেছিলে না, কেনো আমি বিয়েতে রাজি হতে তোমায় বাঁধা দিচ্ছিলাম? অরিত্রা, আমি চাইনি, আমার আর কোনো ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যাক। তোমার বাবা তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা গতবছর আমার চাচাকে বলেছিলেন। আমি তখন থেকেই তোমাকে চিনি। যদিও সরাসরি কখনো দেখিনি। কিন্তু খোঁজ নিতাম, অজানা একটা ভালোলাগা হতো তোমার কথা ভাবলে। আমার কি মনে হয় জানো, আমার ভালোবাসায় কোনো অভিশাপ আছে! আমি চাইনা এ অভিশাপের আঁচ তোমার গায়ে লাগুক।
যাই হোক,
শুনলাম, তোমার নাকি বিয়ে ঠিক করেছে? তোমার হবু বর শুভ কে চিনি আমি অনেক আগে থেকেই। দারুণ একটা ছেলে। তোমার সাথে ভালো মানাবে, ভালো রাখবে তোমায়। শুভকামনা রইলো তোমাদের জন্য।
ইতি
তোমার জীবনের ক্ষণিকের অতিথি
অনুপম চৌধুরী
চিঠি এখানেই শেষ হয়নি। চিঠির নিচের দিকে আরো একটা লাইন লিখা,
পুনঃ অরিত্রা, সমরেশ মজুমদারের বই পড়ো তুমি? উনার একটা বই আছে, “ভালো থেকো, ভালোবাসা।”
নামটা সুন্দর না?
ভালো থেকো, অরিত্রা!
((চলবে))
Mindguard~মাইন্ডগার্ড
লেখিকাঃ জান্নাতুল মীম (নবনীতা)
#মাইন্ডগার্ড
#Mindguard
#৪র্থ_পর্ব
তারিখ: ১৫ জুন, ২০১৮