আধাঘণ্টার উপর হয়েছে, মারিয়া ভেজা রাস্তায় দাঁড়িয়ে। বারবার এদিক সেদিক তাকিয়েও ইয়াসিরের দেখা পেল না। বাড়িতে কেউ তাকে না দেখলে আবার সন্দেহ করতে পারে। আবারও আশেপাশে ভালো করে দেখে উল্টো পথে পা বাড়ায় সে। এপথ দিয়ে আজ ইয়াসিরের পা মাড়ায়নি।
লুকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময়েই পেছন থেকে কারো ভারী কণ্ঠ ভেসে আসে। মারিয়ার পিলে চমকে উঠে। পেছন ঘুরে তাকাতেই দারোয়ান চাচাকে দেখতে পায় সে।
— “এই সন্ধায় কোথায় গিয়েছিলে?”
মারিয়ার চেহারায় কিছুটা আঁধার নেমে আসে, বুকের ভেতর খাজকাঁটা অনুভূতি হচ্ছে। এরকম ভয় লাগছে কেন সে নিজেও জানে না। আমতা আমতা করে জবাব দিলো,
— “আসলে, আমার পায়ের পায়েলটা হারিয়ে ফেলেছি। মনে হলো, গেটের কাছে পড়েছে কিনা তাই খুঁজতে বের হই।”
দারোয়ান চাচার চোখের দৃষ্টি ভয়ানক ঠেকছে মারিয়ার কাছে। এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী! আর কোনো কথা না বলে সে উপরে উঠে যায়। রুমে ঢুকেই গেট লাগিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। তার ভেতরটা কেমন দুরুদুরু করে কাঁপছে! এত ভয় লাগছে কেন? আর দারোয়ান চাচাই বা কেন তার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিল?
পানির তেষ্টা পেয়েছে প্রচুর। হাত বাড়িয়ে বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি গিলে মারিয়া।
হুট করেই আকাশে বাজ পড়ে। পুরো শহর বুঝি কেঁপে উঠে! ভয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় মারিয়া। আর এক মুহূর্ত এখানে থাকার ইচ্ছে তার নেই। অস্থির লাগছে খুব! মন বলছে খুব খারাপ কিছু হবে…কিন্তু কীভাবে সে এখান থেকে বের হবে?
গুটিগুটি পায়ে বারান্দার এক কোনায় এসে দাঁড়ালো সে। একবার রাতের খোলা আকাশের দিকে আবার নিচে গেটের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয়। মনটাকে শান্ত করতে হবে। কিন্তু কীভাবে?
___
নোকিয়া ১১০০ মডেলের ফোনে বেশ জোরে দুনিয়া কাঁপানো ভাইব্রেট হচ্ছে। ফোন উঠিয়ে বাড়ির একপাশে এসে লুকিয়ে দাঁড়ায় দারোয়ান চাচা। সামনেই তার স্ত্রী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওপাশ হতে একজন জিজ্ঞেস করলো,
— “খবর কী সেখানের? মেয়েটা কেমন?”
দারোয়ান চাচা খসখসে কণ্ঠে বলল,
— “মেয়েটা সুবিধার না! খালি ছটফটায়। আপনে কবে আসবেন? আমার মন কয়, এই মেয়ে ভাগবে।”
— “খবরদার! এমন কোনো আচরণ করবি না। আমি এসে যেন মেয়েটাকে জ্যান্ত পাই।”
দারোয়ান চাচার খ্যাঁকখ্যাঁকে হাসি শোনা গেল। ফিসফিসিয়ে বলল,
— “তবে আর যাই বলেন সাব, মাইয়ার শরীল থেইকা কড়া ঘ্রাণ বাইর হয়। মাতাল কইরা দেয়! তর সয় না আর।”
আরও কিছু কথা শেষে ফোন রেখে দেয় তারা। ফোন রাখতেই দারোয়ানের স্ত্রী উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন,
— “আর ক’দিন এমন অভিনয় করতে হইবো? এত জ্বালান ভাল্লাগে না বলি। জলদি আপদটা দূর করেন। মাইয়াটার শরীল দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।”
___
রাতের খাবার শেষে সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে ইয়াসির। ফোনের ডায়াল কলেই সেভ নাম্বারে কল দিলো। কিছুক্ষণ রিং হতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,
— “আপডেট কী?”
ইয়াসির অপর হাতে পুরো চেহারায় একবার হাত বুলিয়ে নেয়। একহাতে চুলগুলো টেনে ধরে বলল,
— “ও দেখতে পুরো মারিয়ার মতো। নামও মারিয়া। ওর সামনে গেলে আমি টিকে থাকতে পারি না।”
ওপাশ হতে উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে এমন কণ্ঠ শোনা যায়,
— “ইয়াসির, কাম অন! তাদেরকে এইবার অন্তত পুলিশের কাছে দিতে হবে। এইভাবে কত খুন করবে তারা?”
— “আমার খুব করে ইচ্ছে হয় মেয়েটাকে বাঁচাতে। কিন্তু আমি তার সামনে একমুহূর্ত দাঁড়াতে পারি না। আজকে আসার সময় ওকে রাস্তায় দেখতে পাই, কারো জন্য অপেক্ষা করছিল হয়তো…আমি অন্য পথ ঘুরে এসে পড়েছি। কী করব বল?”
— “ডেম ইট!”
হাতের জ্বলন্ত সিগারেট দানিতে গুড়িয়ে ফেলে সে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। বিষণ্ণ কণ্ঠে বলতে থাকে,
— “আমার মারিয়া আমার জন্য আগে থেকে সারপ্রাইজ গিফট রেডি করেছিল। আজকে পার্সেল আসলো। না জানি বেচে থাকলে কত কী করতো!”
___
হাতে ফোন নিয়ে রুমে পায়চারি করছে মারিয়া। এই নিয়ে দু’বার চাচি এসে খেতে ডেকেছে। মারিয়া না করেছে, সে খাবে না। তার বলার পরেও তারা যায়নি। রুমের সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। দরজার নিচ দিয়ে তাদের আবছায়া দেখা যাচ্ছিল। এই মুহূর্তে মারিয়ার মনে কী পরিমাণের ভয় সৃষ্টি হচ্ছে এটা কেবল সে আর তার সৃষ্টিকর্তা জানে। পুরো বাড়ির বাতি নিভে গেলেই মায়ের নাম্বারে ডায়াল করে মারিয়া। রাত বেড়েছে, মা ফোন ধরতেও দেরি করছে। একপর্যায়ে ফোন রিসিভ হয়। মারিয়া ফিসফিসিয়ে বলে,
— “মা এখানে কিছু ভালো না। তুমি ছটুকে পাঠাও। আমাকে এসে নিয়ে যাক। আমি এখান থেকে বের হতে পারছি না।”
সুরাইয়া বেগম হুড়মুড় করে শোয়া থেকে উঠে বসলেন। এই সময়ে তার মেয়ে বলে কী! তিনি সোজা না করে দিলেন মেয়েকে। বাহানা দিলেন, ছটু পরীক্ষা দিচ্ছে, আসতে পারবে না। মারিয়ার আশাবাদী জ্বলজ্বলে চেহারাটা ধপ করে বাতি নিভিয়ে ফেলল। সুরাইয়া বেগম আর কিছু না বলেই ফোন রেখে দিলেন।
বিছানায় কাত হয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইলো মারিয়া। ভয়ে তার শরীর ঘামছে। তবুও কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে সে। এরাতে ঘুম আসবে কিনা কে জানে…
___
দেড় বছর আগে,
শহরের এই দিকটায় মানুষের তেমন বসতি নেই বলেই মিস্টার মর্গান এবং তার ওয়াইফ মিসেস সাবিনা মর্গান এখানে এসে ভিটা গড়েন। দু’জন দু’দেশের নাগরিক। স্বভাবতই মর্গান বাংলাদেশে বেড়াতে এসেই সাবিনার প্রেমে পড়েন এবং পরবর্তীতে সাবিনার পরিবার খ্রিস্টান লোকটিকে পরিবারের সদস্য হিসেবে মানতে নারাজ হলে তারা শহরের এদিকটায় এসে পড়েন। মিস্টার মর্গেনের বয়স মধ্যবয়সী সময়ে পৌঁছলেই তার ভেতর এক অন্যরকম সত্তা জাগ্রত হয়। হুট করেই তিনি প্রচুর পরিমাণে রক্তপিপাসু হয়ে উঠেন। তার রক্ত লাগবে। শুরুতে স্ত্রী তার এই অবস্থা সম্পর্কে জেনে যাবে, পরে যদি তাকে ছেড়ে চলে যায়? মেয়েটাকে নিয়ে দূরে চলে যায়? সে কাকে নিয়ে থাকবে? কাদের ভালোবাসবে? এই ভেবে তিনি স্ত্রীর থেকে লুকিয়ে শহরের নামমাত্র ক্লিনিকগুলো থেকে রক্তের ব্যাগ বোঝাই করে নিয়ে আসতেন। এনে দারোয়ানের মাধ্যমেই এগুলো নিচের স্টোররুমে সংরক্ষণ করতেন। দারোয়ান আর তার স্ত্রী প্রথম থেকেই তাদের সাথে ছিল। বেশ বিশ্বস্ত হওয়ায় আর বয়স্ক হওয়ায় তারাও আর মালিকের নুনে পানি পড়তে দেয়নি। মালিকের নুনের মর্যাদা রাখতে তারাও বিষয়টা চেপে যান।
মিস্টার মর্গান যখন স্টোর রুমে বসে একের পর এক ব্লাড-ব্যাগ থেকে রক্ত চুষে খেত, দু’জন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা উপভোগ করতো। তারাও যেন পৈশাচিক আনন্দ পেত মনে মনে। খেতে নয়, দেখতেই যেন খুব মজা!
কিন্তু মাসখানেক যাওয়ার পরই মিস্টার মর্গানের হাতে টনক নড়ে। জমানো পুঁজি শেষ হতে থাকে রক্তের পিছনেই। তখন দারোয়ান আর তার স্ত্রীই তাকে কুবুদ্ধি দেয়।
মিসেস তার একমাত্র কন্যা মারিয়াকে নিয়ে তখন তার পরিবারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। মারিয়া হওয়ার পর থেকে মিসেসের পরিবার কিছুটা আগ্রহ দেখান তাদের প্রতি। নাতনির মুখ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে তারা মাসের পর মাস অপেক্ষা করা শুরু করলেন।
বেড়ানো শেষে যখন মিসেস বাড়ি ফেরেন; সেরাতটিই ছিল কালরাত!
মারিয়া নিজের দোতলার ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। বেশ ক’দিন থেকেই সে বলছে, তার নাকি অল্পতেই মাথা ব্যথা করে, ভেতরে জ্বালাপোড়া করে। মিস্টার মর্গান পাত্তা না দিলেও মিসেস তৈরি হোন, দু’দিন পরই তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাবেন।
সে রাতে যখন মিসেস শেষবার মারিয়ার কপালে চুমু এঁকে বেডরুমে যান। ঘুমের ওষুধ মুখে পুরতেই তার চোখে রাজ্যের ঘুম এসে ভর করে। সাত রাজ্যের ঘুমের মাঝেও তিনি অনুভব করেন, তার মুখের উপর কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। তার শরীরের উপর বেশ ভার পড়ছে। ভাসা ভাসা চোখে তিনি দেখতে পেলেন, মানুষটা তার স্বামী। মিসেস সাতপাঁচ চিন্তা না করেই ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে দু’হাতে স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরেন। তখনও তিনি ঘুমের মাঝেই, জোরালো কণ্ঠে বললেন,
“গো টু স্লিপ ম্যান!”
হঠাৎ করেই মিসেসের চোখ দু’টো দ্রুত বড়ো হয়ে উপরের সিলিং ফ্যানের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখে। এরপর নিজ থেকেই নিভে যায়। মিস্টার মর্গান যেভাবে তার ওয়াইফের গলার ডান পাশে কামড়ে ধরেছিলেন, সেভাবে আরও জোরে দাঁত বসান। রক্ত চুষার জন্য তিনি ধারালো দু’টো কোনাচে দাঁত এনেছিলেন। সেটা পরেই আক্রমণ করেছেন সাবিনার উপর। ফলশ্রুতিতে স্পট ড্যাড!
রাতের আঁধারে লাশ লুকাতে তার বিশ্বস্ত দু’জন নিশাচরকে দিয়েই কাজ সাড়িয়ে ফেললেন মিস্টার। ব্যাগের পর ব্যাগ রক্ত ভরে বাড়ির পিছনের জঙ্গলে লাশ গেঁথে ফেলেন। শেষ! ধামাচাপা দিয়ে দিলেন সবকিছু…
সকালে উঠে মারিয়া যখন মাকে খুঁজছিল, তখন মিস্টার মর্গান তার হাতে একটা চিঠি দিয়ে কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখিয়ে বাহিরে চলে যান। চিঠিতে স্পষ্ট লেখা ছিল,
“প্রিয় মারিয়া,
তুমিও জানো, আমি এরথেকে বেটার লাইফ ডিজার্ভ করি। সো ডিসিশন আমার, আমি ভালো থাকতে কী করব, কোথায় যাব। টেক কেয়ার ডিয়ার!”
চিঠি পড়ে মারিয়ার মাথা ব্যথা আরও তীব্র হয়। ওষুধের ড্রয়ার থেকে দু’টো মাথা ব্যথার ওষুধ নিয়ে একসাথে গিলে ফেলে। ডায়েরি লেখার শক্তিও তার নেই! ইয়াসিরকেও ফোন করে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। ফোলা চোখ দু’টো থেকে তখনও টুপটাপ বৃষ্টির বিস্বাদ জল ঝরে পড়ছে…
___
ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগমুহূর্তে…
মারিয়া টলতে টলতে বারান্দায় এসে উঁকি দেয়। রাতে ঘুমাতে না পারলে দিনের বেলায় সে এরকম টলতে থাকে। চোখে ঝাপসা দেখছে। ঝাপসা দৃষ্টিতেও দেখতে পায়, ওদিন রাতে একটা লোক এদিকে তাকিয়ে ছিল। এখনও কেউ এখানে তাকিয়ে আছে। মারিয়া আরেকটু সামনে পা বাড়াতেই লোকটা তাকে দেখে ফেলে। মারিয়া ভীষণ অবাক হয়! এ তো ইয়াসির। তবে কি সেই ওদিন রাতেও এভাবে তাকিয়ে ছিল? আর কেনই বা? ঠিক মারিয়ার বারান্দাতেই কেন?
আর তাকে দেখে এভাবে দৌড়ে চলেই বা কেন যাচ্ছে? মারিয়ার ভ্রম হয়। মাথা নাড়া দিয়ে সে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তাকে যেভাবেই হোক এখান থেকে বের হতে হবে। হাতমুখ ধুয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে নেয় সে। ব্যাগের ভেতর প্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে মারিয়ার ডায়েরীটাও ঢুকিয়ে নেয়। নিচে নেমে আসতেই চাচি তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। মারিয়া এবার আর বিচলিত হয় না। মুখে সাধারণ ভাব ধরে রেখেই বলল,
— “চাচি, আমাকে জলদি বের হতে হবে। আজকে জবের প্রথম দিন। খুব দেরি হয়ে গেল।”
বলেই দৌড়ে বের হয়ে যায় সে। পিছনে দারোয়ান ভ্রু কুঁচকে মারিয়ার চলে যাওয়া দেখে। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,
— “সাব তো বলছিল, এই মেয়ের ফোনে মেসেজ যাবে, যে আজকে কোম্পানির কীসের জন্য যেন বন্ধ দিসে, তাই যাওয়া লাগবে না। তো ওয় কই যায়?”
— “তুমি আবার তারে জিগাইও। সে তো আমাদেরকে সব বলে না।”
স্ত্রীর কথা ঠিক। তবুও দারোয়ানের মনে খটকা লাগে।
___
হাঁটার কারণে ইয়াসিরের কালো প্যান্টের পিছন দিকে কাদা ছিটে উঠছে। এই শহরের এই সমস্যা বুঝি আর কখনই যাবে না।
হুট করেই কোথা থেকে মারিয়া ছুটতে ছুটতে এসে ইয়াসিরের পিছনে এসে চিল্লিয়ে বলল,
“থামুন!”
চমকে উঠে ইয়াসির।
দু’পা সামনে এগোয় মারিয়া। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
“আপনার সাথে খুব জরুরি কথা আছে আমার। আমাকে আগে একটা সেফ জায়গায় নিয়ে যাবেন?”
ইয়াসির মনে মনে হিসেব মিলাতে থাকে। কেন যে সে তার আবেগকে প্রশ্রয় দিলো। নেহাৎ এই মেয়ের এখনও কোনো ক্ষতি হয়নি, তবে হতে কতক্ষণ?
প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল না। ফের প্রশ্ন করলো মারিয়া,
“কিছু বলছেন না যে? কী হলো, উত্তর দিন?”
এবারও নীরবতা। মারিয়া এবার খানিকটা চিল্লিয়েই বলল,
“আরে বাবা, আমি তো আর আপনার সাথে হাডুডু খেলতে আসিনি। এসেছি তো কাজেই!”
ইয়াসির শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো। মারিয়া থেমে যায়। আশপাশ ভালো করে দেখে বলল,
“আমি বিপদে আছি, একটু তো দয়া করুন?”
ইয়াসিরের মনে হয়, কেউ ওর বুকে জোরে জোরে হাতুড়ি পেটা করছে আর বলছে, বল, কথা কেন বলিস না? দেখিস না, আমি তোর উত্তর শুনতে অপেক্ষা করছি?
কে করতো এমনটা? মারিয়া করতো? এই মারিয়াও কি এরকমটাই করছে?
ইয়াসির মাথা ঝেড়ে মনের কথা সরিয়ে দেয়। কী আশ্চর্য, তার মন-মস্তিষ্কে এখন দু’টো মারিয়া যুদ্ধ করছে!
ইয়াসিরকে গভীর ভাবনায় দেখে চোখের সামনে তুড়ি বাজায় মারিয়া। হাত নেড়ে নেড়ে বলল,
“উত্তর দিচ্ছেন না কেন?”
ভ্রম কাটে। গম্ভীর গলায় উত্তর আসে,
“চলুন।”
ধীরে সুস্থে সামনে পা বাড়ায় মারিয়া। ইয়াসিরের পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে ব্যাগ থেকে ডায়েরীটা বের করে বলল,
— “নিন। মারিয়ার ভালোবাসা।”
ইয়াসির অবাক হয় না। আলতো হাতে ডায়েরীটা নিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। মারিয়া প্রশ্ন করে,
“তাকে কি খুব ভালোবাসতেন? বাচ্চা একটা মেয়ে ছিল!”
ইয়াসির হেসে বলে,
— “হ্যাঁ, ১৯ বছর ৭ মাসের একটা মেয়ে বাচ্চাই তো!”
মারিয়া অপলক চোখে ইয়াসিরের দিকে তাকায়। ছেলেটা হাসলে বেশ সুন্দর দেখায়!
চোখ ঘুরিয়ে মারিয়া ফের বলল,
“ডায়েরীটা পড়ে খুব খারাপ লাগলো। মেয়েটা শেষবার তার মাকে কত বলল, তার সাথে দেখা করতে। অথচ তার মা একবারও আসলো না…এরকম মা হয় কখনও?”
ইয়াসির আশেপাশের নজর বুলিয়ে মারিয়ার দিকে নিচু হয়ে ঝুঁকে।
— “ডায়েরিতে তুমি শুধু ঐটুকু পড়েছ যেটুকু একটা মেয়েকে ইমোশনালি এটাচ করতে পারে। সত্যিটা জানো না!”
— “মানে?”
ইয়াসির মাথা দোলায়। এত এত রহস্য কেন?
‘চলবে…’
মারিয়া
পর্ব:- ০৪
সায়ীদা নুহা।