#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব_১৬
কলমে রোকেয়া পপি।
পলির মাঝে মধ্যে সত্যি-সত্যি মরে যেতে ইচ্ছা করে। সংসার খরচ বাড়ছে লাগামহীনভাবে। ও সামাল দিতে পারছে না। মাঝে-মাঝে রাতে ওর একেবারেই ঘুম হয় না। তখন বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করে। মাথার দুপাশের রগ দপদপ করে। সত্যি-সত্যি ও যদি মরে যায় তাহলে এই সংসারটার কী হবে এটা ভাবলেই শরীর অবশ হয়ে আসে। ওর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে না, তবু শুধু সংসারের জন্যে তাঁকে বেঁচে থাকতে হবে এই চিন্তা ওর মনটাকে দূর্বল করে ফেলে। তখন সবকিছু অসহ্য বোধ হয়। অসহ্য বোধ হলেও পলি ঘড়ির কাঁটার মতো নিয়মে প্রতিদিন একি নিয়মে তাঁর জীবন শুরু করে।
বাজার করে, অফিসে যায়, অফিস থেকে ফিরে মার ঘরে উঁকি দিয়ে বলেন, কেমন আছ মা? আজ শরীরটা কেমন?
ঠিক মতো ওষুধ খেয়েছে কিনা? তোমাকে এক কাপ চা করে দিব? রাতে ভাত খাবে না রুটি।
অধিকাংশ দিন ওর মা রাতে ভাত খেতে চায় না। পলি তখন ক্লান্ত শরীর নিয়ে আবার রুটি বানাতে বসে। একবারে সকালের নাস্তার জন্য বেশি করে তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দেয়। এতে সকালে ওর সময় বাঁচে। নিজে রাতের বাসি তরকারি দিয়ে রুটি খেলেও মাকে তরকারির পাশাপাশি একটা আস্ত ডিম পোচ করে দেয়।
অথচ আজ সেই মা একজন বিবাহিত ছেলের সাথে আমার জন্য বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেললো।
একটা বার আমার মত নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করলো না! যদিও টুকটুকের প্রতি আমার দূর্বলতা আছে। তাই বলে টুকটুকের বাবাকে তো আর আমি চিনি না। কেমন দেখতে কে জানে! নিশ্চয় টাক মাথার বুড়ো ভাম।
এইসব ভেবে পলি যখন মন খারাপ করে বসে আছে, মলি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পলির গালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো আপু আপু আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
কেন তোর এতো আনন্দ হচ্ছে কেন? তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে জন্য?
আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়াতে আমার প্রচন্ড রকম মন খারাপ ছিল, বিশ্বাস করো আপু। কিন্তু একি দিনে তোমার বিয়ের কথা ও পাকা হবার পর থেকেই আমার আনন্দে নাচতে মন চাইছে। বড়ো বোনকে রেখে ছোট বোনের বিয়ে! এটা ভাবতেই আমার কান্না পাচ্ছিল। এখন আমি খুব খুব হ্যাপি।
তো নাচ না। বারণ করেছে কে!
আপু কি হয়েছে তোমার? তুমি মন খারাপ করে বসে আছো কেন? তোমার মত নেই এই বিয়েতে?
পলি গম্ভীর মুখে বললো, মত অমতের কি আছে? তাছাড়া আমার মতটা নিয়েছে কে? বাচ্চা সহ এক বুড়ো ভামের সাথে বিয়ে ফাইনাল করে ফেললো! আরে বাপু একি দিনে দুই মেয়েকে সে খরচ বাঁচাতে বিয়ে দিয়ে দিলে তাকে দেখবে টা কে শুনি?
মলি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,ওহ আপু এই জন্য তোমার মন খারাপ?
তোমাকে বলেছে কে বুড়ো ভাম?
শোন বড়োপা, মারুফ ভাই এক বাচ্চার বাবা হলেও দেখে কিন্তু বোঝা যায় না। ইস তুমি যদি ভাইয়া কে দেখো, চোখ ফেরাতে পারবে না বলে রাখলাম।
কি যে সুন্দর আর হ্যান্ডসাম। এমন ছেলে প্রতিটা মেয়ের ক্রাশ।
পলি খেয়াল করলো, কথাগুলো বলার সময় মলির চোখ দুটো আনন্দে চিকচিক করছে।
ও মুখ বাঁকিয়ে বললো, তাই নাকি! তাহলে তুই ঝুলে পড় না।
আপু তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি অনেক আগেই শুদ্ধকে কথা দিয়ে দিয়েছি। তা না হলে মারুফ ভাই যেদিন দৌড়াদৌড়ি করে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করালো, আমি তখনি তার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খেতাম।
মলির মুখে এইসব শুনে পলির মন খারাপ ভাবটা কিছুটা কমলো। তারপর চিন্তিত মুখে বললো জলিকে তো ফোন করে জানাতে হবে। ওকে কালকেই চলে আসতে বলি। আমরা দুজন শশুর বাড়ি চলে গেলে, ওকে মনে হয় বাসা থেকেই কলেজ করতে হবে। তা না হলে মাকে দেখবে কে?
আপু তুমি এতো চিন্তা করোনা তো। তুমি তো পাশের বাড়িতেই থাকবে। খুব একটা অসুবিধা হবে বলে আমার মনে হয় না। আগেরটা আগে হতে দাও।
তাছাড়া আমি দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি জব করবো। মাকে দেখাশোনার জন্য ভালো দেখে একজন কেয়ার গিভার রাখবো। টাকা যা লাগে আমি পাঠাব। আর যদি তেমন কোন সুযোগ পাই, মাকে ও নিয়ে যাব আমার কাছে।
তারপর ও আমার খুব টেনশন হচ্ছেরে মলি।
আবার কিসের টেনশন?
আজ রবিবার। আগামী শুক্রবার বিয়ে। হাতে আছে কয়দিন? এরমধ্যে টাকা জোগাড় করতে হবে। খুব ছোট করে হলেও তো বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। অনন্ত পক্ষে দু পক্ষের লোকজন খাওয়ার খরচ, নিজেদের কিছু আত্মীয়-স্বজন তো বলতে হবে। সাথে দুই একজন প্রতিবেশী।
সব মিলিয়ে চল্লিশ, পঞ্চাশ জন লোকের খাওয়ার খরচ। দেখি কাল অফিসে গিয়ে লোনের জন্য আবেদন করতে হবে।
আপু জলির শশুরকে ফোন দাও। আমাদের তো মাথার ওপরে শক্ত কেউ নেই। খালুজানকে দেখলেই আমার কেন যেন বাবার কথা মনে পড়ে। খালুজান আসলে দেখবে তিনি একাই সবকিছু সামলে নিবেন।
এটা মন্দ বলিসনি। জলির শশুরকে আমারো খুব ভালো মানুষ মনে হয়। উনি আমাদের জন্য মাথার ওপরে একটা শক্ত ছাদের মতো।
দুই বোনের কথোপকথনের মাঝে ওদের মা নিজের রুম থেকে মেয়েদের ডাকলেন। মাগো তোমরা একটু আমার রুমে আসো।
পলি মায়ের মাথার কাছে বসে চুলে বিলি কেটে বললো, কিছু বলবে মা?
মাগো তুমি এই সংসারটা নিয়ে অনেক চিন্তা করছো। গায়ের রক্ত পানি করে সংসারটা টেনে নিয়ে যাচ্ছো। কতো ভালো ভালো বিয়ের প্রপোজাল না করে দিছো, শুধু আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে। তুমি হয়তো সবসময় ভাবো, আমার মা আমার জন্য চিন্তা করে না। সবসময় শুধু সংসারের চিন্তা করে।
না গো মা। আমি তোমার কথা ও চিন্তা করি। কিন্তু আমি যে বড্ড বেশি স্বার্থপর। তুমি শশুর বাড়ি চলে গেলে, তিন তিনটা খাওয়ার মুখ না খেয়ে থাকবে এটাও আমাকে ভাবতে হয়েছে। তোমরা হয়তো ভাবো তোমার মায়ের সংসারে কোন খেয়াল নেই। সারাদিন মুখের সামনে বই ধরে শুয়ে থাকে।
আমি শুয়ে থাকলেও দিনরাত শুধু তোমাদের কথাই ভাবি আর আল্লাহ কে ডাকি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ আমার ডাক শুনেছেন, এতেই লাখ লাখ শুকরিয়া।
যাক অনেক কথাই বললাম। তুমি মন খারাপ করো না। এই ছেলে বিবাহিত হলেও খুব ভালো ছেলে। টাকা, পয়সা, শিক্ষা, দীক্ষা, রুপ, গুন কোন অংশে কম নয়।
তুমিও খুব ভালো একটা মেয়ে। তাই আল্লাহ তোমার জন্য এতো ভালো একটা প্রপোজাল মিলিয়ে দিয়েছেন। আমি চাই তুমি ঐ মাছুম বাচ্চাটাকে মায়ের আদর দিয়ে বড়ো করবে। ও যেন কখনো বুঝতে না পারে তুমি ওর আসল মা নও। ঐ সংসারে তুমি যদি নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে চাও, সবার ভালোবাসা পেতে চাও। তাহলে ঐ বাচ্চাটাকে ভালোবাসতে হবে।
এখন যে জন্য তোমাদের দুই বোনকে ডেকেছি। মলি একটা চাকু নিয়ে আয় তো মা।
মলি বিস্মিত হয়ে বললো, কি বলছো মা! এখন রাত বাজে এগারোটা। চাকু দিয়ে কি হবে?
আনতে বলছি আন। চাকু দিয়ে তোদের খুন খারাপি করবো না।
পলি মায়ের কপালে চুমু দিয়ে বললো, মা তুমি যে কি বলো না! তুমি আমাদের কতো ভালোবাসো, আমরা তা সবসময় অনুভব করি।
মলি মায়ের হাতে চাকু দিয়ে বললো, এই নাও তোমার চাকু।
তোর কাছে রাখ। আর আমার কোলবালিশ টা নে।
নিলাম কোলবালিশ। এখন কি করতে হবে?
কভার খুলে কোলবালিশের সেলাইটা কেটে ফেল।
মলি মায়ের কথা মতো কোলবালিশ কেটে তুলার ভেতর থেকে একটার পর একটা টাকার বান্ডিল বের করছে চোখ বড়ো বড়ো করে। সে বিস্মিত হয়ে বললো, মা এতো টাকা!
পলিও কম অবাক হয়নি। সে নরম সুরে বললো, মা তুমি এতো টাকার মালিক! এতো টাকা নিয়ে দিনরাত শুয়ে থাকো! কতো টাকা আছে সবমিলিয়ে?
আছে মা। ভালোই আছে। তোদের বিয়ের খাওয়ার খরচ হয়ে যাবে মনে হয়।
তোর বাবা যতো কষ্টেই থাকুক, বোনাসের টাকা কখনো খরচ করতো না। বলতো এই টাকা গুলো জমিয়ে রাখো পলির মা। আমাদের তিন তিনটা মেয়ে। ওদের জন্য আলাদা করে তো আর কিছু করতে পারিনা। এগুলো ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখো। মনে করবে, বেতনের বাইরে আমি অফিস থেকে কোন টাকা পাই না।
আর ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে তো এ বাড়ির কাজ ধরেছিল। দুটো রুমের ছাদ দিতেই টাকায় টান পড়লো। বাকি রুম গুলোতে টিনের চাল দিয়েছে। তবুও এই টাকায় হাত দেয়নি।
দুই ঈদের বোনাসের টাকা আমি এভাবে একটু একটু করে জমিয়েছি। অনেক যত্ন করে আগলে রাখছি তোর বাবার আমানত। জলিকে নিয়ে তো আর চিন্তা নেই। ও বিয়েও করে ফেলেছে একা একা। আবার ওর খরচ ওর শশুর বহন করছে। আমি চাই এই টাকা তোদের দুই বোনের বিয়েতে খরচ হোক।
মলি কান খাড়া করে মায়ের কথা শোনার পাশাপাশি টাকা গুলো ও গুনে ফেলছে।
মা এখানে সত্তুর হাজার পাঁচশ বিশ টাকা আছে।
পলি চোখ কপালে তুলে বললো, এতো টাকা! ঠিক আছে সব খরচ করার দরকার নেই। পঞ্চাশ হাজার রেখে বাকিটা আবারো সেলাই করে রাখ। মায়ের বিপদে আপদে কাজে লাগবে।
মাগো তোমাদের বড়ো ঘরে বিয়ে হচ্ছে। বিয়ের পর তোমরাই তো দেখবে আমাকে। আমার আর আলাদা করে টাকার দরকার নেই। সবটাই খরচ করো। দুই বোন নিজেদের জন্য কিছু নতুন পোশাক কিনো। শশুর বাড়ি আমার মেয়েরা পুরানো পোশাক নিয়ে যাক, আমি তা চাই না। আর আমার সামনে বসেই জলিকে ফোন দাও। আজকে না জানালে, ও অভিমান করবে। মেয়েটা সবসময়ই বড্ড বেশি অভিমানী।
জলি রাতের খাবার খেয়ে মাত্র পড়ার টেবিলে বসেছে। এর মধ্যে ওর ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখে বড়োপার ফোন। বাসা থেকে ওকে খুব একটা ফোন টোন করা হয় না। মলি মাঝে মধ্যে খোঁজ নিলেও, পলি ভুল করেও কখনো ফোন করে না। হঠাৎ করে বড়োপার নাম্বার দেখে জলির গলা শুকিয়ে গেল ভয়ে। মায়ের আবার কিছু হলো না তো?
ও ফোনটা রিসিভ করেই হরবরিয়ে বলা শুরু করলো, আপা কি হয়েছে? মা ভালো আছে তো? মায়ের কিছু হয়নি তো?
চলবে….#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব_১৭
কলমে রোকেয়া পপি
মা ভালো আছে জলি। আমরা সবাই ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? পড়াশোনা কেমন হচ্ছে?
আপা আমি ও খুব ভালো আছি। ক্লাস হচ্ছে নিয়মিত। পড়াশোনার চাপ ও আছে।
তোমাদের খুব মিস করছি আপা।
আমরাও তোকে খুব মিস করি। এক কাজ কর কাল বই খাতা নিয়ে চলে আয়। আর মা তোর সাথে কথা বলবে। কথা বল।
মাগো আমার ময়না পাখিটা কেমন আছো তুমি?
মায়ের আদুরে কন্ঠ শুনে জলির চোখ ভিজে উঠতে চাইছে। কতোদিন মাকে জড়িয়ে ধরে না। ও ভেজা গলায় বললো, আমি ভালো আছি মা। তোমার শরীর কেমন?
আমার আর শরীর। মাগো তোমাকে একটা সুখবর দেওয়ার জন্য ফোন করলাম।
কি সুখবর মা?
তোমার বড়োপা, মেজপা দুজনের বিয়ে আজ ফাইনাল কথা হলো। আংটি পরিয়ে দিয়ে গেছে। আগামী শুক্রবার বিয়ে। তুমি কাল বাড়িতে চলে আসো গো মা জননী। সাক্ষাতে সব শুনবা।
জলি ফোনের মধ্যেই চিৎকার দিয়ে উঠলো আনন্দে। তারপর একটু একটু ইতস্তত করে বললো, মা আমার তো নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। আমি দুটো দিন পরে আসি?
মাগো পড়াশোনা তো সারাজীবন করবা। দুই বোনের একদিনে বিয়ে। বাসায় কতো কাজ। তুমি চলে এসো মা। তুমি ছাড়া কি এইসব হয়?
পলি মায়ের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে বললো, আমাকে দাও মা। আমি কথা বলছি।
জলি শোন, কাল ক্লাস শেষে চলে আয় সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে। এখান থেকে তোর কলেজ খুব বেশি দূরে না। এই কয়দিন বাসা থেকে ক্লাস কর। আর তিন বোনের একসাথে আবার কবে থাকা হবে। চলে আয়। তোকে মিস করছি খুব।
ঠিক আছে আপা। আমি ক্লাস শেষ করে দুপুরে আসব। আপা আমার শশুর কে দাওয়াত দিয়েছো?
সবে তো আজ কথা ফাইনাল হলো। কাল সকালে মা ফোন করবে। তুই টেনশন নিস না।
ঠিক আছে আপা। রাত হয়েছে। তোমরা শুয়ে পড়ো।
শুভ রাত্রি।
টুকটুক কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে মারুফ ওর বাবা মায়ের সাথে বসেছে। ও বাড়িতে কি কথা হলো সেগুলো শোনার জন্য ওর তর সইছে না।
মারুফের বাবা টিভির ভলিউম কমিয়ে দিয়ে বললো, তাহলে শেষ পর্যন্ত আমার দাদু ভাই তার মাম্মাকে খুঁজে পেয়েছে।
হ্যা। সব দিক মিলিয়ে ভালোই হয়েছে। তবে দেখে যা বুঝলাম ওদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তিনটাই বোন। ভাই নেই। মা টা অসুস্থ। আমি চেয়েছিলাম মাসের শেষের দিকে বিয়েটা হোক। আমাদেরও তো কিছু প্রিপারেশন আছে। কিন্তু বেয়াইন সাহেবা বললেন তার মেজো মেয়ের ও আজকেই বিয়ের কথা পাকাপাকি হলো। আগামী শুক্রবার বিয়ে। আপনারা যখন আমার বড়ো কন্যাকে নিতে চাইছেন তাহলে একি দিনে দুই বোনের বিয়েটা হয়ে যাক। ওদের তো বাবা বেঁচে নেই যে একি মাসে দুই মেয়ের বিয়ের আয়োজন করবে। আমাদের দিকটাও তো দেখতে হবে।
কি আর করা। আমি আংটি পরিয়ে মত দিয়ে আসছি। তোমাদের কোন আপত্তি নেই তো শুক্রবার বিয়েতে?
মারুফ বিস্মিত হয়ে বললো, কি বলো দুই বোনের বিয়ে! দারুন ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তো।
হুম খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। এখন ঝটপট একটা লিস্ট তৈরি করে ফেলো। আমাদের রিসিপশন পার্টি তে কাকে কাকে আসতে বলবে।
কি বলো মা। কোন রিসিপশন পার্টি হবে না। একবার তো বড়ো করে আয়োজন করা হয়েছে। এবার না হয় চুপচাপ হোক সবকিছু।
এভাবে বলে না বাবা। তোমার এটা দ্বিতীয় বিয়ে। কিন্তু মেয়েটার তো শখ আহ্লাদ থাকতে পারে তাই না?
রিসিপশন পার্টি হবে। হানিমুন হবে। হানিমুন থেকে ফিরে এসে টুকটুকের নানুকেও আমাদের এ বাসায় একবারে নিয়ে আসব। ওদের বাসা ভাড়া দিয়ে দিব।
আমি আমার অসুস্থ বেয়াইন সাহেবা কে একা একা ঐ বাসায় থাকতে দিব না। যতোই পাশাপাশি বাসা হোক। তোমরা সবাই অফিস করবে। আমরা দুই বেয়াইন মিলে সারাদিন গল্প করে কাটাব। ঘুরবো, শপিং করবো।
আমার প্লানটা কেমন?
ভালো মা খুব ভালো প্লান। তবে তোমার কাছে হাত জোর করে বলছি, যাদের না বলেলেই নয় শুধু মাত্র তাদের ইনভাইট করো রিসিপশন পার্টি তে। আমি ঘুমাতে গেলাম।
শুভ রাত্রি।
জলিকে ওর শশুর আনতে গিয়েছেন। সকালে জলির মায়ের ফোন পেয়েই তিনি কথা দিয়েছেন, আপনি কোন রকম চিন্তা করবেন না। আমি জলিকে নিয়ে একসাথে আসব। তখন আপনার সাথে বসে আলোচনা করে নিব কি কি করতে হবে।
জলি আর ওর শশুর দুপুরের খাবার খেতে এসেছেন স্টার কাবাবে। জলি বারবার বলছিলো, বাসায় গিয়ে ভাত খাব বাবা। কিন্তু শরফরাজ খান এক রকম জোর করেই রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছেন। তিনি আজ বাসায় যাবেন না। ওদের বাবা নেই। তিনি মেয়ে দুটোর বিয়েতে বাবার দায়িত্ব পালন করতে চান।
তাছাড়া জলি যেহেতু এক সপ্তাহের জন্য বাসায় যাচ্ছে। সাথে বই, খাতা, কাপড়ের ব্যাগ সব নিতে হবে। এতো কিছু নিয়ে মেয়েটার রিকশায় যাওয়া রিক্স। তাই তিনি গাড়ি নিয়ে জলিকে আনতে গিয়েছেন। ভর দুপুরে জলির বাসায় গিয়ে সবাইকে বিব্রত করতে চান না জন্য এখানে খেতে আসা। তিনি জানেন জলির বাসার পরিস্থিতি।
সরফরাজ খান খাবারের মেনু বইটা জলিকে দিয়ে বললেন, তোর যা যা খেতে মন চায় অর্ডার কর মা।
বাবা কাচ্চি অর্ডার দেই?
সরফরাজ খান স্মিত হেসে বললেন, একটু আগেই না বললি ভাত খাবি!
ভাত তো প্রতিদিন খাই বাবা। রেস্টুরেন্টে আসছি যখন, তখন কাচ্চি খাই।
ঠিক আছে মা। ওয়েটার এখানে দুটো কাচ্চি আর বোরহানি দাও। সাথে চার প্যাকেট পার্সেল দাও।
জলি বিস্ময় গোপন না করে বলে ফেললো, বাবা চার প্যাকেট পার্সেল দিয়ে কি হবে?
এবার সরফরাজ খান শব্দ করে হেসে উঠলেন। আরে পাগলি মেয়ের কথা শোন। তুই যে আমার সাথে কাচ্চি খাচ্ছিস। তোর বোনদের শুনলে মন খারাপ হবে না?
বাসায় গিয়ে আবার মা বোনদের সাথে খাবি, তাই চার প্যাকেট।
জলির ইদানিং খুব অল্পতেই চোখে পানি চলে আসে। ও মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ও চায় না ফেরেস্তার মতো এই ভালো মানুষটা ওর চোখের পানি দেখে ফেলুক। ওর খুব ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে বাবা তুমি এতো ভালো কেন? কিভাবে আমার মনটাকে তুমি বুঝে ফেলো? আমি সত্যিই মনে মনে আমার বোনদের খুব মিস করছিলাম। আমার চোখের পানির দিব্যি। তোমার ছেলেকে ছেড়ে দিলেও, আমি তোমাকে কখনো ছাড়ব না। আমি প্রতিষ্ঠিত হয়েই তোমাদের কে আমার কাছে এনে রাখব বাবা। প্রমিজ।
চলবে….