মেঘের আড়ালে চাঁদ পর্ব ১৮

#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ সতেরো

রাফসানের সামনে একজন বসে রয়েছে। চেয়ারের সাথে তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। লোকটির ভয়েই প্রাণ যায় এমন অবস্থা। রাফসান চোখ মুখ শক্ত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। রাফসানের একজন লোক সেই লোকটির সামনে একটা চেয়ার রাখে। রাফসান গিয়ে লোকটির সামনে চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে। লোকটির মুখ থেকে কস্টেপ টান মেরে ওঠায়। এতে লোকটি গুঙিয়ে উঠে। রাফসান ইশারা করলে আবির তার হাতে প্লাস দেয়। প্লাস দেখে লোকটি আরো ভয় পায়। লোকটির ভয় পাওয়া দেখে রাফসান শয়তানি হাসি দেয়। সে প্লাসটা নাড়াতে নাড়াতে বললো

-” চার বছর! চার বছর ধরে তন্নতন্ন করে খুজেছি তোকে। এতো লুকিয়ে থেকেও লাভ হলো না। অবশেষে ধরা পড়তেই হলো। তাই না? মিরাজ সাহেব। ম্যানেজার অব রাফ্স রেস্টুরেন্ট। ” রাফসানের মুখে হাসি লেগেই আছে। কিন্তু এই হাসিই পেছনেই যে কতটা হিংস্রতা লুকিয়ে আছে তা সামনে বসা লোকটি বুঝতে পারছে না।

-” আ.. আমি কিছু করি নাই। আমাকে ছেড়ে দিন স্যার। ”

-” ম্যানেজার সাহেব! আমি কখন বললাম আপনি কিছু করেছেন? ” রাফসান ভ্রু উঁচু করে বললো। রাফসানের কথায় ম্যানেজারের হাত পা কাপা শুরু হয়ে গিয়েছে। ভয়ে সে ঘেমে উঠেছে। নিজের কথায় নিজেই মনে হয় ফেসে গেলো। রাফসান মিরাজ কে বললো

-“যাইহোক বুঝলাম আপনি কিছু করেন নি। এবার ভদ্র লোকের মতো বলুন তো। চারবছর আগে রেস্টুরেন্টের ভিতরের আর আশেপাশের সিসি টিভি ফুটেজ কেন সরিয়েছিলেন?

-” আমি কিছুই করি নি। আর কোন ফুটেজের কথা বলছেন আমি জানি না।” মিরাজের এই কথায় রাফসানের এতক্ষণের বহু চেষ্টায় শান্ত রাখা মেজাজ দপ করে জ্বলে উঠলো। সে উঠে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে মিরাজের গলা চেপে ধরে বলে

-” ইউ বাস্টার্ড। আমাকে ভালোভাবে কথা বলতে দেখে সাহস পেয়ে গিয়েছিস। একদম মেরে এমন অবস্থা করবো যে মানুষ তাকাতেও ভয় পাবে। কেন সরিয়েছিলি সিসি টিভি ফুটেজ আর কার কথায় সরিয়েছিলি? সবকিছু সরিয়ে তুই চুপচাপ গা ঢাকা দিয়েছিস। ভেবেছিস ধরা পড়বি না তাইতো? বল নাহলে তুই তো যাবি সাথে তোর পরিবারের লোকজনও যাবে। চারবছর তোকে তন্নতন্ন করে খুজেছি। তোর করা কিছু কাজের জন্য আমি আজও ওদের শাস্তি দিতে পারি নি। এই বল কার কথায় করেছিস এসব। আজকে সব হিসাব একবারে নেব।” রাফসানের চিৎকারে মনে হচ্ছে দেওয়াল গুলো ফেটে যাবে। এমন জোরে চিৎকার করছে। রুমের ভিতর রাফসানের লোকজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখের ভঙ্গিমায় কোনো পরিবর্তন নেই। যেনো রোবট সবগুলো। শুধু আবিরকে দেখে মনে হচ্ছে সে মজার কিছু দেখছে। কিন্তু তার মাথায় আসছে না রাফসান ভাই ওই পুরনো সিসি টিভি ফুটেজ দিয়ে কি করবে। কিন্তু এখন জিজ্ঞেস না করে চুপচাপ সামনে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। রাফসান এখনো মিরাজের গলা চেপে ধরে আছে। লোকটি হাসফাস করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখনি নিঃশ্বাসটা সারাজীবনের জন্য বেরিয়ে যাবে। কিন্তু না! রাফসান তা হতে দিল না। সে এতো সহজে একে মারবে না। রাফসান গলা ছেড়ে দিতেই মিরাজ কাশতে থাকে, আর রাফসান আবার আগের মতোন চেয়ারে বসে।

-“সময় বেশিক্ষন নেই তাড়াতাড়ি বল। কেন ওদিনের সব সিসিটিভি ফুটেজ আর কাস্টমার এন্ট্রি গুলো সরিয়েছিস। কার কথায় তুই রাফসানের সাথে বেইমানি করেছিস। কে সে? যে এত সাহসী আর পাওয়ার ফুল হয়ে গিয়েছে যে রাফসানের লোকজন দিয়েই তার ক্ষতি করতে যায়। এত সাহস তার তো কেন লুকিয়ে কাজ করছে। বল হারামি বল।” বলে রাফসান চেয়ারের হাতলের সাথে বেঁধে রাখা বাম হাতের ওপর প্লাস দিয়ে জোরে আঘাত করলো। দুই হাতেই আঘাতের পর আঘাত করেই যাচ্ছে। আঘাতে মনে হচ্ছে লোকটার হাতের আঙুল গুলো ভেঙে গিয়েছে। হাত কেমন যেন হয়ে গেছে, রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। লোকটি চিৎকার করে বলছে সে কিছু জানে না। রাফসান রক্ত মাখা প্লাসটা আবিরের হাতে দিয়ে সে মিরাজের দিকে তাকালো।

-” তোর পরিবারে কে কে আছে রে? ও আমিতো জানি তাইনা। তোর একটা মেয়ে আছে না যে এবার কলেজে পড়ে? আছে তো। তুই না বললেও আমি জানি। তোর খোজ পাওয়ার পর তোর সম্পর্কে সব খবর নিয়ে তারপর তোকে আদর খাওয়ানোর জন্য ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। তো কি বলছিলাম? ও তোর মেয়ের কথা। তোর মেয়েটা কিন্তু হেব্বি সুন্দর। কারেক্টারও সেই লুজ। একদম ছেলেদের সাথে ফ্লার্ট করায় হান্ড্রেডে হান্ড্রেড। তো তোর মেয়েকেও তুলে আনি কি বলিস?” রাফসান ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে বললো।

-” স্যার ওকে কিছু করবেন না। এখানে ওকে টেনে আনছেন কেনো? আমি কিছু জানি না স্যার। আমাকে ছেড়ে দেন।”

-” আবির মেয়েটাকে উঠিয়ে নিয়ে আয়। কলেজেই পেয়ে যাবি ছেলেদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। গিয়ে একটা থাপ্পড় মারবি তারপর এখানে উঠিয়ে নিয়ে আসবি। দ্রুত যা।”

-” স্যার! স্যার ওনাকে মানা করেন আমি বলছি তো তাও আমার মেয়েকে কিছু করবেন না।” লোকটি ভীতু গলায় বললো

-” তো শুরু কর। কেন করেছিলি আর কার কথায় করেছিস। ” রাফসান চোয়াল শক্ত করে বললো। মিরাজ ঢোক গিলে বললো

-” ঐদিন বিকালে একজন লোক আমার কাছে এসে বলে সেদিনের সিসি টিভি ফুটেজ সব ডিলিট করে দিতে। আর কাষ্টমার এন্ট্রি গুলোও সব সরিয়ে ফেলতে বলে। আমি মানা করলে আমার মাথায় বন্দুক ধরে কাজ করায়। সে সামনে থেকে আমাকে দিয়ে ফুটেজ গুলো ডিলিট করায়। আমি ইচ্ছা করে কিছু করিনি স্যার আমাকে ছেড়ে দিন।”

-” লোকটা কে ছিল? ” রাফসান শান্ত দৃষ্টিতে বললো।

-” মানে?”

-” মানে বুঝিস না? এই একে মানে বোঝা তো।” রাফসান বলার সাথে সাথে তার লোকজন কয়েকটা এসে মিরাজকে হাত পা বাঁধা অবস্থায়ই মারতে লাগলো। মিরাজের অবস্থা খারাপ। কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছে, চোখের নিচে ফুলে গিয়েছে, ঠোঁট কেটে গিয়েছে। তারপরও মারা থামছে না। সে কোনো রকমে বললো

-” বুঝেছি! বুঝেছি আর মারবেন না আমাকে।” এই কথায় রাফসান ইশারায় থামাতে বলে।

-” স্যার লোকটি কে ছিল আমি জানি না। কালো হুডি পড়া ছিল। মুখে মাক্স পড়া ছিল। দেখতে লম্বা, কালো, হেঙলা,পাতলা ছিল। আমি আর কিছু জানি না।” বলে মিরাজ দম নিল।

-“ও আচ্ছা ” বলে রাফসান বেরিয়ে যেতে লাগলো তখন মিরাজ চিৎকার করে বলে-” স্যার আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তো সব কিছু বলেছি।

-“সত্যি যেদিন বলবি সেদিন ছাড়া পাবি। এই তোরা একে থেরাপি দিয়ে সত্যি বের কর। আর যদি না বলে তো মেরে টানিয়ে রাখবি যাতে লোকে ওকে দেখে বুঝতে পারে রাফসানের সাথে বেইমানি করলে কি হতে পারে।” বলে রাফসান বাইরে বেরিয়ে গেলো। সাথে সাথে আবির তো রাফসানের পিছু পিছু গেলো। আবির যেতে যেতে জিজ্ঞাস করলো

-” ভাই ওত পুরনো ফুটেজ দিয়ে আপনি কি করবেন?” এই কথা শুনে রাফসান আবিরের দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে বললো -” তুই আসলেই একটা গাধা।” রাফসান গাড়িতে গিয়ে বসলো। আবির বোকার মতো কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলো। ভাই তাকে গাধা বললো কেন? সে তো শুধু একটা প্রশ্ন করেছে জানার জন্য। গাধা কেন বললো তাকে সে নিজেই জানে না। আসলেই সে চরম গাধা শুধু গাধা নয়। আবির গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো। সে মাঝে মাঝে আড়চোখে রাফসানের দিকে তাকিয়ে তার ভাব সাব বোঝার চেষ্টা করছে। রাফসান সেটা খেয়াল করে বিরক্ত হয়ে বললো

-” ডাফার সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালা। আর একবার এদিকে তাকাবি তো ধাক্কা মেরে গাড়ি থেকে ফেলে দেব। ”

-“আমি কি করেছি? শুধু জিজ্ঞেস করেছি ফুটেজ দিয়ে কি করবেন।” আবির মিনমিন করে বললো।

-” স্টুপিড! কেউ হামলা করার জন্য বসে থাকবে আর পেছনে অনুসরণ করার লোক লাগাবে না? কখন কোথায় যাচ্ছে, কোন সময় সেখানে যাবে এগুলো জানার জন্য অবশ্যই লোক লাগাবে। তো রেস্টুরেন্টে থাকাকালীন ঐ লোকগুলোও রেস্টুরেন্টের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকবে তাই নয় কি? আর ওদেরকে ধরে যাতে আসল ব্যক্তির কাছে পৌঁছাতে না পারি সেজন্য রেস্টুরেন্টের ভেতর এমনকি আশেপাশের ফুটেজ গুলোও এই শালা মিরাজকে দিয়ে সরিয়ে ফেলেছে। কারন সিসি টিভিতে অবশ্যই সন্দেহভাজন বা অন্যকে অনুসরণ করছে অথবা অদ্ভুত আচরণ করছে এমন লোককে ধরা যেত। কাউকে অনুসরণ করা ব্যক্তি নিশ্চয়ই অন্য সবার মতো রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করতে করতে খাবার গিলবে না। তার কাজই হলো চুরি করে অন্যকে দেখা আর খবর পাস করা। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। এসব ফুটেজে দেখা যাবে বলে সরিয়ে ফেলেছে। ওদের দেখলে বা ধরতে পারলেই জানা যেত যে পেছনে কার হাত আছে। কিন্তু সেই পথও বন্ধ করে দিয়েছে। ”

-“সেটা বুঝলাম কিন্তু মিরাজকে ধরে আনার কারন বুঝললাম না। কেউ তো ওকে চেহারা দেখিয়ে কাজ করতে বলবে না। তাই মিরাজের তো কিছু জানার কথা না।”

-“তোকে এখন আমার লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে। মিরাজ বললো আর বিশ্বাস করে নিলি যে ও জানে না কিছু? সব জানে শালা। ও শুধু একদিনের ফুটেজ সরিয়েছে। কিন্তু ঐ ফুটেজগুলোর কপি পেনড্রাইভে করে নিজের কাছে রেখেছে। তার কিছুদিন পর গায়েব হয়ে গিয়েছে। এগুলো সব পরের কিছুদিনের ফুটেজ চেক করে আমি পেয়েছি। ভুলে গিয়েছিল ওগুলো সরাতে। ওগুলো ওর কাছে আছে বা অন্য কাউকে দেয়ে দিয়েছে। কথা ওর থেকেই বের করতে হবে। সব জানে ও। যাইহোক, চুপচাপ গাড়ি চালা এখন।” আবির মাথা নেড়ে সায় দিল। এগুলো তার মাথাতে আসে নি।

রাফসান শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলোয় হাত দিয়ে পানি ঝরাতে লাগে। ফর্সা হওয়ায় গায়ে ব্লাক শার্ট আর প্যান্ট মানিয়েছে ভালো। এতে গায়ের রঙ আরো ফুটে উঠেছে। এমন সময় কেউ ঝড়ের বেগে রুমে প্রবেশ করে তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরে। সে আয়নায় হাত দিয়ে ভার ঠেকায়।নাহলে হুমড়ি খেয়ে পড়তো। রাফসান ব্যক্তিটিকে সামনে এনে জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে রেগে বলে

-“হোয়াট দা হেল আর ইউ ডুয়িং এলা? আর ইউ ম্যাড?

-” তুমি এরকম কেনো করছো? আই মিস ইউ সো মাচ।” এলা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো।

-” এম আই ইউর বয়ফ্রেন্ড অর হাসবেন্ড? নাথিং। সো হোয়াই ডু ইউ মিস মি সো মাচ?”

-” ইউ আর মাই কাজিন রাফসান।”

-” কাজিন মাই ফুট। কেউ একজন কতো বছর আগে একবার বলেছে যে আমি তোমার কাজিন হই, আর তুমি দুই দিন পর পর কাজিন কাজিন করে লাফিয়ে চলে আসো কানাডা থেকে। হোয়াই? স্টে অ্যাওয়ে ফরম মি। আন্ডারস্ট্যান্ড? ” রাফসান রেগে বের হয়ে গেলো। এলা পেছন থেকে ডাকলেও শুনে না। সে এই মেয়েটাকে একদম পছন্দ করে না। সে ওভাবেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। এই মেয়ে যতক্ষণ থাকবে সে আর ফিরবে না বাড়িতে। গাড়ির সামনে হঠাৎ করে একটা বাচ্চা চলে আসায় সে দ্রুত ব্রেক কষে। বেখেয়ালি থাকার কারনে সে আগে বাচ্চাটাকে দেখতে পায় নি। রাফসান আর যাই করুক বাচ্চাদের সাথে কখনো খারাপ বিহেব করে না। সে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পিচ্চি ছেলেটার কাছে যায়। আর বলে

-” এই পিচ্চি এই দেখেশুনে রাস্তা পার হতে পারো না? চোখ কোথায় থাকে? এখনি তো গাড়ির নিচে চাপা পড়তে। ”

-” আপনি দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না? গরুর মতো দুইটা চোখ আছে তারপরও আমার মতো একটা পিচ্চি বাচ্চার গায়ের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। হুহ্। আর এই দেখেন আমার চোখ দুইটা আমার ভ্রুর নিচেই আছে। এইযে।
বলে ছেলেটি চোখ বড় বড় করে তাকালো।

-” তা চোখ যখন সাথেই আছে কাজে না লাগিয়ে অন্ধর মতো হাটছিলে কেনো? রাস্তা যখন পার হতে পার না তো পাকনামি করে একা একা পার হতে গিয়েছো কেন? বলে রাফসান বিরবির করে বললো -“এইটুকু পিচ্চি তার আবার পাকনা পাকনা কথা ”

-” আমি একা পার হতে পারি বুঝলেন। আর চোখ তো কাজেই লাগাচ্ছিলাম। আপনিই তো সে কাজে ব্যাঘাত ঘটালেন।”

-” তা কি কাজ করছিলে শুনি।”

-” আরে রাস্তার ওপাশে তাকান! দেখেন আইসক্রিম ওয়ালা। ওখানে একটা ছোট মেয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিল। আর আমি নজর দিচ্ছিলাম।” বলে দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

-” মানে? কি করছিলে?” রাফসান কনফিউশন নিয়ে প্রশ্ন করলো।

-“আরে আপনি তো দেখি কিছু বোঝেন না। আমার কাছে টাকা নেই। বাবা টাকা দেয় নি।” বলে মুখ ফুলিয়ে আবার বললো-” তাই আমি ঐ মেয়েটির আইসক্রিম খাওয়া দেখছিলাম আর নজর দিচ্ছিলাম যাতে পেট ব্যাথা হয়। কারণ আমাকে লোভ লাগিয়ে দিয়েছে আইসক্রিম খেয়ে। তাই ওটা ওর শাস্তি। কিন্তু আপনি সব নষ্ট করে দিয়েছেন।” বলে ছেলেটি রাফসানের দিকে এক আঙুল তাক করলো।

রাফসান মনে মনে হেসে উঠলো পিচ্চি টার কথা শুনে।সে বললো -” ওও তো তোমার বাবা টাকা দেয় নি।

-“হুম দেয় নি আমি চকলেট আর আইসক্রিম বেশি খাই তাই। এগুলো বেশি খেলে দাঁতে পোকা লাগে বলেছে। ”

-” তুমি তো দেখতে অনেক কিউট। চলো আমি তোমাকে কিনে দেই। চলো।”

-“না। আমি আপনার কাছ থেকে কিছু নেব না। আপু বলেছে অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু খাবে না। তারা খাবারে মেডিসিন মিশিয়ে আমাকে অজ্ঞান করে নিয়ে যাবে। আর বাড়ি যেতে দেবে না। ”

রাফসান অবাক হয়ে গেলো। ও শুধু বাচ্চাটাকে আইসক্রিম কিনে দিতে চেয়েছে। আর পিচ্চিটা ধরে নিয়েছে সে কিডন্যাপার। কি টেটন ছেলে। রাফসান দাঁতে দাঁত চোপে হাসি মুখ করে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো -“এই তোমার নাম কি?”

-” তাওহী! আর আপনি কি আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন দেখুন আপনাকে আমি কিন্তু পুলিশে দেব। হুহ্”

-“তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো। কিন্তু আমি কিছুতেই ভয় পাই না বুঝলে পিচ্চি। উল্টো সবাই আমাকে ভয় পায়।”

-“সত্যি আপনি কিছুতেই ভয় পান না?”

“হু কিছুতেই না।” রাফসান মাছি তাড়ানোর মতো করে বললো।

-“তাহলে আপনি মানুষ না।”

-“মানে? কি বলতে চাও” রাফসান রাগী ভাবে তাকিয়ে বললো।

-“আপনি মানুষ না। কারন বড় ভাইয়া বলেছে সব মানুষই কিছু না কিছু দেখে ভয় পায়। আর আপনি যেহেতু ভয় পান না তাই আপনি এলিয়েন। আচ্ছা আপনি কোন প্লানেট থেকে এসেছেন। আপনার কাছে কি পাওয়ার আছে? ওটা কি অনেক চকলেট আর আইসক্রিম এনে দিতে পারে?” তাওহী ভাবুক হয়ে বললো

-“এই ছেলে কি বলছো? যানো আমি কে? আমার নাম শুনলে তুমি ইয়ে করে দিবে।”

-“ভাইয়া আপনার প্যান্টের জিপার খোলা। আর ঔ পাশের সুন্দরী আপুরা আপনাকে দেখে মিটমিট করে হাসছে।” বলে তাওহী বড়ো একটা হা করে দু হাত দিয়ে তা ঢাকলো চোখ বড় বড় করে।

রাফসান স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে এটা শুনে। সে রাস্তার ওপাশে দুইটা মেয়ের দিকে তাকায় তারা সত্যি লাজুক ভাবে হাসছে। এতোক্ষন সে এভাবে.. রাফসান দ্রুত দুইহাত প্যান্টের সামনে দেয়। তারপর দুরুদুরু বুক নিয়ে নিচে তাকিয়ে অবাক হয়। সে দেখে সব ঠিক আছে। মানে পিচ্চিটা তাকে ঘোল খায়িছে। তাওহীর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাওহী বলে ওঠে -“দেখছেন আপনিও ভয় পান” বলে তাওহী খিলখিল করে হেসে উঠলো।
রাফসান রেগে গিয়ে ওকে ধরতে যায়। কিন্তু তার আগেই তাওহী দৌড় দেয়। কিছুটা দূরে গিয়ে পিছনে ফিরে রাফসানকে বলে-

“বায় দেখা হবে অন্য কোনো রাস্তায়,
সে পযন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আর আমাকে মনে রাখবেন।
নাম মেরা তাওহী।”
বলে তাওহী মুখে থাকা চুইংগাম একটু ফুলিয়ে ফাটিয়ে ফেলে। তারপর আবার মুখের ভেতর পুরে নেয়। রাফসান এটা দেখে চোখ মুখ কুঁচকায়। তাওহী হাত নেড়ে লাফাতে লাফাতে সামনে আগায়।

আর শুনে পেছেনে রাফসান জোরে জোরে বলছে-” এই বিচ্ছু পিচ্চি ছেলে তোমাকে আমি দেখে নেব। যদি একবার পাই না তাহলে প্যান্ট….
তাওহী আর শুনতে পায় না। কারন সে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। ভাইয়াটির সাথে করা কাজ আর তার কথাগুলো ভেবে সে আরেকবার খিলখিল করে হেসে উঠে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here