#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ উনিশ
সামনে দাঁড়িয়ে দুজন মানুষের ভেতর তর্কাতর্কি চলছে। আর তা চুপচাপ দেখছে তাওহী আর তুলতুল। তাওহী টুকুর টুকুর চোখ করে দুজনের কথা শুনছে। আর তুলতুল প্রচুর বিরক্ত। মনে হচ্ছে দুজনকেই পানি ছাড়া গিলে খেয়ে ইয়া বড় একটা ঢেঁকুর তুলতে। তার এমন সুন্দর নিরিবিলি বিকালটা নষ্ট করে দিল। দুজন সামনে দাঁড়িয়ে কি সুন্দর ঝড়গা করছে। তার তাদেরকে আটকে রেখেছে। চলে যেতে চাইলে ধমক দিচ্ছে। ইচ্ছা তো করছে এ দুটোকে রাম ধমক দিয়ে বইরা করে দিতে। কিন্তু তুলতুল তা পারবে না। সেসময় এলা যখন তাওহীকে থাপ্পড় দিতে যায় তখন আবির এসে এলার হাত ধরে ফেলে। আবির কখন এসেছে সেটা কেউই খেয়াল করেনি। কিন্তু আবির যখন দেখে পিচ্চিটাকে মারতে যাচ্ছে তখন হাত ধরে ফেলে। জানে এর জন্য তাকে কথা শুনতে হবে। তারপরেও পিচ্চিটাকে তো বাঁচাতে পেরেছে এই ডায়নির হাত থেকে। পিচ্চি ঠিক বলেছে ডায়নি একটা।
এলা অবাক হয়ে তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির তার হাত ধরে আছে? রাফসানের চামচা সে ধরেছে তার হাত?
-“তোর সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার? এই হাত ছাড়। আজকেই রাফসানকে বলে তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। এতো সাহস তোর? যে রাফসানের গার্লফ্রেন্ডের হাত ধরিস?”
-” ও হ্যালো! কে আপনি? যে আপনার হাত ধরার জন্য রাফসান ভাই আমাকে বের করবে? আর সাহস আছে দেখেই তো আপনার মতো কিটকিটে মহিলার হাত থেকে পিচ্চিটাকে মার খাওয়া থেকে বাঁচিয়েছি। বিবেক বলতে কিছু নেই। এতটুকু একটা বাচ্চার গায়ে হাত তুলতে যান অকারণে। এখনো সম্মান দিয়ে আপনি করে বলছি এটাই আপনার সাত জন্মের ভাগ্য।”
-” ইউ রাসকেল! আই’ল সি ইউ। আমাকে অপমান করা? মহিলা বলা? শুধু রাফসানকে পাই তোকে বুঝিয়ে দেব।”
-” হ্যাহ্! বুঝিয়ে দেবে? শুধু ইংলিশে ডায়লগ মারা। আর অসভ্যের মতো কথা বলা, আর কি পারেন? মহিলা নয়তো কি খুকি? ফিডার গিফট করতে বলবো রাফসান ভাইকে? আর রাফসান ভাই নিজেই আমাকে পাঠিয়েছে।
-” তোকে তো আমি…
-” আই ধুর! চুপ করেন সবাই। আমার কান বন্ধ হয়ে যাবে আপনাদের কথায়। প্রচুর আঠা আপনাদের কথায়। ফেবিকল টাইপ, লাগলে আর ছুটবে না।অলরেডি এককান বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” তুলতুল চিল্লিয়ে বললো
-“আইছে আরেক সাহসী।” আবির বিরবির করে বললো। ও কিছু বলার আগেই তাওহী বললো
-“ভাইয়া আমার একটা প্রশ্ন আছে। ইনি একটু আগে বললো রাফসান না কে যেন ওনার বউ এখন আবার বলছে গার্লফ্রেন্ড। কেন? ও বুঝেছি ভাইয়া ওনার কি ভুলে যাবার রোগ আছে? ” তাওহী উচ্ছাসের সাথে বলল। যেনো সে রোগ নির্ণয় করতে পেরে খুব খুশি। তুলতুলেরও কথাটা এখন মাথায় আসলো। ও জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টি নিয়ে আবিরের দিকে তাকালো।
-” আরে না! কিসের বউ আর কিসের গার্লফ্রেন্ড? কিছুই হয় না। ঢপ মেরেছে। রাফসান ভাই এই মহিলাকে দেখতেই পারেন না।”
-” কি? আমি ভেবেছিলাম অন্তত সত্যি কথা বলছে। এখন দেখি পুরোটাই মিথ্যা। ” তুলতুল বললো।
-“এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বল। অন্যের জিনিস নষ্ট করে আবার চ্যাটাং চ্যাটাং কথা।” এলা বললো। একথায় তুলতুলের খারাপ লাগলো। পরমূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিল। আজকে সে একটা কথাও ছাড় দিবে না।
-” চ্যাটাং চ্যাটাং আমি না আপনি করছেন। মিথ্যা কথা বলে আবার বড়বড় কথা।”
-“আপু আরো আছে, এইযে ঘেউ ঘেউ করে, পাগলের মতো সবকিছু ভুলে যায়। আর এই ভাইয়াটাকে বকে। ইশশ ভাইয়াটার জীবনটা শেষ করে দেয় মনে হয়। ভাইয়া কষ্ট পায় না ঠিকাছে? আম্মু বলে, কষ্টের পড়ে সুখ আসে।” তাওহী শান্তনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো।
-” পিচ্চি তুমি আমার মনের কষ্টটা বুঝতে পারছো। আর কেউ বুঝে না। ধন্যবাদ তোমাকে। প্রত্যেক বার এসে যে আমাকে কি যন্ত্রণা দেয়, তোমরা কেউ যানো না তা। রাফসান ভাই সবসময় এর দায়িত্ব আমার ওপর দেয়। যেনো বাচ্চা। কষ্টে মনে হয় এই মহিলারে ঘন্টায় দুইটা করে থাপ্পড় দেই। কিন্তু কি আর করার মেয়ে তো মারতে পারি না।” আবির আবেগে আপ্লুত হয়ে বললো।
-” তোদের প্রত্যেকের শান্তি কেড়ে নেব আমি। আমাকে অপমান করা। ” এলা রাগে ফুসফুস করতে করতে বললো। তারপর আবিরকে একটা ধাক্কা দিল। যেনো সব দোষ আবিরের।
-“তোর জন্য সবকিছু হয়েছে। কোন সাহসে তুই আমাকে থাপ্পড় মারতে চাস? রাফসান তোকে কিছু না বললেও আমার ড্যাডি তোকে ছাড়বে না। তার মেয়েকে অপমান করা এই ছোটলোকদের সামনে? তুই এসে এদের সামনে আমাকে অপমান করেছিস। তা দেখে এদের সাহস বেড়ে গেছে।” বলে এলা আবিরকে ধাক্কা দিতে লাগলো। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। কারন ধাক্কাতে আবিরের কিছুই হচ্ছে না। সে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে রইল।
রাফসান এতোক্ষণ গাড়ির ভেতর থেকে চুপচাপ দেখছিল সব। সে আবিরের সাথেই এসেছিল। এলাকে একটা ছোট ছেলের সাথে ঝগড়া করতে দেখে আবিরকে গিয়ে দেখতে বলে। কিন্তু আবিরকে পাঠিয়ে তার কোনো লাভই হলো না। উল্টা মনে হচ্ছে সে গিয়ে ঝামেলা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এলা কাদের সাথে ঝগড়া করছিল দূর থেকে তা রাফসান বুঝতে পারলো না। তারপরও আবিরকে পাঠিয়েছে কারন এলার স্বভাব সম্পর্কে তার জানা আছে। কিন্তু এই আবিরটা যে কি করে। এখন ওটাকে গিয়ে তার দুটো থাপ্পড় মারতে মন চাচ্ছে। ঝামেলা থামাতে গিয়ে নিজেই আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। রাফসান বিরক্ত হয়ে সানগ্লাস চোখে দিয়ে বের হয়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেলো।
রাফসান যতো ওদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততই দুইটা মুখ পরিষ্কার হচ্ছে। কিন্তু রাফসানের ওদিক থেকে চোখ চলে গেলো এলা আর আবিরের দিকে। দুজনেই মাঠের ভেতর তুমুল ঝগড়া লাগিয়েছে। রাফসান দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো। এলা এবার আবিরের সাথে কথায় না পেরে আবিরকে থাপ্পড় মারতে যায়। কিন্তু পারে না, রাফসান হাত ধরে ফেলে। রাফসান রেগে গিয়ে বলে।
-“হোয়াট দা হেল! সমস্যা কি তোমার? যখন তখন যার তার গায়ে হাত তুলতে যাও। কেন কি হয়েছে? আর আবির তোকে আমি কি করতে পাঠিয়েছিলাম আর তুই কি করছিস? মনে তো চাচ্ছে তোকে এখন পিটিয়ে ঝুলিয়ে রাখি। তুই এখানে থাকতে কেন আমার এখানে আসতে হলো? হোয়াই?”
-“হ্যাঁ জান! একে শুধু পিটিয়ে ঝুলিয়ে রাখলে হবে না, ওকে শুট করা উচিত। ওর বেঁচে থাকার কোন দরকার নেই। জানো ও আমাকে এতোক্ষণ অপমান করেছে, ঐ যে দাঁড়িয়ে আছে দুইটা বেয়াদব, ওদের সামনে আমাকে ছোট করেছে। ওকে ছাড়বে না তুমি। আমাকে…”
-” স্টপ! হোয়াট ননসেন্স?” রাফসানের ধমকে এলা কেঁপে ওঠে। ও ন্যাকামো স্বরে কথাগুলো বলছিল।কিন্তু শেষ করার আগেই রাফসান ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়।
-“তোমার কি মনে হয় আমি এখানে ফাজলামি করতে এসেছি? নাকি তোমার সাথে ন্যাকামি করতে এসেছি? ভাবো কি তুমি নিজেকে? তোমার চাকর মনে হয় আমায়! যে বলবে একে মেরে ফেলো, ওকে মেরে ফেলো, আর আমি তাই করবো? রাফসানকে তুমি এতো সহজ ভাব? আর তুমি যেচে পড়ে অপমানিত হতে যাও। কেউ এমনি এমনি তোমাকে অপমান করতে আসবে না। বুঝেছো? আর আমাকে জান, ফান, সোনা,মনি ডাকবে না। এগুলো যদি আরেকবার শুনি তো তোমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাইন্ড ইট!”
-” তুমি! তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে? আমি ড্যাডি কে সব বলে দেব।” এলা কান্না করতে করতে বললো। তারপর সেখান থেকে গটগট করে হেটে চলে গেলো। যাওয়ার আগে আবিরের দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে গিয়েছে। যার মানে “তোকে আমি দেখে নেব”
এলা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তুলতুল আর তাওহীর দিকে তাকায়। এদের দূজনকেও উচিত শিক্ষা দিবে সে। আজ এদের জন্য রাফসানের কাছে সে এতো কথা শুনেছে।
রাফসান এবার আবিরের কাছে গিয়ে একটা থাপ্পড় মারে। তারপর পায়ে একটা লাথি দেয়। তার সব রাগ আবিরের ওপর গিয়ে পড়ছে।
-” তোকে আমি বলিনি তাড়াতাড়ি আসবি। আমাকে কাজে যেতে হবে। ডাফার! তোকে আমি পাঠিয়েছিলাম এলা যাতে ঝামেলা না করে কারো সাথে এটা দেখতে। কিন্তু তুই গিয়ে আরো বাড়িয়েছিস। কি এত কথা বলছিলি? আমি তোকে বলিনি গিয়ে আগে ধমক দিবি তাতে কাজ না হলে থাপ্পড় দিবি। কিন্তু তুই মিনমিন করে ঝগড়া শুরু করেছিস।”
-“সরি ভাই। আসলে, কিভাবে যেনো হয়ে গিয়েছে। আমি বুঝতে পারিনি এতদূর আগাবে।” আবির দুঃখিত হয়ে বললো। আবিরকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তাওহী দৌড়ে এসে রাফসানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো
-“আপনি সেই জিপার খোলা ভাইয়াটা না?”
তাওহীর কথায় রাফসান হতভম্ব হয়ে গেলো। সেই বিচ্ছু পিচ্চি ছেলেটা। আবার কি বলছে জিপার খোলা? মান সম্মান সব ডুবাবে আজকে তার। যে ফাজিল ছেলে। এর কথা শুনে সবাই যেখানে রাফসানকে ভয় পেত সেখানে হাসাহাসি করবে। আর রাফসান লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে থাকবে? অসম্ভব! এটা সে হতে দিবে না। ছেলেটার সামনে থেকে যেতে হবে। নাহলে আবিরের যা মুখ পাতলা দেখা যাবে সব তার লোকজনের কাছে ফাঁস করে দেবে। এখনই কেমন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-“এই পিচ্চি যাও গিয়ে খেলা করো। বড়দের ভিতর কথা বলতে নেই। আবির চলে আয় কাজ আছে। ” বলে রাফসান এগোয় আর তাওহী সামনে এসে বলে
-“হ্যাঁ আপনি ওই ভাইয়াটাই। দেখছেন আমি বলেছিলাম আবার দেখা হবে। হয়ে গেলো।” বলে তাওহী দুষ্টুমি হাসি দিল। তার কেন যানি এই ভাইয়াটাকে রাগাতে ভালো লাগে। এখন যেমন তার কথা শুনে রেগে গিয়েছে।
-“ভাই এই পিচ্চিটার জন্য ঝগড়া বেশি হয়েছে। দেখতে ছোট হলেও কথা গুলো সব বড়দের মতো।” আবির বললো।
-“সেটা আর বলতে। বড়দের চেয়েও ভালো কথা বলতে পারে।” রাফসান বিরবির করে বললো। তার কাজ আছে। অথচ যত ঝামেলা এখনই উদয় হচ্ছে। রাগ হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙে ফেলতে। আবিরকে পাঠানোটাই ভুল ছিল তার। রাফসান আবিরকে গাড়ির কাছে যেতে বলে, আর তাওহীকে বললো
-“দেখো তুমি অনেক ছোট বাবু। আমাকে বিরক্ত না করে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলো।”
-“নাতো! তা হবে না।” তাওহী বললো। তুলতুল এতক্ষণ অবাক হয়ে এদেরকে দেখছিল। তাওহী আর রাফসান কথা বলছে। এটা দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছে। সে ওভাবেই এগিয়ে এসে তাওহীর পাশে দাঁড়িয়ে বলে
-“তাওহী কি করছিস? ওনার সাথে তোর কিসের কথা? চল বাড়ি চল। এরা সব গুলো আমার সুন্দর বিকালটাকে অসুন্দর করে দিয়েছে। গুন্ডা একটা লোক কখন দেখা যাবে তোকেও ঠাস ঠুস করে মেরে দিবে।” শেষের কথাটা রাফসানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো। আর রাফসান একবার তুলতুলকে আরেকবার তাওহীকে দেখছিল। কিন্তু তুলতুলের শেষের কথায় ওর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
-“আরে আপু ইনি হলো জিপার খোলা ভাইয়া। তোমাকে বলেছিলাম না?” তাওহীর কথায় তুলতুল ভাবুক হয়ে মনে করার চেষ্টা করলো। তারপর ফিক করে হেসে দিল। তুলতুলের হাসা দেখে রাফসান রাগী ভাবে তাকালো। এ ছেলে তার মান সম্মান অলরেডি অর্ধেক ডুবিয়ে দিয়েছে।
-“এই মিথ্যা বলছো কেন? আমার জিপার কখনো খোলা ছিল না। ওটা তুমি বানিয়ে বলছো। আর এজন্যই তো বলি তুমি এতো বিচ্ছু কেনো? বোনকে দেখেই বুঝেছি।” তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বললো-” সব একই গোয়ালের গরু। এজন্যই এমন বিচ্ছু টাইপ প্রত্যেকটা।”
-“দেখুন আপনি কিন্তু বেশি বলছেন। আপনি গরু বলো কি বুঝাতে চাইছেন? ”
-“কিছুই না বেবি” বলে রাফসান তাওহীকে বললো
-“পিচ্চি তুমি না ভালো। তোমার আপু সাথে একটু কথা আছে। তুমি গিয়ে বাচ্চাদের সাথে খেলো।”
-“আমার আপুর সাথে আপনার কি কথা? ” তাওহী সন্দেহ নিয়ে বললো।
-“বড়দের কথা। তুমি বুঝবে না। তোমার আপু আমাকে চেনে তো। ” তাওহী এই কথায় একবার ভাবলো পরমূহর্তেই একটা হাসি দিয়ে খেলার জন্য দৌড় দিল। তুলতুল ডাকলেও বাচ্চাদের চেচামেচি তে খেয়াল করে না। তাওহী চলে গেলে রাফসান তুলতুলের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ওর দিকে আগায়। আর তুলতুল ভড়কে যায়। ও তখন চমকে উঠেছিল যখন রাফসান তাকে বেবি বলে। পরমূহর্তেই ভাবে হয়তো মনের ভুল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সত্যিই বলেছে। তুলতুলের ভয় লাগতে শুরু করলো। এই গুন্ডা ওর দিকে এগিয়ে আসছে কেন। রাফসান আরো একটু এগিয়ে আসলে তুলতুল দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বলে
-“এই! এই এগিয়ে আসছেন কেন? কি অসভ্যতামি হচ্ছে। ভালো হবে না কিন্তু গুন্ডা… তুলতুল বলার মাঝখানেই থেমে গেলো। কারন রাফসান তার অনেক কাছে চলে এসেছে। তুলতুল যে দৌড় দিবে তাও পারছে না। কোনো এক অজানা কারণে তার শরীরের সব শক্তি চলে গিয়েছে মনে হয়। পা নাড়াতে পারছে না। এটা কি নার্ভাসনেস এর জন্য নাকি? রাফসান কাছে দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে তুলতুলের কাঁধের একটু উপরে মুখ রেখে আস্তে বলে
-“তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছ? কিন্তু কেন? আমি তো জানতাম তুমি আমাকে ভয় পাও না। তাহলে! কি ভয়ে দৌড় দিতে মন চাচ্ছে? কিন্তু পারবে না তাইনা? জানি তো আমি।” তারপর আবার তুলতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে কানের কাছে গিয়ে বলে
-” লুকিং বিউটিফুল বেবি। ব্লু কালারে মানিয়েছ তোমাকে। আই লাইক ইট।” তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসি দেয়। তুলতুল হতভম্ব ভাবেই রাফসানের দিকে তাকায়। আর রাফসান এক চোখ টিপ দিয়ে সানগ্লাস চোখে লাগিয়ে গাড়ির দিকে যায়। আর তুলতুল হাবার মতো চেয়ে আছে সেদিকে। ওর মাথা থেকে সব আউট হয়ে গিয়েছে। বুক ধড়ফড় করছে। অস্থির লাগছে। আশেপাশে কি হচ্ছে তার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। শুধু রাফসানের কথা গুলো মাথায় ঘুরছে।
.
বাড়ির সামনে রিকশা এসে থামে। দিয়া হাতের ব্যাগগুলো নিয়ে রিকশা থেকে নামতে গিয়ে ওড়নার সাথে পা বেঁধে রিকশা থেকেই সবকিছু নিয়ে ঠাস করে পড়ে যায়। দিয়া ব্যাথা পেয়ে আর্তনাদ করে উঠে। রিকশা ওয়ালা দ্রুত দিয়ার কাছে গিয়ে ওকে উঠাতে যায়। কিন্তু তাকে সরিয়েই একটা ছেলে এসে দিয়াকে ধরে। দিয়া পায়ে ব্যাথা পেয়েছে প্রচুর। ব্যাথায় এতোক্ষণ পা ধরে চোখ বন্ধ করে ছিল। কিন্তু তিয়াসের আওয়াজে চোখ খুলে। তিয়াস ওর হাত পা থেকে সরিয়ে দেখতে লাগলো কি হয়েছে। ওপর থেকে পড়ার কারনে অনেক ব্যাথা লেগেছে, রিকশার কোনোয় লেগে হাতের কিছু অংশ ছিলে গিয়েছে। তিয়াস দিয়ার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। তারপর রিকশা ওয়ালা কে ভাড়া দিয়ে যেতে বললো। দিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে
-” তোর কি আক্কেল জ্ঞান কিছু নেই? সাবধানে চলাফেরা করতে পারিস না। দেখলাম রিকশা থেকে নামছে, একটু অন্য দিকে তাকিয়েছি আর সে চোখের পলকে পড়ে গেলো। মানা করেছিলাম না আসতে? তারপরও শুনিস নি এবার মজা বোঝ।”
-“আমি ব্যাথা পেয়েছি। আপনি আমাকে না ধরে উল্টো ঝাড়ছেন? আর আপনি অন্য দিকে কেনো তাকিয়েছেন? এজন্যই পড়ে গিয়েছি। আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে কি হতো?” দিয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো।
-“আমার চোখ কানা হয়ে যেত। আর কি হতো।” বলে দিয়াকে উঠিয়ে দাঁড় করাতে যায়। কিন্তু দিয়া ব্যাথায় দাঁড়াতে পারে না।
-“কেমন মানুষ আপনি দেখছেন দাঁড়িতে পারছি না। তারপরেও টেনে তুলছেন। একটু কোলে করে নিয়ে গেলে কি ক্ষয় হয়ে যাবে আপনার?” দিয়া মেজাজ খারাপ করে বললো।
-“হ্যাঁ তাই তো করি। ঝামেলা!” বলে তিয়াস দিয়াকে কোলে তুলে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেলো। দিয়া আজকে মার্কেটে গিয়েছিল। ওর আর তুলতুলের জন্য কিছু জিনিস কিনেছে। তাই তুলতুলকে দিতে আসে। কিন্তু বাড়ির সামনে এসেই ব্যাথা পেল। তিয়াস দিয়াকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে সোফায় বসায়। আফসা বেগম এগিয়ে এসে বলে
-“তিয়াস কি হয়েছে ওর? ওমা হাতে রক্ত কেন? কোথায় পড়ে গিয়েছিলি?”
-“কি আর হবে রিকশা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে। কেয়ারলেস একটা।” তিয়াস রাগ করে বলে।
-” তো আপনি একটু কেয়ার করলেও তো পারেন। ব্যাটা নিরামিষ।” দিয়া বিরবির করে বললো।
-“আহ! রাগ করছিস কেন ও কি ইচ্ছা করে পড়ে গিয়েছে নাকি? ছোট মানুষ অসাবধানতয় পড়ে গিয়েছে। আমি হালকা গরম পানি নিয়ে আসি ক্ষত পরিষ্কার করতে হবে। তুই ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আয়।” বলে আফসা বেগম চলে গেলেন। আর তিয়াস সবকিছু নিয়ে এসে দিয়ার পাশে বসে হাত পা দেখতে লাগলো। কোথায় কোথায় কেটেছে। আর দিয়া মন দিয়ে তিয়াসের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে
-“আপনাকে আমার হতোই হবে মি. তিয়াস আহমেদ। ”
চলবে….