মেঘের পরে মেঘ – ৫
জাফলং এসে শায়েরী অভিভূত। এতো সুন্দর চারিপাশ। ওর মন খারাপভাব টা উধাও হয়ে গেলো নিমিষেই। মুগ্ধ হয়ে কতোক্ষন শুধু চেয়েই থাকলো। দিপা এসে ওর পাশে দাঁড়ালো।
“কি?কেমন লাগছে?”
“খুব ভালো আপু।”
চারিদিকে মুগ্ধ দৃষ্টি বুলাতে বুলাতে বললো শায়েরী।
“বলেছিলাম না খুব ভালো লাগবে?”
শায়েরী উত্তরে শুধু একটু হাসলো।ওর থেকে একটু দুরেই নাবিল দাঁড়িয়ে আছে বন্ধুদের সাথে। শায়েরী সেদিকে তাকালো না।আসার সময় গাড়িতেও একসাথে বসেনি।ও আর দিপা বসেছিলো একসাথে। দিপা খুবই মিশুক প্রকৃতির।শায়েরীর সাথে জমেছে বেশ।কথা দিপাই বেশি বলছে।শায়েরী শুধু উত্তর দিচ্ছে।
একসময় দিপা জিজ্ঞেস করলো,
“শায়েরী? ”
“হুম।”
“তুমি কি এই বিয়েতে খুশি নও?”
“কেন?হটাৎ এ প্রশ্ন?”
“কারণ তুমি সারাক্ষণই নাবিল ভাই কে কেমন যেন এড়িয়ে চলছো।মন খারাপ ভাব থেকেই যাচ্ছে তোমার চেহারায়।আমি যতদুর জানি তুমি নাবিল ভাই কে ভালোবাসতে।ভালোবাসার মানুষ কে পেয়ে তো তোমার খুশি হওয়ার কথা।তাই না?”
“ওকে পেয়ে আমি খুশি।কিন্তু এটাও সত্যি ওকে আমি এভাবে পেতে চাইনি।আমি সবাইকে সাথে নিয়ে বিয়ে টা করতে চেয়েছিলাম।আমার জন্য আমার বাবা মা কোন কস্ট পাক আমি তা চাই নি।কিন্তু তারা পেয়েছেন। হয়তো অনেক বেশিই পেয়েছেন। তারা আমাকে কখনো মাফ করবেন না। এটার সম্ভবনাই বেশি।যখনি এগুলো ভাবি কেমন যেন লাগে।কিছু ভালো লাগে না। ”
“মা বাবা কে কস্ট কিন্তু নাবিল ভাই ও দিয়েছেন।উনি উনার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। উনার বিয়ে নিয়ে না জানি কতো স্বপ্ন ছিলো ওনাদের।উনি সব কিছু তুচ্ছ করেছেন তোমার জন্য। এটাও কিন্তু একটা বড় স্যাক্রিফাইস।পরিবারের কস্ট কে তুচ্ছ করে ভালোবাসার মানুষকে আপন করেছেন।কস্ট তো উনিও পাচ্ছেন।সকালে উনার মা ফোন করে অনেক কান্নাকাটি করেছেন।তোমার বাবা না কি ওনার বাবাকে যাচ্ছে তাই ভাবে অপমান করেছেন।তবুও কিন্তু উনি শান্ত আছেন।তোমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করছেন।”
“আমি কি করবো? ”
“তুমি সব চিন্তা বাদ দিয়ে এই সময় টাকে উপভোগ কর।ওর ফিলিং বুঝতে চেষ্টা করো।”
“বুঝলাম না আপু?”
“নাবিল ভাই যদি তোমাকে ডাকে তো তার ডাকে সাড়া দাও।একে অপরকে খুব ভালোবাসো।”
“ওর ডাকে তো আমি সাড়া দেই।যখনি ডাক দেয় তখনি তো উত্তর দেই।”
দিপা হু হু করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই বললো,
“আমি এই ডাকে সাড়া দেওয়ার কথা বলিনি বোকা মেয়ে।”
“তাহলে?”
“আমি ফিজিক্যাল ইন্টিমেসির কথা বলেছি।বুঝেছো।”
শায়েরীর কান ঝাঁঝাঁ করে উঠলো।দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে দু দিকে মাথা নাড়াতে লাগলো।
“আমি পারবোনা।কিছুতেই পারবো না।”
দিপা উত্তরে কিছুই বললো না।শুধু হাসতে লাগলো।
একসময় শান্ত হয়ে বেশ নরম গলায় বললো,
“ভালোবাসার মানুষের সুখের জন্য অনেক কিছুই করতে হয়।আর এমন একটা সময় আসে যখন তার জন্য না পারার মতো কোন কাজই থাকে না।সবাই তখন সব পারে।আমি পেরেছি তুমিও পারবে।”
এরপর যতোটুকু সময় সেখানে থাকলো শায়েরীর ফর্সা মুখ লাল হয়ে রইলো।নাবিল একবার একটু খানি হাত ধরাতেই কেঁপে উঠেছিল ভীষণভাবে।নাবিল চমকে গিয়ে হাত ছেড়ে দিয়েছিল।শায়েরীর নাবিলকে দেখলেই এখন কেমন বুক ধুকপুক করতে থাকে।কই আগে তো এমন লাগে নি?কি বিপদ?
________
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে মাত্রই বিছানায় একটু গাঁ এলিয়ে দিয়েছিলো শায়েরী।তখনি নাবিল ঢুকলো ঘরে।শায়েরী ঝট করে ওঠে পরলো।ওকে এভাবে উঠতে দেখে নাবিল একটু অবাকই হলো।
“কি হলো? উঠলি কেনো?শুয়ে থাক।”
বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো। নাবিল বললেও শুয়ে পরলো না শায়েরী।বসে রইলো সেভাবেই। নাবিল বেরিয়ে
আসলো কিছুক্ষনের মধ্যেই।
দরজার দিকে এগুতে এগুতে বললো,
“তুই দরজাটা ভিজিয়ে শুয়ে পর।আমার ঘুমুতে দেরি হবে। ওদের সাথে একটু আড্ডা দেবো।”
শায়েরী কোন উত্তর করলো না।
“কথা বলছিস না কেনো?যাবো না তাহলে?ভয় করবে না কি তোর?”
“না না।আপনি যান।ভয় করবে না।”
নাবিল মৃদু হেসে দরজাটা ভিজিয়ে চলে গেলো।আর শায়েরী হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
পরদিন ওরা বিছানাকান্দি গেলো ঘুরতে।আজ দিপা আসে নি।ওর ছোট ননদকে দেখতে আসবে। তাই বাড়িতেই রয়ে গেছে। হিমেলও আসেনি একি কারনে।কবির গেছে ওর লন্ডন যাওয়ার কাগজপএের ব্যাপারের কাজে।আজ শুধু তাপস আর আশিক এসেছে।তাপস ড্রাইভ করছে আর আশিক ওর পাশের সিটে।পেছনের সিটে শায়েরী আর নাবিল।শায়েরী একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে ছিলো।নাবিল ওর কোমড়ে ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।একহাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে রাখলো।এতে করে শায়েরী যেন আরো শক্ত হয়ে গেলো।মনে মনে বললো, “কি বিপদ?”
ওকে এমন শক্ত হতে দেখে নাবিল হাত সরিয়ে নিলো।বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।ঝট করে শায়েরীর কানের লতিতে একটা কামড় বসিয়ে দিলো আলতো করে।শায়েরী অস্ফুট চিৎকার মাত্রই দিতে নিচ্ছিলো নাবিল ওর মুখ চেপে ধরলো।ফিসফিস করে বললো,
“কি করছিস?”
শায়েরী ওর হাত সরিয়ে দিয়ে একিভাবে বললো,
“আমি কি করলাম?করলেন তো আপনি।আপনি দুরে গিয়ে বসুন।”
“আমি কি করেছি?”
“কিছুই করেননি?”
“না।”
“ভালো।তবে দুরে থাকুন।”
নাবিল ওর একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিলো।শায়েরী সরাতে নিলেও পারলোনা।নাবিল সেই হাত শক্ত করে ধরে অনবরত চুমু খেয়ে যাচ্ছে।শায়েরী কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে শুধু একটা কথাই মাথায় আসলো,
“কি বিপদ?”
__________
বিপদ যে কি সেটা শায়েরী টের পেলো দিন চারেক পর।সেদিন সিলেট থেকে ওরা মৌলভীবাজার এসেছে বেরানোর জন্য। চা বাগান দেখতে গিয়েই সন্ধ্যা হয়ে গেলো।তাই বাকি জায়গায় আর যাওয়া হলো না।বন্ধুরা মিলে ঠিক করলো রাত টা কোন হোটেলে থেকে পরদিন দুপুর নাগাদ ফেরত আসবে।তাই দুটো রুম বুক করা হলো স্থানীয় একটা হোটেলে।নাবিল রুম সার্ভিসকে কি বলেছিলো কে জানে?রুমে ঢুকে শায়েরী অবাক হয়ে গিয়েছিল। ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো রুম টা।সেই সাজানো গোছানো ফুলেল রুমে ওদের নবজীবনের সূচনা হলো।নাবিল ওকে ভালোবাসার এমন বাঁধনে বাঁধলো শায়েরী ছুটেও পালাতে পারলো না।ওর ছটফটানিতে কোন কাজই হলো না।নাবিল ব্যস্ত নিজের বউকে ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধতে।ভালোবাসা মন্ডিত সেই সুকোমল বাঁধনের মধ্য দিয়েই শায়েরী প্রবেশ করলো অন্য এক জগতে।নাবিলের একেকটা স্পর্শে শিহরিত হয়ে উঠলো শায়েরী।নাবিল ওকে শেখালো ভালোবাসার নতুন পাঠ।সেই ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নতুন এক শায়েরী হয়ে উঠলো শায়েরী।যার অস্তিমজ্জায় শুধু একজনই বিচরন করে।নাবিল।
চলবে…….
মুনিরা মেহজাবিন।
(আমি খুবই অসুস্থ। পরবর্তী পর্ব কবে দিতে পারবো জানি না।)