#লেডি_ডন
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১১
–কলিংবেল বেজে উঠলো।হয়তো ছেলেপেলেরা গাড়ি নিয়ে এসেছে আমার।উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।দরজা খুলে যা দেখলাম,তাতে তো আমার চোখ জোড়া সোজা কপালে উঠে গেলো!
মিনিস্টার সাহেব তার মেয়েকে নিয়ে এসেছে আমার বাড়িতে!মেয়ের সাজগোজ দেখে বুঝতে বাকি রইলো না,যে কেনো এসেছেন মিনিস্টার সাহেব!
–আকাশ ভাই কি খবর?
–এই তো মিনিস্টার সাহেব আল্লাহ রেখেছে!আপনার কি খবর?
–আমিও আছি মোটামুটি!রাজনীতির মাঠে অনেকটা ঝামেলা চলছে,সেসব ঝামেলা কাঁধে বয়ে নিয়ে কি পুরোপুরি ভালো থাকা যায়!
–রাজনীতির ময়দান টাই এমন মিনিস্টার সাহেব!
আচ্ছা আসেন ভিতরে আসেন!
–আকাশ ভাই বাড়ি তো সেই দেখে কিনেছেন!
–আরেহ আর সেই কোথায়!
আচ্ছা সেসব বাদ দেন,তো বলেন কেনো এসেছেন?
–আসলে আকাশ ভাই,আমি চাই আমার মেয়েটাকে আপনি বিয়ে করেন!
–যেটা ভেবেছিলাম সেটাই হয়েছে!আমার ধারণাই সঠিক!মিনিস্টার সাহেব,আমি সেসব নিয়ে এখনো ভাবিনি।আর তাছাড়া আমার পরিবারকে গোছাতে আরো অনেকটা সময় লাগবে,ততদিন বিয়েসাদী করবো না।
–আকাশ ভাই,আপনি না করিয়েন না প্লিজ!
আমার মেয়েটাও খুব লক্ষী।আশা করি আপনার সাথে তার জোড়াটা অসাধারণ হবে!
–মিনিস্টার সাহেব,আমি এখন বিয়ে করবো না।
তবে হা,বাসায় আমার মা,বোন আছে।তারা যদি রাজি হয়,তাহলে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করবো!
আপনি আমায় মায়ের সাথে কথা বলেন।আমি ডাক দিচ্ছি..
একটু পর আম্মু আসলো অন্য রুম থেকে…
–আসলে আমি আপনার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম,কিন্তু আপনার ছেলে তো সোজা না করে দিলো!তবে হ্যাঁ,আপনি যদি রাজি থাকেন,তাহলেই নাকি আপনার ছেলে বিয়ের ব্যাপারে ভাববেন!
–মিনিস্টার সাহেবের মুখে এমন কথা শুনে আম্মু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে!
–আকাশ ঐ রুমে আয় তো বাবা,তোর সাথে একটু কথা আছে!
–হ্যাঁ মা এবার বলো..
–বাবা দেখ,জীবনটা তোর,তাই ডিসিশন টাও তোর।
তোর উপরে আমি কোনো ডিসিশন নিব না।আর তাছাড়া কপাল গুনে তোর মতন ছেলে পেয়েছি!কিন্তু তার পরেও তোর উপরে তো আমি চাপিয়ে দিতে পারি না।আর আমার তো তোর জীবন নিয়ে কথা বলার কোনো রাইট নাই!
–মা,তুমি হয়তো এখনো আমাকে ছেলের নজরে দেখতে পারোনি!
–না রে বাবা,এমন কিছুই না!
–আমি জানি মা,আসলে দেখো মা,আমি মায়াকে লাভ করতাম,সে আমার সাথে চিট করেছে!কিন্তু মনের মধ্যে তার জন্য জায়গাটা এখনো রয়ে গেছে।তার উপরে অনেকেই বিয়ের কথা বলছে।কিন্তু আমার এসবে কোনো মতামত নেই।আর অনেক কষ্টের বিনিময়ে মা কে পেয়েছি!তাদের পরিপূর্ণ সুখ দিয়ে নিজের কথা ভাববো।আর তাছাড়া তুমি মা,তুমি চাইলে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারো।তোমার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নাই!
আকাশের কথা শুনে আকাশের মায়ের চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়া শুরু করে।
–বাবা,জানি না তুই কার গর্ভের সন্তান,তবে এটা বলবো তুই দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ সন্তান!আর তুই আমার ছেলে!তোকে পেয়ে জীবনের সব চাইতে বড় পাওয়াটা আমি পেয়েছি!
–আরে মা তুমি কান্না করছে কেনো?
আমি তোমার সন্তান তোমার এই থাকবো।নিজের হাতে মায়ের চোখের পানি গুলো মুছে দিলাম।আম্মু এবার কি ডিসিশন নিবে বা নিলে,সেটা গিয়ে মিনিস্টার সাহেবকে জানাও!
–চল তুই..
মিনিস্টার সাহেব,আসলে দেখেন আমি আমার ছেলের বিয়ে নিয়ে এখনো ভাবিনি,আমার ছেলের বিয়ে আমি এখন দিব না।আরো কিছুটা সময় যাক,তারপর না হয় ওর জন্য বউমা খুঁজবো।তবে হ্যাঁ বউমা খুঁজলে আপনার মেয়েটাকে আমার ছেলের জন্য পারফেক্ট কিনা সেটা তখন ভেবে দেখবো!
–আমার মেয়ের সাথে আকাশের বিয়ে দিলে খুব খুশি হতাম!তবে সমস্যা নেই,আপনারা সময় নিন।পরে না হয় জানাবেন।
–জ্বি আমি সেটাই বলছি!
–মিনিস্টার সাহেব চলে গেলো।
আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি।
–বাবা,টেনশন করিস না।আমি জানি তোর ভিতরে কি চলছে!তুই কিছুটা দিন সময় নে,পরে না হয় তোর বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে ফোকাস করিস।
–হ্যাঁ মা সেটাই করবো।দেখি মন মানসিকতা কতদূর কি হয়।তবে এখনো মায়ার জন্য ভালোবাসা ভিতরে পুষে রেখেছি!সেটা হয়তো কোনোদিন মন থেকে যাবে না।
–যাওয়ার দরকার ও নেই।যা আছে মনে থাক,পরে সময়ের টা সময়ে দেখা যাবে!
–আম্মু আমায় ভরসা দিচ্ছিলো,তখনি ছেলেপেলেরা আমার গাড়ি নিয়ে আসে।আম্মু আজ থেকে তৃধাকে বলে দিবে,সে যেনো গাড়ি ছাড়া চলাফেরা না করে,আর তুমিও গাড়ি ছাড়া চলাচল করবে না।
–আচ্ছা..
–আম্মু কাজ করছে,আমি আমার রুমে শুয়ে আছি।
মায়ার কথা খুব মনে পড়ছিলো!নাহ,ওকে আমি যতোই ভালোবাসি না কেনো,কিন্তু ওকে আমি কখনোই মাফ করবো না।কি থেকে যে কি হয়ে গেলো,তা ভাবতেও কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে!আজ আমার ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে,সেই রক্তক্ষরণ যে করেছে তাকে আমি কোনোদিন ও মাফ করবো না!আর তার আসল গোড়া যে,তাকে তো আমি ছাড়বোই না!রোস্টারের কারনে এসব কিছু হয়েছে তো,তাকেই জমের বাড়ি পাঠাবো।
জাদুগর কে ফোন লাগালাম..
–আকাশ ভাই কি হাল চাল বলেন?
–হাল চাল আর কি বলবো,তবে একটা উপকার করতে হবে আমার!তাহলে হয়তো পুরোপুরি ভালো হবে হালচাল আমার!
–কি উপকার ভাই?
–রোস্টারের সাথে তো তোমার ভালো খাতির,তাকে তোমার দেশে আনতে হবে।তার রক্ত পান করবো আমি!
–ভাই তার আগে আপনাকে কিছু বলার আছে!
–হা বলো..
–রোস্টার গতকাল আমায় ফোন দিয়েছিলো,সে বললো আমি যাতে তার পক্ষে চলে যাই।তার পক্ষে গিয়ে আপনাকে শেষ করি।কিন্তু আমি ভালো মন্দ কিছুই বলিনি।কারন যার নুন আমি খেয়েছি,তার সাথে কোনোদিন এই গুটিবাজি আমি করতে পারবো না।
–তার মানে রোস্টার ও এক দফা আমার সাথে খেলতে চায়?
–হ্যাঁ ভাই..
–ওকেহ সমস্যা নাই,সে খেলার আগে আমিই খেলে দিব।তুমি শুধু তাকে ফুঁসিয় ফাঁসিয়ে দেশে আনো,তারপরের খেলাটা আমার উপরে ছেড়ে দাও..
–ওকেহ ভাই..
আমি রোস্টারের সাতে হাত মিলিয়ে ওকে দেশে আনার ব্যবস্থা করছি!
–ওকেহ..
তারপর ফোন রেখে দিলাম।
ফোন রাখতে না রাখতেই অন্য একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে।নাম্বারটা চেক করে দেখি মায়ার নাম্বার!
ফোনটা রিসিভ করে..
কি জন্য আমায় ফোন দিয়েছো?
–আকাশ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!বিশ্বাস করো তোমায় ছাড়া নিজেকে খুব একা একা লাগে!কেনো যে তোমার সাথে ওমনটা করতে গেলাম,আজ তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমার!
–যেরূপ কর্ম করবে,সেরূপ ফল তো অবশ্যই পাবে!
–আকাশ প্লিজ তোমার দু’টো পায়ে পড়ি,আমায় শেষ বারের মতন একটা সুযোগ ভিক্ষা দাও?
–শারীরিক কষ্ট পেলে হয়তো মনটাকে বুঝ দিতে পারতাম,কিন্তু এখানে তো মনটাকেই কষ্ট দিয়ে পঁচিয়ে ফেলেছো তুমি!সেই মন তোমার উপরে বসাবো কি করে আমি?
–আকাশ আমি ভালোবাসা দিয়ে তোমার মনটাকে আবার আগের ন্যায় করে দিব!
–তার আর কোনো দরকার নেই,আপাতত যেমন আছি,তেমন টাই থাকতে চাই আমি!আর আমার জীবনে তোমার মতন মেয়ের আর কোনোদিন জায়গা হবে না।
–আকাশ আমি হাল ছাড়বো না!তোমায় আমি নিজের করেই ছাড়বো!খোদার কাছে দুইহাত তুলে তোমায় ভিক্ষা চাইবো,তিনি তো আমায় খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না!
–যা করার করো,যে কষ্ট দিয়েছো আমায়,সেটা তোমার খোদাও দেখেছে,হয়তো কোনোদি তোমার দোয়া কবুল হবে না।এবার রাখলাম ফোন,বলে মুখের উপরে ফোন রেখে দিলাম।সব কিছু থেকে ব্লক করে দিয়েছি তাকে!
পরেরদিন সকাল বেলা..
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।আম্মু নাস্তা লাগিয়েছে সেটা খেয়ে দেয়ে কলেজে চলে গেলাম।কলেজে গিয়ে শুনি আজ নাকি ক্লাস হবে না।মায়া নাকি আজ কলেকে প্রিন্সিপালের সাথে অনেক হাঙ্গামা করেছে আমার জন্য।আবার আনিকাকে নাকি পিটুনিও দিয়েছে সে!মেজাজটা পুরো বিগড়ে গেলো!নাহ,মায়াকে শিক্ষা দেওয়া উচিৎ!মায়ার খোঁজ করতে লাগলাম।অবশেষে গিয়ে দেখি মায়া ক্লাস রুম বন্ধ করে বসে আছে!
মায়া দরজা খোলো!
আকাশের কথা মতন মায়া দরজা খুলে দেয়।
–কি শুরু করেছো তুমি হ্যাঁ?
প্রিন্সিপালের সাথে নাকি আমাকে নিয়ে হাঙ্গামা করেছো?আবার আনিকাকেও মেরেছো?
–হ্যাঁ করেছি,কারন সেই লোক তার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ের কথা কেনো বললো,আর আনিকাকে মেরেসি,সে তোমার সাথে গতকাল চিপকিয়ে কেনো ছিলো!
–সেটা আমার ব্যাপার,তোমার তো এখানে কোনো ফাংশন নেই!
–নেই মানে অবশ্যই আছে!তুমি শুধু আমার,তোমাকে আমি আর কারোর হতে দিব না।দরকার হয় এর জন্য আরো পদক্ষেপ আমি নিব!
–তুমি আসলেই মানুষনা মায়া!তোমার মধ্যে মনুষ্যত্বের কোনো কিছুই নেই!তুমি নিজের স্বার্থের জন্য মানুষের খুন করতে পারো,তুমি নিজের ফায়দার জন্য মানুষের মনে আঘাত ও দিতে পারো!আজকে যা করলে,তার পর তো তোমার উপর থেকে আমার সমস্ত ভালোবাসা উঠে গেছে!যদিও মনে মনে কিছুটা ভালোবাসতাম,আজ সেটাও নেই!
–আকাশ প্লিজ তুমি এমনটা করো না।আমি সত্যিই মরে যাবো!তোমার জন্যই তো এমনটা করেছি!
–যাও মরে যাও,তাও তোমায় আমি কোনোদিন গ্রহণ করবো না।
মায়া আকাশের এইরূপ কথা শুনে কান্না করতে করতে সেখান থেকে চলে যায়।
–আজ একমাস মায়া ক্লাসে আসে না।
মোটামুটি আমিও তাকে ভুলে গেছি!ক্লাসের সবার সাথে মোটামুটি ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে আমার!মোটামুটি দিনকাল ভালোই কাটছিলো।অনেক কয়টা বেস্টফ্রেন্ড হয়েছে আমার!হটাৎ একদিন সকাল বেলা আমার এক ক্লাসমেট সাইমা এসে আমায় বলে..
–আকাশ তুই কি কিছু জানিস?
–কি জানবো আমি?
–মায়া আজ ৪১ দিন ধরে হসপিটালে,সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে!তোর সাথে সেদিন কথা বলে যাওয়ার পর নাকি সে খাওয়া দাওয়া একদম ছেড়ে দিয়েছিলো,বাসার কারোর সাথেই নাকি কথা বলতো না।একা একা থাকতো,হুট করে একদিন রাতের বেলায় নাকি সুইসাইড করে বসে!
–সাইমার মুখ থেকে এমন ধরনের কথা শুনে পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো আমার!আমি জানি,মায়া আমার জন্য এমন করেছে।যত যাই হোক ভালো তো বাসি তাকে।কলিজায় এক ভয়ংকর রকমের মোচড় দিলো!সাথে সাথে বুকে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পাড়লাম!মনে হচ্ছে যেনো কলিজাটা কেউ লবণ দিয়ে কাঁচা চিবিয়ে খাচ্ছে!
চলবে…?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন!