ল্যাম্পপোস্ট পর্ব -১১

#ল্যাম্পপোস্ট (১১)

সমাবেশ শুরু হয়ে যায়। অ্যাড চাইছিল যে আরাজের মাথায় শু ট করে দিতে। যদি ও সেটা অনুচিত হত। নোলান বহু কষ্টে অ্যাড কে থামিয়েছে। আপাতত স্থির অবস্থায় আছে অ্যাড। ইস্টন সিস্টেম ডাউন করার কাজ করে যাচ্ছে। সমাবেশের মধ্যে খানেই আরাজের ভিডিও চলে আসবে। যে ভিডিও তে স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দিচ্ছে পিন্সেস হেনরি কে বিয়ে করে রাজত্ব কায়েম করাই তার লক্ষ্য। এই ভিডিও ফুটেজ কালেক্ট করতে ১ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। এতে কিচ্ছু যায় আসে না ওর। বিভা কে সত্যের মুখোমুখি করাই ওর লক্ষ্য। আরাজ আর পিন্সেস হেনরি পাশা পাশি দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে হাসছে তারা। অ্যাডের ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠে। একটু পর ই সব রহস্য উন্মোচন হয়ে যাবে। নোলানের দিকে তাকাতেই নোলান মাথা ঝাঁকায়। ধীর কন্ঠে কাউন্ট করে সে,
” 10 , 9 , 8, 7, 6, 5, 4, 3, 2, 1″
সমাবেশ স্ট্রেজ এর বিশাল টেলিভিশন স্ক্রিনে ভেসে উঠে আরাজের ভিডিও। কয়েক হাজার মানুষের মুখ হা হয়ে যায়। পুরোপুরি বুঝতে পারে না কেউ ই। কারণ আরাজ বাংলা আর ইংরেজি ভাষার মিশ্রণে কথা গুলো বলে যাচ্ছে। তবে পিন্সেস হেনরির ছবি তে নাইফ দিয়ে আ ঘা ত করার বিষয় টা সকলের আত্মা কাঁপিয়ে দেয়। সবাই বুঝতে পারে আরাজের পরিকল্পনা। আরাজের চোখে মুখে ভয়। সে নিশ্চিত হয়ে গেছে তার জীবন সংকটে। ফলের ঝুড়ি থেকে নাইফ নিয়ে নেয় সে। পাশাপাশি থাকা হেনরির গলায় নাইফ ধরে। সকলে চিৎকার করে উঠে। আরাজ বলে,
“যদি কেউ কাছে আসো তো পিন্সেস হেনরি কে হারাবে।”

কেউ কাছে আসে না। অস্ট্রিয়ার কিং ওয়েন সকল কে বলেন
“কেউ আগাবে না। ওকে চলে যেতে দাও। আমার কন্যার কোনো ক্ষতি যেন না হয়।”

“আগাবেন না কিং ওয়েন। হেনরি কে আমি সাথে নিয়ে যাব। আমার ক্ষতি করা মানে পিন্সেস হেনরির মৃ ত্যু।”

পিন্সেস হেনরি চিৎকার করে বলে
“ক্যামেরন তুমি আমার সাথে ছলনা করলে? উচিত করো নি তুমি। অতি শ্রীঘই তোমার শাস্তি নিশ্চিত হবে।”

“থামো মূর্খ মেয়ে। পিন্সেস হওয়ার কোনো যোগ্যতাই তোমার নেই। যে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না সে কেন হবে পিন্সেস?”

“ক্যামেরন!”

পিন্সেস হেনরি চিৎকার করতেই র ক্ত লাল চোখে তাকায় আরাজ। পরক্ষণেই অট্টহাসি তে ফেটে পরে। সে বলে
“আমাকে ধরা অত সহজ নয় কিং ওয়েন। আমি হেনরি কে নিয়ে যাচ্ছি।”

“হেনরি মাই ডিয়ার।”

“ড্যাড।”

কিং ওয়েন আর পিন্সেস হেনরি দুজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। অ্যাড একটু দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছে। ইস্টন যেতে চাইলে ও বাঁধা দিল সে।
“পিন্সেস হেনরির কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না। ফোর্স লাগাও , দেখ কোথায় যাচ্ছে এরাজ। আমি বিইভার কাছে যাচ্ছি। সমস্ত কিছু ধামা চাঁপা দেওয়ার ব্যবস্থা করো। এই ফুটেজ কে কালেক্ট করেছে এটা যেন অস্ট্রিয়ার পুলিশ দের নামেই লিখিত হয়।”

“ওকে অ্যাড। আমি দেখছি , তুমি খেয়াল রেখো। এরাজের সাথে চক্রধারী দল ও যুক্ত আছে।”

“আমি নিজের খেয়াল রাখবোইস্টন। রবার্ট কে নিয়ে যাচ্ছি। নোলান তোমার সাথেই থাক।”

ওয়াসরুমে যাওয়ার প্রয়োজন। আশে পাশে কাউকে দেখতে পায় না বিভা। সবাই লাঞ্চ তৈরি তে বিজি। শরীর টা একটু সুস্থ হওয়াতে নিজে নিজেই উঠার চেষ্টা করে সে। বেড থেকে মেঝে তে পা রাখতেই ঠান্ডা মেঝে পুরো শরীরে শীর শীর অনুভূতি দিয়ে দেয়। হীম শীতল র ক্ত যেন শরীর কে জড়োসড়ো করে দেয়। প্রচন্ড শীতের মাঝে শরীরে অসহ্য ব্যথা যেন মৃ ত্যু সম। তারউপর শরীরে জ্বর এসে গেছে। হাজারো কষ্টের মাঝে ও উঠে ওয়াসরুমে যায় বিভা। তবে ফেরার পথে পায়ে পানি থাকায় পা পিচলে যায়। প্রচন্ড ব্যথায় আহ বলে আর্তনাদ করে উঠে। মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়
“অ্যাড।”

পরমুহূর্তেই জ্ঞান হারায় সে। লাঞ্চ নিয়ে আসে ক্লো। বিভা কে মেঝে তে পড়ে থাকতে দেখে হাত থেকে ট্রে পড়ে যায়। সে চিৎকার করে ডাকে।
“স্কার , লিলি কোথায় তোমরা , দ্রুত আসো ম্যাম মেঝে তে জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে আছে। স্কার , লিলি। ব্রিভা ম্যাম কি হয়েছে আপনার।”

ব্রিভার মুখে আলত হাতে স্পর্শ করে ক্লো। ব্রিভার গোঙানি শুরু হয়। ভয় পেয়ে যায় ক্লো। ফোন হাতে নিয়ে অ্যাড কে কল করে। ফোন রিসিভ হতেই উদ্বিগ্ন গলায় বলে
“স্যার। ম্যাম জ্ঞান হারিয়েছে। মুখ দিয়ে গোঙানি বের হচ্ছে। দ্রুত আসুন স্যার। আমার খুব ভয় হচ্ছে।”

“বিইভা! ক্লো তুমি ডাক্তার কে কল করো আমি আসছি।”

“ওকে স্যার।”

ফোন টা রেখে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয় অ্যাড। নীল চোখে পানির স্রোত নেমেছে। বিভার অবস্থা কল্পনা ও করতে পারছে না ছেলেটা। মিনিট দশেক পর বাসায় পৌছায় সে। বিভার রুমে ছুটে যায়। বিভা কে ঘেরাও করে আছে সকলে। ডাক্তার চেকাপ করছেন।
“হাউ ইজ সী?”

“নট ফাইন। প্রচন্ড জ্বরে নাজেহাল অবস্থা।”

“কয়েক দিন আগে ওর শরীরে পয়জন দেওয়া হয়েছিল।”

“আচ্ছা। সেটার ই প্রভাব রয়ে গেছে। যত্ন নিবেন , আমি ঔষধ লিখে দিয়েছি।”

“ওকে থ্যাংকস।”

ডাক্তার চলে যায়। ভয়ে কাঁপছে স্কার , ক্লো আর লিলি। তবে অ্যাড তেমন কিছু ই বলে না। বিভার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে
“ওর জন্য লিকুয়েট ফুড এর ব্যবস্থা করো”

“ওকে স্যার।”

ওরা চলে যেতেই বিভার পাশে বসে অ্যাড। নিষ্পাপ মুখের অবস্থা শোচনীয়। ওর আত্মা বুক চিরে বের হয়ে আসতে চায়। হাত দুটো বুকে চেপে ধরে। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে বলে
“তোমার জীবনের ল্যাম্পপোস্ট হতে পারছি না আমি। কেন পারছি না আমি। তুমি কেন আমার কাছে থেকে ও নিরাপদ নউ?”

বিভার হাত বুকে চেপে রেখেই চোখ বন্ধ করে ছেলেটা। মিনিট দশেক পর আসে ক্লো। বলে
“স্যার লিকুয়েট ফুড রেডি।”

“যাও আমি আসছি।”

বিভার জ্ঞান ফিরে নি এখনো। মাথায় হাত বুলাচ্ছে অ্যাড। গায়ের স্যুট টা চেঞ্জ করে নিয়ে টি শার্ট পরে নেয়। ফ্রেস হয়ে এসে স্যুপ নিয়ে আসে। আলতো হাতে বিভার মুখে স্পর্শ করে। চোখে মুখে পানির ছিটে লাগতেই জ্ঞান ফিরে বিভার। হালকা করে তাকায়,ভেসে উঠে অ্যাড এর বিধ্বস্ত মুখ। উঠার চেষ্টা করে তবে পারে না। স্যুপ এর বাটি সাইট টেবিলে রেখে বিভা কে উঠে বসায়। বিভার চোখ বার বার বুজে আসে।
“আমার কি হয়েছিল অ্যাড?”

“জ্ঞান হারিয়েছিলে। শরীরে প্রচন্ড জ্বর।”

“আরাজের খবর পেলে?”

“উহহু তবে পেয়ে যাব.চিন্তা করো না।”

“একটা সত্যি কথা বলবে অ্যাড?”

“হুম বলো।”

“আজ তুমি আরাজ এর কাছে গিয়েছিলে তাই না? আরাজ আমার সাথে প্রতারণা করেছে তাই তো?”

বিভার কথা শুনে চমকে তাকায় অ্যাড। বিভা তাচ্ছিল্য হেসে বলে
“টিভি চ্যানেল এ সরাসরি সম্প্রচার ছিল। আরাজ নিজের চেহারা বদলাতে পারলে ও কণ্ঠ বদলাতে পারে নি। আমি কণ্ঠস্বর চিনতে ভুল করি নি।”

“ব্যস্ত হইয় না বিইভা। আমি সব ঠিক করে দিব। তুমি প্লিজ ভরসা রাখো।”

দু চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়ায়। অ্যাডের হাতে হাত রাখে বিভা। সিক্ত নয়নে ক্রোধিত কণ্ঠের উত্তাপ মিশ্রিত করে বলে।
“আমি এর শেষ দেখতে চাই। পাপী কে শাস্তি দেওয়াই তোমার কাজ তাই না? আমার জীবনে ল্যাম্পপোস্ট হয়ে আলো ছড়ানোর প্রতিশ্রুতি করেছ তুমি। তোমাকে আমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। প্রতারকের শাস্তি চাই আমি। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে শাস্তি দিবে ওকে। কথা দাও তুমি। ওর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।”

“কথা দিচ্ছি বিইইভা। তোমার জীবনের এই অন্ধকার অংশ কে আমি আলোয় সিক্ত করব। আমি আমার মতো করে তোমার জীবনের ল্যামপোস্ট হব।”

বিভার চোখ উজ্জ্বল হয়। মায়াবি নয়নে তাকিয়ে থাকে। অ্যাডের দৃষ্টি তে রয়েছে সুখ। বিভা এত সহজে মেনে নিবে ধারণা করতে পারে নি সে। মেয়েটার মাঝে যে উদ্দীপনা রয়েছে তাতে ভেতর থেকে শ্রদ্ধা আসে। মনে মনে বলে
‘আমার জীবনের অন্ধকার ল্যাম্পপোস্ট এ বিইইভা হয়ে আসবে তো তুমি? আমি নির্ঘুম হয়ে আলো ছড়াতে চাই তোমার জীবনে।’

চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here