#শহরজুড়ে_বিষন্নতা
সাদিয়া মেহরুজ .
২.
তমসাচ্ছন্ন রজনী। আঁধারের বুকে ডুবে রয়েছে শহর। বাতাবরণে বইছে তখন হিমেল হাওয়া। সমীরে সোঁদা মাটির গন্ধ। আচানক জোড়াল হাওয়া দ্রুত গতীতে ছুটে এসে মেহতিশার গা স্পর্শ করলো। বাকরুদ্ধ হয়ে থাকা মেহতিশার তখন হুঁশ এলো। সে ছিটকে দূরে সরে দাঁড়াল। মুখোশ্রীতে দেখা দিলো তার কিয়ৎ ক্রোধের লেশ! চোখের দৃষ্টি কঠিন করে মেহতিশা শক্ত গলায় বলল,
-” আশ্চর্য তো! আপনি আমাকে স্পর্শ করলেন কোন সাহসে? ”
ছেলেটা তখনও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে। তার ভীষণ রাগ লাগছে। যে রাগের প্রকোপে একজন পর – নারীকে চ ড় মা রা র আকাঙ্খা জাগে ঠিক সেরকম রাগ চেপে বসেছে তার মস্তিষ্কে। সে চিবিয়ে বলে উঠলো,
-” আপনি এই বাড়িতে কেন? ”
-” আমি অবশ্যই আপনাকে উত্তর দিতে বাধ্য নই। ”
-” আমার বাবার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকেই বলছেন আমাকে উত্তর দিতে বাধ্য নন? স্ট্রেঞ্জ! ”
মেহতিশা আচমকা স্তব্ধ নয়নে তাকাল। অজানা আশ”ঙ্কা, ভ য়ে অন্তঃকরণ হীম হয়ে আসতে চাইল তার। কাঠ কাঠ দৃষ্টিপাত এবার কিছুটা নড়বড়ে হয়ে এলো। এই ছেলেটা সালমা ওয়াজিদের ছেলে?ছেলেটা বোধহয় ধৈর্যহারা হয়ে উঠল। গলার স্বর নিম্ন থেকে উচ্চে পৌঁছাল। প্রায় চেঁচিয়েই জিজ্ঞেস করলো,
-” এই মেয়ে, কথা বলছেন না কেন? আপনি এখানে কি করছেন? ”
মেহতিশা উত্তর দিতে নিচ্ছিল। আচানক এক ভারী কন্ঠ তাকে থামিয়ে দিলো। পিছন থেকে কেও ছেলেটাকে ডাকলো,
-” সারতাজ, তুমি আবারও মধ্যরাতে এখানে এসেছ। ”
মেহতিশা পেছনে তাকাল। সালমা ওয়াজিদ দাড়িয়ে সিঁড়ির একদম নিকটে। সারতাজ সরু চোখে তাকাল মায়ের দিকে। মেহতিশাকে দরজার সামনে রেখেই সে লম্বা লম্বা পা ফেলে মায়ের নিকট পৌঁছে বলল,
-” এই মেয়েটা এখানে কি করছে? ”
-” ও আমার কাছের মানুষ।তাই সে এখানে। তুমি যদি আজ রাতে বাসায় থাকার উদ্দেশ্যে এসে থাকো তাহলে নিজের রুমে যাও। ”
সারতাজ অপমানিত বোধ করলো। যদিও মায়ের উক্ত ব্যবহারই তার স্বাভাবিক ব্যবহার তবুও বাহিরের এক মেয়ের সামনে তার মা কখনো এভাবে কথা বলতে পারে এটা সে ভাবেনি। এক নজর আশেপাশে তাকিয়ে সে যে পথে এসেছিল সে পথ দিয়েই বাড়ির বাহিরে চলে গেল। যাওয়ার পূর্বে সদর দরজা এতোটাই জোড়ে লাগিয়ে গেল যে দরজার পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভেসটা মাটিতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল নিমিষেই।
সালমা ওয়াজিদ সামনে এগোলেন। দরজা লাগিয়ে মেহতিশার নিকট পৌঁছে বললেন,
-” এতো রাতে উঠেছিস যে? দরজা খুলতে বুঝি? ”
মেহতিশা কন্ঠের খাদ নামিয়ে বলল,
-” জি আন্টি। ”
-” ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো তোর। যা ঘরে যা! ও আর আসবে না। আর রাতে হাজারটা কলিংবেল কেও দিলেও আর কক্ষণো খুলবি না। ঠিক আছে? ”
মেহতিশা মাথা নাড়ল। সালমা ওয়াজিদ তার মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের ঘরে চললেন।মেহতিশা সেদিকে তাকাল একবার। তার মাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মাথায় ঢুকলো না। তবে এতটুকু নিশ্চিত সে, সারতাজের সাথে যে এ পরিবারের তেমন একটা ভালো সম্পর্ক নেই।
সারতাজের সাথে মেহতিশার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল এক অঝোর শ্রাবণে। সেদিন ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছিল। মেহতিশা তখন সবেমাত্র অনার্ষ ১ম বর্ষের ছাত্রী। ঝুম শ্রাবণে সেদিন টিউশনি করিয়ে দ্রুত পদে বাড়ি ফিরছিলো সে। তবে মাঝে পথে বৃষ্টির তোড় এতোটাই বৃদ্ধি পেল যে হাঁটা আর সম্ভব হলো না। সে তৎক্ষনাৎ আশ্রয় নিল এক পার্কের ছাউনিতে। ছাউনিতে তখন হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ। সড়ক তখন বিরান। হাতের ছাতা বন্ধ করে মেহতিশা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াল। কিয়ৎক্ষণ পর তার মনে হলো তাকে কেও দেখছে গভীর ভাবে। সে চট জলদি পাশে তাকাল। তৎক্ষনাৎ যে দৃশ্য সে দেখল তা দর্শন করে সে যারপরনাই রেগে গেল! এক অচেনা ছেলে তার ছবি তুলছে। ছেলেটা আর কেও নয় বরং সারতাজ ছিলো।
-” আপনি বিনা অনুমতিতে আমার ছবি তুলছেন কেন? ”
মাছরাঙা পাখিটা সবেমাত্র নিজের শিকার ধরতে নেমেছিল। সারতাজ ক্যামেরার ফোকাস সেদিকে রেখে যেই না ছবিটা ক্লিক করতে যাবে তখনই ভেসে এলো এক প্রতীবাদী নারী কন্ঠ! সারতাজের ফোকাস সরে গেল। সে ভীষণ ভীষণ বিরক্তি নিয়ে চোখের সামনে থেকে ক্যামেরা সরিয়ে নিল। চক্ষু সম্মুখে ক্রোধান্বিত রমনী দেখে সে প্রশ্ন করলো,
-” সরি ম্যাডাম, কি বললেন? ”
মেহতিশা দ্বিগুণ রাগ নিয়ে শুধালো,
-“ন্যাকামি করেন? বোঝেন না, না? আপনি আমার ছবি তুলছিলেন কোন সাহসে? ”
সারতাজ হালকা হেঁসে বলল,
-” সরি ম্যাডাম আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি আপনার ছবি তুলতে যাবো কেন খামোখা? ”
-” খামোখা তুলতে যাবেন কেন? আপনার মতো পুরুষদের কাজই তো অযথা ফালতু কাজকর্ম করে নারীদের বিবৃত করা। বিরক্ত করা! ”
-” ম্যাডাম আপনি কিন্তু অযথা তর্ক জড়াচ্ছেন। আমি আপনার ছবি তুলিনি বরং আপনার ঠিক পিছে থাকা মাছরাঙার শিকার করার মূর্হত ক্যাপচার করছিলাম। বিশ্বাস নাহলে দেখুন। ”
সারতাজ মেহতিশার সামনে ক্যামেরা ধরল। ক্যামেরায় থাকা একের পর এক ছবিগুলো দেখাতে লাগল। তবে মাঝে এক অল্প বয়সী মেয়ের একটা ছবি চলে এলো যার পোশাক অনেকটা মেহতিশার পরে থাকা পোশাকের সাথে মিল রয়েছে। একটু খেয়াল করে মেয়েটার মুখোশ্রী যেই না দেখতে নিবে অমনি ক্যামেরা বন্ধ হয়ে গেলো। বিধিবাম! বিপদ যখন আসে তখন সবদিক দিয়েই আসে। উক্ত মেয়েটার মুখোশ্রী না দেখে মেহতিশা ধরেই নিল এটা সেই ছিলো। সারতাজ যে এতো করে বোঝালো এটা সে না তবুও মেয়েটা বুঝলে তো! লহমায় আশপাশে হাজির হলো উৎসুক বাঙালি। হুজুগে মেতে থাকা কয়েকজন মানুষও মেহতিশার সাথে তাল মিলিয়ে সারতাজকে এক চোট কথা শুনিয়ে দিল। অসহায় সারতাজ সেদিন দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করে গেল। আর কিই বা করার আছে? ইশশ! কেন যে সে মাছরাঙার ছবিটা তুলতে গেল। তার আফসোস হচ্ছে! ভীষণ রকমের আফসোস! মেহতিশার পাশে ঠিক পিছনের পুকুরটায় বসে ছিল মাছরাঙা। ওখানে দাঁড়িয়ে ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না ছবি তোলার। সারতাজ তাই তো বাধ্য হয়ে এমনটা করলো।
তারপর বেশ কয়েকদিন পার হলো। সারতাজ মেহতিশাকে খুঁজেছিল নিজেকে নির্দোষ দাবি করার জন্য। তবে সে পেলোনা মেয়েটাকে। একদিন জরুরি কাজে যমুনা ফিউচার পার্কের ওদিকে যেতেই তার দর্শন মিলল মেহতিশার। ক্যামেরাটা তার সাথেই ছিল। সারতাজ ছুটল সেদিকে। মেহতিশার সামনে দাঁড়াতেই মেয়েটা খিটখিটে মেজাজ নিয়ে তাকে বলল,
-” আপনি আবার? আবার এসেছেন আমার সামনে, বে হা য়া লোক তো! ”
সারতাজ সেদিন দাঁতে দাঁত চেপে তার শুভ্র রাঙা মুখোশ্রী রক্তিম করে বলেছিল,
-“আগে এগুলো দেখুন। তারপর আমাকে বে হা য়া বলবেন ম্যাডাম। ”
সেদিন নিজেকে মেহতিশার সম্মুখে নির্দোষ প্রমান করতে সক্ষম হয়েছিল সারতাজ। মেহতিশার অনুশোচনায় দগ্ধ চেহারাটা দর্শন করে সে আর কোনো বাক্য ব্যায় না করে চলে এসেছিল। একজন মানুষকে শাস্তি দিতে তাকে অনুশোচনায় ভোগানোর মতো কঠোর শাস্তি আর দ্বিতীয়টি হয় না। এরপর ক’দিন, মেহতিশা ক্ষমাপ্রার্থনা করে একটা চিঠি লিখেছিল সারতাজকে। সারতাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। খবর নিয়ে জানার পরই সে চিঠিটা লিখলো। তারপর এক মাধ্যমে পাঠিয়ে দিলো সারতাজের নিকট। মাস পেরুলো, বছর পেরুলো চিঠির কোনো উত্তর নেই। সারতাজেরও আর হদিস নেই। মেহতিশাও ব্যাপারটা প্রায় ভুলেই বসল।
_
সকাল হতেই মেহতিশাকে ছন্নছাড়া দেখাল। কি করবে? কোথায় যাবে? কিভাবে একটা কাজের ব্যাবস্থা করবে তা ভেবে ভেবে তার গলা শুকিয়ে এলো। শুষ্ক চোখজোড়ায় পানি এসে জমলো। ছোট বোনের চিন্তায় বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠল! সে এইচএসসি পাশ। অনার্স ২য় বর্ষ অব্দি পড়ার সুযোগ পেয়েছিল যা কোনো কাজেরই না। ভবিষ্যতের চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে উঠল তার অন্তঃকরণ।মেহজা তখনো নিশ্চিতে ঘুমোচ্ছে। মেহতিশা বোনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকল কেবল। তখনি দরজায় টোকা পড়ল। মেহতিশা উঠে দাঁড়িয়ে এগোল। দরজা খোলার পরই তার দর্শন মিললো সালমা ওয়াজিদের। মেহতিশা ভীষণ লজ্জা পেল! আজ তার এ বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা অথচ সকাল দশটা বেজে গেল তবুও সে বে হা য়ার মতো ঠায় পড়ে আছে এ বাড়িতে।
-” আন্টি আমি এক্ষুণি চলে যাচ্ছি। আসলে মেহজা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি তো তাই দেরী হলো। ”
সালমা ওয়াজিদ থমথমে গলায় বললেন,
-” আমি কি তোকে চলে যেতে বলেছি মেহতিশা?”
মেহতিশা মাথা তুলল। আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিতেই সালমা তাকে থামাল। হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো পাশের লাইব্রেরি রুমে। অতঃপর নম্র কন্ঠে বলা শুরু করলো,
-” এখন তুই কোনো কথা বলবি না। আমি যা যা জিজ্ঞেস করবো তার সঠিক উত্তর দিবি শুধু। বল তো মা, তুই এতদিন কোথায় ছিলি? কাল রাতেই বা তোকে কেন আমার বাড়িতে আশ্রয় নিতে আসতে হলো? ”
মেহতিশা তার বি ষ ন্ন দৃষ্টিপাত ভূমিতে ফেলে রেখেছে। শেষ বিকেলের পড়ন্ত রৌদ্দুরের মতো তার মুখোশ্রী হয়েছে ফিকে। সে ভেতরে কথা সাজাল। ইচ্ছে করেই নিজের বিয়ের ব্যাপারটা চাপা রেখে বলতে লাগল,
-” আমি এতদিন আমার ফুপুর বাসায় ছিলাম। কিন্তু ফুপু আর আমাদের দুই বোনের ভরনপোষণ নিতে পারছিলেন না। আর আমরাই বা কতদিন ওনার ঘাড়ে চেপে বসে থাকতাম? তাই চলে এসেছি অস্থির হয়ে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছোট্ট খাটো একটা চাকরি করে মেহজাকে বড় করে তুলবো। আমার পড়াশোনাটা তো আর হলো না। মেহজাকেই নাহয় মানুষ করি। ”
-” কি চাকরি করবি ভেবেছিস? ”
-” নাহ আন্টি। ”
সালমা এবার অনুরোধের সুরে বললেন,
-” মা তাহলে তুই আমার কাছে থাক চাকরি না হওয়া পর্যন্ত। ভাবিস না আমি তোকে দয়া করছি। ভেবে নিস ঋণ পরিশোধ করছি। তোর মায়ের কাছে আমি অনেক ঋণীরে মা। ”
মেহতিশা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো, ” কিভাবে? ”
-” ঐ বিষয়ে পরে কথা হবে। এখন আমার কথাটা শোন? ”
-” কিন্তু আন্টি আমি এখানে থাকতে চাচ্ছিনা। ভাগ্য আমাকে একটা লড়াইয়ের সামনে দাঁড় করিয়েছে, আমি এই লড়াইটা একা হাতেই লড়তে চাই। আমার বিশ্বাস আমি ঠিকই জয়ী হবো, আমি এই পরিস্থিতি থেকে নিশ্চয়ই বের হতে পারবো চেষ্টা করলে। ”
-” বুঝলাম! তোকে এমনি ফ্রী থাকতে দিচ্ছি বলে তুই থাকতে চাচ্ছিস না তাইনা? তাহলে তুই এক কাজ করো। বাসার টুকিটাকি কাজে আমাকে সাহায্য কর। আমি তোকে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক দিব। থাকার জায়গা দিব। মনে কর এটাই তোর চাকরি। যখন তুই তোর মন মতো কাজ পাবি তখন নাহয় চলে যাস। এবার রাজি হয়ে যা মেহতিশা।”
মেহতিশা মৌন রইল কিয়ৎক্ষণ। শেষে বহু চিন্তা করে সে রাজি হলো সালমা ওয়াজিদের দেয়া প্রস্তাবে।
_
পৌষ মাসের এক দুপুরবেলা।মেহতিশা দূর্বল পায়ে তখন ফুটপাত ধরে হাঁটছে। ঢাকায় শীত যেনো এবার একটু বেশিই! শীতের প্রকোপে দাঁতে দাঁত লেগে আসছে তার। মেহতিশা মাত্রাতিরিক্ত শীতকে পাত্তা দিল না। সে চিন্তিত! আজ এক সপ্তাহ ধরে চাকরির সন্ধানে এদিক সেদিক ছুটছে কিন্তু দেশে যে পরিমাণ শিক্ষিত বেকারের হার বাড়ছে সেখানে তার মতো এইচএসসি পাশ করা মেয়ের অতি নগন্য এক চাকরি পাওয়াও দুর্লভ। মেহতিশার বর্তমান দিন গুলো কাটছে চক্ষুলজ্জায়। সালমা ওয়াজিদের বাড়িতে থাকতে তার কি পরিমাণ যে লজ্জা লাগছে তা বলার বাহিরে। সালমা ওয়াজিদ তাকে তেমন কাজও করতে দিচ্ছেন না। এতে মেহতিশা একপ্রকার ধরেই নিয়েছে ভদ্রমহিলা তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করছে। অথচ মেহতিশা এক চিরন্তন সত্যের ব্যাপারে এখনো অবগত নয়।
টিএসসি পৌঁছাতেই মেহতিশার আকস্মিক সাক্ষাৎ হলো সারতাজের সঙ্গে। তারা দু’জন চলার পথে কি করে যেন সামনাসামনি পড়ে গেল। মেহতিশা বিব্রত হয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতেই সারতাজ এক তিক্ত কথা পেশ করলো। সেই তিক্ত কথা শ্রবণ করা মাত্র মেহতিশা পাথরের ন্যায় নিস্তব্ধতা ধারণ করলো। ভীষণ অ প মানে তার সর্বাঙ্গ কেঁপে কেঁপে উঠল।
চলবে~#শহরজুড়ে_বিষন্নতা
সাদিয়া মেহরুজ
৩.
-” ফ্রী তে অন্যের বাসায় বোঝা হয়ে থাকছেন। আপনার কি কমনসেন্স নেই? ”
মেহতিশা সটান হয়ে দাঁড়ালো। অ প মা নে তার শ্যাম মুখোশ্রী তখন থমথমে হয়ে উঠেছে। কান দু’টো কি ভীষণ জ্বলছে তার! যেন কেও এই মাত্র মরিচের গুঁড়ো লাগিয়ে দিয়েছে।মেহতিশার আত্মসম্মানবোধ প্রবল। কেও তাকে অ প মা ন করে কথা বললে তাকে কড়া জবাব দিয়ে বসে।কোনো কিছুর পরোয়া করে না!
-” অন্যের বাসায় ফ্রী তে বোঝা হয়ে থাকছি মানে? প্রথমত আপনার মা আমায় অনুরোধ করেছেন তার বাসায় থাকতে এবং দ্বিতীয়ত আমার কমনসেন্স আছে কি নেই তা আমি ভালো বুঝব। আপনি প্রশ্ন তোলার কে? ”
আশপাশ আজ কিছুটা নীরব। মানুষের পদচারণ তেমন নেই। যা আছে তাও ক্ষীণ! সারতাজ কয়েক কদম এগোল। মেহতিশা ভ্রু কুঁচকে নেয়। সারতাজ এগিয়ে এসে কন্ঠের খাদ নামিয়ে বলল,
-” জানেন তো, আমার মা ভীষণ দয়াশীল মানুষ। অসহায় আপনাকে দেখেছে তাই সাহায্য করেছে। তাই বলে আপনি এভাবে এতদিন পরে থাকবেন? ”
-” আমি আপনার বাসায় ফ্রী থাকি না। আপনার আম্মুর হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে রয়েছি। ”
সারতাজ ঠোঁট বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
-” অহ আচ্ছা! মা বলেছিলেন আমাকে। বাসায় মেইড দরকার। আপনিই বুঝি সে? আচ্ছা আ’ম সরি।আগে বলবেন না আপনি আমার বাসার মেইড হিসেবে আছেন? ”
মেহতিশা স্থির চোখে তাকিয়ে। সে স্পষ্টত বুঝতে পারছে সারতাজ তাকে কটাক্ষ করছে। নিচু করতে চাচ্ছে। এটা কি সেই পিছে ফেলে আসা তার অপরাধের প্র তি শো ধ হিসেবে করছে? হয়ত তাই! মেহতিশা শীতল কণ্ঠে শুধালো,
-” পিছে ফেলা আসা ভুলের শা স্তি আপনি আমাকে এখন দিচ্ছেন কথার মাধ্যমে তাই না? ”
-” আমার সাথে আপনার কোনো শত্রুতা নেই মেহতিশা। আমি শুধু এটাই রিয়েলাইজ করাতে চাচ্ছি আপনাকে মানুষকে কথার মাধ্যমে আ ঘা ত করলে কতোটা গায়ে লাগে। আই হোপ, নেক্সট আমার সাথে যেই বিহেভটা করলেন তা অন্য কারো সাথে করার আগে দু’বার বিবেচনা করে নিবেন। ”
-” আপনি যদি আমায় কথার মাধ্যমে ছোট করতে চান তো বলা, পৃথিবীর কোনো কাজই তুচ্ছ নয়। সেটা হোক এক সার্ভেন্ট এর কাজ। আমি কিন্তু একজন বাংলাদেশের, একজন বাঙালী হিসেবে আপনার পেশাকেও তুচ্ছ করতে পারি। আপনি তো ফটোগ্রাফার তাইনা? বাংলাদেশের ৫০% মানুষ এই পেশাটাকে তুচ্ছ – তাচ্ছিল্য করে জানেন? তাদের কাছে এই পেশায় থাকা ব্যাক্তিদের অযথা সময় অপচয় করা মনে করেন। তবে আমি আপনার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী। আপনাকে একটা চিঠিও দিয়েছিলাম। ক্ষমা চেয়ে! কিন্তু আপনি লাপাত্তা হয়ে গেলেন। যাইহোক, পুরোনো কথা না তুলি। আল্লাহ হাফেজ। ”
সারতাজকে নিশ্চুপ দেখে মেহতিশা আর দাঁড়ালো না। সোজা হাঁটা ধরলো। কুয়াশার জাল ভেদ করে আশেপাশে তখন রৌদ্দুরের আনাগোনা। মিহি, তপ্ত হীন রৌদ্দুরের মাঝে সারতাজ দেখল অন্যরকম এক মেয়ের অবিরত পায়ে হেঁটে চলা। পরক্ষণেই ক্ষীণ রাগে সে কপাল কুঁচকাল! মেয়েটা আর দশটা মানুষের মতো তার প্রিয় পেশাটাকে কটাক্ষ করলো। বহুদিন পর দেশে ফিরে মেহতিশার সাথে তার দর্শন মেলা পুরোটাই কাকতালীয়। সারতাজ ভেবেছিল তাহলে চেপে রাখা ক্ষোভ কিছুটা উগলে দেবে! কিন্তু কিসের কি? উল্টো মেয়েটা তাকে আরো কথা শুনিয়ে গেল। যদিও বা ভুল কিছু বলেনি। তার পেশার কোনো মূল্য সে বাংলাদেশে তেমন একটা পায়নি বাহিরের দেশ ছাড়া।
_
মেহতিশা মেহজাকে পড়াচ্ছে। পড়াচ্ছে বললে ভুল হবে সে একমনে ডুবে আছে ভাবনার সাগরে। মেহজা বোনকে বারংবার আঁড়চোখে দেখছে তো ফের খাতায় অঙ্ক কষছে। মেহতিশা ভাবছে অনিকের কথা। এই প্র তা রক কে সে একদিন কঠিন শা স্তি দেবে! জবাবদিহি চাইবে। উপযুক্ত প্রমাণ জোগাড় করে অনিককে সে জে লে ঢোকাবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ফুপির কাছেও জবাবদিহিতা চাইবে মেহতিশা। তার বিন্যস্ত জীবনটাকে অবিন্যস্ত করার কারণ জানার দরকার।
ভাবনার অতলে ডুবে থাকাকালীন মেহতিশার ফোন কেঁপে উঠল। ম্যাসেজ এসেছে! মেহজার পানে দৃষ্টি দিয়ে সে মুঠোফোন হাতে তুললো। কয়েক প্রহরের মৌনতা। আচমকা উচ্ছ্বাসে হতবিহ্বল হয়ে সে তার ছোট বোনকে আগলে ধরল। মেহজা হকচকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-” কি হয়েছে আপা? ”
মেহতিশা কাঁদছে। তার নেত্রদ্বয় দিয়ে পড়ছে তখন আনন্দের অশ্রুকণা। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
-” আমার চাকরি হয়ে গেছে মেহজা। আমার এখন থেকে মুক্ত! নিজেদের বাসায় থাকবো। তোর যা খেতে ইচ্ছে তাই কিনে দিব। তুই সেদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় একটা জামা দেখিয়েছিলি না? ঐটা কিনে দিব তোকে। ”
-” সত্যি আপা? ”
-” সত্যি সোনা। তিন সত্যি। ”
মেহজাকে এই মূর্হতে ভীষণ আনন্দিত দেখালো। নিজের নতুন জামা কিংবা আকাঙ্খা পূরণ হওয়ার লো ভে নয় বরঞ্চ মেহতিশার মুখোশ্রীতে উপচে পড়া খুশির লেশ দেখে!
মেহতিশার চাকরিটা হয়েছে মূলত সালমার সাহায্য এর মাধ্যমে। সালমার মেঝ ভাই এর সেলাই এর কাজে পারদর্শী একজন মেয়ের দরকার ছিলো তার নতুন ব্যাবসার জন্য। মেহতিশা সেলাই এর কাজে বেশ পারদর্শী তা সালমা জানতেন। তিনি ভাইয়ের নিকট মেহতিশার নাম ব্যাক্ত করাতে তিনি ভেবে দেখবেন বলেন। পরবর্তীতে মেহতিশার হাতের কাজ দেখে বিমুগ্ধ হয়ে তিনি মেহতিশাকে আশ্বাস দেন। আজ এক সপ্তাহ বাদে মেহতিশাকে তার নতুন খোলা বিশাল দোকানে কাজের জন্য একটা পদ দেন। মেহতিশাকে সেখানে নতুন আসা কর্মচারীদের সেলাইয়ের কাজ শেখাবে। সে নিযুক্ত হচ্ছে একজন ট্রেইনার হিসেবে।
মেহতিশা রুম থেকে বের হলো। সালমা ওয়াজিদকে তথ্যটা দেয়া প্রয়োজন। সে থাকবেনা আর এখানে। অস্বস্তি, চক্ষুলজ্জায় দম আঁটকে আসে তার।সালমা ওয়াজিদ ছিলেন ড্রইংরুমেই। একাকী বসে আপন মনে কিছু ভাবছিলেন। মেহতিশা তার সম্মুখে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
-” আন্টি? ”
সালমা ওয়াজিদ চেতন ফিরে মেহতিশার প্রতি দৃষ্টি ছুঁড়লেন। নম্র কন্ঠে বললেন,
-” আরে মেহতিশা, বস বস! কিছু বলবি? ”
মেহতিশা বসলো। তার অধর কোণে মিষ্টি হাসির লেশ। সালমার তা দেখে ভালো লাগল। মেয়েটা কত দিন পর হাসছে!
-” আন্টি আমার চাকরিটা হয়ে গেছে। সব আপনার জন্য সম্ভব হয়েছে আন্টি। আমি যে আপনার প্রতি কতোটা কৃতজ্ঞ, ঋণী তা বলে বোঝাতে পারবো না হয়তো। যদি ভবিষ্যতে কখনো সক্ষমতা আসে তবে আমি আপনার ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করবো। ”
-” বাজে বকবিনা মেহতিশা। এখানে আমার কোনো হাত নেই। আমি তো শুধু তোকে পথ দেখিয়ে দিলাম বাকিটা নিজের যোগ্যতায় তুই অর্জন করেছিস। ”
-” তবুও আপনি আমায় পথ তো দেখিয়েছেন এটার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আন্টি আমি এবার চলে যেতে যাচ্ছি। যেহেতু চাকরিটা হয়ে গেল এবার। মেহজাকে নিয়ে আমি ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া করে থাকবো। ”
-” যাবি যা! আমার কোনো বাধা নেই। তুই এখানে থাকতে অস্বস্তি বোধ করছিস বুঝতে পারছি। কিন্তু মা, মাত্রই তো চাকরি পেলে। অনন্তপক্ষে প্রথম মাসের বেতনটা পেয়ে নে। তারপর যা। আমি তোকে জোর করে আঁটকে রাখছি না। তোর ভালোর জন্যই বলছি। ”
মেহতিশা মৌন! বাসা ছাড়ার অস্থিরতার কারণে তার মাথা থেকে বেড়িয়েই গিয়েছে যে তার হাত এখন খালি। টাকা পয়সা কিচ্ছুটি নেই! ঢাকায় বাসা ভাড়া নিতে গেলে অগ্রিম টাকা ছাড়া বাসা ভাড়া দেবে না কেওই। কিয়ৎ লজ্জিত বোধ করলো মেহতিশা। সালমা ওয়াজিদ তার মুখোভঙ্গী দেখে কিছুটা আচঁ করতে পারলেন বোধহয়। তিনি কোমল গলায় বললেন,
-” লজ্জা পাস না। বুঝতে পেরেছি তুই কথাটা ভেবে দেখিসনি প্রথমে। ”
-” আন্টি আমি তবে রুমে যাই। মেহজাকে পড়াচ্ছি তো। ”
-” হ্যা যা। ”
নত মস্তকে উঠে দাঁড়ালো মেহতিশা। নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে যেতে নিবে তৎক্ষনাৎ প্রখর শব্দ হলো। মেহতিশা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে তার বিরক্তি। সারতাজ এসেছে। কাঁধে তার ব্যাগ। গলায় ঝুলানো রয়েছে তার ভীষণ প্রিয় ক্যামেরাটি। সালমা দাঁড়ালেন ছেলেকে দেখে। সারতাজ মেহতিশাকে পাশ কাটিয়ে মায়ের পাশের সোফায় গা এলিয়ে বসল। ক্লান্তিমাখা কন্ঠে শুধাল,
-” বাসায় থাকবো কয়েকমাস। মেইডকে আমার রুম ক্লিন করতে বলো। ”
সালমা ভ্রু কুঁচকালেন! সারতাজের কথা ঠিক হজম হলো না তার। যে ছেলেকে একসময় কেঁদেকেটে শত বুঝিয়েও নিজের কাছে রাখতে পারলেন না আর আজ এত বছর পর নিজ থেকে থাকতে এসেছে? সালমা ব্যাপারটা আর তেমন ঘাঁটালেন না। লম্বা কদম ফেলে চললেন ওপরে! মেহতিশা চলে গিয়েছিল বেশ আগেই। শূন্য ঘরটায় দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে সারতাজ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল।
_
সায়াহ্নকাল। অন্তরীক্ষে ক্ষীণ আলোর পরশ এখনো রয়েছে। নাম না জানা এক ঝাঁক পাখির দল শব্দ সৃষ্টি করতে করতে উড়ে যাচ্ছে আপন নীড়ালয়ে। নামাজ শেষে কিচেনে এসেছে মেহতিশা। এসময় বাড়ির সবাই চা খায়। এই চা বানানোর দায়িত্বটা আরোপ হয়েছে তার ওপর। সালমা তাকে কোনো কাজ করতে না দিলেও রান্না করার কাজটায় বিশেষ বাধা প্রদান করেন না। মেহতিশা দুই কাপ চা করলো। এতদিন এক কাপ করতো। বাড়িতে তেমন মানুষ নেই। সারতাজের বাবাকে এ বাসায় আসার পর একবারও দেখেনি মেহতিশা। বাকি রইল সালমা ওয়াজিদের ছোট দুই ছেলে, ওনারা নিজেদের স্ত্রী নিয়ে লন্ডনে সেটেল।
সালমা ওয়াজিদকে চা দেয়ার পর মেহতিশা যাচ্ছে সারতাজের রুমে। মুখোশ্রীতে তার লহমায় উপচে পড়া বিরক্তির রেশ দেখা দিলো। সারতাজের সামনে যেতে তার ইচ্ছে করেনা। বিরক্ত লাগে! সারতাজ নামক ব্যাক্তিটাই এখন তার নিকট বিরক্তিকর। দরজার কাছাকাছি যেতেই কড়া নাড়ল মেহতিশা। ভেতর থেকে ভারী কন্ঠে সারতাজ সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো,
-” ভেতরে আসো। ”
বুভুক্ষের ন্যায় ফোনে ডুবে রয়েছে সারতাজ। হাতে থাকা চায়ের কাপ টেবিলে রেখে মেহতিশা চলে যেতে উদ্যক্ত হতেই পেছন থেকে সারতাজ বলল,
-” চায়ে চিনি কম হয়েছে। চিনি দেওয়া লাগবে আরো। ”
মেহতিশা ঘুরে দাঁড়াল। এতটুকু সময়ের মধ্যে এই ছেলেটা কখন চা খেল তা তার বোধগম্য হলো না। সে মৌন থেকেই চায়ের কাপ নিয়ে বেড়িয়ে এলো! তবে কয়েক প্রহর পাড় হওয়ার পর সে বুঝল সারতাজ শুধুমাত্র তাকে বিরক্ত করতে চাইছে। চায়ে চিনি হয়নি, চিনি বেশি হয়েছে, আবার বানিয়ে আনো! বলে কয়ে মেহতিশাকে বিরক্ত করে ফেলেছে সে। চুপচাপ মুখ বুঁজে তাই সয়ে নিয়ে মেহতিশা কেবল সারতাজের আদেশ পালন করলো। সে এখন নতুন করে বানানো চা নিয়ে পুনরায় হাজির হয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ দমন করে হাতের কাপ টেবিলে রাখলো সে। আঁড়চোখে মেহতিশার মুখোশ্রী দেখে সারতাজ মনে মনে হাসল। মেয়েটাকে রাগলে মন্দ লাগে না। পরক্ষণেই নিজের ভাবনা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-” খেতে ইচ্ছে করছেনা। নিয়ে যান! সামান্য চা বানানো শিখতে পারেননি আপনি? ”
মেহতিশার রাগে, দুঃখে কাঁদতে ইচ্ছে করলো। তিক্ত কন্ঠে সে শুধালো,
-” আপনি আমাকে অযথা বিরক্ত করছেন। ”
সারতাজ অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
-” আশ্চর্য তো! বিরক্ত কথায় করলাম? যা সত্যি তা বলবো না নাকি? ”
মেহতিশা প্রতিত্তোর করতে নিলে সারতাজ তাকে থামিয়ে বলল, ” যান এখান থেকে। আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। আপনার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাচ্ছিনা। ”
মেহতিশা বেড়িয়ে এলো। লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। সুযোগ পেলে ছেলেটাকে শায়েস্তা করতে হবে। ছেলেটা অযথা তার পিছু লেগেছে না?
চলবে~