শুধু তুই পর্ব ২১+২২

#শুধু তুই
#পর্বঃ২১
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমি যাই ঘুমোবো

” আগে তো আমি আর তুমি এক রুমেই থাকতাম

“হুমম

” থাকো না এখানে

তুলি কিছু না বলে জুজুর পাশে শুয়ে পরে। সায়ান সোফায় শুতে যায়

“আমার খাটটা ভালোই বড়। তিনজনের জায়গা হবে

সায়ান জুজুর আপর পাশে শয়। তুলির এখন জুজুকে কাবাব মে হাড্ডি মনে হচ্ছে।

” এতোদিন কোলবালিশ এখন জুজু। ধুর ভাল্লাগে না

তখন দরজায় টোকা পরে।

“আমি দেখছি

সায়ান উঠে দরজা খুলে দেখে জিসান দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

” তুই এখানে

“হাড্ডিকে নিতে এলাম।

” হাড্ডি কে?

জিসান রুমে ঢুকে জুজুকে কোলে নেয়

“ও কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস

” জুজু আমার কাছে ঘুমোবে

জিসান তুলিকে চোখ মেরে চলে যায়। সায়ান দরজা বন্ধ করে এসে মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়ে।

“সোনায় বাঁধানো কপাল আমার। নিরামিষের বাচ্চা নিরামিষ

” তুলি তুলি কোন ইয়ারে স্টাডি করো

সায়ানের এই প্রশ্নে তুলি অবাকের দশম পর্যায়ে উঠে যায়। তিন মাস এক সাথে থেকেও স্বামী জানে না স্ত্রী কোন ক্লাসে পড়ে। ভাবা যায়

“কিছু জিজ্ঞেস করছি

“পড়ি না

” মিথ্যা বলো কেন

“তো কি বলমু

” আজব একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারো না ইডিয়েট

“তিন মাস এক সাথে থেকেও আপনি জানেন না আমি কোন ক্লাসে পড়ি। এরপর আর কিছু বলার থাকে না

সায়ান আর কিছু বলে না। তুলি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে।

সকালবেলা মুখের কারো স্পর্শ পেয়ে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। তুলি ৯৯% শিওর সায়ান। তাই একটু রোমান্টিক মুড নিয়ে চোখটা খুলে। চোখ খুলেই দেখে জুজু। তুলির মুখটা কালো হয়ে যায়

” গুড মর্নিং নতুন মা

তুলি জুজুর গাল টেনে বলে

“গুড মর্নিং টু সোনা

” তুমি জানো কতোগুলা মিছ করছিলাম তোমায়

“আমার সোনাটা আমায় মিছ করেছে।

” হুম

তুলি জুজুকে একটা পাপ্পি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সায়ান ল্যাপটপে কাজ করছে।

“গুড মর্নিং জামাই

সায়ান তুলির দিকে একনজর তাকিয়ে বলে

” জামাই কি শব্দ

“জানেন না তাহলে আপনাকে ডিটেইলস বলি

তুলি আগ্রহ হয়ে সায়ানের পাশে বসে

” আমি শুনবো না

“তা শুনবেন কি করে। গোমড়ামুখো কোথাকার

” হুম

“আপনি কি জানেন আপনি পৃথিবীর সব থেকে বড় অনরোমান্টিক পারসন।

” সায়ান ল্যাপটপ বন্ধ করে তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

“আমি অনরোমান্টিক

” হুম। নিরামিষ

“রিয়েলি

” হুম

সায়ান তুলির দিকে মুখটা একটু এগিয়ে দেয়। ভাবে তুলি হয়ত ভয় পাবে পিছিয়ে যাবে। কিন্তু তুলি সায়ানকে অবাক করে দিয়ে আরও একটু এগিয়ে আসে।

সায়ান পিছিয়ে যায়

“কি হলো

” কিছু না পানি খাবো

তুলি বিরক্তি নিয়ে উঠে যায়। সায়ান বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

“আল্লাহ এটা মেয়ে না কি? একটু হলেই যাচ্ছিলাম। আল্লাহ বাঁচাইছো

তুলি সায়ানের সামনে ঠাস করে পানির বোতল নামায়

” খেয়ে নিন

“একটু মিষ্টি করে বলো

তুলি সায়ানের কলার ধরে বলে

” দুই দিন সময় দিলাম

কলার ছেড়ে দিয়ে হন হনিয়ে চলে যায়

“কিসের জন্য দুইদিন সময় দিলো। কিছুই তো বুঝলাম না

খাবার টেবিলে সায়ান জিসান তুলি আর তুলির বাবা খাচ্ছে। জুজু আগেই খেয়ে নিয়েছে।

সায়ান নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে। তুলি একটু খাচ্ছে আর সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে।

” খাচ্ছে দেখো মনে হয় জীবনেও খায় নাই। হনুমান একটা। জীবনটাই বেদনার

“তুলি ঠিক করে খা

তুলির মা তুলির প্লেটে রুটি দিয়ে বলে

” খাচ্ছি তো

খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়। সায়ান অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে দাঁড়ায়

“কিহহ

” আপনার সাথে অফিসে যাবো

“যাও রেডি হয়ে এসো

তুলি খুশি হয়ে চলে যায়।

সায়ান গাড়ি ডাইভ করছে। আর তুলি সাজুগুজু করছে

” আমরা কোনো প্রোগ্রামে যাচ্ছি না

“আই নো

” তাহলে এরকম সং সাজার মানে কি?

“ছেলে পটানোর ধান্দা

” মানে

“মানে সাজুগুজু করলে আমার খুব হট লাগে। তো ছেলেরা আমার প্রতি ইমপ্রেস হবে আর প্রপোজ করবে

” যাতা চিন্তা ভাবনা

“গুড চিন্তা ভাবনা

” ছেলে পটাবে কেনো?

“ও মা বিয়ে করবো তাই।

” বিয়ে তো করেছোই

“আপনার মতো নিরামিষের সাথে থাকা যায় না কি

” আমিষ হওয়ার জন্য কি করতে হবে

“কিছ

সায়ান গাড়িটা থামিয়ে টুক করে তুলির গালে একটা চুমু দেয়। তুলি গালে হাত দিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়

” এটা কি ছিলো

“কিছ

” এটাকে কিছ বলে

“হুমম

” ধুর। জুজুও তো এর থেকে ভালো কিছ করতে পারে।

“আমি এর থেকে ভালো পারি না

” পারেন কি?

“সব

” কথা বাদ দেন তো।

সায়ান গাড়ি চালানো শুরু করে

“জীবনে সব কিছুরই প্রয়োজন আছে। এই যে আমি নিরামিষ এটাও কিন্তু প্রয়োজন আছে। আমাকে একটু সময় দাও আমি সব ঠিক করে দেবো। আসলে আমার না মানিয়ে নিতে সময় লাগে। তোমার মতো এতো সহজে সব মেনে নিতে পারি না। আমি মানুষের মন পড়তে পারি না। কারো মন বোঝার চেষ্টাও করি না। কারো সাথে মিশতে পারি না। আর মেশার চেষ্টাও করি না। আমি যাদেরি আপন ভাবি তারাই আমাকে ঠকায়। বিপদে ফেলে। তাই আমি আমার মতো থাকি।

তুলি সায়ানের কথা গুলো মন দিয়ে শুনছে।

” জুঁই আমি আর নিরব মানে জুজুর বাবা এক ভার্সিটিতে পড়তাম। খুব ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা। নিরবই আমার মনে কথা জুঁইকে বলতে হেল্প করেছিলো। পরে আবার ওই আমাদের মাঝে দেয়াল তৈরি করে দিলো। জুঁইকে আমি ভালোবাসতাম ঠিকই তবে নিরব যদি একবার বলতো জুঁইকে ও বিয়ে করবে আমি ওদের মধ্যে থেকে দুরে চলে যেতাম। কিন্তু

সায়ান চুপ হয়ে যায়

“তারপর

তুলি জিজ্ঞেস করে
#শুধু তুই
#পর্বঃ২২
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ানের কেবিনে সায়ান যে চেয়ারটাতে সায়ান বসে তুলি সেখানে বসে।

“ম্যাম স্যার খুব রেগে যাবেন

” কেনো?

“এই চেয়ার কেউ টাচ করলেই স্যার বকাবকি করে আর আপনি তো বসেছেন

” আমি কে😎

“কে আপনি

” সায়ানের বউ

“হুম জানি। তবুও

” যাও আমার জন্য কফি নিয়ে আসেন

“কিন্তু

” যেতে বলছি

মায়া হতাশ হয়ে চলে যায়। তুলি এবার টেবিলের ওপর পা রেখে বসে। কিছুখন বসে তুলির বিরক্ত লাগে।

“সায়ান ঠিকি বলে। আমি সত্যিই স্টুপিট। পাঁচটা মিনিটও চুপ চাপ বসতে পারি না।

তুলি ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছে। আলমারির পেছনে একটা ময়লা একটা চিঠির খাম দেখে। তুলি সেটা তুলে ময়লা পরিষ্কার করে খুলে দেখে তাতে সায়ান আর জুঁইয়ের হাসি মাখা অনেক ছবি।আর একটা চিঠি। তাতে লেখা

” তোর এই হাসি মাখা মুখটা আমার একদম সয্য হয় না। বিরক্ত লাগে। তোর চোখের পানির মাঝেই আছে আমার ভলো থাকার মেডিসিন। জুঁইকে খুব তারাতাড়ি আমি আমার করে নেবো। রেডি থাক। আর হ্যাঁ এর পরও যদি কোনো মেয়ে তোর হাসি মুখের কারণ হয় আমি তাকেও তোর থেকে দুরে করে দেবো। আই প্রমিজ

এটা তো রিতিনত থ্রেট। সায়ানকে কেউ দিয়েছিলো চিঠিটা। সায়ান নিশ্চয় এটা পড়ে এখানে ফেলে দিছে। আমি শিওর চিঠিটা নিরব দিছে। আর আমি এটাও শিওর নিরব বেঁচে আছে। নিরব কি এখন আমাকে টার্গেট করবে? আর জুঁই আপু উনি কোথায় গায়ের হয়ে গেলো

এসব আকাশ পাতাল চিন্তা ভাবনা করছে তুলি। জিসান যে কখন থেকে তুলিকে ডাকছে সেদিকে তুলির খেয়াল নেই। জিসান এবার তুলির মাথায় গাট্টা মারে

“কি হয়েছে?

” কখন থেকে ডাকছি তোকে

“কেনো ডাকছিস

” দোস্ত

তুলি চোখ ছোট ছোট করে জিসানের দিকে তাকায়।

“হেল্প মি

” কেসটা কি

“আগে বস

তুলি চিঠিটা আগের জায়গায় ফেলে বসে. জিসান তুলির পায়ের কাছে বসে

” একটা ভুল হয়ে গেছে

“কি রকম

” তন্নি প্রেগন্যান্ট

তুলি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

“কিহহহহহহহহহহ

জিসান তুলি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান। জিসান সোফার পেছনে চলে যায়।

” এতো নোংরা তুই ছি। আমার ভাই তুই এটা ভাবতেই লজ্জা লাগছে

“এতো ছি ছি করার কি আছে? ভালোবাসে তন্নিকে। বিয়ে করবে

” এটাকে ভালোবাসা বলে?

“হুম এটাকেই ভালোবাসা বলে। কতো ফাস্ট জিসান দেখছেন। বিয়ের আগেই বউ প্রেগন্যান্ট। আর আপনি বিয়ের তিন বছর হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত একটা কিছও করেন নাই। আবার বড় বড় কথা বলছেন।

” আমিও তো তন্নিকে কিছ কি হাতটাও ধরি নি

জিসান সোফার পেছন থেকে বলে। সায়ান তুলি দুজনই অবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকায়

“মানে

জিসান এবার সোফার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে

” মানে না আমিও বুঝতেছি না। সকাল থেকে তন্নির মাথা ঘুরছে বমি হচ্ছে। আমি কিছু করি নি

সায়ান তুলি দুজনই ফিক করে হেসে ওঠে। জিসান হাবলার মতো তাকিয়ে আছে

“আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি আর তোমরা হাসছো

” পাগল ওর গ্যাসে পবলেম হইছে তাই এমন হইতেছে।

তুলির কথায় জিসান বুকে থু থু নেয়

“আল্লাহ বাঁচছি।

” এতো গাধা কেনো তুই

“এক ভাই গাধা আর একটা নিরামিষ

জিসান কাশি দেয়। সায়ান রাগী দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকায়।
সায়ানের জরুরি মিটিং থাকায় তুলিকে একা বাড়ি ফিরে যেতে বলেছে। তুলি জুজুকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। তাই জুজুর স্কুলের যায়। স্কুল ছুটে হতে এখনো দশ মিনিট বাকি আছে। তাই তুলি স্কুলের চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে

” এক্সকিউজ মি

কোনো একটা ছেলের কন্ঠ শুনে তুলি পেছনে তাকায়। দেকে একজন সু দর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার হাসি।

তুলি এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলে

“আমাকে বলছেন?

ছেলেটা মুখে হাসির রেখা টেনে বলে

” জ্বী আপনাকে বলছি

“বলুন

” নাম কি আপনার?

“সরি

” আরে নাম জিজ্ঞেস করলে নাম বলতে হয়। কিন্তু আপনি সরি বলছেন তো আমি কি ধরে নেবো আপনার নাম সরি

তুলি বোকার মতো তাকিয়ে আছে

“সরি কি আপনার ডাক নাম

“যদি ভাবেন আপনি আমাকে পটাবেন তো আমি বলবো আপনি রং নাম্বারে ডায়াল করেছেন

ছেলেটা এবার হো হো করে হেসে ওঠে। হাসলে ছেলেটাকে মারাক্তক সুন্দর লাগে

” এই ছেলে কি পাগল না কি? এতো সুন্দর ছেলে পাগল?
তুলি মনে মনে ভাবছে

“আপনি যে দাঁত ব্রাশ করেছেন সেটা আমি জানি। দাঁত কেলিয়ে দেখাতে হবে না

” হুম ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করছি কিন্তু আফসোস আপনি এখনো দুরেই দাঁড়িয়ে আছেন। কাছে আসলেন না

“কোন দেশের পাগল আপনি

ছেলেটা হাসি দ্বিগুন বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে ভয়ংকর সুন্দর ছেলেকে তুলির বিরক্ত লাগছে। তাও আবার প্রচন্ড বিরক্ত

তুলি যেতে নেয় ছেলেটা তুলির সামনে দাঁড়ায়

” হোয়াট

“জাস্ট নামটা জানতে চায়

” আমি বিবাহিত একটা মেয়ে আছে

“নাম, এসব না

” বললাম তো বলবো না

“কেনো?

” কেনো বলবো?

“জিজ্ঞেস করছি তাই

” বলবো না বলবো না বলবো না

তুলি পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কি বিরক্তিকর লোকরে বাবা।

মনে মনে ছেলেটাকে হাজারটা গালি দিচ্ছে আর হাঁটছে তুলি।

রাতে তুলি বেলকনিতে বসে আছে। হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সায়ান তুলির পাশে এসে বসে

“কি ভাবছো?

” কতো কিছু

“যেমন

” আমার বেবি চায়

সায়ান বেষম খায়। তুলি টুস করে সায়ানের গালে একটা পাপ্পি দেয় আর আপনা আপনি সায়ানের কাশি থেমে যায়

“বাহহ আমার পাপ্পির কি জাদু

” ভয়ংকর ইডিয়েট তুমি

“আর

” কিছু না

তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়েই আছে

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

” ভয় পাচ্ছেন

“ননা তো

” তাহলে সমস্যা কি তাকিয়েই থাকি

না মানে

“না মানে কি

” তুমি খেয়েছো?

“খাই নি খাবো

” চলো খায়। আমিও খাবো

“কি

” কি মানে কি

“ধুর একটু রোমান্টিক মুডে ছিলাম নষ্ট করে দিলো

তুলি বিরক্তি নিয়ে বলে। সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। তুলি সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে।

“আমি আপনাকে ভালো বাসতে চায়। আপনার সাথে থাকতে চায়। আপনার হাসি মুখের কারণ হতে চায়। আপনার বেবির মা হতে চায়

সায়ান তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর তুলির কথা গুলো শুনছে।

” আপনি কি আমার হবেন

সায়ান কিছু বলছে না। তুলির সায়ানের কাঁধ থেকে মাথা তুলে সায়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়

“বললাম তো আমার একটু সময় চায়। একটু সময় দাও।

তুলি কিছু না বলে রুমে চলে যায়

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here