#শুধু_তুই
—(সিজন২)
#পর্বঃ২৭ (অন্তিম)
#Rifat_Amin
ছাদের বড়সড় দোলনায় বসে দুঃচিন্তায় দোল খাচ্ছিল প্রেম। অহেতুক একাকিত্বে বসে থাকা! মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে। সন্ধ্যার স্নিগ্ধ বাতাসেও ভালোলাগা কাছে ঘেসতে পারছে না। নিছার সাহেবের মৃত্যুতে খারাপ লাগছে ভীষণ। কাউকে এতটা ভয়ংকরভাবে মৃত্যু দেয়ার ভাবনা মাথায় আনতেও পারেনি প্রেম। অথচ সে কি না কাউকে খু*ন করে বসলো?
মাথার চুল টেনে ধরে জীর্ণশীর্ণ হয়ে বসে রইলো সে। এমন সময় পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে মাথা তুলে তাকালো প্রেম। প্রহর ওর পিঠে আঘাত করে বললো,
‘ কি’রে! খু*ন করার ফিলিংসটা কেমন? ‘ (প্রহর)
প্রহরভাইয়ের কথায় খানিকটা ভয় ঢুকে গেলো মনে। তবুও বাইরে সেটা প্রকাশ না করে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো প্রেম। প্রহর বললো,
‘ এতো চাপ নেয়ার কিছু নাই ব্রো। খু*নের বদলে খু*ন। ফুফা ফুফিকে যারা এভাবে মে’রে’ছে। তাঁদেরকে তাদের প্রাপ্ত যায়গায়টা দেখিয়ে দিতে হবে। তাই নয় কি? এত টেনশন করছিস কেন বলতো? নিছার সাহেবের লা’শ এমনভাবে গুম করা হয়েছে যে পুলিশের চোদ্দগুষ্টিও কোনো ক্লু পাবে না। প্রহর কি কাঁচা কাজ করে? ‘ (প্রহর)
প্রেম কিছুটা সন্তোষ হলো। অতঃপর শুকনো ঢোক গিলে বললো,
‘ মৃত্যুর সাথে সাথে যে কিছু রহস্য হারিয়ে গেলো? ‘ (প্রেম)
‘ ধুর!! নিছার নেই তো কি হয়েছে? উনি আসলে কিছুই না। উনি তো শুধু লোভে পরে এক্সি-ডেন্টটা করিয়েছিলো। কিন্তু সবকিছুর মুল হোতা ছিলো ইফতেখার উদ্দিন। আমার লোক উনাকেও কিড’ন্যা’প করেছিলো। এবং যতটা সম্ভব ইনফরমেশন পাওয়া দরকার, মোটামুটি সব পাওয়া হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম উনাকেও সড়িয়ে ফেলবো। কিন্তু আলটিমেটলি লাভ কিছুই হবে না। না পাবো সেই রেডিও স্টেশন। উল্টা পুলিশ কেসে ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
প্রেম অবাক হয়ে তাকালো। হতবিহ্বল কন্ঠে বললো,
‘ এসব কখন করলে? ‘ (প্রেম)
‘করেছি করেছি। এখন আমার সাথে রেডিও স্টেশনে চল। এখন থেকে পুরো রেডিওর মালিকানা সম্পূর্ণ তোর আর রশ্নির হবে। আর ইফতেখার উদ্দিনের বিরুদ্ধে পুলিশ কেস দিয়ে দিয়েছি। পৃথিবীর সব কাজ মাথা গরম করলে হয় না প্রেম। কিছুটা ধৈর্য ধারণ করতে হয়। আমি মুলত এই কারণেই দেশে এসেছি। দেশে এসেই প্রথম দিন যখন তোর শো’তে গান গাইতে গেলাম। তখন থেকে ইনফরমেশন কালেক্ট করা শুরু করেছি। এইসব কাজে হেল্প করেছিলো সেইখানকার এক পুরাতন স্টাফ। শুধু গতকাল একটা বিষয় জানতে পেরে আমার বাবা-মায়ের প্রতি প্রচুর রাগ হচ্ছিল। যদিও ওরা ঠিক কাজটাই করেছিলো বলে আমার মনে হয়। আমার বাবা-মা আসলে সব জানতো। কে খু-ন করেছি, এবং কেনো করেছে। এতদিন কিছু বলেনি তার কারণটা হচ্ছে, আমাদের নিয়ে প্রচুর টেনশনে ছিলেন আম্মু। যখন ফুফির এ’ক্সি’ডেন্ট হয়। তখন আইনি জটিলতায় রেডিওর দায়িত্ব অর্পিত হয় ইফতেখার উদ্দিনের হাতে। এবং কিছুদিনের মাঝেই পুরো রেডিওর CEO এর আসন দখল করে। যখন আম্মু-আব্বু জানতে পারে। তখন এই বিষয়ে পুলিশ কেস করার আগেই একটা হু’মকি আসে ইফতেখার উদ্দিনের কাছ থেকে। যার কারণে বাবা মা প্রচুর টেন্স হয়ে যায়। কেনো না তখন আমরা ছিলাম খুব ছোট। সব থেকে বড় কথা তুই আর রশ্নি তখন খুবই ছোট। রশ্নির তো সদ্য জন্ম হয়েছে। যার কারণে আম্মু রিস্ক নিতে চায়নি। কেননা যে মানুষটা সামান্য রেডিওর জন্য দুটো খু*ন করতে পারে। তার কাছে আমাদের ক্ষতি কোনো ব্যাপার না। তখন আমাদের চারভাই বোনকে সামলানো অনেক কঠিন ছিলো আম্মুর জন্য। যার দরুন রেডিওর আশা বাদ দিয়ে আমাদের একটা ভবিষ্যতের দিকে ফোকাস করেছে তারা। এর মধ্যেই আবার এক্সি-ডেন্টের আগে তোদের বাড়িটা তোর নামে করে রেখেছিলো ফুফা। তাই ইফতেখার সাহেব বাড়িটার দিকে আগাতে পারেনি। বুঝলি কিছু?
প্রেম স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। যেই অজানা বিষয়গুলো ছোট থেকে জানার অসীম আগ্রহ নিয়ে বেড়ে উঠেছিলো। সেসব আজ চোখের সম্মুখে। প্রেম মাথা নিচু করে বললো,
‘ এরপর কি হবে? ‘ (প্রেম)
‘ এরপর কি হবে তা কি জানিস না নাকি? বিশবছর আগে রেডিও তোর বাপ চালাইছিলো। এখন থেকে তুই চালাবি।সিম্পল। আমি রেডিওটা ফিরে পাওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছি কারণ তুই সেই রেডিওতেই জব করছিস। আশা করি একটা অফিস কিভাবে চালাতে হয় তার সম্পুর্ন ধারণা আছে তোর। আমি তোর একটা ভবিষ্যতের চিন্তা করেছিলাম। আজ সেটা পূর্ণ হলো। ইভেন আমি আর নিউইয়র্ক যাচ্ছি না। তোর রেডিওতে গান গেয়ে টাকা ইনকাম করবো। চাকরি দিবি না? ‘ (প্রহর)
প্রেম না চাইতেও শব্দ করে হেসে উঠলো৷ এই প্রথম সে দেখলো প্রহর খান প্রচুর কথা বলতে পারে। অদ্ভুত মানুষ।
—–
রাত এখন আটটা কি ন’টা। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ডাইনিংয়ের সামনে বসে একটু সাজুগুজু করছি আমি। একটা ব্লাক কালারের শাড়ি পরেছি, তার সাথে সাথে চোখের নিচে হালকা কাজল আর দু ভ্রুযুগলের মাঝখানে ছোট্ট কালো টিপ। অতঃপর ঘন কৃশ চুলগুলো পিঠের উপর ছড়িয়ে দিয়ে বারবার আয়নায় নিজেই নিজেকে দেখছি আর হাসছি। উনি কেনো এত সাদা কালারের শার্ট টিশার্ট পরে। তার জবাব আজ নিয়েই ছাড়বো। তাই আমিও আজ কালো সাজ নিয়েছি। হিহিহি। আজ টেবিল থেকে ফোনটা উঠিয়ে সময়টা চেক করে নিলাম। উনি তো বলেছিলেন প্রেমকে নিয়ে কি জরুরী কাজে যাচ্ছেন। এতক্ষণে তো আবার ফিরে আসবেনও বলছেন। অথচ এখনো আসছেন না! আর আমি উনার জন্য এত কষ্ট করে সাজতে গেলাম। ধুর!
প্রচুর রাগ হচ্ছে, আবার লজ্জাও পাচ্ছি এই ভেবে যে, উনি আমাকে দেখে ঠিক কেমন রিয়েকশন দিবেন? উনি তো আমাকে ভালোবাসেন সিওর। শুধু মুখে স্বীকার করতে চান না। না করতে চাইলেও সমস্যা নাই। উল্টা আমিই লজ্জা পাবো।
শাড়িটা পরিয়ে নিয়েছি আম্মির কাছ থেকে৷ নাহলে কি এত সুন্দর করে কেউ পরিয়ে দিতে পারে। তবে অনেকক্ষণ ধরে পরে রয়েছি বিধায় বিরক্ত লাগছে। সাথে সেই অভদ্র মানুষটার অপেক্ষায় অধৈর্য হয়ে পড়ছি। শেষে বাধ্য হয়ে উনাকে ফোন করলাম। প্রথমবার রিং হতে হতে কেটে গেলেও দ্বিতীয়বার ঠিকই রিসিভ হলো। ফোনটা ধরেই আকষ্মিক বললো,
‘ কি সমস্যা তোর বলবি? বারবার এত ফোন দিচ্ছিস কেন? ‘ (প্রহর)
উনার রাগী কন্ঠে আমার হাসিখুশি মনটা মহুর্তেই চুপসে গেলো। অতঃপর কান্না পেতেই কান্না আটকানোর যথেষ্ট চেষ্টা করে বললাম,
‘ সরি ‘ (আমি)
উনি ফোন কেটে দিলেন। সাথে সাথেই ফোনটা ছুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করলো আমার। কিন্তু পারলাম না। রাগে, দুঃখে নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে হলো। এত বিরক্ত আমি! একটু হেসে তো বলতে পারতেন আমার আসতে লেট হবে। আর যেনো ফোন না দেই। কিন্তু তা না করে আমার প্রতি উনার ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। বাহ!
আমি ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না শুরু করলাম। কারো কাছে আমার মুল্য নাই। কারো কাছে না। যার কাছেই একটু সময় চাই। সেই দূর দূর করে। হঠাৎ নিজেকে শুন্যে ভাসতে দেখে চোখ খুলে তাকালাম। ইতোমধ্যেই চোখের পানিতে কাজল বিশ্রী হয়ে গেছে আমার। উনি এখানে! কখন এলেন। আর আমাকেই বা হঠাৎ কোলে নিয়েছেন কেন। উনি আমাকে কোলে নিয়েই ছাদের দিকে হাঁটা ধরলেন। আমি কান্না বন্ধ করার চেষ্টা করে মুখ বন্ধ করে রইলাম। আজ যাই হয়ে যাক না কেনো। উনার কথার একটা জবাবও দিবো না। উনি আমাকে নিয়ে ছাদে আসলেন। আমাকে নামিয়ে দিয়ে শার্টের কলারটা ঠিক করে বললেন,
‘ এত ভারী কেনো তুই? নিশ্চই আমার আদর পেয়ে পেয়ে মটু হচ্ছিস! (প্রহর)
আমি জবাব না দিয়ে ছাদ থেকে নামতে ধরলেই হাত ধরে ফেললেন উনি। আমি হাত ছাড়াবার চেষ্টা করতেই উনি বললেন,
‘ ম্যাডাম বুঝি রাগ করেছেন। আরে বাহ! আজ দেখি সাজুগুজুও করেছেন। তা কার জন্য এসব? নিশ্চিয়ই আমার জন্য। আহা! আমি কত লাকি। ! দেখি দেখি মুখখানা। ওলে ওলে। কেঁদে কেঁটে দেখো লাল টমেটো বানিয়েছে নিজেকে। এখন যদি আমি খেয়ে ফেলি, খুব অন্যায় হবে কি ম্যাডাম? ‘ (প্রহর)
আমার শত রাগের মাঝেও উনার কথায় যথেষ্ট লজ্জা পেয়ে বসলাম। কোনো কথা বলে মাথা নিচু করে থাকতেই উনি বললেন,
‘ এই যে আবারো রেগে আছে। কোথায় ভাবলাম একটু সারপ্রাইজ দেবো। তা না। এখন উল্টা উনার রাগ ভাঙ্গাতে হচ্ছে। আচ্ছা সরি তো বাবা। এইযে কানে ধরলাম। আর হবে না এমন। রকস্টার কানে ধরে তার বউয়ের কাছে মাফ চাচ্ছে। তুই ভাবতে পারছিস ব্যাপারটা। আমার জন্য মেয়েরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে ‘ (প্রহর)
উনার কমন ডায়লগে যথেষ্ট বিরক্ত হলাম। অতঃপর আমার ভাবনার মাঝেই উনি কানে হাত দিলেন। যা দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। আমি আর রাগ ধরে রাখতে না পেরে মুচকি হেসে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। এত লজ্জা লাগছে! তবুও উনার সুঠাম বক্ষই জেনো লজ্জা নিবারণ করার একমাত্র সুরক্ষিত স্থান। উনি শব্দ করে হেসে আমাকে দু’হাতে আগলে নিয়ে বললেন,
‘ এইতো রাগ ভেঙেছে উনার। দেখি দেখি কেমন সাজলেন আমার জন্য? বাব্বাহ! এই প্রথম তোকে দেখে একটা গান গাইতে ইচ্ছে করলো বুঝলি। ‘ (প্রহর)
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে পা হতে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করতে লাগলেন। আমি গম্ভীর স্বরে বললাম,
‘ আগে বোধহয় ভালো লাগতো না ‘ (আমি)
উনি আমার কথায় বিরক্ত হলেন। কিন্তু তা প্রকাশ না করে গান ধরলেন,
‘ আমি জ্ঞান হারাবো, ম’রেই যাবো,
বাঁচাতে পারবে না কেই ‘। তোকে আজ অনেক মারাত্মক সুন্দরী লাগছে পিচ্চি। ‘ (প্রহর)
‘ ছিঃ কিসব বলেন। আমি আপনার প্রেমিকা হওয়ার যোগ্য না। আর আমি মোটেও পিচ্চি না, হু ‘ (আমি)
‘ প্রেমিকা হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও বউ হওয়ার তো যোগ্যতা রাখিস! তাতেই হবে ‘ (প্রহর)
কথাটা বলেই আমার সামনে হাটু গেঁড়ে বসলেন উনি। অতঃপর একটা লাল গোলাপ বের করে বললেন,
‘ ভালোবাসি বলবো না। তবে চাইবো তুই আজীবন এই মানুষটার হয়ে থাক। কিহ! হবি তো? ‘ (প্রহর)
আমি গোলাপটা হাতে নিয়েই সলজ্জিত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ালাম। চোখে আমার অশ্রু টলমল করছে। শুধু একটা কথাই বলতে পারছি, জীবনের প্রথম ভালোবাসা আমার পুর্ণতা পেয়েছে। উনি দুহাত প্রসারিত করতেই ঝাঁপিয়ে পরলাম উনার বক্ষপিঞ্জরে। অতঃপর আবেশে চোখ বন্ধ করে বললাম,
‘ আপনি দেশে থেকে যান প্লিজ ‘ (আমি)
উনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই বললেন,
‘ কেনো? আমাকে মিস করবি তুই। আচ্ছা তোর কথাই রাখলাম। তবে একটা কথা শুনে রাখ, এর বদলে কিন্তু তোর মতোই গুলুমুলু একটা মেয়ে চাই আমার। ‘ (প্রহর)
লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করলো। হঠাৎ কোথা থেকে প্রেয়সী এসে চিৎকার করে বললাম,
‘ তোমলা বর-বউ খেলচো? ‘ (প্রেয়সী)
সাথে সাথেই দুজন ছিটকে সড়ে গেলাম। ছিঃ কি উদ্ভট পরিস্থিতি। এই প্রেয়সীটা আসার আর সময় পেলো না। হঠাৎ প্রহরভাই ধমক দিয়ে বললেন,
‘ ভাগ এখান থেকে৷ নাহলে গেম খেলার জন্য একটা ফোনও পাবি না ‘ (প্রহর)
‘ হু, একন তো চব আমার দোচ। আমি তো তুমাদের দাক দিতে এলাম। চবাই কাওয়ার জন্য নিতে ডাকচে। পেম পরে করলেও চব্বে। ‘ (প্রেয়সী)
‘ কি পাকা পাকা কথা। মা’রবো ধরে তোকে প্রেয়সী। ‘ (প্রহর)
সেসব আর শোনার সময় কই? প্রেয়সী মহুর্তেই দৌড়ে পালিয়ে গেলো ছাদ থেকে। অতঃপর উনি আমার হাত ধরে বললেন,
‘ সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করবি রশ্নি। মাহিম দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সো এখন থেকে কোনো দুঃচিন্তা মাথায় আনবিনা। সবসময় মাথায় রাখবি এই প্রহর , তোর লাইফের প্রতিটা প্রহরে পাশে থাকবে। #শুধু_তুই আমার থেকে যা। (প্রহর)
—–
ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের দিচে উনার লম্বাচওড়া সাদা গাড়িটা থামতেই দরজা খুলে দৌড় দিলো সমুদ্র। এদিকে উনি (প্রহর) মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। এই দুষ্ট ছেলেকে নিয়ে যে কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। হা-হুতাশ করেই দিন কাটছে উনার। এসব আকাশ-পাতাল ভাবনার মাঝেই সমুদ্রকে ধরে এনে গাড়িতে ঢুকালাম আমি। এই ছোট্ট ছেলেটা হয়েছে ঠিক ওর বাপের মতো গম্ভীর আর জেদী৷ কিন্তু তলে তলে ঠিকই সব আজেবাজে কাজের ওস্তাদ। এদিকে আমি ওরে ধরে গাড়িতে ঢুকানোয় কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সমুদ্র। মাথাটা হঠাৎ এত খারাপ হলো যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ধুম করে ওর পিঠে এক থা’প্প’ড় দিয়ে বসলাম । সাথে সাথেই গগন বিদারী চিৎকারে গাড়িটাকে অস্থির করে দিলো সে। বয়স মাত্র পাঁচ। অথচ এই ছেলে আমাকে জ্বালিয়ে মারলো। এদিকে সমুদ্রকে মা’রায় উনি শক্তদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
‘ আমার ছেলের গায়ে হাত দিলি কেন তুই? উত্তর দে ‘ (প্রহর)
আমি কাঙ্ক্ষিত জবাব না দিয়ে বললাম,
‘ আপনি আগে বলুন, কেনো এতো সাদা শার্ট পরেন ? আর নিজের ছেলেকেও সাদা ভক্ত বানিয়েছেন। ‘ (আমি)
উনি আমার জবাবে পাল্টা জবাব দিতে পারলেন না। সমুদ্রকে কোলে নিয়ে ওরে বললেন,
‘ তোমার আম্মুকে আমরা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম জানো? সেই মেয়ে কেমন আমার ছেলেকে মা’রে। এত বড় সাহস। আজ বাড়ি ফিরি। তার পর হবে। ‘ (প্রহর)
আকষ্মিকভাবে সমুদ্রর কান্না থেকে গেলো। সে ভদ্র ছেলের মতো বাপের মোবাইল বের করে গান শুনতে লাগলো। আজ বহুদিন পর এই চিরশত্রু প্রহরখানের মতো উনার ছেলে সমুদ্র খানকেও চিরশত্রু মনে হলো আমার।
সমাপ্ত।
(