#শেষ_থেকে_শুরু_২🌻
#পর্ব_১৮
#নন্দিনী_চৌধুরী
৩৩.
প্রতিশোধ!প্রতিশোধ কি আসলেই সব সমস্যার সমাধান। মৃত্যু! এটাও কি সব সমস্যার সমাধান। হয়তো কিছু জায়গায় এগুলাও সমাধান। তবে সম্পর্ক গুলো যে নষ্ট হয়ে যায় এই সমাধান গুলোর কারণে। এক মনে বসে বসে কথা গুলো ভাবছিলো মুগ্ধ। সালমার কথা গুলো শুনে কোথাও একটা তার মনে হয় আসকে একদম পুরোভাবে সালমা দোষীনয়। একটা মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা তারপর তার চরিত্রকে অপমান করা এসব কোন মেয়ে সয্য করবে। কিন্তু তাই বলে একজনের শাস্তি অন্যজনকে দেওয়া এটাও বা কেমন বিচার হলো।
মেহের অনেকটা সময় চুপ করে থেকে এবার সালমার দিকে তাকিয়ে বললো,
মেহেরঃআমি মানছি আপনার সাথে যা যা হয়েছে তার সব অন্যায়। আমার মামা আমার দাদা আপনার অপরাধী। আমার মামা আপনার সম্মানহানী করেছে। আমার দাদা তার ছেলের বউদের দুইচোখে দেখেছে। হ্যাঁ আমি মানছি এগুলা অন্যায়। কিন্তু তার শাস্তি আপনি কেমন করে নিলেন? দোষ আমার মামার ছিলো আপনি শাস্তি তাকে দিতেন। কিন্তু না আপনি শাস্তি আমার মাকে দিলেন তার সাথে আমার বাবাও। কি হলো তাতে? সেইতো ধরা পরে গেলেন। বরং একটা প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আপনাকে কত মিথ্যার জাল বানাতে হয়েছে। কি লাভ হলো তাতে? আপনার কি মনে হয় আপনি আসলেই সুখি এতে? আমি বলছি আপনি সুখিনা। আপনি সুখিনা এই কারণেই কারণ এই অপরাধবোধ আপনাকে ভাবায়। আপনি ভয়ে ভয়ে থাকেন। আপনি আসলে কিন্ত সুখি নন এতে। প্রতিশোধ নিয়েই যদি সুখি হওয়া যেতো তবে পৃথিবীর মেক্সিমাম মানুষ সুখি থাকতো যারা প্রতিশোধ নেয়।
আজ আপনি যেমন আপনার ছোট মেয়েও হয়েছে তেমন। প্রতিশোধের নেশায় সেও হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। নিজের বোনের সংসার নিজ হাতে নষ্ট করলো। শুধুই কারণ একটাই প্রতিশোধ! কি লাভ হলো তাতে? সেই দেখেন আজ আপনার মেয়ের অবস্থা কি আপনি জানেন? সে এবং তার স্বামী এডস রোগে আক্রান্ত। আপনার মেয়ের পেটের বাচ্চাটাও রিস্কে এখন। ভাবেন আল্লাহ কত বড় সাজা দিয়েছে ওকে। সামনে কন্যা হারানো শোক পালন করবেন হয়তো।
সায়মা আরিশ মেহেরের কথায় চমকে যায়। মেহের কিভাবে জানলো তাই ভাবছে।
“আমি সবার সব খোঁজ রাখি তাই আমার কাছে কোনো কিছুই গোপন থাকেনা। ”
মেহেরের কথা শুনে সালমা চমকে গেলো। সায়মা মাথা নিচু করে নিলো। আজ সত্যি তার বলার কিছু নেই। আজ সে বুঝতে পারছে সে যে কি করেছে। মেহের একটা ব্রিফকেস আরিশের দিকে দিলো আর বললো,
মেহেরঃএতে পুরো ৩০লাখ টাকা আছে। আমার বোনের দেনমহরের টাকার ৫গুন। সেদিন কোটের বাহিরে তুই ওকে দেনমোহরের টাকা দিছিলি। আজ আমি তোকে তোর আর তোর বউয়ের চিকিৎসার জন্য টাকা দিলাম। কারণ এখন তোর অবস্থা প্রায় রাস্তার ফকিরের মতো। তাই ধুকে ধুকে মরার থেকে এই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিস।
মাহফুজ সামিয়া একদম চুপ করে আছে। আজ মাহফুজের মনে হচ্ছে তার এতোবছরের সংসার জীবনে যেনো একদম মিথ্যে। এই সংসারের অস্ত্বিত্বটাই মিথ্যে।
মেহের আবার সালমাকে বললো,
আপনাকে চাইলেও ক্ষমা করতে পারবনা। কারণ আপনি আমার মা বাবা,মামার হত্যাকারি। খুন করলেই সমস্যার সমাধান হয়না। আপনি অন্যভাবেও সাজা দিতে পারতেন। আপনি আমার ফুলের মতো বোনের জীবনটাও নোরক করে দিয়েছিলেন। এতো অত্যাচার করেছেন ওকে। যেই বোনের গায়ে আমি ফুলের টোকা পরতে দেইনা। আমার সেই বোনের গায়ে আপনার মারের দাগ রয়েছে। খোদার কসম বলছি আপনি আমার চাচি না হয়ে যদি অন্য কেউ হতেন। আমি বয়সের লেহাজ করতাম না এই মার গুলো ফেরত দিতাম। যাই হোক পাপের শাস্তি সবাইকেই পেতে হবে। আপনাকেও পেতে হবে।
মেহের ওর মেনেজারকে ইশারা করলো। মেনেজার ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেনো কল করলো। কিছু সময়ের মাঝে পুলিশ চলে আসলো। সালমা পুলিশ দেখে ভয়,বিচলিত কিছুই হয়নি। একদম নিশ্বব্দে সেরেন্ডার করে দিলো। যাওয়ার আগে শুধু একটা কথাই সালমা বলে গেছে,
সালমাঃআমার পাপের সাজা আমি পেয়েগেছি। আল্লাহ তুমি আমার মেয়েটাকে রক্ষা কইরো।
সালমাকে নিয়ে যাওয়ার পর সায়মা সামিয়া কান্নায় লুটিয়ে পরে। মাহফুজ একদম পাথর হয়েগেছেন। আসতে করে তিনি তার ঘরে চলে আসেন।
মেহের মুগ্ধ উঠে দাঁড়ায় যাওয়ার জন্য। মুগ্ধরা চলে যেতে নিলে আরিশ পিছন থেকে ডাক দেয়।
আরিশঃমুগ্ধ!
এতোদিন পর এই চিরোচেনা কন্ঠে নিজের নাম শুনে থমকে দাঁড়ায় মুগ্ধ। অতীতের পাতাগুলো আবার সামনে আসছে চোখের। মুগ্ধকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে মেহের দাঁড়িয়ে যায়। আরিশ হেঁটে ওদের কাছে এসে মুগ্ধকে বলে,
আরিশঃআমি জানি আমি যা করেছি তারপর তোমার সাথে কথা বলাটা মানায় না। তবুও এই মৃত্যুর পথযাত্রীর একটা শেষ ইচ্ছা রাখবে। ৫মিনিট আলাদা একটু কথা বলবে আমার সাথে প্লিজ।
মুগ্ধের আরিশের কথায় কেন জানি মায়া হয়। হয়তো দীর্ঘ ৩ বছর এই লোকটার সাথে সংসার জীবনে ছিলো বলে এই মায়া। মেহের না করতে চাইলেও মুগ্ধের সম্মতি আছে বুঝতে পেরে কিছু বলেনা।
মুগ্ধ আরিশকে বলে,
বাড়ির বাগানে চলো। কিন্ত মাত্র ৫ মিনিট।
আরিশঃ হ্যাঁ ৫মিনিট।
আরিশ মুগ্ধকে নিয়ে বাগানে আসে। বাগানে অনেক রকম ফুল আছে কুয়াশায় ভিজে আছে সব পাতা পাপড়ি৷ আরিশ মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলে,
আরিশঃ ফিরে আসা বা ক্ষমা করা কোনোটাই আমি তোমাকে বলবোনা। কারণ এর না আছে সুযোগ আর না আছে সেই অবস্থা। তবে আমি তোমাকে বলতে চাই, আমি সত্যি একজন স্বামী হিসাবে অক্ষম। কারণ আমার স্ত্রীর অক্ষমতার কথা জেনে আমি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম যেখানে অক্ষম আমি নিজে।
আরিশের কথা শুনে চমকালো মুগ্ধ। তবে আরিশ সব জেনে গেছে।
আরিশঃ হ্যাঁ আমি জেনে গেছি। সেই ডাক্তারই আমাকে জানিয়েছে সব সত্যি। সব সত্যি জানার পর নিজেকে না একটা নর্দমার কীট মনে হচ্ছে। তবে ভালোই হয়েছে আমার মতো মানুষের থেকে তুমি মুক্তি পেয়েছো।
আমি চাই তুমি ভালো থাকো। তবে আমার একটা শেষ ইচ্ছা আছে জানো। হয়তো আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। যদি কোনোদিন খবর পাও আমি মারা গেছি আমাকে শেষ বারের মতো একবার দেখে যেও।
মুগ্ধ এবার মুখ খুললো,
মুগ্ধঃ “জানো আরিশ আমাদের বিচ্ছেদের বয়স সীমা ৮মাস হয়েগেছে। এই ৮মাসে ৮দিনও আমি শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছিকিনা জানিনা। আমার মাথার বালিশটা জানে আমি কতরাত জেগেছি। সেই বালিশ জানে তাকে কত ভিজিয়েছি কেঁদে। সমাজের ছোট থেকে শুরু করে বুড়ো অবদি সবাই আমাকে কটু কথা শুনিয়েছে। আমি কি ভেবেছিলাম আরিশ জানো যে তুমি সবসময় আমার পাশে থাকবে। তবে ভাবেনি তুমি আমাকে মাঝ পথে ছেড়ে দেবে। তবে আমার কোনো রাগ নেউ অভিমান নেই। কেন নেই জানো, কারণ আমি তোমাকে আমার ভালোবাসায় বেঁধে রাখতে পারিনি। এটা আমার ভালোবাসার ত্রুটি। তবে আমি সব সময় চেয়েছি তুমি ভালো থাকো আর এখনো এটা চাই। মহান আল্লাহর কাছে চাইবো সে জেনো তোমায় সুস্থ করে দেয়। আসি তবে ভালো থেকো। ”
মুগ্ধ আর দাঁড়ায় না চলে আসে সেখান থেকে। আরিশ তাকিয়ে আছে তার চাওয়ার দিকে।
মুগ্ধ যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলছে,,
“তাকে পেয়ে ভেবেছিলাম সব কিছু পেয়েগেছি”
“কিন্ত আমিতো জানতাম না,পানিতে চাঁদের আলো ক্ষণিকের জন্যেই থাকে”।
আরিশ মুগ্ধের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবছে,
” মিথ্যা সুখের পিঁছনে ছুঁটতে
“গিয়ে নিজের সত্যি সুখটা হারালাম”
“আজ আমার সত্যিকারের সুখটা আমাকে
” রেখে চলে যাচ্ছে তবে আটকানোর সাদ্ধ্য আজ আমার নেই।”
গভীর রাত,,কারো কাছে গভীর রাত ভালোবাসার, কারো কাছে শত কষ্টের আগমন ঘটার রাত আবার কারো কাছে বিষাদময় এই রাত।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ। আজ মাকে খুব মনে পরছে। মা থাকলে মায়ের কোলে মাথা দিয়ে খুব কাঁদতো সে। কিন্ত মা যে নেই। আচ্ছা তারার দেশে যাওয়া যায়না। তবে সে তারার দেশে যেতো মাকে দেখতো।কিন্তু এতো রুপকথার সেই গল্প নয়। মুগ্ধ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তখন মেহের আসলো ওর রুমে। মেহের এসে দাঁড়ালো ওর পাশে। ভাইকে দেখে আবার সামনে তাকালো মুগ্ধ।
মেহেরঃমন খারাপ তোর চড়ুইপাখি?
মুগ্ধঃনা তো।
মেহেরঃমিথ্যা বলিস না আমি জানি। জানিস চড়ুইপাখি এই দুনিয়াতে না সবাই সার্থপর। সার্থে আঘাত লাগলে কেউ আপন দেখেনা। জানিস আজ আমাদের এতো টাকা পয়সা আছে বলে আমাদের সবাই সম্মান করে। এসব না থাকলে কেউ ফিরেও দেখতোনা। জীবনে সব সময় নিজেকে স্ট্রং রাখতে হবে৷ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
মুগ্ধঃহুম।
মেহেরঃআয় এদিকে আয়।
মেহের মুগ্ধকে নিয়ে বিছানায় গেলো। মুগ্ধের মাথায় নিজের কোলে রেখে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে মুগ্ধ ঘুমিয়ে পরলো। মেহের ওকে শুইয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে কম্বল গায়ে টেনে দিয়ে রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে বেরিয়ে আসলো।
জেলের সেলে বসে আছে সালমা। কেন জানি আজ মাহফুজের জন্য কষ্ট হচ্ছে। এতো বছরের সংসার জীবনে একটু হলেও ভালোবাসে এই মানুষটাকে সে। সালমা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
পাপের শাস্তি আজ হোক বা কাল ঠিক পেতেই হবে৷ হ্যাঁ অন্যায় হয়েছে তবে মেরে ফেলাই অন্যায়ের বিচার নয়। আজ তা বুঝতে পারছে সালমা।
“যেখানে একটা ভুল হয়েছে সেখান থেকেই একটা নতুন শুরু করো”
“যেখানে একটা শেষ হয়েছে সেখানে থেকেই নতুন শুরু”
“যেখানে সমাপ্তি সেখান থেকেই শেষ থেকে শুরু করো”
[নন্দিনী]
#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১৯
#নন্দিনী_চৌধুরী
৩৪.
সূর্য মামা উঠে গিয়েছে ধরনীর বুকে। চারিদিকে আলো পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। শীতের আবাসের কারণে সূর্য মামার আলো ঠিক মতো দিতে পারছেনা। শীত যেনো চাইছেনা সূর্যমামা ধরনীতে আলো দিক।
কম্বলের ভিতর থেকে মুখটা বের করে ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখলো মুগ্ধ। মোবাইলের স্ক্রিনে বড় বড় করে সময় লেখা ৯:৫০। বাপরে!এতো সময় ঘুমিয়েছে সে ভাবতেই পারছেনা। মুগ্ধ উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে ক্লাসের জন্য রেডি হচ্ছে সে। আজ পরিক্ষা আছে ওর। মুগ্ধ রেডি হয়ে নিচে আসলো। মেহেরের অফিসে মিটিং থাকায় সে চলে গেছে আগে। সার্ভেন্ট মুগ্ধকে খাবার দিলো। মুগ্ধ খাবার খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে। ড্রাইভারকে বলে গিয়েছে মেহের মুগ্ধকে দিয়ে আসতে। মুগ্ধ গাড়িতে গিয়ে বসলো। ড্রাইভার ওকে ক্লাসে দিয়ে চলে আসলো। ক্লাসে গিয়ে মুগ্ধ ওর সিটে বসলো। এক্সাম শুরু হলো। ২ঘন্টা এক্সাম শেষ করে বেরিয়ে আসলো মুগ্ধ। পরিক্ষা অনেক ভালো হয়েছে ওর। মুগ্ধ আজকে সাদাফদের বাসায় যাবে বলে ঠিক করেছে। তাই সেই চিন্তা মতো রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পরলো সাদাফদের বাসায় যাওয়ার জন্য। সাদাফদের বাসায় এসে মুগ্ধ দরজায় বেল দিতেই সাদাফের মা এসে দরজা খুললো। মুগ্ধকে এতোদিন পর দেখে সেও খুশি হলো। মুগ্ধকে ভিতরে নিয়ে নিজেদের মধ্য কথা বলে প্রাপ্তিকে এনে দিলো মুগ্ধের কোলে। প্রাপ্তি এতোদিন পর মায়ের গন্ধ পেয়ে যেনো খুশি হয়ে গেলো। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে আদর করছে আর প্রাপ্তির সাথে কথা বলছে।
~এদিকে~
মেহের আর রুহি একটা জায়গায় এসেছে। জায়গাটা ঢাকার বাহিরে অনেক দূরে। বেশ সুন্দর জায়গাটা। চারিদিকে সবুজ ঘাস,ফুল গাছ,আর পাখি সব মিলিয়ে রুহির অনেক ভালোলেগেছে জায়গাটা। রুহি মেহেরের দিকে তাকিয়ে বললো,
রুহি:স্যার আমরা এখানে কেনো এসেছি?
মেহের:অপেক্ষা করো দেখতেই পারবা কেনো আসছি।
রুহি নিজের মতো প্রকৃতি দেখছে তখন মেহের ওকে পিঁছন থেকে ডাক দিলো।
মেহের:মিস রুহি।
মেহেরের ডাকে রুহি পিঁছনে ঘুরে অবাক হয়ে গেলো। কারন মেহের একটা গোলাপ ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুহির সামনে। রুহি কিছু বলবে তার আগে মেহের বলা শুরু করে,
মেহের:সিনেমা,নাটক,উপ্যনাসের মতো করে নিজের মনের কথা বলতে পারবোনা আমি। কারণ ওসব আমার কাছে নেকামি লাগে। তাই আমি আমার মনের কথা সাফ ভাবেই বলে দিচ্ছি। আমি আপনাকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা কিভাবে সৃষ্টি হলো জানিনা। তবে আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন?
মেহেরের কথায় যেনো রুহি আরো অবাক আর চমকে গেলো। রুহি আশাই করেনি এমন কিছু। রুহি কাপাকাপা গলায় বললো,
রুহি:আমিও আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু ভয়ে কোনোদিন সেটা বলতে পারিনি। তবে আজ আমি বলছি আমিও আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজী।
রুহি মেহেরের হাত থেকে গোলাপগুলো নিয়ে মেহেরকে জরিয়ে ধরলো। মেহেরও জরিয়ে ধরলো তার প্রিয়তমাকে। আজ পুর্ন হলো দুজনের ভালোবাসা। পেয়েগেলো দুজনেই দুজনার ভালোবাসা।
৩৫.
সাদাফ সারাদিনপর বাসায় আসলো। ইদানিং তার ভালোলাগেনা বাসায় অফিস কোথাও। সারাদিন মুগ্ধের কথাই সে ভেবে যাচ্ছে। মুগ্ধকে দেখার জন্য তার ভেতর ছোটফোটানি হচ্ছে। কিন্তু চাইলেও সে পারছেনা মুগ্ধকে দেখতে। সাদাফ বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে অবাক! কারণ তার সামনে মুগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে প্রাপ্তিকে নিয়ে। সাদাফ নিজের ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলে,,
“প্রেয়শী তোমাকে নিয়ে এতোই ভাবনায় আছি যে দেখো এখন তোমাকে নিজের চোখের সামনেও দেখা শুরু করেছি। ইশশশ যদি এটা সত্যি হতো। কিন্তু আমিতো জানি এটা আমার কল্পনা। তবে সমস্যা নেই। বাস্তবে তুমি দূরে থাকলেও আমার কল্পনায় তুমি আমার কাছেই থাকো। ”
সাদাফ এসব বিড়বিড় করছে এর মাঝে মুগ্ধ বলে উঠে,
মুগ্ধ:কি বিড়বিড় করছেন তখন থেকে?
এবার মুগ্ধের আওয়াজ শুনে চমকে গেলো সাদাফ। এহ! এটা কল্পনা হলে মুগ্ধ কথা বলছে কিভাবে? সাদাফ এবার নিজের হাতে নিজে চিমটি কাটালো।
সাদাফ:আহ! উইমা এটা স্বপ্ন না।
মুগ্ধ: কি স্বপ্ন? কিসের স্বপ্ন। কি বলছে এসব?
সাদাফ: না মানে তুমি সত্যিই এখানে?
মুগ্ধ: না আমার ভূত এখানে🙄।
সাদাফ:তাইতো ভাবছিলাম প্রথমে।
মুগ্ধ:কি! আপনি আমাকে ভূত বলছেন?
সাদাফ:তওবা তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি আর তোমাকে ভূত এমন সাহস আমার হবে নাকি। (আমিতো জানি তুমি ভূত না পেত্নি)[মনে মনে]
মুগ্ধ:ফাউল কথা রেখে যান ফ্রেশ হন। আন্টি নিচে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে।
সাদাফ মাথা নাড়িয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো। আর মুগ্ধ সাদাফের কান্ড দেখে হাঁসলো।
খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে সাদাফ,মুগ্ধ,সাদাফের মা। মুগ্ধের কোলে প্রাপ্তি। মুগ্ধ একটু করে মাছের কাঁটা বেছে প্রাপ্তির মুখে দিচ্ছে। খাওয়া শেষ করে মুগ্ধ প্রাপ্তিকে ঘুম পারিয়ে দিলো। এবার ওর বাসায় যাওয়ার পালা। মুগ্ধ রেডি হয়ে বেরোতে নিলে সাদাফ বলে,
সাদাফ:আমি দিয়ে আসছি চলো।
মুগ্ধ: না থাক তার দরকার নেই।
সাদাফ:দরকার আছে নাকি নেই সেটা কি আমি জানতে চেয়েছি? বলেছি আসতে আসবা।
মুগ্ধ আর কথা না বাড়িয়ে সাদাফের সাথে গাড়িতে বসলো। সাদাফ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে মুগ্ধকে দেখছে।
বাসার সামনে আসতেই গাড়ি থামালো সাদাফ। মুগ্ধ গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।
মুগ্ধ বাসার গেটে এসে একবার পিঁছনে তাকালো সাদাফ তখনো দাঁড়ানো গাড়ি নিয়ে।
মুগ্ধ চলে যায় ভিতরে। মুগ্ধকে যেতে দেখে সাদাফ গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়। মুগ্ধ বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে বসলো। মুগ্ধ জানেনা কি করা উচিত তার। জীবনকে কি আরেকটা বার সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু যদি আবার সে ঠোকে যায়। এই দোটানায় যে মুগ্ধ শেষ হয়ে যাচ্ছে। পারছেনা সাদাফের হাতে হাত বাড়িয়ে দিতে। মুগ্ধ চুপচাপ বসে ছিলো। মেহের আসলো ওর রুমে। বারান্দা থেকে মেহের সব দেখেছে। আর এটাও বুজেছে সাদাফ মুগ্ধকে ভালোবেসে ফেলেছে। ছেলে হিসাবে সাদাফকে অপছন্দ নয় মেহেরের নিজেরও। তবে বোনের অমতে সে কিছুই করবেনা। মেহের গিয়ে মুগ্ধের পাশে বসলো। মুগ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,
মেহের:দোটানায় থাকিস না। মনের কথা শোন। মন কখোনো মিথ্যা বলেনা। মন যেটা বলে সেটাই কর। জীবনে অনেক কিছুই হয়। তাই বলে কি জীবনে আর এগিয়ে নেওয়া যায়না তা না। সবাই খারাপ হয়না। সব খারাপের মাঝে ভালো থাকে। আবার সব ভালোর মাঝেও খারাপ থাকে। তাই মন যেটা বলছে সেটাই কর। মনের ঊর্ধে যাস না।
ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় মুগ্ধ। প্রশ্নসুচোক চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের সেটা বুঝতে পেরে বলে,
মেহের:আমি সব জানি। তাইতো বলছি মন যা বলে তাই কর। মনে রাখিস আমি তোর পাশে আছি তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
মুগ্ধ একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,,
মুগ্ধ:ভয় হয় ভাইয়া। এতো কিছু দেখে নিয়েছি নিজের চোখে। যে জীবনকে নতুন করে সুযোগ দিতেই ভয় করে।
মেহের:সময় নে। যতটা সময় লাগে সময় নে।
মেহের উঠে চলে গেলো রুম থেকে। আর মুগ্ধ উঠে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে শুয়ে ভাবতে লাগলো।
পরেরদিন,,,,,
মাহফুজ সালমার সাথে জেলে দেখা করতে এসেছে। হাজার হোক তার প্রানপ্রিয় স্ত্রী সালমা। তাকে খুব ভালোবাসে যে তিনি। সালমা তাকে না ভালোবাসলে কি হবে সেতো ভালোবাসে। মাহফুজ সালমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজ সালমার চোখ লজ্জায় মাহফুজের সাথে মেলাতে পারছেনা। চুলে পাক ধরলেও ভালোবাসায় একটু কমতি রাখেনি মাহফুজ। এখনো এই পাকা চুলের মাঝে সেই আগের মাহফুজ আছে। মাহফুজ সালমাকে বললো,
মাহফুজ: যদি একবার আমাকে বলতে সব আমি তোমাকে সাহায্য করতাম। একবার আমাকে বলা যেতোনা সবটা সালমা। আজ যদি সব আমাকে বলতে আমরা মিলে দুজনে কোনো উপায় বের করতাম। কিন্তু এখন! জানিনা তোমাকে মুক্তি দেওয়া হবে কিনা। তবে একটা কথা বলবো যদি পারো তবে এখান থেকে বেরোনোর সুযোগ পেলে মনের কালিটা ধুঁয়ে এসো। আমার ঘরের দুয়ার সব সময় তোমার জন্য খোলা আছে।
সালমা আজ কি বলবে জানেনা তবুও বললো,
সালমা:মেয়ে দুটোকে দেখে রেখো। একজন তো ওই অবস্থায় আরেকজন মরণ রোগে ভুগছে দুজনকে তোমার কাছে আগলে রেখো। আর পারলে আমায় মাফ করো।
মাহফুজ আর কিছু বলেনা চোখজোড়া মুছে বেরিয়ে আসে।
কেটে গেলো আরো ২টা মাস।
এই ২মাসে সাদাফ মুগ্ধের সম্পর্ক অনেকটা এগিয়েছে। যদিও মুগ্ধ এখনো সাদাফকে মেনে নেয়নি তবে বন্ধুর মতো তারা এক সাথে আছে। এদিকে মেহের রুহির বিয়ের কথা বার্তা ঠিক হচ্ছে।
সকালে মুগ্ধ মেহের টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। তখন মেহেরের ফোনে কল আসলো। মেহের ফোন রিসিভ করে যা শুনে তা শুনে সে অবাক হয়। মেহের ফোন কেটে চুপ করে বসে থাকে। মুগ্ধ ভাইকে এভাবে দেখে বলে,
মুগ্ধ:ভাইয়া কি হয়েছে?
মেহের:একটা ঘটনা ঘটেগেছে।
মুগ্ধ:কি? কোনো খারাপ কিছু। চাচ্চু ঠিক আছেতো?
মেহের:ওদিকে সব ঠিক আছে আসলে আরিশ….
মুগ্ধ’আ.আরিশ কি?
মেহের:আরিশ আজকে সকালে মারা গেছে!
মেহেরের কথা শুনে থমকে গেলো মুগ্ধ। কেমন জানি একটা কষ্ট হচ্ছে মুগ্ধের। কানে এসে বাজছে আরিশের বলা কথাটা,,
“যদি শোনো আমি মারা গেছি,তবে একবার এসে দেখে যেও আমার লাশটাকে।”
সত্যি আরিশ চলে গেলো তবে!
#চলবে
#চলবে