#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৭
রায়ান ফুপিয়ে বলল–কেন বলতো আমার কাঙ্ক্ষিত মানুষের কাছে যেতে এতো বাঁধা পাড়ি দিতে হবে??
বারবার বলছি বাচ্চাটা আমার না!!শুনছেই না!!
রায়ানের গরম নিশ্বাস আর কাঁধে টুপ করে চোখের পানিতে ইতিমধ্যে আয়ানার শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে!!!
আয়ানা নিজকে দমিয়ে প্রশ্ন করল–তাহলে কার??
রায়ান আরেকটু গভীরভাবে আয়ানাকে জড়িয়ে বলল–জানি না আমি!!তবে আমার না!!কারণ আমার সাথে ওর তেমন কোনো সম্পর্ক কোনোদিন ছিল না!!
আয়ানা–ঠিক এমনভাবে জড়িয়ে ধরার সম্পর্কটাও আমাদের মধ্যে আর নেই!!!
রায়ান জড়িয়ে ধরা অবস্থায় একটু হেসে বলল–আর কতো বার বলবে?
আয়ানা জোড়াজুড়ি করে রায়ানকে ছাড়িয়ে বলল–একশোবার বলব!!আমাকে যেতে দিন প্লিজ!!
রায়ান সোফাতে বসে বলল–আগের বার ছেড়ে দিয়েছিলাম বলে আমি অনেক সাফার করছি!!আর না!!
আয়ানা এবার তেড়ে এসে বলল–কি সাফার করেছেন আপনি?? আমাকে ছেড়ে নিজের প্রেমিকার সাথে থেকেছেন!!আর কি??
রায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল–আরো অনেক!!তুমি জানো মায়ের নামে কেস চলছে!!আমাদের বাড়ি বন্ধক রাখা আছে এখনো!!বাড়িতে ডাকাতি হয়ে দাদি বাবা আঘাত পেয়েছিলো!!বাবাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো!!৭ দিন যাবত আমাকে আটকে মেরেছিলো শুধু!!এগুলো ভোগান্তি নয়??
রায়ানের শান্ত কথাতে আয়ানা হতবাক!!এতোকিছু হয়েছে সে তো জানেই না!!
তাকে তো শান্ত বলেছিল রায়ান নাবিলার সাথে শহর থেকে বাইরে চলে গিয়েছে!!!
রায়ান জুতো খুলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল!!
আয়ানা খানিকভেবে বসে রইল!!
রায়ান ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে সোফাতে বসে থাকা আয়ানার কোলে ধুপ করে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল!!!
আয়ানা চমকে উঠতেই আয়ানার হাত টেনে মাথায় রেখে বলল–মাথা টিপে দাও!!খুব যন্ত্রনা করছে!!
আয়ানা মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল!!
রায়ান আয়ানার হাতটা ধরে রেখে আয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে!!
খানিকপর হাতে চুমু দিয়ে বলল–টিপতে হবে না!!আমি শুধু হাতটা ধরে রাখব!!
আয়ানার জবাব না পেয়ে,চোখ বন্ধ করে নিল!!!
অতীতে নিজের করা ভুল গুলো ভাবতেই চোখের কোণায় পানি জমে এলো তার!!!
অতীত,,
বাইরে চকচকা রোদে দাঁড়িয়ে আছে রায়ান,কানে ফোন,চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ!!!
রায়ান–আপনার এই চকলেটের নাম বাবার জন্মে শুনিনি!!অফিস থেকে হাফ টাইম করে বেরিয়ে ২ ঘন্টা যাবত খুঁজছি!!
আয়ানা–আজব তো!!ভালো করে খুঁজুন!! নয়তো বাবাকে বলে দিবো যে আপনি আমাকে অনেক অত্যাচার করেন!!
রায়ান–আজব!!! আমি কখন অত্যাচার করলাম??
আয়ানা–বানিয়ে বলব!!!
রায়ান দাঁত কটমট করে বলে–আরেকবার চকলেটের নামটা বলুন!!পারলে একটা ছবি দেন!!
আয়ানা –ভালো করে শুনুন-adele milky bar!!
রায়ান–ওকে দেখছি!!!
আয়ানা–ভালো করে দেখুন!!
রায়ান ফোন কেটে আবারও চকলেট খুঁজতে শুরু করল!!
সেদিনের পর ২ সপ্তাহ পার হয়েছে আয়ানা রায়ানকে হুমকি দিয়ে এভাবেই বিভিন্ন কাজ করিয়ে নেয়!!
অপরদিকে,,
শান্ত তার বাবার সামনে বসে আছে!!!
শান্ত–ওদের কোম্পানি লসে ছিল তাহলে তুমি সাহায্য করোনি কেন??
শান্তর বাবা–ডুবে যাওয়া কোম্পানিতে টাকা ইনভেস্ট করে কোনো লাভ নেই তাই!!
শান্ত এবার উঠে চিল্লিয়ে বলল–তাহলে এটলাস্ট ওদের হেল্প করতে পারতে!!আয়ুর বাবা – মা শহর ছেড়ে পালিয়েছে!!আয়ুর কোনো খোঁজ নেই!!
শান্তর বাবা–আরে চিল!!এতো হাইপার হচ্ছো কেন??একটা সাধারণ মেয়ের জন্য!!!
শান্ত এবার তার বাবার একটা সামনে ফোনে একটা ভিডিও অন করে বলল–আয়ু সাধারণ নয়!!আই ওয়ান্ট হার!!!ভালো না বাসলেও ওকে আমি চাই!!
শান্তর বাবার ইতিমধ্যে ঘাম ছুটে গিয়েছে!!ভিডিও তে তার কিছু অনৈতিক কর্মকান্ড দেখে!!
তিনি তুতলিয়ে বলেন–আয়ানার বিয়ে হয়ে গিয়েছে!! কার সাথে বা কোথায় তা জানিনা!!
শান্ত এবার রেগে টেবিলে লাথি মেরে বলল–যে করেই হোক ওকে আমার চাই!!
আর ভাব্বে না যে ফোন টা সরালেই তোমার ভিডিও ও সরে যাবে!!কতো জায়গায় কপি করা আছে চিন্তা করতে পারবে না!!সো আয়ুকে খুঁজে আনো দ্রুত!!
শান্ত উঠে চলে গেল!!
শান্ত একটা বারে বসে আছে!!এটা তার নিত্যদিনের রুটিন বলা যায়!!
সিগারেট টানতে ব্যস্ত শান্তর সামনে এক লোক এসে বসল!!
লোকটি পুরো কালো কাপড় দিয়ে আবৃত!!মুখে মাস্ক থাকায় কোনোভাবেই তাকে চেনা সম্ভব না!!
লোকটি–ডেলিভারি ডেট টা কি তুমি ভুলে গিয়েছে?
শান্ত সিগারেট এ্যাস ট্রে তে চেপে রেখে বলল–ভুলিনি বাট মাল হাতছাড়া হয়েছে!! খোঁজ চলছে!!পেয়ে যাব দ্রুত!!
লোকটি–২ কোটি এ্যাডভান্স করেছি!! আর কতোদিন অপেক্ষা করব?
শান্ত–আপনি চিন্তা করবেন না!!আমি দুবাই গিয়ে মাল ডেলিভারি দিয়ে আসবো!!বুঝেন ই তো!!ভালো আর খাঁটি জিনিস নিতে একটু ধৈর্য ধরতেই হয়!!
লোকটি–লন্ডনের প্রডাক্ট শেষ ৩ দিন হলো!!আর কতোদিন ধৈর্য রাখতে হবে!!!
শান্ত–পেয়ে যাবেন!!খান সাহেব!!
লোকটি–দ্রুত কাজ করো!!আমাকেও মাল ডেলিভারি দিতে হবে!!উপর মহলের চাপ আছে একটু!!
শান্ত–ওকে!!
লোকটি ঘটঘট করে বার থেকে বেরিয়ে যায়!!
অপরদিকে,,
রায়ান বহু কষ্টে সুপার শপে খুঁজে আয়ানার বলা চকলেট টা নিয়ে বাড়ি ফিরল!!!
ঘরে এসে ব্যাগ রেখে আয়ানাকে চকলেট দিয়ে বলল–নিন!!পুরো ৩ ঘন্টা খুঁজেছি!!
আয়ানা চকলেট পেয়ে বলল–ধন্যবাদ!!
রায়ান–আমাকে একটু ঠান্ডা পানি খাওয়াবেন!!
আয়ানা–দিচ্ছি!!
আয়ানা পানি এগিয়ে দিতেই রায়ান এক চুমুকে পানি শেষ করল!!
আয়ানা–বাবা আপনাকে ডেকেছে!!ফ্রেস হয়ে যেতে বলেছেন!!
রায়ান–ওকে!!
ফ্রেস হয়ে রেদোয়ানের ঘরে যেতেই রেদোয়ান বলল–বস এখানে!!
রায়ান চুপ করে চেয়ারে বসে পড়ল!!
রেদোয়ান গরম চা চুমুক দিয়ে বলল–সমস্যা কি তোর বলতো??
রায়ান থমমত খেয়ে জিজ্ঞেস করল–কই বাবা!!তেমন কোনো সমস্যা নাই তো!!!!
রেদোয়ান –সমস্যা দেখেছি বলেই জিজ্ঞেস করেছি!!!
রায়ান আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করল–কি বাবা??
রেদোয়ান –বিয়েটা হয়েছে যে ভাবেই হোক!!আমার মতামত তোমার ওপর চাপিয়েছি এটা এক প্রকার অন্যায়!!কিন্তুু ভাবো প্রত্যক বাবা-মা এর জোর সিদ্ধান্ত সন্তানের ভালোর কারণ হয়!! এটা বুঝবে যেদিন বাবা-মা হবে!!বৌমা কে সময় দাও!!গতদিন বাইরে দেখেছি তোমাকে!!
রায়ান বুঝল তার বাবা তাকে নাবিলার সাথে দেখা করতে দেখে নিয়েছে!!!
রায়ান–আসলে বাবা!!!!
রেদোয়ান –আসলে নকলে জানি না!!!বিয়ে হয়েছে এখন কোনো সম্পর্ক থাকলেও বেরিয়ে এসো!!ওই মেয়ে তোমার জন্য ঠিক না!!বৌমাকে সময় দাও!!
রায়ান মাথা নিচু করে বলল–ঠিক আছে বাবা!!!
রায়ান উঠে চলে গেল নিজের ঘরে!!!
ঘরে এসে সটান হয়ে বিছানাতে শুয়ে বলল–কিভাবে মানব ওনাকে আমি?নাবিলাকে ভালোবাসি আমি!!
বাবা তো বুঝতেই চাইছে না!!আমারও ভুল বাবাকে বুঝাতে পারিনি আমি!!
এর মধ্যে খট করে দরজা খুলে আয়ানা ঘরে এলো!!
আয়ানা রায়ান কে খাটে শুয়ে থাকতে দেখে বলল–একটা কথা বলতাম!!
রায়ান উঠে বসে চশমা টা চোখে দিয়ে বলল–হুমম বলুন!!
আয়ানা–আমায় একটু মার্কেট এ নিয়ে যাবেন!!কিছু জিনিস কিনতে হবে!!
রায়ান–বাবাকে বা মাকে বলুন!!
আয়ানা–বাবাই বলেছে আপনার সাথে যেতে!!
রায়ান –আচ্ছা রেডি হন!!আমি বাইক বার করছি!!
আয়ানা রেডি হয়ে রায়ানের সাথে বাইকে উঠে নিউমার্কেটের সামনে দাঁড়ালো!!
আয়ানা চারদিক তাকিয়ে ভিড় দেখে বলল–চলুন!!আমি কিন্তুু চিনি না কিছু!! আপনি প্লিজ সাথে থাকবেন!!
রায়ান–হুমম চলুন!!
রায়ান আর আয়ানা টুকিটাকি কেনাকাটা করার মাঝেই দেখা হলো আয়ানার মায়ের বান্ধবীর সাথে!!
আয়ানা–কেমন আছেন আন্টি??
মহিলা– আলহামদুলিল্লাহ মা!! তুমি?
আয়ানা–ভালো!!আপু কেমন আছে??
মহিলা–আরে ওইতো তোমার আপু!!
মেয়েটি মায়ের ডাকে আয়ানা কে দেখে মুচকি হেসে বলল–কি খবর আয়ানা??
আয়ানা–ভালো নাবিলাপু!!
নাবিলা–বাহ!!কার সাথে এসেছো??
আয়ানা–আমার বরের সাথে!!
নাবিলা–বিয়ে হয়ে গিয়েছে?? কোথায় বর তোমার?
আয়ানা–এসো ওইতো দোকানের বাইরে!!চলো!!
নাবিলা আর আয়ানা দোকানের বাইরে চলে আসে!!রায়ান উল্টোদিক ঘুরে ফোন চাপছিল!!
আয়ানা রায়ানের কাঁধে হালকা চাপড় দিলে রায়ান ঘুরে তখন আয়ানা বলল–এই যে নাবিলাপু আমার বর!!!
নাবিলা ইতিমধ্যে হা হয়ে গিয়েছে!!
রায়ানের ও সেম অবস্থা!!!
নাবিলা–আর ইউ সিউর??
আয়ানা–হুমম আপু!!বরকে চিন্তে কেউ ভুল করে নাকি!!
নাবিলা চোখ লাল করে বলল–বেস্ট অফ লাক ফর ফিউচার!!!
বলেই নাবিলা দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল!!রায়ান আর কিছু বলতে পারল না!!
হালকা রুক্ষ গলাতে রায়ান বলল–বাড়ি চলেন!!
আয়ানা–কি হলো বুঝলাম না!!!আমার আরো কিছু কেনা বাকি!!এরোম জায়গায় কেনাকাটা করতে খুব কষ্ট!!
রায়ান এবার দাঁত চেপে বলল–তাহলে আপনার বাবাকে বলুন শপিংমল এ নিয়ে যেতে!!
আয়ানা মাথা নিচু করে নিল!!
রায়ানের পিছু পিছু হেঁটে বাইকে উঠে বাড়ি চলে গেল!!
বাড়িতে এসেই সব ঘরে ফেলে আয়ানা দৌড়ে তার শাশুড়ীর কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল!!
রায়ানের মা–কি হয়েছে মা??
আয়ানা কাঁদতে কাঁদতে বলল—আমি আমার মা-বাবার কাছে যাবো!!থাকব না তোমাদের বাড়ি!!!
রায়ানের মা–কেনো মা!!কি হয়েছে??
আয়ানা কেঁদে কেঁদে সবটা বলল তো ঠিকই তবে চোখ বড়বড় করে রায়ানের মা তাকিয়ে আছে দরজার দিকে!!
কারণ দরজাতে রায়ানের বাবা রাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন!!!
রায়ানের মা কিছু বলার আগেই ঘটঘট করে হেঁটে রায়ানের ঘরে গিয়ে ফোন কানে পায়চারি করতে থাকা রায়ানকে থামিয়ে কষিয়ে থাপ্পর দিলো!!
পিছু দৌড়ে এল আয়ানা আর রায়ানের মা!!
রায়ান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে!!
রায়ানের বাবা–আমার বাড়ির বৌকে সম্মান না দিতে পারলে বেরিয়ে যাও বাড়ি থেকে!!!আগে একদিন তাকে কাজের লোক বলে পরিচয় দিয়েছো তোমাকে কিছু বলা হয়নি!!আজ বিনা কারণে উল্টাপাল্টা কথা কেন বলেছো???
#চলবে
১৩১৬ শব্দের পর্ব♥️😊