শেষ প্রান্তের মায়া পর্ব -২০+২১

#শেষ_প্রান্তের_মায়া (২০)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_____________

তন্ময়কে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এখানে যে ওর দেখা পাবো তা মোটেও ভাবিনি। তন্ময়ের চোখ আমাকে দেখেই জ্বলজ্বল করতেছিলো। মনে হচ্ছিলো যেনো সে তার মূল্যবান কিছু ফিরে পেয়েছে। কিন্তু আমি তো তার কাছে মূল্যবান নয়। তবে! নিজেকে সামলে দুপা পিছিয়ে দাঁড়ালাম। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই নজর পড়ে আরাফের দিকে। তার দৃষ্টি তখনো আমার দিকে। সে এগিয়ে আসতে নিলে হুট করেই আমাকে জড়িয়ে ধরে তন্ময়। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। শকড হয়ে গেছি। কোনরকমে তাকে ঠেলে সরিয়ে আশে পাশে তাকিয়ে বললাম,

‘এগুলো কি ধরনের ব্যবহার তন্ময়! আপনি ভুলে গেছেন আপনি আমার প্রাক্তন স্বামী আর এটা পাবলিক প্লেস!’

পিছনে ফিরে তাকালাম। আরাফ ততক্ষণে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সম্ভবত সে তন্ময়ের নামটা শুনেছে। আমি নিচে পড়ে যাওয়া হাওয়াই মিঠাইয়ের প্যাকেটটা তুলে নিলাম। তন্ময় কে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় সে রাস্তা আটকায়। বলে,

‘তুমি এই শহরেই আছো আমাকে জানাও নাই কেন মায়া? তোমাকে কত খুঁজছি আমি!’

ভ্রু কুঁচকে গেলো আমার। আমাকে খোঁজার কি আছে! গম্ভীর কন্ঠে বললাম, ‘আমাকে খোঁজার কি আছে? আপনার সাথে তো এখন আমার কোনো সম্পর্কই নাই।’

‘আমি যা করেছি তা ভুল। আমাকে মাফ করে দিয়ে প্লিজ ফিরে আসো!’

অবাকের চরম পর্যায়ে আমি। যে মানুষটা কখনো ভালোবেসে দুটো কথা অব্দি বলেনি সে বলছে তার কাছে ফিরতে! মাথা ভনভন করে ঘুরে উঠলো। নিজেকে সামলে নিলাম। তন্ময় আমার হাত ধরে বলে,

‘মাফ করে দাও না প্লিজ! তোমাকে হারানোর পর তোমার গুরুত্ব বুঝেছি। প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও! আমি অনেক ভালো স্বামী হয়ে দেখাবো।’

আমার মাথা কাজ করাা বন্ধ করে দিলো। বুঝে উঠলাম না তন্ময়ের কথার আগা মাথা। এই লোকটা ঠিক কি চায়ছে! একবার তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আরেকবার তাকালাম আরাফের দিকে৷ আরাফের দৃষ্টি আমার ধরে রাখা হাতের দিকে। চোখে মুখ লাল হয়ে গেলো মুহুর্তেই। বিষাদের রঙ চোখে স্পষ্ট দেখলাম। আমি হাত ছাড়িয়ে নিলাম তন্ময়ের। কন্ঠ শক্ত করে বললাম,

‘দেখুন আপনার সাথে আমার সব শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। আপনি ঠিক কি কারণে আমার কাছে এসেছেন আমি জানি না কিন্তু আমি আপনাকে স্পষ্ট ভাবে বলে দিচ্ছি আমার থেকে দুরে থাকেন। ওই দুর্বল মায়াা আর নেই যে সহজেই গলে যেতো। আমি এখন অন্য কারো আমানত।’

আরাফের দৃষ্টি শীতল হয়ে গেলো। আমি তন্ময়কে কিছু বলতে না দিয়েই পার্ক থেকে বের হয়ে আসলাম। লোকটাকে আমার সহ্য হয় না। উনাকে দেখলেই আমার অতীত চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ভেতরটা পু’ড়তে শুরু করে। আজ আমি সমাজের কাছে ডিভোর্সী শুধু মাত্র এই মাানুষটার জন্য। তাকে আমি কোনো কালেই মাফ করবো না। তবে আমি একটা জিনিস খুব ভাালো করে জানি তন্ময় কাউকে ভালোবাসার মতো মানুষ নয়। আমাকেও ভাালোবেসে আসেনি। ওর উদ্দেশ্য টা কি? আমাকে জানতে হবে। কিন্তু জানবো কিভাবে? আমার ভাবনার মাঝেই ছুটে আসে আরাফ। পাশাপাশি হাঁটতে থাকে নিশ্চুপ ভাবে। আমি আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে আবারও দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। কিছুটা দুর আসতেই আরাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

‘উনিই তাহলে তন্ময়?’

আমি ছোট্ট শব্দে ‘হু’ বললাম। আরাফ খপ করে আমার হাত ধরে বলে, ‘ওই লোকটার যেনো ২য় বারের মতো আপনার হাত ধরার সাহস না হয়।’

আমি ভয় পেলাম। তার চোখের দিকে তাকিয়ে গলা শুকিয়ে আসলো। শুকনো ঢোক গিলে বললাম, ‘আপনার চোখ এমন লাল টকটকে হয়ে আছে কেন?’

আরাফ উত্তর দিলো না। আমার হাত ছেড়ে দিয়ে উল্টোদিকের একটা দোকানে গেলো। সিগারেট আর পানির বোতল নিয়ে ফিরে আসলো। সিগারেট টা পকেটে রেখে পানি এনে সরাসরি আমার হাত ধুয়ে দিলো। আমি হতভম্ব। কি থেকে কি হচ্ছে তা যেনো আমার মাথার ওপর দিয়ে গেলো। আরাফ শান্ত কন্ঠে বলে,

‘ওই জা’নো’য়া’র’টার ছোঁয়া ধুয়ে যাক। আর একদিন আপনার হাত ধরার চেষ্টা করলেও ওর কপালে শনি আছে।’

শান্তশিষ্ট মানুষ রেগে গেলে যে ভ’য়ং’কর হয়ে যায় তা হাড়ে হাাড়ে টের পেলাম। তার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে বসলাম, ‘শরীরের প্রত্যেকটা ভাজেই তো ওই ঘৃ’ণ্য পুরুষটার ছোঁয়া আছে। ওগুলো মুছবেন কিভাবে?’

আরাফ চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, ‘সেইটা সময় এলে ভালোবাসা একাই মুছে দিবে। প্রথমে জীবনসঙ্গী করে ঘরে তো আনি!’

আমি দৃষ্টি সরিয়ে হাঁটা লাগালাম। আরাফ নিজেও চুপচাপ হাঁটতে থাকে। ছেলেটা পা’গল বটে। নয়তো কেউ কারো প্রাক্তন স্বামীর ছোঁয়া মুছার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে! মনে মনে হাসি পেলো। হাঁটতে হাঁটতেই বললাম,

‘সিগারেট খান?’

‘মাঝে মাঝে।’

‘এটা শরীরের জন্য ভালো না। খাওয়া বাদ দিয়ে দিন।’

‘আপনি যেদিন দায়িত্ব নিবেন সেদিন থেকে বাদ দিয়ে দিবো। এমনিও আপনি চোখের সামনে থাকলে আমার কিছু লাগে না।’
________

বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যার আগে ফিরলাম। মাহিদ চলে এসেছে। তিন্নি, মাহমুদা, মাইশা, সিহাব, সোহান ভাই আর স্নেহা একসাথে বসে আছে তিন্নিদের ঘরে। ওহ হ্যাঁ বলা হয়নি! তিন্নি আর সোহান ভাইয়ের মেয়ের নাম রেখেছে স্নেহা। মেয়েটাকে দেখলেই কেমন আদর আদর পায়। মাশাল্লাহ কি ভীষণ কিউট। আমি ওদেরকে এক পলক দেখেই নিজেদের বাড়িতে ঢুকে গেলাম। তন্ময়কে নিয়ে চিন্তা করতে করতে মাথার শিরা, উপশিরা ব্যাথা করছে যেনো। মাহিদকে তার ঘরে দেখে আমি দ্রুত গোসলে গেলাম। গোসল সেড়ে এসে দেখি মাহিদ বসে আছে। আমি ওকে দেখে হেঁসে বললাম,

‘কিরে খেয়েছিস?’

মাহিদ মাথা নাড়ালো। ওর মুখটা দেখে মনে হলো চিন্তায় আছে। আমি চুল মুছতে মুছতে ওর কাছে গেলাম। নরম গলায় শুধালাম,
‘কি হয়েছে ভাাই? মুখটা এমন চিন্তিত লাগছে কেনো?’

মাহিদ আমার দিকে তাকিয়েই নিজের দৃষ্টি নত করে নিলো। চোখ পিটপিট করে বললো, ‘আব্বা আজ কল দিছিলো বুবু।’

আমি থমকে গেলাম। এতোদিন পর হঠাৎ আব্বা কল দেওয়ার কারণ কি! একদিনে এতো গুলো শকড যেনো আমার মাথা খেয়ে ফেললো। অবাক কন্ঠেই ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেনো?’

‘বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। কান্নাা করছিলো আর বলছিলো আমাদের ছাড়া নাকি তাদের কিছু ভালো লাগে না। আমাদের বাড়ি ফিরতে বললো। যা করেছে তাাার জন্য তারা লজ্জিত।’

‘আমাকেও ফিরতে বলেছে?’

মাহিদ কোনো জবাব দিলো না। ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো। এবার বুঝি ভাই বোন গুলোও চলে যাবে! দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাহমুদা, মাইশা, সিহাব দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওদের দিকে এক পলক দেখে হেঁসে বললাম,

‘তাহলে তোরা চলে যা। আব্বা-মা তো তোদের ছাড়া ভালো নেই।’

চমকে উঠলো আমার ভাই বোন গুলো। মাইশা আর সিহাব ছুটে এসে দুপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। মাইশা শক্ত করে ধরে বলে, ‘আমি কোথাও যেতে চাই নাা বুবু। আমি তোমার সাথে থাকবো। কোথাও যাবো না।’

ওর মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু হেঁসে বললাম, ‘এসব বললে কি হবে বোন? উনারা আমাদের জন্ম দিয়েছে, বড় করেছে। তারা যখন আমাদের ছাড়া একা হয়ে আছে তখন আমাদের উচিত তাদের সাথে থাকা।’

মাহমুদা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, ‘ওসব স্বা’র্থ’প’র আব্বা-মায়ের কথা তুমি ভেবো না বুবু। আমরা সবাই তোমার সাথেই থাকবো।’

কিছু বলে বুঝানো যাবে না তা আমি জানি। তাই আর জোড় করে বুঝাতেও গেলাম না। মাথার মধ্যে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে আজকের ঘটনা গুলো। তন্ময়ের আসা, আব্বার ফোন সব কিছুই একদিনে! সন্দেহ হলো। জানতে হবে এসবের পেছনের মূল কারণ কি! এর মধ্যেই আযান দিয়ে দিলো। ৩ বোন নামাজ পড়ে তিন্নির কাছে গেলাম। মেয়েটা কোনো কাজই করতে পারে না। তাই মাহমুদা, মাইশাই প্রায় সব কাজ করে দেয়। আমি যতক্ষণ থাকি ততক্ষণ করে দেওয়ার চেষ্টা করি। তিন্নির বাবু কোলে নিয়ে গল্প করছিলাম। কথার এক পর্যায়ে টপিক ওঠে আরাফকে নিয়ে। তিন্নি দুষ্টুমি গলায় বলে,

‘আরাফ সাহেব মনে হয় তোমার অনেক কাছের!হু হু! ব্যাপার কি?’

‘কি উল্টা পাল্টা বলো!’

‘হেনা আপা বলেছে আমাকে। বেলী ফুলের মালা। আরো না জাানি কত কি!’

আমি চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। তিন্নি আর মাহমুদা খিলখিলিয়ে হাসে। মাহমুদা ঠোঁট চেপে হেঁসে বলে, ‘হ্যাঁ আমি তো বুবুর ব্যাগ থেকে গোলাপ ফুলও পেয়েছি।’

২ জন মিলে জ্বালাতে শুরু করে। চোখ রাঙিয়েও কাউকে থামানো যাচ্ছে না। উল্টো এমন এমন কথা বলছে যে আমিই লজ্জা পাচ্ছি। মাহমুদা কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,

‘ভাইয়ার মধ্যে কিন্তু খারাপ কিছুই দেখিনি তাই এবার বিয়েটা করে ফেলো। আমাদেরও খালামনি হওয়ার সুযোগ দাও!’

এপর্যায়ে মাহমুদার পিঠে কি’ল বসালামম। চোখ গরম দিয়ে বললাম, ‘একদম বিয়ে দেবো এতো পাকনামি করলে।’

মাহমুদা ঠোঁট উল্টে তিন্নির দিকে তাকায় তিন্নি খিলখিল করে হাসে। হুট করেই মাথা ঘুরিয়ে ওঠে। শরীর দুর্বল ভেবে ওদের আর কিছু বললাম না। কতগুলো রাত ঘুমানো হয়নি। তারওপর এতো শক! আমার মাথা না ঘুরালে কার মাথাা ঘুরাবে!

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা অনেক অগোছালো হয়ে গেছে তাারওপর রিচেক করা হয়নি। কষ্ট করে একটু মানিয়ে নিবেন।)#শেষ_প্রান্তের_মায়া (২১)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_______________

কেটেছে বেশ অনেকগুলো দিন। ওইদিনের পর অবশ্য তন্ময়কে চোখে পড়েনি৷ মাহিদ, মাহমুদা আর মাইশা গ্রামে চলে যায়নি। ওদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করলেও আমাকেই সবসময় দমিয়ে দিয়েছে। ওদের একটাই কথা আমাকে ছেড়ে কোনোভাবেই তারা যেতে রাজি নয়। এর মধ্যে মাহমুদাকে কলেজে ভর্তি করিয়েছি। মাইশার বই এনেছে মাহিদ। এখানেই পড়ে। সিহাব, মাহমুদা আর মাইশার খরচ চালাতে বেশ কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাহমুদা কলেজে ভর্তির ফি, বই কেনার টাকা, সিহাবের স্কুল খরচ, মাইশার প্রাইভেট পড়ার খরচ সব মিলিয়ে আমি আর ভাই হিমশিম খাচ্ছি। মাহিদের নিজেরও তো পড়াশোনা আছে। তিন্নি পুরোপুরি সুস্থ হলে তাও তিন্নিই সাহায্য করে দিতে পারবে। সামনেই সিহাব আর মাইশা দুজনেরই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। মাহিদের বেতন বেড়েছে কিন্তু তিন্নির জন্য টাকা দেওয়ায় হাতে এখন জমানো কোনো টাকা নেই। মাসের শেষে টানাপোড়নে পড়তে হয়। ইদানীং আমার শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। হাড়ের মাঝে ব্যাথা করে। ক্লান্ত হয়ে যাই অল্পতেই। তিন্নি মোটামোটি সুস্থ। সোহান ভাই আমাকে টাকা গুলো ফেরত দিতে চেয়েছিলেন আমিই নেইনি। বলেছি কখনো প্রয়োজন পড়লে তার থেকে নিবো। আরাফ আর আমারও ভালো বন্ডিং হয়ে গেছে। ছেলেটার সবকিছু আমার মুখস্থ যেনো। নিয়ম করে বেলিফুলের মালা আর গোলাপ আনে প্রতিদিন। পড়াশোনা শেষ জবের ট্রাই করছে কিন্তু আমার সাথে দেখা করতে কখনোই ভোলে না৷ আমার কেয়ার করে খুব। আমি যেমন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছি তেমন সেও আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাকে নিয়ে এখন আর মনে দ্বিধা নেই। মনে হয় এবার ২য় বারের মতো আবারও বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে। নিজ মনেই মুচকি হাসলাম। প্রতিদিনের মতোই আজও স্যার ফরমাল ড্রেসে দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় ইন্টারভিউ দিতে যাবে। আমি হেঁসে তার কাছে এগোলাম। সে বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলে,

‘আজ আপানকে একটু বেশিই সুন্দর লাগতেছে। ইশশ আপনাকে দেখলেই আমার এখানে লাগে।’

বুকের দিকে ঈশারা করে বলে। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আশে পাশে তাকালাম। চোখ গরম করে বললাম, ‘রাস্তা এটা।’

‘রাস্তাতে যখন প্রেম করছি তখন তো রাস্তাতেই এসব বলবো। আপনি তো এখনো ঘরের বউ হয়ে আসেননি যে ঘরে প্রেম করবো!’

আরাফ ঠোঁট ফুলায়৷ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলানো দেখে ফিক করে হেঁসে দিলাম। প্রতিদিনের মতো আরাফ নিজ হাতেই খোঁপায় বেলিফুলের মালা গুজতে গুজতে বলে,

‘আপনার জন্য একটা সুখবর আছে।’

আমি আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকালাম। উনি আমার দিকে গোলাপ ফুল এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘ভালোবাসি।’

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। এ কেমন কথা! সুখবর বলে ‘ভালোবাসি’! সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

‘সুখবর বলে আবার ভালোবাসি! এটা কেমন কথা? বিয়ে টিয়ে ঠিক হয়ছে নাকি আপনার?’

আরাফ মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘হ্যাঁ। টিয়ের কথা তো জানি না তবে আমার বিয়ের খবর হয়ে গেছে। এই ধরেন ১০/১২ দিনের মধ্যেই আমার বিয়ে।’

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। সত্যি কি উনার বিয়ে? কোনোরকমে হাসার চেষ্টা করে বললাম, ‘মজা করছেন?’

‘আরেহ মজা করবো কেনো? সত্যিই আমার বিয়ে। অভিনন্দন জানাবেন না?’

আমি পিটপিট করে তাকালাম। আরাফের চোখে মুখে কোথাাও মজার রেশ নেই। তবে কি আরাফের এতোদিনের দেখানো ভালোবাসাটাও মিথ্যা? হাতের গোলাপটার দিকে তাকালাম। কিছুতেই কেনো যেনো মন মানলো না! আরাফের মুখে তখনো মিষ্টি হাসি ঝুলে আছে। বোঝা গেলো সে বিয়েতে খুশি। পকেটে হাত গুজে বলে,

‘দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। যান!’

তার দিকে তাকিয়েই ছোট্ট করে ‘হু’ বললাম। দু পা এগোতে গিয়েও পেছনে আসলাম। নিজেকে সামলে বললাম, ‘নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা।’

‘ধন্যবাদ।’

আরাফের মুখের হাসি তখনও আছে। আমার বুকের চিনচিন ব্যাথা বাড়লো। হাসফাস অবস্থা হলো। শ্বাসের গতি দ্রুত হলো। এক মুহুর্তও দাঁড়ালাম না। জিজ্ঞেসও করলাম না তার হবু বউ কেমন! নিশ্চয় অনেক সুন্দরী! নিজেকে মানানোর চেষ্টা করলাম। এতোদিনের এতো কথা সব কি তবে মিথ্যা! কই কোনোকিছুতে তো মিথ্যা পাইনি। হয়তো আমার প্রতি সত্যিই তার একটা আবেগ ছিলো যা এখন কেটে গেছে। হয়তো সত্যি ছিলো। আমি হয়তো তার অভ্যাসেই থেকে গেছি। হাত বাড়িয়ে মাথার ফুলটা হাতালাম। তিক্ত অনুভূতি বয়ে গেলো হৃদয় জুড়ে।৷ ব্যাথায় মনে হলো বুকের বা পাশটা এখন ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। নিজেকে সামলানোর যথেষ্ট চেষ্টা করলাম। গার্মেন্টসের গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে পিছনে তাকাবো না বলেও তাকালাম। প্রতিদিনের মতো আজ আর আরাফ দাঁড়িয়ে নেই। আরাফ চলে গেছে! একদিনে তার এতো পরিবর্তন! যে মানুষটা কাল পর্যন্তও আমি গেইট না পেরোনো পর্যন্ত যেতো না সে মানুষটা আজ আমি গেইটে না ঢুকতেই চলে গেছে! যে মানুষটা তীব্র জ্বর নিয়েও আমাকে দেখতে ছুটে এসেছে সে মানুষটা কি আসলেই আমাকে ভালোবাসে না! বদলে গেছে! এসেও তো বললো আমি তার প্রেমিকা, আমাকে দেখলে তার বুকে লাগে! এসবই কি মিথ্যা? কিন্তু বিয়ের কথা বলার সময়ও তার চোখে মুখে একফোঁটাও মিথ্যা ছিলো না। সত্য মিথ্যার মধ্যে পড়ে মাথা ঘুরিয়ে উঠলো। দ্রুত পা চালিয়ে ঢুকে গেলাম গার্মেন্টসে। হেনা আপা, মিতা, সোমা সবাই কাজ করছিলো। কমবেশি এরা সবাই আরাফকে চেনে। আমার খোঁপার বেলি ফুলের রহস্য এই ৩ জনই খুব ভালো করে জানে। অন্যমনষ্ক মনে যখন কাজে হাত লাগালাম তখন হেনা আপা ডেকে বলে,

‘কিরে তোর মুখ এমন লাগছে কেনো? মন খারাপ? কিছু নিয়ে চিন্তিত?’

‘কই! নাহ তো আপা। কিছু না।’

মিতা কাধ দিয়ে ধাক্কা মে’রে বলে, ‘আজ বুঝি আরাফ সাহেবের দেখা পাওনি মায়া!’

বলেই ৩ জন হাসলো। আমি হাসলাম না। সোমা কাছে এগিয়ে এসে বলে, ‘খোঁপায় যখন বেলিফুল আছে তখন তো আরাফ সাহেবের দেখা পেয়েছিলো আপু। কিন্তু মুখ ভার কেনো? মনে হচ্ছে বয়ফ্রেন্ড ছ্যা’কা দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছে।’

‘আরেহ নাহ। আমাদের আরাফ সাহেব তেমন প্রেমিক না। তাই না মায়া?’

আমি উত্তর দিলাম না। এবার ৩ জনই কাছে আসলো। মজা ছেড়ে কন্ঠে সিরিয়াসনেস এনে বলে, ‘ভালো করে বল তো কি হয়ছে? আরাফের সাথে কিছু হয়ছে?’

আমি হেনা আপার দিকে তাকালাম। কি বলবো না বলবো ভেবে পেলাম না। বলবো কি না ভাবলাম। মনে হলো বলে দেওয়াটাই হয়তো ভালো হবে। অন্তত ওরা তো কিছু বুঝবে। আমি ভাঙা ভাঙা ভাবে ৩ জনকেই সবটা বললাম। ৩৩ জনই চিন্তিত হয়ে পড়লো। মিতা বলে,

‘কেমন যেনো লাগলো না বিষয়টা? মানে যে আরাফ তোকে শুরু থেকেই এতো ভালোবাসে! প্রতিদিন বেলীফুলের মালা, গোলাপ, সকাল বিকেল দুবেলাই তোকে দেখতে আসা যার নিত্যদিনের কাজ সে হঠাৎ করে বিয়ে করে নিচ্ছে!’

হেনা আপা বললো, ‘আর সবথেকে বড় কথা তার যদি বিয়ে করারই হতো তাহলে আজও তোকে গোলাপ, বেলীফুলের মালা দেওয়ার মানে কি? আবার প্রথমেই এতো সুন্দর করে ভালোবাসার কথা বলারই বা মানে কি?’

আমি দুজনের প্রশ্নেরই উত্তর দিলাম না। সোমা অদ্ভুত কন্ঠে বলে, ‘ছেলেরা সব পারে। জানি সব ছেলে এক নয় কিন্তু কিছু ছেলে প্রচন্ড ভ’য়ং’কর। দেখো না যেদিন আমার এতো বড় সর্ব’নাশ হলো সেদিনও সে কি সুন্দর প্রেমের কথা বলেছিলো।’

বুকটা ছ্যা’ত করে উঠলো। ভেতরটা কেমন অস্থিরতায় ভরে উঠলো। হেনা আপা আর মিতা বললো, ‘চিন্তা করিস না। হয়তো মজা করতেছে।’

মাথা নাড়লেও আমার মন মানলো না। ভেতরের অস্থিরতা সময়ের সাথে সাথে বাড়লো। নাহ এভাবে চলবে না। বিকেলে আরাফ আসলে ওর সাথে কথা বলতে হবে।
_______

বিকেলে গার্মেন্টস থেকে বের হয়ে চারপাশে নজর বুলালাম। আরাফ নেই। আসেনি! তবে কি সত্যিই আরাফ পাল্টে গেলো! সত্যিই কি তবে আমার প্রতি তার ভালোবাসাটা আর নেই! চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এজন্যই আমি আরাফের মায়া থেকে দুরে থাকতে চেয়েছি কিন্তু কবে, কখন, কিভাবে জড়িয়ে গেছি নিজেই বুঝতে পারিনি। চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। আজ সিহাব স্কুল যায়নি তাই আমার তাড়া নেই। আজ সবগুলোর কি হয়েছে জানি না। কেউই স্কুল, কলেজে যায়নি। আমিও জোড় করিনি। একটা দিন যাবে না যখন থাক। আমি ঘাড় ফিরিয়ে আবারও খুঁজলাম আরাফকে কিন্তু কোথাও তাকে দেখলাম না। হেনা আপা যাওয়ার সময় আমাার দিকে কেমন করে তাকালেন। নিভে যাওয়া কন্ঠে বললেন,

‘বাড়ি চল মায়া। আরাফ বোধহয় আজ আসবে না।’

‘তুমি চলে যাও আপা। আমি একটু পর যাবো।’

হেনা আপা আর কিছু বললেন না। বুঝলেন আমার কিছুটা সময় প্রয়োজন তাই চলে গেলেন। আমি ফুটপাতের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালাম। আশা একটাই যদি আরাফ আসে! দাঁড়িয়েই রইলাম৷ আধাঘন্টা বাদে আরাফ না আসলেও বড় ভাবির সাথে দেখা হলো। বড় ভাবি আমাকে দাঁড়াতে দেখে কাছে এগিয়ে আসে। আমার গাল ছুঁয়ে বলে,

‘কেমন আছিস মায়া? এখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে! কেউ আসবে?’

আমি হাসার চেষ্টা করলাম। ভাবির থেকে আশাকে নিয়ে আদর করে কোলে তুলে নিলাম। আশা আমাকে পেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে৷ ভাবির দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাবি। আপনি?’

‘এই তো আলহামদুলিল্লাহ।’

‘কোথাও যাচ্ছিলেন?’

‘হ্যাঁ রে। আশারে স্কুলে ভর্তি করাইছি তাই স্কুল থেকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। যাক দেখাা হয়ে ভালোই হলো। তন্ময়েরর সাথে দেখা হয়েছিলো তোর?’

আমি মাথা নাড়ালাম। বললাম, ‘হ্যাঁ। আড়াই মাস আগের মতো হবে। কেনো?’

ভাবি হাত টেনে কাছে এনে হারটা লাগালেন। হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘তোকে কি বলছে ‘ও’?’

‘উনার কাছে ফিরতে বলেছিলো। কিন্তু আমি মুখের ওপরই না করে দিয়েছি।’

‘খুব ভালো করেছিস।’

‘কিন্তু ভাবি হঠাৎ করে তন্ময়ের আমার কাছে আসার মানেটা কিন্তু বুঝলাম না!’

ভাবি হাসলেন। দাঁড়িয়ে আমার কোল থেকে আশাকে নিয়ে বললেন, ‘তোর সাথে তো অনেক দিন থেকে দেখা হয় না। তাই কিছু জানিসও না। তন্ময় বিয়ে করেছে মাস ৪ এর মতো হবে। আমি জানতাম না। তোর ভাই কোথাা থেকে খবর পেয়েছিলো এসে জানালো।’

আমি চমকালাম। এতোদিন আগে বিয়ে করেও আমাকে ফিরিয়ে নিতে কেনো এসেছিলো? ভাগ্যিস আমি যাইনি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তিনি আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। ভাবির দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে তিনি বললেন,

‘আরেহ তোর মতো তো ওই মেয়েকে অ’ত্যা’চা’র করতে পারে না। যা বলে তা শোনে না। শুনলাম নিতু আর শ্বাশুড়ি মায়ের অবস্থা নাজেহাল। তাই আবার তোর কাছে আসছিলো।’

ভাবি শব্দ করে হাসলেন। খিটমিটিয়ে বললেন, ‘যেমন কর্ম তেমন ফল। আল্লাহ কারো হিসেব বাকি রাখে না। সময়ে সাথে সাথে দিয়ে দেয়। আরো তো বাকি।’

আমি কোনো উত্তর দিলাম না আমি জানি আল্লাহ যা করেন তা ভালোর জন্য করেন। প্রকৃতি সবার হিসেব সময় মতো দেয় তবে যে তা এতো আগে হবে কল্পনা করতে পারিনি। ভাবি আর আশা চলে গেলেন। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। আরাফ আসবে না বুঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাস্তার এপাশে আসলাম। কতক্ষণ অনাথ আশ্রমের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ফোন টুংটাং শব্দে বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে দেখি মাহিদ। আমি ওর কল রিসিভ করতেই বলে,

‘বুবু তুমি কি বাড়িতে চলে আসছো?’

‘নাহ আসতেছি।’

‘ওহ তাহলে একটু বাজারে যেতে পারবে?’

‘কেনো? কিছু লাগবে?’

মাহিদ চিন্তিত গলায় বলে, ‘বাসায় সবজি নেই। আনতে হতো। আমি এখন যেতে পারবো না। তুমি যদি একটু যেতে! আর মোড়ে সোহান ভাই দাঁড়িয়ে আছে।’

আমি ‘আচ্ছা ‘ বলে কল কেটে দিলাম। সিএনজি নিয়ে মোড় পর্যন্ত এসে দেখি সত্যিই সোহান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। সোহান ভাই আর আমি একসাথে বাজারে গেলাম। সোহান ভাই অনেক কিছু কিনলো। আমিও টুকটাক নিলাম। বাজারে ভীড়ের জন্য আর বাজার করার জন্য প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। রাস্তাতেই আযান দিয়ে দিলো। বাড়িতে ফিরেছি প্রায় আযানের পর। কিন্তু তিন্নি বা আমাদের ঘরে আলো বন্ধ দেখে খানিকটা অবাকই হলাম। বাজারের ব্যাগ হাতেই দরজায় টোকা দিলাম কোনো সাড়া শব্দ নেই। পিছন ফিরে সোহান ভাইয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে তিনি ঘাড় উচিয়ে মুখ বাকালেন। যার অর্থ তিনি জানেন না। কয়েকবার টোকা দিতেই দরজা খুলে গেলো। ভ্রু কুঁচকে গেলো আমার। দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে কড়া গলায় বললাম,

‘এটা কি ধরনেই মজা তোদের? আলো অফ করে রেখেছিস কেনো?’

পরপর চারজনকে ডেকেও কোনো সাড়া পেলাম না। বাজারের ব্যাগ রেখে ঘরের লাইট জ্বালাতেই সবাই একসাথে চিল্লিয়ে উঠলো, ‘হ্যাপি বার্থডে বুবু।’

আমি থতমত খেলাম। পুরো ঘরের দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরিয়ে গেলো। সুন্দর করে বেলুন দিয়ে সাজানো। ছোট টেবিলে একটা ছোট্ট কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। কেকের ওপরে চকলেট দিয়ে ‘হ্যাপি বার্থডে মায়া’ লিখা। আমি অবাকের চরম পর্যায়ে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম সবার দিকে। আজ বুঝি আমার জন্মদিন! আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিন্নি আর মাহমুদা এগিয়ে আসে। স্নেহা তখন সোহান ভাইয়ের কোলে। সোহান ভাই আমার সাথে থেকেও আমাকে বুঝতে দিলো না! মাহমুদা জড়িয়ে ধরে বলে,

‘শুভ জন্মদিন বুবু। তুমি অনেক অনেক সুখী হও আর আজীবন এভাবেই আমাদের বুবু হয়ে থাকো।’

তিন্নিও জড়িয়ে ধরলো৷ আমি কি বলবো বুঝে উঠলাম না। দুজনে হাত টেনে কেকের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আমি অবাাক কন্ঠেই বললাম,

‘এসব কি? তোরা! কেমনে কি?’

মাহিদ বড় ভাইয়ের মতো মাথায় হাত বুলায়। হেঁসে বলে, ‘আমাদের জন্য এতোগুলো দিন থেকে এতোকিছু করলে আর আমরা তোমার জন্য সামান্য কিছু করতে পারবো না? মানলাম আমরা নিম্নবিত্ত তাই বলে কি প্রিয় বুবুর জন্মদিন এমনে এমনেই যেতে দিবো! এটুকু শখ বুঝি আমাদের নেই?’

আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলাম না। আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমারও একটা জন্মদিন আছে! খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠলো। সিহাব তাড়া দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে,

‘বুবু তাড়াতাড়ি কেক কাটো। আমার খিদে পেয়েছে।’

ওর তাড়া দেখে হেঁসে ফেললাম। কেক কেটে সবাই মিলে খাওয়া হলো। তিন্নি, মাহমুদা, মাহিদ, সোহান ভাই সবাই আমাকে কিছু না কিছু দিয়েছে।৷ মাহিদের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘এসব কি? এমনিতেই এতো কিছু করেছিস তারওপর আবার এতো উপহার কেন?’

মাহিদ হেঁসে বলে, ‘বাহ রে! এটুকু দিবো না! তোমার ভাই হালাল টাকা দিয়ে তোমার জন্য একটা শাড়ি এনেছে বুবু। হয়তো অতো দামী কিছু দেওয়ার মতো সামর্থ আমার নেই কিন্তু যতটুকু পেরেছি তা দিয়েছি।’

আবেগে চোখের কোণা জ্বালা করে উঠলো। চোখ মুছে তাাকাতেই সবাই একসাথে বলে,

‘আর এটা আমাদের সবার পক্ষ থেকে!’

আমি সবার হাতের ঈশারার দিকে তাকালাম। চমকে গেলাম। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম দরজায় দাঁড়ানো হাস্যজ্জ্বল চেহারার আরাফের দিকে।

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কাল ছোট করে দিয়েছিলাম তাই আজ বড় করে দিয়েছি🥹 আজকের জন্য অন্তত গঠনমূলক মন্তব্য করিয়েন🥹)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here