শ্যামারঙা,পর্ব:১৫+১৬

শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ১৫

তার গেস্ট কে যেন কোন ভাবেই বিরক্ত না করা হয়…

আর কোন ভাবে যদি তিনি জানতে পারেন আমার জন তার গেস্ট বিরক্ত হয়েছেন তাহলে নাকি আমার খবর আছে…

ওনার কথা টা শুনে আমি যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার থেকেও বেশি আমার ইগো তে লেগেছে….

রাতে খাওয়ার পর শুয়ে আছি।
মনের মধ্যে খুব অস্থিরতা কাজ করছে। খুব অন্য রকম লাগছে…
বেশ অনেক সময় ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু রুমে অন্য মানুষের পদচারণা বার বার আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে……

আমি বেশ বুঝতে পারছি মহিমা নামের মেয়েটির আমার সাথে রুম শেয়ার করতে খুব সমস্যা হচ্ছে।
তবে আমারও কিন্তু কম সমস্যা হচ্ছে তা কিন্তু নয়….
তবে আমি সেটা নীলাদ্রি দা র কথায় মেনে নিয়েছি…..

যে আমি সারাজীবনে কোন পরিচিত কারোর সাথে রুম শেয়ার করিনি সেই আমিই এখানে এসে আজ এই অপরিচিত একজনের সাথে রুম শেয়ার করছি……

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সারারুমে কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে..
কাপড় গুলো তুলতে গিয়ে দেখি কাপড় গুলো একটিও আমার নয়।
আর এগুলো যেহেতু আমার নয় তাই ভাবলাম এগুলো হয়তো মহিমার কাপড়…..

কাপড় গুলো এক এক করে বেডে রাখছি আর রুমে মহিমাকে খুজছি….
কিন্তু পুরো রুমে সে কোথাও নেই…

তাকে রুমে না পেয়ে আমি কাপড় গুলো তুলতে লাগলাম…..

তখনই মহিমা রুমে এলো….
আর সাথে পেছনে নীলাদ্রি দা এলেন….

আমি মহিমাকে দেখে বললাম..

—-আপনার কাপড় গুলো সব নিচে পড়ে ছিলো ।।।
তাই এগুলো আমি তুলে দিচ্ছি….

আমার এই কথায় নীলাদ্রি দা খুব রেগে বললেন…

—- মিথ্যা কেন বলছিস….

—- মিথ্যা??
কোথায় আমি আমি বলছি…

— কাপড় গুলোতে তুই ফ্লোরে ফেলেছিস আর যখনই দেখলি মহিমা আমাকে ডাকতে গেছে তখনই এই নাটক করছিস…..

—- এসব আপনি কি বলছেন……
আমি মিথ্যা বলছিনা আর কোন নাটক ও করছি না…
আর এগুলো করবোই বা কেন….

—– কেন করবি??
তোর তো মহিমাকে সহ্যই হচ্ছে না….

—- এখানে সহ্য অসহ্য করার কথা আসছে কেন….
আমি তো আপনার কথা মেনেই চলছি….

আমাদের কথার মাঝেই আমাদের সাথে যারা এখানে এসেছে তারা সবাই চলে এসেছে আমাদের রুমে……

তাদের সামনেই নীলাদ্রি দা আমাকে যা খুশি তাই বলে বকেছে অপমান করেছে আর আমি চুপচাপ সব শুনেছি……

বকাবকির মাঝেই নীলাদ্রি দা বললেন…

—-মেঘা তুই খুব ছেলে মানুষী করিস এটা আমি কেন এখানে উপস্থিত সবাই যানে….
কিন্তু আমার গেস্ট এর সাথে তুই এমন একটি বেয়াদবি করবি আমি ভাবতে পারিনি….

আমারই ভুল হয়েছে তোকে এখানে নিয়ে আসা….
আর আমিতো তোকে আনতেও চাইনি…
নেহাৎ মিরাজ আর মনিরা বলেছিল তাই……

আর এই সব কাজ তুই করবিই না কেন।??
তোর তো সুন্দরী মেয়েদের দেখলে হিংসা হয় কারণ তুই তো # শ্যামারঙা……..

কথাটা শোনার সাথে সাথেই চোখের জল গুলো বাধ ভাঙ্গা জলাশয়ের মত মুখ বেয়ে পড়তে লাগলো……

আর যাই হোক যে ভুল নিজে করিনি তার জন্যই আমাকে এত কথা শুনতে হলো তাও আবার নীলাদ্রি দার কাছ থেকে।।।
যাকে কি না আমি ভালোবাসি……

আর এই এত কিছুর মধ্যে মহিমা একটি কথাও বলেনি…..
কেন বলেনি এটা আমার জানা নেই……

নিজেকে খুব কষ্টে সামলে..
সেখানে উপস্থিত সবাইকে সরি বলে..

সাথে সাথেই নিজের কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্য রুম থেকে বেড়িয়ে পরলাম….

আর যাই হোক যেখানে আমার কথা শোনার কেউ নেই সেখানে থাকার প্রশ্নই আসে না…….

আমি বেরিয়ে আসায় নীলাদ্রি দা আর মহিমা বাদে সবাই আমাকে আটকাতে আসে কিন্তু আমি কারোর কথায় পাত্তা না দিয়ে যখনই রিসোর্টের থেকে বেরিয়ে যাবো
তখনই সামনে অতি পরিচিত একটি মুখ দেখে থমকে দাড়ালাম……

কেন বুঝতে পারছি না..
সব অবাক করা অবিশ্বাস্য কান্ড কেন আজই আমার সাথে ঘটছে….
যাকে আমি এখানে আশাই করিনি আর এখানে কেন আমার বাকি জীবনে তাকে আর সামনে নিজের চোখে দেখবো বলে ভাবিনি সেই মানুষটাই আমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে…….

চলবে…..

শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ১৬

যাকে আমি এখানে আশাই করিনি আর এখানে কেন আমার বাকি জীবনে তাকে আর সামনে নিজের চোখে দেখবো বলে ভাবিনি সেই মানুষটাই আমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে…….

পথ আটকে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি এমন একজন মানুষ যে একসময় এই #শ্যামারঙা কে ভালোবাসতেন….

এখন আমি মিরাজ ভাই আর মনিরার রুমে বসে আছি।তারা আমাকে অনেক ভাবে বোঝাচ্ছেন..
এখান থেকে না জন্য।

আর আমি একা একটি মেয়ে এত দূরের পথ একা একা যাবোই বা কিভাবে।আর খুলনা পৌছে সবাই কেই বা কী উত্তর দেব…..

তাদের কথায় আমি কিছু টা শান্ত হলেও আমার মন আর চোখ কোন ভাবেই শান্ত করতে পারছি না….

আমার মাথায় কিছুতেই আসছে না
মহিমার কাপড় এমন ভাবে কে ফ্লোরে ফেললো আর মহিমাই বা কেন আমাকে বকার সময় নীলাদ্রি দা কে কিছু বললো না….

তাহলে কি মহিমা নিজেই বা ইচ্ছে করে আমাকে নিয়ে নীলাদ্রি দার কাছে মিথ্যা বলেছে….
কিন্তু কেন…….?

আর সবচেয়ে বড় কথা এই মূহুর্তে এই স্থানে আমার অতীতই বা কি করছে….
আমার সাথে আজ এই গুলোই বা কী হচ্ছে…..

একেই মন ভালো নেই তারওপর এই সব ভাবতে ভাবতে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে….

সারাদিন না খেয়ে মন খারাপ করে শুয়ে ছিলাম মিরাজ ভাই আর মনিরার রুমে।
কিন্তু দুপুরে মনিরার অনেক জোরাজুরিতে খাবার খাওয়ার জন্য রিসোর্টের হোটেলে যেতে হলো। খাবার সামনে আছে তবে খাবারের দিকে আমার মন নেই আমার শুধু একটাই কথা মনে হচ্ছে আজ এগুলো কী হচ্ছে এবং কেন হচ্ছে???

হঠাৎ কেউ আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলেন.
পাশে তাকাতেই দেখি মুগ্ধ দা মানে আমার অতীত….

আচ্ছা আসলেই কি তিনি আমার অতীত নাকি কখনো অতীত হনই নি…..

তিনি তো একতরফা ভাবে আমাকে ভালোবেসেছিলেন।আর এই একতরফা ভালোবাসাই আমার আর তার জীবনে কাল বয়ে এনেছিলো……

মুগ্ধ দায়ের ডাকে আমার খেয়াল হলো। তার দিকে এক পলক তাকিয়ে আমি আবার মাথা নিচু করে নিলাম…
চাই না আমি কাউকে আমার জীবনের মায়ায় জড়াতে….

তাই খাবার না খেয়েই সবাইকে “আসছি ” বলে রুমের দিকে যাচ্ছিলাম কিন্তু সামনে নীলাদ্রি দাকে দেখে পথ পাল্টে রিসোর্ট থেকে বেড়িয়ে পড়লাম…..

এখন আমাকে সমুদ্র খুব টানছে..
এখানে তো ঘুড়তেই এসেছি তাই সবদিক বাদ দিয়ে ঘুরাঘুরির দিকে ফোকাস করাটাই আমার কাজ…..

এখন আমরা সবাই আবার বাসে বসে আছি।আজ এক সপ্তাহ পর আবার সবাই আগের দিনের মতো একসাথে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছি…
আসার দিনের মতো সবাই যে যার সিটেই বসেছে…

আমিও আমার সিটে বসেছি।তবে সমস্যা হচ্ছে আজও কি নীলাদ্রি দা আমার পাশে বসে যাবেন….

যে মানুষটার সামনে ওই কয়দিনে আমি একটিবারও ইচ্ছাকৃতভাবে যায়নি বা পড়তে চাইনি….
আর আজই তার সাথে পাশাপাশি বসতে হবে
কই আসার দিনতো এমন হয়নি বা লাগেনি আর আজ এমন লাগছে…..

আমার ভাবনার ছেদ পড়লো নীলাদ্রি দার কথায়।এই কয়দিন মানুষটাকে দেখিনি কিন্তু মনে হচ্ছে যেন কতদিন তাকে দেখিনি….

আমার পাশের সিটে নীলাদ্রি দা বসলেন।
আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে আছি।
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে নীলাদ্রি দা বলে উঠলেন…..

—– মেঘা৷
আগের দিনের ওই ব্যাবহারের জন্য আমি সরি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিস….
আসলে সেদিন একটু বেশি ভায়োলেন্ট হয়ে গেছিলাম তাই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি….

—- কারোর মনে কষ্ট দিয়ে,তাকে বিশ্বাস না করে, অপমান করে পরে সরি বললেই কি সব মিটে যায়….

প্লিজ আমার মন এত বড় নয় যে সামান্য সরিতে গলে যাবে…..

বলে আমি কানে হেডফোন দিয়ে সিটে মাথা এলিয়ে বসে রইলাম। মনে মনে খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু প্রতিবার কি তারা তাদের ইচ্ছে মতো আমাকে হেনস্তা করবে।
যেখানে আমার কোন দোষ নেই সেখানে কেন প্রতিবার আমি তাদের অপমান সহ্য করতে যাবো।

সেবার তার পিসিমনি কি আমাকে অপমান, হেনস্তা কম করেছিলেন যে এবার তিনি তার শোধ নিলেন…..

এসব ভাবতে ভাবতে সেই অতীতের ছয় বছর আগের ভাবনায় চলে গেলাম…

সেবার আমি আর নবু সবে মাত্র ক্লাস নাইনে উঠেছি।
বেশ দুষ্ট ছিলাম তখন আমরা…. সব সময় দুষ্টমিতে আমরা মেতে থাকতাম।

আমার তখন সারাদিনই নবুদের বাড়িতে কাটতো।
আমার ইচ্ছে বা মন না চাইলে আমি আমাদের বাড়িতে যেতাম না…
আর কেউ আমাকে এখান থেকে যাবার জন্য বলতোও না।।।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here