#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ১৯
তখন তাকে অভয় দিলে সে প্যাকেট টা খোলে এবং উপহারটি দেখে সবাই মানে যারা গত বছরের ঘটনাটি জানে তারা অবাকের শীর্ষে পৌঁছে যায়….
আর আমার মুখে ফোটে বিজয়ের হাসি….
গিফটের প্যাকেটে ছিলো তার গত বছর জন্মদিনে পাওয়া সেই ফুলদানি টি….
ফুলদানি টি দেখে নীলাদ্রি দা আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন…
আর বললেন…
—- তুই এই ফুলদানি টি কোথায় পেলি।আর এটাতো বিদেশি প্রডাক্ট দেশে পাওয়া কী সম্ভব??
— আমি তার কথায় শুধু হাসলাম মাত্র।
—- হেয়ালি করিস না মেঘা,
প্লিজ উওর দে?
— এটা দেশে পাওয়া যায় অসম্ভব কিছু না..
আর এটা কেনার জন্য আমার বিন্দুমাত্র সময় বা কষ্ট করতে হয়নি….
তোমরা যেমন অতি সহজে আমাকে অপমান করেছিলে ঠিক তেমনই অতি সহজে এটা আমি পেয়েছি….
— এটা কোথায় পেলি রে মা( বড়মা)
—- কোথায় আবার গত মাসে আমি যখন আমার কাজিনের বিয়েতে গেলাম।তখন সে আমাকে তার বিয়ের শপিংয়ে নিয়ে যায় আর সেখানে আর সেই মলের এক কোনে ছোট একটি শো-পিসের দোকানে এটা আমি পাই….
আর এটা দেখে আমার খুব পছন্দ হয় তাই কিনেছিলাম। আর এটা কিন্তু এক দামে কেনা।কোন রকমের দরদাম বা দর- কষাকষি করি নি….
কারণ এর যা দাম তাতে দর দাম করলে বেচারা বিক্রেতার কোন রকমের লাভই হোত না।
আর এর যা দাম ছিলো তা দিয়েতো আমি এমন ফুলদানি অনেক গুলো কিনতে পারতাম।তবে আমার তো এটাই পছন্দ ছিলো……
ও হ্যা তোমাদের সুবিধার জন্য দাম টাও বলেদি।
এটার দাম মাত্র তিনশো টাকা নিয়েছে..
যদি বিশ্বাস না হয় তবে ওটায় দামের ট্যাগ লাগানো আছে দেখে নিও…..
এবার আমি পিসিমনির দিকে গেলাম।
—- কেমন আছেন পিসিমনি।আর এবার পিসাই কি উপহার পাঠিয়েছেন নাকি এবারও আগের বারের মতো উপহার দেরি করে আসবে…
আর আসলেও এবার যেহেতু আমি এবাড়িতে থাকবো না তাই পারলে গিফটের ছবি আমাকে পাঠিয়ে দিবেন……
—- তুই কিন্তু আমাকে সকলের সামনে অপমান করছিস…
—ও তাই বুঝি,তাহলে আরেকটু অপমান সহ্য করুন প্লিজ…
— কি বলতে চাইছিস তুই..
— পলা মাসি( এবাড়িতে কাজ করেন)
পলা মাসি তুমি ভেতরে আসো। এখন তোমার বলার সময় এসেছে…
— এসব কি করছিস( মা)
—- করলেই দেখতে পাবে।
পলা মাসি সেদিন যা যা হয়েছিল প্লিজ এখন সব বলো…..
—- হ্যা আজ আমি সব বলবো,
আসলে সেদিন যখন মেঘা মামনি নিচে খাবার খাইতে গেল দেরি করে। তারপর আমি নীলাদ্রি বাবার ঘরে যাই ঘর পরিষ্কার করার জন্য।তখন ওই ফুলদানি টা আমার হাতে লাইগে পইরা যাইতে নেয়…
কিন্তু আমি ধরে ফেলাই। সেই সময় অনু দিদি মনি কই থেইকা আইসা কইলো…
—– ধরলি কেন।পড়ে গেলে তো খারাপ হতো না….
— এই সব আপনে কি কন দিদি মনি…
—- ঠিকই তো বলছি…
আরে কেউ তো দেখতো না আমি বাদে….
— মানে কী কন আপনি..?
— দেখবি…
এই দেখ…………
—- এইটা আপনি কি করলেন। এর দামি জিনিসটা ভেঙে ফেললেন…
—- এটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না..
তুই শুধু তোর মুখটা বন্ধ রাখ..
এতে তোর যা লাগবে আমি দেব……
এই কথা গুলো সবার দৃষ্টি পিসিমনির দিকে…..
আমি শুধু পিসিমাকে বললাম…
—- আমি জানতাম আপনি আমাকে পছন্দ করেন না তবে এ জন্য এত বড় একটি দোষারোপ না করলেও পারতেন…..
আপনারা সবাই আমাকে মাফ করে দিবেন।
আপনাদের এই সুন্দর সন্ধ্যাটা নষ্ট করার জন্য….
বলেই আমি সেখান থেকে বেড়িয়ে এলাম।আজ অনেক দিন পর নিজেকে খুব হালকা লাগছে…..
এর কিছু দিন পর একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময়। কে যেন পেছন থেকে আমাকে ডাকছে।
পেছন ফিরে দেখি মুগ্ধ দা দাঁড়িয়ে আছেন।
ওনাকে এই সময়ে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম….
— আপনি এখানে।নবু কে নিতে এসেছিলেন নাকি কিন্তু নবু তো আজ স্কুলে আসে নি….
—- জানি।
আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি….
—- আমাফ সাথে।কেন?
ও…সেদিন পিসিমনিকে ওই কথা গুলো বলেছিলাম। সেজন্য এসেছেন….
— না,
সেদিনের কাজের জন্য আমি বেশ খুশি হয়েছি….
— কেন??
— সব সময় যে তার মত বা বুদ্ধি কাজে লাগবে এমনটাতো নয়…
এভাবে কথা বলতে বলতে আমরা বাসায় চলে এলাম….
এরপর প্রায় প্রতিদিনই তিনি নবুকে স্কুলের থেকে নেওয়ার অজুহাতে আমার সাথে দেখা করতেন কথা বলতেন….
এভাবে কেটে গেল প্রায় একবছর।
সেবার আমি ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
তখন একদিন আমাদের বাসায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আর সেই অনুষ্ঠানে সবার সামনেই মুগ্ধ দা আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন….
চলবে……
#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ২০
এভাবে কেটে গেল প্রায় একবছর।
সেবার আমি ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
তখন একদিন আমাদের বাসায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আর সেই অনুষ্ঠানে সবার সামনেই মুগ্ধ দা আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন….
মুগ্ধ দার কথায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মধ্যেই কেমন একটা নিরবতা শুরু হলো। আর আমি তো অবাকের যে স্থানে পৌছেছি তা বলাই বাহুল্য।
আমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুগ্ধ দা আবার বললেন…
— অনেক দিন যাবৎ কথাটা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি।ভেবেছিলাম তোমার মাধ্যমিক শেষ হলে তোমাকে জানাবো কিন্তু আমার পক্ষে আর তা সম্ভব হলো না।আমি আজ নিজেকে কোন ভাবেই আটকাতে পারলাম না।
আমি প্রেমে বিশ্বাসি নই তাই বিয়ের প্রস্তাব দিলাম…..
ওনার কথায় আমি কী বলবো সেই ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না।যেখানে আমার বাবা- মা আমার পরিবার উপস্থিত আছে সেখানে আমি কীভাবে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে মতামত দিই।
আর আমিতো মুগ্ধ দা কে নিয়ে কখনোই তেমন কিছু ভাবিনি।
তারপর ও আমি মুগ্ধ দাকে বললাম…
— দেখুন মুগ্ধ দা, আমি আপনাকে নিয়ে কখনোই এমনটা ভাবিনি…
— এভাবে বলো না।…
. তখনই কোথা থেকে পিসিমনি বাজপাখির মতো এসে আমাদের সামনে দাড়ালেন।
আমি পিসিমনিকে দেখে সেখান থেকে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালাম। পিসিমনি তখন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন….
—- সেবার সবার সামনে আমাকে অপমান করে তোর সাধ মেটে নি যে এবার আমার ছেলে টাকে ফাসালি।
— আমি কিন্তু এসবের কোন কিছুই জানতাম না…
—- আর ন্যাকামি করতে হবে না,সেদিন সবাইকে কী না কী বলে আমাকে সবার সামনে অপরাধী বানালি,আর এখন আবার আমার সর্বনাশ করতেই মুগ্ধ কে ব্যাবহার করছিস।
আর করবিই বা না কেন। তুই তো # শ্যামারঙা
না আছে কোন রূপ না আছে কোন গুণ। তোর মতো মেয়ের কাছ থেকে এর থেকে বেশি আর কী আশা করা যায়….
— মা প্লিজ, তুমি এভাবে মেঘার সাথে কথা বলতে পারো না( মুগ্ধ দা)
—- বাহ,,,,,এইটুকুতেই এই।এখনই এই #শ্যামারঙা মেয়ের হয়ে তুই কথা বলছিস….
বলেই উপস্থিত সবার সামনে তিনি আমাকে চড় মারলেন।মানে তার কাজটা হচ্ছে এমন৷ ” ঝি কে মেরে বৌকে শেখানো ”
এরপর আমি সব কিছু সহ্য করে পিসিমনি কে বললাম….
— আপনি আমার গুরুজন বলে এত কিছুর পরও আমি চুপ করে আছি।তবে ভাববেন না ভবিষ্যতে যদি কখনো এমন করেন।
তাহলে আমার থেকে খারাপ কিন্তু আর কাউকে দেখবেন না…
আর আমি যেমনই হই না কেন আমাকে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।
আর বলে রাখি যদি সৃষ্টিকর্তা আমার কপালে ভালো কিছু লেখে থাকেন তবে আপনার ছেলের থেকে ঢের ভালো কাউকে আমি জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবো…..
বলেই আমি সেখান থেকে চলে এলাম,
এরপর অনেক গুলো দিন গেটে গেছে আর তার মধ্যে একটি দিনও যায়নি যেখানে লোকের কটু কথা আমাকে শুনতে হয়নি। আর মুগ্ধ দা তো আছেনই যিনি সব সময় আমাকে তার মনের অনুভূতি ব্যক্ত করার চেষ্টা করেন নি….
শুনেছি যদি কেউ সত্যি ভালোবাসে তাহলে তার ভালোবাসার মানুষকে বারবার তার মনের কথা বলতে কষ্ট পান না বা হাপিয়ে যান না।
কিন্তু মুগ্ধ দা মাত্র তিন মাসেই যেতে না যেতেই সব কিছু ভুলে গেলেন
আর চলে গেলেন তার বাবার কাছে ইংল্যান্ডে।
আর আমিও সেই সাথে নিজেকে সামলে নতুন ভাবে বাচতে শুরু করলাম।
হঠাৎই কারোর স্পর্শে আমার চেতনা ফিরলো।চোখ মেলে তাকাতেই দেখি নবু দাঁড়িয়ে আছে।
— কি রে কি হয়েছে কিছু বলবি…..
—রাতের খাবার দেওয়া হবে সবাই বাসের বাইরে অপেক্ষা করছে। তুই বাইরে যাবি নাকি এখানে দিয়ে যাবো….
—- যদি পারিস আমাকে এখানে দিয়ে যা..
— আচ্ছা, দাড়া আনছি।
কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোন বের করে দেখি রাত বারোটা বাজে। তার মানে এতগুলো সময় অতীতের কথা ভাবতেই কেটে গেল।।।।
অতীত গুলো এমনই হয় যখন জীবনে চলমান থাকে তখন সেগুলো সহজেই যেতে চায় না আর যখনই সেই সময় গুলো কেটে যায়।
কত সামান্য সময়েই সেগুলো ভেবে ফেলা যায়….
— এই নে খাবার এনেছি…
—- দে,তবে দুটো প্যাকেট কেন..
— একটা তোর আর একটা আমার।
— তুইও আমার সাথে খাবি?
— আমি জানি তোর মনটা ভালো নেই।
আসলে সেদিন ওই ভাবে দাদাভাই সবার সামনে যে ওমন ব্যাবহার করবে তা বুঝতে পারিনি রে…..
আর তারপর থেকে তো তুই আমাদের সাথে দেখাই করতি না।
অনেক বার তোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।
—- আমার ভালো লাগা বা খারাপ লাগায় কেউ তো দাম দেয়নি কখনো। আর আমার এখান এগুলো সয়ে গেছে রে…
বাদ দে..অন্য কিছু বলার থাকলে তাই বল…
—- হুমম বলার আছে তবে আমার নয়….
চলবে……