#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ২৩
হঠাৎই একটি নিস্তব্ধ স্থানে নীলাদ্রি দা গাড়ি থামালেন। আশেপাশে বেশ কয়েকটি বাইক আর গাড়ি দেখা যাচ্ছে তবে কোন মানুষ নেই।
তার দিকে আমি জিজ্ঞাসু ভাবে তাকালে তিনি বললেন….
— কাজ আছে…
তারপর নিজে গাড়ি থেকে বেরোলেন আর এসে আমার সাইডের ডোরটা খুলে বললেন..
— বাইরে আয়…
—কেন?
—- বললাম না কাজ আছে….
নদীর পাড়টা অনেক সুন্দর। বেশ অনেক গুলো নৌকো সেখানে বাধা রয়েছে। কিছু লোক জন কে দেখছি মাঝি মামাদের সাথে দরকষাকষি করছেন।
বিষয়টি ভালোই লাগছে। অনেক দিন মুক্ত বাতাসে স্নিগ্ধ পরিবেশে শ্বাস নেওয়া হয় না।
তাই চোখ বন্ধ করে সময়টাকে উপভোগ করছি।
তখন নীলাদ্রি দা এসে বললেন।…..
—-তাড়াতাড়ি চল…
—-কোথায় যাবো..
—- বললাম না দরকার আছে।দেরি করলে কিন্তু হাতছাড়া হয়ে যাবে….
আপনি আমাকে এই ভাবে এখানে না আনলেও পারতেন।আপনি জানেন আমি সাতার কাটতে পারি না।আর এখানে যদি পরে যাই।তখন কি হবে…
—- পরে যাবি কেন? আমি আছি না।
আমি প্রটেক্ট করবো তোকে।
—- সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠিয়ে না খেয়ে আপনার সাথে বেরিয়ে গেলাম।কি তাড়াহুড়োটা দিলেন আর এখানে এনে আমাকে নৌকা ভ্রমণ করাচ্ছেন।
— জানিস
এই নৌকাটা ঠিক করতে আমাকে কর কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। ডাবল টাকাও দিতে হয়েছে।
তারপরও এরা বলেছিলো টাইম মতো না আসলে নাকি ওরা অন্য লোক নিয়ে নিবে।তাই তো তোকে এভাবে নিয়ে এলাম….
— তা এখানে আনার কারণ?
— কারণ তো অবশ্যই আছে।
— সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।
— এখনও কী রেগে আছিস।
— রেগে আছি কিনা জানি না। তবে রাগ করাটা কী আমার উচিত ছিলো না….
— আসলেই আমি ওই দিনের ব্যবহারের জন্য খুবই লজ্জিত….
—- তারপর…
— তারপর…
যদি বলি আজ তোকে এখানে তোর আমার প্রতি রাগ কমানোর জন্য এখানে এনেছি…
শুনেছিলাম..
মেয়েরা নাকি রাগ করলে তাদের রাগ উপহার দিলে জল হয়ে যায়।তবে কেন যেন হলো তোকে উপহার দিলে কাজ হবে না।
কারন,আগেও একটি উপহার দিয়েছিলাম কিন্তু সেটা তুই আজও পাড়িস নি।
তাই অনেক ভেবে চিন্তে এখানে আসার জন্য প্ল্যান করলাম….
—- ভালো করেছেন..
— মন ভালো হয়নি?
— সেটা তো মন জানে,
আমি কি করে জানবো।
— তাও তো,
আচ্ছা তোর কি ক্ষুধা লাগছে?
— আমি কী রোবট নাকি যে লাগবে না…
—- তাহলে কি এখন খাবার খাবি?
— খাবার বলতে কী আপনি নদীর জলকে বোঝাতে চাচ্ছেন?
— না,না,সেটা কেন বলবো…
তোর জন্য তো তোর পছন্দের খাবার আছে…
—- আপনি জানেন..
আমার পছন্দের খাবার কী??
দুপুর নাগাদ আমরা পিসিমনিদের বাড়িতে পৌছালাম।
আমাদের দেখে সবাই খুব খুশি।
কেন জানি না আমাকে দেখে নবুর চোখ মুখে দুষ্টুমির ঝলক দেখা দিচ্ছে….
আমাদের দেখে পিসিমনি বললেন….
—- যা তোরা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি।খাবার রেডি করছি।
কতটা পথ জার্নি করে এলি বেশ কষ্ট হয়েছে….
যা যা আর দেরি করিস না..
রুমে যেতেই নবু আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে…
— হাসছিস কেন? মেজাজ টা গরম আছে কিন্তু
–কেন বন্ধু..
— কেন আবার জিজ্ঞেস করছিস।কাল বললি তোরা আমাকে নিয়ে আসবি। দশটার মধ্যে তৈরি থাকতে বললি।আর কি করলি?
—- আমরা তোমাকে বোকানা দিলে তুমি কি আজ ডেটে যেতে পারতে?
— ডেট??
— আরে এতে রিএক্ট করছিস কেন।
তোরা ঘুরতে গিয়েছিলি তাই মজা করে বলিলাম আর কি….
ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে এসে দেখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
— আপনারা এখনো খাওয়া শুরু করেন নি…
— তুই আমাদের এই বাড়িতে প্রথম এলি।
আমার অতিথি আর আমরা তোকে রেখেই শুরু করবো…
—- ঠিক আছে।
আচ্ছা পিসিমনি পিসাই করে আসবে?
— আগামি সপ্তাহে আসবে।
খাবার শেষ করেই রুমে এসে আমি শুয়ে পড়লাম।
খুব ঘুম পেয়েছে…
বিকেলে ঘুম থেকে উঠে নিচে গিয়ে দেখি সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে আর আড্ডার মধ্যেমনি হচ্ছে মহিমা মানে বৌমনি…
আমি গিয়ে সোফায় বসতেই সবাই আমার দিকে নজর দিল।সবাই অবাক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে…..
— কি হয়েছে..
তোমরা দিকে এভাবে কেন তাকিয়ে আছো কেন…
— মেঘা আমি তো আজ তোমাকে অনেক দিন পর দেখলাম।কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে তুমি আজ খুব ব্লাস করছো…কাহিনি কি( বৌমনি)
—আহা বৌমনি ব্লাস তো করবেই
আজ তো সে মুক্ত হাওয়া খেয়ে,নদীর জল খেয়ে ডেট করেছে…(নবু)
—-ডেট?( বৌমনি)
নবু বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু….
— মানে ঘুরতে গিয়েছিলো।( নবু)
— কার সাথে। কে সে??
তোমরা নরমাল বিষয়টাকে নিয়ে এমন করছো কেন?
আর নীলাদ্রি দা আমায় নিয়ে গিয়ে গিয়েছিলো যদি কিছু বলার থাকে তবে তাকে বল…
ভালো লাগে না….
ওকে ওকে সবাই চুপ।এবার আমাদের প্ল্যান করতে হবে…
— কিসের গো(নবু)
— কিসের আবার আমাদের বিয়েরর..
আমিট ভেবেছি আগামি কাল বা পরশু যাবো আমরা।
বেশ টাইম নিয়ে শপিং করবো মানে ঘুরবো বেশি শপিং করবো কম…
শপিংয়ের কথা শুনে মুগ্ধ দা আর নীলাদ্রি দা সেখান থেকে মানে মানে কেটে পরলেন…
চলবে….
#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ২৪
শপিংয়ের কথা শুনে মুগ্ধ দা আর নীলাদ্রি দা সেখান থেকে মানে মানে কেটে পরলেন…
বেশ কিছু সময় আড্ডা দেবার পর মহিমা বৌমনি আর মুগ্ধ দা বাইরে চলে গেলেন।
আসলে মুগ্ধ দা আজ অফিসের কাজে সেখানেই থাকবেন তাই মহিমা বৌমনি ও তার সাথে চলে গেলেন নিজের বাড়িতে….
পিসিমনি ও বাড়িতে নেই তিনি বিকেলে বেরিয়েছেন ওনার বান্ধবীর বাসায় গেছেন ছেলের বিয়ের নিমন্ত্রণ দিতে….
তাই এখন এবাড়িতে আমরা তিন জন আছি…..
একটু পর নবু এসে বললো আজ নাকি পিসিমনি ফিরতে পারবেন না।তাই তিনি বলে দিয়েছেন ক্ষুধা পেলে অনলাইনে কিছু অর্ডার করে নিতে….
এই খবর শুনে নবুর ক্ষুধা যেন কয়েক গুন বেড়ে গেছে।খবরটা আমাকে দিয়ে মন খারাপ করে আমার পাশে বসে আছে। মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করায় বললো……
—- আমার না খুব ক্ষুধা পেয়েছে..
—- ঠিক আছে,কিন্তু আমি কী করতে পারি।
—- তুই এক কাজ কর আমাকে খাবার তৈরি করে দে।
— কিহহহহ….
এ বাড়িতে তো আমি নতুন। কোথায় কি আছে কিছুই তো জানি না। আর পিসিমনিকে না জানিয়ে এই কাজ করলে তিনি যদি রেগে যান….
—- কিছু হবে না..
তখনই নীলাদ্রি দার ডাক কানে এলো।
সাড়া দিতেই তিনি বললেন..
— খুব টায়ার্ড লাগছে আর মাথাটা খুব টাস টাস করছে একটু কফি করে দিবি তোরা কেউ…..
—- হ্যা রে দাদাভাই একটু ওয়েট কর। মেঘা তো এক্ষুনি কিচেনে যাচ্ছিলো।তোকে ও কফি করে দেবে…
— — আচ্ছা একটু তাড়াতাড়ি…
কি হচ্ছে এগুলো। এদের কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন আমি এ বাড়ির কর্তি।
তাই এরা আমাকেই সব বলছে।
যেখানে এবাড়ির কোন কিছুই আমি চিনি না জানি না….
খুব চিন্তা নিয়ে কিচেনে যাচ্ছি কোথায় কি আছে কিছুই তো জানি না..
তবে কিচেনে গিয়ে আমি বেশ অবাক হলাম আওব কিছু বেশ গোছালো। আর সব কিছুর বয়ামের গায়ে সেই পণ্যের নাম লেখা রয়েছে সাথে জায়গা মতো সাজানোও…..
গ্যাসের চুলায় পাত্রে করে জল বসিয়ে দিলাম গরম হবার জন্য। এবার কফি পাউডার খোজার পালা।
সেটাও অতি সহজে পেয়ে গেলাম….
জল ফুটতেই বানিয়ে নিলাম তিন মগ কফি।
দু হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে উপরে গেলাম।
নবুকে কফি দিয়ে গেলাম নীলাদ্রি দার রুমে।
গিয়ে দেখি তিনি যেন কার সাথে ফোনে কথা বলছেন।
আমাকে দেখে ইশারায় দাড়াতে বললেন।
আমিও দাড়ালাম।
কথা শেষ হতেই বললাম…
—-আপনার কফি..
— চিনি দিয়েছিস..
— না..
— কেন?
— আমি জানি আপনি চিনি ছাড়া কফি খেতে পছন্দ করেন তাই….
আমার কথায় উনি হেসে দিলেন আর হাত বাড়ালেন কফি নেবার জন্য…
কফি দিয়ে আসার সময় জিজ্ঞেস করলাম..
— রাতে কী খাবেন?
মানে কি রান্না করবো..
—নবু কি বলেছে..
— ও বলেছে আপনার কাছে শুনতে।
— আচ্ছা তুই এক কাজ কর।
খিচুড়ি আর চিকেন কষা রান্না কর…
পারবি তো??
— পারবো কি না জানি না তবে চেষ্টা করতে পারি….
অনেক কষ্টে একা একা সব কিছু জোগার করে প্রায় দেড় ঘন্টা কসরত করে তারপর তৈরি করলাম খাবার।
জানি না কেমন হয়েছে…
টেবিলে সবকিছু রেডি করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দশটা বাজে।
কপালের ঘাম মুছতে মুছতে রুমে গেলাম।
আমাকে ওড়নার আঁচলে ঘাম মুছতে দেখে নবু বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
ওর তাকানোতে অন্য সময়ের মতো দুষ্টমি নেই…
ওর এইভাবে তাকানোতে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে..
তাই বললাম…
— এমন হাবলাম মতো তাকিয়ে আছিস কেন? মুখে তো মশা ঢুকে যাবে…
— তোকে দেখছি..
—- কেন আমার কি রূপ বেড়েছে নাকি?
— সেটাই তো দেখছি…
— মানে।
— তোকে না আজ একদম গিন্নী গিন্নী লাগছে।
শুধু হাতে শাখা,পলা,আর কপালে টিপ আর সিথিতে সিদুরের কমতি…..
ওর এমন কথা শুনে আমার কান দিয়ে ধোঁয়া ওঠার অবস্থা…..
ওরা দুই ভাই বোন বসেছে।
আমি ওদের পরিবেশন করছি।
ওদের খাবার দেওয়ার পর নীলাদ্রি দা আমাকে বললেন…
— তুই বোস..
— আপনারা খেয়ে নিন, আমি পরে খাবো..
— একা খাবি কেন এখনই বোস…..
পরদিন সকাল বেলায় পিসিমনি চলে এলেন সারাদিন অলসভাবে সময় কাটানোর পর বিকেলে আমরা চারজন মানে নবু,মুগ্ধ দা,নীলাদ্রি দা আর আমি ঘুড়তে যাবো।
তবে পথে মহিমা বৌমনি ও আমাদের সাথে যোগ দিবেন।
আমরা তিন জন সোফায় বসে আছি কিন্তু নীলাদ্রি দার কোন খোজ নাই।
মুগ্ধ দা বারবার আমাদের তারা দিচ্ছেন কিন্তু আমাদের তারা দিয়ে লাভ কি আমরা তো তৈরি হয়ে বসে আছি……
আমি নবুকে বললাম..
— — যাতো তোর দাদাকে ডেকে নিয়ে আয়তো। কি যে করছেন কে জানে।
মেয়েদের থেকেও বেশি সময় লাগাচ্ছেন কেন উনি…..
—- আমি পারবো না তোর দরকার হলে তুই যা ডেকে নিয়ে আয়…
তখন মুগ্ধ দা ও বললেন…
— যাও তো মেঘা ওই বেটা মেকাপ সুন্দর কে ডেকে আনো তো….
কি আর করা যেতে হবে তো আমাকেই।
ওনার রুমের সামনে গিয়ে দাড়াতেই মনে হলো কেমন যেন একটা চাপা কথার আওয়াজ পেলাম।
তাই খুব সাবধানে দরজার কাছে কান পাতলাম।
বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু কই কিছু তো শুনতে পাচ্ছি না।
হঠাৎ মনে হলো নাকে অনেক সুন্দর মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে…।ঘ্রাণটার ঝাঝে কেমন যেন একটা ঘোর লেগে আসছে।মনে হচ্ছে যেন আমার নেশা হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু কোন কথা কানে আসছে না কেন?
মাথা ঘুড়িয়ে দরজার দিকে তাকাতেই আমার মর মর অবস্থা….
একি নীলাদ্রি দা এখানে কেন দাড়ানো কেন?
তারমানে কী আমি এর সময় দরজায় নয় ওনার বুকে কান মানে মাথা ছুইয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম……
চলবে…