#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ২৫
তারমানে কী আমি এত সময় দরজায় নয় ওনার বুকে কান মানে মাথা ছুইয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম……
সামনে নীলাদ্রি দা দাড়িয়ে আছেন আর আমি তার সামনে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি।
নিজের এই কাজের জন্য মনে মনে নিজেকে খুব বকছি।কিন্তু আমারই বা আবার কি দোষ কোথায়?
আমি কী জানতাম দরজার বদলে ওনার বুকেই মাথা রাখবো….
“বুক ” কথাটি মাথায় আসতেই লজ্জায় চোখ মুখ যেন আমার ছোট হয়ে আসছে।
মনে হচ্ছে যেন মাথা নিচু করার জন্য মাথা এবার পায়ের কাছের মাটিতে গিয়ে ঠেকবে।
—- আমার প্রসস্থ বুকে মাথা রেখে আপনার অনুভূতি কেমন?
— আর অনুভূতি…
অনুভূতি সব অনু সব ভোতা হয়ে গেছে…
একমনে বললাম আমি….
— তার মানে কী আবার সুযোগ পেলে তার সঠিক ব্যবহার করবেন নাকি?
ইচ্ছে আছে নাকি নেই?
কথাটা কানে আসতেই আমার হুস হলো। আমি কপাল কুচকে ওনার দিকে তাকালাম। কিন্তু ওনার চোখ মুখের ভাব আমাকে আবার লজ্জায় ফেলে দিলো।
আমি আবার লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম।
এবার তিনি ঝুকে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন….
—- এরপর যদি কখনো বুকে মাথা রাখার শখ বা ইচ্ছে হয় আমাকে বলবি।
কোন সংকোচ করবি না।
এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে করলে কে কোথা থেকে কখন দেখে নেবে।তখন আরেক কেলেংকারী হবে।
তুই কি চাস তোর জন্য আমার চরিত্রে দাগ লাগুক ।।।
কথাটা শুনেই আমি বুঝতে পারছি না কি রিএক্ট দিবো।
আমার কান গরম হয়ে গেছে, গা কাপছে।
আমি করুন ভাবে ওনার দিকে তাকালাম। কিন্তু দেখলাম তিনি আরো বেশি করুন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
মনে হচ্ছে যেন এক্ষুনি কেদে দিবেন।
—- আসলে, আমিতো আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম।
মুগ্ধ দা….
— হয়েছে আর মিথ্যে অজুহাত দিস না…..
আমাদের নিচে নামতে দেখেই নবু মন খারাপ কতে জানালো মহিমা বৌমনি নাকি আজ আমাদের সাথে যেতে পারবেনা।
তবে বলেছেন কাল যাবেন…
এটা শুনে মুগ্ধ দা মন খারাপ করে বসে আছেন।
সুযোগ বুঝে আমি মুগ্ধ দার কাছে গিয়ে বললাম….
—- বৌমনি যখন যাচ্ছে না,তখন আর আমরা গিয়ে কী করবো।
কালই না হয় সবাই একসাথে যাবো…
আমরা কথা শেষ হতে না হতেই নীলাদ্রি দা হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন….
—- এত কষ্ট করে সেজেছি, এত সময় নষ্ট করেছি,
দামি পারফিউম দিয়েছি কী এখন সব নষ্ট করার জন্য।
এখন আমি কিছু জানি না, কিছু শুনতেও চাই না।
আমি বাইরে যাবো,সাথে তোরাও যাবি…..
ওনার বলা “পারফিউম ” কথাটা শুনে কেমন যেন আবার ঘোর লাগা শুরু হচ্ছে। উনি যখন আমার কানে ফিসফিস করে কথা বলছিলেন তখন যেন আমি আরো মাতাল হয়ে যাচ্ছিলাম এখন আবার সেই সুবাসের তোরে মাথায় একটাই গান বাজছিলো…
“” মাতাল হয়ে
যাবো আমি…
মাতাল হয়ে যাবো””
নীলাদ্রি দার জোরাজুরিতে আমাদের বাধ্য হয়েই বাইরে যেতে হয়েছিলো।সারাটা সময় তিনি নরলাম থাকলেও ফেরার সময় যখন বাড়িতে ঢুকতে যাবো তখনই তিনি আবারো আমার পাশে এসে ফিসফিস করে বললেন…….
—- কথাটা কিন্তু মনে রাখিস কেমন….
আমি এবার আবার দাঁড়িয়ে পড়লাম।
পা যেন সামনে বাড়াতে পারছি না।
তবে মনে মনে রাগ হচ্ছিলো। বিষয়টি কেনে বুঝেও উনি বারবার আমাকে খোচা দিচ্ছেন….
এভাবেই হাসি খুশিতে মজাতে দিন গুলো কাটতে লাগলো।আগামীকাল মুগ্ধ দার বিয়ে।এই বাড়িতে এখন লোকের সমাগম বেশ বেড়েছে।পিসিমনির অনেক আত্নীয়রা এসেছেন।
নীলাদ্রি আর আমার পরিবারের লোকেরা আগামীকাল আসবেন…
উৎসবের বাড়িতে লোক জন না থাকলে যে কতটা ফাকা লাগতো তা বুঝাই যাচ্ছে…
এখন খুব মানিয়েছে বাড়িটা।
সবাই সবাই কাজে এখন ব্যস্ত…
আজ কেন জানি না কোন কারন ছাড়াই খারাপ হয়ে আছে।কোন প্রকারেই ভালো হচ্ছে না। তাই ছাদে গেলাম।কেন জানি না মুক্ত খোলা আকাশের নিচে নিজেকে মানাতে পারছি না।
গাছে নানা রকমের ফুল আর ফল রয়েছে।
পিসিমনির ছাদ বাগানটা আমার খুব পছন্দের। তবে সব থেকে বেশি ভালো লাগে “নীল অপরাজিতা ” ফুলের গাছটি….
গাছটি কোন চিন্তা ছাড়াই কত সুন্দর ভাবে ছাদের কার্নিশ বেয়ে তার বেড়ে ওঠাকে প্রশ্রয় দিয়েছে সেই সাথে সৃষ্টি করেছে নিজের অঙ্গের ডাল-পালা….
গাছটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি।নীল ফুলের আবেশে গাছটাকে অন্যরকম লাগছে…..
—- কি দেখছিস এত গভির ভাবে?
পিছনে তাকিয়ে দেখি নীলাদ্রি দা… বেশ সিরিয়াস ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।।
—কিছু না..
— মিথ্যা বলিস না। মুড অফ কেন তোর?
— এমনি।
— কি হয়েছে আমায় বল।
— কিছু হয় নি..
—এমন অশান্ত লাগছে কেন তোকে?
কোন বিষয় নিয়ে কি চাপে আছিস?
— না
—- আচ্ছা,
মুগ্ধের বিয়ের জন্য কি তোর মন খারাপ…
— না…
আর ওই বিষয়ে আমার মনে কোন কিছুই নেই।তারা যে এখন আমায় মেনে নিয়েছেন এটাই অনেকে বড়।
— যাই হোক।
কখনো যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে বলবি..
— হুম
সারাদিন মন খারাপের পর বিকেলে কনাদির আসার খবর পেয়ে মন কিছুটা ভালো হয়ে গেল।সেই সাথে অনেক দিন পর অয়ন দা কে দেখার ইচ্ছে ও পূরন হবে।
শুনেছি ওদের আসতে সন্ধ্যা হবে…
সন্ধ্যার একটু আগে নবু এসে বললো নীলাদ্রি দা নাকি আমাকে ডাকছেন আর সেই সাথে নবু বললো তিনি নাকি খুব রেগে আছেন….
চলবে……
#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ২৬
সন্ধ্যার একটু আগে নবু এসে বললো নীলাদ্রি দা নাকি আমাকে ডাকছেন আর সেই সাথে নবু বললো তিনি নাকি খুব রেগে আছেন….
নীলাদ্রি দার রুমে খুব ভয়ে ভয়ে যাচ্ছি।
জানি না তিনি কেন এখন রেগে আছেন?
সকালে তো আমার সাথে ভালো ভাবেই কথা বললেন।
এখন আবার কি হলো।
আচ্ছা ওনার রাগ কী সেই আগের মতোই আছে।
নাকি সময়ের সাথে সাথে রাগ কমে গেছে।
ভাবতে ভাবতেই ওনার দরজায় নক করলাম।
ভেতর থেকে কথা ভেসে আসলো..
—- ভেতরে আয়…
এবার কেন জানি আমার ভয়ের মাত্রা বেড়ে গেল।
খুব যে বেশি রেগে আছেন তা তার কন্ঠে স্পষ্ট।
রুমে গিয়ে দেখি তিনি চেয়ারে বসে আছেন…..
— আপনি আমায় ডেকেছিলেন?
— হ্যা,
বেডের ওপর বস..
—- কিছু বলবেন?
— বসতে বলেছি আগে বস।
— আচ্ছা..
—- তোকে যে পিসিমনির ননদ গতকাল অপমান করেছেন।সেটা আমাকে বলিস নি কেন?
— তিনি আমার গুরুজন। তিনি যা ভালো বুঝেছেন তাই বলেছেন।
এতে অপমানিত হবার কী আছে?
— তুই এমন কেন?
— কেমন?
— যারা তোকে এত অপমান করলো।তাদের প্রতি তোর সম্মান আসে কী করে…
— জানি না,তবে আপনি কী করে জানলেন এই কথা….
—- পিসিমনি বলেছে।
— কিন্তু আমি তো…..
—- সবাই কী তোর মত চাপা স্বভাবের আর অতিরিক্ত।
যদিও পিসিমনি আমাকে বলতে চায়নি।আমার জোড়াজুড়িতে বলেছে…..
—- কী বলেছেন?
— আমি কেন বলবো।
তুই আমাকে বল কী বলেছে তোকে?
— না বললে হয় না?
আর তেমন কিছু তো বলেন নী।
—- বলতে বলেছি বল…
—- আসলে,
গতকাল সকালে যখন পিসিমনি আর তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কথা বলছিলেন তখন আমি আমার একটা দরকারে তার সাথে কথা বলতে যাই।কিন্তু কথা বলার আগেই পিসিমনির ননদ আমাকে দেখেই বলা শুরু করলেন….
— এটা সেই মেয়ে না, বৌদি(পিসিমনি)
যার জন্য মুগ্ধ তোমার সাথে আগে ঝামেলা করতো?(পিসিমনির ননদ)
— সে সব অনেক দিন আগের কথা।এখন ওসব বাদ দাও।
—- বাদ কেন দেব?
যে মেয়ের জন্য তোমার আদরের ছেলে যে কিনা মা বলতে অজ্ঞান ছিলো। সেকিনা এই #শ্যামারঙা মেয়ের জন্য তোমাকে ছেড়ে চলে গেল।
— তুমি ভুল বলছো।মুগ্ধ তো পড়াশোনার জন্য গিয়েছিলো..
—- আর কতো শাক দিয়ে মাছ ঢাকবে বলো।
বুঝিনা বাপু কি রূপ আছে এই মেয়ের যা দিয়ে মুগ্ধর মাথা টা খেয়েছিলো।
আর তুমি সেই মেয়েকে তোমার সেই সোনার টুকরো ছেলের বিয়েতে এনেছো।
যদি সয়তানি করে বিয়েটা ভেস্তে দেয়।
— দেখো তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো।মুগ্ধ ওকে পছন্দ করতো এতে ওর কোন দোষ ছিলো না।আর সেই সময় আমিও ওকে ভুল বুঝে ছিলাম।।
— যদি এমন কিছু হয় না তখন বুঝবে,
যে এতদিন কাল সাপ পুশেছিলে….
বলেই তিনি সেখান থেকে চলে যান।আর তখন পিসিমনি আমাকে বলেন….
— ওর কথায় কিছু মনে করিস না, মা।
— আমি কিছু মনে করিনি।
তারপর পিসিমনি সাথে দরকারী কথাটা বলে রুমে চলে আসি।
—- এত কিছু হলো এই কথা গুলো তুই আমাকে বলিস নি কেন?( নীলাদ্রি দা)
— দরকার মনে করিনি তাই…
— তাই তো আমি তো তোর আপন কেউ না,
আমাকে বলা দরকার কেন মিনে করবি….
যা এখান থেকে।
আসার সময় ওনার মুখের দিকে তাকালাম দেখলাম অভিমানের কালো মেঘ জমা হয়েছে।সেই সাথে হাতে দেখি একটি সিগারেট…
তখন আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম।আজ একা খাচ্ছেন খান।এরপর যখন খাবেন আমাকে ডাক দিবেন শেয়ার করে খাবো।
আমার কথায় উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর আমি ওনার দিকে ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম।
এখন বেশ শান্তি লাগছে…..
সন্ধ্যার পর কনা দি আর অয়ন দা আসায় বাড়িতে যেন খুশির রোল পড়ে গেল।
অয়ন দা খুব ভালো মনের মানুষ। খুব সহজেই মানুষের সাথে মিশতে পারেন।
সেদিন সারাদিন সবাই মিলে আড্ডা দেবার পর ভোরবেলা মুগ্ধদার অধিবাশ বা দধি-মঙ্গলের পর সবাই ঘুমাতে গেলাম….
সারাদিন খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটলো আমাদের।
বিকেলে সবাই সাজুগুজু তে ব্যস্ত কারণ একটু পর মুগ্ধদার গায়ে হলুদ আর তার পরেই আমরা তত্ত্ব (বিয়ের সরঞ্জাম) নিয়ে বৌমনির বাড়িতে যাবো।
রুমের নবু আর কনাদি সাথে কনা দির কিছু কাজিনরা শাড়ি পরায় আর সাজতে ব্যস্ত।এদের মধ্যে আমি অধমের কোন রকম তৈরি হবার সুযোগ নেই।তাই রুমের এককোনায় চুপচাপ বসে আছি।
তখনই পিসিমনি সবাইকে তাড়াতাড়ি তৈরি হবার জন্য বলতে এলেন।
আর এসেই দেখলেন আমাকে রুমের এক কোনায় বসে আছি।তাই পিসিমনি আমাকে আমার তৈরি হবার সব জিনিস নিয়ে তার রুমে ডাকলেন।
গায়ে হলুদের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।সবাই ছাদে গিয়ে মজা করছে।
পিসিমনি ও আমাকে সাজিয়ে দিয়ে বেশ কিছু সময় আগেই চলে গিয়েছেন।
কিন্তু আমি এখনো রুমেই বসে আছি আর অবাক হয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছি।কি সুন্দর ভাবে পিসিমনি আমাকে সাজিয়ে দিয়েছেন।
আজ একদম অন্যরকম লাগছে আমাকে…
শেষ মুহূর্তে রুমে আর থাকতে না পেরে ছাদে যাবার জন্য মন স্থির করলাম।মাথা নিচু করে সিড়ি দিয়ে উঠছি আর ভাবছি সবাই আমাকে এই ভাবে দেখলে আজ কেমন রিএক্ট দিবে…..
অন্যমনস্কতায় হঠাৎই কারোর সাথে ধাক্কা খেলাম।একটুর জন্য নিজেকে সামলে নিয়েছি না হলে সোজা সিড়ি দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যেতাম।
লোকটা কে দেখার জন্য মাথা উচু করে দেখি নীলাদ্রি দা।
আর তিনি অবাক হয়ে হাবলার মতো হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন…..
একেই ভালো লাগছে না তার ওপর নীলাদ্রি দার এমন কান্ড আমাকে আরো অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে….
কি করবো ভাবতে না ভাবতেই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। ভাবলাম কাজে লাগিয়েই ফেলি।
তাই দেরি না করে নীলাদ্রি দা যে সিড়িতে দাড়িয়ে চাছেন সেই সিড়িতে উঠলাম আর পার উচু করে তার কানের কাছে আস্তে করে বললাম…..
—- এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু,
আপনার প্রসস্ত বুকে হাহাকার শুরু হবে..
আর তারপর যখন সিগারেট খাবেন আমাকে ডাক দিবেন।
একসাথে ট্রাই করবো।
কেমন…
চলবে….