#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ২৭
—- এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু,
আপনার প্রসস্ত বুকে হাহাকার শুরু হবে..
আর তারপর যখন সিগারেট খাবেন আমাকে ডাক দিবেন।
একসাথে ট্রাই করবো।
কেমন…
ছাদে যেতেই সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তাতে আমার কী।সাজলে যে কোন মানুষকে অন্যরকম লাগে এটা স্বাভাবিক। তাই কারোর দিকে নজর না দিয়ে।
সবার সাথে খুব মজা করলাম।
মুগ্ধদাকে যখন হলুদ লাগাতে গেলাম তখন তিনি বলেই ফেললেন….
— মেঘা আজ কিন্তু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে সেই সাথে মায়াবী।
— লাগবেই তো আজ প্রথমবার পিসিমনি আমাকে সাজিয়ে দিয়েছেন যে।
আর মুগ্ধ দা একটু পর না আপনার বিয়ে। মহিমা বৌমনির যদি জানতে পারেন না যে আপনি তাকে ছেড়ে এখনো অন্যমেয়েদের দিকে নজর দিচ্ছেন।
তাহলে কি হবে?ভাবতে পারছেন…..
আমার কথায় সবাই হেসে দিলো।
মুগ্ধদার হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হবার পর আমরা যারা মহিমা বৌমনিদের বাড়িতে যাবো।তারা কেঊ কেউ তত্ত্ব গুছিয়ে গাড়িতে নেওয়ার কাজ করছে আবার কেউ গাড়িতে নিজেদের জায়গা দখল করে বসে পড়েছে।
সব কাজ শেষ করে যখন আমিও গাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম।
তখনই পিসিমনি আমাকে ডাক দিলেন….
— কি হয়েছে পিসিমনি
— সকাল থেকে সারাদিন খেটেই যাচ্ছিস।এত সুন্দর করে সাজিয়ে দিলাম।সেদিকে খেয়াল আছে তোর?
নে এই শরবত টূকূ খেয়ে নে।
—- না পিসিমনি আমি ঠিক আছি।
সমস্যা নেই।
— বেশি কথা বলবি না,চুপচাপ খা না হলে তোর যাওয়া ক্যান্সেল করে দেব।
— না, না,
খাচ্ছি তো।।।
খেয়ে পিসিমনি থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে দেখি গাড়ি তে সিট খালি নেই।
সবাই আগে আগে উঠে বসে আছে।
কী আর করা। যদি যেতে হয় তবে ম্যানেজ তো করতেই হবে।
গাড়ি ছেড়ে দিলো আর আমি সেখানেই দাড়িয়ে আছি।ভাবছি যাবো রিক্সায় করে কিন্তু কিছুই তো চিনি না।
ভাবনার ছেদ ঘটলো বাইকের আওয়াজে।
পাশে তাকাতেই দেখি নীলাদ্রি দা কপাল কুচকে বাইকে বসে আছেন।
— এখানে এই বেশে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
— ওরা আমাকে না নিয়েই চলে গেছে?
— কেন তোর জন্য তো জায়গা ঠিক করা ছিলো
— হ্যা,আমি একটু দেরি করে আসছিলাম আর এসেই দেখি সেখানে মুগ্ধ দার পিসিমনি বসে ছিলেন।
— দেড়ি করে আসছিস কেন?
— পিসিমনি বললো না খেয়ে যেতে দিবেন না তাই খেতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে…
— এত কাজের মাঝেও তোর খেতে হয়।।
— তো খাবো না।।আর আমি না খেয়ে থাকতে পারি না।
এটা তো মুগ্ধ দার বিয়ে নিজের বিয়ের দিনেও না খেয়ে থাকতে পারবো না।
— এখন কি করবি
— কি করবো মানে,
আপনার বাইকে করে যাবো।
বলেই বাইকে উঠে বসলাম।
হলুদের পর বিয়ের সাজের জন্য সবাই খুব ব্যস্ত। আমি এবার আগেই বুদ্ধি করে পিসিমনির কাছে চলে এলাম। শাড়ি পরার জন্য যদিও সবাই বলেছিলো পার্লারে গিয়ে সেজে আসতে কিন্তু আমি যাই নি।
আমাকে সাজানোর সময় পিসিমনি বললেন..
— আজ শাড়ি পরবি কেন?তোর না আজ লেহেঙ্গা পরার কথা ছিলো।
— হ্যা,তবে লেহেঙ্গা টা বৌভাতের দিন পরবো।
আজ শাড়িটা পরতে ইচ্ছে করছে।
— আচ্ছা,ঠিক আছে।
সেজেগুজে সবার সাথে আমিও বের হয়ে গেলাম।বিকেলের মতো এখনো সবাই তাকিয়ে আছে।
থাকুক আমার কী?
সব সময় সাজি না বলে কি আমাকে সাজলে সুন্দর লাগবে না।
এটাতো হতে পারে না।
বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে সবার সাথে আলাপ হলো।
আমাদের আপ্যায়ন করানোর পর মহিমা বৌমনির কাছে নিয়ে যাওয়া হলো।
অসম্ভব সুন্দর লাগছে মহিমা বৌমনি কে।
যেন মনে হচ্ছে আকাশ থেকে কোন অপ্সরা নেমে এসেছে ধারায়।
আমাকে দেখে মহিমা বৌমনি ও অন্যদের মতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি পাশে বসতেই বললো…
—- আমার বিয়েতে তুমি এমন ভাবে সেজেছো কেন?
— কেন ভালো লাগছে না??
— আগে বলো সেজেছো কেন?
— পিসিমনি সাজিয়ে দিয়েছেন।
— ইশশ….
আমি কেন ছেলে হলাম না।
— মানে?
— ছেলে হলে আজ তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম।কী মায়াবী লাগছে তোমাকে…. আজ এখানে তোমাকে দেখে যে কত জনের বুকে ব্যথা হবে।কে জানে?
— কত জনের হবে জানি না।তবে একজনের অলরেডি শুরু হয়ে গেছে…
আমার কথায় বোমনি কি বুঝলো জানি না।তবে রহস্য জনক হাসি দিলো।
যা দেখে আমিই বোকা মনে গেলাম।।।
চলবে…
#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ২৮
আমার কথায় বোমনি কি বুঝলো জানি না।তবে রহস্য জনক হাসি দিলো।
যা দেখে আমিই বোকা মনে গেলাম।।।
এখানে এসেছি অনেক সময় হলো।
ছেলে পক্ষের সবাই এখানে উপস্থিত আছে।
কিন্তু নীলাদ্রি দা নেই।
হলুদের অনুষ্ঠানের পর বাড়িতে গিয়ে তার সাথে আর আমার দেখা হয় নি।
তাকে একবার দেখার জন্য মনটা বাহানা করছে।
মনে হচ্ছে যে করেই হোক যেভাবেই হোক তাকে এখন আমার সামনে চাই।যার জন্য এখন আমি সাজার বাহানা খুজি, যার দেওয়া শাড়ি আজ আমি পরেছি।
সে কেন এখানে নেই?
তাকে না দেখে থাকতে পারছি না।
কই আগেতো কখনও এমন হয়নি। এসব ভাবতে ভাবতেই কান্না পেল খুব।
কেন জানি এখন আশপাশের সব কিছু অসহ্য লাগছে খুব।
এখন সব কিছু বাদ দিয়ে আমাকে চিৎকার করে কাদতে হবে।
কিন্তু এখানে তা সম্ভব না। তাই নিরবেই চোখের জল ফেলতে হবে মনকে শান্ত করার জন্য।
কিন্তু পাশে বসা মানুষ গুলোকে উপেক্ষা করে অপরিচিত জায়গায় কোথাও যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
তাই মন খারাপ করে সেখানেই বসে আছি।
নবু এসে আমার পাশে বসলো। ও বেশ খুশি।
আর খুশি হবেই বা না কেন,এখানে এসে যে ওএ মনের মানুষের সাথে দেখা হয়েছে।
নবু খুব ভাগ্যবতী ওর লাইফে ও যা চেয়েছে সব কিছুই অতি অল্প সময়েই পেয়ে গেছে।
আর এই মনের মানুষের ব্যাপারটা। এতা তো পারিবারিক ভাবেই ঠিক হয়ে আছে।
এই ব্যক্তি নাকি প্রথম দেখাতে নবুতে ফিদা হয়ে গেছে।শুনেছি তিনি নাকি মহিমা বৌমনির কাজিন।
আর সবচেয়ে বড় কথা অর্পণ দা মানে মহিমা বৌমনির কাজিন মানে নবুর হবু বর।
নীলাদ্রি দার বন্ধু।
তারা নাকি একই সেক্টরে কাজ করেন।।।
আমাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে নবু উচ্চস্বরে বলে উঠলো ..
—- এই তোকে কি বলেছি শুনতে পাচ্ছিস?
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম যার মানে কিছু শুনিনি আর বুঝিনি।
নবু আমার দিকে রেগে তাকিয়ে বললো …
— বোকার মতো তাকিয়ে আছিস কেন?
— আমি শুনিনি রে কিছুই।।
— আরে গাধী শুনবি কি করে
আমি তো কিছুই বলিনি তোকে..
— তাহলে
— সেই কখন থেকে দেখছি চুপচাপ বসে আছিস।
কোন কথাই বলছিস না।তাই আর কি তোকে স্বাভাবিক করলাম।
— ও…
–কি হয়েছে।
মন খারাপ কেন তোর।কেউ কিছু বলেছে?
যদি বলে থাকে আমার প্লিজ বল?
না হলে দাদাভাই আমাকে আগের দিনের মতো ঝাড়বে…
— কেন?
— জানি না,সেদিন খুব বকেছিল আমায়।
— নারে,কেউ কিছু বলেনি আমায়।
— আচ্ছা ঠিক আছে চল..
বিয়ে দেখে আসি। আর সেখানে তো তিনি অপেক্ষা করছেন..
— তিনি কে?
— কে আবার অর্পণ…
— আচ্ছা চল…
বিয়ে শেষ হবার পর আমারা সবাই মুগ্ধ দা আর মহিমা বৌমনি কে নিয়ে ছাদে চলে এলাম।
বাসর জাগবো বলে।
সবাই জড়ো হয়ে বসে আছি।মুগ্ধ দা আর মহিমা বৌমনির প্রেমের গল্প শুনবো বলে।
কিন্তু তারা বলতে নারাজ।
সবাই খুব জোর-জবরদস্তি করছে কিন্তু তারা বলবে না বলেই যাচ্ছে।
অতপর সবাই যখন মন খারাপ করে চুপচাপ করে আছে তখনই পিছন থেকে গিটারের আওয়াজ পাওয়া গেল।
আর সাথে সাথেই চোখ সবার চড়কগাছ। কারন স্বয়ং নীলাদ্রি সেন।
নীল পাঞ্জাবি পরে গলায় গিটার অসাধারণ লাগছে দেখতে।
তাকে দেখেই মন খারাপট হঠাৎ করেই গভীর অভিমানে রূপ নিলো।
কিন্তু অভিমান গলে জল হতে বেশি সময় লাগে নি।
তার গান শুনেই মন ভালো হয়ে গেল আমার সাথে সাথে এখানে উপস্থিত সবারই মন ভালো হয়ে গেছে।
হঠাৎ ফোনে একটি কল এলো। অনেক মানুষের কথার মাঝে কিছু শুনতে পারবো না বলে উঠে সামান্য দূরে এসে ফোনটা রিসিভ করলাম।
কিন্তু ওপাশের কোন কথাই শুনতে পেলাম না।
তাই আসরে যাবার জন্য পিছনে ঘুরলাম।
পিছনে তাকিয়ে দেখি নীলাদ্রি দা হাত পকেটে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি তার পাশ কাটিয়ে চলে আসার সময় তিনি বললেন।
— তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
না শুনে যাবি না।
— বলুন
— আমি বিয়ে করবো…
—- মানে??
— বিয়ে করবো মানে বিয়ে করবো….
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
কি শান্ত আর সাবলীল ভাবে কথা গুলো বলছেন।
যাকে দেখার জন্য এর সময় পাগল প্রায় হয়ে যাচ্ছিলাম। তিনিই এখন আমার সামনে বিয়ের কথা বলছেন।
ভাবা যায় এগুলো…..
— কি রে চুপ মেরে আছিস কেন?
— করবেন বিয়ে। কেউ কি মানা করেছে নাকি।
— আহা,
মানা করবে কেন?
তারপরও পছন্দ অপছন্দ বলে একটা বিষয় আছে না।
— তো…
— তো…
মানে এখানে তো অনেক মেয়ে আছে।
কারোর সাথে একটু লাইন করিয়ে দে না প্লিজ…
— এখানে তো অনেক মেয়ে আছে পারলে নিজেই কোন মেয়ের সাথে লাইন করে নিন না প্লিজ।
আর পারলে বিয়েও করে নিন।।
— কিন্তু এখানে যে শাড়ী পরা মেয়েদের বড্ড অভাব…
বিয়ে করবো কিভাবে?
— এত শখ হলে শেওড়া গাছের পেত্নী কে শাড়ি পরিয়ে বিয়ে করে ফেলুন।
— তুই একটু খুঁজে দে না
দেখ না আমার আশে পাশে পাস কি না।
— পারবো না।
পারলে নিজেই খুঁজে নিন।
আর আমাকে বলবেন না।।
বলেই আমি হাটা দিলাম।তখন তিনি পিছনের থেকে বলে উঠলেন…
—খুজে পেলে কিন্তু কারোর কোন কথা শুনবো না।
এভাবেই অনেক মজা,হাসি, তামাসা আর নীলাদ্রি দার জালানি সহ্য করে মগ্ধ দার বিয়ের সব অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি ফিরেছি একমাস হলো।
এর দিনের পরার গ্যাপ এখন আমার তুলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ একমাস পরেই আমাদের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষা।
যেখানে আমি সারাদিন পড়া ছাড়া আর কিছুই চোখে দেখতে পাচ্ছি না সেখানে নবু সারাদিন হবু বরের সাথে ফোনে প্রেমালাপে ব্যস্ত। যদিও নবু খুব ভালো ছাত্রী তারপরে ও….
শুনেছি আমাদের পরিক্ষার পর নবুর বিয়ের ফাইনাল কথা হবে।নবু এখন সব সময় হাসি খুশিতে থাকে।
খুব সুন্দর লাগে ওকে দেখতে। তবে সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে যখন ও কথা বলার সময় লজ্জা পায়।
চলবে…