#সংসার
৩.
#WriterঃMousumi_Akter
আহনাফের বউ এর হাতে বালা দুটো দিতেই সে আমার হাত ঝাড়ি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে হাউ মাউ করে কাঁন্না শুরু করে দিলো।তার কাঁন্নায় পুরো বাড়ির মানুষ এক জায়গা হয়ে গেলো।আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো ভয়ানক কাঁন্না দেখে।আমাকে যেনো তার সহ্য ই হচ্ছিলো না।আহমাফ আমার হাতে বালা দুটি মাটি থেকে নিয়ে দিয়ে বলে নিজের জিনিস অন্যকে দিতে নেই আর দিলে সে জিনিস নিজের থাকে না।
শ্বাশুড়ি মা আমার কাছে এসে যা তা ভাবে কথা শুনালেন।
এত আদিক্ষেতা করার কি আছে শুনি।তার কি গহনার অভাব পড়েছে।তোমার এই নাটক টা না করলে কি হচ্ছিলো না।দিলে তো মেয়েটার মন ভেঙে।তুমি কিছুদিন তোমার মা বাবার বাড়ি গিয়ে থেকে এসো।আর অশান্তি করো নাতো।
আহনাফ ওর মাকে বললো প্লিজ মা আশা কে এত বাজে কথা বলো না।আশার কি দোষ। এমন মেয়ে ঘরে এনেছো এত বেশী প্রশ্রয় দিও না।একদিন নিজেই কষ্ট পাবে বলে রাখলাম।আশাকে নিয়ে আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো এত অশান্তি ভাল লাগছে না।
যে সংসারে দশ টা বছর কষ্ট করলাম তাদের কাছে আজ আমি কিছুই না এটাই কি নিয়তি।
সেদিন বিকালে আহনাফ আমাকে বলে আশা আমি কোনদিন ওই মেয়েকে স্পর্শ করতে পারবো না।আমি তোমার জায়গা কাউকে দিতে পারবো না।আহনাফ কে আমি কিছুই বললাম না।কেনো জানি মনে হচ্ছিলো আমি কি ভুল করলাম ওর বিয়ে দিয়ে।
তবে আমার আহনাফ আমাকে এত টাই ভালবাসে ও কোনদিন আমার জায়গা কাউকে দিবে না।আমার বিশ্বাস এত টাই মজবুত ছিলো।
সেদিন রাতে আবার তাদের এক রুমে দেওয়া হলো।মন খারাপ হলেও মেনে নিতে বাধ্য হলাম।এ যন্ত্রণা বড়ই নিদারূণ।কাউকে বোঝানোর মতো নয়।
পরের দিন সকালে আহনাফের নতুন বউ কে গোসল করতে দেখে আমার বুক চিন চিন করে উঠলো।তাহলে কি তাদের মাঝে শারিরিক রিলেশন হয়েছে।নিজের ভালবাসার মানুষ অন্য কারো সাথে হেসে কথা বললেও বুক চিরে যায় সেখানে নিজের স্বামির পুরা ভাগ টাই আমার নিজের হাতে অন্যকে দিতে হয়েছে।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো আমার।আমি জেনে বুঝেই তো বিয়ে দিয়েছি তবুও কষ্ট হচ্ছে আমার।তাদের মাঝে শারিরিক রিলেশন হওয়াটা তো সিম্পল ব্যাপার।এ জন্য ই তো বিয়েটা দেওয়া।কিছুক্ষণ পরে দেখি আহনাফ ওয়াশ রুম থেকে বেরোচ্ছে।আমাকে দেখে যেনো চমকে গেলো আহনাফ।ওর চোখে মুখে যেনো ভয়,অপরাধ আমাকে দেখে যেনো ওর গিলটি ফিল হচ্ছে।ও আমাকে কি বলবে বুঝতে পারে নি।আমি ওর দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলে চলে গেলাম।
বিকালে আহনাফ আমার জন্য একটা শাড়ি এনে বলে সকালে তুমি যা ভেবেছো তেমন কিছুই না।আসলে আমি অফিস যাবো তাই।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর বলা মিথ্যা শুনে।বাহ!ও আমাকে গুছিয়ে মিথ্যা বলাও শুরু করেছে।মাত্র দুই দিন হয়েছে বিয়ের।মিথ্যা না বলে সত্য টা বললে বোধ হয় কষ্ট পেতাম না।আমি কিছুই বললাম না।আমার যে কিছুই বলা মানায় না।বলা টাও ঠিক হবে না।আহনাফ বলেই দিলো সে আমার সাথে ঘুমোবে আজ।আমি বললাম নতুন বিয়ে করেছো তাকে টাইম দাও।আমি তো আছি। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে এ কথা টা বললাম।
সন্ধ্যায় শ্বাশুড়ি নতুন বৌমাকে চুল বেঁধে দিতে দিতে বলেন মা তুমি চিন্তা করো না।আমার ছেলে তার মায়ের কথার বিরুদ্ধে যায় না।তাছাড়া একটা বাচ্চা হতে দাও আহনাফ সম্পূর্ণ তোমার ই হয়ে যাবে।তাছাড়া বাচ্চা মানুষ করতে একটা মানুষ লাগে আশা কে কাজের মানুষ হিসাবে ধরে নাও।কিছুদিন সহ্য করে নাও মা মিরা।
এমন সময় ফুফু শ্বাশুড়ি বলেন আহনাফ অকারণে ওকে খেতে পরতে দিচ্ছে কেনো?সেটাই তো বুঝতে পারছি না।ভাবি তোমার ছেলে ওই মেয়ের মাঝে কি পেয়েছে।কি দেখে ওই মেয়েকে বিয়ে করেছিলো।না আছে কোনো চাল চুলো।ওর মা বাবা ও তো কোনদিন তেমন খোজ খবর নেই না।
ওর নতুন বউ এর নাম মিরা।
মিরা বলে আমিও তো অনেক আশা নিয়ে এ বাড়িতে বিয়ে করে এসেছি।এই বয়সে আমি সতীন মেনে নিতে পারছি না।আর আপনার ছেলে বাসর ঘরে আমাকে বলে দিছে তার বড় বউ ই তার সব।আমাকে বিয়ে করেছে দায়িত্ব পালন করবে কিন্তু তার বড় বউ এর জায়গা কাউকে দিতে পারবে না।এমন হলে আমি কিজন্য থাকবো এখানে।
তাদের কথা গুলো শুনে বুঝলাম একটাই বাচ্চাই তাদের কাছে সব।ভালবাসার কোনো দাম নেই।আসলে আজ যদি আমার একটা বাচ্চা হতো তাহলে এত কিছু হতোই না।
সেদিন রাতে আহনাফ আমার রুমে আসে।মনে হচ্ছে কতকাল পরে আমি আহনাফ কে পেলাম।ওকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ ভাবে কাঁন্না করতে লাগলাম।আমার কাঁন্না দেখে আহনাফ বলে আশা আজ আমাদের একটা বাচ্চা হলে জীবন টা কতই না সুন্দর হতো।তোমাকে এত টা কষ্ট পেতে হতো না।চলো একটা বেবি কিনে আনি।
আমি আহনাফ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললাম তা আর এখন হয় না। তুমি আমাকে কখনো দূরে ঠেলে দিবে নাতো।আমাকে অবহেলা করবে না।আমার তুমি ছাড়া কেউ নেই আহনাফ।আমার ছেলেবেলা কত কষ্টে কেটেছে তুমি তো জানো।আমার জীবনে কেউ নেই তুমি ছাড়া।আমাকে তুমি কখনো ছেড়ে দিও না।আমি বাঁচতে পারবো না তাহলে।
আহনাফ বলে পাগলি পৃথিবী উল্টে গেলেও তা কখনো হবে না।আমার মনে একমাত্র তুমি আছো আশা।
আসলে কি তাই হয়।ভালবাসা যে রং বদলায়।মানুয়্যে বদলে যায়।তেমনি ভাবে বদলে যেতে থাকে আমার আহনাফ।
চলবে।
(গল্পটা জীবন থেকে নেওয়া।নিজের ই কষ্ট লাগে লিখতে)