#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-০৮
রাদিনের পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট এ আসে যে, রাদিনকে প্রথমে অজ্ঞান করা হয়। তারপর তাকে হাত পা বেঁধে অত্যাচার করা হয়। পরবর্তীতে কড়া অ্যালকোহল খাওয়ানো হয়। রাদিনের শেষ খাবার হিসেবে এটাই তার পাকস্থলীতে পাওয়া গিয়েছে। রাদিনের দেহে বেশ আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যায়। মাথাতে আঘাতের ফলে রাদিন মারা যায়। তারপর মাথা থেকে ম-গ-জ বের করে নেয় এবং পুরুষাঙ্গতে ওইসব লেখালেখি করে।
যে এইরকম যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু রাদিনকে দিয়েছে, সে নিশ্চয়ই কোনো সাইকো হবে। নয়তো কোনো সাধারণ মানুষ এসব কিভাবে করতে পারে ? এ কোনো সাধারণ মানুষ নয়। সাধারণ মানুষ সাধারণভাবেই মৃত্যু কামনা করে। কাউকে নিজ হাতে এভাবে শাস্তি দেয় না। নিজে হাতের শাস্তি, এ যেন এক সাপলুডু খেলা চলছে।
__________
দুদিন যাবত সোশিয়াল মিডিয়াতে মাহিম এক মেয়ের সাথে একটু বেশিই গভীর ভাবে কথা বলে। কথা বলে বলতে মাহিম তাকে ছলেবলে কৌশলে পটাতে চেষ্টা করছে। মাছ ভেজে খাওয়ার জন্য ভাজার আগে যেমন মানুষ মাছকে মশলাপাতি মাখিয়ে নেয়, মাহিমও মোহিনীর সাথে এমন করতে চাইছে। প্রথম কথা শুরু হয়ে বেশ কিছুদিন আগে থেকে। মেয়েটার আইডির নাম মোহিনী মৌ। মাহিমের মোহ এখন যার উপর। ওই মেয়ের সাথে মাহিমের সম্পর্ক এখন খুবই গভীর পর্যায়ে চলে এসেছে বলা চলে। এটাকা বলা যায়, মাছ প্রায় ভাজা শেষ। খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে এসেছে আরকি। দুজন মিলে প্ল্যান করলো মিট করবে। কোথায় মিট করবে কোথায় ? নিরব স্থান চাই তাদের। সব কিছু প্ল্যান করা হলো তারা কোথায় যাবে এবং কেমন সময় পার করবে। সবসময় দোষ কিন্তু ছেলেদের উপর থাকে না। মাঝেমধ্যে কিছুটা দোষ মেয়েদের ঘাড়েও চাপে। একটা নিরিবিলি কক্ষে বসার সম্মতি কখনো একার হয় না, দুজনে মিলে হয়। কিন্তু এখানে কি আসলেই দুজনের মতামত একই সাথে ছিল ? নাকি কাহিনি ভিন্ন ঘটবে ? সে যাই হোক, চলুন এগিয়ে যাওয়া যাক।
_______
সন্ধ্যে নামার পরপর যখন কালচে অন্ধকার নেমে আসে, তখন পুলিশ স্টেশনের সবাই মিলে ধোঁয়া উঠা গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলো। হঠাৎ করেই স্টেশনের বাইরে হইচইপূর্ণ হওয়াতে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বের হয়ে আসে হইচই এর কারণ জানার জন্য। হইচই এর কেন্দ্রবিন্দুতে এসে একেকজনের চোখ কপালে উঠে গিয়েছে। এটা যে মাহিম ! রাজিব নামের এক কনস্টেবল থানার ভেতর ছুটে গেলো বড় অফিসারকে এই ব্যাপারে জানানোর জন্য। অফিসার শাহিন আহমেদ তখন আয়েস করে বসে সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে গরম গরম ডালপুরি খাচ্ছিলো। রাজিব বিনা অনুমতিতেই শাহিনের চেম্বারে প্রবেশ করলে শাহিন রাজিবকে বেশ জোরেই ধমক দিয়ে বসেন। রাজিব ধমক কানে না নিয়ে শাহিনকে বলল,
“স্যার, থানার বাইরে আপনার এলাকার ওই ছেলেটার ডেড বডি কারা যেন ফেলে গিয়েছে। সে ওই চারজনের মধ্যে একজন ছিল।”
শাহিনের খাবার গলায় আটকে যায়। দ্রুত হাতের কাছের গ্লাস থেকে ঢকঢক করে গ্লাসের পানি সব শেষ করে ফেলেছে। এক ঝটকায় চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে তারাতাড়ি বাহিরে বের হোন। মাহিমের অবস্থা দেখে উপস্থিত সবাই যেন বাকরুদ্ধ। মাহিমের বুক থেকে নাভি অব্ধি চি-ড়ে ফেলা হয়েছে। চেড়া অংশ দিয়ে ঝুলে আছে ক-লি-জা ! ভাবা যায়, চোখের সামনে একজন মানুষের ক-লি-জা এভাবে বের হয়ে আছে তখন কেমন অনুভূতি হবে আপনার ? চোখ বন্ধ করুন আর কল্পনা করুন। এবার বুঝেছেন কেমন বিভৎস ভয় আপনার মনে সঞ্চালন হয়েছে ? র-ক্তা-ক্ত কলিজাটাতে বেশ কয়েকটা পুড়ে যাওয়ার দাগ। পুরো দেহে বিন্দু পরিমাণ সুতোটাও নেই। সবাই যেইটা দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে তা হলো মাহিমের নিচের অংশ দেখে। নাকে নোলক পড়ার মতো মাহিমের পুরুষাঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে রড। বিভীষিকা এক রাত এখন। যারা মাহিমকে দেখেছে তাদের অবস্থা একটু হলেও খারাপ, সে যত বড় সাহসীই হোক না কেন।
মাহিমকেও বাকি দুজনের মতো পোস্ট মর্টেম করার জন্য ফরেনসিকে পাঠাতে লেট করলো না শাহিন। কিন্তু মাহিমের বাড়িতে খবর দেয়া হলো না। স্টেশনের সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করতে বলল বড় অফিসার শাহিন। ক্যামেরা ফুটেজ চেক দেয়ার পর তেমন কোনো ক্লু চোখে পড়ছে না। কেউ গাড়ি করে সামনে আসে নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয় শাহিনের কাছে। মাহিমকে যেই কাঠের উপর শুইয়ে রাখা হয়েছিল সেই কাঠ খুব মনোযোগ সহকারে দেখলো শাহিন। ব্যাপারটা এমন ছিল যে, কাঠের নিচে চারটা বেয়ারিং লাগানো ছিল। সাথে ছিলো রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেম। যে কারনে দূর থেকেই থানার সামনে ডেড বডিটা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে কারো নজরে পড়া ছাড়া।
_________
প্ল্যান মাফিক মোহিনী মাহিমের বলা জায়গায় উপস্থিত হয়েছিল। সময়মতো মাহিমও উপস্থিত হয়। মোহিনীকে দেখে মাহিমের কিছুটা খটকা লাগে। মোহিনী মাস্ক পড়া ছিল। তার চোখদুটো দেখে মাহিমের ভিন্ন লাগলো যা সে স্যোশিয়াল মিডিয়ায় দেখেছে। খটকা লাগলেও সেটা প্রকাশ করলো না। সে ভাবলো যে এটা মোহিনী হোক বা অন্যকেউ, আজকের আয়েশ মিটলেই হলো। পা থেকে মাথা অব্ধি চোখ বুলিয়ে নিলো মাহিম। ভাড়া নেয়া কক্ষটিতে ঢুকার সময় মাহিমকে কক্ষে আগে প্রবেশ করতে বলে মোহিনী। এখানে মাহিম বেকে বসলো যে সে আগে ঢুকবে না। মিনিটখানেক এমন চলল যে একে অপরকে আগে ঢুকার জন্য বলছে। এই সময়ের মধ্যে মাহিমের পিছনে আরো দুজন উপস্থিত হয়। কিন্তু মাহিম সেটা খেয়াল করেনি। দুজন ব্যক্তি হুট করেই মাহিমকে কক্ষে ঢুকানোর জন্য ধাক্কা দিলে মাহিম ধাক্কা খেয়ে ভেতরে ঢুকে গেলে বাহির থেকে মোহিনী দ্রুত দরজা লক করে দেয়। মোহিনী আর সাথে থাকা দুজন ব্যক্তি মুচকি হাসলো। কারণ শিকার এখন বন্দী।
মোহিনী আসলে মোহিনী নয়। এটা শুধু মাহিমকে জালে আটকানোর একটা নাম মাত্র। আসলে সে সেই আগন্তুক যে কিনা পিয়াস আর রাদিনের বিনাশ নিজ হাতে লিখেছিল। মাহিমকে কক্ষে প্রবেশ করানোর কারণ হচ্ছে সেখানে গ্যাস সেট আপ করা। প্রথমে যে প্রবেশ করবে সে-ই গ্যাস এটাকে পড়বে এবং পুরোপুরি জ্ঞান না হারালেও নিস্তেজ হয়ে পড়বে। ছেলেদের সাথে জোরে নয় বুদ্ধি দিয়ে ফাঁদে আটকাতে হয়। এই গেইমের মেইন প্লেয়ার যে একজন মেয়ে এটা সবাই নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন অনেক আগেই। তবে ছেলে দুটো কে ?
নির্দিষ্ট সময়ের পর সেই মেয়ে এবং ছেলে দুজন সেই কক্ষে প্রবেশ করে। তারপর মাহিমকে ধরে ছেলে দুজন মিলে বড়সড় একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলে। মাহিম দেখতে পাচ্ছিলো, বুঝতে পারছিলো এবং ধীর কণ্ঠে কথাও বলতে পারছিলো কিন্তু কিছু করতে পারছিলো না। মাহিমকে বেঁধে ফেলার পর মেয়েটা গিয়ে মাহিমের সামনে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে। তারপর মাহিমকে বলল,
“এক হালি ডিম থেকে দুটোকে খেয়ে ফেলছি। একটা ভেজে খেয়েছি, আরেকটা সেদ্ধ করে খেয়েছি। তবুও কি তোর মনে ভয় জাগলো না যে এবার তোর পালা আসতে পারে ? বাহ বাহ বাহ, সলিড কলিজা তোর ! এই কয়দিন ইনবক্সে খুব খেলেছিস। এবার চল, তোকে আউটবক্সে সেরা পারফরম্যান্স দেখাবো। তোর সামনেই গেইম প্লে হবে। তোর নোংরা ক-লি-জা টা দেখার বড্ড সাধ আমার। এবার তৃতীয় ডিমটাকে ভুনা করে খাবো। রেডি হয়ে যা ফ্রাইপ্যানে চড়ার জন্য।”
মাহিম মেয়েটার কথায় কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। মাহিম এটা বুঝতে পারছে যে তার সাথে আজ বিভৎস ঘটনা ঘটবে। যা অবশ্যই সে চাচ্ছেনা।চোখের সামনে পিয়াস আর রাদিনের অবস্থার দৃশ্য ভেসে উঠছে। বাঁচার আকুতি যেন পুরো দেহ জুড়ে জানান দিচ্ছে। কিন্তু এখান থেকে ছাড়া পাবার কোনো রাস্তা নেই। এখানে আটকে পড়া মানেই পাপের শাস্তি স্বইচ্ছায় মাথা পেতে নেয়া। পালাবার কোনো রাস্তা নেই। অতঃপর মাহিমের প্রাপ্য তাকে বুঝিয়ে দিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলো মেয়েটা এবং সাথে ছেলে দুটোও।
#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-০৯
রায়হান দেশে ফিরলো আজ। কাউকে কিছু না জানিয়েই ফিরে আসে সে। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাড়ি ফেরে রায়হান। বাড়ি পৌঁছে কলিং বেল বাজালে আফরা এসে দরজা খুলে দেয়। আফরাকে দেখে রায়হান কিছুটা সন্দেহের চোখে তাকায়। কে এই মেয়ে ? সেকি ভুল বাসার ডোর বেল বাজালো নাকি ? আফরার পিছু পিছু রেসমিও এলো। রেসমি রায়হানকে দেখে বেশ অবাক হয়। একমাত্র আদরের সন্তান এতদিন মা থেকে দূরে ছিল। আকষ্মিক ভাবে চলে এসে যে মা’কে এভাবে সারপ্রাইজ দেবে তা রেসমি আন্দাজ করতে পারেনি। আফরা দরজার সামনে থেকে সরে গেলে রায়হান একছুটে ভেতরে এসে রেসমিকে জড়িয়ে ধরে। মায়ের বুকে প্রশান্তির শীতলতায় ছেয়ে গেলো। কয়েক মিনিট কেটে গেলো এখানেই। আফরা তাকিয়ে তাকিয়ে মা-ছেলের আনন্দে মাতোয়ারা হতে দেখছে। হুট করেই রায়হান তার মা রেসমিকে জিজ্ঞেস করলো,
“মা, এই মেয়েটা কে ?”
রেসমি বলল,
“চল আগে ফ্রেস হবি। তারপর না হয় সব আলাপ আলোচনা করা যাবে।”
রায়হান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের লাকেজ নিয়ে ভেতর ঘরে চলে গেলো। সাথে রেসমিও চলে গেলেন। যাওয়ার আগে আফরাকে বলে গেলো যে, সে যেনো দরজা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে রায়হানের জন্য খাবারগুলো যাতে গরম করে দেয়। বরাবর চুলার কাজ রেসমিই করে থাকেন। আফরাকে তেমন কোনো কাজ করতে হয়না এবং রেসমিও করতে বলেন না। এখন তিনি ছেলেকে দেখে এত দিন না দেখার আয়েস মেটাবেন। আফরাকে না বললেও আফরা এই কাজ নিজেই করতো। আফরা দরজা বন্ধ করে দিয়ে কিছুক্ষণ দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নাঘরের দিকে গেলো। আজকে কি আফরার লুকিয়ে রাখা পরিচয় প্রকাশ পেতে চলেছে ?
______
পুলিশপাড়ায় হৈচৈ লেগে গিয়েছে। একেকজনের পানি খাওয়ারও সময় দিচ্ছে না উর্ধ্বতন কর্মকতা। পরপর তিনটা খু-ন কিন্তু খু-নি লাপাত্তা। এই থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে এখন সম্পূর্ণ প্রেশারের উপর রাখা হয়েছে। যাতে খুব দ্রুত এসব কেস সলভ করে। যাদের শেষ করে দেয়া হয়েছে তারা সবাই আলালের ঘরে দুলাল। টাকার কোনো কমতি নেই। এই টাকা আছে বলেই বিচার কার্যের জন্য এত তাগিদ। এটা যদি কোনো গরীব ঘরের কোনো সদস্যের সাথে ঘটতো তাহলে হয়তো বিচার পাওয়াতো দূরে থাক, বিচারের নাম নিতে গেলেও গুনতে হতো টাকা। পিয়াস, রাদিন আর মাহিমের খু-নের বিশ্লেষণ করতে মিটিং এ বসেছে সবাই। ট্রেস করা হচ্চে এই তিনজনের ফোনের লোকেশন। জানার চেষ্টা করছে শেষবার তারা কোথায় অবস্থান করেছিলো। পিয়াসের ফোনের লাস্ট লোকেশন ছিল তার ডেড বডি যেখানে পাওয়া গিয়েছে সেখানে। রাদিনের ফোনের লাস্ট লোকেশন ছিলো তার এলাকাতেই। নদীর পাশের কোনো একটা জায়গায়। মাহিমের ফোনের লাস্ট লোকেশন ছিল আবাসিক হোটেলে।
সবগুলো মা-র্ডা-র একে অপরের সাথে যুক্ত। তাই পুলিশ চেষ্টা করছে অন্তত একজনের ক্লু বের করতে। একজনেরটা বের করতে পারলে বাকিগুলোও বের করতে সহজ হবে। পুলিশ রওনা দিয়েছে সেই হোটেলের দিকে। পুলিশ কর্মকর্তা আশায় আছেন যে, কোনো না কোনো ক্লু এখান থেকে আজ পেয়েই যাবেন। পুলিশ ফোর্স পৌঁছালেন সেই হোটেলের সামনে। হোটেলের নাম “হোটেল এক্স”। পুলিশ অফিসার শাহিন গাড়ি থেকে নেমে হোটেলের আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলেন। কোথাও সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে কিনা সেইটা লক্ষ্য করলেন। হোটেলের ভেতরের দিকে এগিয়ে গেলে হোটেলের গেইটের কর্নারে একটা সিসি ক্যামেরা চোখে পড়ে। শাহিন এক গাল হেসে সাথে আরো দুজন কর্মকর্তাকে নিয়ে হোটেল এক্সের ভেতরে প্রবেশ করলেন। রিসিপশন ডেস্কে বসে থাকা সুন্দরী মেয়েটি পুলিশ দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। মেয়েটার ঘাবড়ে যাওয়া শাহিনের চোখ এড়ালো না। পুলিশ ডেস্কের কাছাকাছি আসার আগেই মেয়েটা হোটেলের ম্যানেজারকে ফোন করে দ্রুত রিসিপশনে আসতে হবে বলল। পুলিশের কথা শুনে ম্যানেজার এক মুহুর্ত দেরি না করে দ্রুত পায়ে রিসিপশনে এসে হাজির হয়। শাহিন মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই ম্যানেজার চলে আসে। তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে জানতে চায় যে, তারা কেন এসেছে এখানে। শাহিন ম্যানেজারকে বলল,
“আমরা একটা মা-র্ডা-র কেইস ইনভেস্টিগেশন করছি। যাকে খু-ন করা হয় তার তার সেলফোনের লাস্ট লোকেশন এখানেই ছিল। আমরা আপনাদের সিসি টিভি ফুটেজটা দেখতে চাচ্ছি।”
ম্যানেজার বলল,
“আমার এই হোলেটে খু-ন ! এটা কিভাবে সম্ভব ? আমাদের সিসি টিভি সবসময়ই দুজন কর্মী দ্বারা মনিটরিং করা হচ্ছে। এরকম কোনো কিছুইতো চোখে পড়েনি।”
শাহিন বলল,
“পড়েছে কি পড়েনি সেটা আপনারা ভালো জানেন। আমাদেরকে আমাদের কাজটা করতে দিন। আমাদেরকে সিসি টিভি ফুটেজটা দেখান।”
ম্যানেজার মনিটরিং রুমে গিয়ে পুলিশ অফিসার শাহিনকে ফুটেজ দেখালেন। শাহিন নিরাস হলো যে ওইদিনের পুরো ভিডিওতে কোথাও মাহিমকে দেখতে পেলো না। আচ্ছা ওইদিন মাহিমের ক্যামেরায় উপস্থিত থাকার সময়গুলো কি ডিলিট করে দেয়া হয়েছে ? যেকারণে লোকেশন এখানে দেখালেও মাহিমের কোনো ফুটেজ নেই এখানে। কিন্তু ডিলিট যদি করে দেয়া হয় তাহলে কে’ই বা এই কাজ করেছে ? কেন করেছে ? শুধু সন্দেহের জোরে কাউকে কিছু বলতে পারবে না। শাহিন চলে যাওয়ার সময় মাহিমের একটা ছবি বের করে হোটেলের সকল কর্মচারীদের দেখালো। কিন্তু সবাই নাকোচ করে দিলো যে, এই ছেলেকে কেউ কখনো দেখেনি। শাহিনের মেজাজ খারাপ হলো। তারা ভেবে এসেছিল যে এখান থেকে কোনো না কোনো ক্লু তো পেয়েই যাবে। কিন্তু নিরাশ হতে হলো।
________
আফরা টেবিলে খাবার পরিবেশন করে রেসমিকে ডেকে বলে দিলো। রেসমি ছেলে রায়হানকে নিয়ে হাসি হাসি মুখ করে খাবারের টেবিলের দিকে আসলেন। তারপর দুজন মিলে চেয়ার টেনে বসলেন। রেসমি আফরাকে ডাকলো তাদের সাথে বসে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। কিন্তু আফরা আসলো না। সে বসে বসে টিভি দেখছে। রায়হান একবার সেদিকে ফিরে তাকালো। কারণ আফরা দুপুরের শীর্ষ খবর শুনতে বসেছে। শীর্ষ খবরের মধ্যে এখন বড় খবর হচ্ছে “পুলিশ খু-নি-কে খুঁজছেন”। আফরার কিছুটা ইনসিকিউরড ফিল করছিল। রায়হান রেসমিকে বলল,
“মা, এসব কি দেখে বসে বসে ? আচ্ছা সে কে এই পরিচয় তো এখনো দিচ্ছোনা।”
রেসমি মৃদু হেসে বললেন,
“তোমার বাবা সন্ধায় বাসায় ফিরে আসুক, আসুক। আমরা না হয় রাতে একসাথে বসে এসব নিগে কিথা বললবো।”
রায়হান মায়ের কথায় “ইটস ওকে” বলে খাবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। আফরা মাঝেমধ্যে রায়হানকে চুপিচুপি দেখছে। কেন যেন রায়হানকে তার ভালো লাগছে। কিন্তু বয়সের তফাত প্রায় দশ বছরের বেশি হবে হয়তো। ভাবছেন রায়হানের মাকে মা বলা মেয়েটা রায়হানকে কিভাবে পছন্দ করে ? আসলে আফরা রেসমি ও আলালের নিজের মেয়ে না। তাহলে কে সে ?
চলবে….