#সবিনয়ে নিবেদন
#পার্ট:০৭(অতিরিক্ত)
#বিনতে মাহনূর
আহনাফকে আগাতে দেখে ভয়ে আত্তা কেপে উঠলো।উনি যে ভীষন রেগে আছে বুঝতে অসুবিধা হলো না।একটু কি বেশি করে ফেললাম?রাদ ভাইয়া ঠিকই বলে ছিল,কাজ করার আগে যদি এর পরিণতি ভেবে নিতাম তাহলে নিশ্চয়ই এমন পরিস্থতিতে পরতে হতো না।আমি তার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বললাম,
“কি হয়েছে?”
উনি আমার কথাটা শুনে যেন আরো রেগে গেলো।রেগে দ্রুত আমার কাছে এসে ডান হাত দিয়ে আমার গাল চেপে ধরে বলল,
“যানো না কি হয়েছে?তুমি যানো না?”
ব্যাথায় চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো।এখন ইচ্ছা করছে নিজেকে দুটো থাপ্পড় দিতে।এমন বাজে বুদ্ধি কি করে বেড়োলো মাথা থেকে।উনি আমার কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে চিৎকার করে বললো,
“কি হলো কথা বলো।এখন কথা বলছো না কেন? হাসো, আরে হাসো না।তখনতো খুব হেসে হেসে কথা বলছিলে এখন কি হলো?”
বলেই জোরে ধমক দিয়ে উঠলো।ভয়ে শব্দ করে কেঁদে দিলাম।বুকের ভিতর ধুকধুক করছে।কেন যে ক্ষেপাতে গেলাম।আমার কান্না দেখে ওনার রাগ হয়তো কিছুটা কমে গেলো।তিনি আমাকে ছেড়ে বেডের ওপর বসিয়ে দিয়ে টেবিল থেকে পানি এনে আমাকে খেতে দিল।পানি পেয়ে যেন জান ফিরে পেলাম।সত্যি বলতে পানিটা খুব দরকার ছিল। ঢকঢক করে পুরোটা শেষ করে ফেললাম।উনি আমার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে রেখে আমার সামনে বসে আমার হাত দুটো আকড়ে ধরলো।আমি তখনো কেঁদে চলছি।খুব ভয় পেয়েছি।সেদিনও ওনাকে রাগতে দেখেছি কিন্তু আজকের মতো এতো ভয়ানক ভাবে রাগেনি।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলছি,তিনি যে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তা বেশ বুঝতে পারছি।তাও আমি তার দিকে ভুলেও তাকাচ্ছি না।ভয়ে হাত পা মৃদু কেপে কেপে উঠছে।উনি ছোট করে নিশ্বাস নিয়ে বললেন,
“মাহনূর”
“——”
আমার কোনো জবাব না পেয়ে তিনি আবার বললেন,
“মাহনূর আমার দিকে তাকাও।”
আমি এবার চোখ তুলে তার দিকে তাকালাম।তিনি তার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলেন।তারপর বললেন,
“তুমি কি রাদকে ভালোবাসো?”
তিনি ভীতু চোখে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়।তার চোখে মুখে হাজারো অস্থিরতা ভর করেছে।আমি তার প্রশ্নে একটুও বিচলিত হয়নি,কারন আমি জানতাম তিনি এমন কিছু ভাবছেন।আমি আরো জোরে কেঁদে উঠলাম।উনি আমার কাছে এসে আমার গাল তার দুহাতে আজলে নিয়ে অস্থির কণ্ঠে বলতে লাগলো,
“কি হয়েছে কাদঁছো কেন?কেঁদো না। আ..আমি আর বোকব না তোমাকে।প্লীজ থামো এবার।বললাম তো বোকা দিবো না।”
কিন্তু আমার মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই।কাদতে কাদতে হিচকি উঠে গেছে।উনি আর না পেরে খুব জোরে ধমক দিলেন।সাথে সাথে আমি চুপ করে গেলাম কিন্তু হিচকি থামছে না। আহনাফ আমার পাশে বসে দুহাতে আমাকে আগলে নিয়ে আমার মাথাটা তার বুকে রাখলেন।আমিও চুপটি করে তার হার্টবিট শুনতে লাগলাম,মাঝে মাঝে নাকও টানছি।কিছুক্ষণ দুজনই চুপ রইলাম।নিরবতা ভেঙে বললাম,
“আমি রাদ ভাইয়াকে ভালোবাসি।”
সাথে সাথে তার বুক থেকে আমার মাথা সরিয়ে দিলেন তিনি।কিছু বলবেন তার আগে আমি বললাম,
“আরে আমার পুরো কথাটা শেষ করতে তো দিন।আমি রাদ ভাইয়াকে ভালোবাসি যেমন একজন বোন তার ভাইকে ভালোবাসে।আর ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে।আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক তোয়ানা আর রাদ ভাইয়ার মধ্যে যেমন তেমন।”
আহনাফ অবাক হয়ে বললো,
“কি!গার্লফ্রেন্ড আছে মানে?তাহলে রায়া কেন জানে না?”
“কারন আমি ,তোয়ানা আর ভাইয়ার কিছু বন্ধুরা ছাড়া ভাইয়া এই কথা কাউকে এখনো জানায়নি।”
আহনাফ মাথা নিচু করে হয়তো কিছু ভাবছেন।বেশ কিছু সময় পর আমাকে আবার জড়িয়ে ধরলেন।কি হলো বুঝতে পারিনি কিন্তু তাকে বাধাও দিনি।তিনি ওভাবেই বলতে লাগলেন,
“তাহলে এতো কান্না করছিলে কেন?”
“কারন,ভাইয়া আর তোয়ানা আমার খুব কাছের।জানেন যখন আপনার কাছ থেকে চলে এসেছিলাম খুব একা হয়ে পরেছিলাম।কান্না পেতো,মন খারাপ থাকতো। বাঁচার ইচ্ছা মরে গিয়ে ছিলো।তখন ওরা দুজন আমার সাথে ছিল।আমাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতো।এতো দিন দূরে ছিলাম তো তাই কেঁদে দিয়েছি।(তার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম)আর আপনি আমার ফোনটাও নিয়ে গেছিলেন তাই কথাও বলতে পরিনি।”(অভিমানী কণ্ঠে বলে উঠলাম)
“সরি।তোমায় খুব কষ্ট দিয়েছি তাই না?”
“হুমম খুবববব।”
কিছুক্ষণ থেমে আবার জিজ্ঞেস করলাম,
“আচ্ছা,এমন কেন করলেন?
আমার মাথার পিছন থেকে হাত দিয়ে বুকে মাথা লাগিয়ে দিলেন তিনি ।চুলে আলতো বিলি কেটে দিয়ে বলতে লাগলেন,
“তোমায় আজ সব বলবো মাহনূর।”
লম্বা একটি নিশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলেন,
চলবে……